#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ১৩
বাসায় এসে আনাবিয়া সবাইকে যার যার রুম দেখিয়ে দেয়। এখন আগে ফ্রেশ হওয়া প্রয়োজন তারপর একসাথে আড্ডা দেবে সবাই। নিজেদের রুমে আসতেই ইরান তার দুই হাতের কুনই চেপে ধরে। রাগী কণ্ঠে বলে,
-ঐ ছেলে তিনজন কে ছিল?
-আমার বেস্টফ্রেন্ড। আর হাত ছাড়ুন আমার। আমি ব্যাথা পাচ্ছি।
ইরান অস্থির হয়ে বলে,
-আর আমার যে মনে ব্যাথা হচ্ছে সেটা কে দেখবে? আমার ওয়াইফকে এখন পর্যন্ত আমি টাচ করলাম না সেখানে অন্য ছেলে কিভাবে করে!
-ইউ হার্টিং মি ইরান।
-ইউ অল্সো হার্টিং মি। আই ক্যান্ট কন্ট্রোল মাইসেল্ফ হোয়েন সামওয়ান টাচ ইউ।
আনাবিয়ার জোরাজোরি দেখে রাগে ধাক্কা দিয়ে ইরান ছেড়ে দেয় আনাবিয়াকে। তাল সামলাতে না পেরে পায়ে বেডের সাথে বারি খায় আনাবিয়া। ব্যাথায় কুঁকরিয়ে উঠে সে। পা ধরে ধপ করে নিচে বসে পরে। ইরান জ্ঞানশূন্য হয়ে এগিয়ে যায় আনাবিয়ার কাছে। চিন্তিত হয়ে জিজ্ঞেস করে,
-আনাবিয়া ঠিক আছ? আই এম সো সরি। বেশি ব্যাথা করছে? ডক্টর আসতে বলবো।
আনাবিয়া ইরানের এতো আলগা দরত দেখে রেগে যায়। ক্ষেপা বাঘিনীর মতো নিজের সর্বশক্তি দিয়ে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয় ইরানকে। দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-আমার সামনে আসার মতো দূরসাহস করবে না ইরান শেখ। চুপ করে সহ্য করছি তার মানে এই না যা মন চায় তাই বলবেন, করবেন! আমার স্বার্থ শেষ হয়ে গেলে আমি আমার সময় সুযোগ বুঝে ঠিকই চলে যাবো।
ইরান হাত মুঠো করে রাগ নিয়ন্ত্রণ করে। বাসায় মানুষ আছে। তাঁদের সামনে ঝগড়া করলে বিষয়টা ভালো দেখায় না। তাই রাগে হনহন করে রুম ত্যাগ করে ইরান।
তাঁদের কারোই দুপুরে খাওয়া হয়নি। তাই আনাবিয়া তাড়া দিয়ে তাঁদের দুপুরের খাবার খেতে ডেকে আনে। আলিশান ডায়নিং টেবিলে সবাই একসাথে খেতে বসেছে। ইরান আনাবিয়ার ফ্রেন্ডদের পরিহিত পোশাক দেখে মাথা নিচু করে রেখেছে। আনাবিয়াকে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হাঁটতে দেখে লিলি বিস্মিত হয়। কিছুক্ষন আগেও তো ঠিক ছিল হঠাৎ কী হলো! আনাবিয়ার সাথে কথা বলতে বলতে এক পর্যায় প্রশ্ন করে লিলি,
-তোর পায়ে কী হয়েছে আনা? (লিলি)
-একটু ব্যাথা পেয়েছি। (আনাবিয়া)
আনাবিয়ার দাদি চিন্তিত হয়ে বলে,
-আনা মলম বা স্প্রে দিয়ে নিস কিন্তু নাহলে ব্যাথা কমবে না।
-জি কিউটি।
লিলি খেতে খেতে ইরানের দিকে তাকায়। মাথা নিচু করে বসে আছে সে। লিলি আনাবিয়াকে বলে,
-আমাদের সাথে ব্রাদার ইন লো’র পরিচয় করিয়ে দিবি না আনাবেবি।
আনাবিয়া হালকা হেসে মাথা নারায়। ইরানের সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দেয়। লিলি আনাবিয়ার থেকেও বেশি ফর্সা। ওর চুল কিছুটা সাদা আর গোল্ডেন কালার। আর ইভানার ফেইস গঠন আফ্রিকান মানুষদের মতো। কৃষ্ণবর্ণ গায়ের রঙ তার। কিন্তু আচরণ ভীষণ মার্জিত। লুকাস, ক্রিস ও ইরানের সাথে হাসি মুখে কথা বলে। ভেজাল হয় জোবানের সময়। গোমড়া মুখে শুধু হাই বলে ইরানকে। ইরান খেয়াল করছে এই ছেলেটা যখন থেকে এসেছে কেমন আনাবিয়ার পিছনে পরে আছে। গ্লু’র মতো একদম চিপকে আছে। ইরান চোখ মুখ খিচে শুধু সহ্য করছে। আনাবিয়ার দাদা খেতে খেতে বলে,
-হোয়াট’স ইউর প্রফেশন ইরান?
-গ্রান্ডফাদার আই এম এ বিজনেসম্যান এন্ড এমপি অফ দিস এরিয়া।
-এমপি কি?
ইরানের কিছু বলার আগেই আনাবিয়া বলে,
-ডার্লিং সে এই এরিয়া দেখা শোনা করে, মিনিস্টারের পরে এমপিদের পদ হয়।
-ওহহ!
