#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_২৯_৩০
#পর্ব ২৯
গ্রান্ডমার রুমে উদাসীন মনে বসে আছে আনাবিয়া। কিছুক্ষন আগেই তার এবং ইরানের ঝগড়া হয়েছে। ঝগড়ার মুখ্য কারণ বাংলাদেশে ফিরে যাওয়া। ইরান দু একদিনের মধ্যেই ফিরে যেতে চাচ্ছে কিন্তু আনাবিয়া জেদ করছে একমাস না হওয়ার আগে সে যাবে না। রাগ, জেদ তাঁদের দুইজনকে দুইজনের শত্রু বানিয়ে দিয়েছে। গ্রান্ডমা আনাবিয়ার পাশে বসে। আনাবিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
-বাচ্চা আমার, এতো ছোট ছোট বিষয় রাগ করলে সংসার কিভাবে টিকবে?
আনাবিয়া গ্রান্ডমার দিকে তাকায়। প্রতিউত্তরে কিছু বলে না। গ্রান্ডমা পুনরায় বলে,
-ছোটকাল থেকে জেনে আসছি সংসার হলো যুদ্ধক্ষেত্র এখন সেটা উপলম্বীতও করতে পারছি। তোমার গ্রান্ডফাদারও কিন্তু ভীষণ রাগী, জেদি ছিল। আবার আমিও।
-কিভাবে রাগ সংযোগ করতে কিউটি?
-যখন তোমার গ্রান্ডফাদার রাগ করত তখন আমি চুপচাপ তার রাগ সহ্য করতাম একটা টু শব্দও করতাম না। মাঝে মাঝে আবার জায়গা ত্যাগ করতাম। ঠিক এভাবে তিনিও আমার রাগ সহ্য করতেন।
-চুপ থাকতে কিভাবে? আমি তো ইরানের একটু উঁচু স্বরে কথা বলাই সয্য করতে পারি না। হয়তো আমার রাগ হয় নয়তো অনেক বেশি কষ্ট লাগে।
-কষ্টের সময় তার দেওয়া ভালোবাসা গুলোর কথা ভাববে তখন দেখবে আপনা আপনিই মন শান্ত হয়ে গিয়েছে।
-কেনো? একজন স্ত্রীকেই কেনো সবসময় চুপ থাকতে হবে গ্রান্ডমা? স্ত্রীলোকের কী আত্মসম্মান নেই?
-কেনো থাকবে না অবশ্যই আছে। তবে কিছু কিছু জায়গায় স্ত্রীদের আত্মসম্মানহীন হতে হয় বাচ্চা
-কেনো?
-দুইজন সমান তালে জেদ করলে সেই সংসার টিকে না। একজনকে নিচু হতে হয়। আর নিজের স্বামীর সামনে নিচু হওয়াকে আত্মসম্মানহীন বলা যায় না। তুমি তাকে ভালোবাসো, তাকে চাও, তাকে সম্মান করো তাই তুমি আগে নত হয়েছো। এতে আরো তোমার ভালোবাসা গভীর ভাবে ফুটে উঠে।
আনাবিয়া আবারও চুপ হয়ে যায়। অতিকৃত হয়ে গ্রান্ডমার দিকে তাকিয়ে থাকে। গ্রান্ডমা মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
-আমি জানি তোমার শরীরে তন্নী ফারুকের রক্ত। তাই তার মতোই তেজ, আত্মসম্মান, জেদি, দায়িত্বশীল তুমি। তবে জানো কী তোমার অগ্নিমূর্তি মা ও তোমার বাবার সামনে আসলে ভেজা বিড়াল হয়ে যেত। এটাই কিন্তু তার আমার ছেলের প্রতি ভালোবাসার প্রমান।
-আমি চাই সেও আমাকে বোঝার চেষ্টা করুক। কখন কখন নিজের থেকে এসেই আমার রাগ ভাঙাক।
-ইরান খারাপ ছেলে নয় আনা। তুমি ওকে তোমার মনে বাসনা বোঝানোর প্রয়াস করো। সে তোমাকে ভালোবাসে। একসময় রাগ দেখালেও আরেকসময় সেই তোমাকে আগলে রাখবে।
-হুম।
-তুমি নিজের রাগ সংযোগ করার চেষ্টা করো। একজন স্ত্রী ও মাকে ধয্যশীল হতে হয়।
-মাকে মানে?
-তুমি এখন স্ত্রী আগামীতে মা ও হবে ইনশাআল্লাহ। কখন কারো কথা শুনে ইরানকে ভুল ভাববে না। মনে কোনো সন্দেহ থাকলে সরাসরি ইরানকে জিজ্ঞেস করবে। সন্দেহ, মিথ্যে আর অবহেলা সম্পর্ককে নষ্ট করে দেয়।
আনাবিয়া মনোযোগ দিয়ে গ্রান্ডমার প্রতিটি কথা নিজের মস্তিকে গেঁথে নিলো। হঠাৎ তার মনে একটা প্রশ্ন জাগে। আনাবিয়া আনমনে বলে,
-গ্রান্ডমা একটা প্রশ্ন করব?
