Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"সে প্রেমিক নয়সে প্রেমিক নয় পর্ব-২২+২৩

সে প্রেমিক নয় পর্ব-২২+২৩

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ২২

-এতো গলা ফারার কী হলো? ড্রেস তো পরেছি উধাম গায়ে নাতো!

আনাবিয়ার খাপছাড়া কথা শুনে ইরানের মেজাজ বিগড়ে যায়। ইরান দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে মায়ের দিকে তাকায়। চাহনি তার অসহায়। রাকিয়া এক মুহূর্ত দাঁড়ালো না। দ্রুত পায়ে জায়গা ত্যাগ করে। ইরান কঠিন স্বরে আনাবিয়াকে বলে,

-আমি আরো ভেবেছিলাম আজ সবার সাথে তোমার পরিচয় করিয়ে দেবো! এখন এই ভেসে তোমাকে দেখলে লোকজন কী বলবে? প্লিজ আনাবিয়া গো এন্ড চেঞ্জ ইউর ড্রেস।

-আমি যাবো না কারো সামনে। কী বলে পরিচয় করিয়ে দেবেন? কাজিন? নাকি আপন ছোট বোন?

-শাট আপ ইউ ইডিয়েট।

আনাবিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কান্না জড়ানো গলায় বলে,

-আপনার ফ্যামিলিতে ওর ফ্যামিলি ফাঙ্কশনে আমার কোনো দাম আছে ইরান? আজ সকালে আপনাদের মেহমান এসেছে বাসায়। আপনার বোন আমাকে বলেছিল আমি জেনো রুম থেকে বের না হই। ওকে হইনি। আপনি অবশ্য সবটা শুনেছেন? কিন্তু কোনো প্রতিবাদ করেছেন নিজের ওয়াইফের জন্য? এটা কোন ধরণের ভালোবাসা ইরান? আদৌ আপনি আমাকে ওয়াইফ ভাবেন?

ইরান আকাশ থেকে পরলো। দুইদিন ধরে কাজে অনেক বেশি ব্যস্ত সে। কাল রাতে সে নিজে শপিং করে এনেছেন আনাবিয়ার জন্য। আজ ব্যস্ত থাকায় আনাবিয়ার সাথে তার তেমন সাক্ষাৎ হয়নি। রাতেই বলে দিয়েছিল আজ কী পরবে। তার অনুপস্থিতে তার বোন তার-ই স্ত্রীর সাথে এইরকম ব্যবহার করবে একটুও ভাবতে পারেনি ইরান। ইরান হতবাক হয়ে কিছু বলবে তার আগে আনাবিয়া বলে,

-আপনার বাড়ির কাজের মেয়ের পরিচয় দিয়েন তবুও বোন বলবেন না ইরান। এতো কিছু সহ্য করে আমি এখানে আছি শুধুই আপনার জন্য। কেমন জেনো একটা মায়াজালে আটকে পরেছি! নাহলে আপনার ফ্যামিলির সবাইকে খুন করে বহু আগেই এই দেশ ত্যাগ করতাম।

আনাবিয়া চলে যেতে নেয়। কিছু মনে পরতে আবার পিছনে ফিরে। চোখের পানি মুছে তেজি কণ্ঠে বলে,

-আপনার বোনকে বলবেন সে জেনো তার জায়গায় থাকে। আমার সাথে বাজতে এলে যেভাবে নিজের পদ হারিয়েছে সেভাবেই নিজের অস্তিত্বকেও হারাবে। আমার সুন্দর জীবন নষ্ট করতে এলে আমি তার পুরো জীবনে আগুন লাগিয়ে দেবো।

আনাবিয়া বাড়ির ভিতরে চলে যায়। রাগে ইরানের কপাল ও হাতের রগ ফুলে উঠে। অত্যাধিক রাগে নিজের হাত নিজেই খামচে ধরে। এখন কিছু বলাও যাবে না। ইরান নিজেকে কোনোরকম শান্ত করে। বড় বড় নিঃশাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করে। তনুসফার পদ হারানোর পিছনে যে আনাবিয়ার হাত ছিল এটা ইরান জানে। আনাবিয়া এই বাসায় এসেছিল শুধুই প্রতিশোধ নিতে। আর এই মেয়ের মাথায় এখনও প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। তনুসফা শেখকে শান্তিতে থাকতে দেবে না সে। আর না ইসরাফকে বাঁচতে দেবে। যতই ওপর দিয়ে ভালো সাজার নাটক করুক সত্যি তো আনাবিয়া এই বাড়ির সব থেকে বড় শত্রু।
তবে আনাবিয়া কী জানে ইরানই যে তার বড় এবং মূখ শত্রু?

🌸

ইরান মাত্রই জেসিকাকে হলুদ দিয়ে নিচে নেমেছে। তাহশিয়া শাড়ী ধরে স্টেজ থেকে নামছিল। অসাবধানতার কারণে শাড়ীর সাথে পা বেজে নিচে পরতে নেয়। ইরান তখন তাহশিয়ার ঠিক সামনে ছিল। কোনোদিক না ভেবে তাহশিয়ার ডান হাত শক্ত করে ধরে। তাহশিয়া সামনের মানুষটিকে না দেখে হাতটি ধরে উঠে দাঁড়ায়। ইরান নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে ভদ্রতার খাতিরে বলে,

-আপনি ঠিক আছেন?

ইরানের কণ্ঠস্বর শুনে তাহশিয়ার ষষ্ঠইন্দ্রিয় জেগে উঠে। দ্রুত মাথা তুলে সামনে তাকায়। এতো নিকট ইরানকে দেখে তার বক্ষস্থল অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে। কী বলবে, কী বলবে না কিছুই ভেবে পেলো না সে। ইরান পুনরায় জিজ্ঞেস করে,

-আর ইউ ওকে?

