Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"সে প্রেমিক নয়সে প্রেমিক নয় পর্ব-৩৪+৩৫

সে প্রেমিক নয় পর্ব-৩৪+৩৫

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ৩৪

-ডিভোর্স দিলেই সব কিছুর সমাধান হয়ে যায় মা? যদি তুই ইরানকে ভালোবাসিস তাহলে ওকে ছাড়া থাকবি কিভাবে?

-সত্যি বলতে এখন আমার মনে তার প্রতি একটুও ভালোবাসা অবশিষ্ট নেই মম। তোমাকে আমি শাশুড়ি নয় মা ভেবেছি। তাই তোমার সাথে আমার সারাজীবন যোগাযোগ থাকবে।

আনাবিয়া সোফায় বসে ফোন হাতে নিয়ে তাজীবকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-আশা করি যে কাজ আপনাকে দিয়েছি দায়িত্বের সাথে তা পূরণ করবেন।

-ম্যাম?

-প্লিজ আমি আর কিছু শুনতে চাই না।

-জি ম্যাম।

তাজীব চলে যায়। আনাবিয়াকে নিজ হাতে খাইয়ে দেয় রাকিয়া। মনে কালবৈশাখীর ঝড় চলছে তার। ছেলে যতই খারাপ হোক না কেন মায়ের কাছে সে সর্বদা ভালো। রাকিয়াও নিজের ছেলেকে হাসি খুশি দেখতে চায়। ছোটকাল থেকে অনেক কষ্ট সহ্য করেছে তার ইরান এখন তো একটু সুখ পাওয়ার অধিকার আছে তার!

🌸

তনুসফার সাথে তার অফিসে দেখা করতে এসেছে হাসিব আলী। মেয়েকে হারিয়ে নাজেহাল অবস্থা তার। সামনাসামনি বসে আছে দুইজন। হাসিব আলী দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-তোমার ভাইয়ের জন্য আজ আমি আমার মেয়েকে হারিয়েছি। এখানে সব দোষ তোমার ছিল তনুসফা।

-আমি সিউর জানি না যে তাহশিয়াকে সত্যি ইরানই মেরেছে! আপনিও সবটা না জেনে ওকে দোষারোপ করতে পারেন না।

-তুমি ওকে ওয়াদা দিয়েছিলে না? কী হলো তোমার ওয়াদার? আমি চাই আমার মেয়ের খুনিকে তুমি শাস্তি দেও নয়তো আমি বড়োসড়ো পদক্ষেপ নেবো।

-ক্ষমা করবেন আমি আর কিছু করতে পারব না। ইরান এখন ভয়ংকর হয়ে গিয়েছে! ওর সাথে গেঞ্জাম করার ইচ্ছে ও শক্তি আমার নেই।

-তুমি এভাবে স্বার্থপর হতে পারো না তনুসফা।

-সবাই আগে নিজ স্বার্থের কথাই ভাবে মন্ত্রী সাহেব। আমি আপনাকে শেষবারের মতো একটা সাহায্য করতে পারি।

-কী?

-ইরানের দুর্বলতা ওর স্ত্রী আনাবিয়া। এবং আপনি আপনার মেয়ে হারিয়েছেন ও আনাবিয়ার জন্যেই। এখন আপনি ইরানের থেকে প্রতিশোধ নিতে চাইলে আনাবিয়ার ওপর আক্রমণ করতে পারেন।

হাসিব আলী চুপচাপ তনুসফার কথা শুনলো। যুক্তি আছে তনুসফার কথায়। তনুসফা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে,

-আশা করি আর দরকার হবে না আমাকে। সাবধানে থাকবেন।

_________________🌸

চেকাপ করে বাসায় আসে আনাবিয়া ও রাকিয়া। হসপিটাল থেকে বাসায় আসার পর আনাবিয়ার মনে শান্তি নেই। কিছুক্ষন পর পরই কিসের জেনো ভাবনায় ডুবে যাচ্ছে। রাকিয়া বিষয়টা লক্ষ্য করছে। কিন্তু কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হচ্ছে না তার।

ইরান আজ অফিসে এসেছে। ইরানকে দেখে তাজীব খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায়। ইরানের কিছু বলার আগেই তাজীব বলে,

-আপনি এসেছেন স্যার! আমি অনেক ভয়ংকর অবস্থায় আছি এখন আমাকে বাঁচান।

-শান্ত হও তাজীব। ফোনে তোমার কথা শুনে আমি নিজেকে আর লুকিয়ে রাখতে পারলাম না তাই এসে পরেছি।

ইরান নিজের চেয়ারে বসে পরে। তাজীব প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে ইরানের দিকে তাকিয়ে বলে,

-স্যার আপনি কোথায় ছিলেন এই কয়দিন?

-ছিলাম এক জায়গায়।

-স্যার তাহশিয়া ম্যামের খবর শুনেছেন?

তাজীবের প্রশ্ন শুনে শব্দ করে হেসে উঠে ইরান তাজীব আহাম্মক বনে তাকিয়ে রইলো ইরানের দিকে।

-শুধু শুনিনি দেখেছিও।

-মানে স্যার আপনি,,,,,,

-এতো মানে মানে করো কেনো তাজীব? তাহশিয়াই আনাবিয়াকে সেদিন পার্সেল পাঠিয়েছিল। কিন্তু তাহশিয়া একা নয় ওর সাথে আরো একজন আছে।

-তনুসফা ম্যাম?

-সেও ছিল কিন্তু তাহশিয়া চতুর মেয়ে। তনুসফা শেখকে সব বলতো না অনেক কিছু লুকিয়ে রাখতো।

-তাহলে? ওর বাবা?