সবাই চুপ হয়ে যায়। লিলি আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে কিছু একটা ইশারা করে। আনাবিয়া বুঝলো না। লিলি বিরক্ত হয়ে বলে,
-কতদিন হলো তোদের বিয়ের আনা? (লিলি)
-এক মাস হবে। (আনাবিয়া)
-এতো দিন ধরে বিয়ে করেছ অথচ আমাদের বলো নি আনা! (আনাবিয়ার দাদি)
-আসলে কিউটি আমি ভয়ে বলতে পারিনি। (আনাবিয়া)
-অনেক ভালোবাসিস দুইজন দুইজনকে? (আনাবিয়ার দাদি)
ইরান বুঝলো না গ্রান্ডমার কথা। আনাবিয়া নিশ্চুপ হয়ে যায়। একবার ইরানের দিকে তাকিয়ে থমথমে গলায় বলে,
-হ্যাঁ অনেক।
____________________🌸
খাওয়া দাওয়ার পর ঢুকিয়ে আনাবিয়া ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে তাঁদের রুমে যেতে নেয়। ইরান কোথা থেকে উড়ে এসে আনাবিয়ার হাত চেপে ধরে। আনাবিয়া রাগী চোখে ইরানের দিকে তাকায়।
-কী সমস্যা? ছাড়ুন আমাকে।
-এসো আমার সাথে।
-যাবো না কোথায়ও আপনার সাথে।
ইরান এবার আশেপাশে চোখ বুলিয়ে কোলে তুলে নেয় আনাবিয়াকে। আনাবিয়া বিস্ময়বিমূঢ়। ছাড়া পাওয়ার জন্য ইরানের বুকে কিল ঘুষি দিতে থাকে। কিন্তু ইরান ছাড়ে না। নিজেদের রুমে নিয়ে এসে ধীরে সুস্থে বিছানায় বসিয়ে দেয়। ইরান খুঁজে একটা স্প্রে নিয়ে আসে। আনাবিয়া চোখ ছোট ছোট করে ইরানের কাজ দেখছে। আনাবিয়া থেকে একটু দূরে বিছানায় বসে ইরান। আনাবিয়ার আঘাত প্রাপ্ত পা নিজের কাছে নিয়ে নেয়। আনাবিয়া ভড়কে বলে,
-কী করছেন আপনি?
ইরান কিছু বলে না। আনাবিয়ার পায়ে স্প্রে করে দেয়। তারপর যত্ন করে পা মালিশ করে দিতে দিতে বলে,
-আঘাত আমি দেবো আবার মলমও আমিই লাগাবো। কাঁদাবো আমি আবার আমিই হাসবো। ব্যাথা আমিই দেবো আবার আদরও আমিই করব। প্রেমিক না হলাম, ভিলেন হয়েই রইলাম তোমার জীবনে।
আনাবিয়ার দাদি আনাবিয়ার সাথে দেখা করতে ওর রুমে এসেছিল। দুইজনকে একসাথে দেখে আর ভিতরে ঢুকেনি। ইরানের ব্যবহার দেখে খুশিতে মন ভরে যায় তার। কিছু সময় পর আনাবিয়া ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে গেস্ট রুমে আসে। তার দাদা দাদি এখন রেস্ট করছে। আনাবিয়া প্রথমেই লিলির সাথে একচোট ঝগড়া করে নেয়। লিলি অপরাধী ভঙ্গিতে বলে,
-বিশ্বাস কর আমি বলতে চায়নি। গ্রান্ডমার সাথে কথা বলতে বলতে মুখ দিয়ে বেরিয়ে গিয়েছে তোর বিয়ের কথা। (লিলি)
আনাবিয়া রাগী চোখে লিলির দিকে তাকিয়ে বলে,
-তুই আর কিছু বলিসই না লিলি। (আনাবিয়া)
-যাই বলিস তোর হাসব্যান্ড কিন্তু একদম চকলেট বয় আনাবেবি! এতো সাদা চামড়া দেখতে দেখতে আমি বিরক্ত। শেষমেষে নিজের বেস্টফ্রেন্ডের হাসব্যান্ড এর ওপর ক্রাশ খেলাম! (লিলি)
-ইউ টু মাচ লিলি! যাকে দেখিস তাকেই তোর ভালো লাগে! (লুকাস)
লুকাসের কথায় সবাই শব্দ করে হেসে দেয়। শুধু হাসি নেই জোবানের মুখে। ইভানা হাসি থামিয়ে বলে,
-বাট সিরিয়াসলি আনা, ইরান ইস সো হট এন্ড চাম!(ইভানা)
-শাট আপ ইভানা। (আনাবিয়া)
ক্রিস আনাবিয়ার রিঅ্যাকশন দেখে হাসে। আনাবিয়াকে রাগানোর জন্যে বলে,
-আর ইউ জেলাস আনা ডার্লিং? (ক্রিস )
আনাবিয়া ভেবছেঁকা খেয়ে যায়। আমতা আমতা করে বলে,
-নট এট অল ক্রিস। আই এম জাস্ট ইরেটেড। (আনাবিয়া)
-ওয়েল। (ক্রিস)
জোবান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। বিরক্ত হয়ে চেঁচিয়ে বলে,
-আনা তুই তাকে ডিভোর্স কবে দিচ্ছিস?
-আমি ডিভোর্স চাচ্ছি বাট সে দিচ্ছে না। (আনাবিয়া)
-কেনো দেবে না! এটা জাস্ট এক্সিডেন্টলি বিয়ে হয়েছে। তার উচিত তোকে ডিভোর্স দিয়ে দেওয়া। (জোবান)
-ডিভোর্স দেক বা না দেক তোর তাতে কি জোবান? আই থিঙ্ক ইরান ব্রো লাভ আনা। (লুকাস)
-বাজে বকিস না লুকাস। আর আনা তাকে ডিভোর্স দিয়ে আমাদের সাথে রাশিয়া চলে যাবে।(জোবান)
-ডিভোর্স দেওয়া এতো সহজ নয় জোবান। সে যদি না দেয় আমি জোর করতে পারব না। (আনাবিয়া)
-হ্যাঁ সেটাই। আর তুই এতো জোর কেনো করছিস জোবান? (লিলি)
জোবান অসহায় ভঙ্গিতে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। নবজাতক হয়ে বলে,
-ইউ অল নো আই লাভ আনা। আই ক্যান্ট শি আনা উইথ আদার!
