Sunday, October 5, 2025







সে প্রেমিক নয় পর্ব-১০

#সে_প্রেমিক_নয়
#Mehek_Enayya(লেখিকা)

#পর্ব ১০

আলিশান রেস্টুরেন্টের রুফটপে বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে ইরান। বেশ কিছুদিন পর আজ বন্ধুদের সাথে দেখা করার সুযোগ পেলো। সবাই নিজেদের পার্সোনাল লাইফ নিয়ে কথা বলছে ইরান শুধু শুনছে। এখানে ইরানের ছয় জন ফ্রেন্ড উপস্থিত। সকলেই ম্যারিড। দুইজনের বাদে সবারই বাচ্চাকাচ্চা আছে। ইরান আলুথালু হয়ে গোমড়া মুখে বসে আছে। ইরানের বেস্টফ্রেন্ড এন্ড চাইল্ডহুড ফ্রেন্ড মুয়িব আর মেহমেদ। কিছুক্ষন ধরেই তারা বন্ধুকে লক্ষ্য করছে। কোনো কারণ ছাড়া ইরান এইরকম গোমড়া মূখ হয়ে থাকে। এখন সবার মাঝে কিছু জিজ্ঞেস করতে দ্বিধাবোধ করছে মুয়িব। হাসি ঠাট্টার মাঝেই মেহমেদ বলে,

-ইরান দোস্ত একটু এখানে আয় তো তোকে একটা জিনিস দেখাবো। (মেহমেদ)

-কী? (ইরান)

-এতো কথা বলিস কেন সা*লা চুপচাপ আসতে পারিস না?(মুয়িব)

ইরান বসা থেকে উঠে দাঁড়ায়। পাঞ্জাবী ঠিক করে তাঁদের সাথে অন্য সাইট যেয়ে দাঁড়ায়। সময় সুযোগ পেয়ে দুইজন ঘিরে ধরে ইরানকে। মুয়িব জহুরি দৃষ্টিতে ইরানের দিকে তাকিয়ে বলে,

-এখন বল কী হয়েছে? মুখ এইরকম লটকিয়ে রেখেছিস কেনো? (মুয়িব)

-কী হবে আবার! কিছু হয়নি। (ইরান)

-এখান থেকে লা*ত্থি দিয়ে নিচে ফেলে তোর বিদেশীনিকে কিন্তু একদম বিধবা করে দেবো বলে দিলাম। জলদি বল কী হয়েছে? (মেহমেদ)

ইরান নিঃশাস নেয়। এদের থেকে সে এই জীবনে কিছু লুকাতে পারেনি আর না কখন পারবে।

-আমার কী হয়েছে আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। কয়েকদিন ধরে আমার কেমন জানো ফিলিংস হচ্ছে। কোনো কাজে মন বসছে না। আজও সবাই সুন্দর ভাষণ দিয়েছিল যখনই আমি ভাষণ দিতে গেলাম একদম সব কিছু ভুলে আ*বা*লের মতো সবার দিকে তাকিয়ে রইলাম। আমার নিজেকে নিজের পাগল পাগল মনে হচ্ছে। মাথায় সারাক্ষন শুধু আনাবিয়া আর আনাবিয়া ঘুরে।

সবটা শুনে মুয়িব একটু ভাবুক হয়ে বলে,

-ইরান আর ইউ ইন লাভ?

-নোহ, ইট নট পসিবল। (ইরান)

-কেনো পসিবল না বল তুই আমারে? আনাবিয়া তোর বিয়ে করা বউ। নিজের বউয়ের প্রতি ফিলিংস অনুভব করবি তো আমার আর মেহমেদের বউয়ের জন্য করবি? (মুয়িব)

-আচ্ছা তোর আনাবিয়াকে কেমন লাগে? ই মিন তার কোন জিনিস অথবা কাজ তোর ভালো লাগে? (মেহমেদ)

-আমার যেটা সবচেয়ে বেশি ভালো লাগে সেটা হলো ওর আঁখিজোড়া। ঐ নয়নে জানো কোনো গভীর রহস্য লুকিয়ে আছে এইরকম লাগে! এক কথায় সর্বনাশী ঐ আঁখিজোড়া।

ইরান আনাবিয়ার বিষয় ভাবছে আর ওর মুখে আপনা আপনিই হাসির রেখা ফুটে উঠে। চোখ মুখ একদম চাঁদের মতো চকচক করছে। মুয়িব হালকা হেসে জিজ্ঞেস করে,

-আনাবিয়াকে সামনের থেকে দেখলে তোর মন কেমন কেমন করে?

