#সেই_তুমি?
#সমাপ্তি_পর্ব (১৬)
#Tabassum_Kotha
?
— ওমন করে কি দেখছো খেয়ে ফেলবে নাকি?
তুর্যর কথায় আমার ঘোর কাটলো। আসলেই আমি ওভাবে কেনো তাকিয়ে ছিলাম। এক মিনিট! স্বামীটা তো আমার।আমার পুরো অধিকার আছে তাকিয়ে থাকার।
— প্রয়োজন পরলে খেয়েই ফেলবো। এতো হ্যান্ডসাম জামাই কারো থাকে বুঝি! আমার আছে তাহলে কি আমি দেখবো না!
— দেখার জন্য সারা জীবন পরে আছে। এখন একটু তৈরি হয়ে নাও। মেহমান এসে পরবে।
— যাবো। তার আগে আমাকে একটা কিস করেন!
— হীর!
— কি!
— তুমি না অনেক দুষ্টু হয়ে গেছো। এভাবে তো আগে বলতে না।
— আমি আগেও এমনি ছিলাম। মাঝে একটু চেঞ্জ হয়েছিলাম শুধু।
ওয়াশরুমে যাচ্ছি তুর্য পিছন থেকে হাত টেনে ধরলেন।
— কি বললে! আগে ছিলে মাঝে চেঞ্জ হয়েছো! মানে?
আমি তো তুর্য বলতেই ভুলে গেছি আমার সব মনে পরে গেছে। কিন্তু এভাবে বলবো না। একটু স্পেশাল ভাবে বলবো।
— সে কিছু না। হাত টা ছাড়েন নয়তো এখন রোম্যান্স শুরু করতে হবে বলে দিলাম।
তুর্য চট করে আমার হাতটা ছেড় দিলেন। আর আমিও হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে গেলাম। ফ্রেশ হয়ে একটা লাল শাড়ি পরেছি। সাথে মোটা করে কাজল আর হালকা লিপষ্টিক পরেছি। এখন লাগছে আমাকে বউ বউ। আমি নিশ্চিত আজ তুর্য আমাকে দেখলে তার মুখে মাছি থুরি মশা ঢুকে যাবে হিহিহি।
?
রায়ানের বাবা-মার সামনে বসে আছে তাফসি। মনে মনে সে লুঙ্গি ডান্স দিচ্ছে কিন্তু বাইরে বেশ একটা ইনোসেন্ট লুক নিয়ে বসে আছে। যেহেতু রায়ান ভাই আর তাফসি একে অপরকে আগে থেকেই পছন্দ করে তাই তাদের আর একা কথা বলতে দেওয়া হলো না। যদিও এতে তাফসির অনেক আফসোস হচ্ছে।
মামা আর আব্বু বিয়ে নিয়ে কথা বলছেন আর এদিকে তুর্য বারবার আঁড়চোখে আমার দিকে তাকাচ্ছেন। তার এভাবে তাকিয়ে থাকা আমায় বেশ অস্বস্তিতে ফেলছে। কিছুক্ষণ পরপর আবার চোখও মারছে। উফফ এই লোকটা আমাকে শান্তি দেবে না। তুর্যর দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে জুস সার্ভ করছিলাম। হঠাত্ তুর্য চোখ মারায় হাতের জুসটা রায়ান ভাইয়ার উপরে পরে গেলো। ইশশ বেচারা মেয়ে দেখতে এসেছে আর তার এই অবস্থা। সবাই আমার দিকে ভয়ঙ্কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে এরা না জানি কতো বছর যাবত কিছু খায় না। তাই সবাই মিলে আজকে আমাকে কাঁচাই চিবিয়ে খাবে। আর তুর্য আমার দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসছে।
তাফসি রায়ানকে ওয়াশরুমে নিয়ে গেলো। রায়ান ফ্রেশ হয়ে বের হতেই তাফসি রায়ানকে জরিয়ে ধরলো।
— কি মি. জামাই! বলেছিলাম না আমিই আপনার বউ হবো। দেখলেন তো হয়ে যাচ্ছি।
— হ্যাঁ। তোমার মতো একটা সাইকোর মায়াতে পরে যাবো সেটা স্বপ্নেও ভাবি নি।
— কি বললে! আমি সাইকো! তবে রে দাড়াও দেখাচ্ছি তোমাকে সাইকো কাকে বলে।
— আরেহ কি করছো কোথায় টেনে নিয়ে যাচ্ছো? তাফসি!
তাফসি রায়ানকে ওয়াশরুমে টেনে নিয়ে দরজা ভিতর থেকে লক করে দিয়ে রায়ানের ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো। তাফসির এহেম কান্ডে রায়ান পুরোই শকড্ হয়ে গেছে। রায়ান তাফসিকে সরাতে যাচ্ছে তাফসি আরো শক্ত করে রায়ানকে আঁকড়ে ধরছে। বারবার চেষ্টা করেও তাফসিকে সরাতে না পেরে রায়ান হাল ছেড়ে দিলো। বেশকিছুক্ষণ এভাবে থাকার পর তাফসি নিজেই রায়ানকে ছেড়ে দিলো।
— এবার বলো সাইকো!
রায়ান ফ্রিজ হয়ে দাড়িয়ে আছে। এবার তাফসির লজ্জা লাগছে। গালে দুই একটা চুমু দেওয়া তবুও চলে কিন্তু এভাবে হুট করে লিপ কিস করে ফেললো সে। লজ্জায় তাফসির মুখ পুরো লাল হয়ে গেছে। তাফসি ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে সবার সামনে গিয়ে বসলো।
রায়ান এখনও ফিরে না আসাতে তুর্য রায়ানকে ডেকে আনতে গিয়ে দেখে রায়ান এখনও ওয়াশরুমের ভিতরে দাড়িয়ে আছে। তুর্যর ডাকে রায়ান হুশ ফিরে পায়। কোনোরকম নিজেকে সামলে সে বেরিয়ে আসে। রায়ানের দিকে তাকাতেই তুর্যর চোখ বড় বড় হয়ে যায়। তুর্যর এই অবস্থা দেখে রায়ানও অনেকটা ঘারড়ে যায়। সে ভাবতে থাকে তুর্য আবার দেখে ফেললো কি না। কিন্তু এরপর তুর্য যা বললো তাতে রায়ানের মনে হচ্ছে এখন যদি মাটি ভাগ হয়ে তাকে ভিতরে নিয়ে নিতো তাহলে লজ্জা কিছুটা হলেও কমতো।
— রায়ান! এই নাও রুমাল। ঠোঁটের লিপষ্টিক টা মুছে নাও। বাইরে আমার আর তোমার বাবাও বসে আছে।
রায়ান আর কি বলবে রুমাল টা নিয়ে লিপষ্টিক পরিষ্কার করছে আর লজ্জায় লাল হচ্ছে। আর তুর্য মুখ টিপে টিপে হাসছে। তাফসি যে পাগলি সেটা সে জানতো কিন্তু এতোবড় পাগলি হয়ে গেছে সেটা বিশ্বাস হচ্ছে না।
দুই পরিবার মিলে রায়ান আর তাফসির বিয়ের তারিখ পাঁকা করে ফেললো। এক মাস পর তুর্য পুরোপুরি সুস্থ হলেই ধুমধাম করে বিয়ে পড়ানো হবে। সবাই মিষ্টিমুখ করে নিলো।
