#সেই_তুমি?
#পর্ব_১৪
#Tabassum_Kotha
একটা তিনতলা বাংলো বাড়ির ছাদে সিগারেট হাতে দাড়িয়ে আছে রুহান। স্মোক করছে, ইতোমধ্যে ১০/১২ টা সিগারেট শেষ করে ফেলেছে। স্মোক করা টা সে আর তুর্য একসাথে শিখেছিল লন্ডনে। বেষ্টফ্রেন্ড তো আর এমনি এমনি হয় না। সব ভালো-মন্দ কাজ তারা একসাথে করেছে একটানা ৬/৭ বছর। তুর্য আর রুহান দুজনেই মিউজিক কে পেশা হিসেবে নিলেও তুর্য সবসময়ই তার থেকে ভালো ছিল। এ নিয়ে অবশ্য রুহানের কখনই হিংসা হয় নি। বেষ্টফ্রেন্ডের সাকসেস মানে নিজের সাকসেস।
কিন্তু তুর্য তার সাথে যা করেছে সেটা তো রুহান ভুলতে পারবে না। কখনই পারবে না। তুর্যর অপরাধের শাস্তি তাকে পেতেই হবে। আরো কিছুক্ষণ স্মোক করে ঘরে চলে গেলো রুহান।
একটা ফটো ফ্রেম হাতে নিয়ে এক দৃষ্টিতে দেখছে রুহান। মাঝে মাঝে দুই এক ফোঁটা পানিও পরছে চোখ থেকে। হাত দিয়ে পানির ফোঁটাগুলো মুছে দিয়ে আবার তাকিয়ে আছে সে।
?
?
পাগলের মতো কার ড্রাইভ করছে তুর্য। আজ তার মন ভেঙে গেছে। নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে। সবকিছু বিষাদ মনে হচ্ছে। কেনো করলো রুহান ওর সাথে এতোবড় বিশ্বাসঘাতকতা!! রুহান তো তার বেষ্টফ্রেন্ড ছিল। রিসানের থেকেও বেশি আপন ছিল সে তুর্যর কাছে। কিন্তু সেই রুহান কেনো কেঁড়ে নিতে চায় তার হীরকে তার কাছে থেকে?? অনেক প্রশ্ন জমা হয়ে আছে তুর্যর মাথায়। কিন্তু কোনো প্রশ্নেরই উত্তর নেই। কোথায় পাবে সে এতো উত্তর! কে দূর করবে তার বিষাদ!
সারাদিন কিয়ারার গতি বিধির উপর নজর রেখে মাষ্টার মাইন্ড পর্যন্ত পৌঁছানোর প্ল্যান করেছিল তুর্য। সে প্ল্যনে সাকসেসফুল হয়েছে। কিয়ারার পিছু নিয়ে R অক্ষরের নামের মানুষটার দেখা পেয়েছে সে। কিন্তু মানুষটার চেহারা দেখে পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেছে তুর্যর। সে স্বপ্নেও ভাবতে পারে নি তার ভাইয়ের মতো বেষ্টফ্রেন্ড তার আসল শত্রু। এতোবড় ধোঁকা সামলে নিতে বেশ হিমসিম খাচ্ছে তুর্য।
হঠাত একটা কার তুর্যর কারের সামনে এসে পরলো। বেপোরয়াভাবে কার ড্রাইভ করায় আর ড্রাইভিং এ মনোযোগ না থাকায় তুর্য কন্ট্রোল করতে পারলো না আর গাড়ি বাম দিকে বেঁকে গেলো। একটা গাছের সাথে বারি খেয়েছে তার কার। মাথায় ব্যথা পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেছে তুর্য।
।
।
।
।
।
।
।
।
।
রাত ১১ টা বেজে ১২ মিনিট! তুর্য এখনও বাড়ি ফিরে নি। ফোনটাও বারবার নট রিচেবল বলছে। টেনশন হচ্ছে আমার অনেক। এই লোকটা আমাকে একটুও শান্তিতে থাকতে দেবে না। কেনো এতো কষ্ট দেয়। সেই সকালে বেরিয়ে গেছে এখনও ফেরার নাম নেই। আমার কি চিন্তা হয় না!! ফোনটা বিছানায় ফেলে পায়চারি করছিলাম তখন মোবাইলটা বেজে উঠলো। নিশ্চই তুর্য ফোন করেছেন। ফোনটা হাতে নিতেই দেখলাম তুর্যর বডিগার্ড জন কল করেছে। কি মনে করে এতো রাতে জন ফোন করলো! কলটা রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বললো,
— হ্যালো ম্যাম!