-হ্যাঁ বাচ্চা অবশ্যই করো?
আনাবিয়া বড় একটি নিঃশাস নিয়ে বলে,
-ধরুন কয়েকমাস পর হঠাৎ করে ইরানের অনেক বড় ও ভয়ংকর একটি সত্যি আমার সামনে আসলো। তখন আমি এইরকম একটি অবস্থায় পরলাম যে তাকে ছাড়তেও পারব না আবার তার সাথে সংসারও করতে পারব না। এমন্ত অবস্থায় তখন আমার কী করণীয়?
-প্রথমত হঠাৎ এইরকম প্রশ্ন কেনো?
-সত্যি বলতে এখানে আসার পর থেকে আমার কেমন জেনো অস্থির অস্থির লাগছে। ইরানকে নিয়ে মনে অন্যরকম একটা ভয় কাজ করছে। আমি আসলে বুঝতে পারছি না সত্যি কী আমার সাথে খারাপ কিছু হবে!
-সৃষ্টিকর্তার ওপর ভরসা রাখো। যদি কখন এইরকম অবস্থায় পরো তাহলে শুধু একটা কাজই করবে মন যা বলবে তাই করবে। মনের থেকে ভালো সিদ্ধান্ত তোমাকে কেউই দেবে না। দ্বিতীয়ত এখন ইরানই তোমার সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ আপনজন। যারা দুনিয়া ত্যাগ করেছে তারা তো চিরকালের জন্য আমাদের থেকে বিদায় নিয়েছে। এখন যারা আছে তাঁদের আঁকড়ে ধরে রাখার চেষ্টা করবে।
গ্রান্ডমার উত্তর শুনে হাসি ফুটে উঠে আনাবিয়ার মুখে। জড়িয়ে ধরে গ্রান্ডমাকে। শান্ত স্বরে বলে,
-তুমি মনোবিজ্ঞানী গ্রান্ডমা! অনেক অনেক ধন্যবাদ তোমাকে। তুমি নিজেও জানো না তুমি আমার মন থেকে কত বড় একটি পাথর সরিয়ে দিয়েছো। এভাবেই সবসময় আমাকে সঠিন জ্ঞান প্রধান করিও।
-অবশ্যই। গড ব্লেস ইউ ডিয়ার।
-আমি তাহলে এখন ইরানের কাছে যাই।
-হ্যাঁ। তাকে গিয়ে বলো সে যেদিন যাবে তুমিও সেদিনই যাবে। স্বামীর সঙ্গ ছেড়ো না।
-হুম। তাকে নিজের ভালোবাসার জালে বেঁধে রাখবো সবসময়।
-কারো নজর না লাগুক তোমার ভালোবাসার ওপর।
__________________
আনাবিয়া ধীর পায়ে দরজা খুলে রুমে প্রবেশ করে। রুম অন্ধকার করে বিছানায় বসে ল্যাপটপ চালাচ্ছে ইরান। আনাবিয়াকে দেখে চোখ মুখ শক্ত করে ফেলে। আনাবিয়া এগিয়ে যায় ইরানের কাছে। নিচের দিকে তাকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,
-আপনি যেদিন বাংলাদেশে ব্যাক করবেন আমিও সেদিনই করব। বেড়ানোর থেকে আপনার কাজ বেশি ইম্পরট্যান্ট। তাজীব ব্রো কে বলুন ব্যবস্থা করতে।
ইরানের দুই ঠোঁট প্রসারিত হয়। আনাবিয়া সেটা দেখলো না। মন খারাপ করে ওয়াশরুম চলে যায়। ইরান অপরূপ হাসি দিয়ে বিড়বিড় করে বলে,
-আমি জানতাম আনাবিয়া একদিন তুমি ও আমাকে আমার মতোই ভালোবেসে ফেলবে। অবশেষে আমার ধারণা সঠিক হলো। তোমার মনে, প্রাণে শুধুই ইরান থাকবে। বাকি সবাইকে আমি তোমার জীবন থেকে এক এক করে বের করে দিবো।
”
”
”
”
তিনদিন পর ইরান ও আনাবিয়া বাংলাদেশে ব্যাক করে। আনাবিয়ার মন ভালো নেই। এতদিন পর প্রিয় মানুষগুলোকে দেখলো অথচ বেশিদিন কাটাতে পারল না তাঁদের সাথে। ইরান বাংলাদেশে আসার পর থেকে অনেক বেশি ব্যস্ত। ব্যস্ততা জেনো তাকে ছাড়ছেই না। পরেরদিন সকালে ঘুম ভাঙতেই আনাবিয়া ইরানকে সকাল সকাল পাঞ্জাবী পরে তৈরি হতে দেখে। ঘুম ঘুম চোখে উঠে বসে জিজ্ঞেস করে,
-কোথাও যাচ্ছেন?
