Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"সে প্রেমিক নয়সে প্রেমিক নয় পর্ব-২০+২১

সে প্রেমিক নয় পর্ব-২০+২১

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ২০

এক দুই ফোটা বৃষ্টি পড়ছে। আকাশ চমকাচ্ছে। কিছুক্ষন পর পরই অন্ধকার আকাশে আলো জ্বলে উঠছে। অসহায় ভঙ্গিতে শাড়ীর নিচের অংশ ধরে দাঁড়িয়ে আছে বিদেশীনি। ধবধবে সাদা পেট, গলা দৃশ্যমান। আনাবিয়ার অবশ্য সেদিকে মাথা ব্যাথা নেই। তার দুঃখ এতো কষ্ট করে শাড়ী পরলো অথচ ইরানের ভালোভাবে দেখার আগেই খুলে গেলো। ইরান বৃষ্টি দেখে নিজেই এগিয়ে যায় আনাবিয়ার কাছে। নিচে পরে থাকা শাড়ী এক হাতে তুলে নেয়। আরেক হাত দিয়ে আনাবিয়ার হাত ধরে ঘরের ভিতরে নিয়ে যায়। এটাকে ঘর বলা যায় আবার যায়ও না। কেমন চারপাশে বড় বড় গাছ একদম জঙ্গলের মতো। তার ওপর হয়তো প্লাস্টিক তারপর জর্জেট সাদা কাপড় দিয়ে সাজিয়েছে। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো আনাবিয়া। মুড নষ্ট হয়ে গিয়েছে তার। ইরান বিষয়টা বুঝে আনাবিয়ার স্মুখীন এসে দাঁড়ায়। থুতনি ধরে মাথা ওপরে তুলে আনাবিয়ার।

-কী হয়েছে? এইটুকু বিষয়ে কারো মন খারাপ হয়! শাড়ীই তো আবার পড়তে পারবে সমস্যা নেই।

-আপনাকে ভালোভাবে দেখাতে পারিনি।

-দেখেছি আমি। এখনও দেখছি।

আনাবিয়া এবার মাথা তুলে আশেপাশে তাকায়। চারোপাশে মোম জ্বলছে। যেখানে তারা দাঁড়িয়েছে সেখানে কাঠ। আরেকটু ভিতরে গোল বিছানার মতো পাতা। পাশেই একটা টি টেবিল। দুটো চেয়ার। এক কিনারে সোফা। তাঁজা গোলাপ আর জেসমিন ফুল দিয়ে সাজানো পুরো ঘরটা। বিছানায়ও ফুল দিয়ে কিছু একটা লেখা। দূরে দাঁড়িয়ে থাকার কারণে আনাবিয়া সেটা স্পষ্ট ভাবে পড়তে পারল না। আনাবিয়া সরু চোখে ইরানের দিকে তাকিয়ে বলে,

-কী এইসব? আর কোথায় আমরা?

-কক্সবাজার চেনো?

-নাম শুনেছি বাট আসা হয় নাই। এটাই কী কক্সবাজার?

-ইয়েস।

-হঠাৎ এখানে নিয়ে আসা? এতো ডেকোরেশন? কারণ কী হুম?

-সারপ্রাইস পছন্দ হয়েছে?

-হ্যাঁ অনেক বেশি। খুব সুন্দর করে সাজানো।

-এটা একটা রিসোর্ট। নিউলি ম্যারেড ক্যাপলরা এখানে আসে।

-ওওও। বাট বৃষ্টি হলে তো ভিজে যাবে।

-বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। সিস্টেম করা ভিতরে পানি আসবে না।

-তাহলে তো ভালোই।

আনাবিয়া শাড়ী রেখেই সামনে এগিয়ে যায়। ইরান হাতের শাড়ীর দিকে তাকিয়ে আছে। আনাবিয়ার দিকে তাকানোর সাহস হচ্ছে না তার। এই একটা জায়গায়ই সকল পুরুষজাত দুর্বল। আনাবিয়া জিন্স পেন্ট আর ব্লাউজ পরে শান্তিতে পুরো ঘর ঘুরে ঘুরে দেখছে। ইরান শান্ত কণ্ঠে বলে,

-আনাবিয়া শাড়ী পরে নেও।

-আমি পড়তে পারি না।

-এসো আমি পড়িয়ে দিচ্ছি।

আশ্চর্য হয়ে আনাবিয়া ইরানের দিকে তাকায়। চমকিত কণ্ঠে বলে,

-আপনিও শাড়ী পড়াতে পারেন! ওয়াও!

-পারি না। তবে পেঁচিয়ে ঘুচিয়ে পড়াতে পারব।

-পরিয়ে দিন।

ইরান শাড়ী সম্পূর্ণ মেলে হাতে নেয়। আনাবিয়ার পেতে হাত দিয়ে প্রথমে এক অংশ গুঁজে দেয়। এতক্ষন স্বাভাবিক থাকলেও এখন আনাবিয়া ঢোক গিলে। পর পর কয়েকবার পলক ফেলে। দু হাত মুঠোয় করে খিচে দাঁড়িয়ে রইলো। ইরান উল্টোপাল্টা চিন্তা বাদ দিয়ে হালকা কুচি দিয়ে পেঁচিয়ে শাড়ী পরিয়ে দেয় আনাবিয়াকে। শাড়ী পড়ানো হলে সম্পূর্ণ দৃষ্টি দিয়ে পর্যবেক্ষণ করে আনাবিয়াকে। আনাবিয়া হাঁসফাঁস করছে। ইরানের অধরের কিনারে হাসির রেখা দেখা যায়। মুগ্ধ হয়ে বলে,

-অপরূপ! আকাশের চাঁদও ফিকা পরে যাবে আমার চাঁদের সামনে।

-তারিফ করলেন না কি?

-জি। কালোতে অনেক বেশি আবেদনময়ী লাগছে আপনাকে।

-আবেদনময়ী মানে?

-কিছু না। হ্যাপি ওয়ান মান্থ এনিভার্সারি ডিয়ার।

-ও এম জি! ওয়ান মান্থ হয়ে গেলো! এর জন্যই সারপ্রাইস?

-নোপ্।

-তাহলে?

-এসো।

ইরান আনাবিয়ার হাত ধরে সামনে নিয়ে যায়। পাতানো বিছানার সামনে নিয়ে দাঁড় করায়। আনাবিয়ার নজর পরে বিছানার লেখার ওপর। “মাই ডিয়ার ওয়াইফি আই এম ফিল ইন লাভ উইথ ইউ”। গোলাপের পাঁপড়ি দিয়ে অনেক বেশি সুন্দর করে লেখা উক্ত উক্তিটি। আনাবিয়া লাজে রাঙা হয়ে হাসি দেয়। ইরান পকেট থেকে কিছু একটা বের করে হাটু ঘেড়ে নিচে বসে পরে। আনাবিয়া আকস্মিক হয়ে তাকিয়ে রইলো। ইরানের চোখ মুখ চকচক করছে। মোমের হলুদ আলোতে আনাবিয়ার কাছে ইরানের চেহারা সুদর্শন লাগলো। চাপ দাঁড়ি ওয়ালা শ্যাম বর্ণের পুরুষটিকে মনে ধরেছে তারও। এখন মুখ ফুটিয়ে বলতে পারলেই হলো।

ইরানের ডান হাতে একটি রিং। পাথর মুক্তার মতো চকচক করছে। ইরান পলক না ফেলে আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,

-যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছি সেদিন থেকেই তোমার প্রতি অন্যরকম ফিলিংস জন্ম নেয় আমার মনে। ধীরে ধীরে সময় অতিবাহিত হয় তোমার প্রতি প্রণয়ও গভীর থেকে গভীররত্ব হয়। আমি এক সময় উপলম্বীত করতে পারি অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি তোমায়। অনেক বেশি। তোমার প্রতি জেলাসি অনেক বেশি আমার। একটা অন্যরকম পসিসিভনেস তোমার প্রতি আমার। সকল কথার এক কথা আই লাভ ইউ আনাবিয়া সাবরিন। আমি চাই অন্যদের মতো স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে। তুমি আমি আমাদের সুখের সংসার।

আনাবিয়া সবটা শুনলো মনোযোগ দিয়ে। এখন কী বলবে? কী বলা উচিত তার? ভাবতে ভাবতে কিছুই মাথায় আসলো না আনাবিয়ার। ইরান পুনরায় বলে,

-আমি জানি তুমিও আমাকে চাও। যদি তোমার কিছুদিন সময় লাগে তাহলে নিতে পারো আমার সমস্যা নেই।

-না আমার সময় চাই না। আমি সিউর না নিজের মনের অবস্থা নিয়ে। তবে স্বাভাবিক সংসার আমিও করতে চাই আপনার সাথে।

-তোমার এইটুকু কথাই আমার জন্য যথেষ্ট। বিয়ের পর তোমার প্রথম গিফট ফ্রম হাসব্যান্ড। হাত সামনে আনো

আনাবিয়া হাত সামনে আনে। ইরান যত্ন সহকারে রিং পড়িয়ে দেয় আনাবিয়ার হাতে। সেই হাতেই গভীর ভাবে নিজ অধর ছুঁয়ে দেয়। আনাবিয়া দ্রুত হাত সরিয়ে ফেলে। ইরান উঠে দাঁড়ায়।

-চলো ডিনার করবে।

-হ্যাঁ

———————-

বাহিরে বর্ষণের তেজ বাড়ছে তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাতাস তো আছেই। সমুদ্রের উথা*লপা*থাল ঢেউয়ের আওয়াজে বার বার কেঁপে উঠছে আনাবিয়া। খাওয়ার পর্ব শেষ করে বিছানায় বসে আছে সে আর ইরান। দুইজনের মধ্যে নীরবতা বিরাজমান। আনাবিয়ার মধ্যে অন্যরকম একটা জড়তা কাজ করছে। ইরান নীরবতা কাটিয়ে বলে,

-কিছু বলো চুপ করে আছো কেনো?

-বলার মতো কিছু খুঁজে পাচ্ছি না।

-শাড়ীতে বসে থাকতে অস্বস্তি লাগছে?

-হ্যাঁ একটু আরেকটু।

-খুলে ফেলো তাহলে।

-না থাক। আমি বৃষ্টিতে ভিজতে চাই।

-ভুলেও না। এখনকার বৃষ্টি ভালো নয়।

-প্লিজ?

-নোহ আনাবিয়া।

-প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ প্লিজ?

-না করেছি না?

-প্লিজ না ইরান? একদম একটু ভিজবো প্রমিস।

হঠাৎ ইরানের মন গলে যায়। ঠান্ডা কণ্ঠে বলে,

-ঠিক আছে যাও।

ইরানের রাজি হতে দেরি কিন্তু আনাবিয়ার দৌড় দিতে নেই। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে বালুর ভিতরে লাফাতে থাকে। দূরে বৃষ্টির ফোটা গুলো রিমঝিম শব্দ তুলে সমুদ্রের পানিতে পড়ছে। শাড়ীর ভীষণভাবে বিরক্ত করছে আনাবিয়াকে। তাই সে বুদ্ধি করে শাড়ীর আঁচল খুলে স্ক্যার্টের মতো কোমরে পেঁচিয়ে নেয়। ইরান দূরে দাঁড়িয়ে ঘোর লাগা দৃষ্টিতে আনাবিয়াকে দেখছে। তার সাহস হচ্ছে না সামনে আগানোর।
আনাবিয়া হাঁটতে হাঁটতে ইরানকে হাতের ইশারায় ডাক দেয়। ইরান আসে না। আনাবিয়া একা একাই সমুদ্রের দিকে চলে যায়। ইরান এবার ভীত হয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। আনাবিয়ার পিছনে দৌড় দেয়। পানির স্মুখীন বসে আশেপাশে চোখ বুলাচ্ছে আনাবিয়া। ইরান আনাবিয়ার কাছাকাছি আসতেই শাসনের স্বরে বলে,

-এখান থেকে চলো আনাবিয়া। পানি ঢেউ অনেক বেশি।

-আই নো সুইমিং।

-ইটস্ নট পুল ডিয়ার।

আনাবিয়া ইরানের ইগনোর করে উঠে দাঁড়ায়। যেই আগে বাড়তে নিবে তার আগেই ইরান নিজের পুরুষালি বলিষ্ঠ হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে আনাবিয়াকে। হঠাৎ ইরানের গরম হাতের ছোঁয়া কোমরে পড়তে ষষ্ঠইন্দ্রিয় জেগে উঠে আনাবিয়ার। ইরান আনাবিয়াকে সম্পূর্ণ নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। আনাবিয়া ইরানের ভেজা নেশাক্ত আঁখিজোড়া দেখে নজর সরিয়ে ফেলে। ইরান তখন আনাবিয়ার মোহনীয় রূপে বিমোহিত। আনাবিয়ার এক হাত নিজের কাঁধে রাখে। গালে হাত দিতেই মৃদু কেঁপে উঠে আনাবিয়া। নিজেকে স্বাভাবিক রেখেই বলে,