— হ্যাঁ জন বলো। তোমার স্যার কোথায়? এতো রাত হলো এখনও ফিরে নি।
— ম্যাম স্যার এক্সিডেন্ট করেছেন এখন হসপিটালে এডমিট আছে।
জনের মুখে তুর্যর এক্সিডেন্টের কথা শুনতেই মোবাইলটা আমার হাত থেকে পরে গেলো। এটা কি শুনলাম আমি! এটা কিভাবে সম্ভব! তুর্যর এক্সিডেন্ট! হসপিটাল! না আমি হয়তো ভুল শুনেছি জন অন্যকিছু বলছিল। আমিই শুনতে পাই নি। আরেকবার জনকে জিজ্ঞাসা করতে হবে। কিন্তু আমি যে নড়তে পারছি না। মনে হচ্ছে পা দুটো অবস হয়ে যাচ্ছে। চোখেও কেমন ঝাপসা ঝাপসা দেখছি। আচ্ছা আমি কি জ্ঞান হারাচ্ছি!! বুঝতে পারছি না। শরীরটা নিস্তেজ হয়ে মনে হচ্ছে মেঝেতে ঢলে পরলো। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। ঝাপসা চোখে কি যেনো দেখতে পাচ্ছি, “তুর্যর হাত ধরে এক বুড়ো মহিলা কোথায় যেনো টেনে নিয়ে যাচ্ছে,, তুর্যকে সে জরিয়ে ধরে রেখেছে। বুড়ো মহিলার চেহারা টা অনেক পরিচিত। হয়তো আমি দেখেছি তাকে।”
ফোনের ওপাশ থেকে জন এখনও হ্যালো হ্যালো করেই যাচ্ছে। কিন্তু হীর অজ্ঞান হয়ে মেঝেতে পরে আছে। অনেকক্ষণ পরেও হীরের সাড়া না পেয়ে জন লাইন টা কেটে দিয়ে তিয়াস চৌধুরীকে ফোন করে সব বললো।
তনিমা তুর্যর ঘরে এসে দেখে হীর এখনও অবচেতন অবস্থায় নিচে পরে আছে। অনেক চেষ্টার পরেও যখন হীরের জ্ঞান ফিরে আসে না তখন সবাই হীরকে হসপিটালে নিয়ে যায়।
তুর্যকে যেই হসপিটালে এডমিট করা হয়েছে হীরকেও সেখানেই এডমিট করা হয়েছে। সৌভাগ্যক্রমে তুর্যর তেমন কোনো ক্ষতি হয় নি শুধু মাথায় আর হাতে একটু কেটে ছিলে গেছে। তুর্যকে ঘুমের ঔষধ আর পেইন কিলার দিয়ে ঘুম পারিয়ে রাখা হয়েছে।
হীরের চেকআপ শেষে হীরকেও মেডিসিন দিয়ে রাখা হয়েছে। হঠাত্ এক্সিডেন্টের কথা শুনে হীর স্ট্রেসে জ্ঞান হারিয়েছিল।
বেশকিছুক্ষণ পেরিয়ে গেছে হীর ঘুমিয়ে আছে। রাহি আর তাফসি হীরের মাথার কাছে বসে আছে। ডাক্তার বলেছে কিছুক্ষণের মধ্যে হীরের জ্ঞান ফিরে আসবে। ঐদিকে তুর্যর অবস্থাও আগে তুলনায় অনেকটা ভালো। যেকোনো সময় জ্ঞান ফিরে আসতে পারে।
হঠাত্ হীর “তুর্য” বলে চিৎকার করে উঠলো। হীরের চিৎকারে তাফসি রাহি দুজনেই ভয় পেয়ে যায়। হীর পাগলের মতো চিৎকার করছে আর হাত থেকে স্যালাইনের ক্যানোলা গুলো টেনে খুলছে। রাহি আর তাফসি হীরকে থামানোর চেষ্টা করছে কিন্তু এই মুহূর্তে হীরের সাথে পেরে উঠছে না। হীরের চেচামেচিতে বাইরে থেকে তনিমা আর তিয়াস দৌড়ে ভিতরে আসে। হীর এখনও পাগলের মতো ছোঁটাছুটি করার চেষ্টা করছে। তনিমা গিয়ে হীরকে জরিয়ে ধরলো।
— হীর এমন করছিস কেনো? কি হয়েছে তোর?