লিলি শান্ত স্বরে বলে,
-কিছু করার নেই জোবান। আনা এখন ম্যারিড। ওকে মন থেকে ভুলে যা।
জোবান কিছু বললো না। আনাবিয়া গম্ভীর মুখে বলে,
-শি জোবান, আমি আগেও তোকে বলেছি এখনও বলছি তুই আমার অনলি ফ্রেন্ড নট এনিথিং। যদি ইরানের সাথে আমার ডিভোর্স হয়ে যায় তবুও আমি তোকে বিয়ে করব না। আমি এমন একজনকে চাই যে পিওর হবে। স্ট্রং চরিত্রের হবে। যার চোখ আমাকে ছাড়া আর কোনো মেয়েকে খুঁজবে না। যার সামনে হাজারো মেয়ে নগ্ন হয়ে বসে থাকলেও তার নজর ড্রেস পরা আমার দিকেই থাকবে। কিন্তু তুই! কতশত মেয়ের সাথে রাত কাটিয়েছিস মনে আছে তোর? এখন কয়দিন আমাকে ইমপ্রেস করতে ভালো সাজবি কিন্তু দেখা যাবে বিয়ের পর আবার চেঞ্জ হয়ে গিয়েছিস। তাই আমরা ফ্রেন্ডই ভালো। প্লিজ বেড়াতে এসেছিস মুড খারাপ করিস না।
-আই লাভ ইউ আনা। (জোবান)
-বর্তমান যুগে ভালোবাসাটা হলো জাস্ট ড্রামেটিক। বুঝলি? এক দেখায়ই কত মানুষ ভালোবেসে ফেলে। কিন্তু পরে যেয়ে দেখা যায় সেই ভালোবাসাই কাল হয়ে দাঁড়ায়! তাই আমার ভালোবাসা চাই না। শুধু একজন চরিত্রবান জীবন সঙ্গী চাই। সে যদি সৎ চরিত্রের হয় আর লয়াল হয় তাহলে ভালোবাসা ছাড়াই আমি তার সাথে পুরো জীবন পাড় করতে রাজি।
আনাবিয়ার কথায় সবাই নিশ্চুপ হয়ে যায়। লিলি নীরবতা কাটিয়ে বলে,
-তো গ্রান্ডমাদের এখন কিভাবে বলবি সত্যিটা?
-ভাবছি তোরা যতদিন এখানে থাকবি ততদিন নরমাল হাসব্যান্ড ওয়াইফের নাটক করব। (আনাবিয়া)
-উম ইটস্ এনজয়বল! (ইভানা)
ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলে আনাবিয়া দাদা দাদিকে দেখতে আসে। দাদির কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে শুয়ে কথা বলছে সে। দাদিমা মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,
-ইরানকে আমার বেশ পছন্দ হয়েছে। ওকে যতটুকু দেখলাম তোমার প্রতি ভীষণ পসিটিভ সে।
আনাবিয়া ধীর কণ্ঠে বলে,
-হ্যাঁ, পসিটিভ!
-জানো তো আনা, বিয়ের পর কিন্তু স্বামীই সব। স্বামীর বাড়িতে থাকা মেয়েদের জন্য একটা সম্মানের বিষয়। কখন স্বামীর কথা অমান্য করবে না।
-উফফ কিউটি তুমিও বড়দের ডায়ালগ দিচ্ছ!
-হ্যাঁ দিচ্ছি তোমার শুনতেও হবে। যাক তাহলে আমাদের জীবনের শেষ কাজ পূর্ণ হলো। তোমাকে একজন যোগ্য পুরুষের হাতে তুলে দিতে পেরেছি আর কি লাগে।
-হুম।
-স্টাডি করবে না আর বিউটিফুল? (আনাবিয়ার দাদা)
আনাবিয়া উঠে বসে। ক্লিপের সাহায্যে চুলগুলো বেঁধে নেয় উদাসীন হয়ে বলে,
-আমার স্বপ্ন আর পূরণ হচ্ছে না গ্রান্ডফাদার। আমি আর স্টাডি করব না।
_____________________🌸
রাতে সবাই মিলে গার্ডেনে চেয়ার পেতে বসে আড্ডা দিচ্ছে। মেঘলা আকাশ। মৃদু বাতাস। ইরান জরুরি কাজে একটু অফিসে গিয়েছিল। কয়েক ঘন্টার মধ্যেই আবার ফিরে এসেছে। এখন ইরান চুপ করে এক কিনারে বসে আছে। আনাবিয়া তার ফ্রেন্ডদের সাথে অনবরত কথা বলেই চলছে। আনাবিয়ার দাদি দাদার কোমর ব্যাথা করছিল তাই তারা দুইজন রেস্ট করতে ভিতরে চলে যায়। লিলি আর ইভানা বসা থেকে উঠে ইরানের পাশে এসে বসে। দুইজনের মুখেই শয়তানি হাসি। ইরান একটু ঠিক করে বসে। আনাবিয়ার সেদিকে খেয়াল নেই। লুকাসের সাথে অনেক ইম্পরট্যান্ট কথা বলতে ব্যস্ত সে। লিলি গোমড়া মুখে বলে,
-ইটস্ ভেরি ব্যাড ব্রো! আমি খেয়াল করছি আপনি আমাদের দিকে চোখ তুলে তাকাচ্ছেন না। কারণটা জানতে পারি? (লিলি)
ইরান আনাবিয়ার দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। মৃদু হেসে বলে,
-আপনাদের ফ্রেন্ডের জাদু বুঝলেন? তাকে বেতীত অন্য কারো দিকে তাকাতে কেমন জানো দ্বিধাবোধ হয়। যেখানে সে থাকে সেখানে শুধু তার দিকেই নজর আটকে যায়।
ইভানা মুগ্ধ হয়ে যায়। খুশি হয়ে বলে,
-হাও সুইট! ভালোবেসে ফেলেছেন তাকে?
