Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"সেই তুমি পর্ব-১৫

সেই তুমি পর্ব-১৫

#সেই_তুমি?
#পর্ব_১৫
#Tabassum_Kotha

?

তুর্যর জ্ঞান ফেরার পর থেকে শুধু রুহান নামের মালা জপছে। আমি সুযোগই পাচ্ছি না তুর্যকে বলার যে আমার সব মনে পরে গেছে। এতোদিন তুর্য আমার জন্য অনেক কষ্ট করেছেন, আমি তার জন্য এতোটুকু অপেক্ষা তো করতেই পারি। সারাদিন সবার অনেক ধকল যাওয়াতে রাতে সবাইকে বাড়ি পাঠিয়ে দিয়ে আমি আর রিসান ভাইয়া তুর্যর সাথে রয়ে গেলাম। রিসান ভাইয়া ওয়েটিং রুমে চলে গেলেন। আমি তুর্যর মাথার কাছে বসে আছি। তুর্যর ফর্সা গালটা কেমন কালচে হয়ে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে ভীষণ ব্যথা পেয়েছে। তুর্যর চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি আমি। তুর্য আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন। যেনো অনেক কিছু বলতে চায় আমাকে। হয়তো সে যা বলতে চায় তার অনেক কিছুই আমি জানি। তুর্য আমাকে তার পাশে শুয়ে পরতে বললেন। আস্তে করে একটু চেপে গিয়ে আমার জন্য জায়গাও করে দিলেন। আমি তুর্যর কপালে একটা ভালোবাসার পরশ এঁকে দিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলাম। যদিও আমি প্রতিদিন এই মানুষটার বুকে ঘুমাই কিন্তু আজকে কেনো জানি না অনেক বেশি ভালো লাগছে। তুর্যকে দেখতে দেখতে কখন যে ঘুমিয়ে পরেছি কে জানে!

সকালে ঘুম ভাঙতেই দেখি তুর্য আমাকে একহাতে জরিয়ে ধরে রেখেছেন। মুখ তুলতেই দেখলাম উনি আমার দিকে মুচকি হেসে তাকিয়ে আছে। বাইরে এখনও অন্ধকার, সকাল হতে ঢের বাকি।

— এতো তাড়াতাড়ি কেনো উঠে পরলেন?

— কাল থেকে ঘুমিয়েই তো যাচ্ছি আর কতো ঘুমাবো!

— অসুস্থ হলে শান্তি মতো আরো ঘুমাতে হয়।

— আমার ঘুম এমনিতেই পুরো হয়ে গেছে। তুমি আমার বুকে ঘুমিয়েছো এর চেয়ে বেশি শান্তি আর কোথায় পাবো বলো!

— হয়েছে আর ঢং করতে হবে না। খুব তো আমাকে একা ফেলে পালানোর প্ল্যান করেছিলেন।

— আমি ঢং করছি! আমি মোটেও ঢং করছি না। তোমার জন্যই মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে এসেছি।

তুর্যর মুখ থেকে মৃত্যু কথা শুনতেই আমার বুক কেঁপে উঠলো। তুর্যর মুখে হাত দিয়ে তাকে থামিয়ে দিয়ে শক্ত করে জরিয়ে ধরলাম। আমার চোখ ভরে এসেছে। কোনো দুঃস্বপ্নেও আমি তুর্যকে হারাতে চাই না। শেষ নিশ্বাস পর্যন্ত তার সাথে থাকতে চাই।
তুর্য আমার চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন। কেনো যেনো বারবার তুর্যকে হারানোর ভয় আমার মনে জাগছে। আমি এসব ভাবতে চাই না তবুও!!

বিকেলে তুর্যকে রিলিজ দেওয়া হলেও তুর্য বাসায় না ফিরে রুহান ভাইয়ার বাসায় চলে গেলেন জনকে নিয়ে। হাজার আকুতি মিনতি করার পরেও আমাকে সাথে নিলেন না। আকাশে মেঘ করেছে। এই সময় টা আমার কাছে অনেক অশুভ মনে হয়। মানুষ বৃষ্টি পছন্দ করে কিন্তু আমার বৃষ্টি আশার আগের সময়টা একদম পছন্দ নয়। খুব ভয় হচ্ছে। কোনো দুঃসংবাদ আসবে না তো!!

?