— আম্মু তুর্য! তুর্য কোথায়? তুমি জানো উনি আমাকে ছেড়ে গেছেন এজন্যই আমার এক্সিডেন্ট হয়েছে। তুর্য কি ফিরে আসে নি? বলো না আম্মু চুপ করে আছো কেনো? তুর্য কোথায়?
তনিমা কি উত্তর দেবে বুঝতে পারছে না। হীর এগুলো কি সব বলছে! হীরের আবার কখন এক্সিডেন্ট হলো আর তুর্যই বা কখন ওকে ছেড়ে গেলো। তনিমা হীরের মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। হীর নিজের প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে সেখান থেকে বেরিয়ে গেলো। বেরিয়ে যেতেই রায়ানকে সামনে পেলো।
— হীর তুই এভাবে ছুটছিস কেনো?
— রায়ান ভাইয়া তুর্য কোথায়? আমি তোমার পায়ে পরি আমাকে তুর্যর কাছে নিয়ে যাও। কেউ বলছে না তুর্য কোথায়!
— হীর রিলাক্স কর প্লিজ। তুর্য ঠিক আছে। এইতো সামনের রুমেই আছে। আয় আমি নিয়ে যাচ্ছি।
রায়ান হীরকে তুর্যর সামনে নিয়ে গেলো।
তুর্যকে দেখতেই বুকের ভিতরটা ছ্যাঁত করে উঠলো আমার। তুর্যর মাথায় ব্যান্ডেজ, হাত ছিলে গেছে অনেকটা, পায়েও হয়তো ব্যথা পেয়েছে। নিজেকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পেরে ছুটে গিয়ে তুর্যর বুকে আঁছড়ে পরলাম। হয়তো তুর্যর মাত্রই জ্ঞান ফিরেছিল। তুর্য একহাত দিয়ে আমাকে জরিয়ে ধরলেন। আমি আর আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। হাওমাও করে কেঁদে দিলাম তুর্যর বুকে মাথা রেখে। কতোদিন পর তুর্যকে দেখছি আমি আর আজকেই তার এই অবস্থা।
তুর্য আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন আস্তে আস্তে। আমি বুঝতে পারছি তুর্যর কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু কান্না যে থামাতে পারছি না। অনেকক্ষণ এভাবে থেকে চোখ মুছে নিলাম। তুর্যর মুখটা আমার দুহাতে আজলে নিয়ে মন ভরে তাকে দেখছি। তুর্য আমার দিকে প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। হয়তো জানতে চাচ্ছেন আমি এভাবে কেনো তাকিয়ে আছি। কিছু না বলে তুর্যর কপালে একটা চুমু এঁকে দিলাম। তুর্য কিছু একটা বলতে চাচ্ছিলেন কিন্তু আমি ইশারায় কথা বলতে মানা করে দিলাম। এখন তুর্যর বিশ্রাম প্রয়োজন।
তুর্য ঘুমিয়ে আছেন, আমি তার ডান হাতটা আমার দুহাতের মুঠোয় নিয়ে বসে আছি। তখন রুহান এলেন সেখানে। রুহান এসে কিছুক্ষণ তুর্যর দিকে তাকিয়ে রইলেন। তার চোখের দিকে আমার নজর পরতেই আমার বুকটা কেঁপে উঠলো। অসম্ভব লাল হয়ে আছে চোখ দুটি। এতোটাই লাল হয়ে আছে যে তাকালেই ভয় করছে। চোখের কোণায় অবশ্য পানিও টলমল করছে কিন্তু এমন লাল হয়ে থাকার কারণ টা আমার ধারণার বাইরে। রুহান কিছুক্ষণ তুর্যর মাথার কাছে দাড়িয়ে থেকে হসপিটাল থেকে চলে গেলেন।
আমি আগের মতোই নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তুর্যর দিকে। আজ মন ভরে দেখবো আমি আমার স্বামীকে। আমার ছোটবেলার ভালোবাসাকে। সব মনে পরে গেছে আমার। তুর্যর সাথে কাটানো ছোটবেলা, নয় বছর বয়সের পুতুল খেলার মতো বিয়ে, বড় হওয়ার সাথে সাথে ভালোলাগা ভালোবাসায় রূপ নেওয়া। আমার জন্য তুর্যর করা পাগলামি গুলো! সব মনে পরেছে আমার। তুর্য আর আমার বিয়ে! বিয়ের দুদিন পর এক্সিডেন্ট। ভীষণ কান্না পাচ্ছে আমার। তুর্য আমার জন্য কতো কষ্ট করেছেন। প্রতিটা সময় তার কিভাবে কেটেছে আমি ছাড়া!