-না।
-তাহলে এতো সকাল সকাল তৈরি হচ্ছেন যে?
ইরান কোনো উত্তর দিলো না। মুচকি হাসি দিয়ে তাকিয়ে থাকে আনাবিয়ার দিকে। আনাবিয়া অকারণেই ইরানের হাসি দেখে বিরক্ত হয়। তাই সে বলে,
-এভাবে না হেসে কিছু বলুন তো? আমার কাছে ভালো লাগছে না আপনার হাবভাব।
-বিয়ে করব ভাবছি।
নিশ্চিন্তে হাতের ঘড়ি পরতে পরতে কথাটা বলে ইরান। আনাবিয়ার ঘুম মুহূর্তেই উড়ে যায়। বিছানা ছেড়ে নিচে নেবে দাঁড়ায়। চোখ বড় বড় করে বলে,
-কাকে বিয়ে করতে যাচ্ছেন? আপনার না বিয়ে হয়েছে?
-তো সমস্যা কোথায়?
-ফালতু বকবেন না ইরান আমার কিন্তু নিঃশাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে।
-আজব তো! কয়দিন পর বাবা হয়ে যাবো অথচ এখন পর্যন্ত দুনিয়াকে জানিয়ে বিয়ে করিনি। এখন তো বিয়ে করতেই হবে।
-মানে?
-তুমি তো এইরকম নির্বোধ ছিলে না ডিয়ার!
ইরান এবার টিভি অন করে নিউজ চ্যালেনে দিয়ে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। আনাবিয়া ছলছল প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তার দিকেই তাকিয়ে আছে।
-আমাকে না দেখে টিভির পানে চোখ স্থির করেন ওয়াইফি।
আনাবিয়া টিভির দিকে তাকায়। টিভির নিউজ চ্যালেনে ইরানকে দেখা যাচ্ছে। আয়েস করে বসে আছে সে। তার পাশেই মন্ত্রী হাসিব আলী বসা আরো কয়েকজন মন্ত্রী মিনিস্টার বসে আছে। সাংবাদিকরা ইরানকে তাহশিয়াকে নিয়ে একের পর এক প্রশ্ন করে যাচ্ছে। একজন বলছে,
-স্যার আপনি সত্যি কী বিয়ে করে ফেলেছেন? নাকি এটা কোনো গুজব? আর আপনার ওয়াইফের আসল পরিচয় কী?
আরেকজনের প্রশ্ন,
-স্যার তাহশিয়া ম্যামও তো ভালো ছিল আপনি তার সাথে কেনো বিয়ে করলেন না? আপনি কী সত্যি তাকে ধোঁকা দিয়েছেন?
-এমপি ইরান শেখ এতদিন কোথায় ছিল? মিডিয়া থেকে লুকিয়ে ছিল কী?
ইরান কিছু বলবে তার আগেই ইরানের পাশে বসা একজন বয়স্ক ভদ্রলোক বলে,
-সাংবাদিক কী এইরকম অদ্ভুত প্রশ্ন করে জনমান্য এমপিকে অপমান করতে চাচ্ছে? তারা কী এখনও তাঁদের প্রশ্নের উত্তর পায়নি? কিছুদিন আগে মন্ত্রী হাসিব আলী মেয়ে তাহশিয়া আলী নিজ মুখে বলেছে তাঁদের বিয়ের কথা তবুও এতো প্রশ্ন কেনো।
ইরান চোখের ইশারা ভদ্রলোককে শান্ত হতে বলে। তারপর গম্ভীর ও দৃঢ় কণ্ঠে নিজে বলতে শুরু করে,
-আপনাদের সকলের প্রশ্নের উত্তর আমি সেদিন দিয়েছি। আর রইলো আমার ওয়াইফ আনাবিয়া শেখের কথা? সিআইডি অফিসার তন্নী ফারুকের কথা নিশ্চই সকলের মনে আছে?
হাসিব আলী বিরক্ত হয়ে বলে,
-এখানে মৃত সিআইডি অফিসার তন্নী ফারুকের কথা কেনো তোলা হচ্ছে?
-তোলা হচ্ছে কারণ আমার স্ত্রী তন্নী ফারুকের কনিষ্ঠ কন্যা। এবার হয়তো আপনারা আমার ওয়াইফের পরিচয় জেনে গিয়েছেন?