-অনেক বেশি! (ইরান)
-আনা অনেক নরম মনের মানুষ। ওর মন জিততে আপনার বেশি সময় লাগবে না ব্রো। (ইভানা)
-ইভানা ইস রাইট ব্রো। আপনি ওকে ইমপ্রেস করার চেষ্টা করুন আমরা আছি পাশে। (লিলি)
-নরম মনের মানুষ! তার দিন শুরু হয় আমার সাথে ঝগড়া করতে করতে!(ইরান)
লিলি হাসতে হাসতে বলে,
-ও একটু এইরকমই। কলেজের অনেক ছেলে ওর পিছনে ঘুরত। আনার এক ধমক শুনে দ্বিতীয়বার ঐ ছেলে আর তার চোখের সামনে আসতো না।
ইরান এক দৃষ্টিতে আনাবিয়ার পানেই তাকিয়ে রইলো। অস্পষ্ট স্বরে বলে,
-আমার বাঘিনী।
কথায় কথায় হঠাৎ জোবান আনাবিয়ার এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় পুরে নেয়। জোবানের এইরকম আচরণ পছন্দ হলো না আনাবিয়ার। ইরানও বিষয়টা লক্ষ্য করে। চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায় তার। হাত মুঠি করে বসে রইলো। আনাবিয়া জোবানের হাত থেকে নিজের হাত সরিয়ে নেয়। ধীরে ধীরে বলে,
-জোবান প্লিজ এইরকম আচরণ করিস না। ইরান এইসব পছন্দ করে না।
-ঐ ইরান তোর নামের মাত্র হাসব্যান্ড বুঝতে পেরেছিস আনা? কিসের এতো অধিকার ওর তোর ওপর? (জোবান)
-আর একটা কথাও বলিস না তুই। (আনাবিয়া)
দুইজন ভৃত্য সবার জন্য গরম গরম ধোঁয়া উঠা কফি আর কিছু স্নাক্স নিয়ে আসে। আনাবিয়া সবাইকে দেওয়ার জন্য বসা থেকে উঠতে নেবে তার আগেই ইরান দাঁড়িয়ে যায়। আদুরে ভঙ্গিতে বলে,
-ডিয়ার তুমি শান্তিটে বসো। আমি সবাইকে দিচ্ছি।
লুকাস মজার ছলে সিটি বাজায়। লিলি আপসোস স্বরে বলে,
-আমিও এই দেশের ছেলে বিয়ে করতে চাই। ব্রো ঠিক আপনার মতো একজন ছেলে আমাকে খুঁজে দেবেন। (লিলি)
-ঠিক আছে লিলি। (ইরান)
ইরান ভৃত্যদের থেকে কাপ নিয়ে সবাইকে সযত্নে দিচ্ছে। আনাবিয়া স্মিত হেসে ইরানের কাজ দেখছে। সবাইকে দেওয়া হলে শেষে ইরান জোবানের কাছে আসে। সবার আড়ালে তার মুখে বাঁকা হাসি ফুটে উঠে। ফোনে নজর রেখে জোবান কাপ নেওয়ার জন্য হাত আগে বাড়ায়। ইরান ইচ্ছেকৃত ভাবে গরম কফি জোবানের হাতে ঢেলে দেয়। ঠিক যে হাত দিয়ে আনাবিয়াকে ছুঁয়েছিল। জ্বালাপোড়া অনুভব হতেই ধরফড়িয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়ায় জোবান। লিলি, ইভানা দৌড়ে আসে। আনাবিয়া জোবানের হাত দেখে আতকে উঠে। সাথে সাথেই ঠোসা পরে গিয়েছে হাতে। ইরান দুঃখিত কণ্ঠে বলে,
-সো সো সরি জোবান। আমি আসলে খেয়াল করিনি।
জোবান আড়চোখে ইরানের দিকে তাকালো। শান্ত স্বরে বলে,
-আপনার উচিত ছিল দেখে শুনে কাপ দেওয়া।
-হ্যাঁ তোমারও ভুল জায়গায় হাত দেওয়া উচিত হয়নি জোবান। (ইরান)
জোবান সহ সবাই চমকায় ইরানের কথা শুনে। জোবান আশ্চর্য হয়ে প্রশ্ন করে,
-মানে?