ঘরে বসে ড্রিংক করছে রুহান। জনকে নিচে অপেক্ষা করতে বলে তুর্য আস্তে আস্তে রুহানের ঘরের দিকে আগালো। রুহানের ঘরের দরজা খুলতেই মদের বিশ্রি গন্ধ তুর্যর নাকে এলো। কিন্ত এই সময় তুর্য রাগারাগি করতে আসে নি। সে তার প্রশ্নের উত্তর নিতে এসেছে। সে জানতে চায় কি তার অপরাধ যার জন্য তার বেষ্টফ্রেন্ড তার শত্রু হয়ে গেলো!

রুহান তুর্যকে দেখে একটা ভিলেন হাসি দিলো।

— বেঁচে আছিস তাহলে! তবে আমি জানতাম তুই বেঁচে যাবি। এক্সিডেন্টটা ওতোটাও গুরুতর ছিল না।

— তোর সাথে আমার কথা আছে।

— কথা! সত্যি! আমার সব কেঁড়ে নিয়ে আজ এতো বছর পর কথা বলতে এসেছিস!

— রুহান দেখ কোথাও একটা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং হয়েছে। আমরা কথা বলে সেটা ক্লিয়ার করতে পারি।

— কাম আগেইন! মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং! আমার কলিজার টুকরার খুন টা মিসআন্ডারস্ট্যান্ডিং ছিল???

— কি বলছিস তুই ভাই?

— তোর ওই মুখ দিয়ে আমাকে ভাই ডাকবি না তুর্য। আমাকে যদি তুই ভাই মানতি তাহলে আমার বোনের সাথে ওগুলা করতে পারতিস না।

— রুহি! তুই কি বলছিস রুহান! আমি রুহির সাথে কি করেছি?

— ওয়াও তুই রুহির সাথে কি করেছিস সেটা আমাকে জিজ্ঞেস করছিস?

— দেখ রুহান কথা পেঁচানো বন্ধ করে ক্লিয়ার করে বল কি বলতে চাইছিস?

— তোর একদমই লজ্জা নাই না তুর্য? তুই আমার কাছে জানতে চাইছিস তুই আমার বোনের সাথে কি করেছিস। আমি ভাই হয়ে নিজের বোনের কথাগুলো মুখে আনবো কিভাবে সেটা ভেবেছিস?

— দেখ রুহান ভনিতা না করে বলবি প্লিজ হয়েছে টা কি?

— তুই আমার সাথে, আমার বোনের সাথে, হীরের সাথে ধোঁকা করেছিস তুর্য। তুই বিবাহিত থাকা সত্তেও রুহির সাথে ভালোবাসার নাটক করে ওকে ভোগ করেছিস। যখন রুহি অনঃসত্ত্বা হয়ে গেছে ত,,,

রুহান আর কিছু বলার আগেই তুর্য রুহানের গালে ঠাসস্ করে একটা চড় বসিয়ে দিলো। রুহান নেশাগ্রস্থ থাকায় চড়টা সামলাতে না পেরে কিছুটা দূরে ছিটকে পরলো।
রাগে তুর্যর কপালের রগ ফুলে উঠেছে চোখ দুটোও অসম্ভব লাল হয়ে আছে।

— এতো বাজে কথা তোর মুখে আটকালো না রুহান? রুহিকে আমি সবসময় আমার বোনের মতো দেখেছি আর তুই কি না ছিহঃ! তুই ভাবলি কি করে রুহান! তাফসি আর রুহি আমার কাছে এক সমান ছিল সবসময়। আরেহ এতোবড় অপবাদ দেওয়ার আগে একটাবার অন্তত আমার সাথে কথা বলতে পারতি। তুই খুব ভালো করেই জানিস আমি হীরকে ভালোবাসতাম আর ছোটবেলাতেই ওকে বিয়ে করেছিলাম। আমার জীবনে হীর ব্যতীত দ্বিতীয় কোনো মেয়ে না কোনোদিন ছিল আর নাই কখনও আসবে।

— তুই মিথ্যে বলছিস। সব মিথ্যে। আমি জানি এগুলো সব তোর চাল। আমাকে ভুলভাল বোঝাচ্ছিস। কিন্তু রুহি মারা যাওয়ার আগে যেই চিঠিটা লিখেছিল সেটাতে স্পষ্ট লেখা আছে তুই রুহিকে মিথ্যা ভালোবাসার জ্বালে ফাসিয়ে ওকে ভোগ করেছিস। রুহি দুই মাসের অনঃসত্ত্বা ছিল তুর্য।

— এসব কিছু মিথ্যে রুহান। রুহি আর আমার মধ্যে ভাই বোনের সম্পর্ক ব্যতীত আর কোনো সম্পর্ক ছিল না।

— তাহলে তুই বলছিস আমার বোন মারা যাওয়ার আগে মিথ্যে বলে গেছে? ওর শেষ চিঠিতে লেখা সব মিথ্যা ছিল?