সাংবাদিক সহ উপস্থিত সকলেই অবাক হয়ে যায়। সকলের মধ্যে একটা গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে। একজন সাংবাদিক প্রশ্ন করে,
-কিন্তু তিনি তো তার সহপরিবার নিয়ে- এক্সিডেন্টে মারা গিয়েছে তাহলে তার মেয়ে কিভাবে বেঁচে থাকে?
-আমার স্ত্রী সে সময় তাঁদের দেশে মানে রাশিয়া ছিল তাই সে বেঁচে যায়।
-আমরা সকলে তন্নী ম্যামের মেয়ে আনাবিয়া সাবরিনের সাথে সাক্ষাৎ করতে চাই।
সাংবাদিকদের কথায় মুখ কঠোর করে ইরান বলে,
-আমি আমার স্ত্রীকে মিডিয়ায় আনতে ইচ্ছুক নই। আপনারা সকলেই জানেন আমার শত্রুর অভাব নেই তাই আমি চাচ্ছি না আমার স্ত্রীকে এখানে আনতে।
-তাহলে আপনাদের বিয়ের কথা সত্যি এমপি ইরান শেখ? দুনিয়াকে জানাচ্ছেন কবে?
-একটু সবুর করুন বলছি আমি।
ইরান বাঁকা চোখে হাসিব আলীর দিকে তাকায়। বাঁকা হেসে পুনরায় বলে,
-আগামী ১০-ই জুন আমাদের বিয়ের উদ্দেশ্যে ফাঙ্কশন রাখা হয়েছে। সবাইকে আমন্ত্রণ দেওয়া হলো আসার জন্য। বিয়ে আকস্মিক হওয়ায় ততো বড় করে আয়োজন করা হয়নি সে সময়। আশা রাখি দ্বিতীয়বার আমার শত্রুদের জ্বলার কারণ হবো আমি।
-বেশ ভালো। ম্যাম এবং আপনার জন্য দোয়া রইলো স্যার।
-নতুন জীবন অনেক বেশি সুখময় হোক এমপি ইরান শেখ।
সকলে ইরানকে শুভেচ্ছা জানাচ্ছে। ইরাম হাসি মুখে সকলকে ধন্যবাদ বলে। তারপর বলে,
-আরেকটা সুখবর আপনাদের জন্য। ইনশাআল্লাহ আমাদের বিয়ের ফাঙ্কশনের পর পর আমি আমার স্ত্রীর নামে একটা হাসপাতাল খুলতে চাই। এখন আপনাদের সকলের মতামত চাচ্ছি।
ইরানের কথা শুনে খুশি হয় স্বাস্থমন্ত্রী। গর্ব করে বলে,
-আপনার এই প্রকল্প অনেক বেশি ভালো হবে ইরান শেখ। দেশে যত বেশি হাসপাতাল ততো জনগণের সুবিধা।
স্বাস্থমন্ত্রীর সাথে একমত দেয় আরেকজন। ধীরে ধীরে সকলেই ইরানের ইচ্ছের প্রশংসা করে। ইরান হাসি মুখে হাসিব আলীর দিকে তাকিয়ে ছিল।
সম্পূর্ণ নিউজ দেখে আনাবিয়া বিস্ময়বিমূঢ় অতিরিক্ত খুশিতে মানুষ দিশেহারা হয়ে যায় এটাই জেনো তার প্রমান! ইরান নিজেই পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে আনাবিয়াকে। শান্ত স্বরে বলে,
-কেমন লাগলো সারপ্রাইস?
-আমি জাস্ট স্তব্ধ! আমার সত্যি বিশ্বাস হচ্ছে না ইরান।
-বিশ্বাস করো আনাবিয়া সাবরিন এটা বাস্তব।
আনাবিয়া পিছনে ফিরে ইরানকে জরিয়ে ধরে শক্ত করে। ইরানও চোখ বন্ধ করে দু হাত দ্বারা জড়িয়ে ধরে। আনাবিয়া খুশিতে হয়ে বলে,
-অনেক সুন্দর সারপ্রাইস ছিল। আমার জীবনের বেস্ট সারপ্রাইস।
-তাই নাকি?
-আপনি কখন সাংবাদিকদের সাথে সাক্ষাৎ করলেন?
-কাল রাতে।
-এটা নিয়েই এতো ব্যস্ত ছিলেন?
-জি।
-ওহহ। আচ্ছা আপনি এতো দেরি করে আমাদের বিয়ের ফাঙ্কশন করছেন কেনো?
-আমি চাচ্ছিলাম না তোমাকে সবার নজরে আনতে। জানো তো শত্রুরা সরাসরি আক্রমণ করতে না পেরে পিছন থেকে প্রিয়জনদের আঘাত করে?