-মানে গ্লাসের ধরনিতে ধরার দরকার ছিল। কিন্তু তুমি তো সাইড দিয়ে ধরেছো তাই তোমার হাতে কফিগুলো পরে গেলো। ভীষণ দুঃখিত আমি।
আনাবিয়া সন্দীহান দৃষ্টিতে ইরানের দিয়ে তাকিয়ে জোবানকে নিয়ে ভিতরে চলে যায়। সবাই যেতে ইরান নিজের কফির গ্লাস নিয়ে আয়েস করে চেয়ারে বসে পরে। কফিতে চুমুক দিচ্ছে আর মনের আনন্দে গুনগুন করে গান গাইছে। হঠাৎই একা একাই হাসতে হাসতে বলে,
-প্রেমিক হওয়া সহজ বাট ভিলেন হওয়া কঠিন। আর ভিলেনের চরিত্র আমার একটু বেশিই প্রিয়।
>>>চলবে।
#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)
#পর্ব ১৪
রাত ১২ টা। বাহিরে বৃষ্টি হচ্ছে। ছন্দময় বর্ষণের শব্দ বেশ উপভোগ করছে ভিনদেশিরা।
ইভানা আর লিলিকে যে রুমে থাকতে দেওয়া হয়েছে সেই রুমে এসে বসে আছে আনাবিয়া। বেলকনিতে বসে বর্ষণ মুখর পরিবেশ দেখছে। ইভানা নীরবতা কাটিয়ে বলে,
-ইরান ব্রো ইন লাভ উইথ ইউ। (ইভানা)
-আই নো। (আনাবিয়া)
লিলি চমকিত কণ্ঠে বলে,
-জানিস তাহলে তাকে এক্সসেপ্ট করে নে। দুইজন হ্যাপিলি সংসার কর। (লিলি)
-আমার তাকে পছন্দ না লিলি। সে অনেক বাড়াবাড়ি করে যেটা আমার ভালো লাগে না। (আনাবিয়া)
-ওয়েট, তোরা কী রাতে একসাথে থাকিস? (লিলি)
-হুম। (আনাবিয়া)
-এখন পর্যন্ত তোদের মধ্যে কিছু হয়নি? (লিলি)
-নোপ্। (আনাবিয়া)
ইভানা জানো আকাশ থেকে পরে আনাবিয়ার কথা শুনে। আশ্চর্য হয়ে বলে,
-লাইক সিরিয়াসলি! আমি যদি এইরকম একটি ছেলের সাথে রাতে থাকি তার অনুমতি না নিয়ে আমিই আগে তার ওপর ঝাঁপিয়ে পরব।
-আমিও। তুই নাহয় নিরামিষ। বাট ইরান ব্রো? সেও কী তোকে জোর করে না? হাও ক্যান ইট পসিবল?(লিলি)
আনাবিয়া পরিহিত স্ক্যাফে আঙুলে পেঁচাতে পেঁচাতে মিনমিনে কণ্ঠে বলে,
-না সেও আমাকে জোর করে না। এমন কী এখন পর্যন্ত অকারণে সে আমাকে টাচও করেনি।
-ইম্পসিবল! (ইভানা)
-গার্ল’স গার্ল’স লিসেন্ট, ইটস্ নট রাশিয়া ওকে। এখানে ঐসব সম্পর্ককে সবাই অনেক সিরিয়াসলি নেয়। বিয়ের আগে ছেলে মেয়েদের সে*ক্স করা মানে রে*প হিসেবে ধরা হয়। তাঁদের জন্য শাস্তি বরাদ্ধকৃত। বিয়ের পরও স্বামীরা স্ত্রীর অনুমতি না নিয়ে আগে বাড়তে পারে না। তাঁদের অনেক কন্ট্রোল স্লিক আছে। বুঝলে?(আনাবিয়া)
-ওওও! তুই দেখি বাংলাদেশে এসে এখানকার অনেক কিছুই জেনে গিয়েছিস!(ইভানা)
-ইয়েস। তোদের জন্য এই দেশ ভয়ংকর।(আনাবিয়া)
-ট্রু। (ইভানা)
আনাবিয়া বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। পরিহিত লেডিস টি-শার্ট টেনে নিচে নামিয়ে নেয়। যাওয়ার জন্য উদ্যত হয়ে বলে,
-আমি তাহলে যাই। তোরা শুয়ে পর। পাশেই আমার রুম কিছু দরকার পরলে জাস্ট একবার মেসেজ করবি। ওকে?
-ঠিক আছে। গুড নাইট। (লিলি)
-হ্যাভ এ সুইট ড্রিম। (ইভানা)
গেস্ট রুম থেকে বেরিয়ে ধীর পায়ে হাঁটতে হাঁটতে নিজেদের রুমে আসে আনাবিয়া। পুরো রুমে চোখ বুলিয়ে দেখে কারো অস্তিত্ব নেই রুমে। আনাবিয়া কপাল কুঁচকায়। দরজা খুলে রুমের সাথে এটাচ ছাদে আসে। ইরানের এই বাড়িতে দুইটা ছাদ বলা যায়। রুমের সাথে বেলকনি একটু বেশিই জায়গা নিয়ে খোলামেলা ছাদের মতোই। কয়েকটা জেসমিন ফুলের গাছ আর কিছু ক্যাকটার্স এর সমহান। ছোটোখাটো একটি সুমিংপুল। অনেকটা বিদেশী বাড়ির স্টাইলে বানানো রুমটা। আনাবিয়া সেখানেও উঁকি দেয়। তুলুম বেগে বর্ষণ হচ্ছে। ভিজে সেঁতসেঁতে ছাদ। জেসমিন ফুলের একটা মিষ্টি সুবাস আসছে। পানিতে বৃষ্টির ফোটা গুলো কত সুন্দর দেখাচ্ছে! আনাবিয়া বিরক্তিতে মুখ ফুলায়। দু হাত কচলাতে কচলাতে রুমের বাহিরে আসে। আবছা আলোয় ভুতের মতো হাঁটতে হাঁটতে ড্রইংরুমে আসে। এখানেও কাউকে না দেখে মনে সাহস জোগাড় করে সদর দরজা খুলতে উদ্যত হয়।
-হোয়ার আর ইউ গো ডিয়ার?
পিছন থেকে অতি পরিচিত মানুষটির কণ্ঠস্বর শুনে থেমে যায় আনাবিয়া। সহসা পিছনে ফিরে ইরানের হাসি হাসি মুখমন্ডল দেখতে পায়। চমকে বলে,
-আপনি কোথায় ছিলেন?
-খুঁজছিলে আমায়?
