Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"সে প্রেমিক নয়সে প্রেমিক নয় পর্ব-৩৮+৩৯

সে প্রেমিক নয় পর্ব-৩৮+৩৯

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_৩৮_৩৯

#পর্ব ৩৮

-কার বেবি? কিসের বেবি?

আনাবিয়ার প্রশ্ন শুনে অট্টহাসিতে ফেটে পরে ইরান। আনাবিয়া আড়চোখে ইরানকে দেখছে আর ঠোঁট কামড়াচ্ছে। ইরান শোয়া থেকে উঠে বসে আনাবিয়ার পেটে হাত দিয়ে বলে,

-এখানে বেবি আছে আমাদের। প্লিজ ডোন্ট এক্ট লাইক ফুল! আমি জানি তুমি আগের থেকেই জানতে। আমাকে না জানিয়ে আমার বেবি নিয়ে পালিয়ে যাওয়ার প্ল্যান করছিলে মনে মনে?

আনাবিয়া দূরে সরিয়ে দেয় ইরানের হাত। বিছানা থেকে নেমে উঁচু স্বরে বলে,

-আপনার বেবি কোথায় দেখলেন আপনি? আমার পেটে যে আছে সে শুধুই আমার। আপনার একটুও অধিকার নেই তার ওপর।

-বললে হলো! মুড ভালো আছে খারাপ করো না আনাবিয়া।

-আপনার মুড আপনি নিজের কাছে রাখুন। আর হ্যাঁ এইসব আদিখ্যেতা দেখাবেন না একদম।

ইরান বিছানা থেকে নেমে আনাবিয়ার স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। বুকে দু হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে গম্ভীর হয়ে বলে,

-তাই! আমার বেবির জন্য আমি কি করব না করব এখন সেটায়ও তোমার মতামত নিতে হবে? একটু বেশিই করছো না তুমি?

-এখন পর্যন্ত কিছুই করিনি তবে সামনে করব। একজন খুনিকে আমি আমার বেবির ফাদার হিসেবে পরিচয় দেবো না।

-নির্বোধ আনাবিয়া, তোমার কষ্ট করে পরিচয় দেওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই। সকলে জানে তুমি ইরান শেখের স্ত্রী। তাই বেবি দুনিয়ায় আসার সাথে সাথেই নিজের ফাদারের পরিচয় পেয়ে যাবে।

আনাবিয়া মেঝেতে তাকিয়ে মুখে কাঠিন্য ভাব এনে বলে,

-আমার এই বেবি চাই না। একজন অমানুষের অংশ আমি নিজের মধ্যে চাই না। আমি এবরশন করিয়ে ফেলবো।

ইরান রেগে যায় আমাবিয়ার কথা শুনে। আনাবিয়ার দুইহাত শক্ত করে ধরে রাগী কণ্ঠে বলে,

-আর ইউ লস ইওর সেন্স? দোষ করেছি আমি। তোমার কাছে অপরাধী আমি। তুমি কিভাবে একটা নির্দোষকে মারার কথা বলো? তুমি আমাকে খুনি বলো তাহলে এইরকম একটি কাজ করলে তোমার আমার মধ্যে পার্থক্য কী আনাবিয়া? তোমার একটুও কষ্ট হলো না এত বড় একটি কথা বলতে?

আনাবিয়া শরীর খিচে দাঁড়িয়ে আছে। মুখে কোনো বিশেষ ভাবভঙ্গি নেই। ইরান আনাবিয়াকে ছেড়ে দেয়। শান্ত কণ্ঠে বলে,

-এটা তোমারও বেবি আনাবিয়া! আমাদের দুইজনের ফাস্ট বেবি! মাথায় উল্টাপাল্টা চিন্তা এনে নিজেকে বিপদে ফেলো না। বেবি এবং নিজের যত্ন নেও। নেক্সট টাইম এইরকম কথা মুখ থেকে বের হলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। প্রমিস।

ঝড়ের গতিতে চলে যায় ইরান। আনাবিয়া নিস্পলক পুরো রুমে চোখ বুলায়। ধীর পায়ে হেটে টাঙানো ছবি সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। পুরোনো স্মৃতি স্মরণ করতে থাকে আনাবিয়া। হাত বাড়িয়ে ছুঁতে যাবে তখনই কিছু একটা ভেবে পিছিয়ে যায় আনাবিয়া। নিজের পেটে হাত দিয়ে মুখ ছোট করে দুঃখী কণ্ঠে বলে,

