Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"সে প্রেমিক নয়সে প্রেমিক নয় পর্ব-১৭+১৮+১৯

সে প্রেমিক নয় পর্ব-১৭+১৮+১৯

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ১৭

সম্পূর্ণ মনোযোগ দিয়ে রান্না করছে আনাবিয়া। ইরানের জন্য স্পেশালি চিকেন এন্ড ভেজেট্যাব্লেস স্যুপ রান্না করছে। পাশেই দুজন ভৃত্য দাঁড়িয়ে আছে। এটা সেটা এগিয়ে দিচ্ছে তাকে। ফিমু নামের একজন ভৃত্যর সাথে বেশ ভাব আনাবিয়ার। মেয়েটা আনাবিয়ার কয়েক বছরের ছোট। মা মারা যাওয়ার পর অনেক ছোটকাল থেকে মেয়েটা এখানে থাকে। আনাবিয়ার ব্যক্তিগত সকল কাজ সে-ই করে। আনাবিয়া রান্না করতে করতে বলে,

-ফিমু কোনো স্মেল আসছে কী?

-জি ম্যাম। খুবই সুন্দর ঘ্রাণ আসছে।

-এখন তোমাদের স্যারের পছন্দ হলেই হলো।

-অবশ্যই হবে ম্যাম।

আনাবিয়া মলিন হাসে। ড্রইংরুম থেকে কারো উঁচু কণ্ঠস্বর শুনতেই ভ্রু কুঁচকে যায় আনাবিয়ার। ফিমুকে বলে,

-যাও তো দেখে এসো কে এসেছে।

-ঠিক আছে ম্যাম।

কিছু সময়ের মধ্যেই ফিরে আসে ফিমু। মাথা নিচু করে বলে,

-স্যারের বোন এসেছে।

আনাবিয়া বিরক্ত হলো। গায়ের কুকিং এপ্রোন খুলে একজন ভৃত্যর হাতে দিয়ে বলে,

-স্যুপটা দেখো আর হ্যাঁ স্যালেড বানাও দ্রুত।

আনাবিয়া কারো উত্তরের অপেক্ষা করল না। ঝটপট বেরিয়ে যায় রান্নাঘর থেকে। ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে ড্রইংরুমে আসে। সোফায় বসে আছে তনুসফা আর জেসিকা। তনুসফার মুখে চিন্তার ছাপ। আনাবিয়াকে দেখে জেসিকা মৃদু হাসে। ভদ্রতার খাতিরে জিজ্ঞেস করে,

-ভালো আছেন মামী?

-হ্যাঁ একটু বেশিই ভালো আছি। তোমার কী খবর?

-জি ভালোই। শুনলাম মামু না কি অসুস্থ? তাই দেখতে আসলাম।

-রুমে তোমার মামু। আমি ডেকে নিয়ে আসছি।

তনুসফা একবারও আনাবিয়ার দিকে ফিরে তাকালো না। কতটা অহংকারি এই মহিলা! আনাবিয়া রুমে এসে দেখে ইরান উল্টো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। মৃদু কণ্ঠে কয়েকবার ডাক দেয় ইরানকে। চোখ বন্ধ করেই ইরান বলে,

-বলুন ম্যাম শুনছি।

-আপনার প্রাণ প্রিয় বড় বোন এসেছে। দোয়েয়া করে একটু নিচে যেয়ে তার সাথে দেখা করে আসুন ইরান শেখ।

ইরান চমকিত হয়ে উঠে বসে। টি-শার্ট ঠিক করে বলে,

-আপা এসেছে?

-না। আপনার শত্রু এসেছে।

বিরক্তি নিয়ে দাঁতে দাঁত চিবিয়ে কথাটা বললো আনাবিয়া। ইরান বড় বড় পা ফেলে বেরিয়ে যায় রুম থেকে। ইরানকে আসতে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায় তনুসফা। কাঁদো কাঁদো মুখে জড়িয়ে ধরে ভাইকে। ইরানও স্বাভাবিক ভাবেই বোনকে ধরে। তনুসফা নিজের পাশে বসায় ইরানকে। মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,

-ভাই আমার, আমাকে এতোই পর করে দিয়েছিস? শরীরের কী অবস্থা হয়েছে! একটু ফোন করে বলিসও না আমাদের। আম্মা না বললে তো জানতেই পারতাম না।

-ঠিক আছি আমি।

-হ্যাঁ দেখতে পারছি কত ঠিক আছিস! এখনই আমাদের সাথে ঐ বাসায় যাবি তুই। এখানে তোকে একা রেখে যেতে পারব না আমি।

-একা কোথায়! আনাবিয়া তারপর তাজীব আছে আমার সাথে। এতো চিন্তা করবেন না।

-তুই শুধু ঐ মেয়ের নাম নিস না আমার সামনে ইরান। শুনলাম ও নাকি ওর খালার বাসায় ছিল বিকেলে বাসায় এসেছে? ঐ মেয়ে করবে তোর যত্ন!

-ও জানতো না আমি অসুস্থ। জানলে অবশ্যই চলে আসতো বাসায়।

-তোকে তো ও কালো জাদু করেছে। ওর খারাপ দিক কী আর তোর নজরে পরবে?

ইরান গম্ভীর মুখে বসে রইলো। আনাবিয়া আর নিচে আসেনি। তনুসফা ইরানের দিকে বাঁকা চোখে তাকিয়ে বলে,

-আগামী শুক্রবার তোর ভাগ্নির বিয়ে। তাড়াহুড়ো করে তারিখ ঠিক করেছি। এখন ইসরাফও সুস্থ হয়েছে। তাই আর দেরি করতে চাচ্ছি না।

-হ্যাঁ ভালো করেছেন।

-তুই কাল ঐ বাসায় চলে আসবি। বিয়ের সব দায়িত্ব কিন্তু তোর ইরান।

-আমার দায়িত্ব আমি পালন করব। কিন্তু ঐ বাসায় যেতে পারব না আপা।

-মামু তুমি যদি বাসায় না আসো তাহলে আমি বিয়েই করব না। মাম্মা বিয়ে ক্যানসেল করে দেও।

ইরান ভাগ্নির দিকে তাকায়। হালকা হেসে বলে,

-হলুদের দিন সকালে আপনার মামীকে নিয়ে চলে আসবো আমি।

-না না কালই যেতে হবে।

-দেখো জেসিকা,

-কোনো দেখাদেখি নেই। নিজের একটা মাত্র ভাগ্নির জন্য এতটুকু করতে পারবি না? যদি ওকে একটুও ভালোবাসিস তাহলে কাল সকালেই ঐ বাসায় চলে আসবি।

-ইসরাফকে বাসায় কবে আনবেন?

-তিনদিন পর। ও রুমেই থাকবে চিন্তা নেই।

-ঠিক আছে। তবে আপনি আনাবিয়ার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করতে পারবেন না আপা।

-আমি ওর সাথে খারাপ ব্যবহার কবে করলাম! দেখেছিস ঐ মেয়ে তোর মাথায় আমার নামে বিষ ঢুকায়।

-এইরকম কিছু না।

-আসবি তাহলে?

-আসবো।

-ঠিক আছে আমরা তাহলে এবার যাই। নিজের খেয়াল রাখ আর মেডিসিন ঠিক মতো নিবি। বুঝেছিস?

-হ্যাঁ আপা। আজ এখানে থেকে যান।

-না। বাসায় কাজ আছে।

-ঠিক আছে।

এতক্ষন দুতালার বারান্দায় দাঁড়িয়ে সবটাই লক্ষ্য করছিল আনাবিয়া। ইরান কেনো তনুসফার সামনে তার সাপোর্ট করল না? রাগে দুঃখে হাত মুঠো করে নেয় সে। ধপধপ পা ফেলে রুমে চলে যায়। ইরান রুমে প্রবেশ করে। আনাবিয়াকে বিছানায় বসে ফোন টিপতে দেখে বলে,

-তুমি আর নিচে আসলে না?

-কেনো যাবো? আপনার বোনের অপমান শুনতে?