-হাসালে তাজীব! একজন বাবা তো সর্বদাই মেয়ের সাপোর্ট করবে। কেউ আমাকে বেকুব বানাচ্ছে। বুঝলে তাজীব?

-কে স্যার? বিশ্বাস করুন স্যার আমি এসবের মধ্যে নেই।

-তোমাকে সন্দেহ করার প্রশ্নই আসে না। আমার বাপের র*ক্তই তো আমার বড় শত্রু!

-ইসরাফ স্যার?

ইরান কোনো উত্তর দিলো না। স্মিত হেসে ল্যাপটপ অন করে। সেখানে চোখ স্থির করতেই মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয়ে যায় ইরানের। ল্যাপটপের স্ক্রিনে আনাবিয়াকে দেখা যাচ্ছে। রুমের দরজা লাগিয়ে বিছানায় বসে আছে মাথায় হাত দিয়ে। অনেক বেশি বিচলিত দেখাচ্ছে আনাবিয়াকে।
ইরান বাসা থেকে যাওয়ার আগে নিজেদের রুমে সিসিক্যামেরা লাগিয়ে গিয়েছিল আনাবিয়ার অগোচরে। এতদিন তার আনাবিয়াকে না দেখে কিভাবে থাকবে তাই এ কাজ করেছিল। এক সপ্তাহে আনাবিয়াকে একবারও হাসতে দেখেনি সে। সবসময় মুখ গম্ভীর করে বসে কিছু একটা ভাবে। হঠাৎ করেই কাশতে থাকে আনাবিয়া। একসময় কাশতে কাশতে বমি চলে আসে তার। তাই দৌড়ে ওয়াশরুম চলে যায়। ইরান সেটা দেখে একটু ঘাবড়ে যায়। রাগী কণ্ঠের তাজীবকে বলে,

-তোমার ম্যাম আজ চেকাপ করতে গিয়েছিল তাজীব?

-জি স্যার আন্টি নিয়ে গিয়েছিল ম্যামকে।

-আমি জাস্ট ভাবতে পারছি না কিভাবে সে এতো বড় ডিসিশন নিলো? ডিভোর্স চাই তো তার? আমার থেকে দূরে যেতে চায় তো? আই স্যয়ার সারাজীবনের জন্য বন্দী করে রাখবো তাকে।

-আজ ম্যামের সাথে দেখা করবেন স্যার?

-হ্যাঁ। তার পাখা কাটতে আমার তার স্মুখীন যেতে হবে।

ইরান নিশ্চুপ হয়ে ফের ল্যাপটপের স্ক্রিনে চোখ স্থির করে। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে আলমিরা খুলে আনাবিয়া। পরিহিত জামা ভিজে গিয়েছে তার। নতুন একটি জামা নিয়ে পরার জন্য উদ্যত হতেই ইরান ল্যাপটপ বন্ধ করে দেয়। বেচারি আনাবিয়া! সে তো জানেও না ইরান তার প্রত্যেক কর্মকান্ড দৃঢ় ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে সবসময়। চোখ বন্ধ করে জোরে নিঃশাস নেয় ইরান। তাজীব ইরানকে দেখে আমতা আমতা করে বলে,

-স্যার একটা প্রশ্ন করব?

ইরান চোখ বন্ধ অবস্থায় মাথায় হাত দিয়ে বলে,

-বলো?

-আপনি কী সত্যি ম্যামের বাবা মার খুনি? আমি এটা আগেও আপনার মুখ থেকে শুনেছি তবুও আমার কেনো জানি বিশ্বাস হচ্ছে না স্যার।

-সত্যিটা বিশ্বাস করতে শেখো তাজীব।

কিছুক্ষন নীরবতা কাটিয়ে ইরান তাজীবের দিকে তাকায়। চোখের ইশারায় তাজীবকে চেয়ারে বসতে বলে। তারপর ইরান বলতে শুরু করে,

-তোমার কাছে আমি হলাম খোলা ডায়রি। আমি তোমাকে কতটা বিশ্বাস করি সেটা হয়তো তুমি নিজেও জানো?

-জি স্যার। আমিও সবসময় চেষ্টা করি আপনার বিশ্বাসের মর্যাদা রাখতে এবং সামনেও করব।

-খুশি হলাম। আমার ছোটকালের কথা নিশ্চই শুনেছ? ছোটকাল থেকেই এক জঘন্য ও নোংরা পরিবেশে বড় হয়েছি আমি। ছেলে হয়েছিলাম তাই ফ্যামিলি থেকে একটু আদর পেয়েছি মেয়ে হলে হয়তো তাও পেতাম না। আমার জীবনের উদ্দেশ্য একটাই ছিল যে যে আমার মাকে কষ্ট দিয়েছে তাঁদের ভয়ংকর থেকেও ভয়ংকর অবস্থা করা। আমার বলতেও লজ্জাবোধ হয় যে আমার জন্মদাতা ছিল একজন ধর্ষক। অন্য মেয়েদের প্রতি নেশা ছিল তার অনেক বেশি। অথচ নিজের স্ত্রীর প্রতি কোনো দামই ছিল!