-কোনো মায়ের কী মন চায় নিজের সন্তানকে মারতে! যে জন্ম দেয় সে কিভাবে মারে! আমার প্রথম সন্তান আমার ভালোবাসার চিহ্ন তুমি বেবি। তোমার ফাদারের সাথে রাগ জেদ করে বলি তোমাকে মেরে ফেলবো বাট সত্যি তো দরকার পরলে আমি নিজে মরে যাবো তবুও তোমাকে কিছু করব না। এখন এই অসহায় দুনিয়ায় তুমিই আমার সব। জলদি জলদি আমার কাছে চলে এসো তুমি। মাম্মা তোমার জন্য অধীর অপেক্ষায় রয়েছে মাই সুইটি।




আজ আর অফিসে যায় না ইরান। অন্য রুমে এসে বিছানায় বসে ল্যাপটপে আনাবিয়ার কর্মকান্ড পরোক্ষ করছে সে। পকেট থেকে ফোন বের করে রাকিয়াকে কল দেয় ইরান। রিং হতেই কল রিসিভ করে রাকিয়া। উৎফুল্ল হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-আব্বা কাজ ভালোভাবে হয়েছে? কোনো সমস্যা হয়নি তো?

-হ্যাঁ আম্মা হয়েছে।

-যাক ভালো। তোকে আমিই কল দিতাম ইরান।

-কেনো আম্মা?

-সুখবর আছে।

-কী?

-ইসরাফ আজ নিজ পায়ে দাঁড়াতে পেরেছে। তোকে বোঝাতে পারব না ওকে দেখে কত খুশি হয়েছি আমি! একদম চমৎকার হয়েছে!

ইরান মৃদু হাসে রাকিয়ার কথা শুনে। শান্ত স্বরে বলে,

-আসলেই চমৎকার! আমিও তোমাকে একটা সুখবর দিতাম আম্মা।

-কী সুখবর?

-তুমি দাদি হতে যাচ্ছ আম্মা।

খুশিতে আত্মহারা হয়ে পরে রাকিয়া। চমকিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-তুই সত্যি বলছিস তো আব্বা? আবার শয়তানি না তো?

-আম্মা তুমিও না এইসব বিষয় কেউ শয়তানি করে!

-আজ আমার দিনটা ভালো ছিল তাই একেরপর এক খুশির খবর সৃষ্টিকর্তা আমাকে দিয়েই যাচ্ছেন! আনাবিয়া সুস্থ আছে? আমি ওর সাথে দেখা করতে আসবো জলদি।

-শান্ত হও আম্মা। শুনো এখন এই কথা কাউকে জানিও না। শুধু তুমি, আমি আর আনাবিয়া আমাদের তিনজনের মধ্যেই থাক। জানো তো আমার কত শত্রু।

-তনুসফাকে বলবো না?

-সময় হলে আমিই বলবো তুমি নিশ্চিন্তে থাকো।

-ঠিক আছে। আনাবিয়ার খেয়াল রাখিস। আর এইসব বেশি বেশি করে খাবার খেতে বলবি ওকে। আমিই ফোন দিয়ে কথা বলছি ওর সাথে।

-আচ্ছা। একটু ভালো বুঝ দিও কুইন এলিজাব্যথকে। রাগারাগি কম করতে বলিও আম্মা।

-হয়েছে! তুইও ওকে কম জ্বালাতন করবি বুঝলি?

