স্বপ্নীল ৬১,৬২,৬৩

0
1313

স্বপ্নীল
৬১,৬২,৬৩
সমুদ্র নির্দেশে শিহাবকে তার গোডাউন তুলে এনে চেয়ারে সাথে হাত,পা বেঁধে রাখে।কাজ শেষ করেই গোডাউনে আসে।হাতে তার হকিস্টিক।এগিয়ে যায় শিহাবের দিকে।শিহাব কে যেই চেয়ারে সাথেই বেঁধে রাখা হয়েছে সেই চেয়ারে হাতলে বাম পা তুলে দিয়ে ঝুঁকে পড়ে শিহাবের দিকে।শিহাবের মুখের টেপ দিয়ে বাঁধা ছিল।সমুদ্র ডান হাত দিয়ে খুব জোরে সেই টেপ টেনে সরিয়ে ফেলে।শিহাব খুব জোরে চিৎকার দেয়।সমুদ্র দাঁত খিঁচে শিহাবের চিবুক শক্ত করে বলল,
-” কুল ডাউন।এখন কিছুই করেনি।তাতেই এত চিৎকার।”
শিহাব ছটপট করতে থাকে।সমুদ্র রক্তিম দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বলল,
-” প্রাচ্য’র বাসায় কেন গিয়েছি।” চিবুক ছেড়ে দিয়ে আবার সমুদ্র গর্জন করে বলল,
-” বল! কেন গিয়েছিস।”
-” প্রাচ্য আমাকে যেতে বলেছে তাই।”
হাতের হকিস্টিক দিয়ে খুব জোরে আঘাত করে শিহাবকে সমুদ্র।শিহাব আর্তনাদ করে উঠল।সমুদ্র বলল,
-” সত্যি কথা না বললেই আজকে লাশ ছাড়া এখান থেকে তুই বের হতে পারবি না।ওই বাড়ির কে তোকে সাহায্য করেছে।তার নাম বল?”
-” কেউ করেনি।প্রাচ্য আমাকে যেতে বলেছে।তার কথা মত আমি পাইপ বেয়ে গিয়েছি।”
সমুদ্র বার বার আঘাত করতে থাকে।শিহাব তখনই মুখ খুলে বলল,
-” বলব আমি।”
-” বল।”
-” তিন্নি।
সমুদ্র মনে মনে কয়েকবার ‘ তিন্নি’ নামটা আওড়াইতে থাকে।যাওয়ার আগে তার লোক দের কে বলল,
-” হাড্ডি গুলো গুড়ো করে ফেলবি।পরে যেয়ে ওর বাড়ির সামনে ফেলে দিয়ে আসবি।”
এটা বলে সমুদ্র শিহাবকে বলল,
-” তুই ভুলে গেছিস কার বোনে সাথে লাগতে এসেছি।
সমুদ্র মির্জা বোনের চরিত্র মিথ্যে বদনাম রটাইছিস।তোকে কী ছেড়ে দেওয়া যায়। আজকে এই অবস্থা যদি তোর মনে থাকে।তাহলে কোনো দিন।কোনো মেয়ের সাথে দ্বিতীয় বার এসব করার আগেই হাজার বার ভাববি।”আঙুল তুলে শাসিয়ে যায়।

-” তিন্নি, তিন্নি!” বলে চিৎকার দিচ্ছে সমুদ্র। তৃণদের বাড়ির ড্রয়িং দাঁড়িয়ে আছে সে।সমুদ্র চিৎকার শুনে সবাই বের হয়। সমুদ্র যাকে খুঁজছে তাকে না পেয়ে আবার দ্বিগুন হুংকার ছেড়ে বলল,
-” তিন্নি তুই বেড়িয়ে আস,নইলে তোকে খুঁজে বের করে খুন করব।”
খাদিজা হুংকার ছেড়ে বলল,
-” অভদ্র মত তিন্নিকে ডাকছ কেন? ”
তখনই তিন্নি বের হয়।সমুদ্র যেয়ে তিন্নির গলা চেপে ধরে।সবাই মিলে সমুদ্রকে ছুটায়।তিন্নি ছাড়া পেয়ে নিশ্বাস নিতে থাকে।ফর্সা গলায় হাতের দাগ বসে গেছে।আর কয়েক মুহুর্ত থাকলে বোধহয় সে মারাই যেত।”
তৃণ দিকে তাকিয়ে অগ্নি চোখে বলল,
-” ভালোবাসি তুই প্রাচ্যকে। তোর ভালোবাসায় বিশ্বাস ছিল না।যদি থাকত তাহলে জানোয়ারে মত আচারণ করতে পারতি না? ”
এটা বলে তিন্নি দিকে আঙুল তুলে বলল,
-” সেদিন ওই ঘটনা ঘটেছে এই মেয়ে।সেদিন প্রাচ্যর চা’য়ে এই মেয়ে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে দিয়েছে। এই সুযোগ নিয়ে এই মেয়ে নিজের রুম দিয়ে শিহাবকে প্রবেশ করায়। প্রাচ্য’র রুমে শিহাব কে পাঠায়।”
সবাই অবাক চোখে তাকিয়ে আছে তিন্নি দিকে।বেশি অবাক হচ্ছে খাদিজা।এই এরকম একটা বাজে কাজ করেছে!