-ই ইই ইয়েস।

তনুসফা দূর থেকে ইরান আর তাহশিয়াকে একসাথে দেখে এগিয়ে আসে। তনুসফাকে দেখে ইরানের মুখ শক্ত হয়ে যায়। তনুসফা ইরানকে উদ্দেশ্য করে বলে,

-ইরান ও তাহশিয়া। মন্ত্রী সাহেবের মেয়ে ও ফেমাস ডিজাইনার।

-ওহ।

তাহশিয়া অচেনা ভান করে বলে,

-আপনি এমপি ইরান শেখ?

-জি।

-আপনার বিষয় অনেক শুনেছি আমার পাপার থেকে। তবে আপনার যতটা তারিফ আর সৌন্দর্যের বর্ণনা শুনেছিলাম ততটাও সুদর্শন নন আপনি মিস্টার ইরান।

তনুসফার পছন্দ হলো না তাহশিয়ার কথা। এই মেয়ে নাকি ইরানকে পছন্দ করে! তাহলে ইমপ্রেস করার মতো কথা না বলে এইসব কী বলছে? তনুসফা চোখের ইশারায় তাহশিয়াকে চুপ থাকতে বলে। ইরান তাহশিয়ার কথায় মুচকি হেসে বলে,

-আমি মোটেও সুদর্শন নই। আমি নাতো মুলার মতো ফর্সা আর নাতো জিরাফের মতো লম্বা। আমি অতি সাধারণ একজন পুরুষ।

-আপনার কথাগুলো বেশ ধারালো। একদম বুকে এসে লাগে।

-থাক তাহলে আর কিছু বললাম না। এনজয় করুন কিছু লাগলে বলবেন।

ইরান চলে যায়। তাহশিয়া বাঁকা হেসে ইরানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। সামনের চুলগুলো সরিয়ে মুগ্ধ কণ্ঠে বলে,

-সে শুধু সুদর্শন না অনেক বেশি সুদর্শন।

-তুমি ওর সাথে এভাবে কথা বললে কেনো? কোথায় ওকে ইমপ্রেস করবে কী আরো ভড়কে দিলে!

-তনুসফা শেখ আপনার থেকে আমার বুদ্ধি বেশি। আমি কী কী করি আপনি শুধু দেখেন।

-ঠিক আছে যা মন চায় করো।

-ইরানের ওয়াইফ কোথায়?

-জানি না। ফাঙ্কশনে দেখছি না হয়তো নিচে আসেনি।

-নাম কী জেনো?

-আনাবিয়া সাবরিন।

-সুন্দর নাম। তাকে ভীষণ দেখার ইচ্ছে আমার। কোনোভাবে একটু তাকে এখানে আনার ব্যবস্থা করুন।

-ওয়েট।

তনুসফা তাড়াহুড়ো করে ইরানের কাছে আসে। ইরান অন্য একজনের সাথে কথা বলছিল। ইরান তাকে বিদায় জানিয়ে তনুসফার পানে তাকায়। তনুসফা চিন্তিত হওয়ার ভান করে বলে,

-আনাবিয়া কোথায়? ও আসলো না জেসিকাকে হলুদ দিতে? জেসিকা যে ওকে খুঁজছে।

-কেনো আসবে আমার স্ত্রী এখানে? আপনি তো ওকে আসতে মানা করেছেন আপা।

-আমি কী এখানে আসতে মানা করেছি নাকি! দেখেছ মেয়েটা তোমার কাছে আমার নামে মিথ্যে নালিশ দেয়।

-এখন জাস্ট ফাঙ্কশনের জন্য কিছু বলছি না। তবে দ্বিতীয়বার আপনি ওকে কিছুই বলবেন না আপা।

-এখনও তুমি বউর সাপোর্টই করছ! ঠিক আছে করো।

তনুসফা মুখ ফুলিয়ে চলে যায়। সবার হলুদ ছোঁয়া শেষ হলে রাত একটায় ফাঙ্কশন শেষ হয়। সবাইকে বিদায় দিয়ে ও সব কিছু গুছিয়ে রুমে আসে ইরান। বাতি নিভানো। পুরোপুরি অন্ধকারে ডুবে আছে। ইরান বাতি জ্বালিয়ে বিছানার দিকে তাকায়। উল্টো হয়ে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে শুয়ে আছে আনাবিয়া। ইরান ফ্রেশ হয়ে এসে রান্নাঘর থেকে খাবার নিয়ে আসে। টেবিলে খাবার রেখে বিছানায় সামনে যেয়ে মৃদু আওয়াজে আনাবিয়াকে ডাক দেয়। কয়েকবার ডাকার পর চোখ খুলে আনাবিয়া। ছোট ছোট আঁখিজোড়া ফুলে লাল হয়ে আছে। ঘুম ঘুম দৃষ্টি। বিছানায় উঠে বসে বিরক্ত হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-হোয়াট’স ইউর প্রবলেম?

-যাও মুখ ধুয়ে এসো খাবার খাবে।

-মম খাইয়ে দিয়েছে। আপনি খেয়ে নিন।

-আমার সাথে তোমারও খেতে হবে উঠো জলদি।

-এতো বেশি আদিখ্যেতা দেখাচ্ছেন কেনো? আপনি খেয়ে নিন।

ইরান আর কিছু বললো না। রাগী মুখ করে ডিভাইনে যেয়ে বসে পরে। আনাবিয়া বুঝলো ইরান রাগ করেছে। তাই নিজেই বিছানা থেকে নেমে ফ্রেশ হয়ে আসে। খাবার বেড়ে ইরানের পাশেই বসে পরে। ইরান আড়চোখে আনাবিয়ার কার্য লক্ষ্য করছে। আনাবিয়া ইরানের হাতে থালি দিয়ে আদেশ স্বরে বলে,

-চলুন এবার মাখুন নিজেও খান আমাকেও খাইয়ে দিন।

ইরান মনে মনে খুশি হলেও ওপর দিয়ে প্রকাশ করল না। গম্ভীর মুখে আনাবিয়াকে খাইয়ে দেয় এবং নিজেও খায়। খাওয়া শেষ হলে পুনরায় নীরব হয়ে যায় ইরান। আনাবিয়া ইরানের হাত ধরে বলে,

-আসুন তো আমার সাথে।।

-কোথায়?