-হ্যাঁ বুঝেছি। রাতে দেখা হবে তাহলে।

-ঠিক আছে।

কল কেটে বিছানায় রাখে ফোন। কিছু একটা ভাবতে ভাবতে শরীর ছেড়ে শুয়ে পরে ইরান।

🌸

সন্ধ্যা সাতটা বাজে।
ইরান কিছুক্ষন আগেই সবাইকে রেডি হয়ে থাকতে বলেছে। এক ঘন্টা পর সে গাড়ি নিয়ে আসবে সবাইকে নিতে। তনুসফা রুমে এসে ইরানের দেওয়া গিফট ব্যাগ খোলে। সাদা রঙের দুইটা বক্স দেখে খুশি হয়ে যায় তনুসফা। একটা বক্স খুলতেই নীল রঙের একটি বেনারসি শাড়ী দেখতে পায়। শাড়ীটা ভীষণ পছন্দ হয় তার। দ্বিতীয় বক্স খুলতেই কিছু জুয়েলারি দেখতে পায় তনুসফা। লোভী মানুষদের জন্য এর থেকে বড় উপহার কী আর হয়!
খুশিতে গদগদ করতে করতে তনুসফা নেকলেসটা হাতে নিয়ে নেড়েচেড়ে দেখতে থাকে।
এই নেকলেসে তাকে কেমন দেখায় সেটা দেখতে নেকপিসটা গলায় পরে নেয়। কানের দুলগুলোও পরে। কিছুক্ষন আয়নায় নিজেকে দেখতে থাকে তনুসফা। হটাৎ সে অনুভব করে তার গলা ভীষণ ভাবে চুলকাচ্ছে। ধীরে ধীরে গলার সাথে কান, হাতও চুলকাতে থাকে তার। অস্থির হয়ে নেকলেস খুলে ফেলে তনুসফা। চুলকাতে চুলকাতে একসময় তার গলায় জায়গায় জায়গায় ফুলে উঠে। আকস্মিক তনুসফার ইরানের কথা মনে পরে। শাড়ী বের করতেই সেখানে একটা চিঠি পায় সে। চিঠিতে লেখা ছিল,

প্রিয় আপা,

আই এম সরি ফর দেট আপা। বাট কী করব বলেন? আপনার জন্যেই তো সেদিন আমার আনাবিয়া ঠিক এভাবেই কষ্ট পেয়েছিল তবুও মুখ ফুটে আমাকে বলেনি। ছোট ভাই হিসেবে আমি চাইনি আপনাকে এত কষ্ট দিতে! দেন সাডেনলি আই থিঙ্ক আপনারও একটু অনুভব করা উচিত এই যন্ত্রনা। যাতে দ্বিতীয়বার কাউকে এভাবে কষ্ট দিতে না পারেন। আমার আনাবিয়া থেকে যত দূরে থাকবেন ততই আপনার জন্য ভালো। শুধু শুধু বড় বোনকে কোনোরকম শাস্তি দিতে চাই না আমি। তাই হোপ ইউ আন্ডারস্ট্যান্ড।

ইওর লাভিং ব্রাদার
ইরান শেখ।

তনুসফা রেগে দুমড়েমুচড়ে ফেলে দেয় চিঠি। চুলকাতে চুলকাতে অসয্য হয়ে ওয়াশরুমে চলে যায় তনুসফা। মনে মনে আনাবিয়াকে গালি দিতে থাকে ইচ্ছে মতো।

আলমিরা খুলে মনোযোগ দিয়ে আনাবিয়ার জন্য ড্রেস চয়েস করছে ইরান। অন্যদিকে সোফায় গা এলিয়ে বসে আছে আনাবিয়া। চোখ মুখে বিরক্তির শেষ নেই তার। প্রায় পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে কালো রঙের একটি সিম্পল শাড়ী বের করে আনাবিয়ার হাতে ধরিয়ে দেয়।

-আমি নাতো এটা পরব আর না আপনার সাথে কোনো জায়গায় যাবো। বুঝতে পেরেছেন?

-বাড়াবাড়ি না করে জলদি তৈরি হও। এমনেই আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে।

আনাবিয়া বসা থেকে দাঁড়িয়ে কঠিন কণ্ঠে বলে,

-আমি পরব না মানে পরব না। আর আপনার মধ্যে কী একটুও সরম নেই? এতকিছুর পরও আপনি আমার ওপর অধিকার কিভাবে দেখান?

-আসলে আমার সরম নেই। যদি থাকতো তাহলে বিয়ের তিনমাসেই ওয়াইফকে প্র্যাগনেন্ট বানাতাম না!

-আমি সিরিয়াস হয়ে কিছু বলছি আপনার মতো মজা করার মুডে আমি নেই।

-বলি কী এই সময়ে এতো সিরিয়াস হয়ো না। পরে দেখা যাবে আমার বেবিও তোমার মতো সবসময় সিরিয়াস হয়ে থাকবে!