ইরান দু পা আগে বাড়ায়। আনাবিয়ার একদম নিকটে এসে থেমে যায়। আনাবিয়া ড্রিমলাইটের মৃদু আলোয় ইরানকে এতো স্মুখীন দেখে সরে যেতে নেয়। কিন্তু ইরান তার আগেই নিজের একহাতের সাহায্যে আনাবিয়ার বাঁকা কোমর চেপে ধরে। আনাবিয়া ভড়কে গিয়ে বলে,
-আমি ভাবলাম বাতাস আবার আপনাকে উড়িয়ে নিয়ে গেলো না তো! তাই আপনাকে খুঁজছিলাম। এর বাদে অন্য কোনো কারণ নেই।
ইরান ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসে। দৃষ্টি স্থির করে আনাবিয়ার অগোছালো চাহনিতে। স্মিত হেসে বলে,
-বাতাসেরও এতো শক্তি নেই তোমার হাসব্যান্ডকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে।
-ভালো। ছাড়ুন।
-আমি ধরলেই শুধু ছাড়ুন ছাড়ুন বলো কেনো? হোয়ায়?
-আমার ঘুম আসছে আমি ঘুমাবো।
-ডিয়ার বাই এনি চান্স তুমি কী আমার প্রেমে পরে গিয়েছো? না মানেই এতো চিন্তিত হয়ে আমাকে খোঁজার তাগিদায় লেগেছ?
-ননসেন্স কথাবার্তা! আমায় পাগলে ধরেছে আপনার প্রেমে পরব?
-আমিও সেটাই বলি হঠাৎ আমার ডিয়ার ওয়াইফকে এইরকম পাগল পাগল কেনো দেখাচ্ছে!
আনাবিয়া ইরান থেকে নিজেকে ছাড়ানোর প্রয়াস করে চলছে। ইরান আরো শক্ত করে নিজের সাথে চেপে ধরে আনাবিয়াকে। ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে,
-এই এলোমেলো কেশ, লাজে রাঙা মুখশ্রী, বার বার ঝুঁকে পরা মায়াবী আঁখিজোড়া, মৃদু কেঁপে কেঁপে উঠা কোমল কায়া, সব কিছুই আমাকে গভীর ভাবে আকর্ষিত করে। তারপর আবার যদি হয় আইনগত বিবাহিত সহধর্মিনী তাহলে বেপারটা আরো ভয়ংকর হয়ে যায়!
আনাবিয়া স্বাভাবিক ভাবেই ইরানের চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সে জানো আজ ইরানের কথায় নিজের অস্তিত্বের কথা ভুলেই গেলো। আপনা আপনিই তার এক হাত ইরানের কাঁধের ওপর চলে যায়। ইরান মুগ্ধ হয়ে আনাবিয়ার চোখের সামনে থেকে চুলগুলো সরিয়ে দেয়। আনাবিয়ার নরম তুলতুলে গালে হাত বুলাতে বুলাতে ইরান বলে,
-ঠান্ডা রোমাঞ্চকর আবহাওয়া, বর্ষণের এই রিমঝিম সুর, তার ওপর তোমার এই বিমোহিত চাহনি আমাকে বড্ড বেসামাল করে তুলছে।
-আপনি ইচ্ছেকৃত জোবানের হাতে কফি ফেলেছেন ইরান?
-হুম, যে তোমার দিকে হাত বাড়াবে তার সাথে ঠিক এইরকমই হবে। হোক সে ছেলে বা মেয়ে। তোমাকে গভীর থেকে গভীর ভাবে ছোঁয়ার অধিকার শুধুই আমার।
আনাবিয়া আশ্চর্য হয়ে বলে,
-মেয়ে টাচ করলে প্রবলেম কোথায়?
-জানি না। আমার জাস্ট অসহ্য লাগে যখন তোমাকে কেউ টাচ করে। গ্রান্ডমা দেন তোমার ফ্রেন্ডরা তোমাকে টাচ করে তখনও আমার ভিতরের সত্ত্বা ভয়ংকর হয়ে যায়। অগ্নিগোলার মতো টগবগ করে।
ইরানের উক্তি পছন্দ হলো না আনাবিয়ার। কোমর থেকে ইরানের হাত সরিয়ে সিঁড়ি বেয়ে ওপরে চলে যায়। ইরানও আর দাঁড়ালো না। আনাবিয়ার পিছু পিছু চলতে লাগলো।
দু’তালার বারান্দায় দাঁড়িয়ে এতক্ষন সবটা পরোক্ষ করছিল জোবান। তাঁদের মধ্যে হওয়া সংলাপ শুনতে পারেনি তবে তাঁদের সনিকট আসতে দেখেছে। কিভাবে দুইজন দুইজনের সাথে লেপ্টে ছিল! জোবান রাগে দুঃখে নিজের চুল নিজেই চেপে ধরে। বিড়বিড় করে বলে,
-আই এম নট লিভিং ইউ আনা। ইউ আর মাই। অনলি মাই।
____________________🌸
ঘুম ভাঙতেই আরমোড়া দিয়ে উঠে বসে আনাবিয়া। পাশে তাকাতেই দেখে ইরান আয়নার স্মুখীন দাঁড়িয়ে তৈরি হচ্ছে। আনাবিয়া কিছু বললো না। বিছানা থেকে নিচে নামতে যাবে এমন সময় ইরান বলে,
-আমি আজ দুপুরে আসব না।
-কেনো?