-বেলকনিতে। আমার ঘুম আসছে না এখন নিজে ঘুম ভেঙেছেন নিজেই ঘুম পাড়িয়ে দেবেন।

-এতো রাতে বেলকনিতে যেয়ে কী হবে?

-উফফ! স্টপ টকিং জাস্ট কাম।

ইরান উঠে দাঁড়ায়। আনাবিয়া তাকে বেলকনিতে নিয়ে চলে আসে। সকল বাতি নিভিয়ে দেয়। এখানে চাঁদের পূর্ণ আলো আসে তাই আর কৃত্রিম বাতির প্রয়োজন নেই। আনাবিয়া ইরানকে ঝুলানো দোলনায় বসিয়ে দেয়। তারপর নিজেও অনেক বেশি আবেদনময়ী হয়ে ইরানের কোলে বসে পরে। ইরান তখন শকড এর মধ্যে ছিল। আনাবিয়া এমনেই সুন্দর। চাঁদের আলোতে অস্বাভাবিক সুন্দর লাগছে আনাবিয়াকে ইরানের চোখে। সে পারছে না আনাবিয়ার খোলাটে নয়ন থেকে চোখ সরাতে। আনাবিয়া নিজেই ইরানের দুই হাত নিজের কোমরে রাখে। মৃদু আওয়াজে বলে,

-এইযে আমাকে ধরুন নয়তো পরে যাবো।

ইরান আনাবিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে। পুরোপুরি নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। অনাবিয়াও বিড়ালের বাচ্চার মতো গুঁটিসুটি হয়ে ইরানের বুকে মাথা দিয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে।

-জানেন ইরান আপনাকে বিয়ে করার পর আমি একজন মা পেয়েছি। অনেক আদর করে মম আমাকে। আমি খেতে চাচ্ছিলাম না দেখে জোর করে খাইয়ে দিয়ে গিয়েছে।

-তাই নাকি?

-জি। আই জাস্ট লাভ ইউর মম। শি ইস আদরেবল পারসন। তাকে দেখলেই আমার অন্যরকম ভালোবাসা ভালোবাসা অনুভূতি হয়।

-আর মমের ছেলেকে দেখলে?

-জানি না।

-হ*র্নি হ*র্নি ফিলিংস হয় তাইতো?

আনাবিয়া ইরানের বুকে চিমটি কাটে। ইরান হাসতে হাসতে লুটোপুটি খায়। আনাবিয়া মাথা তুলে আস্তে আস্তে বলে,

-আপনার মুখে এইরকম রাব্বিশ ওয়ার্ড মানায় না।

-উম তাহলে কী মানায়?

-কী মানায় জানেন? উইযে যখন বলেন আমাবিয়া আমি তোমাকে ভালোবাসি অথবা আনাবিয়া আই লাভ ইউ এই ওয়ার্ড গুলো আপনার মুখে অপূর্ব লাগে।

-তুমিও বদমাইশ হয়ে যাচ্ছ আনাবিয়া!

কথা বলেই ইরান আনাবিয়াকে সুড়সুড়ি দিতে থাকে। হাসতে হাসতে আনাবিয়া বলে,

-স্টপ ইরান পরে যাবো আমি। স্টপ।

-ওকে। সত্যি বলি আনাবিয়া আমি জানতাম না আপা তোমার সাথে এইরকম ব্যবহার করেছে। আমি আগামীকালই আপাকে কিছু কঠিন কথা বলে দেবো।

-না থাক এখন কিছু বলার প্রয়োজন নেই। ভালোভাবে বিয়ে হয়ে যাক।

-কিন্তু,,,,,,,

-আপনি তো খুব বোরিং পারসন! আমি এতো রোমান্টিক ভাবে আসলাম আর আপনি বে*হুঁ*দা পেচাল শুরু করেছেন! বাদ দিন না।

-আচ্ছা ভালোবাসো আমায়?

আকিস্মিক ইরানের এহেন প্রশ্নে গাবড়ে যায় আনাবিয়া। কিছুক্ষন নীরবতা পালন করে শান্ত স্বরে বলে,

-হয়তো ভালোবেসে ফেলেছি।

-হয়তো কেনো আবার?

-আমার জীবনে কখনই ভালোবাসা আসেনি তাই আমি ভালোবাসা নামক অনুভূতির সাথে অবগত নই। মা বাবার ভালোবাসা ভিন্ন আর এই ভালোবাসা ভিন্ন। তাই বুঝতে পারছি না।

-একদিন বুঝবে আর সেই একদিন বেশি দূরে নেই।

-তাই?

-ঠিক তাই। এখন ঘুমাবে না? নাকি এভাবে বসে থেকে আমাকে সিডিউস করবে কোনটা?

-মন তো চাচ্ছে আপনাকে একদম জেন্ত খেয়ে ফেলি!

-চূড়েল! সুন্দর লাগছে তোমাকে।

-হ্যাঁ আপনার কাছে তো সব ভাবেই আমাকে সুন্দর লাগে!

-জি।

দুইজন চুপ হয়ে যায় আনাবিয়া ইরানের দাঁড়িতে হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। ইরান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে আনাবিয়ার ঠোঁটের দিকে অগ্রসর হতে থাকে। যেই না কিস করবে তখনই বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় আনাবিয়া। ইরানকে ভেংচি কেটে দৌড়ে রুমের ভিতরে চলে যায়। ইরান নিজেও হাসতে হাসতে রুমে চলে যায়।

____________________

পরেরদিন বিকেলে। জেসিকাকে সাজাতে পার্লারের মেয়েরা এসেছে। আনাবিয়া আজ ইরানকে প্রমিস দিয়েছে যেভাবেই হোক ফাঙ্কশনে যাবে। ইরান তার জন্য একদম সাধারণ সেলোয়াড় কামিজ চয়েস করে রেখে গিয়েছে। অন্যদিকে জেসিকা আনাবিয়ার ওপর অভিমান করেছে। কাল তার হলুদের যায়নি বলে। আনাবিয়া এটা সেটা বলে মানায় জেসিকাকে। তখন জেসিকা বলে আজ আনাবিয়াকে তার সাথে পার্লারে সাজতে হবে। আনাবিয়া রাজি হতে চায়নি। জেসিকার জোরাজোরিতে শেষে রাজি হয়েছে। তনুসফার মুখ ফোলা। মেয়ের আনাবিয়ার প্রতি এতো কেয়ার, ভালোবাসা তার কাছে অসয্য লাগছে। ইরানের জন্য আনাবিয়াকে কিছু বলতেও পারছে না সে।

জেসিকার রুমে বসে আছে আনাবিয়া সহ জেসিকার কয়েকজন ফ্রেন্ড। সবাই আনাবিয়ার আগেরই পূর্ব পরিচিত। আনাবিয়া জেসিকাকে আমতা আমতা করে বলে,

-দেখো জেসিকা তোমরাই সাজো আমাকে না পার্লারে সাজ সুট করে না।

-অবশ্যই করবে। আপনি বসুন তো মামী।

-আমি নিজেই সাজি না?

-নোহ। দেখেন আজ দূর দূর থেকে লোকজন আসবে আমি চাই সবাই আমার মামীকে দেখে তারিফ করুক। প্লিজ?

-ঠিক আছে।

না চাওয়ার শর্তেও আনাবিয়া সাজতে বসে। পার্লার এর মেয়েরা অবাক হয়ে তাকে দেখছে। একে একে সব কিছু দিয়ে সাজাতে থাকে তাকে। বিরক্তিতে চোখ মুখ কুঁচকে শক্ত হয়ে বসে থাকে আনাবিয়া।

রাত আটটা। ব্যস্ত ভঙ্গিতে এদিক সেদিক যাচ্ছে ইরান। পরিচিতদের সাথে কুশলবিনিময় করছে। বারে বারে তার চোখ দরজার দিকে যাচ্ছে। এতো সময় হয়ে গেলো এখনও আনাবিয়া আসছে না কেনো! ইরান সামনে যেতে নেয় হঠাৎ তার পরিচিত একজন তাকে ধরে। ইরান হাত মিলিয়ে হাসি মুখে কথা বলে। কথার এক পর্যায় লোকটা বলে,

-ইরান শেখ আপনি কবে বিয়ে করছেন? আপনার বিয়ের আশায় আমরা আগ্রহী হয়ে বসে আছি যে।

-জি সামনেই করছি।

-পছন্দ করে রেখেছেন নাকি?

-ঐ আর কী। আপনারা ভিতরে গিয়ে বসুন।

ইরান খাবার সার্ভ করা লোকদের এটা সেটা বুঝিয়ে দিচ্ছিল এমন সময় তনুসফার সাথে ভিতরে প্রবেশ করে তাহশিয়া আর তার বাবা। ইরান তাহশিয়াকে খেয়াল করেনি। তাহশিয়ার প্রথমেই নজর পরে ইরানের ওপর। মুখ দিয়ে অস্পষ্ট স্বরে বলে উঠে “মন মুগ্ধকর”। ইরান আজ কালো রঙের সুট পরেছে। আর তাহশিয়া নীল রঙের জর্জেট শাড়ী। তার সাথে ভারী মেকআপ। সুন্দর মেয়েদের এতো না সাজলেও হয়!

এখনও আনাবিয়া আসছে না ইরানের হাসি হাসি মুখ ধীরে ধীরে গম্ভীর হয়ে যাচ্ছে। রাকিয়ার কাছে গিয়ে ধীর কণ্ঠে বলে,

-আম্মা আনাবিয়া আসছে না কেনো? তুমি একটু গিয়ে ওকে দেখো তো।

-হ্যাঁ যাচ্ছি।

রাকিয়া যেতে নেবে তার আগেই তনুসফা রাকিয়াকে ধরে স্টেজে নিয়ে যায়। তাহশিয়া শাড়ী ধরে হাঁটতে হাঁটতে ইরানের কাছে আসে। শান্ত স্বরে বলে,

-মিস্টার ইরান।

তাহশিয়ার ডাক শুনে ইরান পিছনে ফিরে তাকায়। শান্ত স্বরে বলে,

-আপনি! জি কোনো দরকার ছিল?

-আপনার সাথে আমার বিজনেস নিয়ে কিছু কথা আছে।

-ওকে আপনি একদিন সময় করে আমার অফিসে চলে আসুন।

-ঠিক আছে। আপনি অনেক বেশি গম্ভীর।

-হ্যাঁ। কথা কম বলতে ভালোবাসি আমি।

-তাহলে আপনি আমার মতোই! আমিও বেশি কথা বলি না এবং বেশি কথা বলা মানুষদের পছন্দ করি না।

-তা মিস তাহশিয়া আপনি কী শুধু বিয়ে এটেন্ড করতেই বাংলাদেশ এসেছেন নাকি অন্য কোনো কারণেও?

তাহশিয়া মনে মনে একটু অবাক হলো ইরানের প্রশ্নে। তবে বাহ্যিক দিয়ে স্মিত হেসে বলে,

-আমি কোনো বাংলাদেশির সাথে বিজনেস ডিল করতে চাই এই কারণেই আমার বাংলাদেশে আসা।

-ওহ ওকে।

-উম আপনি দেখছি একটু বেশিই চতুর!

-অবশ্যই। আমি এখন যে পর্যায় আছি এখানে এভাবেই আসি নি।

তাঁদের কথার মাঝেই রিপোর্টার’সদের আগমন। দুইজনকে একসাথে দেখে বলে,

-স্যার ম্যাম ইউ আর লুকিং সো নাইস। প্লিজ কয়েকটা ছবি হয়ে যাক?

ইরান তাহশিয়ার সাথে ছবি তুলতে চাচ্ছিলো না। কারণ রিপোর্টার’সদের দিয়ে ভরসা নেই তার। একটা সাধারণ ছবিকে কী না কী বানিয়ে দেয়। তাই সে বলে,

-অন্য একসময় ছবি তুলিয়েন।

-স্যার প্লিজ? একটা ছবি মাত্র।

তাহশিয়া খুশিতে গদগদ। মুখের হাসি জেনো সরছেই না তার। মনে মনে ভাবে হয়তো এবার সৃষ্টিকর্তাও তার সাথে আছে! তাহশিয়া ভালো সেজে বলে,

-কাম অন মিস্টার ইরান একটা ছবিই তো এতো আহামরির কী হলো!

-ওকে। শুধু একটা ছবিই তুলুন।

তাহশিয়া ইরানের পাশে দাঁড়ায়। আনন্দে ফেটে যাচ্ছে সে। অস্বস্তিতে পরে যায় ইরান। রিপোর্টার’স ছবি তোলার জন্য তৈরি হতেই আচমকা তাঁদের মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয়ে যায়। রিপোর্টার’সদের মুখের পরিবর্তন দেখে একজন বলে উঠে,

-কী হলো তুলুন ছবি।

আনাবিয়ার কণ্ঠস্বর শুনে ইরান তার অন্যপাশে তাকায়। খয়েরি রঙের গর্জেস বেনারসি শাড়ী পরিধান করে, সম্পূর্ণ বাঙালি বউয়ের সাজে তার ওপর পাশে দাঁড়িয়ে আছে আনাবিয়া। ইরানের বিশ্বাস হচ্ছে না এইটা সত্যি। স্তব্ধ ও বিমূঢ় সে!

>>>চলবে।

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ২৩

-আজব তো! আপনারা ছবি তুলছেন না কেনো? দ্রুত তুলুন।

আনাবিয়ার কথায় ফটাফট কয়েকটা ছবি তুলে ফেলে সাংবাদিকরা। ইরান সব কয়টা ছবিতে আনাবিয়ার দিকেই তাকিয়ে ছিল। তাহশিয়া একটু দূরে যেয়ে দাঁড়ায়। গম্ভীর চাহনি দিয়ে পরোক্ষ করতে থাকে আনাবিয়াকে। আশেপাশের সবাই অবাক হয়ে আনাবিয়া আর ইরানকে দেখছে। সাংবাদিকরা বিস্মিত হয়ে প্রশ্ন করে,

-স্যার উনি কে? আপনার কোনো কাজিন?

সাংবাদিকের প্রশ্নে ইরান ভাবনা থেকে বেরিয়ে আসে। সবার দিকে একবার চোখ বুলিয়ে হাসি মুখে আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-উনি আপনাদের মেডাম আমার ওয়াইফ। মিসেস আনাবিয়া শেখ।

সবাই বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে রইলো তাঁদের দিকে। আরেকজন সাংবাদিক বলে,

-স্যার বিয়েটা কী ফ্যামিলিগত ভাবে হয়েছে?

-ফ্যামিলিগত ভাবে হয়েছে তবে ভালোবাসাও ছিল।

-এনপি ইরান শেখের বিয়ে চুপচাপ হয়ে গেলো! কোনো ফাঙ্কশন করবেন না স্যার?

-অবশ্যই করব। সুন্দর মতো আমার ভাগ্নির বিয়ে হয়ে যাক তারপর আমারটাও করব।

-ম্যাম দেখি বিদেশী!

-ম্যাম একটু পোজ দেন প্লিজ।

-ম্যাম আপনাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে বাঙালি সাজে।

-আপনাদের দুইজনকে অনেক বেশি মানিয়েছে স্যার।

এইরকম নানান মন্তব্য দিচ্ছে সকলে। আনাবিয়ার চোখ মুখ চকচক করছে খুশিতে। ইরানের ভালো লাগছে না অনাবিয়ার তারিফ অন্য একজনের থেকে শুনতে। তাহশিয়া শুধু আনাবিয়াকে দেখেই যাচ্ছে। তার থেকেও বেশি সুন্দর আনাবিয়া। তনুসফা মুখ বাঁকিয়ে তাহশিয়ার কাছে আসে।

-আনাবিয়া, ইরানের ওয়াইফ।

-মাশাআল্লাহ মেয়েটি! সৃষ্টিকর্তা অনেক যত্ন করে বানিয়েছে ওকে।

-তোমার আচরণ দেখে আমি ক্ষণে ক্ষণে অবাক হই! ঐ শাকচুন্নি মেয়ে তোমার ভালোবাসার মানুষকে ছিনিয়ে নিচ্ছে আর তুমি সেখানে ওর তারিফের মালা যবছো!

-যে সুন্দর তার তো তারিফ করবই! আর শুধু কুকুরের মতো ঘে*উ ঘে*উ করলেই সবকিছু হয় না। কিছু কিছু সময় বুদ্ধি দিয়েও কাজ করতে হয় তনুসফা শেখ।

-তোমার কী ভালো লাগছে ওদের একসাথে দেখে? দেখো সবাই কত তারিফ করছে আনাবিয়ার। একটুও বুক জ্বলছে না তোমার?

তাহশিয়া আগের মতোই শান্ত। স্মিত হেসে বলে,

-আপনি যে আপনার ভাইয়ের বড় শত্রু এটা কী আপনার ভাই মানে ইরান জানে?

-আমি ইরানের শত্রু না। আমি শুধু ওর ভালোটা চাই। এখন বলো জ্বলছে না তোমার বুক?

-শুধু বুক জ্বলছে না আমার দেহের সর্বাঙ্গ জ্বলে পুড়ে ছারখার হয়ে যাচ্ছে। তবে আমি আমার কষ্ট ভিতরে লুকিয়ে রাখতে ভালোবাসি। অন্যকে দেখিয়ে কোনো লাভ হবে? তারা আরো উপহাস করবে।

-আমি এতদিন শুধু আনাবিয়াকেই সাংঘাতিক মেয়ে ভাবতাম আজ দেখলাম তুমিও কম নয়! আনাবিয়ার মতো মেয়ের সাথে লড়তে হলে এইরকম স্ট্রংনেসের-ই প্রয়োজন।

-আমি কারো সাথে লড়তে আসিনি। শুধু নিজের অসম্পূর্ণ জিনিসকে সম্পূর্ণ নিজের করতে এসেছি। ওকে?

-মানে? কী বলছো তুমি এইসব?

তাহশিয়া হাসে। মুখে অমায়িক হাসি ফুটিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-আমি হলাম আমার গল্পের নায়িকা ভিলেন কেনো হতে যাবো! সময় হোক যে ভিলেন সে নিজেই নিজের আসল রূপে ফিরে আসবে।

তাহশিয়া কোমর দুলিয়ে দুলিয়ে হেঁটে আনাবিয়ার কাছে যায়। তনুসফা ফের অবাক হয় তাহশিয়ার কাজ দেখে। তাহশিয়া আনাবিয়ার সামনে গিয়ে হাসি মুখে ইরানকে বলে,

-লুকিয়ে বিয়ে করার কোনো মানে হয় মিস্টার ইরান! এতো সুন্দর ফুলের মতো ওয়াইফকে সবার স্মুখীন আনতে ইচ্ছুক ছিলেন না?

-আসলেই তাকে সবার সামনে আনতে চাইনি। কারণ ফুলের মতো বউ আমার! কখন কার খারাপ নজর লেগে যায় কে জানে।

-সহমত।

তাহশিয়া আনাবিয়ার থুতনি ধরে মুগ্ধ হয়ে বলে,

-সো বিউটিফুল। কোন দেশে থেকে এসেছেন আপনি?

অচেনা মেয়ের আদিখ্যেতা পছন্দ হলো না আনাবিয়ার। তবুও শান্ত স্বরে বলে,

-রাশিয়া।

-উম।

-আপনি কে?

-আমি জাস্ট একজন গেস্ট অথবা আপনার হাসব্যান্ড এর নেক্সট বিজনেস পাটনার।

-ওহহ! আপনি দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? ইরান উনাকে ভিতরে নিয়ে যান। আমি জেসিকাকে নিয়ে আসছি।

-হুম যাও।

🌸

অতঃপর বিয়ে শেষ হয়। সবাইকে বিদায় দিয়ে নিজ নিজ রুমে চলে যায় সকলে। আনাবিয়া আগেই টিসু দিয়ে মেকআপ তুলেছে। এখন গহনা খুলছে। চকচকে গোল্ডের জুয়েলারী পরেছিল আজ সে। ইরান শাওয়ার নিয়ে বের হয়। চুল মুছে আনাবিয়ার কাছে এসে নিজেই তার জুয়েলারি এক এক করে খুলে দিতে থাকে।

-আজকের সারপ্রাইসটা আমি কখন ভুলবো না। বাট এতো কিছু কেনো পরতে গিয়েছো? আবার এই ভারী শাড়ী! অনেক কষ্ট হয়েছে না হাঁটাচলা করতে?

-একদমই হয়নি। আপনি খুশি হয়েছেন আমার আর কী লাগে।

-তবে আমার খুশি যে তোমার খুশিতে । ওহ গড গলায় দেখি লাল হয়ে কেমন আঘাতের মতো হয়ে গিয়েছে! ওয়েট মলম লাগিয়ে দিচ্ছি।

-এখন না। আগে ড্রেস চেঞ্জ করে নেই তারপর।

-ওকে। দাঁড়াও আমি শাড়ী খুলতে সাহায্য করি।

-হুম।

শাড়ী খোলা হলে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায় আনাবিয়া। অনেক সময় নিয়ে লম্বা একটি শাওয়ার নিয়ে বের হয় সে। চুল না মুছেই বিছানায় বসে পরে। ইরান মলম নিয়ে বসে ছিল। আনাবিয়ার সামনে গিয়ে সযত্নে গলায়, ঘাড়ে মলম লাগিয়ে দেয়। তারপর তৈয়ালে খুলে আনাবিয়ার চুল মুছে দেয়। আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,

-এই বেবি হেয়ার আর মুছতে হবে না।

-নিজের প্রতি এতো কেয়ারলেস কেনো তুমি? ভিজে চুলে ঘুমালে জ্বর হবে।

-জানেন যখন আপনি সবার সামনে আমাকে নিজের ওয়াইফ বলে পরিচয় দিয়েছিলেন তখন আমার ভীষণ ভালো লেগেছিল।

-তোমার ভালো লাগা-ই যে আমার ভালো লাগা ডিয়ার।

আনাবিয়া ইরানের দিকে ফিরে বসে। নিজ গালে হাত বুলিয়ে বলে,

-ঐ মেয়েটা কে ছিল?

-কোন?

-যে আমাকে বিউটিফুল বললো সে?

-মন্ত্রীর মেয়ে সে।

-যার সাথে আপনার বিয়ের কথা চলছিল তিনি কী সেই মেয়ে?

-হুম।

-বাহ্! মেয়েটা অনেক স্ট্রং! আমাকে দেখেও কত স্বাভাবিক ছিল।

-এসো ঘুমাবে।

-হুম।

______________________🌸

“সুখের দিন অতি দ্রুত অতিবাহি হয়ে যায়” কথাটা আসলেই সত্যি। দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ চলে গেলো। জেসিকার বিয়ে সম্পূর্ণ ভাবে শেষ। গত দু’দিন আগেই জেসিকা এবং তার হাসব্যান্ড হানিমুনে গিয়েছে। এটা গিফট ছিল মামা ইরানের তরফ থেকে। আনাবিয়ার বেশ ভালো দিন কাটছে। আজ তারা তাঁদের নিজস্ব বাসায় চলে যাবে। একটু মন খারাপ আনাবিয়ার। রাকিয়াকে ছাড়া কষ্ট হবে তার। ইরান অনেক বার মাকে বলেছিল তাঁদের সাথে বেড়াতে যেতে। কিন্তু রাকিয়া এই বাড়ি ছেড়ে কোথায়ও যাবে না।