-অস্বাভাবিক ভাবে লাফায়। ঠিক যেমনটা বছর আগে কুলসুমকে দেখলে হতো। (ইরান)

-তুই আনাবিয়াকে ভালোবেসে ফেলেছিস দোস্ত। (মেহমেদ )

-আসলেই, কিন্তু এতো জলদি ভালোবাসা কিভাবে সম্ভব? (ইরান)

-আমি যদি এক দেখায় তোর ভাবীর প্রেমে পড়তে পারি তাহলে তুই কেনো দুই সপ্তাহ দেখে তার প্রেমে পড়তে পারবি না?(মুয়িব)

-কিন্তু আমি একটু ভয়ে আছি নিজেকে নিয়ে। আনাবিয়ার সামনে আমার পসিটিভনেস একটু বেশি হয়ে যায়। অল্প বিষয়ে আমার অধিক রাগ উঠে যায়। নিজেকে নিজের তখন হিংস পশু মনে হয় আমার। (ইরান)

-শুন, তুই সবসময় ভালো ভালো চিন্তা করবি। তাহলে এইরকম হবে না আর নিজের রাগ জেদ দমিয়ে রাখবি। (মুয়িব)

-চেষ্টা করব। (ইরান)

-এখন বল ভাবীর সাথে কবে পরিচয় করাচ্ছিস? (মেহমেদ)

ইরান মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে,

-করাব খুব জলদিই দেখা করাব।

-আমরা কিন্তু শুধু ভাবীকে দেখতে চাইছি। তোর হাফ বিদেশী বিদেশী পোলাপানদের সাথে নয়! (মেহমেদ)

মেহমেদের কথা দুইজন হেসে দেয়। ইরান হাসি থামিয়ে আকাশের চাঁদের দিকে তাকিয়ে থাকে।


শুয়ে শুয়ে টিভি দেখছে আনাবিয়া। হাতে কিছু একটা নিয়ে রুমে প্রবেশ করে জেসিকা। আনাবিয়া তাকে দেখে উঠে বসে। জেসিকা হাতের জিনিসটা বিছানায় রেখে পাশেই বসে পরে। আনাবিয়া জিজ্ঞেস করে,

-কী এটা জেসিকা?

-এটায় কিছু গহনা আই মিন জুয়েলারি আছে গোল্ডের আর ডায়মন্ডের। নানীমা আপনাকে দিতে বললো।

-কিন্তু কেনো? আমি এইসব দিয়ে কী করব?

-পরিধান করবে মা।

রাকিয়ার শব্দ শুনে দরজার দিকে তাকায় আনাবিয়া। স্মিত হেসে আনাবিয়ার নিকট এসে বসে। স্নেহে আনাবিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।

-আমার ইসরাফটা অসুস্থ তাই এই কয়দিন হসপিটালে দৌড়াদৌড়ি করতে হলো। নতুন বউয়ের দিকে ঠিক মতো নজরও দিতে পারিনি। মাফ করে দিও মা। আসলে মা তো আমি। ছেলের কষ্ট সয্য করতে পারছিলাম না।

আবাবিয়া চোখ ছোট ছোট করে রাকিয়ার পানে তাকায়। শান্ত স্বরে বলে,

-সমস্যা নেই আন্টি আমি মাইন্ড করিনি।

-শরীর ভালো এখন?

-জি। শুধু একটু মাথা ব্যাথা আছে আন্টি।

-তুমি বিদেশী আমি জানতাম। শুনো আমাদের দেশে শাশুড়িদের আম্মা বা মা বলা হয়। তুমিও যদি আমাকে এইরকম কিছু বলে ডাকো তাহলে অনেক খুশি হবো আমি। হয়তো আপন মায়ের মতো ভালোবাসা দিতে পারবো না তবে চেষ্টা করব।

অন্ধকার নেমে আসে আনাবিয়ার মুখে। কঠিন মুখশ্রী নরম হয়ে যায়। চোখ দিয়ে দু’ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পরে। রাকিয়া ভড়কে যায় আনাবিয়াকে কান্না করতে দেখে। তাড়াহুড়ো করে বলে,

-আচ্ছা সমস্যা নেই তুমি আন্টিই বলো আমি ঐটাতেই খুশি।

-আমি আপনাকে মম বলতে পারি? আমার মাকেও আমি মম বলতাম।

-অবশ্যই। কেনো এখন বলো না?

আনাবিয়া চোখের পানি মুছে মলিন হাসি দেয়। সেই হাসিতে এক আকাশ সমান পীড়া।

-কয়েক বছর আগে গাড়ি এক্সিডেন্টে আমার মা, বাবা, বড় বোন মারা যায়। এই দুনিয়াতে আমার আপন বলতে শুধু দাদা দাদিই আছে। তারাও এখন রাশিয়া।

স্তব্ধ হয়ে যায় রাকিয়া। তারও দুই চোখ ভিজে যায়। আচমকা জড়িয়ে ধরে আনাবিয়াকে। আনাবিয়ার হঠাৎ করে রাকিয়াকে কেমন মা মা অনুভব হয়। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে শব্দ করে কেঁদে দেয়। রাকিয়া আনাবিয়ার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলে,

-এই পরিবারও তো তোমার। আজ থেকে আমি তোমার মা। তোমার সুখ দুঃখে আমি আছি পাশে। আর কখন নিজেকে একা বলবা না। আমার বউ নও ছোট মেয়ে তুমি বুঝলে?

-মায়েরা কিন্তু মেয়েদের তুই বলে।

-ঠিক আছে তুইই বলবো। আজ অনেক গল্প করব তোর সাথে। মাথা না ব্যাথা করছে? আমার পায়ে মাথা দিয়ে শুয়ে পর আমি টিপে দেই।

আনাবিয়া রাকিয়ার কথা মতো পায়ে মাথা দিয়ে শুয়ে পরে। পরম মমতা পেয়ে চোখ বন্ধ করে রাখে। রাকিয়া বলতে শুরু করে,

-মা রে আমি জানি তোদের বিয়েটা একটা দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে হয়েছে। এই সম্পর্কে আগে বাড়াতে একটু সময় লাগবে। যতদিন মন চায় তুই সময় নে। আমার ইরানকে বুঝ, ভালো করে চেন কিন্তু কখন ওকে ছেড়ে যাইস না মা। ছোট কাল থেকেই আমার ছেলেটা অনেক অত্যাচার, অবহেলা, বেইমানি সহ্য করেছে। ও বিয়ে করতে চায়নি নি। আমি নিজেই জোর করে ওকে বিয়ে করিয়েছি। ওকে তুই ভুল ভাবিস না।

-কিসের অত্যাচার আর অবহেলা সহ্য করেছেন তিনি?

-শুন তোকে আজ তোর শাশুড়ির কাহিনী শুনাই। তুই যেমন বিয়ে করে এই বাসায় এসেছিস আমি এমন বিয়ে করে এই বাড়িতে আসিনি। আমি ছোট ঘরের মেয়ে ছিলাম। কিশোরকালে একটু বেশিই সুন্দরী ছিলাম আমি। তোর শশুর মানে এরফান শেখ আমাকে আমার বাসা থেকে জোর করে তুলে এই বাড়িতে নিয়ে আসে। তারা ছিল প্রভাবশালী পরিবার। আমার ভাইকে তিনি মেরে ফেলে নিজ হাতে। বিয়ে না করেই সেদিন সে আমার সাথে রাত কাটায়। বাড়িতে এতো মানুষ ছিল কেউ কিছু বলেনি তাকে। কেউ আটকায় নি। সেদিন রাতে আমি বুঝলাম মেয়ে হয়ে জন্ম নিয়ে কত বড় ভুল করেছি আমি। আমার এতো এতো আতনাদ সেদিন কারো কানে পৌঁছায় নি। এক জঘন্য জানোয়ারের হাতে সেই রাতে আমি আমার সতিত্ব হারালাম।

চুপ হয় রাকিয়া। আনাবিয়া একমনে রাকিয়ার কথাগুলো শুনছিলো। চোখের পানি মুছে রাকিয়া পুনরায় বলা শুরু করে,