— কিহ! রুহি! কি বলছিস এসব!

— রুহি সুইসাইড করেছে আজ থেকে ৩ বছর আগে। তোর কারণে। তুই রুহির এতোবড় সর্বনাশ করেও ওকে বিয়ে করিস নি। এজন্য রুহি আমাদের ছেড়ে চলে গেছে।

— রুহান বিশ্বাস কর ভাই আমি কিছুই করি নি। রুহি আর আমার এমন কোনো সম্পর্ক ছিলোই না। আমি শুধু মাত্র হীরকেই ভালোবেসেছি। তুই রুহির লেটার টা আমাকে দে। কোথাও কিছু একটা গন্ডগোল আছে।

— গন্ডগোল তোরমধ্যে ছিল আর আমি তোকে বিশ্বাস করেছি। এই নে পড় রুহির দেওয়া শেষ চিঠি। (চিঠিটা তুর্যর মুখে ছুড়ে দিয়ে)

৩ বছরে চিঠিটা বেশ পুরোনো হয়ে গেছে কিন্তু দেখে বোঝাই যাচ্ছে রুহান খুব যত্ন করে রেখেছিল। তুর্য চিঠিটা পড়লো কিন্তু চিঠিতে লেখা কথাগুলো তার বিশ্বাস হচ্ছে না। রুহিকে সে সবসময় ছোট বোনের মতো দেখেছে। সেই রুহি কেনো তার নামে এতো বড় অপবাদ দেবে তাও মৃত্যুর আগ মুহূর্তে।

তুর্য চিঠিটা হাতে নিয়ে নির্বাক হয়ে দাড়িয়ে আছে। সে বুঝতে পারছে না নিজের ইনোসেন্স কিভাবে প্রমাণ করবে। রুহান ঢুলু ঢুলু পায়ে আলমারিটা খুলে একটা সুন্দর বক্স বের করলো। বক্সের উপর খুব সুন্দর করে R লেখা। বক্সটার সাজ-সজ্জা দেখে বোঝা যাচ্ছে এটা একটা মেয়ের। রুহান বক্সটা নিয়ে এসে তুর্যর সামনে দাড়ালো।

— জানিস তুর্য! এই বক্সটা রুহির ছিল। কখনও আমাকে হাতও দিতে দেয় নি। এই তিন বছরে আমি একবারের জন্যও খুলে দেখি নি। রুহি একবার মানা করেছিল খুলতে। রুহির মৃত্যুর পর এইটা আর কখনও খুলে দেখি নি।

— রুহান আমি জানি না রুহি চিঠিতে এমনটা কেনো লিখেছে কিন্তু বিশ্বাস কর আমি কিছু করি নি।

তুর্য রুহানে হাত ধরে ঝাঁকি দিলে রুহানের হাত থেকে বক্সটা পরে ভেঙে যায়। রুহান আগে থেকে ড্রাংক ছিল যার জন্য সামলাতে পারে না।

— ভেঙে দিলি তো! আমার বোনকে আমার কাছ থেকে কেঁড়ে নিয়ে এখন ওর শেষ স্মৃতিটাও কেঁড়ে নিলি।

তুর্য খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে বক্সের জিনিসগুলো উঠাতে থাকে। রুহির অনেক জিনিসপত্রই ছিল সেখানে। জিনিসগুলো উঠাতে উঠাতে চোখ ভিজে যায় রুহানের। হঠাৎ রুহান সেখানে একটা ছবি খুঁজে পায়। ছবিটা হাতে পেতেই রুহানের সব নেশা দূর হয়ে যায়। রুহান তাড়াতাড়ি করে জিনিসগুলো ঘাটতে থাকে। সেখানে কিছু কার্ড আর একটা ডায়েরি খুঁজে পায় রুহান। কার্ডগুলো হাতে নিয়ে মাথা ভূ চক্কর দিয়ে উঠে তার। নিজের সন্দেহ নিশ্চিত করার জন্য ডায়েরিটা খুলে পড়তে শুরু করে।

ডায়েরিটা পড়ে থ মেরে বসে পরে সে। তুর্য রুহানের অবস্থা বুঝতে না পেরে রুহানের হাত থেকে ছবি আর ডায়েরিটা নিয়ে নেয়। তুর্য নিজেও সেগুলো দেখে অবাক।