ইসরাফ সবসময় তার রুমেই শুয়ে থাকে। দুইজন কাজের লোক রাখা হয়েছে তার দেখভাল করার জন্য। তাছাড়া তনুসফা ও ইরান কয়েকবার দেখা করতে যায় ইসরাফের সাথে। ঠিক ভাবে কথা বলতে পারে না ইসরাফ। একটু কথা বললেই অনেক হয়রান হয়ে যায়। আনাবিয়া এখন পর্যন্ত একবারও দেখা করেনি। সঠিক সময় আসুক তারপরই সে ইসরাফের সাথে দেখা করতে যাবে। সকাল দশটা বাজে এখন। তনুসফা, ইরান ব্রেকফাস্ট করে অফিসে চলে গিয়েছে। রাকিয়া আর আনাবিয়া ব্রেকফাস্ট করে ড্রইংরুমের সোফায় বসে। রাকিয়া নিউজপেপার পড়ছে আর আনাবিয়া এটা সেটা নিয়ে বকবক করছে। হঠাৎই রাকিয়ার চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। পেপারটা সামনে নিয়ে ভালোভাবে পড়ার চেষ্টা করে।

আনাবিয়া রাকিয়ার এইরকম আচরণ দেখে একটু অবাক হয়। শান্ত স্বরে বলে,

-মম কী হলো? কী দেখলে এমন?

রাকিয়া কিছু না বলে আনাবিয়ার দিকে পেপার এগিয়ে দেয়। তারপর দ্রুত করে ড্রইংরুমের টিভি অন করে নিউজ চ্যালেনে দেয়। আনাবিয়া নিউজপেপারের দিকে তাকিয়ে হতভম্ব হয়ে যায়। তার, ইরান এবং তাহশিয়ার একটা পিক দিয়ে নিচে ক্যাপশন দেওয়া হয়েছে,
“তবে কী এমপি ইরান শেখও অন্য পুরুষের মতো বের হলো! একজনকে কথা দিয়ে অন্য এক বিদেশীকে লুকিয়ে বিয়ে করে নিলো! জনমান্য মন্ত্রীর মেয়েকে এভাবে ধোঁকা দিলো এটা কী মেনে নেবেন মন্ত্রী সাহেব? আমরা সবাই জানি এমপি সাহেব মন্ত্রী হাসিব আলীর অনেক বেশি প্রিয় ছিল এখন দেখা যাক কী হয়।”

আনাবিয়া মাথা তুলে টিভির পানে চোখ স্থির করে। ব্রেকিংনিউজেও এইটাই দেখাচ্ছে। আনাবিয়া স্তব্ধ হয়ে রাকিয়া শেখের দিকে তাকায়। কথা বলার মতো কোনো ভাষা খুঁজে পেলো না সে। নিশ্চুপ হয়ে বড় বড় পা ফেলে সিঁড়ি দিয়ে ওপরে চলে যায়। রুমে এসে ফোন হাতে নেয় ইরানকে কল দিতে। আকিস্মিক আনাবিয়ার ফোনে একের পর এক নোটিফিকেশন এসেই যাচ্ছে। ফেইসবুকে অনেকেই ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাচ্ছে। নোংরা নোংরা মেসেজ দিচ্ছে। ইন্সট্রাগ্রাম, টুইটার জায়গায় জায়গায় মানুষ তাকে মেসেজ দিচ্ছে। আনাবিয়া কাঁপাকাঁপা হাতে কয়েকটা মেসেজে পড়ে। মেসেজ গুলোতে লেখা ছিল,

-কিভাবে আমার ক্রাশকে পটালেন? শরীর দেখিয়ে নাকি? আগে জানলে এইরকম মা**গী আমিই নাহয় হয়ে যেতাম!

-বাহ্ ফি*গার জোস্! ইরানের পর আমাদেরও একটু সুযোগ দিও বেবি

-তোমার মুখে কালি মেখে দেওয়া দরকার। আমার ক্রাশকে কিভাবে নিজের মায়াজালে ফাঁসালে নোংরা মেয়ে।

এইরকম আরো কয়েকটা মেসেজ দেখে নিজেকে ঠিক রাখতে পারে না আনাবিয়া। আছাড় দিয়ে ফেলে দেয় হাতের ফোন। চিৎকার করে রুমের সব জিনিস ভাঙচুর করতে থাকে। আর চিৎকার করে বলে,

-শেষ করে দেবো আমি তাঁদের সবাইকে। কাউকে ছাড়বো না। কাউকে না।

_________

অফিসে এসে নিউজপেপার দেখে ইরানের মেজাজ গরম হয়ে যায়। রেগে তার পিএ তাজীবের দিকে তাকায়। তাজীবও জেনো অকেজো হয়ে গিয়েছে। ইরান রাগী কণ্ঠে বলে,

-কোন সাংবাদিকের এতো বড় স্পর্ধা আমার স্ত্রীর নামে এইরকম ভুলভাল কথা ছড়ায়? জলদি এই সাংবাদিকদের বেপারে খোঁজ নেও। তাঁদের নিউজ ছাপানো আমি জনমের জন্য বন্ধ করে দেবো।

তাজীব ভীত হয়ে যায় ইরানের উঁচু আওয়াজে। দ্রুত সাংবাদিকের হেডকে কল দেয়। কল রিসিভ করার পর ফোন ইরানের কাছে দেয় তাজীব।

-আপনি কী মিস্টার সিফাত সরকার বলছেন?

-জি কেনো?

-আমি ইরান শেখ বলছি।

-স্যার আপনি! হঠাৎ কল কোনো সমস্যা কী স্যার?

-আপনাদের নিউজপেপারে এইসব কী খবর ছাপা হয়েছে! আপনাদের সাহস হলো কিভাবে আমার স্ত্রীকে নিয়ে এইরকম লেখার?