-এভাবে একমাস বদ্ধ ঘরে আটকে রেখে আমাকে নির্যাতন করা হয়। হঠাৎ একদিন তনুসফা আমার পেটে আসলো। বাড়িতে সেদিন কালবৈশাখীর ঝড় শুরু হলো! এরফানের বাবা অনেক বকে তাকে। এলাকায় জানাজানি হলে খারাপ দেখায় তাই রাতেই কাজীকে এনে আমাদের বিয়ে পড়িয়ে দেয়। তারপর আমার অত্যাচার জানো বাড়তেই থাকে। আমার শাশুড়ি আমার পাঁচমাস অন্তসত্তা অবস্থায় পেটে ভীষণ জোরে লা*ত্থি দেয়। সেদিন ভেবেছিলাম হয়তো আমার তনুসফা আর বাঁচবে না। কিন্তু আল্লাহ কী কুদরত! কিছু হয়নি তার । এরফান ছিল জঘন্য ব্যক্তি নিজের বাপ ভাইয়ের সামনেই আমাকে পশুর মারতো। এভাবেই অত্যাচারের মধ্য দিয়ে তনুসফার জন্ম হয়। কেউ তেমন আদর করত না আমার তাকে। একেতো মেয়ে হয়েছে তার ওপর আবার বিয়ের আগে পেটে এসেছে। অবহেলায় বড় হয় আমার মেয়ে। তারপর আমার পেটে আসলো ইরান। যেদিন আমার কলিজা জন্ম নিয়েছিল সেদিন সকালেও এরফান আমাকে অনেক মেরেছিল। ইরান জন্ম হলো। ছেলে হয়েছিল দেখে আমার শাশুড়ি তাও একটু কোলে নিতো। ইরানের যখন পাঁচ বছর সেদিন এরফান আমার ছেলেকে অনেক মারে। ওর দোষ ছিল ও বলেছিল বাবা আম্মার সাথে আর ঝগড়া করবা না। বাবার হাতে মার খেয়ে ইরান আর তাকে দেখতে পারতো না। ধীরে ধীরে সময় গেলো। এরফান ছিল চরিত্রহীন। আমার ওপর অত্যাচার করত আবার বাহিরের মহিলার কাছেও যেত। কয়েক বছর পর শুনলাম সে আরেকটা বিয়ে করেছে। ইসরাফ সেই ঘরেরই সন্তান। ইসরাফের বুঝের হওয়ার আগেই ওর মা ক্যান্সারে মারা যায়। তারপর আমিই তাকে বড় করি। এর মধ্যে এক নির্বাচনে বোম ব্লাস্ট হয়ে আমার শশুর, ভাসুর, তার ছেলে এবং বউ মারা গেলো। আমার শাশুড়ি স্বামী আর ছেলে হারিয়ে পাগল হয়ে গেলো। কয়েক বছর আগে সেও মারা যায়। এরফান শেখের বয়স হলেও সে অমানুষই রয়ে গেলো। ছেলেমেয়ে বড় হওয়ার পরও আমাকে মারতো। ইরান অনেক কষ্টে এইসব সয্য করত। কিছুদিন আগে ও নিজেই এরফান শেখের খাবারে বিষ মিশিয়ে তাকে মেরে ফেলে।

আনাবিয়া স্বাভাবিক ভাবেই সব শুনছিলো। এখানের অর্ধেক কথা তার আগেরই জানা তাই অবাক হয়নি।

-বিদেশে পড়তে গিয়েছিল ইরান। সেখানে এক মেয়ের প্রেমে পরে আমার ছেলেটায়। আমার সাথে কথাও বলিয়ে ছিল মেয়ের সাথে। হঠাৎ একদিন সেই মেয়েটা আমার ইয়ানকে ধোঁকা দেয়। অন্য একজনকে বিয়ে করে ফেলে। তারপর থেকেই জানো আমার ছেলে সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেলো। একদম অন্যরকম!

-ওওও!

-হো মা, আমার ছেলেটার একটু খেয়াল রাখিস মা। তুই পারবি ওকে একটু ভালোভাবে দেখে শুনে রাখতে। রাখবি না মা?