-হঠাৎ বিয়ে হওয়ায় আপা তোমাকে পছন্দ করে না তাই কটু কথা বলে। ধীরে ধীরে সব ঠিক হয়ে যাবে। সে বড় তুমিও একটু তাকে সম্মান করবে।

আনাবিয়ার মুখে রাগের আভাস কিন্তু দৃষ্টি ফোন নিবদ্ধ। কঠিন কণ্ঠে বলে,

-আপনার বোন, আপনি আপা আপা করতে করতে তার আগে পিছে ঘুরুন। আমার আবার সেল্ফ রেস্পেক্ট একটু বেশিই। তার আদরের ভাইকে ফাঁসিয়ে বিয়ে করিনি আমি অথবা ভালোবেসেও বিয়ে করিনি। বরং সে নিজেই তার ভাইয়ের জন্য আমার বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে।

-অল্প বিষয় রেগে যাচ্ছ না তুমি?

-ইরান আমি বুঝতে পারছি না আপনি সত্যি এতো ভোলাভালা নাকি আমার সামনে নাটক করছেন? তনুসফা শেখ যতটা ভালো সাজে ততটা ভালো নয় সে। তার মনে কিছু একটা প্ল্যান চলছে।

-শাটআপ আনাবিয়া। তোমার জন্যই আমি এই বাসায় শিফট হয়েছি। আপা শুধু আমার ভালো চায় তাই একটু এইরকম করে। কিছুদিন যাক সেও ভালো হয়ে যাবে।

-না সে ভালো হবে না। আপনার বোনের মনে কোনো প্ল্যান চলছে বুঝলেন আমার কথা মিলিয়ে নিয়েন।

ইরান কিছু বললো না। ডিভাইনে যেয়ে বসে পরে। আনাবিয়া কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। পারছে না সে ইরানকে গিলে খেয়ে ফেলে!

-কাল সকালে আমরা ঐ বাসায় যাচ্ছি। জেসিকার বিয়ে সামনের ফ্রাইডে।

ইরানের এই বাক্যটা আনাবিয়ার মাথায় আগুন ধরানোর জন্য যথেষ্ট ছিল। কষ্টে নিজের রাগ দমিয়ে বলে,

-ইউ গো।

-তুমিও যাবে।

-নোপ্। আমি যাবো না মানে যাবো না। ফাঙ্কশনে কারো কাজিন হয়ে ঘুরার সখ আমার একদম নেই। তাই আমি কিছুদিনের জন্য রাশিয়া যাবো।

এমনেই তো অসুস্থ শরীর। জ্বরের কারণে শরীর সহ মাথা গরম হয়ে আছে। তার ওপর আনাবিয়ার এইরকম তেড়ামি। রেগে ধমকের স্বরে বলে,

-যাও। যেখানে মন চায় সেখানে চলে যাও। আমার ভালোবাসা তো তোমার নজরে পরে না। আর না কখন পরবে। কিছুদিন কেনো! একবারের জন্যেই চলে যাও। জাস্ট গো।

আনাবিয়ার রাগ হলো। সে ইরানের থেকেও আরো উঁচু স্বরে বলে,

-আমার সাথে উঁচু আওয়াজে কথা বলবেন না ইরান। আপনার ধমকে আমি চুপসে যাবো এটা ভাবা আপনার বোকামি। আর আমারও ইচ্ছে নেই আপনার সাথে থাকার। সারাজীবনের জন্য চলে গেলে বাঁচি আমি।

বড় বড় কদম ফেলে রুম থেকে বেরিয়ে যায় আনাবিয়া। ইরান সেদিকে তাকিয়ে হাতের সামনে রাখা কাঁচের গ্লাস নিচে ছুঁড়ে মারে। রাগে তপ্ত নিঃশাস নিতে থাকে।

___________________

অন্ধকারে আচ্ছন্ন রুম। বাহিরে তুলুম বেগে ঝড়তুফান হচ্ছে। খোলা জালানার পর্দা বেসামাল ভাবে উড়ছে। মাথা নিচু করে হাটু মুড়ে মেঝেতে বসে আছে আনাবিয়া। চোখ দিয়ে অনবরত কয়েক ঘন্টা ধরে অশ্রু বিসর্জন দিচ্ছে। মুখে কোনো শব্দ নেই কিন্তু মনের ভিতরে হাহাকার চলছে। তার বাবা মা মারা যাওয়ার পর আজ প্রথম এতো অসহায় হয়ে কান্না করছে সে। কেনো কাঁদছে আনাবিয়া নিজেও বুঝতে পারছে না। বেহায়া অশ্রুর দল আজ নির্লজ্জ হয়ে গিয়েছে। ইরানের ব্যবহারে একটু বেশিই কষ্ট পেয়েছে আনাবিয়া। এই ইরানের ভালোবাসা! তাকে সারাজীবনের জন্য চলে যেতে বললো! হতে পারে রেগে বলেছে। কিন্তু বলেছে তো! সে তো এমনেও চলে যেতে চেয়েছিল তাহলে এখন যখন ইরানও মত দিয়েছে তার কেনো কষ্ট হচ্ছে? কেনো তার বুকে এক অন্যরকম ব্যাথা অনুভব হচ্ছে?

ভাবনার মাঝেই তীব্র আওয়াজ করে আনাবিয়ার সেলফোন বেজে উঠে। চোখ মুছে আনাবিয়া ফোন হাতে নেয়। গম্ভীর হয়ে কল রিসিভ করে।

-হ্যাঁ খালামুনি বলো?

-তুই কল দিয়েছিলি মাত্রই? আমি তোর আঙ্কেলকে খাবার দিচ্ছিলাম।

আনাবিয়া নাক টানে। লাগাতার চোখ মুছার পরও চোখ দিয়ে বেহায়া অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। নিজেকে কোনোরকম সামলে বলে

-খালামুনি আমার পাসপোর্ট আর বাকি কাগজ তোমাদের বাসায় না?

-হ্যাঁ। তুই কী কাঁদছিস মা? কিছু হয়েছে? কেউ কিছু বলেছে?

-কিছু হয়নি। আমি রাশিয়া চলে যাবো।

-হঠাৎ কেনো? ইরান কিছু বললো না কি?

-নাথিং খালামুনি।

-আমি কিন্তু বলতে বলছি আনা?

-সে বলেছে আমাকে সারাজীবনের জন্য চলে যেতে।

-ইরান বলেছে?

আনাবিয়া চুপ হয়ে যায়। কিছুক্ষন সময় নিয়ে কাঁদো কাঁদো কণ্ঠে বলে,

-ইয়েস।

-তো তুই কাঁদছিস কেনো?

-আই রিয়েলি ডোন্ট নো হোয়ায় আই এম ক্রায়িং! আমার কী হয়েছে কিছুই বুঝতে পারছি না খালামুনি। অনেক কষ্ট লাগছে আমার।

-রাগে বসে কোনো সিদ্ধান্ত না নেওয়াই ভালো। এখন মুখ ধোতো কর। ডিনার করে একটা ঘুম দে। সকালে এখানে চলে আয়।

-ওকে।

-উল্টাপাল্টা কিছু চিন্তা করবি না। কুল।

-ওকে। গুড নাইট।

-হ্যাঁ।

ফোন কিনারে রাখে আনাবিয়া। বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। উদাসীন মনে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরে। পাশ ফিরে জালানার দিকে তাকায়। বর্ষণের তেজ একটু বেশিই। একদম তার মতো। তাহলে সে কী কোনোভাবে ইরানের প্রেমে পরে গেলো! ইরানকে নিয়ে ভাবতে ভাবতে ঘুমের দেশে পারি জমায় আনাবিয়া।

ইরানের মাথা শান্ত হলে শাওয়ার নিতে চলে যায়। ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তৈয়ালে দিয়ে চুল মুছতে মুছতে বেলকনিতে যায়। এতো জোরে বৃষ্টি দেখে একটু চিন্তিত হয় সে। বেলকনির দরজা লাগিয়ে দেয়। যদি আজ রাগে আবারও আনাবিয়া ছাদে বৃষ্টিতে ভিজতে চলে যায়! জ্ঞানশূন্য হয়ে তৈয়ালে ছুঁড়ে ফেলে রুম থেকে বের হয় ইরান। দ্রুত পায়ে হাঁটতে হাঁটতে নিচে আসে। ড্রইংরুম সম্পূর্ণ ফাঁকা। রান্নাঘরে দুইজন ভৃত্য কাজ করছে। ইরান তাঁদের দেখে জিজ্ঞেস করে,

-আপনাদের ম্যাম কোথায়?