তুর্য ঠিক কিভাবে রুহানকে সামলাবে বুঝতে পারছে না। তুর্য রুহানের কাঁধে হাত রাখতেই রুহান তুর্যকে জরিয়ে ধরে কান্না শুরু করে দিলো। তুর্য আর রুহানকে বাঁধা দিলো না। এতো বছরের কষ্ট আজ কিছুটা হলেও কমে যাবে।

অনেকক্ষণ পর রুহান নিজেকে সামলে তুর্যর হাত দুটো ধরলো।

— আমি জানি আমি যা করেছি তার জন্য আমাকে ক্ষমা করা তোর পক্ষে সম্ভব নয়। তবুও বলছি পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিস। আমি বন্ধু হয়ে তোর সাথে যা করেছি সেটা শত্রুও করে না। আমি ক্ষমার যোগ্য নই। কিন্তু যদি তোর কাছে ক্ষমা না চাই তাহলে আমার রুহির আত্মা যে কষ্ট পাবে।

— তুই পাগল হয়ে গেছিস। তুই আমার ভাই। তোর আমার কাছে ক্ষমা চাইতে হবে কেনো? একটা ভুল বোঝাবুঝি ছিল এসবকিছু। এখন সেই ভুল বোঝাবুঝির অবসান হয়ে গেছে। আমাদের মধ্যে এই সরি টরি কখন ছিল না আর আসবেও না।

রুহান আবারো তুর্যকে জরিয়ে ধরে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। তুর্য জনের সাহায্য নিয়ে রুহানকে ওদের সাথে নিয়ে এলো। এমনিতেই রুহান ড্রিংক করেছে তার ওপর এই অবস্থা। তাকে একা ছাড়ার ঝুঁকি তুর্য নিলো না।

গাড়ি চলে যাচ্ছে আপন মনে! রুহান ঘুমিয়ে পরেছে। রুহানের দুচোখের কার্ণিশে এখনও পানির রেশ লেগে আছে। তুর্য জানালার বাইরে তাকিয়ে আছে। রুহির জন্য তার ভীষণ খারাপ লাগছে। নিজের ছোট বোনের মতো মনে করতো সে রুহিকে। কিন্তু সেই বোনটার সাথে এতো কিছু হয়ে যাবে তুর্য ভাবতেও পারে নি। রুহি সত্যিই প্রেগন্যান্ট ছিল। তবে রুহির অনাগত সন্তানের বাবা ছিল রুহানের ম্যানেজার আকাশ। আকাশ আর রুহির রিলেশন চলছিল অনেকদিন ধরেই। যখন আকাশ জানতে পারে রুহি অনঃসত্ত্বা তখন সে রুহিকে ডিচ করে। রুহি মানসিক চাপ সহ্য করতে না পেরে সুইসাইড করে। রুহান দেশের বাইরে থাকায় সে এসবের কিছুই জানে না। তবে তুর্য ধারণা করছে হয়তো রুহির মৃত্যুর পর আকাশই নিজেকে বাঁচানোর জন্য ফেইক লেটার টা রেখে দেয় রুহির ঘরে।

?

?

তুর্য এখনও ফিরে আসে নি। ভয়ে আমার কলিজা শুকিয়ে যাচ্ছে। না জানি কি সমস্যা হয়েছে যে এতো রাত হয়ে গেলো তবুও ফিরলো না। ড্রয়িং রুমে পায়চারি করছিলাম তখন কলিং বেল টা বেজে উঠলো। দরজা খুলতেই দেখি তুর্য দাড়িয়ে আছে। তার সাথে জন রুহান ভাইয়াকে ধরে আছে। জন রুহান ভাইয়াকে গেষ্ট রুমে রেখে আসলেন। তুর্যর চোখ দুটো ফুলে আছে। কেনো যেনো মনে হচ্ছে তুর্য এতোক্ষণ কান্না করেছেন। তুর্য আর রুহান ভাইয়ার এই অবস্থা দেখে আমার ভীষণ ভয় করছে। কি হয়েছে! তাদের এই অবস্থা কেনো!

তুর্য আমাকে কিছু না বলেই উপরে চলে গেলেন। আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো সেই সুযোগটাও পেলাম না। আমি ঘরে যাওয়ার আগেই তুর্য শুয়ে পরেছেন। কিছুক্ষণ তুর্যর সামনে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে দাড়িয়ে রইলাম কিছু বলবেন এই আশায় কিন্তু এবারো আমাকে হতাশ করে তুর্য চুপ রইলেন। কিছুক্ষণ দাড়িয়ে থেকে তুর্যকে জরিয়ে ধরে ঘুমিয়ে পরলাম।

?

তুর্য হাসি মুখটা দেখে ঘুম ভাঙলো আমার। আমার আগে উঠে আমাকেই দেখছেন। তুর্যর এই দৃষ্টিটা আমাকে ভীষণ লজ্জায় ফেলে দেয়। তুর্যর হাত থেকে নিজেকে সরিয়ে ওঠে পরলাম। আজ আমার অনেক কাজ। আজ রায়ান ভাই আর মামা-মামি আসবেন তাফসিকে দেখতে। হসপিটালেই রায়ান ভাইয়া আব্বু আম্মুর সাথে তার আর তাফসির ব্যাপারে কথা বলেছিলেন। সব ঠিক থাকলে আজকেই দিন তারিখ ঠিক হয়ে যাবে। তুর্য সুস্থ হলেই হয়তো বিয়ে।

ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে আছে রুহান। অপরাধবোধ গ্রাস করেছে তাকে। একটা ভুল-বোঝাবুঝির দরূণ অনেকগুলো মানুষের সাথে অন্যায় করে ফেলেছে সে। তার বেষ্টফ্রেন্ডের ভালোবাসা কেঁড়ে নিতে চেয়েছিল, যে তাকে পাগলের মতো ভালোবাসে সেই কিয়ারাকে কতো অবহেলা করেছে সে। সবার অপরাধী হয়ে গেছে সে। সবাই কি তাকে ক্ষমা করবে!! কথা গুলো ভাবতেই দুচোখের কার্নিশ বেয়ে দুফোঁটা জল গরিয়ে পরে রুহানের।

তুর্য দুই কাপ কফি হাতে দাড়িয়ে আছে রুহানে পিছনে। এখনও চলতে একটু কষ্ট হয় তার। তুর্য এগিয়ে গিয়ে রুহানকে কফি টা দিলো। রুহান কিছু বলতে চেয়েছিল কিন্তু তুর্য ইশারায় মানা করে দিলো।

— জীবনে এমন অনেক কিছু হয় যা আমরা চাই না। সবটা আমাদের হাতে থাকে না। যা হয়েছে সব ভুলে যা।

— হুম। ঠিক বলেছিস। এমনিতেও আকাশ ওর কাজের শাস্তি আগেই পেয়ে গেছে।

— মানে!

— আকাশ দুবছর আগেই ক্যান্সারে মারা গেছে।

— তুই এসব ভুলে জীবনটা নতুন করে সাজা। কিয়ারা তোকে সত্যি অনেক ভালোবাসে।

— আমি জানি তুর্য। কোথাও না কোথাও আমিও কিয়ারাকে অনেক ভালোবাসি। কিন্তু এতোদিন আমার কাছে কিয়ারার থেকে আমার প্রতিশোধটাই বেশি প্রিয় ছিল।

— যা হয়েছে সব ভুলে যা। তোদের সম্পর্কটাকে নতুন করে সাজিয়ে নে।

— কিয়ারার সাথে অনেক অন্যায় করেছি রে। সে কি আমাকে মেনে নেবে!

— চেষ্টা করে দেখতে ক্ষতি কি! ভালোবাসা দিয়ে আঁকড়ে ধরে দেখ ঠিকই ধরা দেবে।

?

মামা-মামি আর রায়ান ভাই তাফসিকে দেখতে আসবে বলে বাসায় একপ্রকার কাজের ধুম পরে গেছে। সকাল থেকে আম্মু-চাচি,রিসান সবাই নানান কাজে ব্যস্ত। আমার দায়িত্ব পরেছে তাফসিকে সাজানোর। তাফসি নীল একটা চুরিদার পরেছে। সেই সাথে দুচোখ ভর্তি কাজল, হালকা লিপষ্টিক, আর দুহাতে চুরি পরিয়ে দিলাম। লম্বা চুলগুলো ছেড়ে দিয়ে তাফসিকে তৈরি করে দিলাম।

মেহমান আসতে আর বেশিক্ষণ বাকি নেই। আম্মু বারবার তাড়া দিচ্ছেন আমাকে তৈরি হওয়ার জন্য। ঘরের ভিতর ঢুকতেই আমি তুর্যকে দেখে ক্রাশ খেলাম। আমার জামাই টা কালো পাঞ্জাবি পরে আছে। এত্তো হ্যান্ডসাম লাগছে তুর্যকে বলার মতো না। আমি হা হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি।

চলবে..

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