তিন্নি কিছুদিন ধরেই শিহাব কে খেয়াল করেছিল। কিছুদিন ধরে ছেলেটা রাস্তা দাঁড়িয়ে থাকত।একদিন তিন্নি যেয়ে শিহাবের সাথে কথা বলে।তাদের দুজনে একটাই উদ্দেশ্যই ছিল তৃণ আর প্রাচ্যকে আলাদা করা।দুজনে মিলে হাত মিলিয়ে প্ল্যান করে।
তিন্নি ধরা পড়ে গেছে ভয়ে ঘামতে থাকে।সমুদ্র যেয়ে তিন্নি হাত ধরে টেনে এনে বলল,
-” আজকে তুই মেয়ে না হয় বরং ছেলে হতেই।হাড্ডি মাংস সব আলাদা করে ফেলতাম।মেয়ে হয়েছিস বলেই বেঁচে আছিস এখন।”
এটা বলে চলে যেতে নিলে ঘুরে তাকিয়ে তৃণ উদ্দেশ্যই বলল,
-” খুব শিগগির ডিভোর্স পেপার আসবে।আশা করি কোনো জামেলা ছাড়া সাইন করবি।”
তিন্নি দুই গালে দু’টো চড় মেরে তৃণ বলল,
-” কেন করেছিস এমন? কী ক্ষতি করেছি তোর আমি?”
তিন্নি গালে হাত দিয়ে বলল,
-” ক্ষতি! সব চাই বেশি আমার হয়েছে।তোমাকে আমি ভালোবাসি।তোমার সাথে আমার বিয়ে হওয়ার কথা ছিল।আর তুমি ওই মেয়েকে বিয়ে করে এনেছো।ওই মেয়েকে যদি বিয়ে করার ইচ্ছা ছিল তাহলে আমাকে কেন বিয়ে করতে চেয়ে ছিল।কেন আমার মনে তোমার জন্য ভালোলাগা থেকে ভালোবাসা সৃষ্টি করেছো।সেই প্রশ্নে উত্তর চাই।কেন আমার মন ভেঙে দিলে।কী ক্ষতি আমি তোমার করেছি।”
শেষ কথা গুলো তিন্নি তৃণর শার্টের কলার চেপে ধরে বলল।তৃণ তিন্নির হাত থেকে কলার ছেড়ে নিয়ে বলল,
-” তোমাকে আমি কোনোদিন বিয়ে করতে চাইনি।আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তোমার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেছে তোমার খালা।সেই প্রশ্নের জবাব আমার কাছে না চাইলে ভালো হবে।তোমার খালাকে জিজ্ঞেস করো।কেন তোমার মন ভেঙেছে।”
তিন্নি খাদিজার দিকে তাকায়।খাদিজা মুখ মলিন করে দাঁড়িয়ে আছে।তৃণ আঙুল তুলে শাসিয়ে বলল,
-” তোমাকে আর কোনোদিন যেন এ বাড়ি সীমানায় না দেখি। এক্ষুনি এই মুহূর্ত বাড়ি ত্যাগ করলে ভালো হবে।”
খাদিজা মুখ খুলে বলল,
-” এত রাতে কী ভাবে যাবে।”
-” সেটা আমাদের দেখার বিষয় না।যে মেয়ে এত জঘন্য কাজ করতে পারে সে মেয়ের এক মুহূর্ত জন্য তার চেহারা দেখতে চাই না।
★★★
তৃণ কানে বার বার সমুদ্র বলার শেষ করা বাজতে।’ খুব শিগগির ডিভোর্স পেপার আসবে’ ভুল করেছে সে।কেন সে প্রাচ্য কথা বিশ্বাস করেনি।কী করে বিশ্বাস করবে।নিজের চক্ষে যা দেখেছে তা কী করে মিথ্যে হতে পারে। সত্যি মানুষ সব সময় যা দেখে তা সত্যি হতেও না পারে।চোখে দেখার আড়ালে অনেক সময় কিছু সত্যি লুকিয়ে থাকে।না প্রাচ্য’র কাছে তাকে ক্ষমা চাইতে হবে।শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ায়।শার্ট গায়ে চাপিয়ে রওনা হয় সমুদ্র বাড়ি উদ্দেশ্যই।