-স্যার ম্যাম নিচতলার একদম ডানপাশের রুমে বসে আছে। আমরা ডিনারের জন্য ডাকতে গিয়েছিলাম। সে আসেনি। অনেক কান্না করছিল সে।

ইরান নিজ ব্যবহারে অনুতপ্ত হয়। দৌড়ে আনাবিয়া যে রুমে আছে সেখানে চলে যায়। অন্ধকারে হাতিয়ে হাতিয়ে বিছানার স্মুখীন পৌঁছায়। জালানা দিয়ে আসা মৃদু আলোয় আনাবিয়ার ফোলা চোখ মুখ দেখতে পেলো ইরান। জালানার গ্লাস লাগিয়ে আনাবিয়ার মাথার পাশে বসে। কিছুক্ষন আনাবিয়ার কোমল মুখশ্রী পানে চোখ স্থির করে। ঘোরে চলে যায় সে। আনাবিয়ার মুখের দিকে ঝুঁকে ফুঁ দেয়। একটু নড়েচড়ে আবারও ঘুমিয়ে যায় আনাবিয়া। ইরানের দুই ঠোঁট প্রসারিত হয়। আনাবিয়ার ললাটে থেকে নরম ছোঁয়ায় চুলগুলো সরিয়ে দেয়। ঘুমের মধ্যেই বিরক্তিতে কপাল কুঁচকায় আনাবিয়া। ইরান আবারও হাসে। কিছু সময় আনাবিয়ার অধরের দিকে তাকিয়ে থাকে। বাহিরে রোমান্টিক আবহাওয়া। মনের ভিতরে উথা*লপা*থাল ঝড়। এক নিষিদ্ধ স্পৃহা জাগে ইরানের মনে। ঢোক গিলে গলা ভিজিয়ে নেয়। চোখ বন্ধ করে নিজের পুরুষালি অধর ছুঁয়ে দেয় আনাবিয়ার ললাটে। আগামীকাল এক মাস হবে বিয়ের! এটাই তার স্বামী হিসেবে প্রথম স্পর্শ। ইরানের মুখে প্রাপ্তির হাসি উঁকি পেতে রয়েছে।

আচমকা চোখ খুলে ফেলে আনাবিয়া। অন্ধকারে নিজের ঠিক মুখের ওপরে অন্য একজনের অস্তিত্ব অনুভব করতেই কঠোর হয়ে উঠে তার মুখ। শোয়া অবস্থায়ই এক পায়ের সাহায্যে লা*ত্থি দেয় ইরানের বুকে। হঠাৎ আক্রমণে বিছানার নিচে পরে যায় ইরান। মৃদু আতর্নাদ করে উঠে সে। ইরানের কণ্ঠস্বর শুনে আনাবিয়া ঝটপট বিছানা থেকে নেমে বাতি জ্বালিয়ে দেয়। ইরান ততক্ষনে কোমর ধরে বিছানায় উঠে বসে। আনাবিয়াকে দেখে বলে,

-মেয়ে তুমি সাংঘাতিক! আজ নিজেই নিজেকে বিধবা করে দিতে আরেকটু হলে! উফফ এমনেই অসুস্থ আমি। কোথায় সেবা করবে কী আরো ব্যাথা দিচ্ছ!

আনাবিয়া মুখ ফুলিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। টু শব্দও করল না। ইরান বউয়ের অভিমান দেখে মুচকি হাসে। তাড়া দিয়ে বলে,

-আই এম হাঅ্যাংরি ডিয়ার।

-ভৃত্যদের বলেন তারা খাবার বেড়ে দিবে।

-আমার কোমর ব্যাথা করছে।

-ভৃত্যদের বলেন তারা মালিশ করে দিবে।

ইরান ক্ষেপে গেলো। আনাবিয়া তার সাথে ঘাড়তেরামি করছে! বাঁকা হেসে বলে,

-আমার ঘুম আসছে।

-রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ুন।

-তোমাকে লাগবে।

-ভৃত্যরা আছে।

-এইরকম রোমান্টিক ওয়েদারে রোমান্স করার জন্য একজন লাগবে।

-ভৃত্যরা আছে।

-আমার একটি বেবিগার্ল লাগবে।

-ভৃত্যরা,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।

আনাবিয়া আর কথা শেষ করতে পারল না। এতক্ষন রেগে অন্যমনস্ক হয়ে উত্তর দিচ্ছিলো। ইরানের শেষের উক্তি শুনতেই থমকে যায় সে। অগ্নিদৃষ্টিতে তার দিকে তাকায়। রাগে কটমট করে বলে,

-ছি ছি! আপনাকে আমি ভালো ভেবেছিলাম! শ্যাম অন ইউ।

-কেনো এতক্ষন না ভৃত্য ভৃত্য বলছিলে? তো এবারও বলো ভৃত্যরা আমাকে আমার বেবিগার্ল দিবে?

-শাটআপ রাব্বিশ ম্যান! আমি তো কাল বা পরশুদিন চলে যাচ্ছি তাই বলছিলাম ভৃত্যরা তো আছেই আপনার সব কাজ করতে।

-ওয়েল। হোয়ায় আর ইউ ক্রায়িং?

-জাস্ট লিভ মি অ্যালোন।

-আগে আমাকে খাইয়ে দেও তারপর তুমি অ্যালোন হইও।

আনাবিয়া ইরানের কথায় তাজ্জব বনে যায়। ইরান আনাবিয়ার রিঅ্যাকশন দেখে শব্দ করে হেসে দেয়। কোনোরকম হাসি থামিয়ে বলে,

-আই মিন খাবার খাইয়ে দেও। ক্ষুদা লেগেছে।

আনাবিয়া কিছু না বলেই মুখ ফুলিয়ে বাহিরে আসে। ইরানও পিছু পিছু আসে। ডায়নিং টেবিলে বসে পরে দুজন। ইরান ভৃত্যদের বলে ঘুমিয়ে পরতে। তাই তারা সকলে চলে যায়। আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে স্যুপ বেড়ে দেয় ইরানকে। ইরান কিছু একটা ভেবে বলে,

-খাইয়ে দেও এবার।

-হোয়াট? হোয়াট আর ইউ সেয়িং?

-এভাবে বড় বড় চোখ না দেখিয়ে ভদ্র ওয়াইফের মতো আমাকে নিজের একমাত্র হাসব্যান্ডকে খাইয়ে দেও।

-পারব না।

-ওকে। নো প্রবলেম। আমি ভৃত্যদের বলছি।

-কী বলবেন?

-নিজের হাসব্যান্ড ভেবে একটু যত্ন করে খাইয়ে দিতে।

আনাবিয়ার সহসা কী হলো দ্রুত করে ইরানের পাশের চেয়ারে বসে পরে। স্যুপ এর পেঁয়ালে নিজ হাতে নিয়ে সযত্নে খাইয়ে দিতে থাকে ইরানকে। ইরান খাচ্ছে আর আনাবিয়াকে দেখছে। আনাবিয়ার দৃষ্টি নিচের দিকে। ভুলেও একবার তাকাচ্ছে না ইরানের পানে।

-আমার দিকে তাকালে জেল হবে না ডিয়ার।

আনাবিয়া চুপ। ইরানের খাওয়া শেষ হলে সে জোর করে আনাবিয়াকেও খাইয়ে দেয়। খাওয়া দাওয়ার পর্ব ঠুকিয়ে আনাবিয়া কিছু না বলে পুনরায় সেই রুমে যেতে নেয়। ইরান তৎক্ষণাৎ আনাবিয়াকে কোলে তুলে নেয়। ভয় পেয়ে ইরানের কাঁধ চেপে ধরে আনাবিয়া। কঠিন কণ্ঠে বলে,

-নামা আমাকে। দ্রুত নামান ইরান।

ইরান সিঁড়ি দিয়ে ওপরে যেতে যেতে বলে,

-একবার ইরান তো একবার আপনি! হোয়ায়? শুধু ইরানই বলবে। তোমার মুখ থেকে ইরান নামটা শুনতে আমার কিন্তু বেশ লাগে।

-মাথা ফাঁটিয়ে দেবো বলে দিলাম। দ্রুত নামান।

-আমার এখন ঘুমের প্রয়োজন।

-আমাকে নামিয়ে আপনি ঘুমান।

-তোমাকে লাগবে আমার।

রুমে এসে আনাবিয়াকে বিছানায় শুয়ে দেয়। অতিদ্রুত দরজা লাগিয়ে বাতি নিভিয়ে ইরান বিছানায় উঠে আনাবিয়াকে আষ্টেপিষ্ঠে জড়িয়ে ধরে। আনাবিয়া বিমূঢ় ইরানের কান্ডে।

-এভাবে ধরেছেন কেনো আমায়? মারার প্ল্যান করছেন জানো আরেকটা বিয়ে করতে পারেন?