-একটু দূরে যাওয়া লাগবে তাই। রাতে আসবো বাসায়।
-ঠিক আছে।
-নিজের খেয়াল রাখবে। পায়ে স্প্রে দিও আর হ্যাঁ জোবান থেকে দূরে থেকো।
আনাবিয়া মুখ বাঁকায়। খাপছাড়া হয়ে বলে,
-না জোবানের কোলে যেয়ে বসে থাকবো।
ইরানের মুখে ভাবভঙ্গি কঠিন হয়। দৃঢ় কণ্ঠে বলে,
-শয়তানি করেও এইরকম কথা দ্বিতীয়বার আর মুখে এনো না। সর্বনাশ হয়ে যাবে।
🌸
আজ সকালে হালকা বৃষ্টি থাকলেও বিকেলে বৃষ্টি কমেছে। অত্যাধিক সুন্দর আবহাওয়া দেখে আনাবিয়া সবাইকে নিয়ে ঘুরতে বের হয়। তিনদিন পর চলে যাবে সবাই। আনাবিয়ার ফ্রেন্ডদের সামনে এক্সাম। তাই আর চাইলেও বেশিদিন থাকতে পারবে না। আনাবিয়া তার দাদা দাদির সাথে এটা সেটা নিয়ে কথা বলছে আর হাঁটছে। জোবান আড়চোখে আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে ওর পাশে আসে। অনুনয়ী কণ্ঠে বলে,
-আই এম এক্সট্রিমলি সরি আনা। কালকে একটু বেশিই বলে ফেলেছি তোকে।
-ইট’স্ ওকে। তুই নিজের ভুল বুঝতে পেরেছিস এটাই অনেক।
-ধন্যবাদ। একটা কথা জিজ্ঞেস করি?
-হ্যাঁ অবশ্যই?
-তুই আর ইরান একসাথে থাকিস? আই মিন রাতে এক রুমে ঘুমাস?
আনাবিয়া থমথমে গলায় বলে,
-হ্যাঁ।
-ওহহ!
-ইরান লোকটাকে আমি যতটা খারাপ ভাবি সে ততটাও খারাপ নয়। কয়দিন তার সাথে থাকতে থাকতে ভালোই চিনেছি তাকে।
-আবার ভালো টালো বেসে ফেললি না কি?
-না। এটা সম্ভব নয়।
আনাবিয়া সবাইকে তার খালামুনির বাসায় নিয়ে যায়। আপ্যায়নে ব্যস্ত হয়ে পরে জয়তি। কিছুক্ষন সেখানে থেকে সন্ধ্যার দিকে বাসায় আসে তারা।
অন্যদিকে চিন্তিত হয়ে অফিসে নিজের ক্যাবিনে বসে আছে তনুসফা। মন্ত্রী সাহেব ইরানের বিয়ের জন্য তাড়া দিচ্ছে। কিন্তু বিয়ে কিভাবে হবে! ইরান তো অলরেডি বিবাহিত! আর যদি বিয়ে না হয় তাহলে সে খারাপ হয়ে যাবে মন্ত্রীর চোখে। চিন্তায় মাথা ফেটে যাচ্ছে তার। এমন সময় তাড়াহুড়ো করে ক্যাবিনে প্রবেশ করে ইরান। চোখ মুখে তার রাগের আভাস। তনুসফা হঠাৎ ইরানকে তার অফিসে দেখে বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। ইরান রেগে কিছু ফাইল ছুঁড়ে মারে টেবিলের ওপর। চিৎকার করে বলে,
-আমার অনুমতি ছাড়া আপনি কিভাবে একজনের সাথে আমার বিয়ের ওয়াদা দেন তনুসফা শেখ?
তনুসফা ভীত হয়ে যায়। এই প্রথম ইরান তার সাথে রাগ দেখিয়ে চিৎকার করে কথা বলছে। মৃদু স্বরে বলে,
-আমি আমাদের ভালোর জন্যই এমনটা করেছিলাম ইরান ভাই আমার।
-এখানে আমি কোনোরকম ভালো দেখছি না। আপনি কি জানেন না আমি বিবাহিত? জানার পরও কিভাবে আপনি মন্ত্রীর মেয়ের সাথে আমার বিয়ে ঠিক করেন? জ্ঞান বুদ্ধি বলতেও কিছু আছে আপনার?
-মন্ত্রীর মেয়েকে বিয়ে করলে তোমারও অনেক লাভ ইরান। রইলো ঐ অকর্মা মেয়ে! ওকে ডিভোর্স দিয়ে দেবে তাহলেই তো হয়।
-আর ইউ ম্যাড আপা? আমি ওকে ডিভোর্স দিতে পারব না। আপনি নিজ দায়িত্বে মন্ত্রীকে বলে দিবেন আমি বিবাহিত।
-কেনো তোমার ঐ মেয়েকে ডিভোর্স দিতে সমস্যা কোথায়? এমনেও ঐ মেয়ে ইসরাফ কে ভালোবাসে। ইসরাফ সুস্থ হয়ে গেলে ও তো তোমাকে খারাপ ভাববে! বলবে তুমি ইচ্ছে করে ওর ভালোবাসাকে ছিনিয়ে নিয়েছো। দন্ড ছাড়া কিছুই হবে না ইরান।
ইরান তনুসফার কথা শুনে আরো রেগে যায়। টেবিলের ওপরে বারি দিয়ে চিৎকার করে বলে,
-আমি পারব না ওকে ডিভোর্স দিতে। যদি এটা নিয়ে ইসরাফের সাথে আমার দন্ড হয় তাহলে হবে।
-কেনো পারবে না? বলো ইরান কেনো পারবে না?
-আমি আনাবিয়াকে ভালোবাসি। সবাইকে ছাড়তে পারব কিন্তু ওকে পারব না।
-তুমি ভালোবাসার মানুষ পেলে না?