আনাবিয়া পরে গিয়েছে বিপাকে। আমতা আমতা করে বলে,

-জি রাখবো মম।

-অনেক ধন্যবাদ মা।

দ্রুত পায়ে রুমে প্রবেশ করে ইরান। মা আর আনাবিয়ার মধ্যে এতো ভাব দেখে কিঞ্চিৎ অবাক হয় সে। পর মুহূর্তে আবার খুশিও হয়।

-গসিপ ওম্যান’স, কী নিয়ে গসিপ চলছে আপনাদের দুইজনের মধ্যে?

চোখ বন্ধ করে রেখেছিল আনাবিয়া। ইরানের কণ্ঠস্বর শুনে চোখ খুলে তাকায়। রাকিয়া মুচকি হেসে বলে,

-আমরা মায় জে কী নিয়ে কথা বলছি এখন সেটাও তোকে বলতে হবে! সবসময় শুধু মহিলাদের কথার মাঝে ঢুকতে চায়!

ইরান মৃদু হাসে। আনাবিয়া উঠে বসে। রাকিয়া ছেলেকে দেখে বিছানা থেকে নেমে যায়। আনাবিয়ার গালে হাত দিয়ে বলে,

-এখন রেস্ট কর আর এই গহনা গুলো সুন্দর করে রেখে দে। কেমন?

-মম তুমি ঐগুলো নিজের সাথে নিয়ে যাও। আমার দরকার পরলে আমি তোমার থেকে চেয়ে নেবো নে।

-না। তোর জিনিস তুই রাখবি। আমি আসি তাহলে?

-আরো কিছুক্ষন বসো।

-আমার কিছু কাজ আছে মা সেটাও করতে হবে।

-ঠিক আছে যাও।

রাকিয়া চলে যায়। ইরান দ্রুত গতিতে দরজা লাগিয়ে দেয়। আনাবিয়ার স্মুখীন এসে বলে,

-তোমার কী মাথার তাড় ছিঁড়ে গিয়েছে?

-মানে কী?

-মানে হলো একটু জ্ঞান বুদ্ধি নেই? আমি রুমে এসেছি এখন কী আম্মায় এখানে থাকবে?

আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে বলে,

-কেনো আপনার সাথে কী মমের ঝগড়া যে আপনি থাকলে সে থাকবে না?

-নির্বোধ! হাসব্যান্ড ওয়াইফের পার্সোনাল বলে কিছু বুঝো তুমি?

-আমাদের রাশিয়া তো হাসব্যান্ড ওয়াইফ ওর গফ বফঁ মাঝ রাস্তায় দাঁড়িয়ে রোমান্স করে। ইটস্ নট এ বিগ ডিল জোকার ইরান শেখ।

-ইটস্ নট রাশিয়া। ইস বাংলাদেশ ওকে?

-হোয়াটেভার।

ইরান কাবাড থেকে ড্রেস বের করতে করতে আনাবিয়াকে বলে,

-ডিড ইউ নো হাও টু মেক কফি?

-ইয়াহ আই নো। বাট হোয়ায়?

-দেন গো মেক ওয়ান কাপ কফি ফর মি।

আনাবিয়া কোমরে হাত দিয়ে মেঝেতে দাঁড়ায়। রাগী চোখে তাকিয়ে বলে,

-পারব না।

-পারতে হবে। জলদি যাও আমি ফ্রেশ হয়ে এসে কফি চাই।

মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি আসতেই আনাবিয়া রুম থেকে বেরিয়ে যায়। রান্না ঘরে দুইজন ভৃত্য কাজ করছিল। আনাবিয়া তাঁদের দেখে হাসি দিয়ে কফি বানানোর সব জিনিস বের করে দিতে বলে। ভৃত্যরা মাথা নাড়িয়ে দ্রুত বের করে দেয়। আনাবিয়া গুনগুন করে গান গাইছে আর কফি বানাচ্ছে। সব কিছু দেওয়ার পর বাঁকা হেসে কতগুলো মরিচের ঘুরো কফিতে মিলিয়ে দেয়। সুন্দর করে কাপে পরিবেশন করে ইরানের জন্য রুমে নিয়ে যায়।
মাত্রই শাওয়ার নিয়ে বের হয়েছে ইরান। চুল মুছতে মুছতে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। রসিকতাড় স্বরে বলে,

-বাহ্! আমার ঘাড়তেড়া ওয়াইফ এতো ভালো কিভাবে হলো? নাকি আবার প্রেমে ট্রেমে পরে গেলো আমার?