-একজন দিয়েই আমার জীবন ছন্নছাড়া আরেকজন চাই না।

আনাবিয়া ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি শুরু করেছে। ইরান আনাবিয়াকে সামলাতে না পেরে অন্ধকারে একটা অঘটন করে দেয়। শুধু অঘটন না মহাভারত অশুদ্ধ যেটাকে বলে! আনাবিয়াও একদম শান্ত। জানো মুহূর্তেই মূর্তি হয়ে গিয়েছে সে। মাত্রই ইরান আনাবিয়াকে শান্ত করতে নিজের অধর দিয়ে চেপে ধরে আনাবিয়ার নরম অধরজোড়া। এক মিনিট হওয়ার পূর্বেই ইরান ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে।
কিছুক্ষন আগের ঘটনা মনে পরতেই কিড়মিড়ে উঠে আনাবিয়ার সর্বাঙ্গ। জীবনের প্রথম চুম্বন তার! লি*পকি*স একটু বেশিই ঘৃণা করে আনাবিয়া। কেনো করে এটা তার অজানা। এখনও ওয়া*ক ওয়া*ক করতে করতে ইরানকে ছেড়ে বিছানায় উঠে বসে। ইরান তো নিজেই স্তব্ধ নিজের কান্ডে। তার ওপর আনাবিয়ার হাবভাব দেখে ভীত হয়ে যায় সে। মুখ ফুটে আনাবিয়াকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই আনাবিয়া ব*মি করে তলিয়ে দেয় ইরানকে। শুধু একবার না। পর পর তিনবার করে জ্ঞান হারিয়ে ইরানের ওপরেই ঢলে পরে আনাবিয়া।

>>>>চলবে।

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব_১৮_১৯

#পর্ব ১৮

এক হাতে কফির গ্লাস আরেক হাতে জুসের গ্লাস নিয়ে ড্রইংরুমের সোফায় বসে আছে আনাবিয়া। বড়োসড়ো ভাবে ফেঁসে গিয়েছে সে। জুস নিজ ইচ্ছায় খেতে নিয়েছিল আর কফি ইরান এসে দিয়ে গিয়েছে। কিছুক্ষন পূর্বেই ঘুম থেকে উঠেছে দু’জন। মুখ ভার ইরানের। আনাবিয়ার যখন থেকে রাতের ঘটনার কথা মনে পরেছে তখন থেকে সে হাসতে হাসতে শেষ। আবার চুম্বনের কথা ভাবতেই একরাশ লাজ ঘিরে ধরে তাকে। ইরান কিছুক্ষন আগে নিচে এসে আনাবিয়ার হাতে ধোঁয়া উঠা গরম কফির গ্লাস ধরিয়ে দিয়ে আবার ওপরে চলে গিয়েছে।

………………………………

রাতে আনাবিয়া অজ্ঞান হয়ে যাওয়ার পর মাথায় হাত দিয়ে বসে ইরান। তার নিজেকে নিজের তখন চড় মারতে ইচ্ছে করছিল। কেনো কি*স করতে গিয়েছিল সে! এখন এইগুলো কে পরিষ্কার করবে। ইরান আস্তে আস্তে আনাবিয়াকে বিছানায় শুয়ে দেয়। নিজের পরিহিত শার্ট খুলে ওয়াশরুমে রেখে আসে। মেঝে পরিষ্কার করে উধাম গায়েই আনাবিয়ার পাশে বসে। আনাবিয়ার ড্রেসও একটু নোংরা হয়ে গিয়েছে। মৃদু আওয়াজে কয়েকবার ডাক দেয় আনাবিয়াকে। কিন্তু আনাবিয়া উঠে না। নিঃশাস ছেড়ে ফিমুকে ডেকে এনে আনাবিয়ার পরিহিত ড্রেস চেঞ্জ করিয়ে দেয়। অতঃপর ইরানও আনাবিয়াকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরে।

ইরানের ফোনের শব্দে সকালে ঘুম ভাঙে আনাবিয়ার। শব্দ করে কাশতে কাশতে উঠে বসে সে। মাথা অনেক বেশি ব্যাথা করছিল তখন। দু’হাতে মাথা চেপে আশেপাশে চোখ বুলায়। পাশেই ইরানকে জামা বিহীন ঘুমিয়ে থাকতে দেখে এক এক করে সব কিছু মনে পরে যায় তার। নিজের ঠোঁটে আঙুল বুলিয়ে আনমনে হাসে। ইরানের ঘুমও ভেঙে যায়। ছোট ছোট চোখে আনাবিয়াকে দেখে বলে,

-কখন জাগলে তুমি? শরীর এখন ভালো লাগছে?

-একটু মাথা ব্যাথা করছে।

-নাস্তা করে মেডিসিন নিয়ে নিও তাহলেই কমে যাবে।

-হুম। উধাম গায়ে কেনো আপনি?

-রাতে চোর এসে আমার জামাকাপড় চুরি করে নিয়ে গিয়েছে। তাই আমি উধাম গায়ে।

কটমটে জবাব দেয় ইরান। আনাবিয়া হালকা হাসে। ইরান এবার আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করে,

-বুঝলাম না আমি জাস্ট কিস করেছি নরমাল ভাবেই। এতেই এত ভয়ংকর রিঅ্যাকশন কেনো দিলে?

আনাবিয়া আমতা আমতা করে বলে,

-অ্যাকচুয়ালি আই ডোন্ট লাইক লিপকি*স । হ্যাঁ আমি ছোটকাল থেকে এইসব সরাসরি দেখে বড় হয়েছি তবুও আমার অনেক ঘৃণা লাগে লি*পকি*স করতে।

-ঘৃণা করার কী এখানে?

-মানুষের মুখে অনেক বিচ্ছিরি স্মেল থাকে। আবার কেউ কেউ নিয়মিত দাঁত ওয়াশ করে না। এইরকম বিভিন্ন কারণ।

-ইউ টু মাচ গার্ল! আমি তোমার থেকেও বেশি পরিছন্ন বুঝলে?

আনাবিয়া মুখ বাঁকিয়ে বিছানা থেকে নেমে যায়। আনাবিয়া আয়নায় নিজেকে দেখে বিস্ময়। কাল রাতে তো সে হাটু সমান টপ্স পরা ছিল। তাহলে এখন ইরানের শার্ট কেনো তার গায়ে! বাঁকা চোখে আনাবিয়া ইরানের দিকে তাকায়। ইরান মুচকি হাসি দিয়ে মাথার পিছনে দু’হাত দিয়ে নিশ্চিন্তে শুয়ে আনাবিয়াকে দেখছে। আনাবিয়া চোখের ইশারায় ইরানকে ড্রেসের বেপারে জিজ্ঞেস করে। ইরান কিছুই বললো না। আনাবিয়া এবার ভড়কে গিয়ে বলে,

-আমার ড্রেস চেঞ্জ হলো কিভাবে? আপনি করেছেন কী?

-না। রাতে জরুরি তলোবে ফিমুকে ডেকে এনে চেঞ্জ করিয়েছি।

-ওহ।

-আমি করলেও কোনো প্রবলেম ছিল না। আফটার অল আই এম ইউর হাসব্যান্ড।

আনাবিয়া উত্তর দিলো না। ফ্রেশ হতে ওয়াশরুম চলে যায়।
…………………………………..

