সেই তুমি পর্ব-০৭

0
3802

#সেই_তুমি?
#পর্ব_০৭
#Tabassum_Kotha

বাড়িতে গিয়ে নিজেকে ঘরেরে ভিতর বন্দী করে নিলো রায়ান। অনেক কষ্টে এতোক্ষণ চোখের পানি গুলো ধরে রেখেছিল। এখন যেনো আর চোখের পানি বাঁধ মানছে না রায়ানের। ভীষণ ভালোবাসে হীরকে সে, স্বপ্নেও কল্পনা করে নি কখনও এভাবে হীরকে হারিয়ে ফেলবে। চরম ভুল করেছে রায়ান। হীরকে একা ফেলে যাওয়াটাই ওর সবচেয়ে বড় ভুল ছিল। একটা ভুলের জন্য আজ সে তার হীরকে হারিয়ে ফেলছে। কিন্তু রায়ান এতো সহজে হেরে যাবার পাত্র না। সে জানে হীর ওর স্মৃতি শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তাই এতো সহজে সে রায়ানকে ভুলে তুর্যকে আপন করে নেবে না। এখনও কিছুটা হলেও আশা বাকি আছে।
বারান্দায় দাড়িয়ে সিগারেটে টান মারছে আর হীরের কথা ভাবছে রায়ান। যে করেই হোক হীরের সাথে দেখা করতে হবে তার। হীরকে ফিরিয়ে আনতে হবে। হীরকে ছাড়া রায়ানের জীবন অচল। কিছু একটা ভেবে হাতের সিগারেট টা ফেলে দিয়ে হীরকে ফোন করলো রায়ান।

— হ্যালো হীর! প্লিজ ফোনটা রাখিস না। একটু কথা বলবো শুধু। রাখিস না ফোনটা।

— রাখবো না। আমারো অনেক কিছু বলার আছে।

— একটু দেখা করতে পারবি? কাল?

— ঠিক আছে। আমি আসবো।

— সত্যি আসবি তো?

— হুম আসবো।

রায়ান ফোনটা রেখে দিলো। চোখে মুখে আনন্দের ঝলক রায়ানের। হয়তো হীরকে নিজের করে ফিরে পাওয়ার আশা টা আবারো জেগে উঠলো।

রায়ানকে ফোনে বলে দিলাম যে দেখা করবো। কিন্তু কিভাবে? তুর্য জানতে পারলে কি আবার উল্টা পাল্টা কিছু করবে? কিন্তু রায়ানের কাছে অপরাধী হয়ে থাকতে পারবো না আমি। তাকে সবটা জানাতেই হবে। মাথার যন্ত্রণাটা আবার শুরু হয়েছে। ঔষধটা খেয়ে নিলাম। শুয়ে আছি কিন্তু চোখে ঘুম নেই। কেনো যে আমার জীবনেই সব সমস্যা আসে বুঝি না। সব তো ভালোই চলছিল। জীবনে কোনো ঝামেলাই ছিল না। তুর্য নামক ঝড়টা এসে আমার জীবন উলট পালট করে দিলো। এই লোকটাকেও আমি বুঝি না। কখনও মনে হয় আমাকে ভালোবাসে আবার কখনও মনে হয় সবটাই তার অভিনয়।

অনেক রাত হয়েছে তুর্য এখনও ঘরে ফিরে নি। কোথায় আছে দেখার জন্য নিচে নামতেই দেখলাম তুর্য, কিয়ারা, তাফসি আর রিসান হাসাহাসি করছে। কিয়ারা আড্ডার ছলে বারবার তুর্যর কাছে আসার চেষ্টা করছে। না চাইতেও কেনো বারবার আমার চোখ তুর্য আর কিয়ারার উপর আটকে যাচ্ছে। খুব অস্বস্তি হচ্ছে। কিয়ারার এমন ঢলাঢলি সহ্য করতে পারছি না আমি। কোনো কিছু না ভেবেই তুর্যর কাছে চলে গেলাম।

— শুনছেন?

তুর্য অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। যেনো ভুত দেখেছে।

— কি হলো শুনছেন?

— তুমি এভাবে ডাকছো আমায়! (অবাক হয়ে)

— কেনো আমি কি ডাকতে পারি না?