আনাবিয়া বিরক্ত হয়ে ইরানের হাতে কফি ধরিয়ে দেয়। বিছানার কিনারে যেয়ে বসে শান্ত স্বরে বলে,

-ভাবলাম এতো অসহায় হয়ে বললো এতটুক তো করতেই পারি। আফটার অল বিয়ে হয়েছে কিছু দায়িত্ব আছে না আমার?

ইরান আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করে,

-সুইটহার্ট আর ইউ ওকে? ভুতে টুতে ধরলো নাকি আবার!

-হোয়াট রাব্বিশ!

ইরান সোফায় বসে কফিতে চুমুক দেয়। সাথে সাথেই তার চেহারার রঙ পাল্টে যায়। ঠোঁট লাল হয়ে যায়। চোখও একটু কেমন জানো হয়ে যায়। টেবিলে রাখা পানি খেতে খেতে পুরোটা শেষ করে ফেলে। আনাবিয়া ইরানের কান্ড দেখে হাসতে হাসতে শেষ। ইরান ঝালের কারণে ওয়াশরুম চলে যায়। মুখে, মাথায় ইচ্ছে মতো পানি দেয়। অনেক কষ্টে একটু ঝাল কমে। গায়ে পরিহিত টি-শার্ট ভিজে গিয়েছে তাই ইরান খালি গায়ে রুমের ভিতরে আসে। আনাবিয়া রাগী রূপে ইরানকে দেখে হাসি থামিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে। ইরান একটু পানি খেয়ে কঠিন চোখে আনাবিয়ার দিকে তাকায়। আনাবিয়া ঢোক গিলে আশেপাশে তাকায়। ইরান আনাবিয়ার স্মুখীন এসে কিছু না বলেই আনাবিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে দাঁড় করায়। আনাবিয়ার কিছু বুঝে উঠার আগেই ইরান তাকে সোফায় নিয়ে বসিয়ে দেয়। আরেক হাতে কফির গ্লাস নিয়ে আনাবিয়ার মুখের সামনে ধরে। থমথমে গলায় আনাবিয়া বলে,

-এইযে ইরান কী করছে আপনি? ছাড়ুন আমার হাত।

-বেবি জানো না ওয়াইফ হাসব্যান্ডের জুঠাটা খেলে দুইজনের মধ্যে ভালোবাসা বাড়ে?

-আমার কোনো লাভ চাই না।

-বাট আমার তো চাই। এখন ভদ্র মেয়ের মতো তুমিও এটার টেস্ট নেবে।

ইরান জোর করে আনাবিয়ার মুখে কফির গ্লাস চেপে ধরে। কয়েক চুমুক খেতেই কেশে উঠে আনাবিয়া। ইরান বাঁকা হেসে ছেড়ে দেয় তাকে। আনাবিয়া ঝাল ঝাল বলে পাগলদের মতো লাফাতে থাকে। পানি খেয়েও তার ঝাল কমছে না। ইরান হাসতে হাসতে বলে,

-অনেক সেই লাগছে না বেবি?

আনাবিয়া কিছু বলতে পারলো না। চোখ দিয়ে পানি পরছে তার। পুরো ফেইস একদম টমেটোর মতো হয়ে গিয়েছে। এবার ইরান দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে আনাবিয়াকে জোর করে ওয়াশরুমে নিয়ে যায়। মাঝখানে দাঁড় করিয়ে ঝর্ণা ছেড়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে পানির নিচে দাঁড়িয়ে রইলো আনাবিয়া। কয়েক মিনিট যেতেই চোখ খুলে সে। ইরান বিমোহিত দৃষ্টিতে আনাবিয়ার দিকে তাকিয়ে ছিল। পানির ফোটা গুলো আনাবিয়ার চোখ মুখে মুক্ত দানার মতো চকচকে করছে। লাল হয়ে আছে অধরজোড়া। আনাবিয়া রাগে অগ্নিগোলা হয়ে ইরানকে ধাক্কা দিয়ে ওয়াশরুমের বাহিরে বের করে দেয়। তারপর ঠাস করে দরজা লাগিয়ে দেয় ভিতর থেকে।

>>>>চলবে।

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