হাতের ঘড়ি পরতে পরতে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নামছে ইরান। মুখে তার কঠোর ভাব। আনাবিয়া ইরানের দিকে তাকালো না। জুস খেতে খেতে ফোন টিপছে। ইরান আনাবিয়াকে অকেজো ভঙ্গিতে বসে থাকতে দেখে রেগে কিছু বলবে তার আগেই তাজীব হাজির হয়। ইরানকে বলে,

-স্যার আজকের মিটিং গুলো কী ক্যানসেল করে দেবো?

-কেনো?

-স্যার আগামীকাল নির্বাচন। আপনার তো সেখানেও কিছু কাজ আছে।

-ওহ ইয়েস। ঠিক আছে ক্যানসেল করে দেও।

ইরান আড়চোখে ড্রইংরুমের দিকে তাকায়। সোফায় চোখ বন্ধ করে বসে আছে আনাবিয়া। ফিমু আনাবিয়ার মাথা টিপে দিচ্ছে। সহসা ইরানের মুখের ভঙ্গিমা পরিবর্তন হয়। তাজীব একটু নিচু হয়ে ধীরে ধীরে বলে,

-স্যার কাল রাতে আপনি সিক্রেট প্লেসে আসলেন না? আমি ঐ ড্রাইভারকে নিয়ে এসেছি।

-একটু ব্যস্ত থাকায় যেতে পারিনি। খাতির যত্ন করেছো তো বিশেষ ভাবে?

-জি স্যার।

-আমি আজ রাতে আসছি। কিছুক্ষন পর আবার ঐ বাসায় যেতে হবে।

-স্যার ম্যাম তো আমাকে বললো সে তার খালামুনির বাসায় যাবে। পাসপোর্ট আরো কিছু কাগজ আনতে?

-উনার মাথায় ভুত ঢুকেছে। খুব জলদিই ভুত তাড়াচ্ছি আমি।

কথা শেষ করে ইরান এগিয়ে যায় আনাবিয়ার কাছে। একবার ফিমুর দিকে তাকাচ্ছে তো একবার আনাবিয়ার দিকে। সোফায় বসে ফিমুকে আদেশ স্বরে বলে,

-আমার জন্য কফি নিয়ে এসো ফিমু।

-জি স্যার।

ফিমু চলে যায়। আনাবিয়া চোখ খুলে। তাজীবকে দেখে বলে,

-তাজীব ভাই ড্রাইভারকে বলো আমাকে একটু আমার খালামুনির বাসায় দিয়ে আসতে।

-খালামুনির বাসায় কেনো যাবে?

-রাতে কী বলেছেন ভুলে গেলেন না কি? আর এমনেও আমি ঐ বাসায় যাবো না।

-যেতে হবে। যদি কেউ তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করে তাহলে তুমি বাসায় চলে এসো।

-আপনার কাজিন হওয়ার সখ নেই আমার।

ইরান বাঁকা চোখে তাজীবের দিকে তাকায়। তাজীব দ্রুত তার গন্তব্যে চলে যায়। ইরান বাঁকা হেসে বলে,

-তাহলে ওয়াইফ-ই হও। একজন আদর্শ ওয়াইফ। মেনে নেও এই বিয়ে, আমাকে।

আনাবিয়া শান্ত। শান্ত ভণিতায় বলে,

-মেনেই তো নিচ্ছি। আপনাকে ভালোবাসতে পারব কি না আই ডোন্ট নো। বাট আই ওয়ান্ট টু স্টেই হেয়ার।

-ভালোবাসতে হবে না সারাজীবন থেকে গেলেই আমার জন্য অনেক।

আনাবিয়া প্রতিউত্তর দিলো না। নিজ হাতের আঙুল দেখতে লাগলো। ফিমু কফি এনে ইরানের হাতে দেবে। অসাবধানতায় তার হাতেই গরম কফি পরে যায়। জ্বালাপোড়ায় এক হাত দিয়ে আরেক হাত চেপে ধরে। আনাবিয়া দ্রুত বসা থেকে উঠে ফিমুর পাশে দাঁড়ায়। হাত দেখে চিন্তিত হয়ে বলে,

-একটু সাবধানে কাজ করবে না। কতখানি পুড়ে গিয়েছে। এসো বরফ দিয়ে দেই।

-না ম্যাম কিছু হবে না। আমিই দিয়ে নিতে পারব।

-কথা কম বলো এসো।

-ম্যাম আপনি তৈরি হন আপনাদের যেতে হবে। আমি বরফ দিতে পারব।

আনাবিয়া আরেকজন ভৃত্যকে ডেকে বলে ফিমুকে নিয়ে যেতে আর বরফ, মলম দিয়ে দিতে। তারপর তার দৃষ্টি স্থির হয় ইরানের ওপর। শান্ত মস্তিকে বসে ফোন টিপছে সে। আনাবিয়া আশ্চর্য হয়ে বলে,

-আপনি একটু দেখেশুনে নিবেন না। মেয়েটার হাত পুড়ে গেলো।

-মলম লাগালে ঠিক হয়ে যাবে। যাও রেডি হয়ে এসো।

-অনেক বেশি পাষান মনের মানুষ আপনি!

_________________🌸

গাড়িতে বসে জালানা দিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে আনাবিয়া। পাশেই ইরান বসেছে। পিছনে ও সামনে আরো দুটো গাড়ি। যেহেতু আগামীকাল নির্বাচন। সেহেতু আজ ঢাকা শহর গরম। তাঁদের ওপরেও হামলা হতে পারে। তাই ইরান সেফটি নিয়েই আনাবিয়া নিয়ে বের হয়েছে। বাহিরের দিকে তাকিয়েই আনাবিয়া বলে,

-ইসরাফ বাসায় এসেছে?

-না। তিনদিন পর আসবে। হাঁটতে পারবে না সবসময় শুয়েই থাকতে হবে ওর।

-আজ যদি ইসরাফের এক্সিডেন্ট না হতো তাহলে ওর সাথেই আমার বিয়ে হয়ে যেত। এতো দিনে আমি আমার প্রতিশোধ নিয়ে চলেও যেতাম।

-ইউ নো আনাবিয়া? সৃষ্টিকর্তা যা করেন ভালোর জন্যেই করেন।

-হতে পারে। জেসিকার হঠাৎ বিয়ে কেনো?

-ও পছন্দ করত একজনকে তার সাথেই বিয়ে।

-ওহ। আপনার আপা তার ইন লও এর বাসায় যায় না?

-না। কোনো যোগাযোগ নেই আপার তাঁদের সাথে।

আনাবিয়া মুখ বাঁকায়। অস্পষ্ট স্বরে বলে,

-এইরকম চূড়েলের সাথে কে যোগাযোগ রাখতে চাইবে!

ইরান আনাবিয়ার কথা সম্পূর্ণ না শুনলেও বুঝেছে। তবুও কিছু বললো না। বাড়িতে পৌঁছে গাড়ি থামে। দু’জন একসাথে নেমে ভিতরে যায়। সোফায় বসে ছিল রাকিয়া। আনাবিয়াকে দেখে হাসি মুখে এগিয়ে আসে।

-ভালো আছিস মা?

-জি মম। আপনি ভালো আছেন?

-এইতো আছি। আয় ভিতরে আয়।

রাকিয়া ইরানের সাথে কথা বললো না। ইরান বুঝলো তার মা অভিমান করেছে। রাকিয়া আনাবিয়াকে নিয়ে সোফায় বসে পরে। ইরান রাকিয়ার পায়ের সামনে বসে ইনোসেন্ট ভঙ্গিতে বলে,

-আম্মা রাগ কমেনি তোমার? কথা বলবে না আমার সাথে?

রাকিয়া উপেক্ষা করল ইরানকে। আনাবিয়াকে এটা সেটা জিজ্ঞেস করছে। আনাবিয়া ঠোঁট চেপে হাসছে। ইরান এবার রাকিয়ার হাত ধরে বলে,

-ও আম্মা, মাফ করে দেও না। এখন থেকে যেখানে যাবো সেখানেই তোমাকে নিয়ে যাবো। প্রমিস।

-আনাবিয়া একজনকে বলে দে আমার কোনো ছেলে নেই।

আনাবিয়া রাকিয়ার সাথে তাল মিলিয়ে বলে,

-শুনলেন মম কি বললো? আপনাকে চিনি না আমরা।

-আম্মা সরি না? দেখো তুমি যদি এখন মাফ না করো তাহলে আমি আবার চলে যাবো বলে দিলাম।

-তুই যেখানে মন চায় যা আমার বউমা থাকলেই হবে।

-বাহ্! কয়দিনেই ছেলে পর! কেউ আমাকে ভালোবাসে না।

রাকিয়া হাসতে হাসতে আনাবিয়াকে বলে,

-দেখেছিস মা কয়দিন পর এই ছেলে নিজেই বাপ হবে। আর সে কি না এখন বাচ্চাদের মতো ব্যবহার করছে!

আনাবিয়া ভেবছেঁকা খেয়ে যায়। ইরান আগের মতো করেই বলে,

-মাফ করেছ তো?

-হ্যাঁ যা করেছি। শরীর কেমন এখন?

-একদম ভালো। তোমাকে দেখে আরো সুস্থ হয়ে গেলাম।

-নাটকবাজ! যা আনাবিয়া মা কে রুমে নিয়ে যা।

-হুম।

রুমে এসে ধপ করে বিছানায় শুয়ে পরে আনাবিয়া। ইরান সেটা লক্ষ্য করে। জালানা খুলে পর্দা সরিয়ে দেয়। রুম হয়তো সকালেই পরিষ্কার করানো হয়েছে। তনুসফা আর জেসিকা শপিং করতে গিয়েছে। ইরান আলমিরা খুলে কিছু একটা বের করতে করতে বলে,

-তুমি কবে শপিং করতে যাবে?

-আমার কিছুর প্রয়োজন নেই।

-আছে। বাংলাদেশে বিয়েসাদিতে সকল নারীরা অনেক হেভি ড্রেসাপ এন্ড মেকআপ করে। তোমারও কিছু হেভি ড্রেস লাগবে।

-আমি ওড়নাই সামাল দিতে পারি না আবার হেভি ড্রেস!

-তাহলে বেবি কিভাবে সামলাবে?

-আগামীকাল হচ্ছে বেবি?

-না তবে একদিন তো হবে।

-যেদিন হবে সেদিন দেখা যাবে কিভাবে সামলাই।

ইরান আনাবিয়ার হাতে একটা কার্ড ধরিয়ে দিয়ে বলে,

-অনেক বেশি ঘাড়তেড়া তুমি।

-ওয়েল। হোয়াট’স ডেট?

-আমার ক্রেডিট কার্ড। কিছু কেনাকাটার দরকার বা কোনো কারণে টাকা লাগলে এখান থেকে উসড করবে।

-ওহ ওকে।

-রাতে এক জায়গায় নিয়ে যাবো তোমায়।

আনাবিয়া উৎফুল্ল হয়ে যায় ইরানের কথায়। খুশিতে জিজ্ঞেস করে,

-কোথায়?

-সারপ্রাইস।

মন ক্ষুন্ন হলো আনাবিয়ার। শোয়া থেকে উঠে বসে। চেঁচিয়ে বলে,

-আই ডোন্ট লাইক সারপ্রাইস। প্লিজ বলে দিন না কোথায় নিয়ে যাবেন?

-উহুম। সন্ধ্যা সাতটায় তাজীব তোমাকে একটা পার্সেল দিয়ে যাবে। সেটা পরে রেডি হয়ে থেকো। আমি বাসায় আসবো আর তোমাকে নিয়ে যাবো।

#পর্ব ১৯

ওড়নার কিনারে ঘুরাতে ঘুরাতে ছাদে হাঁটছে আনাবিয়া। কানে ব্লুটুথ। তার গ্রান্ডমার সাথে কথা বলছে। সারাদিন ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দিন পাড় করেছে তাই এখন ফ্রেশ হাওয়ায় মন ফ্রেশ করতে ছাদে এসেছে। আজও বৃষ্টি হওয়ার সম্ভাবনা আছে। আনাবিয়ার প্রথম প্রথম বৃষ্টি ভালো লাগলেও এখন বিরক্ত লাগে। এবার বৃষ্টিটা জানো একটু বেশিই হচ্ছে!
কথা বলতে বলতে আনাবিয়ার নজর যায় নিচে সুবিশাল ব্যাকইয়ার্ডে। তনুসফা কিছু লোককে ঘুরে ফিরে জায়গাটা দেখাচ্ছে। কয়েকজন লোক সিরিয়ালে বাঁশ আরো কিছু জিনিস পত্র নিয়ে এসে রাখছে। হয়তো সেখানেই ফাঙ্কশন আয়োজিত করা হবে। পাশেই গার্ডেন। আজও সেদিনের মালিরা কাজ করছে। আনাবিয়ার মাথায় হঠাৎ একটা বুদ্ধি এলো। দ্রুত গ্রান্ডমার সাথে কথা সমাপ্ত করে কল কেটে দেয়। ওড়নাকে চাদরের মতো শরীরে জড়িয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে নেমে গেলো। বড় বড় পা ফেলে হাঁটতে হাঁটতে বাহিরে চলে আসে। তনুসফাকে দেখে সম্পূর্ণ ইগনোর করে গার্ডেনে চলে যায়। আনাবিয়ার ইগনোর পছন্দ হলো না তনুসফার। সম্পর্কে সে বড়। এই মেয়ে কেনো তাকে এতো অসম্মান করে! অন্যদিকে আনাবিয়া মনে মনে পৌঁশাচিক হাসি দেয়।

মালিরা আনাবিয়াকে দেখে খুশি হয়। আনাবিয়া তাঁদের খবরা খবর নেয়। একদম বাঙালি মেয়ের মতো তাঁদের সাথে বসে গল্প করতে থাকে। মালি তাকে গাছ থেকে কাঁচা আম পেরে দেয়। আনাবিয়া বুঝতেছিল না কিভাবে খাবে। পরে মালির মেয়ে তাকে কেটে দেয় আম। প্রথম বাইট নিতেই টকে লাফিয়ে উঠে সে। টক জাতীয় খাবার বেশি একটা খেতে পারে না সে। মিষ্টি অনেক বেশি প্রিয় তার। কথার মাঝেই গার্ডেনে প্রবেশ করে তনুসফা। আনাবিয়াকে দেখে এগিয়ে যায়। নিজের শকুনি দৃষ্টিতে আনাবিয়াকে আপাদমস্তক পা থেকে মাথা পর্যন্ত পরোক্ষ করে নেয়। উপহাস স্বরে বলে,

-তোমার না কি দাদা দাদি এসেছিলো রাশিয়া থেকে? তো এখনও বাংলাদেশে কেনো তুমি? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি হয়তো চলে গিয়েছো। আসলে এইরকম ছেলে পেলে মেয়েদের কি আর ছেড়ে যেতে মন চায়। তাই না?

আনাবিয়া হাসলো তনুসফার কথায়। এদিক সেদিক তাকিয়ে গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

-একদম। বড় কথা হলো আপনার ভাই আমাকে যেতে দেয়নি। আমি কাল রাতেও বললাম রাশিয়া চলে যাই। কিন্তু সে আমাকে ছাড়া থাকতে পারবে না। কয়েকদিনে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছে আমায়।

-ও সবসময়ই মানুষ চিনতে ভুল করে। আর রইলো ভালোবাসার কথা! আমার ভাইকে যদি বোকা ভেবে থাকো তাহলে বলবো তুমি নিজেই বড় বোকা মেয়ে।

-ঠিক বলেছেন। আপনার ভাই আসলেই মানুষ চিনতে ভুল করে।

তনুসফা কটমট চোখে তাকায় আনাবিয়ার দিকে। আনাবিয়া মৃদু হেসে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। তনুসফা শাসানো স্বরে বলে,

-ইরানের মনে আমার নামে বিষ ঢুকানোর মতো দূরসাহস করো না। ফল ভালো হবে না।

-ছি ছি! আমি এতটাও খারাপ নই! বিষ কেনো ঢুকাবো একদম সরাসরি আপনার আসল চেহারা তার সামনে নিয়ে আসবো। খুব জলদিই মাই ডিয়ার সিস্টার ইন লও।

-ছোট আছো ছোটদের মতোই থাকো। আমার কাজে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ো না।

আনাবিয়া কিছু বললো না। মুখ অন্যদিকে ফিরিয়ে নেয়। তনুসফা শব্দ করে হেসে বলে,

-আর হ্যাঁ যদি ভেবে থাকো ইরান তোমাকে ভালোবাসে তাহলে বলবো সেটা তোমার ভুল ধারণা। ও একজনকেই ভালোবেসে ছিল আর ওকে ছাড়া অন্য কাউকে ভালোবাসবে না।

-আসলে আমি একটু বেসরম মেয়ে বুঝলেন?

আনাবিয়ার তনুসফার দিকে একটু ঝুঁকে। কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলে,

-আপনার ভাই নিজে আমাকে ভালোবাসি বলেছে। আর আমার প্রেমে মাতোয়ারা হয়ে ঘুরছে। শুধু একটা কথাই বলবো, ইনশাআল্লাহ এই বুড়ো বয়সে এসে অতি শিগ্রই ফুপ্পু ডাক শুনতে পারবেন। আমি যদি ভুল না হই আপনাদের এখানে ছেলে-মেয়েরা বাবার বোনকে ফুপ্পু বলে না?

তনুসফা রাগে কিছু বলতে পারল না। সন্ধ্যা হতে দেখে আনাবিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। জামা ঠিক করতে করতে কঠিন স্বরে বলে,

-আপনি আমার হাসব্যান্ডের আপন বোন। আমারও বোনের মতো। প্লিজ শুধু শুধু সতীনের মতো ব্যবহার করিয়েন না। আমি কিন্তু আমার শত্রুদের জন্য অনেক ভয়ংকর।

আনাবিয়া চলে যায়। তনুসফা হাত মুঠি করে রাগে ফুসছে। বিড়বিড় করে নিজেই নিজেকে বলে,

-আর মাত্র কিছুদিন শান্তিতে কাটিয়ে নেও মেয়ে। একবার তাহশিয়া আসুক তারপর দেখবো নে এই এটিটিউড কোথায় যায়!

__________________

কিছুক্ষন আগেই তাজীব এসে একটা পার্সেল দিয়ে গিয়েছে আনাবিয়াকে। আনাবিয়া এখন সোফায় বসে অতি এক্সসাইটেড হয়ে পার্সেল খুলছে। অবশেষে পাঁচ মিনিট সময় নিয়ে খুলতে সক্ষম হয়। তিনটা বড় বড় বক্স আর দুইটা ছোট ছোট। আনাবিয়া প্রথম বক্স খুলতেই একটা ড্রেস আর চিঠি পায়। চিঠি হাতে নিয়ে আনমনে মুচকি হাসে আনাবিয়া।

“ডিয়ার ওয়াইফি”

‘ আমি জানি এখন চিঠিটা হাতে নিয়ে মুচকি মুচকি হাসছেন আপনি। আবার লাজে রাঙাও হয়ে যাচ্ছেন। অপ্স সরি আমার ওয়াইফের তো আবার লাজ নেই! এখন আর না হেসে কালো রঙের বক্সটা খুলো। অনেক সখ করে এই তিনটা শাড়ী অর্ডার করেছি তোমার জন্য। আই নো ইউ ডোন্ট লাইক শাড়ী। বাট আমি একজন বাঙালি পুরুষ। সকল প্রেমিক পুরুদের মতো আমিও আমার প্রেয়সীকে শাড়ীতে দেখতে চাই। তোমার কালো রঙ পছন্দের আর আমার তুমি। আমি অনেক আগ্রহ নিয়ে বসে আছি তোমাকে সেই কালো শাড়ীতে দেখার। কবে যে আমার আঁখিজোড়া ধন্য হবে!
জেসিকাকে আমি বলে দিয়েছি। ও আসবে তোমার সাহায্য করতে। আর যদি বেশি অস্থির লাগে তাহলে পরার প্রয়োজন নেই। বোরখা পরে এসো। আমি আর আসতে পারব না। তাজীব তোমাকে নিয়ে আসবে। আর হ্যাঁ রাস্তায় তাজীবকে বেশি প্রশ্ন করবে না। ও যেখানে নিয়ে যাবে সেখানেই যাবে চুপচাপ ভদ্র মেয়ের মতো। আর ছোট বক্স গুলোতে কিছু সিম্পল জুয়েলারি আছে। শাড়ী সাথে যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিস শাড়ীর সাথেই পাবে। তাহলে এখন দ্রুত রেডি হয়ে নেও।
অধয্য হয়ে বসে আছে তোমার এই অসহায় প্রেমিক মানে লাভার। জলদি এসে আমার মন মস্তিককে তোমার বর্ষণে ভিজিয়ে দেও। আই আম ওয়েটিং। ‘

ইউর লাভয়িং হাসব্যান্ড

ইরান শেখ

চিঠিটা পরে অন্যরকম ভালো লাগা ছেয়ে গেলো আনাবিয়ার হৃদয়ে। বক্ষস্থলে অস্বাভাবিক ভাবে লাফাচ্ছে তার। চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিঃশাস নিলো কয়েকবার। চোখের সামনে ভেসে উঠলো ইরানের হাসি হাসি মুখশ্রী। ইরানের প্রত্যেকটা কর্ম চোখে ধরা দিলো আনাবিয়ার। ঝটপট ফোন বের করে হাতে নেয়। ক্যালেন্ডারে ঢুকে আজকের তারিখটা “স্পেশাল ডে” দিয়ে মার্ক করে রাখে। কালো রঙের বক্স খুলতেই সম্পূর্ণ কালো রঙের মোলায়েম স্লিকের একটি শাড়ী দেখতে পায় আনাবিয়া। বক্স থেকে বের করে শাড়ীটা। বাতির আলোতে চকচক করছে। বেশ ভালো
লাগলো আনাবিয়ার। তখনই রুমে প্রবেশ করে জেসিকা। মজার ছলে বলে,

-উম ডিনার ডেট না কি আজ মামা মামীর?

আনাবিয়া জেসিকার দিকে তাকায়। মৃদু হাসে। জেসিকার নজর শাড়ীতে নিবন্ধ। অবাক হয়ে বলে,

-অনেক বেশি সুন্দর শাড়ীটা! মামুর চয়েস আছে বলতে হবে! আপনার গায়ে শাড়ীটা একদম মানানসই লাগবে মামী।

-কিন্তু কিভাবে পরবো?

-ডোন্ট ওয়ারি আই আম হেয়ার। আপনি শাড়ী সাথে এইগুলো পরে আসুন মামী।

-তুমিও তো বিদেশে থেকেছো জেসিকা। তবুও শাড়ী পরতে কিভাবে পারো? হাউ?

-আসলে মামী আমি শুধু কয়েক বছর বিদেশে থেকেছি তাও স্টাডির জন্য। আমার জন্ম এখানেই।

-ওহ হ্যাঁ। আমি এইগুলো পরে আসছি।

আনাবিয়া হাসি মুখে ওয়াশরুম গেলেও বের হয় এক আকাশ সমান বিরক্ত নিয়ে। কালো রঙের ফুল হাতালা ব্লাউজ। আনাবিয়ার পেটের ঐখানটা অনেক বেশি ঢোলা। জেসিকা আনাবিয়ার মুখের ভঙ্গিমা দেখে হেসে দেয়। শান্ত স্বরে বলে,

-এটা কী মামী! আপনাদের বিয়ের মাস হয়ে যাবে মামু এখনও তার ওয়াইফের বডি সাইজ জানে না!

-আমাকে জোকার লাগছে জেসিকা?

-কুল মামী। আমি সেফটিফিন দিয়ে ঠিক করে দিচ্ছি। আসেন।

জেসিকা আনাবিয়ার ব্লাউজ ঠিক করে দিয়ে আয়নার স্মুখীন বসায় আনাবিয়াকে। ধীরে ধীরে মেকআপ করে দিতে থাকে আনাবিয়াকে। জেসিকা বলে,

-দেখেন মামী হাউ মাচ লাকি গার্ল আই আম! নিজের মামার ওয়াইফকে আমি ভাগ্নি হয়ে রেডি করে দিচ্ছি!

-ট্রু। আচ্ছা মেয়েদের মধ্যে উনি কোন জিনিসটা বেশি পছন্দ করে?

আনাবিয়ার প্রশ্ন শুনে আহাম্মক বনে যায় জেসিকা। থমথমে গলায় বলে,

-মানে?