তাজীব নীরব দর্শকের মতো ইরান কথা শুনছে। শেষের কথা গুলো বলার সময় ইরানের গলা মৃদু কেঁপেছিল যেটা তাজীব অনুভব করতে পেরেছে।

-যখন আমার আঠারো বছর বয়স হয় তখন মনে মনে একটা কথাই ভাবতাম যেভাবেই হোক এরফান শেখ ও তার পরিবারকে ধ্বংস করে দেবো আমি। আমার কিছু কর্মকান্ডের এরফান শেখ বুঝে যায় আমি যে তাকে মারার প্ল্যান করছি তাই সে আমাকে দূরে দূরে রাখতো ইসরাফকে বেশি নিজের কাছে রাখতো। এক সম্মেলনে নিজের পরিচয় লুকিয়ে অন্য পার্টির দলের সাথে হাত মেলালাম। তারা শেখ পরিবারকে মারতে চেয়েছিল। আমিও তাঁদের সাহায্য করি। বলতে গেলে সবই আমিই করি। সেদিন বোম ব্লাস্টে মারা যায় এরফান শেখের ভাই, ভাইয়ের বউ, তাঁদের ছেলে এবং এরফান শেখের বাবা। তাঁদের রক্ত দেখে আমার সেদিন উৎসব উৎসব ফিলিংস হয়েছিল। তারা সবাই অনেক জ্বালিয়েছিল আমার মা কে।

-স্যার সেটাই আপনার জীবনের প্রথম খুন?

-নোহ। জেদে বসে সর্বপ্রথম আমি আমার বেস্টফ্রেন্ডকে মেরেছিলাম।

-ধরা পরেননি স্যার?

-নাহ। কিন্তু অনেক ভয় পেয়েছিলাম।

-তারপর?

-তারপর এরফান শেখ অনেক বেশি সন্দেহ করা শুরু করে আমাকে। আমি তখন তাকে মারার পরিকল্পনা পরিবর্তন করে ফেলি। তার চোখে ভালো ছেলে হওয়ার প্রতিজ্ঞা করি। কারণ আমি চাইছিলাম আগে তার চোখে ভালো হবো যাতে আমার পরিকল্পনা সে বুঝতে না পারে আর ভবিৎষতে আমাকে কেউ সন্দেহ না করে। হয়ে গেলাম তার গোলাম। ইসরাফ ছিল ভীত। মুখে মুখে বড় বড় কথা বললেও রক্ত দেখলেই ভয় পেয়ে যেত সে। এরফান শেখ আমার মতোই ভয়ংকর চালাক ছিল। আমাকে অনেক ভাবে পরীক্ষা দিতে হয়েছিল তার কাছে। তার জন্য অনেক নির্দোষকে খুন করেছি আমি। নির্বাচনের সময় ওপর দল বেশি পাওয়ারফুল হলেই আমাকে হুকুম করত তাঁদের পথ থেকে সরানোর জন্য। আমিও তাই করতাম। আমার জীবনের শেষ পরীক্ষা ছিল তন্নী ফারুকের খুন করা! আমার পড়াশোনার জন্য কানাডায় পাঠায়। ঠিক তার কয়েক বছর পরই একদিন এরফান শেখ ফোন করে বলে তন্নী ফারুকের কথা। তার কালো ধান্দার অনেক প্রমান নাকি তন্নী ফারুকের কাছে ছিল। সে ভীত হয়ে আমাকে দেশে আসতে বলে। আমি ভাবি দেশে যাবো না এভাবেই তার ধ্বংস হোক। হঠাৎ আমার মনে পরে তার মৃত্যু শুধুই আমার হাতে হবে। তাই তৎক্ষণাৎ দেশে চলে আসি আমি। তন্নী ফারুককে দেখে অনেক ইমপ্রেস হই আমি প্রথম। একজন মহিলা কিভাবে এতো সাহসী হয়! তাকে কয়েকবার সাবধান করি। তবুও সে নিজের কাজে অটল। শেষে আমার রাগ উঠে যায়। একজন মহিলা আমাকে চ্যালেঞ্জ করেছে! আমাকে! এরফান শেখের কথা ভুলে তখন আমি আমার আত্মসম্মানকে বেশি মর্যাদা দেই। তারপর একদিন পরিকল্পনা করে গাড়ি এক্সিডেন্ট করিয়ে দেই। যেটা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুল ছিল!

তাজীব স্তব্ধ। ইরান চোয়াল শক্ত করে মাথা নিচু করে বসে আছে। তাজীব কপালে ভাঁজ করে প্রশ্ন করে,

-তাহলে ম্যাম কিভাবে জানতো যে এরফান শেখ তার পরিবারের খুন করিয়েছে?

-তোমার ম্যামের কাছে একটা মেমোরি ছিল। যেটায় সেদিন গাড়ি এক্সিডেন্টের সময় ভিডিও করেছিল তন্নী ফারুকের হাসব্যান্ড। সেই মেমোরি পেয়েছিল আনাবিয়ার খালামুনি সে-ই আনাবিয়াকে সেটা দিয়েছে। আর ঐ ভিডিও তে শুধু এরফান শেখ এবং ইসরাফকে দেখা যায় আর তাঁদেরই কণ্ঠস্বর শোনা যায়। বিয়ের প্রথমদিন রাতে আনাবিয়া আমাকে সব বলেছিল। আমিই স্বার্থপরের মতো ওকে হারানোর ভয়ে, নিজের খুশির কথা ভেবে মিথ্যের আশ্রয় নিয়েছিলাম।

-ভিডিওতে আপনি কেনো ছিলেন না স্যার? আপনারও তো থাকার কথা?