-স্টপ ইট ইরান। জাস্ট স্টপ। ইউ ইরিটাটিং মি। প্লিজ জাস্ট লিভ ফ্রম হেয়ার।

-আমি ১৫ মিনিটের জন্য বাহিরে যাচ্ছি। ফিরে এসে তোমাকে তৈরি না দেখলে আমি নিজেই তোমাকে তৈরি করে দেবো।

ইরান চলে যেতেই ধপ করে বিছানায় বসে আনাবিয়া। ইরানের দেওয়া শাড়ী দেখে মুখ বাঁকায় সে। আনাবিয়া ঠান্ডা মাথায় ভাবে যদি এখান থেকে বাহিরে যেতে পারে তাহলে আনাবিয়া কোনোভাবে পালিয়ে যেতে পারবে! ইরানের থেকে মুক্তি পেয়ে যাবে! না যেভাবেই হোক এই বাড়ির বাহিরে যেতে হবে তার এইরকম সুযোগ হাত ছাড়া করতে নেই। আনাবিয়া আলমিরা খুলে নিজের মনমতো একটি শাড়ী পরে হালকা তৈরি হয়ে নেয়। ইরানের পছন্দ কখনই নিজের গায়ে ছোঁয়াবে না আনাবিয়া।

#পর্ব ৩৯

কাজ শেষ করে রুমে আসতেই ইরান তৈরি আনাবিয়াকে দেখতে পায়। তার পছন্দ করে দেওয়া শাড়ী না পরে সাদা রঙের গোল্ডেন পাড়ের একটা শাড়ী পরিধান করেছে আনাবিয়া। গলা, কান, হাত সবকিছুই খালি। মধ্যে সিঁথি করে খোঁপা বেঁধেছে চুলে। মুখে তেমন কিছুই দেয়নি শুধু ঠোঁটে লিপগ্লোস আর চোখে কালো কাজল দিয়েছে। খানিকের জন্য ইরানের মনে হলো এই লুকে আমাবিয়ার বয়স দ্বিগুন বেড়ে গিয়েছে। ইরান মেয়েদের অতি সাজগোজ পছন্দ করে না। আনাবিয়া সবসময় সিম্পল থাকে এটা একটু বেশিই ভালো লাগে ইরানের। তবে আজ আনাবিয়ার এই সিম্পল লুকে ইরানের মন ক্ষুন্ন হয়। ধীর পায়ে আনাবিয়ার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলে,

-তোমার নাকের নাকফুল কোথায়? আর এইরকম বিধবা লুকে নিজেকে কেনো সাজিয়েছ?

-আপনি আজ খেয়াল করলেন যে আমার নাকে নাকফুল নেই?

-হ্যাঁ।

-যেখানে স্বামীর অস্তিত্ব নেই সেখানে স্বামীর জন্য নাকফুল পরা হলো বিলাসিতা! এই দেখেন আপনার দেওয়া রিং ও খুলে ফেলেছি আমি।

কষ্ট পেলেও প্রকাশ করে না ইরান। চোয়াল শক্ত করে আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-সেখানে মিডিয়া থাকবে আমার ওয়াইফকে একদম খালি দেখলে আরেক কথা বানাবে তারা। সো প্লিজ আমার সম্মানের জন্যই না হয় পরে নেও বাসায় এসে খুলে ফেলো।

আনাবিয়া এটিটিউড নিয়ে ইরানের স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। গালে হাত দিয়ে ভাবুক হয়ে বলে,

-আপনার সম্মান বাঁচিয়ে আমার কী লাভ?

-আমার সম্মান মানেই তোমার সম্মান। প্লিজ।

না চাওয়ার শর্তেও আনাবিয়া জুয়েলারি পরে। ইরান আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে মুগ্ধ হয়ে। তার বিদেশিনী এখন পিওর বাঙালি বউ! আনমনে ঠোঁট কামড়ে হাসে ইরান। আনাবিয়া আয়নায় ইরানের হাসি দেখে চোখ সরিয়ে ফেলে। গায়ের পাঞ্জাবী ঠিক করতে করতে ইরান বলে,

“সেখানে একটু ভদ্র হয়ে থেকো। আর হ্যাঁ ভুলেও পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা মাথায় এনো না। তাছাড়াও আমার মনে হয় না আমার চোখের সামনে থেকে পালাতে পারবে!