-কাকে ভালোবাসব আর কাকে ঘৃণা করব ইটস্ মাই চয়েস। আশা করি দ্বিতীয়বার আমার লাইফে ইন্টারফেয়ার করবেন না আপনি।
গটগট করে বেরিয়ে যায় ইরান। বাহিরে দাঁড়িয়ে ছিল তাজীব। ইরানকে এভাবে রেগে যেতে দেখে একটু ভীত হয় সে। দ্রুত করে ইরানের পিছু পিছু যেতে থাকে। গাড়ির ভিতরে বসে বড় করে নিঃশাস নেয়। তাজীব নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছে। ইরান অশান্ত কণ্ঠে বলে,
-আমি বুঝি না সবাই কেনো আমার আনাবিয়ার পিছনে পরে আছে? সমস্যা কী সবার?
তাজীব চুপচাপ ড্রাইভ করছে। ইরান নিজেই পুনরায় বলে,
-আই স্যয়ার তাজীব এবার যে আমাদের মধ্যে আসবে সে নিজের মৃত্যুর মুখোমুখি হবে।
-কিন্তু স্যার ইসরাফ স্যার যদি সুস্থ হয়ে ম্যামকে নিয়ে যেতে চায়?
-হাসালে তাজীব।
-জি স্যার?
-যেহেতু আনাবিয়াকে নিজের করতে আমিই ইসরাফের এক্সিডেন্ট করিয়েছি। সেহেতু ওকে নিজের কাছে রাখতে হলে ইসরাফকে মারতেও আমি দু’বার ভাববো না। বুঝলে?
-ম্যাম যদি এটা জেনে যায়?
-একদিন না একদিন জানবেই।
_______________
নিজের জামাকাপড় ভাঁজ করছে আনাবিয়া। ঘুরেফিরে এসে এখন সবাই যার যার রুমে রেস্ট করছে। আনাবিয়া এই সুযোগে আলমিরার এলোমেলো জামাগুলো ভাঁজ করছে। হঠাৎ আনাবিয়ার চোখ যায় আলমিরার ছোট সিন্দুকে। ভ্রু কুঁচকে সেটা খুলে আনাবিয়া। কিছু ফাইল আর কাগজপত্র রাখা। হয়তো ইরানের কাজের। মাথা নিচু করে আনাবিয়া দেখতে পায় সিন্দুকের ভিতরে আরো ছোট একটি ডয়ার। সেটা খুলতেই আনাবিয়া আরো কিছু ফাইল দেখতে পায়। কৌতূহল বসত ফাইল গুলো বের করে। একটার পর একটা মনোযোগ দিয়ে চেক করতে থাকে। একদম শেষ ফাইলের নিচে কয়েকটা ছবি উল্টো করে রাখা। অতি আগ্রহ নিয়ে ছবিগুলো হাতে নেয়। ছবিগুলো সামনের দিকে ঘুরাতেই আনাবিয়ার চোখ কপালে উঠে যায়। জ্ঞানশূন্য হয়ে ভালো করে দেখতে থাকে ছবি গুলো। দুইটা তার মায়ের ছবি। অনেক আগের। তখন হয়তো তার বয়স ১৬ কী ১৫ ছিল। আর তিনটা ছবি ইসরাফের। বিয়ের দু’দিন আগে তার ফোনে কেউ একজন ইসরাফ আর একটা মেয়ের আপত্তিকর কিছু ছবি পাঠিয়েছিল। এই সেই ছবি গুলো। আনাবিয়া কিছুই বুঝতে পারল না। মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খেতে লাগলো।
ঠিক সেই সময়ই রুমে প্রবেশ করে ইরান। কোট খুলে ডিভাইনের ওপরে ফেলে দেয়। শার্টয়ের বোতাম খুলতে খুলতে আনাবিয়ার দিকে অগ্রসর হয়।
-ডিয়ার কী করছো এখানে দাঁড়িয়ে? খালামুনির বাসায় গিয়েছিলে শুনলাম?
-,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,,।
-কিছু হয়েছে? আমার বাঘিনী চুপ কেনো?
আনাবিয়া প্রতিউত্তরে কিছু বললো না। ছবিগুলো সোজা করে ইরানের মুখের সামনে তুলে ধরলো। কিঞ্চিৎ বিরক্তি নিয়ে ইরান ছবিগুলোর দিকে চোখ রাখে। আনাবিয়া দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
-এইসব কী ইরান? আমার মমের পিকচার আপনার আলমিরায় কেনো?
-অনেক আগের ছবি এইগুলো।
-আমি জানি সেটা। এখন বলুন আপনার কাছে কেনো?
ইরান ডিভাইনে বসে। পায়ের জুতো, মোজা খুলতে খুলতে বলে,
-আমি যখন কানাডায় ছিলাম তখন এই ছবিগুলো এরফান শেখ আমাকে পাঠায়। বলেছিল এই সি আই ডি অফিসার তাঁদের অনেক জ্বালাচ্ছে এর একটা ব্যবস্থা করতে হবে। আমাকে দেশে আসতে বলেছিল। আমি সাফ মানা করে দিয়েছিলাম। কারণ তখন আমার এক্সাম চলছিল। আর খুন-খারাবির মধ্যে আমি নেই।
-আর ইসরাফের ছবি গুলো?
-আমাকে একজন দিয়েছিল। আমি যাতে আমার ভাইকে অমানুষের থেকে মানুষ বানাই তাই হয়তো কেউ দিয়েছিল।
-সব কী সত্যি বলছেন?
-মিথ্যে বলার কোনো প্রয়োজন তো দেখছি না। আর এইসব বিষয় আমি মিথ্যে বলতে চাইও না।
-সত্যি হলে তো হলোই। আর যদি মিথ্যে হয় তাহলে সেইদিন সি আই ডি অফিসার তন্নী ফারুকের মেয়ে আনাবিয়া সাবরিনের সাথে পরিচিত হবেন ইরান।
>>>>চলবে।