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে।গেটে দাঁরোয়ান।তাকে কিছুতে ঢুকতে দিচ্ছে না।সমুদ্র মানা করেছে তৃণকে যেন কিছুতে বাড়িতে ঢুকতে না দিই। তৃণ বিড়বিড় করে বলল,
-” সমন্ধী সমুদ্র।আমার সময় ও আসবে। তখনই তোকে নাকানিচুবানি খাওয়াবো।”
এটা বলে বাড়ির পিছনে যায়।বাড়ির দেওয়ালে উঠে। ভিতরে লাফ দিতে শব্দ হয়।তখনই বাড়ির গার্ডরা আসে।তাদের দেখে বাড়ির বাগানে ঝোঁপে ভিতরে লুকিয়ে যায়।তাঁরা কিছুক্ষণ খুঁজে সেই স্থান ত্যাগ করে।বড় একটা দীঘ শ্বাস ফেলে ঝোঁপের ভিতর থেকে বের হয়। চোখ কান খোলা রেখে এগিয়ে যায়।পাইপ বেয়ে প্রাচ্য’র রুমে ঢুকে। দেখতে পায় প্রাচ্য।বারান্দার রাখা দোলনা শুয়ে আছে। তৃণ প্রাচ্য কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানা শোয়ায়।তখনই প্রাচ্য’র ঘুম ভেঙে যায়।চোখ মেলে তৃণ কে দেখতেই পায়।উঠে বসে প্রাচ্য।বলল,
-” তুই এখানে!কী করে এসেছিস।”
-” পাইপ বেয়ে।”
-” কেন এসেছি তুই।”
তৃণ প্রাচ্য দুহাত মুঠোয় নিয়ে বলল,
-” আমি তোর প্রতি অনেক বড় অন্যায় করে ফেলেছি।তুই আমায় যা শাস্তি দিবি মাথা পেতে নিব।তবু তুই আমায় ডিভোর্স দিস না।তোকে ছাড়া থাকতে পারব না।”
তখনই দরজা নক পড়ে।দরজা ওপাশে সমুদ্র দাঁড়িয়ে। কিছুক্ষণ আগে গার্ডরা বলেছে। কেউ একজন কে বাড়ির দেওয়াল টপকে ঢুকতে দেখেছে।সমুদ্র দারোয়ান জিজ্ঞেস করে।কাউকে ঢুকতে দেখেছে কী না। দারোয়ান বলে কাউকে দেখে নি।কিন্তু কিছুক্ষণ আগে তৃণ এসেছে বাড়িতে ঢুকার জন্য।দারোয়ান ঢুকতে দেয়নি।দারোয়ানের কথা শুনে সমুদ্র যা বোঝার বুঝে গেছে।তখনই ছুটে এসেছে সমুদ্র প্রাচ্যর ঘরে।সমুদ্র চিৎকার করে বলল,
-” প্রাচ্য দরজা খোল।”
সমুদ্র বাড়ি এসে বলেছে তৃণ সাথে যাতে কোনো যোগাযোগ না করতে।ডিভোর্স ব্যাপারে সব বলে।প্রাচ্য এই ব্যাপারে কিছু বলেনি।কী ভাবে বলবে?সেই মুখ কী তৃণ রেখেছে।
প্রাচ্য হাত ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,
-” তৃণ তুই এখান থেকে যায়।ভাইয়া আসলে খুব খারাপ হয়ে যাবে।”
-” তুই আমায় ক্ষমা করে দে প্লিজ।”
-” এখন এসব কথা বলার সময় নয়।তুই এখন…! ”
প্রাচ্য আর বলতে পারিনি।তার আগেই দরজা ধাক্কিয়ে ভিতরে প্রবেশ করে সমুদ্র।তৃণ আর প্রাচ্য উঠে দাঁড়ায়।সমুদ্র এসেই তৃণ’র পেট বরাবর ঘুষি দেয়।হুংকার ছেড়ে বলল,

-” তোর স্পর্ধা দেখেই আমি অবাক হচ্ছি।কোন সাহসে তুই আমার বোনের রুমে ঢুকেছিস।”
এটা বলে নাক বরাবর ঘুষি দিতে নিলেই তৃণ ধরে ফেলে।সে বলল,
-” সমন্ধী বলে এতক্ষণ সম্মান করেছি।কিন্তু তুই সম্মান নিতে পারিস নি।হাত ধরতে বাধ্য হয়েছি।আমি তোর বোনের রুমে ঢুকি না।আমি আমার স্ত্রী রুমে ঢুকেছি।স্বামী স্ত্রী রুমে ঢুকবে। এতে সাহসের প্রয়োজন হয় না।”
সমুদ্র রাগে ফুঁসতে ফুসতে বলল,
-” তোর সাথে প্রাচ্য’র কোনো সম্পর্ক নেই।”
-” তুই বললেই হল না কি।আমাদের বন্ধন পবিত্র বন্ধন।এত সহজে ছিন্ন করতে পারবে না তোর কত ভিলেন ভাইয়ে।আমি এক্ষুনি প্রাচ্যকে আমার সাথে নিয়ে যাবো।”
এটা বলে প্রাচ্য’র হাত ধরে তৃণ।সমুদ্র আর তৃণ মধ্যে প্রাচ্য আর রোদ যেন দর্শক।তাঁরা ভালো শ্রোতা হয়ে ওদের ব্যাক্তব শ্রবন করছে। সমুদ্র হুংকার ছেড়ে বলল,
-” হাত ছাড়তে বলছি, আমি।”
তৃণ দ্বিগুন সাহস নিয়ে বলল,
-” ছাড়ব না হাত আমি।হাত ছাড়ার জন্য ভালোবাসিনি আমি।
প্রাচ্যকে আমি বিয়ে করেছি হাত ধরে বাঁচার জন্য।”
-” ভালোবাসি তুই।এই জন্য বোধহয় জানোয়ার মত আচরণ করেছিস।”
-” মানলাম আমি জানোয়ার।তাহলে তুই কী। তোকে ও জানোয়ার বলার উচিত।তুই তো রোদকে ভালোবাসতি।তাহলে কেন রোদের উপরে নির্মম অত্যাচার করেছিস।তোর ভাষ্য মতে আমি জানোয়ার হলে।তাহলে তুই ও জানোয়ারে কাতারে পড়িস।রোদ যখন তোর কাছে ফিরবে না বলেছে।তখনই তুই যদি রোদ কে কাঁধে তুলে করে তোর বাড়িতে নিয়ে আসতি পাররছ।তাহলে আমি কেন পারব না? ”
এটা বলে প্রাচ্যকে কাঁধ তুলে নেয়।আর আঙুল তুলে বলল,
-” অবশই পারব। তোর শেখানোর টেকনিক কাছে লাগিয়েছি।গুড বায় শালা বাবু। উফ! সরি।সমন্ধী বাবু।”
এটা বলে চলে যায়।সমুদ্র নির্বাক।তৃণ এমন কিছু করবে আশাই করেনি সে। রোদ তৃণ কথা শুনে মুখ টিপে টিপে হাসছ্র।সে খুব খুশি হয়েছে।সমুদ্র মুখে ঝাঁমা মেরে দিয়েছে।
সমুদ্র এতক্ষন পরে চেতনা ফিরে। রাগে প্রাচ্য রুমে ফুল দানী গুলো ছুড়ে ফেলে।