— না ঠিক তা নয়। বলো কি বলতে চাও।

— আপনি ঘরে আসুন। অনেক রাত হয়েছে আর আমার ঘুম পাচ্ছে।

তুর্য কিছু বলতে যাবে তার আগেই কিয়ারা বলতে শুরু করলো,

— আরে হীর ভাবি ঘুম পাচ্ছে তো ঘুমাও। তুর্যকে ছাড়া যাবে না। তুর্য আমার সাথে আই মিন আমাদের সাথে থাকুক। এতোদিন পর দেখা আমাদের একটু আড্ডা দেবো না!!

কিয়ারার কথায় যেনো কেউ আমার শরীরে আগুন ধরিয়ে দিলো। মেয়েটার সাহস দেখে অবাক হচ্ছি আমার স্বামীকে আমার সাথে যেতে দেবে না। আমি তুর্যর হাত ধরে উনাকে উঠালাম।

— কিয়ারা আপু, তোমরা আড্ডা কালকে দিনে আবার দিও। কিন্তু এই সময়টা স্বামী-স্ত্রীর পারসোনাল। এই সময় তার ভাগ আমি কাউকে দিতে পারবো না।

তুর্য এখনও আমার দিকে হা হয়ে তাকিয়ে আছে। হয়তো এমন কথা আমার মুখ থেকে সে আশা করে নি। তুর্যকে উদ্দেশ্য করে আবারো বললাম,

— চলুন ঘরে।

— হুম চলেন মহারাণী।

মহারাণী! কেমন যেনো পরিচিত লাগছে শব্দটা। ওতো কিছু না ভেবে ঘরে চলে এলাম। তুর্য ফ্রেশ হতে গেছে। আর আমি ভাবছি আমি এসব কি বললাম নিচে। তুর্যর সাথে কিয়ারাকে দেখে এতো হিংসা কেনো হলো আমার? যেসব কথা নিচে বলে এলাম ওগুলোই বা কেনো? আমার কথার আবার অন্য কোনো অর্থ বের করবেন না তো তুর্য?

ব্যালকোনিতে দাড়িয়ে নিজে নিজেই কথাগুলো ভাবছিলাম তখনি হঠাত কেউ পিছন থেকে জরিয়ে ধরলো। আচমকা এমনটা হওয়াতে আমার চোখ দুটো বড় বড় হয়ে গেছে। চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে আমার ঘাড়ে নাক ঘসছে তুর্য। মনে মনে যা ভেবেছিলাম তাই হয়েছে। আমার বলা কথাগুলোর উল্টো অর্থই বের করেছে তুর্য। এই লোকটা কেনো যে এতো বেশি বোঝে!! তুর্যর হাত দুটো আমার কোমড়ে বিচরণ করছে। কেমন যেনো ঘোরের মতো লাগছে সব। আমাকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে দিয়ে আমার মুখটা তার দুহাতের আজলে নিয়ে নিলেন তুর্য। নেশা লাগানো চোখে তাকিয়ে আছেন আমার দিকে। কেনো জানি না ভীষণ লজ্জা লাগছে। তুর্য আস্তে আস্তে তার মুখটা আমার মুখের কাছে আনছেন। তার এতো কাছে আসাতে আমার নিশ্বাস খুব দ্রুত উঠা নামা করছে। তুর্য তার ঠোঁট দুটো এগিয়ে আনছিল তখনি কি মনে করে আমি তাকে থামিয়ে দিলাম। তুর্য ভ্রু কুঁচকে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে আমি মানা করলাম কেনো। তার এভাবে তাকিয়ে থাকায় আমার অস্বস্তি হচ্ছিল একটু।

— ওভাবে কি দেখছেন?

— থামিয়ে দিলে যে!

— আমি না বলেছি নিজে থেকে আপনার কাছে আসবো না।

— তাহলে নিচে থেকে ডেকে আনলে কেনো পারসোনাল সময় কাটাবে বলে?

— ঐ কিয়ারা শাকচুন্নির থেকে সরিয়ে আনতে। কিভাবে ঢলাঢলি করছিল দেখেছেন?

— কিহ?

— আরেহ দেখেন নি! কিভাবে আপনার সাথে বারবার গা ঘসাঘসি করছিল। একজন বিবাহিত পুরুষের সাথে কেউ এমন চিপকে থাকে? তাও আবার তার বউর সামনে?? এজন্যই নিয়ে এসেছি আপনাকে।

— কেমন যেনো পোড়া পোড়া গন্ধ পাচ্ছি। আর ইউ জেলাস?

— আমি আর জেলাস!! হাহ!! মোটেও না।

— ওহ আচ্ছা। তাহলে আমি যাচ্ছি।

— কোথায় যাচ্ছেন?