-ইরানের থাকতে আনাবিয়ার কিছুই হবে না।
-একদম। এখন এতো বড় সারপ্রাইস দিলাম খুশি হয়ে কিছু দিবে না?
আনাবিয়া অবুঝের ভান করে বলে,
-কী দেবো বলুন?
-তোমার থেকে তো আমি একটা জিনিসই চাই।
আনাবিয়া মুখ বাঁকিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় ইরানকে। তারপর রাগী হওয়ার অভিনয় করে বলে,
-এখন কোথায় যাচ্ছেন সেটা তো বলুন?
-ঐ বাসায় যাচ্ছি। শুনলাম ইসরাফ নাকি আগের থেকে অনেকটা সুস্থ হয়েছে তাই ওকে দেখতে যাচ্ছি।
-আমিও যাবো।
ইরান শুকনো ঢোক গিলে। আশেপাশে তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,
-তোমার যাওয়ার কী প্রয়োজন?
-ভয় পেয়েন না আপনার ভাইয়ে এখন কিছু করব না।
-আমি সেটা ভাবছি না।
-আসলে আমি শপিং করতে যাবো তো আপনার সাথেই বের হই।
-তুমি তৈরি হও আমি এক দুই ঘন্টার মধ্যে আসছি।
ইরানের এইরকম ব্যবহার দেখে হতবাক আনাবিয়া। কোমরে দুইহাত দিয়ে ইরানের সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
-সমস্যা কী আপনার? কিছু লুকাচ্ছেন নাকি?
-তোমার সন্দেহ হয় আমার ওপর?
-আপনাকে আপনার থেকে বেশি আমি চিনি তাই সন্দেহ কেনো হবে? আপনি আমার কাছে খোলা বই। কিন্তু এইরকম করছেন কেনো?
ইরান দূরত্ব গুচিয়ে আনাবিয়ার স্মুখীন যেয়ে দাঁড়ায়। আনাবিয়ার গালে হাত দিয়ে নরম স্বরে বলে,
-আমার ভয় করে তোমাকে না আমি হারিয়ে ফেলি। ইসরাফ আমাদের বিয়ের বেপারে জেনে গিয়েছে। তাই আমি চাচ্ছি না তুমি যেয়ে ওর রাগ, জেদ সহ্য করো।
-সৃষ্টিকর্তা আর আমি না চাওয়া পর্যন্ত কেউ আমাকে আপনার থেকে আলাদা করতে পারবে না।
আনাবিয়ার উত্তর পছন্দ হলো না ইরানের। তবুও মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,
-ভুল বললে। শুধুই সৃষ্টিকর্তা ছাড়া আমাদের কেউ আলাদা করতে পারবে না এমন কী তুমি নিজেও না। বুঝলে?
আনাবিয়া অসন্তুষ্ট হওয়ার শর্তেও হালকা হেসে মাথা নারায়। আনাবিয়ার মতে শুধু শুধু ছোট বিষয় নিয়ে তর্ক না করাই ভালো। ইরান তাকে ভালোবাসে তাই তাকে হারাতে চায় না। এইরকম ভালোবাসা কয়জনের কপালে হয়!
#পর্ব ৩০
সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে ইরান। ড্রইংরুমে বসা ছিল রাকিয়া আর তনুসফা। ইরান আসবে শুনে অফিসে যায়নি সে। রাকিয়ার উদাসীন মুখ দেখে ইরানের মুখও ছোট হয়ে যায়। রাকিয়া ইরানকে দেখে বলে,
-এসেছিস বাবা, তোর আশায়ই ছিলাম আমি।
ইরান রাকিয়ার পাশে বসে পরে। শান্ত স্বরে বলে,
-হুম তুমি বলবে আর আমি না আসবো! তোমার বউমাও আসতে চেয়েছিল আম্মা। জোর করে রেখে এসেছি বাসায়।
-ভালো আছে মেয়েটা?
-হুম ভালো আছে।
-ভালো তো থাকারই কথা এতো বড় গুড শুনলে কে না ভালো থাকবে। তাই না ইরান?
তনুসফার তেড়া কথা শুনে বিরক্তবোধ করে ইরান। তারপরও রাগ না করে স্বাভাবিক ভাবেই বলে,
-সঠিক বলেছেন আপা।
-তুমি কিভাবে এতো বেকুব হতে পারো ইরান!কিভাবে? ইচ্ছে করে নিজের পায়ে নিজেই কুড়াল মারছো তুমি।
-আমি ঐ বিষয় কিছু বলতে চাই না আপা।
-বলতে হবে তোমার। তন্নীর মেয়ে তোমার স্ত্রী আনাবিয়া! অবশ্য নিজের প্রতিশোধ নিতেই এদেশে এসেছিল সে?
-যেহেতু বুঝে গিয়েছেন সেহেতু জিজ্ঞেস করছেন কেনো?