কাউছার স্বর্ণা।

ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন।ভালো খারাপ দুটো দিক নির্দ্বিধা বলতে পারেন

স্বপ্নীল
৬২
সমুদ্র তাকে ভালোবাসে।সত্যি কী তাকে সমুদ্র ভালোবাসে।কবে থেকে ভালবাসে সমুদ্র তাকে।আগের কথা রোদ জানে না, কিন্তু এখনকাকার সমুদ্রকে দেখলে রোদের বার বার মনে হত।সমুদ্র তাকে ভালো বাসে। বিছানায় গুটি শুটি মেরে শুয়ে শুয়ে তৃণ বলে যাওয়া কথা গুলো ভাবছে রোদ।তখনই সমুদ্র রোদকে টেনে আনে তার বুকের উপরে।দুহাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলল,
-” কোন সাহসে ওপাশ ফিরে ঘুমাচ্ছো।তোমাকে বলেছি না,আমার বুকের উপরে মাথা রেখে ঘুমাবে,নইলে আমার ঘুম আসে না।”
রোদ বুঝতে পারে না এই রাগী মানুষটার ভালোবাসা।কখনো হুংকার ছেড়ে কথা বলে, কখনো বাঁকা বাঁকা কথা, কখনো আবার খুব মিষ্টি করে কথা বলে।
রোদ বলল,
-” একটা কথা বলি।”
সমুদ্র চোখ মেলে রোদের পানে তাকায়।সে বলল,
-” বলো।”
-” আপনি কী আমায় ভালোবাসেন।”
-” তোমার কী মনে হয়।”
-” আমি বুঝতে পারি না আপনাকে।”
সমুদ্র কোনো কথা বলল না।রোদ আবার বলল,
-” যদি আমি ধরেনি আপনি আমাকে ভালোবাসেন।তাহলে কবে থেকে ভালোবাসেন।”
-” তোমার খুব জানতে ইচ্ছা করছে।”
-” হুঁ।
-” বলব।সব বলব।সময় হোক।”
-” কবে আসবে সেই সময়।”
-” খুব শিগগির। এখন ঘুমাও।”
-” আরেকটা কথা বলি।”
সমুদ্র জবাব দেওয়ার আগেই রোদ বলল,
-” তৃণ-প্রাচ্যকে আলাদা করবেন প্লিজ।স্বামী-স্ত্রী মধ্যে জামেলা হতেই পারে।মিটামাট করে নিলে জামেলা শেষ হয়ে যায়।”
-” তৃণ এটা কী করে করতে পারল।”
-” তৃণ জায়গা আজকে আপনি থাকলে সেইম কাজ করতেন।এবং আপনি সেটা করেছেন।রেহান যেদিন আমার স্পর্শ করতে গিয়েছিল সেদিন কী আপনি রেহানকে মারেনি।কারণ আপনি সহ্য করতে পারেনি।আমাকে অন্য কেউ ছুঁবে মানতেই পারেনি।তেমনি তৃণ সেটা সহ্য করতে পারেনি।কারণ তৃণ প্রাচ্যকে ভালোবাসে।ভালোবাসার মানুষটার সাথে অন্য একটা ছেলেকে দেখেছে। তাই তৃণ মাথা ঠিক রাখতে পারেনি।”
-” তোমার কথা সঠিক।কিন্তু তৃণর উচিত ছিল প্রাচ্যকে জিজ্ঞেস করা।”
-” হ্যাঁ।এই সামান্য ভুল তৃণ করেছে!”
-” তোমার কাছে এটা সামনে মনে হচ্ছে।”
রোদ মনে মনে একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে।সে বলল,
-” বন্ধুদের মধ্যে এত ভুলবোঝাবুঝি থাকলে বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়।”
-” যাক।ওকে বন্ধু বলতেই আমার বাঁধে এখন।”
-” তৃণ ভুল করেছে।মাফ করে দিন।”
-” তুমি অনেক কথা বলে ফেলেছো।এখন ঘুমাও”

সোহার সাত মাস চলছে।পেট কিছু উঁচু হয়েছে।হাঁটা চলা করতেই তার খুব কষ্ট হয়।
তামিম কোনো কাজ সোহাকে করতে দেই না ।বাড়ির সবাই আস্তে আস্তে সব কিছু মেনে নিয়েছে।বিশেষ করে সোহাগী। নিজের বংশের প্রথম প্রদীপ আসতে চলেছে। তামিমের অনাগত সন্তানের কথা ভেবেই সোহাগী সব কিছুতে মেনে নিয়েছে।কিন্তু সোহার সাথে কোনো কথা বলে না।