-সৃষ্টিকর্তা জনতো ও আমার কিসমতে আছে তাই সবটা ধোঁয়াশা করে রেখেছিল! আমি গাড়ির পিছনে ছিলাম। ডেথবডি গুলো চেক করে দেখছিলাম কেউ বেঁচে আছে নাকি। তাই ভিডিও তে আমি নেই এবং আমার কোনো কথাও নেই।

-স্যার এখন আপনি কী করবেন? ম্যাম অগ্নির গোলা হয়ে আপনাকে জ্বালিয়ে দেবে।

-দেখি কত জ্বালাতে পারে।

___________________🌸

বেলকনিতে বসে আছে আনাবিয়া। শান্ত দৃষ্টিতে দূর আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সে। ফোন হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করছে। একবার গ্রান্ডমার নাম্বারে কল দিচ্ছে আরেকবার নিজেই কল কেটে দিচ্ছে। নিজের কাজে আনাবিয়া নিজেই বিরক্ত। মনে সাহস জোগাড় করে কল দেয় গ্রান্ডমাকে। কিছুক্ষন রিং হওয়ার পর পরই কল রিসিভ করে গ্রান্ডমা।

-কেমন আছো বাচ্চা? শরীর সুস্থ আছে?

-আমি ভালো নেই গ্রান্ডমা। একটুও ভালো নেই।

আনাবিয়ার অস্থির কণ্ঠস্বর শুনে চিন্তিত হয়ে গ্রান্ডমা বলে,

-হোয়াটস প্রবলেম মাই চাইল্ড?

-গ্রান্ডমা আমি পাগল প্রায়! কী হচ্ছে আমার সাথে এইসব! কিছুই বুঝতে পারছি না আমি। মাথায় শুধু সুই*সাই*ডের কথা ঘোরে আমার।

-চুপ করো এইসব বলো না। শান্ত হও এবং কী হয়েছে সেটা আগে বলো আমাকে?

-ইরান, ইরান-ই মা বাবাকে খুন করেছে গ্রান্ডমা। আমি চাইলেও এই সত্যিকে গ্রহণ করতে পারছি না! এখানে আমি এসেছিলাম প্রতিশোধ নিতে কিন্তু এখন আমি পারছি না নিজের শত্রুকে মারতে।

-আনা শান্ত হও বাচ্চা। এইরকম অবস্থায় এতো বিচলিত হতে নেই। মাথা শান্ত করে ভাবো। ইরান খুনি প্রুফ আছে তোমার কাছে?

-সে নিজেই স্বীকার করেছে।

-তাহলে আর কী করার সত্যিটা মানতে হবে। তুমি যা করবে ভেবে চিন্তে করবে।

-আমি তাকে মারতে পারব না আর না নিজেকে শেষ করতে পারব! আমি ভেবেছি পালিয়ে যাবো এখান থেকে। ইরান আমাকে সহজে ডিভোর্স দিবে না তাই আমার কোনোভাবে পালিয়েই যেতে হবে।

-ঠিক আছে এখানে এসে পড়িও তুমি। আমরা আছি। আর হ্যাঁ নিজের কোনো ক্ষতি করবে না আনা।

-আমি চাইলেও নিজের ক্ষতি করতে পারব না গ্রান্ডমা। আমি,,,,,,,,,,,,,,

-পালিয়ে যাওয়ার শুধু প্ল্যানই করো। কারণ তোমার প্ল্যান সত্যি হতে তো আমি দেবো না আনাবিয়া সাবরিন।

ইরানের কণ্ঠস্বর শুনতেই পিছনে ফিরে তাকায় আনাবিয়া। কল কেটে দেয়। অসম্পূর্ণ কথা অসম্পূর্ণই থেকে যায়। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় আনাবিয়া। ইরানের মুখে রাগের আভাস যেটা অনেক কষ্টে ইরান লুকিয়ে রাখা চেষ্টা করছে। আনাবিয়া তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে,

-অতঃপর গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছে শিয়াল! একজন খুনি আমাকে এতো ভয় পাবে আমি একটুও ভাবিনি কিন্তু!

>>>>>চলবে।

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ৩৫

-অতঃপর গুহা থেকে বেরিয়ে এসেছে শিয়াল! একজন খুনি আমাকে এতো ভয় পাবে আমি একটুও ভাবিনি কিন্তু!

ইরান প্রতিউত্তর না দিয়ে ধীর পায়ে সামনে এগোতে থাকে। আজ আনাবিয়ার মনে ইরানের প্রতি ভয়, ভালোবাসা কিছুই নেই। শুধু আছে এক আকাশ সমান ঘৃণা।
প্রতিশোধের নেশায় জ্বলন্ত আনাবিয়ার আঁখিজোড়া দেখে পা থেকে মাথা পর্যন্ত শিরশিরে উঠে ইরানের। দুর্বল হয়ে পরে মন। এলোমেলো হয়ে যায় মস্তিক।

-ব্যাস। আর সামনে আগাবেন না। আমি চাই আপনার আর আমার মধ্যে নিম্নে হলেও পাঁচ হাত দূরত্ব থাকুক।

-রইলো তোমার কথা। কী বলেছো তুমি তাজীবকে?

-আমি ডিভোর্স চাই তাই তাকে পেপার বানাতে বলেছি।

-একবারও কলিজা কাঁপলো না তোমার এইরকম ভয়ংকর একটি কথা বলতে?