-শত্রুদের মনে জায়গা দিতে হয় না ইরান ভাই আমার।
-ওকে আমার শত্রু বানাবো নাকি মিত্র সেটা অবশ্য আপনাকে জিজ্ঞেস করব না।
তনুসফা অস্থির হয়ে ইরানের পাশে বসে। হতে পারে সে অহংকারী, স্বার্থপর কিন্তু নিজের ভাইকে অনেক বেশি ভালোবাসে সে। এই ভাই যে তার দুঃখ কষ্টের সাথী কিভাবে ওকে ধ্বংসের মুখে ফেলে দেয়।
-তুই ভালোবাসায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিস ভাই! হ্যাঁ মানি আমি স্বার্থপর। তোর সাথে অনেক ভাবে অনেক খারাপি করেছি। তবে বিশ্বাস কর তোকে আমি কতটা ভালোবাসি সেটা তুইও জানিস না। বড় কিছু হওয়ার আগেই ওকে ডিভোর্স দিয়ে দে।
ইরান রেগে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। চিৎকার করে বলে,
-সবাইকে নিজের মতো বানাতে চান কেনো আপনি? আপনার কাছে কোনো সম্পর্কের মূল্য নেই আমার কাছে আছে।
-হ্যাঁ তাইতো নিজের ছোট ভাইয়ের বউকে ষড়যন্ত্র করে নিজের বউ বানিয়ে নিলেন। বাহ্! এমপি ইরান শেখ। বাহ্!
পিছনের থেকে কণ্ঠস্বর শুনে সকলে পিছনে তাকায়। হুইল চেয়ারে বসে আছে ইসরাফ। ফর্সা মুখশ্রী রাগে লাল হয়ে আছে। চোখ দিয়ে জেনো অগ্নি বর্ষণ হচ্ছে। ইসরাফ হুইল চেয়ার এগিয়ে নিয়র সামনে যায়। ইরান ইসরাফকে দেখে শান্ত স্বরে বলে,
-ভালোই আছিস তুই তাহলে?
-আমি খারাপ থাকি সেটাই চান বুঝি?
-তুই কেনো খারাপ থাকবি! সৃষ্টিকর্তা তোর সব রোগ আমাকে দিয়ে দেক।
-দুঃখিত এবার আপনার ভালো সাজার নাটক আমার মন গলাতে পারবে না। একটুও সরম করছে না আপনার আমার সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে?
-আমি সরমের কিছু করিনি।
-কিভাবে আপনি আমার প্রিয় মানুষকে বিয়ে করে নিলেন? কিভাবে? ছোট ভাইয়ের বউ ছিল সে আপনার! অপ্স সরি আপনি তো কখন আমাকে ভাই ভাবেনই নি।
-মুখ সামলে কথা বল। প্রথমত আনাবিয়া তোর বউ ছিল না। দ্বিতীয়ত আম্মার জোর করায় আমি বিয়ে করেছিলাম। আর তোর সো কলড প্রিয় মানুষও আমার সাথে বিয়ে করতে রাজি ছিল। যদি ও রাজি না হতো তাহলে এই বিয়ে হতোই না।
-আনাবিয়া নিজের জায়গায় ঠিক আছে। ওর তখন প্রিয় মানুষের এক্সিডেন্ট হয়েছিল। ও তো বেচারি নিজেই জ্ঞানশূন্য ছিল।
ইসরাফের কথায় শব্দ করে হেসে দেয় ইরান। কোনোরকম নিজের হাসি থামিয়ে বলে,
-আনাবিয়া কখন তোকে ভালোবাসেই নি। বুঝেছিস?