প্রতিদিন তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে তামিম বাড়ি ফেরে।সোহার দেখা শুনা যতক্ষণ পর্যন্ত তামিম বাড়ি থাকে ততক্ষণ পর্যন্ত সেই করে।তামিম না থাকলে নীল সারাক্ষণ লেগেই থাকে। বিকেলে তামিম সোহার হাত ধরে সিঁড়ি বেয়ে ছাদে উঠায়।তামিম বলল,
-” খুব কী কষ্ট হচ্ছে তোমার।”
-” এত গুলো সিঁড়ি বেয়ে উঠা কী এখন চারটি খানি কথা।”
-” সারাদিন ঘরে থাকো। একটু বাইরে বের হতে পারো না। বাহিরে আলো বাতাস শরীর মাখলে শরীর সতেজ হয়ে উঠে।”
-” দূর! এখন আর এগুলো ভালো লাগে না আমার।”
নীল পিছন থেকে বলল,
-” দিন কে দিন তুই বুড়ি হয়ে যাচ্ছি ত সোহা।তোর কথা মধ্যে কেমন যেন বুড়ি বুড়ি গন্ধ পাই।”
-” তোর কাছে যদি আমাকে বুড়ি মনে তাহলে তাই।”
তামিম বলল,
-” এক বাচ্ছার মা হয়ে বুড়ি হয়ে গেল কী হবে। পরবর্তী বাচ্ছার প্ল্যানিং তাহলে বাদ দিতে হবে।”
-” দরকার হলে তাই করবে।”
কথা বলতে বলতে সবাই ছাদে পৌঁছে যায়।সোহাকে দোলনা বসায়।সোহার দু পাশে দুজন বসে।নানার রকম গল্প করতে থাকে। হুট করে সোহা ‘ আহ’ করে আর্তনাদ করে।তামিম উদ্বিগ্ন হয়ে বলল,
-” কী হয়েছে? কোথায় ব্যাথা পেয়েছো।”
-” তোমার দুষ্টু ছেলে কিক মেরেছে।”
-” মোটে না।আমার ছেলে কখনো তার মাকে কষ্ট দিতেই পারে না।”
-” তাই বুঝি।”
-” হুম।আচ্ছা তুমি দেখো।আমি আমার ছেলেকে জিজ্ঞেস করছি। সে তার মাকে আঘাত করেছে কী না।”
এটা বলে ছাদের মেজেতে হাটু গেঁথে বসে সোহার মাথায় কান পেতে তামিম।মাথা তুলে মুচকি হেসে বলল,
-” আমার ছেলে বলছে।সে তার মাকে ইচ্ছা করে আঘাত করেনি।”
নীল সোহার আর তামিমের কান্ড দেখে।মুচকি হাসে। তামিম সরিয়ে সে বলল,
-” এবার আমি কান পেতে শুনব।দেখি আমার ভাতিজা আমার কী বলে?”
কিছুক্ষণ পর সোহা নীল বলল,
-” কী বলেছে?”
-” শুনবি।”
-” বল!”
-” বলছে।সে খুব শিগগির দুনিয়াতে আসতে চলেছে।আর ফুফির সাথে খেলা করবে।”
★★★
প্রাচ্য দুহাত তৃণ তার দুহাতের মুঠোয় নিয়ে।করুণ কণ্ঠে বলল,
-” আমাকে ক্ষমা করে দে।তোকে অবিশ্বাস করা আমার ঠিক হয়নি।সেদিন মাথা ঠিক ছিল না।কোনটা বিশ্বাস করব।কোনটা অবিশ্বাস করব।বুঝতে পারিনি।
ঠিক-ভুল বুঝতে বিচার করার অবস্থায় ছিলাম না।রাগের মাথা তোর উপরে নির্মম অত্যাচার করেছি আমি।”
প্রাচ্য কোনো কথা বলল না।তৃণ আবার বলল,
-” এভাবে চুপ করে আছিস কেন? কিছু তো বল!তোর এই নিরবতা আমি মেনে নিতে পারছি না।”
প্রাচ্য হাত ছেড়ে নেয়।তৃণকে দু’হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করতে থাকে।তৃণ জড়িয়ে ধরে প্রাচ্যকে।এত দিন প্রাচ্য তার কাছে ছিল।মনে হয়েছে কত বছর ছিল না।কত বছর যেন দেখা হয়নি।
প্রাচ্য কান্না করতে করতে বলল,
-” তুই খুব খারাপ।তুই আমাকে খুব কষ্ট দিয়েছিস।”
তৃণ দুহাতের আজঁলা দিয়ে প্রাচ্য মুখটা তুলে বলল,
-” আজ তোকে কথা দিলাম।আর কখনো তোকে কষ্ট দিব না।শুধু ভালোবাসব।”
প্রাচা আবার কেঁদে দেই।দুজন দুজনকে ঝাপটে ধরে। এভাবেই তাদের ভুল বোঝাবুঝি মিটে যায়।এখন তাদের মধ্যে কোনো বাঁধা নেই।আছে শুধু ভালোবাসা।
★★★
বিয়ে করবে না বলে বিয়ের আসর দেখে পালিয়ে ছিল নীল।এখন আবার সেই সিফাতের বাবা,মা আবার এসেছে নীলের বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে।নীল পালিয়ে গেছে । তারপর তাদের এটা নি কোনো আপত্তি নেই।সিফাতে বাবা -মা চায় নীলকে।নীলকে তাঁদের পুত্রবধূ করে ঘরে তুলতে চায়।সিফাতে বাবা যখন সোলোমান মির্জা কাছে আবার প্রস্তাব দেয়।তখনই সোলোমান মির্জা কোনো কথা দেই নি।বলেছে নীলের মতামত জানিয়ে তারপর তাঁদেরকে জানাবে।আগের বার নীলের মতের বিরুদ্ধে বিয়ে ঠিক করেছে।নীল পালিয়ে গেছে।যদি আগের বার মত পালিয়ে যায়। এবার নীলের মত নিয়ে বিয়েতে আগাবেন।