আমিও তো তুর্যর সাথে কতো অন্যায় করেছি। যা নয় তা বলেছি উনাকে। চরিত্রহীন, অমানুষ ছিহঃ নিজের উপর নিজের ঘৃণা হচ্ছে। যেই মানুষটা আমাকে এতোটা ভালোবেসেছে সেই মানুষটাকে আমি এতোটা কষ্ট দিয়েছি। সৃষ্টিকর্তা আমাকে কখনই ক্ষমা করবেন না। আমি কিভাবে এই মানুষটাকে ভুলে গেলাম! কিভাবে এতো কষ্ট দিলাম তাকে! আমার মা-বাবা! তারা কোথায়? জ্ঞান ফিরার পর তাদের দেখতে পাই নি। তারাও আমার সাথেই এক্সিডেন্ট করেছিল। তবে কি তারা আর এই পৃথিবীতে নেই!!! আমার বাবা মা আর নেই!! আমি এতিম হয়ে গেছি! আমার বুক ফেঁটে কান্না আছসে কিন্তু কাঁদতে পারছি না। তুর্যর প্রচুর বিশ্রাম প্রয়োজন। তুর্যর বুকে মাথা রেখে মুখ চেপে কেঁদে যাচ্ছি।
একটা নদীর পাড়ে গাড়ি থামিয়ে, গাড়িতে হেলান দিয়ে দাড়িয়ে ড্রিংক করছে রুহান। তুর্যকে সে ঘৃণা করে প্রচন্ড ঘৃণা করে কিন্তু তুর্যর এই অবস্থা সে মেনে নিতে পারছে না। তার কোনো ভাই নেই। বন্ধুত্বের শুরু থেকে তুর্যকেই সে ভাইয়ের জায়গা দিয়েছে জীবনে। কিন্তু সেই তুর্যই তার কলিজার টুকরার হত্যাকারী।
কিভাবে ক্ষমা করবে রুহান তুর্যকে! কিভাবে ভুলে যাবে রুহির লাশটাকে! আজও চোখ বন্ধ করলে রুহির হাসি মুখটা দেখতে পায় রুহান। তার আদরের ছোট বোন, তার কলিজার টুকরার হত্যাকারীকে কিভাবে সে ক্ষমা করতে পারে।
মদের বোতলে মুখ লাগিয়ে পুনরায় সেই দৃশ্য মনে করছে রুহান।
।
।
।
।
।
।
৩ বছর আগে লন্ডনে আত্মহত্যা করেছিল রুহানের একমাত্র ছোট বোন রুহি। রুহি রুহানের বাসায় থাকলেও যখন সে আত্মহত্যা করে তখন রুহান মিউজিক অ্যালবামের কাজে লন্ডনের বাইরে ছিল। বাড়ি ফিরে যখন জানতে পারে তার বোন আর এই পৃথিবীতে নেই সম্পূর্ণরূপে ভেঙে পরেছিল রুহান। তুর্যও তখন বাংলাদেশে ফিরে এসেছিল, যার কারণে সে রুহির মৃত্যুর কথা জানে না। মর্গে রুহির লাশটা দেখে সহ্য করতে না পেরে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল রুহান।
তিনদিনপর রুহির পোষ্টমর্টামের রিপোর্ট হাতে পেলে সে জানতে পারে রুহি ২ মাসের অন্তঃসত্ত্বা ছিল। বিয়ের আগেই প্রেগন্যান্ট ছিল রুহি! এটা জানার পর রুহান মানসিক ভাবে আরো ভেঙে পরে। রুহির মৃত্যুর প্রায় ১ মাস পর একদিন রুহির ঘর থেকে রুহান একটা চিঠি খুঁজে পায়। যেটাতে লেখা ছিল, “রুহির অনাগত সন্তানের বাবা তুর্য। কিন্তু তুর্য আগে থেকেই বিবাহিত আর তার ওয়াইফকে অনেক ভালোবাসে। এজন্য সে রুহিকে বিয়ে করতে পারবে না। রুহির পেটের সন্তানকেও তুর্য মেনে নেবে না যার জন্য আর কোনো উপায় না পেয়ে রুহি আত্মহত্যা করেছে।” তুর্যকে রুহি পছন্দ করতো এটা রুহান আগে থেকেই জানতো কিন্তু তুর্য বিবাহিত এজন্য কখনই রুহিকে তুর্যর দিকে আগাতে দেয় নি। কিন্তু রুহান কল্পনাতেও ভাবে নি যে রুহির সাথে তুর্য এসব কিছু করবে। এসব জানার পর আর রুহান ঠিক থাকতে পারে নি। অনেকবার চেষ্টা করেছে তুর্যকে জানে মেরে ফেলার। কিন্তু তুর্যকে আঘাত করতে গেলে বারবার রুহানের বুক কেঁপে উঠতো। কারণ এই তুর্যকে সে একটা সময় ভাই মানতো। এজন্য রুহান প্ল্যান বানালো তুর্যকে জীবিত লাশ বানিয়ে রাখার। তুর্য যেমন তার জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস কেড়ে নিয়েছে,, সেও তেমনি তুর্যর জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান জিনিস,,,, হীরকে কেড়ে নেবে।
রুহান চাইলেই হীরকে জানে মারতে পারতো কিন্তু সে তুর্যকে আরো বেশি কষ্ট দিতে চায়। হীর মারা গেলে তুর্য হয়তো ১/২ বছর কাঁদবে কিন্তু হীর ওর কাছে থেকে দূরে সরে এলে এই কষ্ট টা তুর্য সারাজীবন উপলদ্ধি করবে। তাই তো হীরের এক্সিডেন্টের পর সে ডাক্তারকে দিয়ে হীরকে ড্রাগস্ দেওয়াতো। যাতে হীর তুর্যর অস্তিত্বই ভুলে যায়। হয়েছিলও তাই কিন্তু তুর্যর ভালোবাসা আবারো হীরকে ওর কাছে টেনে এনেছে।
মদের বোতলটা খালি হয়ে গেলে নিচে ছুড়ে দিয়ে ভেঙে ফেললো রুহান।
?
?
হাসপাতালে ওয়েটিং রুমে বসে আছে তাফসি। কাঁদতে কাঁদতে চোখ ফুলে গেছে তার। দুই কাপ কফি হাতে রায়ান তাফসির পাশে এসে বসে পরলো। তাফসি নির্লিপ্ত দৃষ্টিতে রায়ানের দিকে তাকিয়ে আবারো চোখ নামিয়ে নিলো।
রায়ান তাফসির এভাবে ভেঙে পরা রূপটা মেনে নিতে পারছে না। তার দুষ্টু, চঞ্চল তাফসিকেই ভালো লাগে। তাফসি আলতো করে রায়ানের কাঁধে মাথা রেখে চোখের পানি ছেড়ে দিলো। কাঁধের দিকটা ভেজা মনে হতেই রায়ান বুঝতে পারলো তাফসি কাঁদছে। কেনো যেনো তাফসির কান্না সহ্য করতে পারছে না রায়ান। বুকের বা পাশে চিনচিনে ব্যথা করছে তার। তাফসির চোখের পানি মুছে দিয়ে তাকে বুকে জরিয়ে নিলো রায়ান।
তুর্য জ্ঞান ফিরার পর থেকে বারবার রুহানের কথা জিজ্ঞেস করছে। কিন্তু কেউই জানে না রুহান কোথায় আছে।
কিয়ারা রুহানকে লুকিয়ে ফোন করলো, উদ্দেশ্য তাকে বলা যে তুর্য বারবার তাকে খুঁজছে। কিন্তু রুহানের ফোনটা সুইচড্ অফ বলছে বারবার।
চলবে..
[গঠনমূলক মন্তব্য আশা করছি। ভুল-ত্রুটি ক্ষমার চোখে দেখবেন। ধন্যবাদ]