-আমার নির্দোষ বাবা, মা, বোনকে মারতে আপনার কলিজা কেঁপেছিল? কাঁপে নি তো। তাই আমারও কাঁপে নি।

-তুমি আমাকে ভালো করে চেনো আমি,,,

-ভুল বললেন যে! এই কয়মাসে আমি আপনাকে একদমই চিনতে পারিনি। আমি যাকে চেনতাম, যাকে বিশ্বাস করতাম সে ছিল আমার হাসব্যান্ড। আর আপনি হলেন এমপি ইরান শেখ এরফান শেখের ছেলে।

চোখ বন্ধ করে নিঃশাস নেয় ইরান। সে জানতো আনাবিয়া এইরকম ব্যবহারই করবে তাই নিজেকে যথাসম্ভব ধয্যশীল করেই এখানে এসেছে। কঠিন চোখে আমাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-আমার থেকে দূরে তুমি যেতে পারবে না। হয় আমাকে মেরে ফেলো নয়তো সবটা মেনে চুপ করে থাকো। ডিভোর্স তো তোমাকে আমি দিচ্ছি না।

-আমি থাকবো না একজন খুনির সাথে। ছি! আমার ভাবলেই নিজের প্রতি নিজের ঘৃণা হয় কিভাবে নিজের পরিবারের খুনিকে পছন্দ করলাম।

তিক্ত কণ্ঠে কথাটা বলে আনাবিয়া। ইরান চোয়াল শক্ত করে আনাবিয়ার দিকে এগিয়ে যেতে নেয়। হটাৎ করে রাগ আনাবিয়ার মাথায় উঠে যায়। হাতের ফোন ছুঁড়ে মারে ইরানের দিকে। ইরান কপালে একটু ব্যাথা পায় তবুও কোনো প্রতিক্রিয়া করে না। আনাবিয়া এক পা দু পা পিছিয়ে যায়। চিৎকার করে বলে,

-আমার সামনে আসবি না তুই। স্টেই ওয়ে ফ্রম মি।

-রুমের ভিতরে আসো আনাবিয়া।

-তুই আমার সামনে আসবি না। গেট আউট। আই সেইড গেট আউট।

-আমার মেজাজ গরম করিও না আনাবিয়া।

-কেনো কী করবি তুই? আমাকেও মেরে ফেলবি? অপ্স এটা ছাড়া আর পারিস কিছু! তোর হাতে মরার থেকে ভালো আমি এখান থেকে লাফ দিয়ে মরে যাই।

আনাবিয়া বেলকনি দিয়ে নিচে তাকায়। মোটামুটি ভালোই উঁচু। এখান থেকে পরলে আর জিন্দা থাকবে না। আনাবিয়া প্রস্তুত নেয় লাফ দেওয়ার জন্য। ইরানের চোখ মুখ ভীত দেখা যায়। শান্ত কণ্ঠে বলে,

-আনাবিয়া আমি এখানে আসতে বলেছি। তুমি রুমে আসলেই আমি চলে যাবো।

আনাবিয়া পিছনে ফিরে নিচে তাকায়। দীর্ঘশ্বাস নিয়ে একবার ইরানের দিকে তাকিয়ে পিছনে ফিরতেই আচমকা ইরান দৌড়ে এসে আনাবিয়াকে আষ্টেপিষ্টে জড়িয়ে ধরে। আনাবিয়া হটাৎ করে ঘটা ঘটনায় হতভম্ব হয়ে যায়। পরমুহূর্তে নিজেকে ছাড়ানোর জন্য জোরাজোরি করতে থাকে। ইরান রুমের মধ্যখানে নিয়ে আসে আনাবিয়াকে। রুম কাঁপিয়ে একটা চড় দেয় আনাবিয়ার গালে। আপনা আপনি আনাবিয়ার এক হাত গালে চলে যায়। কোমল গালে আঙুলের ছাপ বসে গিয়েছে। আনাবিয়া দুর্বল হলো না বরং রাগে ফুসতে থাকে সে। ধবধবে চেহারা ফেকাশে হয়ে গিয়েছে। চোখ গুলো লাল বর্ণ ধারণ করে।

কিঞ্চিৎ সময় অতিবাহি হওয়ার সাথে সাথেই আনাবিয়া নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে পাল্টা চড় দিয়ে বসে ইরানকে। ইরান চড়ে একটুও ব্যাথা অনুভব করে না কারণ এক আকাশ সমান বিস্ময় নিয়ে সে আনাবিয়াকে দেখছে। আনাবিয়া ধারালো কণ্ঠে বলে,

-বারণ করার পরও আমাকে ছোঁয়ার জন্য।

পুনরায় ওপর গালে আরেকটা চড় দিয়ে একই ভঙ্গিতে বলে,

-আমাকে আঘাত করার জন্যে। ভুল করেও আমার ওপর কোনো অধিকার দেখানোর প্রয়াস করবি না। আজকের পর থেকে আমি স্বাধীন। কারো অধিকার, হুকুম মানতে বাধ্য নই আমি।

আনাবিয়া দম নেয়। ইরান বুকে দুই হাত গুঁজে গম্ভীর দৃষ্টিতে আনাবিয়াকে দেখছে। তার ভিতরের অবস্থা হয়তো আনাবিয়া বুঝতে পারছে না তাইতো ফের চেঁচিয়ে বলে,

-কী বললি আমাকে যেতে দিবি না? লাগবে না ডিভোর্স। তোর চোখের সামনে দিয়েই আমি চলে যাবো। জাস্ট সি।