নীল বসে আসে তার দাদুর সামনে।সোলোমান মির্জা তাকে ডেকে পাঠিয়েছেন।দাদু নীলকে বলল,
-” তোমার আংকেল সিফাতে সাথে তোমার বিয়ে প্রস্তাব নিয়ে এসেছে।”
নীল বলল,
-” তুমি কী বলেছো।”
-আগে বার সিফাতের সাথে তোমার বিয়ে ঠিক করেছিলাম।তুমি পালিয়ে যেয়ে আমাদের সম্মান রাখোনি।এবার সেই ভুল করতে চাই না।তোমার মতামত জানতে তোমাকে ডেকে এনেছি।”
-” দাদু আমি এই বিয়ে করতে পারবে না।”
-” কারণ কী?”
-” দাদু আমি একজনকে ভালোবাসি।” নির্দ্বিধা বলে ফেলল নীল।”
-” কে সে? ”
নীল আমতা আমতা করে বলল,
-” স্বপ্ন।”
-” সমুদ্র বন্ধু স্বপ্ন।”
-” হ্যাঁ!
-” তুমি এখন যাও।”
সোলোমান মির্জা স্বপ্ন কে খুব ভালো লাগে।যে কয়দিন এই বাড়িতে ছিল।তিনি দেখেছেন।এই ছেলের অমায়িক আচারণ! স্বপ্ন মত একটা ছেলের হাতে নীলকে তুলে দিতে পারলে তিনি খুব খুশি হবেন।তিনি বাড়ির সবাইকে জানায়।বাড়ির সবাই সোলোমান মির্জা মতই মত দিয়েছে।সোলোমান মির্জা খুব শিগগির নীলের বিয়েটা দিতে চায়।নাতি নাতনী সবার বিয়ে হয়ে গেছে।এখন বাকি আছে নীল।মৃত্যু আগে তার প্রিয় নাতনী বিয়ে দেখে যেতে চায়।দিনকে দিন অসুস্থ হয়ে পড়ছেন তিনি।হঠাৎ করে কোনদিন চলে যায় ওপাড়ে।ভালো পাত্র সন্ধান যখন পেয়েছে তখনই শুভ কাজটা দ্রুত করতে চান।
তিনি সমুদ্রকে ফোন করে সব জানায়।সমুদ্র রেগে গিয়ে বলল,
-” নীলের জন্য আর কোনো ছেলে ফেলে না।স্বপ্ন কে বেছে নিতে হয়েছে।স্বপ্ন ছাড়া অন্য কোনো ছেলের সাথে নীলের বিয়ে দাও।তাতে আপত্তি নেই আমার।”
-” নীল তো স্বপ্নকে ভালোবাসে।স্বপ্নকে ছাড়া নীল কাউকে বিয়ে করবে না।”
-” দাদু তুমি কবে থেকে ছোটের সিদ্ধান্ত নিজের সিদ্ধান্ত মনে করো।নীল এখন আবেগ বশেই ভুলভাল কী বলল।আর তুমি তাতে সায় দিয়ে দিলে।”
-” নীলের এই সিদ্ধান্ত আপত্তি জানানো প্রয়োজন বোধ করলে অবশ্যই করতাম।কিন্তু স্বপ্নকে আমি দেখেছি।ও খুব ভালোছেলে।বাড়ির সবার স্বপ্নকে পছন্দ হয়েছে।তোমার বন্ধু তোমার সবার আগে পছন্দ হওয়ার কথা।”
-” আমার বন্ধু।তাই তো মানা করছি।তোমার থেকে স্বপ্নকে বেশি চিনি আমি।
কয়দিন হলো স্বপ্নকে চিনেছো।তাতেই তোমার ভালো মনে হয়েছে।মোদ্দকথা,নীলকে স্বপ্ন কাছে ছাড়া অন্য যে কারো কাছে বিয়ে দাও আমার আপত্তি নেই।”
এটা বলে লাইন কেটে দেয়।এক বোনকে বন্ধু কাছে বিয়ে দিয়েছে।বন্ধু কী হাল করেছে।দ্বিতীয় বার এই ভুল করতে চায় না।স্বপ্ন যত ভালোই হোক।বন্ধুদের কাছে বোন বিয়ে দিয়ে বন্ধুত্ব নষ্ট করতে চায় না।

কাউছার স্বর্ণা
( ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।অনেক মেসেঞ্জারে আমায় নক করছে।নূপুর গল্পটা দেওয়ার জন্য।তাদের উদ্দেশ্যই বলছি।খুব শিগগির আসতে চলেছে নূপুর গল্পটা।এতদিন যখন অপেক্ষা করতে পেরেছেন।আর কিছুদিন অপেক্ষা করুন)
স্বপ্নীল
৬৩
আজকে সমুদ্র আর রোদের বিবাহ বার্ষিক।দেখতে দেখতে বিয়ের এক বছর পার হয়ে গেছে।এই দিনে সমুদ্র সাথেই রোদের বিয়ে হয়েছে।শুধু তাদের বিবাহ বার্ষিক নয়।আজকে প্রাচ্য আর তৃণ’র বিবাহ বার্ষিক।
সমুদ্র বাড়িতে ছোটখাটো একটা আয়োজন করছে।আজকে রোদ সবার জন্য নিজের হাতে রান্না করছে।প্রাচ্য আর তৃণ এই মুহূর্ত এখানে নেই। সে জন্য রোদের মনটা কিঞ্চিৎ খারাপ।খাওয়া দাওয়ার পর সমুদ্র সহ সবাই বের হয়ে যায়।রোদ প্রাচ্যকে শুভেচ্ছা জানায়।প্রাচ্য ও জানায়।