আনাবিয়া খাপছাড়া ভান করে কোনো উত্তর দেয় না। ইরানের কথা সে কেনো শুনবে? একবার বাহিরে যেতে পারলেই হলো পালানোর ব্যবস্থা এমনেই হয়ে যাবে।

ইরানের পিছু পিছু রুম থেকে বের হয় আনাবিয়া। চোখ ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। এতদিন পর একটু রুমের বাহিরে আসতে পেরেছে সে। শান্তির নিঃশাস নিয়ে বাহিরে চলে আসে। ইরান প্রথমে ভেবেছিল সেই শেখ বাড়িতে যাবে সবাইকে নিয়ে আসতে। কিন্তু এখন বেশি দেরি হয়ে যাওয়ায় তাজীব সবাইকে নিয়ে আগে আগেই চলে গিয়েছে এখন সে আর আনাবিয়া যাবে। গাড়িতে উঠার সময় ভুলবশত পরে যেতে নেয় আনাবিয়া। ইরান পাশে থাকায় আনাবিয়াকে সামলে নেয়। উম্মুক্ত কোমরে হাতের ছোঁয়া পেতেই ভড়কে যায় আনাবিয়া। ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় ইরানকে। তারপর গাড়ির ভিতরে যেয়ে বসে পরে। ড্রাইভিং সিটে বসে ইরান। গাড়ি চালাতে চালাতে ঠাট্টা স্বরে বলে,

-এখন থেকে কিন্তু তোমাকে বেশি বেশি করে খাবার খেতে হবে। আমি চাই না আমার বেবি আনহেলথি হয়ে তোমার মতোই চিকন, হেংলা হোক!

জালানা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছে আনাবিয়া। ইরানের কথা শুনে দাঁত চিবিয়ে বলে,

-তো ট্রান্সফরমেশন করে নিজের পেটে নিয়ে নেন বেবিকে! তাহলে আপনার বেবি আর চিকন হবে না। রাব্বিশ!

আনাবিয়ার কথায় আহাম্মক বনে যায় ইরান। চোখ ছোট ছোট করে বলে,

-সিরিয়াসলি! এইরকম অদ্ভুত কথা কে শিখায় তোমাকে?

-জানি না।

-ওয়েল। বেবির কথা এখন পর্যন্ত কাকে কাকে বলেছো?

-কাউকেই না।

-আমি আম্মাকে বলেছি।

সহসা ইরানের পানে তাকায় আনাবিয়া বিস্ময়বিমূঢ় হয়ে বলে,

-কী! মমকে কিভাবে বললেন আপনি? একটুও সরম কাজ করেনি আপনার মধ্যে! ছি! সে কী ভাববে আমাকে!

-আজব এখানে ভাবাভাবির কী? আমরা ম্যারিড। তাই বেবি নিতেই পারি! বিদেশের মানুষদের তো বিয়ের আগেই বেবি হয়ে যায়! আর তুমি একজন বিদেশী হয়ে এইসব বলছো!

-শাটআপ। আমি বিদেশি হলেও এই দেশে কালচারাল সমন্ধে অনেক কিছুই জানি আমি। বিয়ের পর পরই প্র্যাগনেন্ট হলে মানুষ সেটাকে খারাপ চোখে দেখে।

-মানুষ কী ভাবছে অথবা কী ভাববে সেটা নিয়ে বসে থাকায় মানুষ আমি নই। আমার মতে জীবন আমাদের, সংসার আমাদের, সব কিছুই আমাদের। তাহলে অন্যের কথা কেন শুনতে যাবো আমি!

-সবাই আপনার মতো খাপছাড়া মানুষ নয়।

-ঠিক আছে। ফাঙ্কশনে কোনো পুরুষের সাথে কথা বলবে না। আমার সাথে যাবে আমার সাথেই আসবে।

-কেনো বলবো না? আপনার কথা কেনো শুনবো আমি! শুধু পর পুরুষের সাথে কথা বলবো না ঘেঁষাঘেষীও করব।

-ওকে করিও।

____________________🌸

জমকালো আয়োজন করা হয়েছে ফাঙ্কশনে। গাড়ি থেকে বেরিয়ে একসাথে ভিতরে প্রবেশ করে দুইজন। আনাবিয়ার মুখ ভার করে রেখেছে। তাঁদের দেখার সাথে সাথেই সাংবাদিকরা চলে আসে তাঁদের কাছে। একে একে অনেকগুলো ছবি তুলে নেয়। ইরানের ফ্রেন্ড এসে দুইজনকে ওয়েলকাম করে ভিতরে নিয়ে যায়। আনাবিয়াকে দেখতেই এগিয়ে আসে রাকিয়া। আনাবিয়ার গালে হাত দিয়ে বলে,

-মা শরীরটা ভালো এখন?