__________________

ফাইভস্টার হোটেলের ২৩১ নম্বর রুমে আয়েস করে শুয়ে আছে এক ব্যক্তি। ধবধবে সাদা, কোমল বিছানার সাথে নিজেকে একদম মিশিয়ে নিয়েছেন জেনো। তার ঠিক পাশেই উদাসীন হয়ে বসে আছে এক অমায়িক রমণী। চোখ দেখে বোঝা যাচ্ছে আরেকটু হলেই অশ্রু গড়িয়ে পরবে। ঠোঁটের টকটকে লিপস্টিক লেপ্টে রয়েছে ঠোঁটের আশেপাশে। ফোঁপাতে ফোঁপাতে পাশের জনকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-যে ভালোবাসে তাকে দাম দিচ্ছ না অথচ যে তোমাকে এতো বড় ধোঁকা দিলো তার জন্যই পাগল প্রেমিক হয়ে ঘুরছো তুমি! তোমাকে নিজের সবটুকু দিতেও প্রস্তুত আমি একবার তো ফিরে তাকাও আমার দিকে।

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-একজন মেয়ে হিসেবে কী নেই আমার? ধবধবে গায়ের বরণ, লম্বা চুল, স্লিম বডি, হ*ট ফিগার। কিছুদিন আগে টপ বিউটিকুইন হিসেবে অ্যাওয়ার্ডও পেয়েছি। আমার সৌন্দর্যের চর্যা জায়গায় জায়গায়! কত ডিরেক্টর আমার পিছনে ঘুরছে তাঁদের ছবির নায়িকা হওয়ার অফার দিচ্ছে। শুধু তোমার কাছেই আমি অসুন্দর! বলো কী নেই আমার? কী কমতি আমার মধ্যে?

-এটিটিউড, পার্সোনালিটি এন্ড মাস্টার মাইন্ডের অভাব তোমার মধ্যে সুবহা।

-সিরিয়াসলি!

শোয়া থেকে উঠে বসে একজন বলিষ্ঠ দেহের পুরুষ। মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বিরক্তিকর লুক দেয়। গম্ভীর স্বরে বলে,

-তোমার অথবা অন্য কোনো মেয়ের শরীরের প্রতি আমার এখন কোনো আকর্ষণ নেই। শুধু ধবধবে গায়ের রং হলেই মানুষ সুন্দর হয়ে যায় না! একজন ব্যক্তির স্ট্রং পার্সোনালিটি তার সৌন্দর্য ধরে রাখে। গট ইট ইউ ব্লাডি ফুল।

-তাই নাকি! তুমি কী কোনোভাবে ভুলে যাচ্ছ ঐ মেয়ে কে? তোমার কী অবস্থা হতে পারে ওর জন্যে?

কোনো উত্তর পেলো না সুবহা। নামহীন ব্যক্তি বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ায়। আরমোড়া দিয়ে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে সুবহা নামের মেয়েটির দিকে তাকায়। টেবিল থেকে একগ্লাস পানি তুলে ছুঁড়ে মারে মেয়েটির দিকে। বাঁকা হেসে বলে,

-এবার আয়নায় নিজের মুখ দেখো এবং ভাবো আমি কে! আর কাকে ভয় দেখাচ্ছ তুমি! শরীরের এতই যখন জ্বা*লা তাহলে কোনো ক*লবয়কে ডেকে নিলেই তো পারো। আমি না অনেক দামি একটা জিনিস বুঝলে? যার তার সাথে আমার এখন রুচি হয় না।

-ভুলে যেয়েও না এই সুবহার সাথেই রাতের পর রাত কাটিয়েছ তুমি!

-অতীত মনে রাখতে নেই। জাস্ট ফা*ক পাস্ট এন্ড ফোকাস ফিউচার।

-ঐ মেয়ের জন্য আমার ভালোবাসাকে আজ অপমান করলে তাই না? দেখে নিও খুব শিগ্রই ঐ মেয়েই তোমাকে শেষ করে দেবে।

-তার ভালোবাসায় আমি অলরেডি শেষ প্রায় আর কী শেষ করবে ইয়ার! তার সাথে জাস্ট একরাত কাটাতে পারলেই আমি নিজেকে ধন্য মনে করব।

-বাহ্! এই ভালোবাসা তাহলে!

-ইয়েস।

-এটা ভালোবাসা! হাসালে। তোমার জাস্ট ওর শরীরের খি*দে ওর নয়।

-হোয়াটেভার। আই জাস্ট ওয়ান্ট হার।

___________________

আনাবিয়া এক পা সামনে বাড়াতেই পিছন থেকে ইরান তার হাত চেপে ধরে। শুধু চেপে ধরেছে বললে ভুল হবে মুচড়ে ধরে। আনাবিয়ার হাত টান দিয়ে আনাবিয়াকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। আনাবিয়ার পিঠ ঠেকে ইরানের পুরুষালি বক্ষে। আনাবিয়ার হাত শক্ত করে মুচড়ে পিঠের সাথে চেপে ধরে ইরান। আনাবিয়া ব্যথায় চোখ খিচে বন্ধ করে রেখেছে। ইরান বাঁকা হেসে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-তুমি বলবে আর আমি তোমাকে যেতে দেবো মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে! সো স্যাড ডিয়ার আমার ভালোবাসা অনেক বেশি ভয়ংকর। একবার যে আমার হয়েছে সে শুধুই আমার। দরকার পরলে তাকে লাশ বানিয়ে নিজের কাছে রেখে দেবো। আমার থেকে তোমার মুক্তি মিলবে না এই জনমে।

-জা*নো*য়ার হাত ছাড় আমার।

-গেম ওভার। অনেক লাভার, গুড হাসব্যান্ড এর গেম খেলেছি নাউ আই এম ডান। যেহেতু আমাকে চিনেই ফেলেছো সেহেতু আর ভালো সাজার নাটক করার কোনো মানেই হয় না।