সমুদ্র রোদের জন্য গিফট কিনার জন্য যাচ্ছে মার্কেটে।সাথে স্বপ্ন, ধূসর আছে।স্বপ্ন সমুদ্র’র পাশে বসায়।হঠাৎ করে স্বপ্ন বলল,
-” গাড়ি থামা!
সমুদ্র রাস্তা সাইডে যেয়ে গাড়ির থামায় সে বলল,
-” হঠাৎ কেন গাড়ি থামাতই বললি।”
সমুদ্র কথার কোনো উত্তর দিলো না স্বপ্ন।স্বপ্ন ইশারা ধূসর কিছু একটা বলে।ধূসর ইশারা পেয়ে হাতে রাখা রুমালটা দিয়ে সমুদ্র নাকে চেপে ধরে।
-” আরে কী করছি? রুমাল দিয়ে নাক চেপে ধরে কী মেরে ফেলার প্ল্যান করেছি না কি।”
এটা বলে সমুদ্র জ্ঞান হারায়।দুজনে হেসে দেয়।স্বপ্ন যেয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে।সমুদ্র নিয়ে যায় কাঙখিত জায়গা।

সমুদ্র মিটমিট করে চোখ দুটো খুলল।আবার বন্ধ করে ফেলল।সব কিছু যেন ঝাপসা মনে হচ্ছে তার।দ্বিতীয় বার চেষ্টা করে চোখ খুলে।দেখতে পায় তিনজন মানব কে।দাঁড়িয়ে আছে তাঁরা সামনে।তৃণ বলল,
-” শালা বাবু চোখ মেলতে পাচ্ছে না।মাথায় বোধহয় পানি ডালতে হবে।”
এটা বলে হাতে রাখা বালতিরর পানি সমুদ্র মাথা ঢেলে দেই।সমুদ্র ভিজে চুপচুপ হয়ে গেছে।সে চোখ মেলে তাকায়। নিজেকে বন্ধী অবস্থা দেখে।হাত, পা দড়ি দিয়ে বেঁধে রেখেছে।বন্ধুদের দিকে তাকায়।তিনবন্ধু হাসছে।মাথা কিছু ঢুকছে না। সে তো মার্কেট যাওয়ার জন্য বেরিয়েছে।তাহলে এখানে বন্ধী অবস্থা কেন? ওরাই বা হাসছে কেন? আর তৃণ কোথায় থেকে এলো।তৃণ বলল,
-” কেমন দিলাম শালা বাবু।”
সমুদ্র তৃণ কথায় প্রত্তুতর কিছুতে বলেনি।উল্টা স্বপ্নকে প্রশ্ন করে,
-” এসবের মানে কী? আমায় এভাবে বেঁধে রেখেছিস কেন? খুলল তাড়াতাড়ি?
-” খুলব না।”
-” ফাজলামো করছিস। এসব কোন ধরনের ফাজলামো।
-” শালা! তোকে রামদা দিয়ে পেটানো উচিত।”
তৃণ বলল,
-” আমাকে ঘুষি মেরেছে।আজকে তার শোধবোধ নেব।”
স্বপ্ন তৃণকে বলল,
-” ওর সাথে আগে আমার হিসাব মিটাই তারপর তোর হিসাব মিটাবি।”
সমুদ্র বলল,
-” কিসের হিসাব মিটাবি।”
ধূসর বলল,
-” আরে ভাই তাড়া কিসের তোর।আস্তে আস্তে বলবে।স্বপ্ন শুরু কর?”
স্বপ্ন একটা চেয়ার টেনে সমুদ্র সামনে বসে।বলল,
-” তুই জানিস আমার আর নীলের ব্যাপারে।তাহলে এখন যখন তোর দাদু আমাদের বিয়ে কথা বলছে।তুই কেন মানা করলি?সবাই যখন রাজি তাহলে তুই বিগড়ে দিলি কেন? সমস্যা কী।বোনের ভালোবাসায় ভিলেন ভাই হিসাবে পরিচয় দিতে চাস।”
সমুদ্র রাগ দেখিয়ে বলল,
-” তো কী করব।প্রাচ্যর বিয়ে সময় শিহাব কে কিডন্যাপ করেছি।যাতে তৃণ’র সাথে প্রাচ্য’র বিয়ে হয়।বিয়ে দিয়ে কী লাভ হলো।জীবনে কোনোদিন আমার বোনের গায়ে
ফুলের টোকা পর্যন্ত দিই নেই।আর তৃণ আমার সেই বোনকে মেরে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে।তোর কাছে আবার আমার বোনকে বিয়ে দিয়ে সেই ভুল আবার করার মানুষ নই আমি।”