— কিয়ারার কাছে।

— কিয়ারার কাছে!! মানে কি?

— তুমি তো কিস করতে দিলে না। কিন্তু কিয়ারার কাছে গেলে সবই দেবে।

— সব দেবে মানে?

— সব মানে বোঝো না? সব মানে সব। (চোখ টিপে)

— ছোট বাচ্চা নই আমি। সব মানে বুঝি। কিয়ারা আপনাকে সব কেনো দেবে?

— কিয়ারা ছোট থেকেই আমাকে পছন্দ করে। তাই একবার আমি ওর কাছে গেলেই সব দিয়ে দেবে।

— আপনি ওর কাছে কেনো যাবেন? আপনি যাবেন না।

— এখন ঘরে না পেলে বাইরে তো যেতেই হবে কি করার বলো।

— না আপনি যাবেন না।

— কেনো বলো তো?

——-

— আচ্ছা রুম টা লক করে রাখো আমি যাচ্ছ,,

তুর্যকে আর কিছু বলতে না দিয়ে উনার ঠোঁট দুটো নিজের ঠোঁট দিয়ে চেপে ধরলাম। কিছুক্ষণ এভাবে থেকে উনাকে ছেড়ে দিলাম।
তুর্য হতভম্ভ হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি নিজেও নিজের কাজে লজ্জিত। না জানি কি হয়েছিল আমার। আমি যে এমন কিছু করতে পারি সেটা আমার ধারণার বাইরে ছিল। আমি একটু দূরে দাড়িয়ে লজ্জায় মাথা নিচু করে আছি। তুর্য আমার দিকে আগাচ্ছে। তুর্য আমার কাছে এসে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি এখনও লজ্জায় তার দিকে তাকাতে পারছি না। হয়তো তাকালে বুঝতে পারতাম তুর্য কেমন নেশা ভরা দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছেন। আমাকে খাটে শুইয়ে দিয়ে তুর্য নিজের সব ভর আমার উপর ছেড়ে দিলেন।



সকালে গোসল করে বসে আছি কখন তুর্য উঠবে, বের হবে বাসা থেকে আর আমি রায়ান ভাইয়ের সাথে দেখা করতে যাবো। কিন্তু তুর্যর উঠার কোনো নাম নিশানাই নেই। এইযে মরার মতো পরে পরে ঘুমাচ্ছে উফফ। একটা মানুষ এতো কিভাবে ঘুমায়। নিচে গিয়ে কিচেন থেকে একবার ঘুরে এলাম। তুর্য এখনও ঘুমাচ্ছে। হঠাত মাথায় একটা শয়তানি বুদ্ধি খেললো। এক গ্লাস পানি তুর্যর মুখে ঢেলে দিলাম। তুর্য হকচকিয়ে লাফ দিয়ে উঠে পরলেন। আর তুর্যর এমন কাকভেজা রূপ দেখে আমি হেসে কুটিকুটি হচ্ছি। তুর্য রাগী দৃষ্টিতে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। হাসিও পাচ্ছে আবার ভয় ও পাচ্ছি। আমি যেতে যেতে আলমারির সাথে আটকে গেলাম। তুর্য এসে আমাকে জরিয়ে ধরে তার ভেজা চুলগুলো ঝাকিয়ে সব পানি আমার মুখে ছিটিয়ে দিলেন। আমি এখনও মুখ টিপে হেসেই যাচ্ছি। তুর্য আমাকে কোলে তুলে খাটে শুইয়ে দিলেন।

— কি করছেন ছাড়েন!

— না ছাড়বো না। এটা তোমার পানিশমেন্ট।

— কিসের পানিশমেন্ট?

— আমাকে ঘুম থেকে উঠানোর আর ভিজিয়ে দেওয়ার।

— এতো বেলা পর্যন্ত কেউ ঘুমায় নাকি?

— রাতে তো ঘুমোতেই দিলে না। এখন কি সকালেও ঘুমাবো না?

— আপনার লজ্জা নাই তাই না। এগুলো কেউ বলে!!