আনাবিয়ার বুক ফেটে যাচ্ছে ইরানের এক একটা বাক্য শুনে। নিজেকে যতই স্ট্রং রাখার চেষ্টা করুক এক জায়গায় সেও দুর্বল। যাকে মন, প্রাণ দিয়ে ভালোবাসলো, যাকে নিয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকার দোয়া করেছে আজ সেই মানুষটাই কিভাবে তাকে এতো বড় ধোঁকা দিলো! সৃষ্টিকর্তা এইরকম একটা সিচুয়েশনে তাকে না ফেললেও পারত! আনাবিয়ার ভাবনার মাঝেই ইরান বলে,

-তুমি মেয়েটা নির্বোধ! নিজে পরিকল্পনা করতে করতে কখন আমার জালে ফেঁসে গেলে সেটাও বুঝলে না বোকা মেয়ে।

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

-তোমার মতে আমাদের এক্সিডেন্টল্লি বিয়ে হয়েছে। সবার মতেও তাই! অথচ আমার মতে আমার পরিকল্পনা মাফিক আমাদের বিয়ে হয়েছে। আমি যেটা চেয়েছি সেটাই হয়েছে।

আনাবিয়া বন্ধ চোখ খোলে। ওপর দিয়ে স্বাভাবিক থাকলেও ভিতর ভিতর হাজারো প্রশ্নের মেলা তার মনে। ইরান শব্দ করে হেসে দেয়। আনাবিয়ার হাবভাব দেখে বাঁকা হেসে বলে,

-তুমি আমার ভালোবাসা নও। সেই সাত বছর আগের পাগলামি তুমি আমার। তোমার পরিবারকে মারার পর শুনি তাঁদের আরেকটা মেয়ে আছে। এরফান শেখ ভয়ে ভয়ে আমাকে বলেছিল আমি যাতে তন্নী ফারুকের ছোট মেয়েকেও মেরে ফেলি তাহলে ভবিষ্যতে কেউ তার পিছনে বাজবে না। তো আমিও তার কথা মতো রাশিয়া যাই তন্নী ফারুকের ছোট মেয়েকে মারতে। অথচ তন্নী ফারুকের ছোট মেয়ে আনাবিয়া সাবরিনকে দেখে ইরান শেখ নিজেই নিজের অস্তিত্ব ভুলে যায়! গিয়েছিল মারতে, পাগল হয়ে ফিরে আসে বাংলাদেশে। এরফান শেখকে বলি তোমার কথা। বাচ্চাদের মতো এরফান শেখের কাছে বায়না করি তোমাকে। কিন্তু সে আমার সাথে গাদ্দারি করে। আমার সম্পূর্ণ স্টাডি শেষ হলে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে সে তোমার সাথে আমার বিয়ে দেবে বলে প্রতিজ্ঞা করে। আমিও কানাডা চলে যাই স্টাডি করতে। স্টাডি শেষ হলে বাংলাদেশে এসে এরফান শেখকে তোমার কথা বলি সে ভুলে যাওয়ার অভিনয় করে। জেদে আমি ফের রাশিয়া যাই। কিন্ত তুমি আগের ঠিকানায় ছিলে না অন্য জায়গায় চলে গিয়েছিলে। অতঃপর ভাঙা হৃদয় নিয়ে ফিরে আসি। তোমাকে ভুলতে শুরু করি। নিউ রিলেশন করি। সরি রিলেশন কম টাইমপাস বেশি ছিল সেটা।

-তুই আমার হাত ছাড়। হাত ছাড় বলছি।

-স্ট্রেঞ্জ! তোমাকে আমি আমার স্টোরি শুনাচ্ছি আর তুমি কিনা আনমুডি হয়ে রাগ দেখাচ্ছ! ইট’স্ ভেরি বেড ডিয়ার।

-আই উইল কিল ইউ ইরান।

-ওকে। ইট’স্ মাই প্লেয়সিউর।

-লিভ মি।

-আগে পুরো স্টোরি তো শোনো তারপর ভেবে দেখবো ছেড়ে দেবো নাকি ধরে রাখবো।

ইরানের কথায় শান্ত হয় না আনাবিয়া। ইরানকে ধাক্কা দেওয়ার চেষ্টা করতেই ইরান আরো শক্ত করে জড়িয়ে ধরে আনাবিয়াকে। সহসা আনাবিয়া কিছু মনে পরতেই অতিকৃত হয়ে প্রশ্ন করে,

-তার মানে ইসরাফের এক্সিডেন্ট এক্সিডেন্ট ছিল না?

-একদমই না। আমি নিজেই করিয়েছি।

-নিজের ভাইকে এক্সিডেন্ট কিভাবে করালেন আপনি? একটুও কষ্ট অনুভব হয়নি আপনার?

-ওকে আমি কখনই নিজের ভাই হিসেবে মানি নি। আর না কখন মানবো। ইসরাফ আমার শত্রু ছিল আর সারাজীবন থাকবে।

-ছি!