-” সেটা তৃণ আর তোর ব্যাপার।আমাদের ভালোবাসায় মধ্যে তুই বিগড়ে দিলি কেন? তোর আমার এমন মনে হয়।আমি নীলের গায়ে হাত তুলব।”
-” এমন তৃণকে মনে হয়নি।কিন্তু তৃণ এখন তার আসল চেহারা দেখিয়ে দিয়েছে।”
ধূসর বলল,
-” তৃণ অন্যায় করেছে সেটা আমরা মানছি।তুই নিজেই তৃণকে মারছস
তৃণ এই ব্যবহার করার একটা কারণ ছিল। তাই বলে তুই স্বপ্ন আর নীলের মাঝে বাঁধা হয়ে দাঁড়াবি।”
-” অবশ্যই দাঁড়াব।”
-” তাহলে সারাজীবন তোকে এভাবেই বেঁধে রাখব।তোর রোদ প্রেয়সী কাছে যেতে দিব না।রোদের সাথে রোদের একটা কাজিন আছে না তার সাথে সেটিং করে দিব।” স্বপ্ন বলল।
সমুদ্র ধমক দিয়ে বলল,
-” স্বপ্ন।”
-” ধমকে কোনো কাজ হবে না।”
ধূসর বলল,
-” একটা কাজ কর স্বপ্ন।সমুদ্রকে এখানে বেঁধে রাখ। এই ফাঁকে তুই নীলকে বিয়ে করে নেয়। হানিমুন করে ফিরে আসলে তারপর সমুদ্রকে ছাড়ব।”
-“ভালো হবে না কিন্তু।একবার ছাড়া পাই।তোদের তিনজনের অবস্থা খুব খারাপ হবে।”
তৃণ বলল,
-” আগে ছাড়া পায়।তারপর না হয় প্ল্যান করেছিস।”
-” স্বপ্ন ছাড় আমায়! রোদ আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
ধূসর বলল,
-” বাব্বাহ।আমাদের সমুদ্র যে প্রেয়সী কাছে যাওয়ার জন্য চটপট করছে।”
স্বপ্ন বলল,
-“-” রোদকে ছাড়া তুই যেমন থাকতে পারবি ননাতেমনই আমি, আমরা কেউ কারো ভালোবাসার মানুষ বিহীন থাকতে পারব না।”
সমুদ্র কোনো কথা বলল না।তখনই স্বপ্নর ফোন বেজে উঠে।পকেট থেকে ফোন বের করে।তখনই মোবাইলের স্ক্রিনের রোদের নাম ভেসে উঠে।ধূসর বলল,
-” কে ফোন করেছে!”
সমুদ্র দিকে তাকিয়ে বলল,
-” রোদ।
স্বপ্ন ফোন ধরে বলল,
-” হ্যালো।”
রোদ উদ্বিগ্ন কণ্ঠে বলল,
-” সমুদ্র কোথায়? স্বপ্ন।ফোন দিচ্ছি ধরছে না।এত রাত হয়ে গেলো এখন যে ফিরছে না।তোরা কী বলতে পারবি সমুদ্র কোথায়?”
রোদের এই উদ্বিগ্ন কণ্ঠে শুনে সমুদ্র বুকের এসে লাগল।গত বছর এই রাতে সে রোদের সব স্বপ্ন ভেঙে দিয়েছিল।নির্মম অত্যাচার করেছিল।সে চেয়েছিল এই রাত টা রোদকে উপহার দিবে।আজ রোদকে সব বলবে।মনে জমে লুকায়িত ভালোবাসার কথা।সমুদ্র করুন চোখে তাকায় স্বপ্ন দিকে।স্বপ্ন রোদকে বলল,
-” সমুদ্র আমাদের সাথেই আছে।কিছুক্ষণ মধ্যেই বাসায় পৌঁছে যাবে।”
ফোন কেটে দেয়।ধূসর বলল,
-” এবার সমুদ্র পালা।জলদি ফোন দে তোর দাদুকে।বলবি তুই, নীলের আর স্বপ্নের বিয়েতে কোনো দ্বিমত নেই।”
সমুদ্র বাধ্য হয়ে তাই করতে হলো।যে জানে তারা বন্ধুরা কেমন।দাদুকে ফোন দিয়ে বলে খুব দ্রুত স্বপ্ন আর নীলের বিয়ের ব্যবস্থা করতে।সোলোমান মির্জা বলল,
-” কালকেই বললি তোর মত নেই।অন্য কোথায় যেন নীলকে বিয়ে দিই।এখন আবার উল্টা গীত খাইছিস।”
-” আরে দাদু।আমি জানতাম নীল আর স্বপ্নর ব্যপারটা।আমি স্বপ্ন বিরুদ্ধ মিথ্যে কথা বলিছি।দেখতে চেয়েছি তুমি কী বলো।”
এভাবেই দাদা -নাতি কথা চলে।ফোন কেটে সমুদ্র বলল,
-” এবার হইছে।”
সবাই হেসে সমুদ্রকে জড়িয়ে ধরে।সমুদ্র হেসে দেয়।তৃণ বলল,
-” আরে! সমুদ্রকে ছাড় তোরা।সমুদ্রকে না দেখেই বোধহয়।আমাদের রোদ বৃষ্টি ঝড় এখন হার্ট এ্যাটাক করে ফেলেছে”
-” তোরা একদমই ওকে রোদ-বৃষ্টি-ঝড় বলে ডাকবি না।এই নামে ওকে শুধু আমি ডাকব।”
সবাই একত্রে হেসে বলল,
-” বাব্বাহ! কী প্রেম মাইরি।”

কাউছার স্বর্ণা
ভুল হলে ধরিয়ে দিবেন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে