Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"সে প্রেমিক নয়সে প্রেমিক নয় পর্ব-৩৬+৩৭

সে প্রেমিক নয় পর্ব-৩৬+৩৭

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ৩৬

-এমপি ইরান শেখ কিছুদিন ধরে দেখছি আপনার কাজের প্রতি তেমন মনোযোগ নেই! দায়িত্ব ভালোভাবে পালন করছেন না! কোনো সমস্যা কী আপনার?

আনমনে বসে ছিল ইরান। মিটিং চলছে জাতীয় সংস্থার উন্নয়নের জন্য। মন্ত্রী-মিনিস্টার, এমপি, চেয়ারম্যান সহ সকলেই উপস্থিত। ভরা মঞ্জিলে স্বাস্থমন্ত্রীর কথায় ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে ইরান। মনে মনে লজ্জিত অনুভব করে সে। আরেকজন মন্ত্রী বলে,

-হ্যাঁ ইরান শেখ আপনি তো সবসময় কাজের প্রতি অনেক দায়িত্বশীল। কখন আপনার কোনো কাজের জন্য কমপ্লেইন করতে হয়নি কয়দিন ধরে হটাৎ কী হয়েছে আপনার? একজন এমপির এইরকম দায়িত্বহীন হওয়াটা ভালো দেখায় না।

-শুনলাম আপনাদের এলাকায় নাকি রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে আগামীকাল থেকে? এই সম্পর্কে সবটা জানার জন্য গতকাল রাতে আপনাকে ইমেইল করেছিলাম আপনি হয়তো খেয়াল করেননি।

সরমে মাথা ঝুঁকিয়ে ফেলে ইরান। বরাবর বসেছিল হাসিব আলী। ইরানকে অপমানিত হতে দেখে মনে মনে খুশিতে ফেটে পরে সে। অনুতপ্ত স্বরে ইরান বলে,

-আমি ভীষণ দুঃখিত স্যার। কিছু ব্যক্তিগত সমস্যার কারণে একটু অন্যমনস্ক ছিলাম। তবে আপনি চিন্তা করবেন না আমি বাসায় যেয়েই ইমেইল চেক করব। আর হ্যাঁ আগামীকাল থেকে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে। আমি নিজে যেয়ে এই শুভ কাজ আরাম্ভ করব।

-তোমার থেকে আমি এরকমটাই আশা করি ইরান। তোমাকে দায়িত্বহীন নয় দায়িত্বশীল মানায় সর্বদা।

-ধন্যবাদ স্যার।

হাসিব আলী সকলের আড়ালে মুখ কালো করে ফেলে। ইরান গম্ভীর হয়ে কিছু ফাইল চেক করে রণরণে কণ্ঠ স্বরে বলে,

-আগামী ২০ জুলাই সম্মেলন আছে। যেকোনো একজনকে সকল আয়োজনের ভাড় দেওয়া হবে। এখন আপনারা সবাই মিলে বিবেচনা করুন।

-আমার মতে তোমারই আয়োজনের দায়িত্ব নেওয়া উচিত ইরান। আগেরবারও তুমি বেশ শৃঙ্খলা ভাবে আয়োজন করেছিলে। মন্ত্রীগণ বেশ প্রসন্ন হয়েছিল।

-তিনি ঠিক বলছে ইরান শেখকেই এই দায়িত্ব দেওয়া হোক।

-হ্যাঁ এটাই ভালো হবে। আপনার আমাদের সাহায্য লাগলে বলবেন ইরান শেখ।

ইরান আড়চোখে হাসিব আলীর পানে তাকায়। ফ্যালফ্যাল করে হাসিব আলী তার দিকেই তাকিয়ে আছে। হালকা হেসে ইরান বলে,

-আমি আমার সবটুকু দিয়ে চেষ্টা করব সুষ্টভাবে আয়োজন করার। আপনাদের কথার মর্যাদা রাখবো ইনশাআল্লাহ।

___________________

মিটিং থেকে সোজা শেখ বাড়িতে আসে ইরান। তনুসফা কয়েকদিন যাবৎ অনেক বেশি অসুস্থ তাই অফিসে যায়নি। হটাৎ এই ভর দুপুরে ইরানকে গম্ভীর মুখে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতে দেখে রূহ কেঁপে উঠে তার। ইরানকে তনুসফা এখন যমের মতো ভয় পায়। আপন ছোট ভাই হলেও বর্তমান ইরানকে দিয়ে একটুও বিশ্বাস নেই তার। চোরের মতো বসা থেকে উঠে নিজের রুমে যেতে নেয় এমন সময় ইরান পিছন থেকে বলে উঠে,

-কী চুরি করে এভাবে চোরের মতো লুকাচ্ছেন আপা?

ভেবছেঁকা খেয়ে যায় তনুসফা। ইরানের দিকে তাকিয়ে মেকি হেসে বলে,

-আআমি কী চুরি করব আবার!

-জানেন তো চোরের মন পুলিশ পুলিশ! এভাবে তোতলাচ্ছে কেনো আপা? কোনো বিষয় নিয়ে ভয় পাচ্ছেন কী?

-না। ভয় কেনো পাবো!

-তাহলে তো ভালোই। আম্মাকে ডাকুন আপা বলুন তাকে সুখবর নিয়ে এসেছি।

-কী সুখবর?

সিঁড়ির দিকে তাকাতেই ইরানের মুখে হাসি ফুটে উঠে। রাকিয়া ইরানের কণ্ঠস্বর শুনতে পেয়েই নিচে নেমে এসেছে। নিজ রক্তের সাথে কী রাগ করে থাকা যায়! রক্ত তো রক্তই! নাড়ী ছেঁড়া ধন তার। ধীর পায়ে ইরানের কাছে এসে পুনরায় জিজ্ঞেস করে,

-বল কী সুখবর?

-এবারের সম্মেলনের আয়োজনের ভাড় আমাকেই দেওয়া হয়েছে আম্মা। এবং আমার কথা মতো আগামীকাল থেকে রাস্তা মেরামতের কাজ শুরু হবে।

-বেশ ভালো। মন দিয়ে কাজ কর। আনাবিয়া কেমন আছে? আর কাল হটাৎ করে আমাকে চলে আসতে বললি কেনো?

-সে বিরাট কাহিনী! এখন শোনো আগামীকাল আমার এক ক্লোস্ড ফ্রেন্ডের বিয়ে। ভেবেছি সম্পূর্ণ পরিবার নিয়ে যাবো। তাই তোমাদের জন্য কিছু গিফট এনেছি।

-তুই আগে বস।

-না বসবো না।

ইরান হাতের একটা ব্যাগ ধরিয়ে দেয় রাকিয়াকে। তারপর এগিয়ে যায় তনুসফা শেখের কাছে। তাকেও তার ব্যাগ ধরিয়ে দেয়। বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,

-আম্মা ইসরাফ বাসায়?

-হ্যাঁ। কেনো?

-ডাক দেও ওকে। আমি ক্ষমা চেয়ে নেই ওর কাছে। জানো তো ভাই বোনদের কষ্ট দিতে পারি না আমি।

খুশিতে গদগদ করতে করতে রাকিয়া ইসরাফের রুমে চলে যায়। তনুসফা ভীত কণ্ঠে বলে,

-শুনেছিলাম আনাবিয়া অসুস্থ। কেমন আছে এখন?

-বেশ আছে।

-ভালো থাকলেই ভালো। আজকের নিউজে তোকে দেখিয়েছিল।

-হ্যাঁ। এভাবেই চলতে থাকলে খুব জলদিই আপনার পাটনার হাসিব আলীর পদ আমার নামে হয়ে যাবে আপা। মন্ত্রী ইরান শেখ। ওয়াও সেই না আপা?

তনুসফা শুকনো ঢোক গিলে হ্যাঁ বোধক মাথা নারায়। রাকিয়া ইসরাফকে নিয়ে আসে। মুখ কালো করে রেখেছে ইসরাফ। ইরান সবার আড়ালে বাঁকা হেসে তার কাছে যায়। অনুতপ্ত হওয়ার ভান করে ইসরাফের পায়ের সামনে হাটু মুড়ে বসে পরে।

-আমি জানি ইসরাফ তুই আমার ওপর রেগে আছিস। ঠিকই আছে আমি তোর অপরাধী। অনেক বেশি বলে ফেলেছি সেদিন আমি। যতই হোক তুই আমার ভাই। তোকে কষ্ট দিয়ে আমি শান্তিতে থাকতে পারব না ভাই। প্লিজ বড় ভাইকে মাফ করে দে। যা হয়েছে হয়েছে। আনাবিয়া এখন তোর ভাবি হয়। আমি চাই না শুধু শুধু তোদের সুন্দর সম্পর্ক নষ্ট হোক।

ইসরাফ বিরক্তবোধ করে ইরানের কথায়। রুক্ষ চোখে ইরানের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,

-আপার থেকে আনাবিয়ার কথা শুনলাম। ঐ মেয়ে শুধু প্রতিশোধ নিতেই পরিচয় লুকিয়ে আমাদের এখানে এসেছে। আর আপনি তো একেবারে বিয়েই করে ফেললেন! ও কী আপনার বিষয় কিছুই জানে না? আপনার থেকে এখনও প্রতিশোধ নিচ্ছে না?

-মানুষকে কন্ট্রোল করতে জানি আমি ছোট ভাই। আমার বিষয় না ভেবে নিজেকে নিয়ে ভাবো কাজে দেবে।

-এখন ভাই তো আপনি তাই একটু চিন্তা হচ্ছে। ওর বড় শত্রুই তো আপনি! আপনাকে জিন্দা রাখবে?

-কিসমত করে তোর মতো ভাই পেয়েছি আমি। যে আমার জন্য এতো চিন্তা করে!

দুই ভাইয়ের কথার মাঝেই রাকিয়া বলে উঠে,

-ইরান তুই বস না আব্বা। সকালে নাস্তা করেছিস?

রাকিয়ার প্রশ্নে নিশ্চুপ হয়ে যায় ইরান। এখন মা কে কিভাবে বলবে সে নাস্তা তো দূরে থাক রাতের ডিনারও করেনি। মুখে নকলি হাসি ফুটিয়ে বলে,

-আম্মা তোমার চিন্তা করা আর কমলো না!

-মা তো তাই চিন্তা না করে থাকতে পারি না।

ইসরাফ বিরক্ত হয়ে নিজেই চেয়ার ঘুরিয়ে রুমে চলে যায়। ইরান অসন্তুষ্ট হয় ইসরাফের ব্যবহারে। ইসরাফের জন্য আনা গিফট রাকিয়ার হাতে দিয়ে বলে,

-এটা ইসরাফকে দিয়ে দিও আম্মা। আমি আসি এখন।

-কিছু খাবি না?

-না পেট ভরা আমার। আসি।

___________________

আধমরা হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে আনাবিয়া। কালকের থেকে না খেয়ে দুর্বল হয়ে পরেছে সে। রাতে অনেক কষ্টে পায়ের ও হাতের বাঁধন খুলেছে। পালানোর চেষ্টাও করেছে বহুবার কিন্তু ব্যর্থ হয়েছে। এখন অসহায় হয়ে উল্টো হয়ে বিছানায় শুয়ে আছে।
আচমকা চোখে আলো পরতেই ভড়কে যায় আনাবিয়া। পিটপিট করে চোখ খুলে মাথা ঘুরিয়ে সামনে তাকায়। অস্পষ্ট ইরানের মুখমন্ডল চোখে ভাসতেই চট করে উঠে বসে আনাবিয়া। বসার মতো শক্তি নেই তবুও বিছানার চাদর আঁকড়ে ধরে বসে। ঘৃণায় মুখ অন্যদিকে ঘুরিয়ে ফেলে।

ইরান গম্ভীর হয়ে দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছে আনাবিয়াকে। দুইজন ভৃত্য পর পর অনেকগুলো খাবার নিয়ে এসে টেবিলে রেখে দেয়। একজন ভৃত্য পুরো রুম পরিষ্কার করে দেয়। আনাবিয়া জেনো কোনো মূর্তি। টু শব্দও মুখ দিয়ে বের করে না। কাজ শেষ হয়ে যেতেই ভৃত্যরা রুম ত্যাগ করে। ইরান পায়ের ওপর পা তুলে সোফায় বসে। শান্ত কণ্ঠে আদেশ স্বরে বলে,

-ফ্রেশ হয়ে এসে খাবার খেয়ে নেও।

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-কিছু বলেছি আমি আনাবিয়া।

আনাবিয়া এবারও কিছু বলে না। ইরান বসা থেকে উঠে আনাবিয়ার সামনে যেয়ে দাঁড়ায়। নিজের শক্ত পুরুষালি হাত দিয়ে আনাবিয়ার দুই গাল চেপে ধরে রুক্ষ কণ্ঠে বলে,

-কথা কানে ঢুকে না? কয়বার বলা লাগবে একটি কথা?

আনাবিয়া প্রতিবারের মতো চুপ। ইরানকে কোনো উত্তর দিতে মন চাইছে না তার। এইরকম অমানুষের সাথে কথা বলতেও বিরক্ত লাগছে আনাবিয়ার।
আনাবিয়ার পাংসুটে মুখশ্রী দেখে ইরান তপ্ত নিঃশাস ছাড়ে। গায়ের কোট খুলে শার্টয়ের ওপরের তিনটে বোতাম খুলে নেয়। তারপর একটুও সময় ব্যয় না করে কোলে তুলে নেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া ইরানকে কিলঘুষি দিতে থাকে ছাড়ানোর জন্য। কোনো উপায় না পেয়ে রাগে ইরানের গলায় কামড় দিয়ে বসে। যেমন তেমন কামড় নয় একদম দাঁত বসিয়ে রক্ত বের করার মতো কামড়! ইরান ব্যাথায় চোখ খিচে বন্ধ করে নেয়। ওয়াশরুমে এসে আনাবিয়াকে নামিয়ে গলায় স্পর্শ করতে ভেজা ভেজা অনুভব হয় তার। হাত সামনে আনতেই দেখতে পায় আঙুলে মৃদু রক্ত লেগে আছে। আঘাত প্রাপ্ত জায়গা ডলে রাগী চোখে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। আনাবিয়া সুযোগ পেয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হতে নেবে তার আগেই ইরান দরজা লাগিয়ে দেয়। আনাবিয়ার হাত ধরে ঝর্ণার নিচে নিয়ে দাঁড় করায়। ক্ষিপ্ত কণ্ঠে বলে,

-এতো শক্তি আসে কোথা থেকে? পাক্কা একদিন না খেয়ে আছো তবুও এতো এনার্জি, এতো জোর! আমাকে দেখে কী ভয় করে না তোমার? এতো সাহস কে দেয় তোমাকে? কয়েকদিনে এই সুন্দর মুখশ্রীর কী হালটাই না করেছো!

-ডোন্ট টাচ মি। জাস্ট স্টেই ওয়ে।

-দূরে যেতে বললে আমি আরো সামনে আসবো। বুঝলে?

ইরান আনাবিয়ার গালে হাত দিয়ে করুণ চোখে আনাবিয়ার পানে চোখ স্থির করে। অস্থির হয়ে বলে,

-তোমাকে কষ্ট দিতে চাই না আমি আনাবিয়া। কেনো তুমি বোঝো না তোমাকে কষ্ট দিলে আমি নিজেই কষ্ট পাই! তোমার চোখের পানি দেখলে আমার কলিজা পুড়ে যায়। কেনো বোঝো না তুমি? প্লিজ স্টপ অল অফ দিস। আমি দ্বিতীয়বার বলছি হয় আমাকে মেরে ফেলো নয়তো আগে যেমন ছিলে সেভাবেই সংসার করো।

আনাবিয়া ভাবুক হয়ে মেঝেতে তাকিয়ে আছে। মনে মনে নতুন কিছু পরিকল্পনা করছে সে। ইরান আনাবিয়াকে জড়িয়ে ধরতে নেবে এমন সময় আনাবিয়া এক পা পিছনে সরে গিয়ে ইরানের গালে কষে থাপ্পড় বসিয়ে দেয়। রাগী কণ্ঠে কিছু বলতে উদ্যত হবে তার আগেই ইরান জেদে বসে আনাবিয়ার অধর আঁকড়ে ধরে নিজের অধরজোড়া দিয়ে। আনাবিয়া এলোপেথারি ইরানের বুকে কিল ঘুষা দিয়েই যাচ্ছে। ইরান জেনো এখন নিজের মধ্যে নেই। এতো আক্রমণের পরও আনাবিয়াকে ছাড়ছে না। কয়েক মিনিট অতিবাহি হওয়ার পর আপনা আপনি ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে।

আনাবিয়া ইরানের দিকে তাকিয়ে রাগে ফুসছে। ইরান সেটা দেখে ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,

-এভাবে তাকিয়ে না থেকে শাওয়ার নেও। বেশিক্ষন ঝর্ণার নিচে থাকলে জ্বর হবে।

আনাবিয়াকে নড়াচড়া করতে না দেখে ইরান বিরক্ত হয়ে নিজেই জোর করে গোসল করিয়ে দেয় আনাবিয়াকে। গোসল শেষ হলে আনাবিয়াকে তৈয়ালে দিয়ে পেঁচিয়ে পূর্বের মতোই কোলে করে রুমে নিয়ে আসে। ড্রেস বের করে আনাবিয়ার হাতে দিয়ে বলে,

-এখন নিজ হাতে ড্রেস চেঞ্জ না করলে সেটাও কিন্তু আমিই করে দেবো বলে দিলাম।

ইরান কথা শেষ করে নিজের জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। এর মধ্যে আনাবিয়া ড্রেস পরে দরজার কাছে যায়। কয়েকবার টানাটানি করে দরজা খোলার চেষ্টা করে। এই রুমে একটা নয় দুইটা দরজা। প্রথমে লিফটের মতো একটা দরজা। যেটা খুলতে হলে পাসওয়ার্ড দিতে হয়। পরেরটা সাধারণ কাঠের দরজা। আনাবিয়া কাঠের দরজা নিয়েই টানাটানি শুরু করেছে। খুলতে না পেরে হয়রান হয়ে বিছানায় বসে পরে।
ইরান ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে সোফায় বসে। সযত্নে খাবার বেড়ে থালিতে সাজিয়ে কিনারে রাখে।

-আনাবিয়া খেতে এসো।

আনাবিয়া নাক ফুলিয়ে তেঁতো কণ্ঠে বলে,

-এতো আদিখ্যেতা আমার জাস্ট অসহ্য লাগছে!
প্লিজ গতকালের মতো আমাকে একা ছেড়ে দিন। দরকার পরলে নাহয় ভৃত্যদের পাঠাবেন রুমে তবুও আপনি আসবেন না। আপনার এই বদসুরত চেহারা দেখলে ঘৃণা হয় আমার। পুড়িয়ে দিতে মন চায় ঐ সুরত!

ইরান আর কিছু বললো না। বসা থেকে উঠে আনাবিয়ার হাত ধরে জোর করে সোফায় নিয়ে এসে বসিয়ে দেয়। এক হাত দিয়ে আনাবিয়ার দুইহাত ধরে রাখে আরেকহাত দিয়ে খাবার খাইয়ে দেয় আনাবিয়াকে। প্রথম বাইট জোর করে মুখে দিতেই আনাবিয়া সেটা নিচে ফেলে দেয়। ইরান কিছু না বলে আরেক বাইট দেয় সেটাও ফেলে দেয় আনাবিয়া। ইরান বিরক্ত হয়ে বলে,

-এভাবে খাবার ফেলে তুমি আমার কিছুই করছো না বরং নিজের গুনাহ বাড়াচ্ছ। খাবারের অপমান করছো! রাগ জেদ আমার সাথে আমাকে আঘাত করো খাবারকে নয়।

কথা শেষ করে ইরান পুনরায় আনাবিয়ার মুখে খাবার দেয়। এবার আনাবিয়া খাবার ফালায় না। সেটা দেখে স্মিত হাসে ইরান। খাবার চিবুচ্ছে আর ইরানের হাত ছাড়ানোর চেষ্টা করছে। আনাবিয়ার ভঙ্গিমা দেখে শব্দ করে হেসে দেয় ইরান। কোনোরকম হাসতে হাসতে বলে,

-এই শক্তি নিয়ে আমার সাথে লাগতে এসেছো তুমি? আমার এক হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়াতে পারছ না তাহলে সম্পূর্ণ আমি থেকে নিজেকে কিভাবে ছাড়াবে ডিয়ার?

-শক্তি থাকলেই নিজেকে বাঘ মনে করা ব্যক্তি হলো দুনিয়ার সবচেয়ে বড় নির্বোধ ব্যক্তি! সুষ্ঠসম্পূর্ণ বুদ্ধি থাকলে ভয়ংকর থেকে ভয়ংকর মানুষের সাথেও যুদ্ধে বিজয়ী হওয়া যায়।

-ওয়েল। ইউ আর এ মাস্টার মাইন্ডার ডেটস আই অল্সো নো বাট ইউ ডোন্ট নো এবাউট মাই অবিলিটি এন্ড কোয়ালিফিকেশন। ওকে?

__________________

রাতে একজন ভৃত্য এসে আনাবিয়াকে খাবার দিয়ে যায়। এখন আর ইরান আনাবিয়ার হাত, পা বাঁধেনি। কারণ ইরান সিকিউরিটি বাড়িয়ে দিয়েছে। আনাবিয়ার রুমের সামনে দুইজন গার্ডস দাঁড়িয়ে থাকে। প্রত্যেক জালানার নিচে একজন করে গার্ডস। পুরো বাড়ি গার্ডস দিয়ে ঘেরাও করা। এমন্ত অবস্থায় এখান থেকে কোনোভাবেই পালাতে পারবে না আনাবিয়া। তাই সে পরিকল্পনা করেছে ইরানের কাছে এখন ভালো হওয়ার নাটক করবে। কোনোভাবে বাড়ির বাহিরে যেতে পারলেই সে পালিয়ে যাবে এখান থেকে।

রাতে ইরান আর রুমে আসে না এতে ভীষণ খুশি হয় আনাবিয়া। পাগল হয়ে রুমের চারপাশে ফোন খুঁজতে থাকে। হটাৎ তার মনে পরে ফোন তো ভেঙে গিয়েছে! রাগে নিজের চুল মুঠি করে ধরে। বিছানায় বসে নেইল কামড়াচ্ছিল তখনই রুমে একজন অচেনা ভৃত্য প্রবেশ করে। আনাবিয়া তাকে দেখে তেমন প্রতিক্রিয়া করে না। ভৃত্য মেয়েটা রুমের দরজা লাগিয়ে আনাবিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। আনাবিয়া মাথা তুলে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে বলে,

-কে তুমি? আগে তো এই বাসায় তোমাকে দেখিনি!

-আমি আজই নতুন কাজে এসেছি ম্যাম। অথবা ধরে নিতে পারেন আপনাকে এই বন্দি জীবন থেকে মুক্তি দিতে এসেছি।

আনাবিয়া সরু চোখে মেয়েটার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরোক্ষ করে নেয়। বিছানা থেকে নেমে টানটান হয়ে দাঁড়িয়ে বলে,

-তাই নাকি? বলো কে তুমি?

মেয়েটি ভীত চোখে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। জামার ভিতরে লুকানো ফোন বের করে এগিয়ে দেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া সন্দীহান দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে চুপচাপ।

-ম্যাম আমাকে ইসরাফ স্যার পাঠিয়েছে। উনি আপনার বিষয় সব জেনে অনেক চিন্তিত। এই ফোনের সাহায্যে আপনি তার সাথে কথা বলতে পারবেন।

-প্রথমত তুমি আমার রুমের পাসওয়ার্ড কিভাবে জানলে? দ্বিতীয়ত উনি আমাকে কেনো সাহায্য করবে? আর যে নিজের রক্ষা করতে পারলো না সে আমাকে কিভাবে রক্ষা করবে?

-আপনার পার্সোনাল একজন ভৃত্য থেকে রুমের পাসওয়ার্ড জেনেছি। আর ম্যাম আপনি স্যারের সাথে কথা বলুন।

-তুমি ইরান শেখকে চেনো? যদি তোমার সত্যি উনি জেনে যায় তাহলে তোমার কী অবস্থা হবে একটুও ভাবতে পেরেছ?

-আমি ইরান স্যারকে তেমন চিনি না কিন্তু আমার ভয় করছে। আমি এবার তাহলে আসি ম্যাম।

মেয়েটা চলে যায়। আনাবিয়া ফোনটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখতে থাকে। তারপর বাতি নিভিয়ে কম্বলের ভিতরে গিয়ে মেয়েটার দেওয়া নাম্বারে কল দেয়। কয়েক সেকেন্ড রিং হতেই কল রিসিভ করে ওপর জন।

>>>চলবে।

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ৩৭

কিছুক্ষন রিং হতেই কল রিসিভ করে ওপর পাশের জন। আনাবিয়া হালকা কেশে গলা ঠিক করে নেয়। বাঁকা হেসে বলে,

-আমার সাথে এতই যখন কথা বলার ইচ্ছে তাহলে সামনা সামনি এসেও বলতে পারেন এমপি সাহেব!

তপ্ত নিঃশাস ছাড়ে ইরান। আনাবিয়াকে পরীক্ষা করতে এই ব্যবস্থা করেছিল ইরান। সে দেখতে চেয়েছিল আনাবিয়া কী ইসরাফকে বিশ্বাস করে? ইসরাফকে পেয়ে কী সত্যি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে! তবে আনাবিয়া এতো জলদি তার পরিকল্পনায় পানি ঢেলে দেবে একটুও ভাবেনি ইরান।
ইরানকে চুপ থাকতে দেখে আনাবিয়া বলে,

-আপনি কী ভাবেন নিজেকে নিজে? অনেক বেশি চতুর? নাকি আমাকে অনেক বেশি বোকা ভাবেন? ইরান শেখের বাসায় এভাবে একজন অচেনা মেয়ে ঢুকে আমার রুম পর্যন্ত আসতে পারবে এটা ইম্পসিবল! আমি তো মেয়েকে দেখেই বুঝে গিয়েছিলাম এটা আপনারই কাজ। প্লিজ আমাকে বোকা ভাবা বন্ধ করুন। এই আনাবিয়া আপনার চোখের ফাঁক দিয়ে উড়ে যাবে। বুঝলেন?

আনাবিয়ার কথা শুনে ইরান নির্বাক। এতো কিছুর পরও একটা মেয়ে কিভাবে পালানোর কথা বলতে পারে! এতো সাহস কিভাবে পায়! ইরান গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-এতো কথা কিভাবে বলো তুমি? ওয়েট ওয়েট তুমি না ফরেইনার? এতো ইজিলি বাংলা বলতে অসুবিধা হয় না তোমার?

-রঙের আলাপ পারতে কল দিয়েছিলেন?

-হোয়াট ইস রঙের আলাপ? আর কল আমি নয় তুমিই দিয়েছ।

-ইউ ব্লা,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আনাবিয়া আর কথা শেষ করতে পারে না তার আগেই দৌড়ে ওয়াশরুম চলে যায়। গরগর করে বমি করে দেয়। অস্থির হয়ে কাশতে থাকে। ইরান সেই শব্দ শুনতে পেয়ে বিচলিত হয়ে পরে। কল কেটে দ্রুত আনাবিয়ার রুমে চলে আসে। বমি করে ক্লান্ত হয়ে দেয়াল ধরে দাঁড়িয়ে কাশছে আনাবিয়া। ইরান ওয়াশরুমে প্রবেশ করে এক হাতের সাহায্যে জড়িয়ে ধরে আনাবিয়াকে। আনাবিয়া তেমন রাগ দেখালো না। ভালোভাবে দাঁড়ানোর সামর্থ নেই এখন তার আর না জেদ করার জন্য শরীরে জোর আছে। ইরান পানি দিয়ে মুখ ধুয়ে দেয় আনাবিয়ার। তারপর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রুমের ভিতরে নিয়ে আসে। পিছনের বালিশ দিয়ে বসায় আনাবিয়াকে। আনাবিয়ার গালে হাত দিয়ে চিন্তিত হয়ে বলে,

-হটাৎ বমি কেনো হলো? কিছু করেছো নিজের সাথে? উল্টাপাল্টা কিছু খেয়েছো? সত্যি করে বলো আনাবিয়া?

-আমার মরার সখ নেই।

-আমি ডক্টরকে আসতে বলছি। অসুস্থ শরীর নিয়ে অবহেলা না করাই ভালো।

-না। আমি ঠিক আছি ডাক্তারের প্রয়োজন নেই।

-হ্যাঁ দেখছি আমি ঠিক আছো!

ইরান ফোন বের করে তাজীবকে কল দেওয়ার উদ্দেশ্যে। আনাবিয়া হতভম্ব হয়ে পরে। গলা শুকিয়ে যায় তার। কোনোরকম ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে বলে,

-আমি বললাম না আমি সুস্থ! প্লিজ বাড়াবাড়ি বন্ধ করুন। আমি ঘুমাবো বের হন রুম থেকে।

ইরান পাত্তা দেয় না আনাবিয়ার কথায়। তাজীবকে কল দিয়ে ব্যস্ত স্বরে বলে,

-তাজীব দ্রুত,,,,,,

ইরানের কথা সম্পূর্ণ করতে দেয় না আনাবিয়া। ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় ইরান ফোন। ফোন মেঝেতে পরে দুই ভাগ হয়ে যায়। ইরান অগ্নি দৃষ্টিতে আনাবিয়ার পানে তাকায়। আনাবিয়া টানটান হয়ে বলে,

-আই এম ওকে নাও ইউ ক্যান গো।

-যাবো না আমি রুম থেকে দেখি কিভাবে বের করো তুমি আমাকে!

-ইউ টু মাচ ডিসগাস্টিং।

_____________________

শেখ বাড়িতে ডায়নিং টেবিলে বসে ব্রেকফাস্ট করছে তনুসফা আর রাকিয়া। তনুসফা ক্ষনে ক্ষনে ইসরাফের রুমের দিকে তাকাচ্ছে। রাকিয়া মেয়েকে চিন্তিত হতে দেখে জিজ্ঞেস করে,

-তনুসফা জেসিকা ভালো আছে তো?

-হ্যাঁ আম্মা অনেক ভালো আছে।

-তাহলে তোর শরীর কী অনেক খারাপ লাগছে আজকে?

-না তেমন কিছু নয়।

-তবে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো তোকে? কোনো সমস্যা কী?

-না আম্মা কোনো সমস্যা নেই।

রাকিয়া আর প্রশ্ন করে না। তনুসফা সত্যি চিন্তিত আজ। আর তার চিন্তিত হওয়ার কারণ ইসরাফ। গতকাল রাত দুইটার সময় পানি নিতে ড্রইংরুমে এসেছিল তনুসফা। তখন অন্ধকারে সে ইসরাফকে চোরের মতো নিজের রুমে যেতে দেখতে পায়। অবাক হওয়ার বিষয় হলো ইসরাফ হুইলচেয়ারে বসে নয় স্বাভাবিক ভাবে পায়ে হেঁটে যাচ্ছিল! তনুসফার মতে ইসরাফ কোনো বড় ষড়যন্ত্র করছে। এখানে সবার সামনে অকেজো হওয়ার নাটক করছে অথচ সে সম্পূর্ণ সুস্থ।

-আম্মা ইসরাফকে নাস্তা দিয়েছ?

-না। ও মাত্রই ঘুম থেকে উঠলো।

-ওহ। দেও আমি ওকে নাস্তা দিয়ে আসি।

-ঠিক আছে যা।

তনুসফা খাবারের ট্রে নিয়ে ইসরাফের রুমে প্রবেশ করে। বিছানায় আধশোয়া হয়ে বসে আছে ইসরাফ। হটাৎ করে তনুসফার মাথায় একটা বুদ্ধি আসে। মনে মনে হাসি দিয়ে এগিয়ে যায়।

-আপা আজ আপনি নাস্তা নিয়ে আসলেন!

-হ্যাঁ। তোমার সাথে কথা বলতে এলাম। একা একা রুমের ভিতর বসে থাকতে হয়তো অনেক বোরিং লাগে তাই না?

-ঐ আর কী।

তনুসফা ট্রে রাখার সময় ইচ্ছে করে গরম স্যুপের পেয়ালেটা ইসরাফের পায়ের ওপর ফেলে দেয়। স্যুপ গুলো ইসরাফের পায়ে পরে আর কাঁচের পেয়ালে নিচে পরার সাথে সাথেই চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায়। গরম সহ্য করতে না পেরে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় ইসরাফ। ইসরাফের চিৎকারে রাকিয়া ও ভৃত্যরা দৌড়ে আসে। আকস্মিক ইসরাফের মনে পরে যায় নিজের অস্তিত্বের কথা। তনুসফা কঠিন চোখে ইসরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। রাকিয়া ইসরাফকে দেখে খুশিতে কেঁদে দেয়। ইসরাফকে জড়িয়ে ধরে বলে,

-বাবা তুই ঠিক হয়ে গিয়েছিস! আল্লাহ তোমার লাখ লাখ শুকরিয়া আমার ছেলেকে তুমি সুস্থ করে দিয়েছ।

ইসরাফ কোনোরকম নাটক করে পা ধরে ব্যাথা পাওয়ার ভান করে। বিছানায় বসে মৃদু হেসে বলে,

-আম্মা আপনার দোয়া চমৎকার করে দিলো! পা ঠিক হয়ে গিয়েছে আমার।

-এখন ঠিক হয়েছে না আগের থেকেই ঠিক ছিল ইসরাফ?

তনুসফার কথা শুনে চোখ ছোট ছোট করে তার দিকে তাকায় ইসরাফ। স্বাভাবিক ভাবেই বলে,

-আপা আপনিও না! ডাক্তার কী বলেছিল শুনেন নি? এটা চমৎকার। আমি কখন ভাবিনি এই পায়ে ভর দিয়ে আমি দাঁড়াতে পারব!

-যাক। তুমি ঠিক হয়েছো এটাই অনেক। আম্মা ইরানকে বলে দিও ইসরাফের কথা।

রাকিয়া ইসরাফের পা পরিষ্কার করে দিচ্ছিল। তনুসফার কথায় মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,

-বলবো কিন্তু এখন নয়। শুভ কাজে বাধা দিতে চাচ্ছি না।

-ওহ হ্যাঁ ইরান তো এখন রাস্তা মেরামতের আরম্ভতে গিয়েছে।

-ভালোভাবে ওর কাজ সম্পূর্ণ হোক তারপরই এই সুখবরটা দিয়ে দেবো।

-ঠিক আছে।

____________________

কাজ শেষ করে অফিসে আসে ইরান। দ্রুত পায়ে নিজ ক্যাবিনের উদ্দেশ্যে পা চালাচ্ছে। তাজীব হাঁটতে হাঁটতে ইরানকে আজকের মিটিংয়ের বর্ণনা দিচ্ছে। স্টাফ মেয়েরা আড়চোখে ইরানকে দেখছে। কিছু বলার সাহস নেই তাঁদের তাই চোখের দেখায়ই মনকে শান্ত করে। ক্যাবিনে এসে চেয়ারে বসে ইরান বলে,

-কাম অন তাজীব আগে নিঃশাস নেও তারপর বলো।

-স্যার বাসা থেকে কল এসেছে।

-আই সি। তুমি কল ধরো।

ইরানের কথা মতো কল রিসিভ করে কানে দেয় তাজীব। এক মিনিটের মতো কথা বলেই কল কেটে দেয়। মুহূর্তেই তার মুখে চিন্তার ছাপ দেখা যায়। ইরান গম্ভীর মুখে জিজ্ঞেস করে,

-কী বললো?

-স্যার ম্যাম মুখ ধোয়ার সময় ওয়াশরুমে অজ্ঞান হয়ে পরে গিয়েছিল। শিখা ও আরো কয়েকজন মিলে ম্যামের জ্ঞান ফেরানোর চেষ্টা করছে। ১৫ মিনিট হয়ে গিয়েছে এখনও জ্ঞান ফিরছে না ম্যামের। আপনাকে আর্জেন্টলি বাসায় যেতে বলেছে।

ইরান অস্থির হয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ফোন পকেটে ভরতে ভরতে বলে,

-আজকের মিটিং ক্যান্সাল করো। আর ডাক্তারকে আসতে বলো কুইকলি।

-ইয়েস স্যার।



বড় বড় পা ফেলে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ইরান। সে রুমে আসতেই ভৃত্যরা এক এক করে বেরিয়ে যায়। এতক্ষনে ডাক্তারও চলে এসেছে। তাজীব ডাক্তারকে রুমে নিয়ে আসে। ইরান মুখ ছোট করে রুমের বাহিরে যেয়ে দাঁড়ায়। আনাবিয়ার এই অবস্থার কারণে নিজেকে দোষারোপ করছে ইরান। ইরানের মতে আজ তার জন্যই আনাবিয়ার অসুস্থ হয়ে পরেছে। সে অবহেলা করেছে আনাবিয়াকে, ঠিক মতো খেয়াল রাখেনি তার। কিছুদিন আগে এতো বড় আঘাত পেয়েছিল তখনও সে আনাবিয়ার পাশে থাকেনি, যত্ন করেনি। স্বামী হিসেবে নিজেকে ব্যর্থ মনে করে ইরান। কপালে হাত দিয়ে অনুতপ্ত স্বরে বলে,

-তাজীব আজ আমার জন্যই তোমার ম্যামের এই অবস্থা। আমি যদি তার সঠিক ভাবে যত্ন করতাম তাহলে সে এতো অসুস্থ হয়ে পরতো না। সব আমার দোষ। ব্যর্থ স্বামী আমি।

-স্যার চিন্তা করবেন না ম্যামের তেমন কিছু হবে না সে সুস্থ হয়ে যাবে।

-তোমার কথাই জেনো হয়।

মিনিটখানেক পর রুম থেকে বেরিয়ে আসে ডাক্তার। মুখে মুচকি মুচকি হাসি তার। ইরান আগ্রহী হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-ডাক্তার আমার ওয়াইফ?

-চিন্তার কোনো বিষয় নেই মিস্টার ইরান। বরং সুখবর আপনি বাবা হতে চলেছেন। মিসেস শেখ প্র্যাগনেন্ট।

ডাক্তারের কথায় রোবট হয়ে যায় ইরান। মুখে একরাশ বিস্ময়। তাজীব খুশি হয়ে যায়। কিন্তু ইরানকে এইরকম অস্বাভাবিক ভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। মৃদু স্বরে বলে,

-স্যার,

ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে ইরান এখন তার কেমন ব্যবহার করা দরকার বুঝতে পারছে না ইরান। যখন খুশি আর কষ্ট মিলে যায় তখন পরিস্থিতি বুঝি এইরকমই হয়! ইরান মস্তিক থেকে সকল খারাপ চিন্তা দূর করে শুধু নিজের আগামী সন্তানকে নিয়ে ভাবতে থাকে। খুশিতে চকচকে উঠে তার মুখশ্রী। বড় একটি হাসি দিয়ে বলে,

-আমার ওয়াইফ এমনে ঠিক আছে তো ডাক্তার?