-এতো বছর পর সেদিন বৃষ্টির মধ্যে আমি তোমাকে দেখি। তুমি ভাবতেও পারবে না কতটা খুশি হয়েছিলাম আমি। যখন জানলাম তুমিই ইসরাফের গফ অনেক রাগ হয়েছিল তখন। তাই বাধ্য হয়ে ইসরাফকে পথ থেকে সরাতে হলো।

আনাবিয়া নিশ্চুপ। ইরানকে তার বিষাক্ত পোকার মতো ভয়ংকর লাগছে। যে ব্যক্তি গিটগিটির মতো ক্ষনে ক্ষনে রং পাল্টায় তাকে মানুষ বিশ্বাস কিভাবে করে! ঘোলাটে চোখে আশেপাশে তাকিয়ে আক্রমণ করার মতো কিছু খুঁজতে লাগলো আনাবিয়া। আজ যেভাবেই হোক সে এখান থেকে চলে যাবেই।
ইরান হাত ছেড়ে আনাবিয়ার দু কাঁধ ধরে আনাবিয়াকে নিজের স্মুখীন ঘুরায়। রাগে ইরানের দিকে তাকায় না আনাবিয়া। ইরান অসহায় মুখ ভঙ্গি করে বলে,

-আই লাভ ইউ আনাবিয়া। আই রিয়েলি লাভ ইউ। প্লিজ মাথার থেকে উল্টাপাল্টা চিন্তা বাদ দেও ডিয়ার। তুমি ইরানের আছো এবং সারাজীবন ইরানের হয়েই থাকতে হবে। এখন আমি চাইছি না তোমাকে আমার ভয়ংকর রূপ দেখাতে। ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড ওয়াইফি।

ইরান ছোট ছোট চোখ করে তাকিয়ে থাকে আনাবিয়ার উত্তরের আশায়। আনাবিয়া কিছু না বলে এক দলা থু থু ছুঁড়ে মারে ইরানের দিকে। আনাবিয়াকে ছেড়ে দু পা পিছিয়ে যায় ইরান। রাগী চোখে আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে পরিহিত শার্ট দিয়ে মুখ পরিষ্কার করে নেয়। তারপর রাগী কণ্ঠে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আনাবিয়া বলে,

-মানসিক রোগী আপনি! এইরকম একজন কিলারের সাথে জীবনেও থাকবো না আমি। দরকার পরলে নিজেকে শেষ করে ফেলবো তাও আপনার সাথে থাকবো না।

আনাবিয়ার কথা শেষ হওয়ার আগেই ইরান ক্রোধে আনাবিয়ার গলা চেপে ধরে নিজের এক হাত দিয়ে। আনাবিয়ার চোখ দিয়ে এক দু ফোটা পানি পরছে। ইরান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-এই মানসিক রোগীর সাথেই থাকতে হবে। এটা আমার বাড়ি ইরান শেখের বাড়ি। আমার অনুমতি ছাড়া একটা পাখিও প্রবেশ করে সেখানে আমার না করার পরও কিভাবে চলে যেতে চাস তুই? একটুও ভয় নেই তোর?

আনাবিয়া কিছু বলতে চাইলেও বলতে পারে না। মুখ দিয়ে শব্দ উচ্চারণ করার মতো সামর্থ নেই তার। কিছু সময়ের জন্য আনাবিয়ার মনে হলো আজই হয়তো তার শেষদিন। প্রিয় মানুষের হাতেই তাহলে তার মৃত্যু লেখা ছিল।
আনাবিয়ার চোখ বন্ধ হওয়ার সাথে সাথেই ইরান ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে। ছেঁড়া পাতার নেয় নিচে বসে পরে আনাবিয়া। অস্বাভাবিক ভাবে কাশতে থাকে সে। দুর্বল শরীর নিয়ে মাথা উঁচু করতে ব্যর্থ হয়।
ইরান বড় বড় পা ফেলে রুমে সকল জালানা একেবারের জন্য বন্ধ করে দেয়। বেলকনির দরজায় তালা দিয়ে দেয়। আনাবিয়ার সামনে এসে দাঁড়ায়। আনাবিয়ার চুলের মুঠি ধরে মাথা ওপরে তোলে রুক্ষ কণ্ঠে বলে,

-এখন থেকে বন্দি হয়ে থাকবে তুমি আমার কাছে। পাখির নেয় জীবন হয়ে যাবে তোমার আর এই রুম হলো তোমার খাঁচা। ভয়ংকর আমির সাথে তোমার পরিচয় করাতে চাইনি কিন্তু তুমিই বাধ্য করলে।

-তুই আমাকে আটকে রাখতে পারবি না জা*নো*য়ার। আমাকে এখানে রেখে তুই নিজের ধ্বংস নিজেই ডেকে আনলি।

ইরান বাঁকা হাসে আনাবিয়ার কথায়। আজ আনাবিয়ার কষ্ট তার চোখে পরছে না। আনাবিয়ার গালে হাত বুলিয়ে শান্ত স্বরে বলে,

-এই সুন্দর মুখ দিয়ে এইরকম কথা মানায় না ডিয়ার। আজকের পর থেকে আমার কথার অমান্য করলে ভয়ংকর শাস্তি হবে। নিজের অস্তিত্বের কথা ভুলে যেও না।

আনাবিয়া নিভু নিভু চোখে আর তাকাতে পারলো না। চোখ বন্ধ করে ফেলে। ইরান সম্পূর্ণ রুম চেক করে আনাবিয়াকে বিছানায় শুয়ে দেয়। ওড়না দিয়ে হাত পা বেঁধে দেয় আনাবিয়ার। শেষবারের মতো আনাবিয়ার গালে হাত বুলিয়ে বলে,

-আমি হলাম আমার গল্পের সবচেয়ে বড় ভিলেন। লাইক বিস্ট এন্ড বিউটি!

গটগট করে রুম থেকে বেরিয়ে যায় ইরান। দরজায় লক সিস্টেম থাকায় অতি গোপন একটি পাসওয়ার্ড সেট করে সবসময়ের জন্য বন্ধ করে দেয় দরজা। এখন সে না চাওয়া পর্যন্ত কেউ পারবে না এই রুমের দরজা খুলতে। মনে মনে পৌঁশাচিক হাসি দেয় ইরান।

>>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