-সরি স্যার আমি আসলে বুজতেছি না আপনি কী বলছেন। আজ তো আপনাকে নিয়ে কোনো খবর আমরা দেইনি।

-ওহ রিয়েলি। আপনি আপনার অফিসে যান সেখানেই আমি আসছি।

কল কেটে দেয় ইরান। ঝড়ো বেগে ক্যাবিন থেকে বেরিয়ে বাহিরে হাঁটা ধরে। তাজীবও ইরানের পিছু পিছু হাঁটতে থাকে।

________________🌸

রাকিয়ার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে আনাবিয়া। তখন আনাবিয়ার চিৎকারের আওয়াজ শুনে দৌড়ে আসে রাকিয়া। আনাবিয়াকে এইরকম পাগল প্রায় অবস্থায় দেখে জ্ঞান শূন্য হয়ে পরে সে। জড়িয়ে ধরে বিছানায় বসায়। এতো কিছুর পরও আনাবিয়া কাঁদছে না। চেহারা একদম লাল হয়ে গিয়েছে। রাকিয়া তার কোলে আনাবিয়ার মাথা রেখে বিলি কেটে দেয় আর অনেক কিছু বুঝায়।

ইরান সাংবাদিকদের অফিসে পৌঁছে ভিতর থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পায়। দ্রুত পায়ে ভিতরে গিয়ে দেখতে পায় তার আগেই এখানে উপস্থিত হয়েছে তাহশিয়া। স্টাফদের ওপর ইচ্ছে মতো চেঁচাচ্ছে। ইরান আরো সামনে এগিয়ে যায়। হেড অফিসার এগিয়ে আসে ইরানকে দেখে। ভীত কণ্ঠে বলে,

-সরি স্যার মাফ করবেন আমাদের। আসলে একজন নিউ স্টাফ ভুল করে আপনার নিউজ পেপারে ছাপিয়ে দিয়েছে। আমি নিজেও এই বিষয় কিছু জানতাম না আপনার বলার পরই জেনেছি।

-জানতেন না মানে? এইরকম ভুল হয় কিভাবে? একজন মানুষের ক্যারিয়ার নষ্ট করতে আপনাদের ফেক নিউজই তো যথেষ্ট।

তাহশিয়ার কথায় একমত হয় ইরান। তাহশিয়া পুনরায় বলে,

-যান আপনার রিপোর্টার’সদের ডাক দিন। এখন আমরা যা যা বলবো সেগুলো পুনরায় খবরে দেখানো হোক এবং নিউজপেপারে ছাপা হোক।

-ম্যাম, স্যার আপনার যেভাবে বলবেন সেভাবেই হবে প্লিজ আমার অফিস বন্ধ করিয়েন না।

-আমি এখন যা বললাম জলদি করুন।

হেড অফিসার ভয়ে ভয়ে কয়েকজন সাংবাদিককে ডেকে আনে। কিছুক্ষনের মধ্যেই সাংবাদিকরা সকল ব্যবস্থা করে ফেলে। তাহশিয়া ও ইরান একটা সোফায় বসেছে। সাংবাদিকের ইশারায় তাহশিয়া প্রথমে বলা শুরু করে,

-আমি তাহশিয়া আলী। মন্ত্রী হাসিব আলীর একমাত্র মেয়ে। আজই কিছু সাংবাদিকদের ভুলের কারণে একটা ফেক নিউজ ছাপানো হয়েছে। সত্যি বলতে আমাদের বিয়ের কথা চললেও এমপি ইরান শেখ পছন্দ করতে অন্য একজনকে এবং আমিও অন্য একজনকে পছন্দ করতাম। সেখানে আমাদের দুইজনের পছন্দই আলাদা সেখানে শুধু শুধু বিয়ে নামক কোনো সম্পর্কে জড়ানোর মানেই হয় না। তাই ইরান শেখ তার পছন্দের মানুষকে বিয়ে করেছে এবং আমি এখনও বিয়ে করিনি তবে সামনে করব। আনাবিয়া অত্যাধিক ভালো একজন মেয়ে। দোয়েয়া করে ওর নামে খারাপ কথা বলা বন্ধ করুন আপনারা। একটা বিষয়ে সম্পূর্ণ না জেনে কিছু না বলাই ভালো।

তাহশিয়া এক দমে সবকিছু বলে নিঃশাস নেয়। ইরান নিস্পলক তাহশিয়ার দিকে তাকিয়ে এবার সে বলতে শুরু করে।

-মিস তাহশিয়া তো সবটা বলেই দিলো। তো এখন আমার কথা হচ্ছে আমার স্ত্রী আনাবিয়াকে আর কোনোভাবে দোষারোপ করবেন না। আমার স্ত্রীকে কিছু বলা মানেই আমাকে বলা। আর তাকে নিয়ে যে বাজে উক্তি তুলবে আমি তার জন্য আইননি ভাবে পদক্ষেপ নেবো।

হেড অফিসার নিজ দায়িত্বে খবরও ডিলেট করে দেয়। তাহশিয়া শেষ বারের মতো কঠিন ভাবে শাসিয়ে দেয় তাঁদের। ইরান অনেক ইমপ্রেস হয় তাহশিয়ার ওপর। কৃতজ্ঞ স্বরে বলে,

-ধন্যবাদ মিস তাহশিয়া। অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকে। এতো সুন্দর ভাবে সবটা সামলে নিলেন এবং আমার বেশি কিছু বলতেও হলো না। আবারও ধন্যবাদ।

স্মিত হাসে তাহশিয়া। শান্ত কণ্ঠে বলে,

-ইট’স্ ওকে ইরান শেখ। আপনি এখন গিয়ে আপনার স্ত্রীকে সামলান এইরকম জঘন্য পরিস্থিতিতে পরে বেচারি হয়তো ভেঙে পরেছে। আর এখানের বাকিটা আমি দেখছি।

-হ্যাঁ। আপনার এই উপকার আমি সবসময় মনে রাখবো। আসি তাহলে আমি।

-জি। আশা করি আবার দেখা হবে।

ইরান তাজীবকে নিয়ে চলে যায়। অন্যদিকে ইরান যেতেই তাহশিয়ার মুখে অদ্ভুত হাসি ফুটে উঠে। হেড অফিসার হেঁটে তাহশিয়ার সামনে আসে।

-ম্যাম আপনি এমনটা কেনো করলেন? স্যার যদি বুঝে যেত সব কিছু আমি ইচ্ছে করে করেছি তাহলে আমাকে আস্ত রাখতো না।

-কিছু কিছু সময় ভালো সাজার জন্য একটু খারাপ হতে হয়। আমার প্রথম ধাপ একদম পরিকল্পনা মাফিক ছিল। এবার দ্বিতীয় ধাপের বারি।

>>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