-সরি আমি আসলে বুঝিয়ে বলতে পারিনি। মানে যেমন আমি ছেলেদের দাঁড়ি পছন্দ করি তেমনই সে কী পছন্দ করে?

-এটা হয়তো মামুর বন্ধুরা বলতে পারবে মামী। তবে আমি যতটুকু জানি মামু মেয়েদের নাকফুল পরা পছন্দ করে। আগে তার এক্সের কাছে শুনতাম তাকে নাকফুল পরার জন্য অনেক জোর করত মামু। কিন্তু সে বিয়ের আগে নাকফুল পরা লাইক করত না।

-তুমি চেনো উনার এক্সকে?

-হুম। ভালো সম্পর্ক ছিল আমাদের।

-অনেক ভালোবাসতেন তিনি ঐ মেয়েকে?

-হ্যাঁ অনেক।

-আমার থেকেও বেশি সুন্দর ছিল? চুল বড় বড় ছিল? চোখ কী কালো কালো ছিল? আমার থেকে তার বডিফিটনেস বেশি ভালো ছিল?

-মামী আপনি তার থেকেও সেরা। তার শুধু চুল বড় বড় ছিল। আপনি হলেন আনকমন! আপনার চোখ দেখলেই যে কেউ আপনার প্রেমে পরে যাবে।

-লিসেন্ট ডিয়ার, আমাকে এমন ভাবে রেডি করো যাতে তোমার মামু আমাকে ছাড়া অন্য মেয়ের দিকে না তাকায়। আচ্ছা নাকফুল কোথায় পরে? নাকে?

জেসিকা আবারও হাসলো। নিজের মুখ আনাবিয়ার সামনে এনে নাক দেখিয়ে বলে,

-আমার নাকে একটা পাথরের মতো দেখছেন এটাই নাকফুল।

-ওহহ আই সি। আমিও পরতে চাই।

-আপনার তো নাক ফুটানো না। অনেক ব্যাথা পাওয়া যায় নাক ফুটাতে।

-ব্যাথা!

মেকআপ করা শেষ হলে জেসিকা আনাবিয়াকে শাড়ী পড়িয়ে দেয়। লম্বাঠে গড়নে শাড়ীতে একটু বেশিই সুন্দর লাগছে আনাবিয়াকে। চুলগুলো ক্লিপের সাহায্যে খোঁপা করে দেয় জেসিকা। সেই ছোট খোঁপায় আবার একটা রক্তজবা ফুল গেঁথে দেয়। মধ্যে সিতি কপালের দু সাইড দিয়ে কয়েকটা বেবিহেয়ার বের করেছে। কানে ও গলায় পাথরের নেকলেস। ঠোঁটে নুড লিপস্টিক সেটার ওপরে আবার লিপগ্লোস দিয়েছে। জেসিকার নিজেরেই এখন হিংসা হচ্ছে আনাবিয়াকে দেখে। মনে মনে ভাবছে এইরকম সুন্দরী সে হলেও পারত!

গাড়িতে বসে ফোন টিপছে আনাবিয়া। তাজীব ড্রাইভ করছে। আনাবিয়া তাকে এতবার জিজ্ঞেস করল কোথায় যাচ্ছে। তাজীব একদম চুপ। কোনো উত্তরই দিচ্ছে না। তাই মুখ ফুলিয়ে বসে আছে সে। ঢাকা পেরিয়ে গিয়েছে অনেকক্ষণ আগেই। অচেনা রাস্তা দিয়ে আগে বাড়ছে চলন্ত গাড়ি। দীর্ঘ তিন ঘন্টা পর গাড়ি থামে। আনাবিয়া ধপ করে শ্বাস নেয়। তাজীব আগে আগে বের হয়ে গাড়ির গেট খুলে দেয়। আনাবিয়া শাড়ীর কুচি ধরে বেরিয়ে আসে। জেসিকা শিখিয়ে দিয়েছে তাকে কিভাবে শাড়ী ধরে হাঁটতে হয়। আশেপাশে চোখ বুলিয়ে ভীত হয়ে যায় আনাবিয়া। অন্ধকার আর অন্ধকার। স্পষ্ট ভাবে কিছু দেখতে পারছে না তবে সামনের থেকে পানির ঢেউয়ের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে। তাজীব ফোনের ফ্ল্যাশলাইট অন করে। আনাবিয়াকে বলে,

-ম্যাম আমার সাথে আসুন।

-তাজীব ভাই এটা কোন জায়গা? কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? আবার কিডন্যাপ করলেন নাতো আমাকে?

-ম্যাম স্যার বেঁচে থাকতে কারো সাহস নেই আপনাকে কিডন্যাপ করার। ধীরে ধীরে আসুন।

কিছু দূর আগে বাড়তেই তাজীব থেমে যায় সাথে আনাবিয়াও। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়ায় আনাবিয়া। তাজীব হাতে তালি দিতেই হঠাৎ অন্ধকার রাজ্য আলোকিত হয়ে যায়। আনাবিয়া চোখ খিচে বন্ধ করে ফেলে। কিঞ্চিৎ সময় অতিবাহি হওয়ার পর পিটপিট করে চোখ খুলে। পাশে তাজীবকে না দেখে এবার সত্যি ভয় পেয়ে যায়। কয়েকবার ডাকে তাজীবকে কিন্তু আসে না তাজীব। আনাবিয়া জায়গাটা ভালো করে লক্ষ্য করল। কোনো সমুদ্র বা নদীর পারে সে এখন। বালির মধ্যে সোজা রাস্তা করেছে আগে বাড়ার। দুইপাশে হলুদ রঙের কৃত্রিম বাতি জ্বালানো। আনাবিয়া শাড়ী ধরে সেই রাস্তা দিয়ে আগে বাড়ে। কিছুদূর যেতেই চমকে যায় আনাবিয়া। মুখ আপনা আপনিই হা হয়ে যায় তার। বালির মধ্যে জায়গাটা ডেকোরেশন করা হয়েছে। আশেপাশে অনেক ফুলের গাছ। চারপাশে সাদা ও হলুদ রঙের বাতি ঝলমল করছে। মধ্যে গোল করে একটি ঘর বানানো। ঘরের আশেপাশে ধবধবে সাদা রঙের পর্দা দিয়ে ঘেরা। জায়গায় জায়গায় বাতি আর পর্দা। আনাবিয়া যত আগে বাড়ছে ততই জেসমিন ফুলের সুবাস তার নাকে এসে ধরা দিচ্ছে।

কুচি ঠিক করে সামনে তাকাতেই দেখতে পায় পকেটে হাত গুঁজে দাঁড়িয়ে আছে ইরান। কালো রঙের পেন্ট আর কালো রঙের শার্ট জড়ানো তার গায়ে। মুখের ভাবভঙ্গি আকর্ষণীয়। আনাবিয়া বড় একটি হাসি দেয়। দ্রুত পা ফেলে এগিয়ে যেতে যেতে হঠাৎ শাড়ীর সাথে পা বেজে পরে যেতে নেয় আনাবিয়া। ইরান চিন্তিত হয়ে আনাবিয়া বলে আতর্নাদ করে উঠে। আনাবিয়া কোনোরকম নিজেকে সামলে সোজা হয়ে দাঁড়ায়।
হাসি দিয়ে ইরানকে বুঝায় সে ঠিক আছে। এক পা আগে বাড়াতেই ঘটে যায় অঘটন। এতক্ষন ধরে হাঁটতে হাঁটতে শাড়ীর কুচি অনেকটা খুলে খুলে গিয়েছে। আঁচল ও কোমরের সেফটিপিনও খুলে যায় অসাবধানতায়। যার দরুণ যখন আনাবিয়া সামনে পা বাড়ায় তার পরিহিত শাড়ী সম্পূর্ণ খুলে নিচে পরে যায়। আনাবিয়া অকস্মাৎ কান্ডে জমে যায়। কাঁদো কাঁদো মুখ করে একবার ইরানের দিকে তাকাচ্ছে তো একবার নিচে অবহেলায় পরে থাকা শাড়ীর দিকে। ইরানের হাবভাবও ভালো নয়। ললাটে দু’আঙুল ঢেকিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে আছে বেচারা।

>>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