-হ্যাঁ মম।

-আমি অনেক খুশি সুখবর শুনে।

আনাবিয়া একটু সরম পায়। নজর লুকানোর চেষ্টা করে। রাকিয়া ইরানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-তুই আর আনাবিয়া ঐ বাড়িতে এসে পর। একা একা নিজের খেয়াল কিভাবে রাখবে মেয়েটা?

-দেখি আম্মা।

-মম আপা আসেনি?

-না। আসার সময় হটাৎ করেই ওর এলার্জি শুরু হয়ে তাই আর আসেনি।

রাকিয়ার কথা শুনে সকলের আড়ালে বাঁকা হাসে ইরান। আনাবিয়া আড়চোখে পরোক্ষ করে সেটা। ইরানের ফ্রেন্ড ডাক দেওয়ায় সেখানে চলে যায় ইরান। যাওয়ার আগে রাকিয়াকে বলে গিয়েছে আনাবিয়ার খেয়াল রাখতে। অধমের মতো দাঁড়িয়ে আছে আনাবিয়া। কারো সাথে কথা বলতেও বিরক্ত লাগছে তার। কোনো মতে রাকিয়াকে দূরে সরানোর পরিকল্পনা করতে থাকে আনাবিয়া। আচমকা বলে,

-মম অনেক পিপাসা পেয়েছে একটু পানি খেয়ে আসি আমি।

-তুই কষ্ট করে কেনো যাবি! ঐখানে গিয়ে বস আমি পানি নিয়ে আসছি।

-ঠিক আছে।

রাকিয়া পানি নিতে চলে যায়। আনাবিয়া মনে মনে খুশি হয়ে যেই সামনে পা বাড়াতে যাবে এমন সময় সে অনুভব করে কেউ তার ঠিক পিছনে দাঁড়িয়ে আছে। আনাবিয়া শুকনো ঢোক গিলে। সে ভাবে হয়তো ইরান। এখন পালাবে কিভাবে! শাড়ীর আঁচল মুঠো করে ধরে পিছনে ফিরতেই অবাক হয় আনাবিয়া। গোলগোল চোখ করে সামনের মানুষটাকে দেখতে থাকে। অস্পষ্ট স্বরে বলে,

-ইসরাফ!

ইসরাফ পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরোক্ষ করে নেয় আনাবিয়াকে। ঘুরে ঘুরে দেখতে থাকে আনাবিয়াকে। স্মিত হেসে বলে,

-আনাবিয়া সাবরিন! তুমিই কী সেই রমণী যাকে আমি ভালোবেসে ছিলাম?

ভুত দেখার মতো ইসরাফের দিকে তাকিয়ে আনাবিয়া বলে,

-ইসরাফ আপনি ঠিক হলেন কবে?

-হয়েছি। আমাকে সুস্থ দেখে খুশি হওনি তুমি? তোমার প্রেমিক, ভালোবাসা সুস্থ হয়ে গিয়েছে।

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-আমার কল্পনার থেকেও বেশি সুন্দর তুমি। তাইতো ইরানের মতো পুরুষও তোমার প্রেমে পাগল হয়ে ঘুরছে!

-আমার সামনে থেকে সরুন।

-ওয়েট। সবকিছু জানার পরও তুমি ইরানের সাথে কিভাবে আছো আনাবিয়া? নিজের পরিবারের খুনির সাথে সংসার করতে বিবেকে বাধে না তোমার?

-আমি এখন এইসব বলতে না শুনতে ইচ্ছুক নই ইসরাফ।

-আমি তোমার জায়গায় হলে এতদিনে ইরানকে মেরে এই দেশ ছেড়ে চলে যেতাম! পারো বটে তুমি!

আনাবিয়া রাগী চোখে ইসরাফের দিকে তাকিয়ে কঠোর হয়ে বলে,

-নিজের ভাইয়ের বেপারে এইসব বলতে সরম করে না আপনার? কেমন ভাই আপনি? আর ভুলে যেয়েন না আমি আপনার বড় ভাইয়ের স্ত্রী। কথাবার্তা বুঝে শুনে বলবেন।

-তোমার এই এটিটিউড দেখেই আমি তোমার প্রেমে পরেছিলাম আজ দ্বিতীয়বার আবার প্রেমে পরলাম!