-মিথ্যে! সব মিথ্যে! নিজের দোষ লুকাতে এখন বানয়াটে মিথ্যে বলছেন আপনি।
-আমার যা বলার আমি বলেছি মিথ্যে ভাব সত্যি ভাব তোর বেপার।
-আনাবিয়াকে ডিভোর্স দিয়ে দিবেন আপনি। আমি ওকে বিয়ে করব।
-তা আর হচ্ছে না। আনাবিয়া এই জনমেও আমার পরের জনমেও আমার হবে। এখন ও শুধুই তোর ভাবি হয়।
রাকিয়া শেখ দুই ছেলের অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে যায়। তাই আদেশ স্বরে বলে,
-ইরান চলে যা তুই। আনাবিয়াকে নিয়ে আর কখনই এই বাসায় আসবি না।
-কিন্তু আম্মা,
-আমি যেটা বলেছি বলেছি। আর ইসরাফ আনাবিয়া এখন তোর ভাবি হয়। ওকে নিয়ে একটা কথাও তোর মুখ থেকে শুনতে চাই না আমি। খুব শিগ্রই একটা ভালো মেয়ে খুঁজে তোকে বিয়ে করিয়ে দেবো।
ইরান গটগট করে চলে যায়। ইসরাফ দমলো না। চিৎকার করে বলে,
-আম্মা আপনার ছেলের ভালোর জন্য দোয়া পড়া শুরু করুন। এখন আমার যে অবস্থা এর থেকেও ভয়ংকর অবস্থা আমি আপনার ছেলের করব। ও আমার ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিয়েছে আমিও ছিনিয়ে নেবো ওর ভালোবাসা। একদিন ও নিজেই এসে বলবে আমার থেকে আনাবিয়াকে ছিনিয়ে নিয়ে ও অনেক বড় ভুল করে ফেলেছে। যে পর্যন্ত আমি বেঁচে থাকবো ওদের সুখের সংসার হতে দেবো না। ওয়াদা করলাম আমি আজ নিজের সাথে আপনাকে সাক্ষী রেখে আম্মা।
রাকিয়া কেঁদে দেয়। কান্নারত্ব কণ্ঠে ইসরাফকে বলে,
-তুই আমাকে অভিশাপ দে বাপ আমি দোষী। দোয়েয়া করে নিজের ভাইয়ের সংসার নিয়ে এভাবে বলিস না।
ইসরাফ কিছু না বলেই চলে যায় সেখান থেকে। তনুসফাও কান্না করছে। রাকিয়া মেঝেতে বসে পরে। দুঃখে কপাল চাপড়ে বলে,
-কার নজর লেগেছে আমার সংসারে? কার নজর লেগেছে? আমার চোখের সামনে আমি আমার দুই ছেলের ধ্বংস দেখতে পাচ্ছি। ওরা নিজেদের জেদে নিজেদেরকেই শেষ করে দেবে।
____________________
বিকেল পাঁচটার দিকে মার্কেটিং করে বাসায় আসে ইরান আনাবিয়া। ইরান ঐ বাসায় ঘটা কিছুই আনাবিয়াকে বলেনি। আনাবিয়াও জিজ্ঞেস করেনি। রুম ভরা শপিং ব্যাগ দেখে আনাবিয়া মাথায় হাত দিয়ে বলে,
-পুরো বছরের শপিং করে ফেললাম!
ইরান শার্টয়ের বোতাম খুলতে খুলতে চমকিত হয়ে বলে,
-তুমি এতো গুলো শাড়ী এনেছো কেনো? শাড়ীতে যেহেতু কমফোর্টেবল নয় তাহলে শুধু শুধু শাড়ী পরার মানেই হয় না।
-আমি পরব তাই এনেছি। ওকে?
-যেটা ভালো বুঝো। আমি শাওয়ার নিয়ে আসি।
-হুম।
আনাবিয়া ড্রেস চেঞ্জ করে নিচে আসে। রান্নাঘরে যেয়ে দেখে ভৃত্যরা রান্না করছে। হঠাৎ আনাবিয়া মনে মনে ভাবলো এই বাড়ির বউ যেহেতু সে তাহলে ভৃত্যরা কেনো রান্না করবে? না এটা আর হবে না। সে যেহেতু বাঙালি বউ তাই সেই রান্না করবে।
-শুনেন আজ থেকে রান্নার যাবতীয় কাজ আমি করব আপনারা শুধু আমাকে সাহায্য করবেন। বুঝতে পেরেছেন?
ভৃত্যরা একজন আরেকজনের দিকে চাওয়া-চাওয়ী করে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। একজন বলে,
-না ম্যাম। স্যার আপনাকে রান্নার কাজ করতে দিতে না বলেছে।
-আপনাদের স্যার বললেই হলো নাকি! এটা আমার বাড়ি এখানে সব কিছু আমার হুকুমে চলবে। আমি যেটা বলেছি সেটাই হবে।
-কিন্তু ম্যাম স্যার,
-তুমি আমার মুখে মুখে তর্ক করছো এর ফল কিন্তু ভালো হবে না।
আনাবিয়ার কথা শুনে ভয় পেয়ে দূরে সরে যায় তিনজন ভৃত্য। আনাবিয়া মুচকি হাসে তাঁদের ভয় পাওয়া দেখে। তারপর শরীরে কিচেনএপ্রোন জড়িয়ে নেয়। তিনজনকে উদ্দেশ্য করে বলে,
-আজ বিরিয়ানি রান্না করব। একজন আমাকে মাংস ধুয়ে দেও। আরেকজন সকল প্রকার মসলা এনে এখানে রাখো। আরেকজন চুপচাপ আমার পাশে দাঁড়িয়ে থাকো।
🌸
দেখতে দেখতে দশ তারিখ চলে আসে। সকাল থেকে নিজের রূপ চৰ্চা করতে ব্যস্ত আনাবিয়া। ইরান তাকে এতো শত বার বললো সে এমনেই সুন্দর কিছু লাগানোর প্রয়োজন নেই। কিন্তু আনাবিয়ার মতে তাকে সবাই দেখবে যদি একটু আহামরি সুন্দর না দেখায় তাহলে কিভাবে হয়! ফাঙ্কশনের জন্য ঢাকার নামিদামি ফাইভস্টার হোটেল বুক করা হয়েছে। তাজীব ও ইরান ঐদিকটা সামলাচ্ছে। ইরান চাচ্ছে আজকের পার্টিটা সবার নজরকারা হোক। সবাই জেনো তারিফের বন্যা বইতে থাকে।
ফেসিয়াল মাক্স লাগিয়ে শুয়ে আছে আনাবিয়া। ভৃত্যরা কয়েকটা জামা এনে রাখছে। এগুলো ইরান পাঠিয়েছে আজ রাতের জন্য। এখান থেকে একটা পছন্দ করে আনাবিয়া পরিধান করবে। মনে সুখে গুনগুন করে গান গাইছে আনাবিয়া।
-বেশ সুখেই আছো দেখছি?