একটা ফাইভ স্টার হোটেলের ট্যারেসে দাড়িয়ে আছে কিয়ারা। আননোন নাম্বার থেকে তাকে কেউ একজন কল করে জরুরি ভিত্তিতে এখানে ডাকিয়েছে। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। ট্যারেসের ডেকোরেশন দেখে মনে হচ্ছে এখানে কোনো পার্টি আছে। খুবই সুন্দর ডেকোরেশন। সব থেকে বেশি নজর কাড়ছে হোয়াইট লিলি গুলো। কিয়ারার ফেভারেট ফুল এগুলো। কিন্তু ডেকোরেশনটা নজর কাঁড়া হলেও তার মনে শান্তি নেই। রুহানের করা ব্রেকআপ সে মেনে নিতে পারছে না। তার জীবনের প্রথম ভালোবাসা রুহান। এই রুহানকে সে তার কিছু উজার করে দিয়েছিল। সেই রুহানের কাছ থেকে এতো বড় প্রতারণা মেনে নিতে তার ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ হয়ে গেছে কিয়ারা দাড়িয়ে আছে কিন্তু কেউ না আসাতে সে প্র্যাঙ্ক কল ভেবে চলে আসতে নিলেই কেউ একজন তার হাত টেনে ধরে। পিছন দিকে ঘুরতেই কিয়ারা দেখতে পায় রুহান হাটুতে ভর দিয়ে বসে আছে ফিল্মি স্টাইলে। কিয়ারা রুহানকে এভাবে দেখে অবাক হয়।
— জানি না তোমার ক্ষমা পাওয়ার যোগ্য কি না, তবুও বলবো সম্ভব হলে আমাকে ক্ষমা করে দাও কিয়া। আমি তোমার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। অনেক অবহেলা করেছি তোমাকে কিন্তু বিশ্বাস করো এইসবকিছুর মাঝে আমি তোমাকে ভালোবাসি। আমি প্রতিশোধের নেশায় অন্ধ হয়ে গিয়েছিলাম। কোনটা সঠিক কোনটা ভুল কিছুই বুঝতে পারি নি। কিন্তু বিশ্বাস করো কিয়া এখন আমি আমার ভুল বুঝতে পেরেছি। এখন আমি আমার জীবনে তোমার গুরুত্ব বুঝতে পেরেছি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দিয়ে আমার কাছে ফিরে আসো। ক্ষমা না করতে পারলে আমাকে শাস্তি দাও তবুও আমার জীবনে ফিরে আসো কিয়া। I need you Kiaa.
কিয়ারা ছুটে এসে রুহানের বুকে আঁছড়ে পরে কান্না শুরু করে দিলো। রুহানও পরম আবেশে তার কিয়াকে বুকে জরিয়ে নিলো।
ভুল-বোঝাবুঝির জন্য প্রথমেই সম্পর্ক শেষ না করে ভুল-বোঝাবুঝি শেষ করার চেষ্টা করা উচিত।
?
রুহান আর কিয়ারার সম্পর্কটা বাসায় সবাই মেনে নিয়েছে। সবাই ঠিক করেছে তাফসি আর রায়ান ভাইয়ার বিয়ের দিনই কিয়ারা আর রুহান ভাইয়ার বিয়ে হবে। খুব মজা হবে। ওদের একসাথে বিয়ে হবে। কিন্তু আমার আর তুর্যর বিয়েটা তো যেই পরিস্থিতিতে হয়েছে!! বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসছে। আচ্ছা আমি কি তুর্যকে আমাদেরও আবার বিয়ে করার কথা বলবো? না থাক। তিনবার তো করেছি বিয়ে আর কতোবার করবো!
।
।
।
।
।
।
ইদানিং আমার শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। অল্পতেই হাপিয়ে উঠি। খাওয়ার উপর থেকে একদম রুচি চলে গেছে। মাছ-মাংসের গন্ধেই কেমন গা গুলিয়ে আসে। মাথাটাও ঘুরায় অনেক। আল্লাহ জানে আমার কোন রোগ হলো। মেজাজ তো সব সময় তুঙ্গে উঠে থাকে। তুর্যর সাথে সবসময় ঝগড়া করি। তবুও আমার করা সব টর্চার তুর্য হাসি মুখে সহ্য করেন।
।।
বিয়ের দিন সকাল থেকে পুরো বাড়িতে হই হুল্লোর লেগে আছে। সবাই আনন্দ ফুর্তিতে মেতে আছে। আর আমি ঘরে থেকে ওয়াশরুম আর ওয়াশরুম থেকে ঘর করছি। সকাল থেকে বমি করতে করতে আমার শরীরের সব শক্তি শেষ। এদিকে বরযাত্রীরা আসার সময় হয়ে গেছে পার্লারের লোকজন তাফসি আর কিয়ারাকে সাজিয়ে দিয়ে গেছে। আর আমি এখনও শাড়িটাই পরতে পারি নি। গোল্ডেন কালারের একটা ডিজাইনার শাড়ি তুর্য স্পেশালি আমার জন্য এনেছিলেন কিন্তু আমি পরতেই পারি নি। অনেক কষ্টে শাড়িটা কোনো রকম গায়ে জরিয়ে নিয়ে সাজ-সজ্জা বিহীন নিচে নেমে এলাম। শরীরটা ভীষণ খারাপ লাগছে। তুর্য কে একটু জানানো দরকার। আশেপাশে খুঁজতেই তুর্যকে পেলাম। তুর্যর সামনে গিয়ে কিছু বলার আগেই মাথা ঘুরে নিচে পরে গেলাম।
?
?
জ্ঞান ফিরতেই নিজেকে হসপিটালে পেলাম। তুর্য আমার মাথার কাছে বসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। আশেপাশে আর কেউ নেই। হয়তো বাসায় বিয়ে তাই আর কাউকে জানায় নি তুর্য। কিন্তু তুর্যর চোখ দুটো টলমল করছে। তুর্য কি কাঁদছেন? আমার কি বড় কোনো রোগ হয়েছে? তুর্যকে জিজ্ঞেস করলে তুর্য আমাকে জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলেন। তুর্যর কান্নার কারণ আমি জানি না কিন্তু আমারো কান্না পাচ্ছে তুর্যর কান্না দেখে।
— হীর! আজকে আমি অনেক খুশি। অনেক খশি হীর! অনেক খুশি। তুমি আমাকে এই খুশিটা উপহার দিয়েছো।
তুর্যর কথা আমি বুঝতে পারছি না। সে যদি খুশিই হয় তাহলে এতো কান্না করছেন কেনো?
— I love you Heer. I love you. আজ তুমি আমাকে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় সুখ দিয়েছো। বাবা হওয়ার সুখ।
তুর্যর কথা শুনে আমার এই মুহূর্তে ঠিক কিভাবে রিয়েক্ট করা উচিত আমি বুঝতে পারছি না।
— তুমি মা হতে চলেছো কলিজা। আমি বাবা হতে চলেছি। আমাদের একটা ছোট্ট সোনামনি আসতে চলেছে।
— আমি মা হবো!!
— হ্যাঁ কলিজা। তুমি মা হবে আমি বাবা। আম্মু-আব্বু হবে দাদা-দাদু। তাফসি ফুপি আম্মু, রায়ান ফুপা। রিসান-রুহান চাচ্চু হবে। আমি বাবা হবো।
তুর্য আবারো আমাকে বুকে জরিয়ে নিলেন। এবার আমিও তাকে খুব শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম। আমি মা হতে চলেছি। নারী হিসেবে পূর্ণতা পেতে চলেছি। একটা গলুমলু আমাকে আম্মুনি আম্মুনি বলে ডাকবে! তুর্যকে বাবাই বলে বলে বাড়িঘর মাথায় করে রাখবে!
তুর্য আমাকে বাসায় নিয়ে এলেন। হসপিটাল থেকে আমাকে কোলে নিয়ে আছেন। একবারের জন্যও নামায় নি। বাসায় আসতেই হাটে হাড়ি ভেঙে দিলেন। সবাই কতো খুশি আমার প্রেগন্যান্সির খবর শুনে। তাফসি আর কিয়ারাকে বিদায় দেওয়ার পর তুর্য আবার আমাকে কোলে তুলে ঘরে নিয়ে এলেন। আমার না করা সত্ত্বেও জোর করে আমাকে খাবার খাইয়ে দিলেন। তুর্য ল্যাপটপে বাচ্চার জন্য নাম খুঁজছেন। আর আমি চেয়ে চেয়ে তার পাগলামি দেখছি।
রাত ১ টা বাজে, তুর্য ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে আছেন। আমি পিছন থেকে তাকে জরিয়ে ধরলাম। তুর্য আমার হাত ধরে তার সামনে এনে আমার গলায় মুখ গুজলেন। আমি তুর্যকে জরিয়ে ধরে তার কানে কানে বললাম।
— আপনাকে অনেক ভালোবাসি তুর্য। সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসি। যখন থেকে বুঝতে শিখেছি ভালোবাসা কি জিনিস আপনাকেই ভালোবেসেছি শুধু।
— ছোটবেলা থেকে মানে?