-মুখ সামলে কথা বলুন ইসরাফ। আমি কাকে মারবো, কাকে বাঁচিয়ে রাখবো, কার সাথে থাকবো আর কার সাথে থাকবো না এইসব কিছুর ডিসিশন নিতে আমি আছি। প্লিজ আপনার বুদ্ধি আপনি নিজের কাছে রাখুন।

-একটা ভালো আইডিয়া দেই? চলো তুমি আমি পালিয়ে যাই আনাবিয়া। ইরান তো দূরে থাক কেউই আমাদের খুঁজে বের করতে পারবে না।

ইসরাফের কথায় অমনোযোগী হয়ে পাশ কেটে চলে যায় আনাবিয়া। ইসরাফ হাত মুঠি করে আনাবিয়ার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর রাকিয়াকে দেখে ভিতরে চলে যায়। হটাৎ করেই আনাবিয়ার অস্থিরতা শুরু হয়। অসুস্থ অনুভব করতে থাকে সে। মাথা ঘুরিয়ে পরে যাবে এমন অবস্থা তার। কোনোদিক না তাকিয়ে পার্কিং এরিয়ায় চলে যায়। গাড়ি বসে বোতল নিয়ে পানি খেয়ে নেয়। একটু সুস্থবোধ করতেই নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করতে থাকে বাসায় যাওয়ার উদ্দেশ্যে। এখানে এক মুহূর্তও থাকবে না সে।

ফুল স্পিডে গাড়ি চালাতে চালাতে একসময় হটাৎ করেই থেমে যায় গাড়ি। রাতের বেলা মাঝ রাস্তায় গাড়ি থেমে যাওয়াতে রাগ হয় আনাবিয়ার। কয়েকবার ট্রাই করেও স্টার্ট হয় না গাড়ি। একসময় আনাবিয়া নিজেই বেরিয়ে আসে গাড়ি থেকে। গাড়ির টায়ার চেক করে উঠতে যাবে এমন সময় কেউ মুখ চেপে ধরে আনাবিয়ার। আনাবিয়া ছুটাছুটি না করে সোজা কামড় বসিয়ে দেয় সেই হাতে। কামড় দেওয়ার সাথে সাথেই লোকটা আনাবিয়ার মুখ ছেড়ে দেয়। আনাবিয়া দৌড়ে যেতে নেবে তার আগেই লোকটা আনাবিয়ার মুখে স্প্রে করে অজ্ঞান করে দেয় আনাবিয়াকে।

___________________

-আম্মা আনাবিয়া কোথায়?

-আমিও ওকেই খুঁজছি। আমাকে পানি আনতে বলে নিজেই গায়েপ হয়ে গেলো মেয়েটা!

রাকিয়ার কথায় চিন্তিত হয়ে পরে ইরান। আশেপাশের সব জায়গায় খুঁজে আনাবিয়াকে না পেয়ে পাগল প্রায় ইরান। কপালে হাত দিয়ে বলে,

-দেখেছো আম্মা এর জন্যই বলেছিলাম ওকে দেখে রেখো। এখন কোথায় গেলো! এই রাতের বেলা যদি কিছু হয়ে যায় ওর!

-হয়তো ও বাসায় চলে গিয়েছে।

-চলো বাসায় গিয়ে দেখি। আম্মা যদি ও নিজ ইচ্ছায় পালিয়ে যায় তাহলে আমি ওকে ভয়ংকর শাস্তি দিবো যাতে আর কখন পালিয়ে যাওয়ার কথা ওর মাথায় না আসে।

-চুপ তুই। উল্টাপাল্টা চিন্তা করে নিজের মস্তিককে দুর্বল করিস না।

গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে ইরান বাসায় ফোন দিয়ে খোঁজ নেয় আনাবিয়া বাসায় গিয়েছে কী না। একজন ভৃত্য তাকে বলে আনাবিয়া এখনও বাসায় ফিরে নি। এতেই জেনো ইরানের চিন্তা দ্বিগুন হয়ে যায়। গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-আম্মা ইসরাফ এসেছিল না তোমার সাথে? কোথায় ও?

-ইসরাফ তো আমাকে বলে বাসায় চলে গিয়েছে।

-ওকে। আমার যা বোঝার বুঝেছি আমি।

>>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