মেয়েলী কণ্ঠস্বর শুনে মুখের মাক্স সরিয়ে ফেলে আনাবিয়া। শোয়া থেকে উঠে বসে। সময় এখন বিকেল চারটা। বাথস্যুট পরেই শুয়ে ছিল সে। সামনে দাঁড়ানো তনুসফাকে দেখে প্রথমে অবাক হলেও পরে হাসি মুখে বলে,
-সিস্টার ইন লও যে! বসুন প্লিজ।
তনুসফা বসে। আনাবিয়ার পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরোক্ষ করে নেয়। আনাবিয়া তাকে জিজ্ঞেস করে,
-কী নিবেন সিস্টার ইন লও কফি, জুস ওর টি?
-কফি।
-ঠিক আছে।
আনাবিয়া একজনকে আদেশ করে কফি আনতে বলে। তারপর নিজেও তনুসফার পাশেই বসে পরে,
-আয়োজন কেমন চলছে?
-আপনার ভাইয়ের সাথে কথা বলেননি?
-সেখানে নয় আমি এখানের কথা বলছি। রাতে কী পরবে তুমি?
আনাবিয়া ক্ষণে ক্ষণে অবাক হচ্ছে তনুসফার ব্যবহার দেখে। এ সত্যি তনুসফা শেখ তো নাকি অন্য কেউ বহুরূপী!
-জি এখনও চয়েস করিনি। মম আসেনি? তাকে না আমি ফোনে বললাম সকালে এসে পরতে?
-ইসরাফের জন্য আসেনি ফাঙ্কশনের ঐখানে দেখা হবে।
-ওহ আচ্ছা।
তনুসফা নিজের ব্যাগ থেকে একটা বক্স বের করে হাতে নেয়। আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দেয় বক্সটা। আনাবিয়া অবাক হয়ে বলে,
-কী এটাতে? আবার বিষটিষ নয়তো যাতে আমি আবার এই গুরুত্বপূর্ণ দিনে মরে যাই?
-ফালতু না বকে খুলে দেখো।
আনাবিয়া তনুসফার কথা মতো বক্স খোলে। সিম্পল বড় এক পাথরের একজোড়া কানের দুল আনাবিয়ার চোখে ধরা দেয়। এতোটাই চকচক করছে যার দরুণ আনাবিয়া বেশিক্ষন তাকাতে পারছে না সেটার দিকে। মুগ্ধ হয়ে বলে,
-অসাধারণ!
-একমাত্র ভাইয়ের বউকে এখন পর্যন্ত কিছু দেইনি আমি। ইরানকে জিজ্ঞেস করলাম তোমার স্ত্রীকে কী গিফট করলে সে খুশি হবে? ইরান বললো ওকে একটা চকলেট দিয়েন সেটাতেই খুশি হয়ে যাবে। অতঃপর অনেক ভেবে এটা পছন্দ করে এনেছি তোমার জন্য। জানি এখন পর্যন্ত আমি তোমার সাথে কখন ভালো ব্যবহার করিনি। অবশ্য তুমিও করোনি। কিন্তু এখন থেকে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করব।
আনাবিয়া মুচকি হাসলো। বার বার দেখছে কানের দুল গুলো। তনুসফা বলে,
-সত্যি পছন্দ হয়েছে?
-অনেক বেশি।
-আজ রাতে তুমি যদি এটা পরো অনেক বেশি খুশি হবো আমি।
কথা শেষ করে চলে যায় তনুসফা। আনাবিয়া তনুসফার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপর আবারও কানের দুলগুলো দেখতে লাগলো।
>>>>চলবে।