— আমার সব মনে পরে গেছে তুর্য। আপনার আর আমার বিয়ে, ভালোবাসা, আলাদা হওয়া সব কিছু মনে পরে গেছে।
— সত্যি হীর!
— হ্যাঁ তুর্য। আমি সরি। প্লিজ আমাকে ক্ষমা করে দেবেন আমার জন্য আপনি অনেক কষ্ট পেয়েছেন।
— না হীর তুমি এভাবে বলছো কেনো? তুমি কিছু করো নি। তোমার জন্য কিছুই হয় নি। উল্টো আমি তোমার সাথে অন্যায় করেছি। তোমাকে জোর করে তোমার সাথে র,,,
— হুশ আর কিছু বলবেন না। (তুর্যকে থামিয়ে দিয়ে) আপনি যা করেছেন আমাকে কাছে পাওয়ার জন্য করেছেন। আমি আপনার বিবাহিতা স্ত্রী। আমার উপর আপনার হক ছিল। আমিই আপনাকে কতোকিছু বলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিন।
— I love you Heer.
— I love you too Turjo.
তুর্য আমাকে শক্ত করে বুকে জরিয়ে নিলেন। আমি তুর্যর হাতে তার গিটার টা ধরিয়ে দিয়ে একটা গান শোনাতে বললাম। তুর্য আমাকে একনজর দেখে গিটারে সুর তুললেন।
??
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
ঢেকে রাখে যেমন কুসুম, পাপড়ির আবডালে ফসলের ঘুম।
তেমনি তোমার নিবিঢ় চলা, মরমের মূল পথ ধরে।
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
পুষে রাখে যেমন ঝিনুক, খোলসের আবরণে মুক্তোর সুখ।
তেমনি তোমার গভীর ছোঁয়া, ভিতরের নীল বন্দরে।
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
ভাল আছি ভাল থেকো, আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো।
দিয়ো তোমার মালাখানি,
দিয়ো তোমার মালাখানি, বাউল এর এই মনটারে।
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
আমার ভিতরে বাহিরে অন্তরে অন্তরে ,
আছো তুমি হৃদয় জুড়ে।
??
গান শেষ করতেই দেখলাম আমার চোখ ভিজে গেছে। জানি না কেনো যতোবার তুর্যর গলায় গাওয়া গান শুনি আমার চোখ ভিজে যায়। তুর্য আমাকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিলেন। নিজের ভর আমার উপর ছেড়ে দিয়ে তুর্য আমার ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলেন। তুর্য আমার ঠোঁটের স্বাদ নিচ্ছেন, আর আমি তাকে শক্ত করে জরিয়ে ধরে রেখেছি। কিছুক্ষণ বাদে তুর্য আমার ঠোঁট ছেড়ে দিয়ে আমার ঘাড়ে মুখ ডুবিয়ে দিলেন। ভেসে গেলাম আমরা ভালোবাসার সাগরে।
?
?
?
?
?
?
?
৫ বছর পর,
৫ বছর সময় পেরিয়ে গেছে। বদলে গেছে অনেক কিছু। রুহান কিয়ারাকে নিয়ে লন্ডন শিফ্ট হয়ে গেছে। তাফসি আর রায়ান ভাইয়ার একটা মেয়ে আছে। ওহ হ্যাঁ আপনাদের তো বলাই হয় নি। আমার আর তুর্যরও কিন্তু একটা মেয়ে আছে। তুর্যর জীবন তার মেয়ে। মেয়ের নাম রেখেছেন তুর। তুর এখন অনেক বড় হয়েছে, স্কুলে যায়। তুর্যই নিয়ে যায় আর দিয়ে আসেন। সারাদিন বাবা মেয়ে একসাথে থাকে। মাঝখান থেকে একা পরে গেছি আমি। সারাদিন এই সময়টুকুর অপেক্ষা করি যখন আমার রাজকন্যা স্কুল থেকে ফিরে এসে আমার সাথে দেখা করতে আসে।
আজকে একটু দেরি হয়ে গেছে বোধহয়। গাড়ির শব্দ শুনতে পাচ্ছি। তুর্য আর তুর এসে পরেছে। বাবা মেয়ে একসাথে আসছে না জানি কতো সুন্দর লাগছে তাদের। প্রতিদিন কার মতো তুর্য থম মেরে বসে আছে আর তুর আশেপাশে দেখছে। এখন হয়তো তুর তার বাবাকে জিজ্ঞেস করছে, ” আম্মুনি উঠবে কখন বাবাই?”
আর তুর্য! তুর্য তার চোখের পানি আড়াল করে জবাব দেবেন, “তোমার আম্মুনি অনেক ঘুমকাতুরে মামনি, সে উঠবে না এখন। তুমি বড় হলে উঠবে।”
আমি জানি তুর্যর দুচোখ বেয়ে অশ্রু ধারা পরছে। হ্যাঁ আমি মাটির নিচ থেকে কিছুই দেখতে পারছি না কিন্তু তুর্যর প্রতিটা নিশ্বাস অনুভব করতে পারি। অনেক স্বপ্ন ছিল তুর্য আর আমাদের সন্তানকে নিয়ে সারাটা জীবন সুখে-শান্তিতে, খুনশুটিতে কাটিয়ে দেবো। কিন্তু নিয়তির কি সুন্দর পরিহাস। সব সুখ দিয়ে আমার জীবনটাই কেঁড়ে নিলো। তুর কে জন্ম দিতে গিয়েই আমার মৃত্যু হয়। শেষ বারের মতো একটাবার তুর্যকে দেখতেও পারি নি। আমার মেয়ে এখন কতোটা বড় হয়েছে, দেখতে কেমন হয়েছে জানার খুব ইচ্ছে করে। আমার রাজকন্যাটাকে শেষ বারের মতো বুকে নিতে ভীষণ ইচ্ছে হয়। শেষবারের মতো তুরকে কোলে নিয়ে তুর্যর গিটারের তালে নাচার ইচ্ছে হয়। শেষবারের মতো তুর্যর কন্ঠে নিজের জন্য একটা গান শুনতে ইচ্ছে করে খুব। কিন্তু নিয়তি খেলায় আমি যে হেরে গেছি।
তুর্য এখন চলে যাচ্ছে। তুর বিরক্ত হয়ে গেছে। জানি তুর্য গাড়ির কাছে গিয়ে একদৃষ্টিতে বেশ কিছুক্ষণ আমার দিকে তাকিয়ে থাকবেন। তার এই দৃষ্টির মানে আমি বুঝি। তার দৃষ্টিতে আমার প্রতি অনেক অভিমান জমে আছে। তাকে একা ফেলে চলে আসার অভিমান।। যেই আমিটার জন্য তুর্য এতো লড়াই করেছেন সেই আমি স্বার্থপরের মতো আমার ভালোবাসাকে একা ফেলে চলে এসেছি।
ভালো থেকো প্রিয়!! তোমাকে অনেক ভালোবাসি। আমার #সেই_তুমি টাকে অনেক ভালোবাসি।!!!
“যে মানুষটি সারাজীবন পাশে থাকবে বলে কথা দেয়, সেই মানুষটিই কিন্তু সবার আগে জীবন থেকে সরে যায়।”
-হুমায়ূন আহমেদ
——সমাপ্তি—–
গল্পটা দারুন লেগেছে বাট লাস্টে ভালো লাগেনি মারা যাওয়ার বিষয়টি 😭😭