-ঠিক আছে কিন্তু তার রক্ত শূন্যতা আছে যেটা ভবিৎষতে বেবি ও মার ক্ষতি করতে পারে। যদি তাকে হসপিটালে নিয়ে গিয়ে সকল টেস্টগুলো করিয়ে ফেলেন তাহলে ভালো হয়।

-আমি নিয়ে যাবো হসপিটালে। অনেক ধন্যবাদ ডাক্তার।

-ঠিক ভাবে যত্ন নেওয়া অবশ্যক।

-জি ডক্টর।

ডাক্তার চলে যায়। তাজীব ডাক্তারকে এগিয়ে দিয়ে আসতে যায়। ইরান রুমের ভিতরে ঢুকে দেখে আনাবিয়া ঘুমিয়ে আছে। ধীরেধীরে আনাবিয়ার পাশে বসে পরে সে। আনাবিয়ার গালে হাত দিয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে তার দিকে। গভীর চুম্বন একে দেয় আনাবিয়ার ললাটে।

-আমি জানি আনাবিয়া তুমি এটা আগেই জানতে তাও আমাকে বলোনি। তোমার এতো ঘৃণা আমি সয্য করতে পারছি না একদম! আম্মা ঠিক বলতো আমার কিসমত আসলেই খারাপ তাইতো সম্পূর্ণ দোষ না করেও তোমার কাছে একমাত্র অপরাধী আমিই!

-স্যার আসবো।

তাজীবের কণ্ঠস্বর শুনে নড়েচড়ে বসে ইরান। শান্ত কণ্ঠে বলে,

-এসো তাজীব।

-স্যার ডাক্তার ম্যামকে এখন এক্সট্রা মেডিসিন নিতে না করেছে। স্পেশালি বেশি পাওয়ারের মেডিসিন একদমই খাওয়া যাবে না।

-ঠিক আছে।

-স্যার একটা কথা বলি মাইন্ড করবেন না?

-তোমার কোনো কথায় আমি মাইন্ড করি? বলো?

তাজীব মেয়েদের মতো লজ্জা পাওয়ার ভান করে ইরানের দিকে তাকায়। আমতা আমতা করে বলে,

-স্যার কিছুক্ষন আগে আপনি বললেন না ম্যামের অসুস্থের কারণ আপনিই? আপনারই সব দোষ? আপনার এই কথাটা সত্যি ছিল স্যার! আপনার জন্যেই তো ম্যাম এখন থেকে সবসময় অসুস্থ থাকবে।

তাজীবের কথায় ইরান ভেবছেঁকা খেয়ে যায়। অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাজীবের দিয়ে তাকায়। চোখ গরম করে কিছু বলতে যাবে তার আগে দৌড়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায় তাজীব। তাজীবের কান্ড দেখে শব্দ করে হেসে দেয় ইরান। আজ অনেকদিন পর হয়তো মন খুলে হাসছে সে।

🌸

পাক্কা দুই ঘন্টা পর ঘুম ভাঙে আনাবিয়া। ডাক্তার তখন তাকে একটা ইনজেকশন দিয়েছিল সেটার দরুণ সে এতক্ষন ঘুমে বিভোর ছিল। আরমোড়া দিয়ে উঠে বসতেই চমকে যায় আনাবিয়া। রুম ভর্তি খাবার, বাচ্চাদের খেলনা, আনাবিয়ার জন্য অনেক গুলো টি-শার্ট আরো কিছু সিম্পল ড্রেস, বাচ্চাদের ড্রেস। একপাশে ছেলে বেবির আরেক পাশে মেয়ে বেবির। বিছানার বরাবর স্মুখীন একটা কেউট বেবির ছবি ঝুঁলানো হয়েছে। তার পাশেই ইরান আনাবিয়ার অনেক গুলো ছবি। আনাবিয়া বিস্মিত হয়ে পাশে ফিরতে দেখে তার পাশে বিশাল বড় একটি টেডিবিয়ার। আচমকা টেডিবিয়ারকে দেখে ভয় পেয়ে একটু সরে যায়। হটাৎ সে অনুভব করে পিছনেও কিছু একটা আছে। আনাবিয়া মনে মনে ভাবে এটাও হয়তো টেডিবিয়ার। বিরক্ত হয়ে ওপর পাশে ফিরতেই চোখ ছানাবড়া হয়ে যায় তার। গোলগোল চোখ করে সামনে শুয়িত ব্যক্তিতে দেখতে থাকে আনাবিয়া।

-এভাবে তাকিয়ে থেকো না ডিয়ার। হয়তো তুমি নতুন করে প্রেমে পরে যাবে নয়তো আমি নতুন করে পাগল প্রেমিক হয়ে যাবো।

মাথার নিচে দুই হাত দিয়ে আয়েস করে শুয়ে আছে ইরান। দৃষ্টি তার আনাবিয়াতেই নিবদ্ধ। আনাবিয়া বুকে থু থু দিয়ে রুক্ষ কণ্ঠে বলে,

-এখানে কী করছেন আপনি? এখন অফিস রেখে আমাকে পাহারা দেওয়া শুরু করেছেন নাকি?

-সুন্দর ওয়াইফ রেখে অফিসে মন বসে না ডিয়ার।

ন্যাকামো করে কথাটা বলে ইরান। আনাবিয়া কপাল কুঁচকে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-পাগল যখন হয়েছেন পাবনায় গিয়ে ভর্তি হন। এখানে পাগলদের দাম নেই।

-এখন যার জন্য পাগল হয়েছি সেই পারবে আমাকে সুস্থ করতে।

-রাব্বিশ!

-আমার কথা তোমার কাছে রাব্বিশ লাগলেও তোমার এই তেঁতো কথা গুলো আমার কাছে কিন্তু ভীষণ এট্রাক্টিভ লাগে মাই উট বি বেবির বিউটিফুল মাম্মি।

>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