-ইরান অনেক ভিজেছি আই থিঙ্ক এখন আমাদের শরীর মুছে ফেলা উচিত।

ইরান উত্তর দিলো না। আনাবিয়া পুনরায় মাথা তুলে ইরানের দিকে তাকায়। এক দৃষ্টিতে ইরান তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ইরানের হাত বেসামাল হয়ে আনাবিয়ার গাল থেকে ধীরে ধীরে নিচে নামে। ইরান নিজের মুখমন্ডল আনাবিয়ার একদম নিকটে নিয়ে যায়। আনাবিয়া মনে মনে ভাবে হয়তো ইরান লিপকিস করবে। তাই নিজেকে প্রস্তুত করে গলা ভিজিয়ে নেয়। কিন্তু ইরান! মুচকি হাসি দিয়ে আনাবিয়াকে অবাক করে তার ললাটে নিজের পূর অধর ছুঁয়ে দেয়। আনাবিয়ার চাহনি তখন হতবাক। মুখ ফুটে কিছু বলতেও পারছে না। ইরান এবার আনাবিয়ার পর পর দু’গালে চুম্বন করে। আনাবিয়া এবার ইরানের পিঠের ঐখানে শার্ট খামচে ধরে। ভাবে এবার হয়তো ইরান তার অধর নিজের দখলে নিয়ে নেবে। ইরান আনাবিয়ার ভাবনায় এক বালতি পানি ঢেলে সহসা কোলে তুলে নেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া চমকিত হলো না। ইরানের গলা জড়িয়ে ধরে।

-পানিতে নামবে না?

-কিসের পানিতে?

-সমুদ্রের?

-হ্যাঁ। নিচে নামলে তবে তো নামবো।

ইরান আনাবিয়াকে কোলে নিয়ে সমুদ্রের দিকে হাঁটা ধরে। আনাবিয়া শান্ত কণ্ঠে বলে,

-এইযে যদি আপনার ইচ্ছে থাকে আমাকে পানিতে চুবিয়ে মারবেন তারপর আরেকটা বিয়ে করবে তাহলে আমি একটা কথা বলে দেই? ভুত হয়ে কিন্তু ফিরে আসবো আমি।

-আপনাকে মারার আগে আমার নিজের মৃত্যু হোক।

-ওয়াও! এতো ভালোবাসেন আমাকে? নাকি সবই দেখানোর জন্য?

-সেটা নাহয় তুমিই একটু কষ্ট করে বুঝে নেও। সব কিছুই মুখে কেন বলে দিতে হবে?

-ওয়েল। কী করছেন সেটা তো বলুন?

-দেখো।

ইরান ধীরেসুস্থে সমুদ্রের পানিতে নেমে পরে। আনাবিয়া ভীত চোখে ইরানের দিকে তাকিয়ে আঁকড়ে ধরে তাকে। কোমর সমান পানিতে আসতেই ইরান নামিয়ে দেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া পানি হাতে নিয়ে ইরানের মুখে ছিটা দেয়। ইরানও আজ থেমে নেই। দুইজন মিলে বাচ্চাদের মতো দুষ্টামি করে। আনাবিয়া শব্দ করে হাসতে হাসতে বলে,

-আজ আমার জীবনের অন্যতম একটা স্পেশাল ডে ছিল। থ্যাংক ইউ সো মাচ মিস্টার হাসব্যান্ড।

____________________

তনুসফা নিজ রুমে বসে হাঁসফাঁস করছে। অস্থিরতা ঘিরে ধরেছে তাকে। কিছুক্ষন আগেই সে জানতে পেরেছে তার ভাই আর আনাবিয়া ঘুরতে বের হয়েছে। আজ রাতে আর আসবে না। এখন তনুসফার চিন্তা আনাবিয়া যেটা বললো সেটা যদি সত্যি হয়! তার কাছে নিজে ভালো থাকা মানেই সব ভালো। অন্যের বিষয় সে অনেক কম ভাবে। তাই তো এখন নিজের স্বার্থের জন্য আপন ভাইকে উসড করছে। কতটা জঘন্য মস্তিকের একজন বোন এইরকম ভাবে নিজেরই ভাইয়ের সংসার ভাঙতে চায়?

তাহশিয়া মন্ত্রীর একমাত্র মেয়ে। অনেক আদরে বড় হয়েছে সে। ছোটকাল থেকে যা চেয়েছে তাই পেয়েছে। এখন তার একটাই চাওয়া ইরানকে নিজের করা। তনুসফাও নিজের ফিউচারের কথা ভেবে ইরানের অনুমতি না নিয়েই কথা দিয়ে দিয়েছে তাহশিয়াকে। এখন তাহশিয়া দেশে আসছে ইরানের মুখোমুখি হবে। সে অবশ্য জানে ইরান বিয়ে করেছে। যদি জানে ইরান আনাবিয়াকে ভালোবাসে তাহলে হয়তো বড় কোনো গেঞ্জাম হয়ে যাবে। তনুসফা পারছে না আর ভাবতে। তার মাথা ঘুরছে। মন বলছে সামনে ভয়ংকর কিছু হবে। ফোনের আওয়াজ শুনে কাঁপাকাঁপা হাতে ফোন হাতে নেয়। কল রিসিভ করে কানে দিয়ে বলে,

-হ্যাঁ বলো? তাহশিয়া কী এসেছে?

-না ম্যাম। এখনও পৌঁছায় নি।

-ওহহ। আমাকে সকল ইনফরমেশন দিও।

-জি ম্যাম। আর ইরান স্যার ও আনাবিয়া ম্যাম আজ রাতে বাসায় ফিরছে না।

-হ্যাঁ জানি। রাখো তাহলে।

-জি ম্যাম।

___________________

আটস্যাট হয়ে ঘরের এক কিনারে বসে আছে আনাবিয়া। মোমের আলোতে দেখা যাচ্ছে দুজন দু প্রান্তে বসে আছে। বৃষ্টিতে ভিজে ঘরে এসে তেমন কিছু পরিধান করার ছিল না। ইরান তো তাও শার্ট খুলে বসতে পারবে কিন্তু আনাবিয়া! রিসোর্টের তরফ থেকে ঘরে একটি তৈয়ালে আর দু’টি সাদা রঙের বাথস্যুট রাখা ছিল। আনাবিয়া এখন বাথস্যুট পরেই মাথা নিচু করে ভোঁতা মুখে বসে আছে। আনাবিয়া পারছে না উধাম গায়ে বসা ইরানের দিকে চোখ তুলে তাকাতে। নিজের মধ্যে লাজের অস্তিত্ব অনুভব করছে সে।

ইরানের অবস্থাও শোচনীয়। পুরুষ মানুষ সে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করা কঠিন হয়ে পড়ছে তার জন্য। যদি না আনাবিয়া তার বিবাহিত স্ত্রী হতো তাহলে হয়তো এতো চুম্বকের মতো টানতো না তাকে! আনাবিয়া উস্কোখুস্ক করতে করতে বলে,

-ইরান বৃষ্টি তো বাড়ছে বাসায় যাবেন কখন?

-আজ রাত এখানে থাকলে কী অনেক বড় সমস্যা হবে?

-না। কিন্তু আমার অনেক বেশি শীত করছে।

ইরান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আশেপাশে তাকিয়ে বিছানার চাদর নিয়ে আনাবিয়ার শরীরে জড়িয়ে দেয়। আনাবিয়া মাথা তুলে তাকায়। ইরানের উম্মক্ত পেটানো শরীরে দিকে তাকাতেই হিমশিম খেয়ে যায় সে। কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে বলে,

-আপনার শীত করছে না? এভাবে ড্রেস বিহীন বসে আছেন যে?

-সত্যি বলো না আমাকে এভাবে দেখে তুমি আনকন্ট্রোল হয়ে যাচ্ছ?

-রাব্বিশ!

ইরান বিছানায় যেয়ে বসে পরে। বাঁকা চোখে তাকায় আনাবিয়ার দিকে। আনাবিয়া চাদর জড়িয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে ফোন টিপছে। ইরান যে অধয্য হয়ে নিজের হাত খামচে ধরে আছে সেদিকে বিন্দু পরিমানও ধেন নেই আনাবিয়ার। কিছুক্ষন পর পর জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজাচ্ছে। আবার শীতে কেঁপেকেঁপে অধর কামড়ে ধরছে। ইরান নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে জ্ঞানশূন্য হয়ে বিছানা থেকে উঠে আনাবিয়ার পাশে সোফায় বসে পরে। আনাবিয়ার কিছু বুঝে উঠার আগেই আনাবিয়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে কিনারে রেখে দেয়। একহাতে আনাবিয়ার কোমর আঁকড়ে ধরে আরেক হাতে আনাবিয়ার গাল চেপে ধরে। নিজ অধর দিয়ে আনাবিয়ার অধর চেপে ধরে। আনাবিয়া রিঅ্যাকশনও দিতে পারল না ইরানের এহেন কান্ডে। ইরান অধয্য হয়ে কিস করতেই থাকে। আনাবিয়াও আজ বাধা দিচ্ছে না ইরানকে। ইরানের কাঁধ ধরে রেখেছে।

ইরান কিঞ্চিৎ সময়ের জন্য ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া বড় বড় চোখ করে চেয়ে আছে। ইরান দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

-রেসপন্স করতে পারবে না অন্তুত এভাবে আঘাত তো করো না! ফিলিংসের বারোটা বেজে যায়।

-আমি কোথায় আঘাত করলাম?

-দাঁত ভিতরে ঢুকিয়ে রাখো প্লিজ ডিয়ার।

আনাবিয়া কিছু বলবে তার আগেই ইরান পুনরায় আনাবিয়ার অধর নিজের অধরের সাথে মিলিয়ে নেয়। আনাবিয়া মূর্তি। ইরান জোরে জোরে নিঃশাস নিচ্ছে। হঠাৎই ইরান নিজের অস্তিত্বে ফিরে আসে। ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে। বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে বড় বড় পা ফেলে বাহিরে চলে যায়। আনাবিয়া হতভম্ব। ইরানের ব্যবহারে বিস্ময় সে। মন ক্ষুন্ন করে বসা থেকে উঠে বাহিরে উঁকি দেয়। বৃষ্টির মধ্যে ইরান দাঁড়িয়ে আছে রোবটের মতো। আনাবিয়ার হঠাৎই রাগ হলো। অনেক বেশি রাগ।
রাগে বিড়বিড় করতে করতে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরে। চাদর জড়িয়ে নেয় গায়ে।

গভীর রাতে ইরান ঘরে প্রবেশ করে। আনাবিয়া ঘুমের ভান ধরে শুয়ে আছে। ইরান তৈয়ালে দিয়ে চুল মুছে আনাবিয়ার কাছে যায়। বিছানায় বসবে নাকি বসবে না একটা জড়তা কাজ করছে তার মনে। ধপ করে উঠে বসে আনাবিয়া। ছোট ছোট চোখ করে ইরানের পানে তাকায়। ইরান আমতা আমতা করে বলে,

-তখন ঐভাবে কিস করতে চাইনি। আসলে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেছিলাম।

-আপনি এখনও আপনার এক্সকে মিস করেন?

-না।

-তাহলে তখন এভাবে সরে গেলেন কেনো?

-তোমার অনুমতি ছাড়া আগে বাড়তে চাইনি।

আনাবিয়া কিছু বললো না। ইরান আনাবিয়ার পাশে বসে। আনাবিয়ার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলে,

-আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার অনুমতি না নিয়ে কিছু করব না আমি।

আনাবিয়া কিছুক্ষন চুপ থেকে আচমকা ইরানের কোলে উঠে বসে পরে। ইরানের কিছু বুঝে উঠার আগেই ইরানের অধরে নিজের অধর ছুঁয়ে দেয়। ইরান প্রথমে ভড়কে গেলেও পরে রেসপন্স করে। আনাবিয়া অস্পষ্ট স্বরে বলে,

-আই ওয়ান্ট ইউ ইরান।

আনাবিয়ার একটি বাক্যই যথেষ্ট ছিল ইরানকে উম্মাদ করে তুলতে। আনাবিয়াকে বিছানায় শুয়ে তার ওপর নিজের ভর দিয়ে দেয়। বেসামাল হয়ে পরে ইরানের হাত। আনাবিয়া জোরে জোরে নিঃশাস ত্যাগ করছে। ইরান আকস্মিক হয়ে আস্তে আস্তে বলে,

-আনাবিয়া আগে বাড়া কী উচিত হবে? আমার কাছে কিন্তু কোনো প্রটেকশন নেই।

-আই ওয়ান্ট এ বেবি।

-মানে?

-আমি শুনেছি বেবি হলে নাকি সংসার বেশি সুন্দর হয়ে যায়। তাই আমি চাই আমাদের একটা বেবি হোক। আপনাকে আর আমাদের বেবিকে নিয়ে আমি এখানেই থেকে যেতে চাই।

ইরান প্রসন্ন হাসলো। আনাবিয়ার কপালে ঠিক মধ্যখানে ভালোবাসার স্পর্শ বসিয়ে দেয়। ধীরে ধীরে রাত বাড়তে থাকে এবং বাড়তে থাকে তাঁদের উষ্ণ ছোঁয়া। মোম নিভে যায় আপনা আপনেই। অন্ধকারে গভীর থেকেও গভীররত্ব হতে থাকে ভালোবাসা। বস্ত একে একে অবহেলায় নিচে পরে থাকে। আনাবিয়ার জোরে জোরে নিঃশাস নেওয়া একসময় নিশ্চুপ হয়ে যায়। ঘামে চুব চুব দু’জন। ইরান মিলন মুহূর্তে আনাবিয়ার কানের কাছে মুখ নিয়ে বলে,

-আই লাভ ইউ ডিয়ার। থাঙ্কস ফর কামিং ইন মাই লাইফ। এন্ড থাঙ্কস ফর দিস বিউটিফুল নাইট।

>>>>চলবে।

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ২১

রাতে অঝোরে বৃষ্টির পর সকালে ঝলমলে রোদের দেখা মিলেছে। রোদের উত্তাপ ছড়িয়ে পড়ছে চারোপাশে। সেই সাথে তনুসফার মন মস্তিকও আজ অগ্নিগিরি! রাগে অগ্নিমূর্তি হয়ে সদর দরজা দিয়ে বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করে। ড্রইংরুমের কাঁচের সুবিশাল ফুলের টপ শব্দ করে মেঝেতে ফেলে দেয়। হাতের কাছে যা পাচ্ছে তাই ছুঁড়ে ফেলছে এদিক সেদিক। রাকিয়া মেয়ের চিৎকার শুনে রুম থেকে বেরিয়ে আসে দ্রুত পায়ে। সবকিছু এলোমেলো দেখে হতভম্ব সে। আজ নির্বাচন ছিল। প্রত্যেকবার এইদিনে দুই ভাইবোন মুখে হাসি ফুটিয়ে বাসায় আসে। আজ তনুসফা একাই চলে এসেছে। রাকিয়া কিছু সময়ের মধ্যেই সবটা বুঝে যায়।
তনুসফা নিজ চুল মুঠি করে ধরে সোফায় বসে পড়ে। রাকিয়া মেয়ে পাশে বসে। শান্ত স্বরে বলে,

-শান্ত হো মা শান্ত হো। বয়স হচ্ছে এইরকম রাগ শরীরে জন্য ভালো না।

তনুসফা শান্ত হলো না। ফণা তোলা সাপের মতো ফুসতে লাগলো। রাকিয়া পুনরায় তনুসফাকে বলে,

-কী হয়েছে মা? ইরান বাবা আসেনি?

-আমি এবার বিজয়ী হইনি আম্মা।

রাকিয়া বুঝেছিল। মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে সান্ত্বনার বাণীতে বলে,

-তো কী হয়েছে? এবার বিজয়ী হতে পারিসনি সামনের বার হবি। এই ছোট বিষয়ের জন্য এতো রাগ করে!

-আম্মা তুমি বুঝতেছ না আমার হাত থেকে কী চলে গিয়েছে। আমার ক্ষমতা, আমার দাপট এখন অন্য একজনের হাতে! আর এবার ইরানও আমার কোনোভাবে সাহায্য করেনি।

-আবার হবে তুই চিন্তা করিস না। আর ইরানকে দোষারোপ দেওয়া বন্ধ কর।

তনুসফা দীর্ঘশ্বাস নেয়। শান্ত স্বরে বলে,

-আমি আজ পরাজয় হতাম না আম্মা আমার সাথে কেউ বেঈমানি করেছে।

-মানে?

-আমি মন্ত্রী সাহেবের সাথে ডিল করেছিলাম তার মেয়ের সাথে ইরানের বিয়ে দেবো আর সে আমাকে বিজয়ী করবে। আমাদের কথোপকথন এর ভিডিও কেউ পলিটিক্স গ্রূপে লিক করেছে। সেই ভিডিও দেখে সবাই আমার ওপরে অনেক রাগ। এর কারণেই আমি বিজয়ী হইনি।

-মা তোরও তাহলে দোষ আছে।

-আম্মা রাজনীতিতে এইরকম ডিল অহরহ হয়। আপাদত আমার কাজ যে ভিডিওটা করেছে তাকে খুঁজে বের করা। সে হয়তো আমার অনেক পরিচিত কেউ।

-ইরান কোথায়?

-আমি জানি না। নির্বাচন শেষে কোথায় জেনো গিয়েছে।

-ঠিক আছে। যা তুই বিশ্রাম কর গিয়ে।

-হুম।

তনুসফা শাড়ী ঠিক করে সোফা থেকে উঠে দাঁড়ায়। আচমকা দু’তালায় তাকাতেই তার মুখের ভঙ্গিমা আবারও রাগী হয়ে যায়। আনাবিয়া বারান্দায় দাঁড়িয়ে কফি খাচ্ছে আর তার দিকে তাকিয়ে মিটমিট হাসছে। তনুসফা পারছে না আনাবিয়াকে চোখ দিয়ে গিলে ফেলে। আনাবিয়ার হাসিটা আরো চওড়া হয়। এক হাতে কাপ নিয়ে আরেক হাত দিয়ে হাই দেখায়। তনুসফা রাগে কটমট করতে করতে ভিতরে চলে যায়। আনাবিয়া এবার শব্দ করে হেসে দেয়। ধীর পায়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে আসে। রাকিয়াও ততক্ষনে নিজ রুমে চলে গিয়েছে। আনাবিয়া আশেপাশে চোখ বুলিয়ে সদর দরজা ধরে বাহিরে চলে আসে।
ইরান কোথায়? তনুসফার সাথেই তো আসার কথা তার! আনাবিয়া হাঁটতে হাঁটতে পুলের সামনে যেয়ে বসে। কয়েকদিন পর জেসিকার বিয়ে। এখন থেকেই মোটামুটি আয়োজন করা শুরু হয়েছে। অনেক বেশি বড় করে ফাঙ্কশন করবে। আজ ইসরাফকে বাসায় নিয়ে আসা হবে। অজান্তেই আনাবিয়ার মুখে পৌঁশাচিক হাসি ফুটে উঠে।
গাড়ি পার্ক করে মাত্রই বাসায় প্রবেশ করেছে ইরান। আনাবিয়াকে আনমনে বসে থাকতে দেখে পাঞ্জাবী ঠিক করতে করতে এগিয়ে যায় সেখানে।

-এই রোদের মধ্যে এখানে বসে আছো কেনো? কুইকলি ভিতরে চলো।

-আমার এখানে ভালো লাগছে।

ইরান আনাবিয়ার পাশেই বসে পরে। হাতের সাহায্যে ললাটের চুল গুলো পিছনে নিয়ে যায়। গম্ভীর স্বরে বলে,

-কী পরিধান করেছ এটা?

-কেনো? ড্রেস পরেছি।

-আমার দেওয়া চিহ্ন সবাইকে দেখিয়ে না ঘুরলেও পারো! ওড়নাটা সুন্দর করে নেও।

আনাবিয়া টু শব্দ করল না। ওড়না ঠিক করে ভোঁতা মুখে ইরানের পানে চোখ স্থির করে।

-আপা এসেছে?

-হ্যাঁ।

-ঠিক আছে।

আনাবিয়া নিজের হাসি লুকিয়ে শান্ত স্বরে বলে,

-আপনার বোন এবার বিজয়ী হয়নি? তাকে দেখলাম রাগারাগি করছে।

-হুম, অন্য একজন হয়েছে।

-যাক ভালোই হয়েছে।

-আপার আজ মুড ভালো নয়। দোয়েয়া করে তুমি কোনো উল্টোপাল্টা কথা বলিও না আনাবিয়া। আমি চাই না তোমাদের পুনরায় ঝগড়া হোক।

আনাবিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। কোমরে হাত দিয়ে ক্ষিপ্ত হয়ে বলে,

-হোয়াট ডু ইউ মিন ইরান? সবসময় আমিই ঝগড়া করি তার সাথে? সে যে আমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে সেটা দেখেন না?

-আমি এইরকম কিছু বলতে চাইনি।

-ওও রিয়েলি! আপনি কী বলতে চেয়েছেন আমি বুঝেছি।

-ওয়েল। শুনো আনাবিয়া, আমি তোমার হাসব্যান্ড। তোমাকে ভালোবাসি বলে অনেক সময় তোমার অনেক দোষ মাফ করে দেই তবে আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলবে না। এটা আমি একদম পছন্দ করি না।

-যখন আপনার বোন বলে তখন তাকে তো কিছু বলেন না!

-আপারও সাহস নেই আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলার।

-আমি বলবো-ই। আপনাকে ভয় পায় না আনাবিয়া। গট ইট ইন ইউর মাইন্ড।

আনাবিয়া রাগে ফেটে যাচ্ছে একদম। হাতের কাপটা নিচে ফেলে দেয়। সাথে সাথেই চুর্ণবিচুর্ণ হয়ে যায় কাঁচের টুকরো গুলো। ইরান সেদিকে তাকিয়ে চোখ মুখ শক্ত করে নেয়। আনাবিয়া বড় বড় পা ফেলে বাড়ির ভিতরে চলে যায়। ইরান কপালে হাত ঠেকিয়ে নীরবে বসে রইলো।

_____________________

ইসরাফকে বিকেলে বাসায় নিয়ে আসা হয়। আনাবিয়া দুপুরের পর আর নিজ রুম থেকে বের হয়নি। ভীষণ রেগে আছে সে ইরানের ওপরে।
রাত নয়টায় রুমে প্রবেশ করে ইরান। আনাবিয়া তখন গভীর ঘুমে মগ্ন। ইরান একবার আনাবিয়াকে দেখে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুম চলে যায়। ফোনের রিংটোনের আওয়াজে ঘুম ভেঙে যায় আনাবিয়ার। ইরানের ফোন বাজছে। বিরক্তিতে কপাল কুঁচকে শোয়া থেকে উঠে বসে। ততক্ষনে ইরান শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসেছে। উধাম গায়ে কালো রঙের পেন্ট পরনে তার। তৈয়ালে দিয়ে চুল মুচছে। ফোন হাতে নিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। আনাবিয়া বিছানা থেকে নামলো না। আধশোয়া হয়ে বসে ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রল করতে থাকে। ইরানকে দেখেও না দেখার ভান করে।
ফুরফুরে মনে আনাবিয়ার সাথে দেখা করতে আসে জেসিকা। আনাবিয়া তাকে দেখে হালকা হাসে। জেসিকা আনাবিয়ার পাশে বিছানায় বসে। উৎফুল্ল হয়ে বলে,

-বাসায় কখন এসেছেন মামী?

-ভোর সকালেই তো। দেখো নি?

-না। আমি আবার একটু পার্লার গিয়েছিলাম। নানুমার মুখে শুনলাম আপনারা এসেছেন।

-ওহহ।

-হ্যাঁ, কোথায় নিয়ে গিয়েছিল মামু আপনাকে?

-কক্সবাজার। অনেক বেশি সুন্দর একটা প্লেস ছিল।

তাঁদের কথোপকথনের মাঝেই ইরান রুমে প্রবেশ করে। জেসিকাকে দেখে মুচকি হেসে বলে,

-জেসিকা তোমার মাদার কোথায়?

-হয়তো সে নিজের রুমে। আমি মামীর সাথে দেখা করতে আসলাম।

-ওকে। শপিং ডান?

-অলমোস্ট ডান। মামী আপনি শপিং করবেন না? আর হ্যাঁ আমার সাথে কিন্তু পার্লারেও যাবেন।

ইরান জেসিকার কথায় তাল মিলিয়ে বলে,

-হ্যাঁ জেসিকা তুমি একটু তোমার মামীকে নিয়ে যেও শপিং করতে।

আনাবিয়া মেকি হেসে বলে,

-আমার আর শপিং এর প্রয়োজন নেই।

-কী বলেন মামী! এইরকম মেয়েও আবার হয়! আপনার মতো কম খরচ করা মেয়েই তো বাংলাদেশের যুবকরা চায়।

-ভেরি ফানি।

-আপনার চোখের নিচে ডার্ক সার্কেল পরে গিয়েছে। আপনি একটা ঘুম দেন মামী। আমি তাহলে আসি।

-ঠিক আছে।

জেসিকা চলে যায়। আনাবিয়া পুনরায় ফোন নিয়ে বসে। ইরান দরজা লাগিয়ে লাইট অফ করে আনাবিয়ার পাশে বিছানায় উঠে বসে। আনাবিয়া তখনও স্বাবাবিক। ইরান উল্টো হয়ে শুয়ে আদেশ স্বরে বলে,

-আনাবিয়া আমার পিঠ আর কোমরটা একটু মালিশ করে দেও তো। সারাদিন বসে থাকতে থাকতে আমি প্রায় শেষ!

-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,

আনাবিয়ার থেকে কোনো উত্তর না পেয়ে ইরান মাথা তুলে আনাবিয়া দিকে তাকায়। অসহায় কণ্ঠে বলে,

-এইযে মিসেস শেখ, একটু দোয়েয়া করুন এই অসহায় বালকের ওপর।

-ডোন্ট ডিস্টাব মি।

-আমি ডিস্টাব করছি?

উঠে বসে ইরান। আনাবিয়ার কাছে এগিয়ে গিয়ে তার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নেয়। আনাবিয়া রাগী মুখ করে বলে,

-গিভ মি মাই ফোন।

-নো নো নো। দেখো ডিসটার্ব কাকে বলে এবং কত প্রকার।

আনাবিয়া এবার ইরানকে এটিটিউড দেখিয়ে শুয়ে পরে। কাঁথা দিয়ে মাথা সহ সম্পূর্ণ শরীর ঢেকে নেয়। ইরান নাস্তানাবুদ! আনাবিয়ার কাঁথা ধরে টানাটানি করতে থাকে। আনাবিয়াও শক্ত করে ধরে রয়েছে কাঁথা। ইরান বুদ্ধি করে নিজেও আনাবিয়ার কাঁথার মধ্যে ঢুকে পরে। হাত পা দিয়ে জড়িয়ে ধরে আনাবিয়াকে। আনাবিয়া অস্থির হয়ে বলে,

-আমি মরে যাবো তো এতো টাইট করে ধরেছেন কেনো! ছাড়ুন।

-দেখো ডিয়ার ডিস্টাব কাকে বলে।

-ভালো হবে না কিন্তু ছাড়ুন।

-ভয় পেলাম না।

-ইরান সত্যি বলছি আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে।

-আর ইগনোর করবে আমায়? এটিটিউড দেখাবে আমাকে?

আনাবিয়া কিছু বললো না। আলগাস্থে নিজেকে ঘুরিয়ে ইরানের মুখোমুখি করে। ইরানের মুখে বিজয়ী হাসি আর আনাবিয়ার লাল হয়ে উঠা বিরক্তকর মুখ। ইরান ভ্রু নাচিয়ে বলে,

-এবার তাহলে মাথায় জ্ঞান এসেছে? আগেই নিজ থেকে আমার কাছে নিজেকে ধরা দিলেই পারতে ডিয়ার।

-আপনাকে তো,

আনাবিয়া ইরানের গালে নিজের সর্বশক্তি দিয়ে কামড় বসিয়ে দেয়। ইরান প্রথমে দাঁতে দাঁত চেপে ব্যাথা সহ্য করলেও শেষে আতর্নাদ করে উঠে। আনাবিয়া নিজেই ভয় পেয়ে ছেড়ে দেয় ইরানকে। গাল ডলতে ডলতে আর ব্যাথায় কুঁকরিয়ে উঠে বসে ইরান। আনাবিয়া বিছানা থেকে নেমে বাতি জ্বালিয়ে দেয়। ইরানের কাছে আসতেই দেখে ইরানের গালে তার দাঁতের ছাপ বসে গিয়েছে। হালকা রক্ত জমেছে জায়গাটায়। আনাবিয়ার আপসোস হলো। সে শয়তানি করে কামড় দিয়েছিল এতো জোরে হয়ে যাবে বুঝতে পারেনি সে। আমতা আমতা করে বলে,

-আর ইউ ওকে?

-ওকে থাকার মতো অবস্থায় রেখেছো আমায়! আমার গালের মাংস তোমার এতোই পছন্দের আগে বলতে আমি নিজেই কেটে তোমাকে দিয়ে দিতাম।

-শাট আপ ইরান। আমি ইচ্ছে করে এতো জোরে কামড় দেইনি।

-বুঝেছি। ঘুমাও এখন আর ডিস্টাব করব না।

-আমার ওপর রেগে আছেন?

-না ঘুমাও।

আনাবিয়া নিজের ওড়না দিয়ে ইরানের গাল মুছে দেয় সযত্নে। তারপর উদাসীন হয়ে কিছুক্ষন তাকিয়ে থাকে ইরানের দিকে। গভীর ভাবে নিজ অধর ছুঁয়ে দেয় ইরানের গালে। হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

-আই এম সরি। প্লিজ ফোর্গিভ মি।

-তোমার একটু অধরের স্পর্শের জন্য আমি র*ক্তার*ক্ত হতেও রাজি।

-বদমাইশ এমপি!

_______________________

জমকালো সন্ধ্যা। চারোদিকে বিভিন্ন রঙের কৃত্রিম বাতির আলো জ্বলজ্বল করছে। তার মধ্যে সাদা রঙটা একটু বেশিই উজ্জ্বল দেখাচ্ছে। আজ জেসিকার গায়ে হলুদ। পুরো শেখ বাড়ি আজ চকচক করছে। ডেকোরেশন যেই দেখছে সেই জানো তারিফের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। অবশ্য তারিফ তো করতে হবেই এমপি ইরান শেখ নিজ দায়িত্বে যে ভাগ্নির বিয়ের সবটা আয়েজন করেছে। এক এক করে মেহমান আসছে। আঙিনায় স্টেজ করা হয়েছে। সব কিছুর মধ্যেই একটা রয়েল রয়েল ভাব। রিপোর্টাদের ভীড় জমেছে বাড়ির সদর মূখ দরজায়। আজ তাঁদের হিট টপিক-ই জেনো এটা। ইরান, তনুসফা কিছুক্ষন আগেই হাসি মুখে কিছু মন্তব্য বলে চলে গিয়েছেন। এখন ব্যস্ত থাকায় আর আসতে পারেনি।

গাঢ় লাল রঙের পাঞ্জাবীতে নিজেকে সাজিয়েছেন ইরান। হাতে ব্র্যান্ডেড ঘড়ি। সেট করা চুল ও চাপ দাঁড়ি। মুখে গম্ভীর ভাব সব মিলিয়ে একটু বেশিই সুদর্শন লাগছে ইরানকে। তাঁদের তেমন আত্মীয়স্বজন নেই। হাতে গোনা কয়েকজন আছে তারা এসেছে।
আনাবিয়া গোমড়া মুখে বসে আছে। স্মুখীন বিছানায় রাখা একটি লাল রঙের শাড়ী। আনাবিয়া শাড়ীটা দেখছে আর অস্থির হয়ে উঠছে। কম্বলের মতো এই মোটা শাড়ী সে পারবে না নিজের শরীরে জড়াতে। আর হলুদ জেসিকার। সে কেনো এতো ভয়ংকর শাড়ী পড়বে! বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে আলমিরা খোলে। ভাবনায় পরে যায় কী পরিধান করবে।

অন্যদিকে তনুসফা গেস্টদের ওয়েলকাম করতে ব্যস্ত। হঠাৎ ফোনে কারো সাথে কথা বলে তার মুখ খুশিতে চকচকে উঠে। দ্রুত পায়ে সদর দরজার সামনে যায়। কিছুক্ষনের মধ্যেই পর পর দু’টো কালো রঙের গাড়ি বাড়ির ভিতরে ঢুকে। প্রথম গাড়ি থেকে বের হয় মন্ত্রী সাহেব। তনুসফা তার সাথে হাসি মুখে কুশলবিনিময়ী করে। একজন বডিগার্ড দ্বিতীয় গাড়ির দরজা খুলে দিতেই বেরিয়ে আসে এক অপূর্বময় রমণী। টকটকে লাল রঙের জামদানি শাড়ী বাঙালি স্টাইলে পরা। হলদে ফর্সা গায়ের বরণে লাল রঙের টাটকা গোলাপ ফুলের তৈরি গহনা জড়িয়েছে কায়ায়। খোঁপা করা চুলগুলোয় বেলি ফুলের মালা গাঁথা। মুখে কয়েকটা কেশ এসে তার সৌন্দর্যকে বহু গুন বাড়িয়ে দিচ্ছে। লাল লিপস্টিকে রাঙানো ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা দেখা যাচ্ছে।
তনুসফা তাহশিয়াকে দেখে আকাশ থেকে পরলো। তাহশিয়ার থুতনি ধরে বিস্ময় ও মুগ্ধ হয়ে বলে,

-মাশাআল্লাহ! তুমি সুন্দরী হবে এটা আমি জানতাম তবে আস্ত এক ফুটন্ত গোলাপ ফুল হবে এটা ভাবি নি।

তাহশিয়া হাসলো। হাতের চুরিগুলোতে হাত বুলিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-আমারও একই অবস্থা! আপনার বয়স অনুযায়ী নিজের সৌন্দর্যকে বেশ ধরে রেখেছেন আপনি তনুসফা শেখ।

-ধন্যবাদ। ভিতরে এসো।

রিপোর্টার’সরা ঘিরে ধরে তাহশিয়াকে। মন্ত্রীর মেয়ে ছাড়াও তার নিজেরও একটা পরিচয় আছে। একজন ফেমাস ফ্যাশন ডিজাইনার সে। ছয় বছর পর নিজ দেশের মাটিতে পা দিয়েছেন তিনি। একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে রিপোর্টার’স। বেশ সাবলীল ভাবে উত্তর দিচ্ছেন তাহশিয়া। তার সাথে কয়েকটা ছবির জন্য পোজও দিচ্ছে। ফাঙ্কশনের চিপ গেস্টই সে। সবাই আড়চোখে অথবা সরাসরি তাকেই দেখছে। তাহশিয়ার নজর খুঁজে চলছে তার অতি প্রিয় মানুষটিকে।

জেসিকাকে নিয়ে স্টেজে বসানো হয়েছে। তাহশিয়াও আসন্ন গ্রহণ করেছে। কিছুক্ষন পূর্বেই সে তার পছন্দের মানুষটিকে দেখতে পেয়েছে। এখনও পলক না ফেলে তাকেই দেখছে। অথচ তাহশিয়াকে দেখছে ফাঙ্কশনে আসা সকল পুরুষ! আনাবিয়া মাত্রই আঙিনায় পা দিয়েছে। তাকে দেখে লাগছে না সে কোনো বিয়ের ফাঙ্কশনে এসেছে। রাকিয়া আনাবিয়াকে দেখে তার দিকে এগিয়ে যায়। আহাম্মক বনে গিয়ে বলে,

-মা এটি কী পরেছিস তুই? শাড়ী বা সেলোয়াড় কামিজ পরতে পারতিস তো!

আনাবিয়া মুখ ছোট করে কিনারে একটা চেয়ারে বসে পরে। উদাসীন কণ্ঠে বলে,

-আমি এটাতেই কমফোর্টেবল মম।। আর আমি স্টেজের ঐখানে যাবো না এখানেই বসে থাকবো।

-মা আমার সাথে আয় জামাটা চান্স করে নে।

আনাবিয়াকে খুঁজতে খুঁজতে পুল সাইটে আসে ইরান। এখানেও কয়েকজন আছে। হাত ঘড়িতে সময় দেখে সামনে তাকাতেই তার নজর আটকে যায় সেখানে। চোখ রসগোল্লার মতো বড় বড় হয়ে যায়। কপালে রাগে দু ভাঁজ পরে। পকেটে হাত ঢুকিয়ে বড় বড় পা ফেলে এগিয়ে যায় আনাবিয়ার দিকে। আনাবিয়াকে পা থেকে মাথা পর্যন্ত আপাদমস্তক পরোক্ষ করে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে বলে,

-হলুদের ফাঙ্কশনে তুমি গেঞ্জি আর জিন্স পেন্ট পরে নিচে এসেছো! আমি না শাড়ী রেখে এসেছিলাম? ওহ গড আনাবিয়া!

>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