— এই তুমি কি লজ্জা পাচ্ছো? তোমার গাল দুটো লাল হয়ে গেছে।

— লজ্জা কেনো পাবো। আপনি সরুন আমার উপর থেকে দরজা খোলা আছে কেউ এসে পরবে।

— কেউ আসবে না। আর এলেই বা কি আমাদের বিয়ে হয়ে গেছে। আমরা রোমান্স করতে পারি।

কথাটা বলেই তুর্য আমার ঠোঁট দুটো নিজের দখলে নিয়ে নিলেন। আর ওই সময়ই কিয়ারা দৌড়ে রুমে ঢুকে গেলো। আমাকে আর তুর্যকে এভাবে দেখে কিয়ারা জোরে চিৎকার দিয়ে উঠলো। কিয়ারাকে দেখে আমি আর তুর্য দুজনেই ভীষণ লজ্জা পেয়েছি। তুর্য আমাকে ছেড়ে উঠে দাড়ালো আর আমি আঁচল টা ঠিক করে নিলাম। এমন পরিস্থিতির জন্য আমরা কেউই প্রস্তুত ছিলাম না। তুর্য কিছু না বলে ওয়াশরুমে চলে গেলেন। আমি লজ্জায় লাল হয়ে নিচে তাকিয়ে আছি। লজ্জা কাটিয়ে কিয়ারার দিকে তাকাতেই দেখলাম কিয়ারার চোখে পানি টলমল করছে। এই পানির রহস্য আমি বুঝতে পারলাম না।

তুর্য বাসা থেকে বের হলে আমিও বেরিয়ে পরলাম, উদ্দেশ্য রায়ান ভাইয়ার সাথে দেখা করা। পার্কে গিয়ে ঢুকতেই দেখি রায়ান ভাইয়া আগেই বসে আছে। ভাইয়ের সামনে যেতেই সে আমাকে জরিয়ে ধরলো। আমি আগের মতোই মূর্তির ন্যায় দাড়িয়ে আছি। রায়ান ভাই আমাকে ছেড়ে তার সামনে বসিয়ে দিলেন। কিভাবে কথা শুরু করবো বুঝতে পারছিলাম না। কিছুক্ষণ চুপ থাকার পর রায়ান ভাইয়া নিজেই বলা শুরু করলেন।

— হীর আমি জানি তুই এই বিয়ে ইচ্ছে করে করিস নি, নিশ্চয়ই এর পিছনে বড় কোনো কারণ ছিল। কালকেও তুই বললি তুই উপায়হীন ছিলি। আমাকে বল হীর তোর কি সমস্যা ছিল যার জন্য তুই অন্য কাউকে বিয়ে করলি।

রায়ান ভাইয়ার কথায় আমার চোখ ভিজে গেছে। মানুষটা এখনও আমাকে কতো বিশ্বাস করে। ভরসার একটা হাত মাথায় পেয়ে সব খুলে বললাম রায়ান ভাইয়া কে। বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পরলাম।
আমার সব কথা শুনে মনে হচ্ছে রায়ান ভাইয়া আকাশ থেকে পরলো।

— এতো কিছু হয়ে গেছে তোর সাথে হীর আর তুই একটা বারও বলিস নি আমাকে? তুই যদি সেদিন রাতেই আমাকে সব বলতি পরদিন সকালেই আমরা বিয়ে করে নিতাম। তাহলে আর ওই তুর্য তোকে ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করতে পারতো না।

— আমি কখনও স্বপ্পেও ভাবি নি আমার সাথে এমন হবে। একদম সাদাসিধে একটা মেয়ে ছিলাম আমি। সেই আমার জীবনে এতো উথাল পাতাল। আমি যদি এর পরেও তোমাকে বিয়ে করতাম সেটা তো তোমাকে ঠকানো হতো ভাইয়া।

— তুই কিছু ভাবিস না। তুর্য সবকিছু জোর করে করেছে। তোর ইচ্ছা ছিল না। তাই তুই ওই বাড়ি আর ফিরে যাবি না। আজকে এখনি আমার সাথে পালিয়ে চল। আমরা অনেক দূরে চলে যাবো যেখানে তুর্য কেনো ওর ছায়াও পৌঁছাতে পারবে না।

রায়ান ভাইয়ার ইমোশনটা আমি বুঝতে পারি আর সম্মানও করি কিন্তু তুর্যকে ছেড়ে আমি পালাতে পারবো না তার হাত ধরে।

— না ভাইয়া। আমি তুর্যকে ছেড়ে আপনার সাথে যেতে পারবো না। আপনি আমাকে ভুল বুঝবেন না। কিন্তু তুর্য আমার স্বামী। তুর্য আমার সাথে যাই করেছে কিন্তু আমি জানি সে আমাকে ভালোবাসে। হয়তো আজো মুখে সে কিছুই বলে নি কিন্তু তার চোখ বলে দেয় সে আমাকে ভালোবাসে।

— তুই এসব কি বলছিস হীর!! যেই লোকটা তোর সাথে এতোবড় অন্যায় করলো তুই তার সাথে থাকতে চাইছিস!!

— সেই লোকটাকে আমি ভালোবেসে ফেলেছি রায়ান ভাই। এখন সে চাইলেও তার থেকে দূরে থাকা আমার পক্ষে সম্ভব না।

— হীর তুই পাগল হয়ে গেছিস।

— তুমি যা ইচ্ছে ভাবতে পারো। আমি শুধু চেয়েছিলাম তুমি সত্যি টা জেনে নেও আর আমাকে পারলে ক্ষমা করে দিও।

রায়ান ভাইয়াকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সেখান থেকে চলে গেলাম।

এতোক্ষণ হীর আর রায়ানের থেকে একটু দূরে বসে সবটা দেখছিল তুর্য। এতোক্ষণ চিন্তিত থাকলেও এখন তার মুখে একটা প্রশান্তির হাসি আছে। রায়ান এখনও আগের পজিশনেই বসে আছে। হয়তো অনেকটাই অবাক হয়েছে।

স্মৃতির উপর ভালোবাসা নির্ভর করে না। ভালোবাসা তার রাস্তা ঠিকই খুঁজে নেয়। তুর্যর ভালোবাসার কাছে হেরে গিয়ে হীরও ভালোবেসে ফেলেছে তুর্যকে।

তুর্য সেখান থেকে চলে গেলো।

আজকে মনটা একটু ভালো, খুশি খুশিও লাগছে বেশ। রায়ান ভাইকে সবটা বলতে পেরে মনের একটা বোঝা নেমে গেছে। কিন্তু আমি কি সত্যি তুর্যকে ভালোবেসে ফেলেছি? তুর্যর মতো একটা খারাপ মানুষকে কিভাবে ভালোবাসলাম আমি? কথাগুলো ভাবতে ভাবতে ঘরে যাচ্ছিলাম তখন কিয়ারার ঘরের বাইরে থেকে কান্নার শব্দ পেলাম। কারো কথা কান পেতে শুনা ঠিক না কি নিজের কৌতুহলকে দমিয়ে রাখতে না পেরে শুনতে লাগলাম কি বলছে কিয়ারা। যতোদূর বুঝছি কিয়ারা ফোনে কথা বলছে।

— এমনটা করো না প্লিজ। তুমি তো জানো আমি তোমাকে কতোটা ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া আমি কি নিয়ে বাঁচবো? তুমি ওই কালকের মেয়েটার জন্য আমাকে ছেড়ে দিতে চাইছো!! তোমার সব কথা আমি শুনেছি। যেভাবে চাইছো ঠিক সেভাবেই নিজেকে তোমার কাছে সপে দিয়েছি। এখন যখন আমার এই অবস্থা তখন তুমি আমাকে ছেড়ে দিচ্ছো! কেনো তুর্য, কেনো এমন করছো? বলো না প্লিজ।

কিয়ারার মুখ থেকে তুর্যর নাম শুনে আমার বুকটা ছ্যাঁত করে উঠলো। তার মানে তুর্য আর কিয়ারার আগে থেকেই রিলেশন ছিল। তার মানে আমি তুর্য আর কিয়ারার মাঝখানে চলে এসেছি! এরপর কিয়ারা যা বললো তা শুনার পর আমার পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেলো।

— প্লিজ তুর্য এমন করো না। আমার কথা নাই বা চিন্তা করলে, তোমার অনাগত সন্তানের কথাটা চিন্তা করো। এই পৃথিবীতে তোমার সন্তান আসতে চলেছে। ওর বাবার পরিচয় ছাড়া আমি কিভাবে ওকে এই সমাজে আনবো বলো? একটা বার আমাদের সন্তানের মুখের দিকে তাকিয়ে হলেও আমাকে ফিরিয়ে দিও না।

কিয়ারার ঘরের সামনে থেকে আস্তে করে সরে এলাম। আমার পা দুটো যেনো আর চলছে না। তুর্য এতোটা নিচে নামতে পারে ভাবতেও আমার কষ্ট হচ্ছে। আমি যে তুর্যকে ভালোবাসতে শুরু করেছিলাম। আর সে কি না অন্য একটা মেয়ের সন্তানের বাবা! এই মুহূর্তে আমার কান্না করা উচিত কিন্তু চোখ দিয়ে পানি পরছে না।

চলবে..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে