Monday, October 6, 2025







সুতোয় বাঁধা জীবন পর্ব-০৫

#সুতোয়_বাঁধা_জীবন
লেখনীতে : তামান্না বিনতে সোবহান
পর্ব – পাঁচ

-‘কী রে আর কত দেরী? সবাই এসে পড়বে যে!’

রান্নাবান্নার তোড়জোড় শেষ হয়েছে মাত্র। শর্মী ও রুহামা মিলেই রান্নার সব দায়িত্ব সামলেছে। এই বাড়িতে অতিথি আপ্যায়ন হয় জমিয়ে। কোনো হিংসা-বিদ্বেষ ছাড়া, লোভ-লালসা ছাড়া। বাড়ির ভেতরের দৃশ্য ঢেকে রাখার এই সুন্দর মুহূর্তটাতে খুব করে দক্ষ শিল্পীর মতো নিখুঁত অভিনয় ও মায়া-মমতা জড়ানো গলায় নিজেকে তুলে ধরে শর্মী। এতে কেউ বুঝবেই না, সে বাড়ির লোকজনের সাথে কেমন ব্যবহার করে। বাইরের মানুষ জানে, সে যোগ্য কর্ত্রী এবং ভীষণ মিশুকে স্বভাবের একটা মেয়ে।

ঘর্মাক্ত মুখখানি ওড়নার প্রান্ত দিয়ে মুছে নিল রুহামা। গতকালকের ঘটনা দিব্যি ভুলে গেল সে। হাসিমুখে বলল,
-‘এইতো ভাবী। সব কাজ ইতিমধ্যেই শেষ। তুমি একবার চেক করে নাও। আমি গোসল শেষ করে আসছি।’

-‘আচ্ছা যা। তাড়াতাড়ি তৈরী হয়ে আয়। মেহমান এসে তোকে এই বেশে দেখলে, লজ্জায় মাথা কাঁটা যাবে আমার।’

মানুষ এত নিষ্ঠুর ও স্বার্থপর হয়, শর্মীকে না দেখলে বোঝাই হতো না রুহামার। কত অবলীলায় আপন মানুষদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে যায় সে! আবার মানুষের সামনে একদম শান্তশিষ্ট মেয়ে সাজার ভান ধরে থাকে। যেন ভাজা মাছটা উলটে খেতে জানে না। শর্মীর মুখে এমন লাজ-লজ্জার কথা শোনে বলল,

-‘তোমার মাথা থাকলে তবে তো কাঁটা যাবে।’

-‘একদম খোঁচাবি না। আমি কি মাথা ছাড়া চলি?’

ঝগড়াঝাটি মোটেও ভালো লাগে না রুহামার। তবে শর্মীর এইসব কাজকর্ম তাকে শান্ত থাকতে দেয় না। মেজাজ গরম হয়ে যায়। এই ভালোমানুষী, এই মুখোশের সামনে-পেছনে থাকা দুটো মুখ, এটাই সহ্য হয় না তার। গা জ্বলে উঠে। ঘৃণা, রাগ, ক্ষোভ, ফুটে উঠে মুখে। চুপ করে থাকতে পারে না বলেই, ফট করে মুখ খুলে বসে। একেকটা জবাব দিয়ে ঠাণ্ডা করে দেয় শর্মীকে। তবুও এই নারী পালটায় না। কেমন দিনকেদিন রঙিন রঙিন খোলস্ পরে নিজেকে আড়াল করে রাখে। দুটো রূপকে দুইভাবে বাঁচিয়ে চলাই যেন এর স্বভাব। এসব নিতে পারে না দেখেই মেজাজ সবসময় চড়ে থাকে। এখনও তাই হলো। তিক্ত স্বরে বলল,

-‘মাথা ছাড়া-ই তো চলো। তোমার যদি মাথা থাকত, তবে এত বিবেকহীন হতে না। এটা যে তোমার আপন ফুপির বাড়ি, আমরাও যে তোমার কাজিন্, এটা ভুলে যেতে না। তুমি এই যুগের মেয়ে। শিক্ষিত। বুদ্ধিমতী। তোমার সাথে টিপিক্যাল বউদের চিরচেনা আচরণ একদমই খাপ খায় না। অথচ তুমি ঠিক এটাই করো। ভবিষ্যতে যখন তুমিও শাশুড়ি হবে, তোমার ভাবী ও আপন লোকজন যখন তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে, সেদিন বুঝবে ঠিক কেমন লাগে। তুমি কতটা নিচে নেমে এসেছ, আর তোমার মানসিকতা কতটা সস্তা হয়েছে সেটাও উপলব্ধি করবে।’

-‘খুব বেশি বেড়ে যাচ্ছিস্ না? ডানা গজিয়েছে? দাঁড়া, তোর ডানা ভাঙার ব্যবস্থা করছি।’

-‘ওসব ভয় আমাকে দেখিও না তো। নিজের চর্কায় তেল দাও। বাচ্চাকাচ্চা ঠিকঠাকমতো মানুষ করো। নয়তো মায়ের মতো তুমিও একদিন, কপাল চাপড়াবে।’

তর্কবিতর্কের ইতি টেনে নিজের রুমে দৌড় দিল রুহামা। শর্মী শুধু আগুন গরম চোখে তাকাল। কিছু বলতে না পারার দুঃখে দাঁতে দাঁত চেপে দাঁড়িয়ে রইল। মনে মনে সিদ্ধান্ত নিল, এই ঘরটা যেহেতু তার, সংসারও তার, তাহলে এই ঘরকে নিজের করে নিবেই একদিন। সেটা যেভাবে হয়, হোক। নিজের লাভ-ক্ষতি সে ষোলো’আনাই বুঝে।

***

-‘রুহান, তুমি এখানে?’

বাড়ির মূল প্রবেশদ্বারে পা রেখে, রুহানকে ঘরের একপাশ থেকে অন্যপাশে ছোটাছুটি করতে দেখেই প্রথমদফায় একবার চমকাল উষাদ। দাঁড়িয়ে থেকেই প্রশ্ন করল। রুহানও দৌড় থামিয়ে অবাক চোখে দরজার পানে চেয়ে রইল। একে একে সবাইকে দেখার পর শুধু মনে পড়ল এখান থেকে হোসনা বেগম ও সঙ্গে থাকা উর্মি নামক মেয়েকে সে চিনতে পেরেছে। কিন্তু উষাদ এখানে কীভাবে? তার ছোটো মনে অনেক প্রশ্ন জাগল। সে শুধু বিস্মিত স্বর নিয়ে বলল,

-‘স্যার, আপনি! আমাদের বাসায়!’

মেহমানদের ভেতরে আসার কথা বলবে কী, সে দৌড় দিয়ে রুহামাকে ডাকতে ডাকতে ভেতরের ঘরের দিকে এগিয়ে গেল। উষাদ চারপাশে চোখ বোলাচ্ছিল সবে। তখনই ছুটে আসলেন আতিকা জাহান। সালাম দিয়ে দু’হাতে জড়িয়ে ধরলেন হোসনা বেগমকে। আনন্দঘন কণ্ঠে বললেন,

-‘রাস্তায় কোনো অসুবিধা হয়নি তো বেয়ান?’

হোসনা বেগম প্রশস্তচিত্তে হেসে বললেন,
-‘একদমই হয়নি। কেমন আছেন আপনি?’

-‘আলহামদুলিল্লাহ্! আল্লাহ্ ভালো রেখেছেন। বসুন, ক্লান্ত নিশ্চয়ই? আমি চা-নাশতার ব্যবস্থা করে আসি।’

হোসনা বেগম ছেলেকে কিছু একটা ইশারা দিতেই উষাদও ভাবনার জাল ছিঁড়ে বেরিয়ে আতিকা জাহানকে সালাম করল। বোন ও বোন জামাইয়ের দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে অস্বস্তি নিয়ে সোফায় বসল। ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা জুস ও সামান্য মিষ্টান্নভোজন নিয়ে মেহমানদের আগমনী মুহূর্তটা খুশি খুশি রবে মাতিয়ে তুলল শর্মী। মিশুকে স্বভাবের সাথে চট করে মিশে গেল উর্মি ও হোসনা বেগমের সাথে। জাফর, উষাদ, উষাদের মামা-মামী, সবার দিকে জুস বাড়িয়ে দিয়ে উষাদকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-‘একদম নিজেদের বাড়ি মনে করবেন। একটু পর তো এমনিতেও এটা আপনার বাড়ির অংশ হয়ে যাবে। কোনো সংকোচ ও লজ্জা রাখবেন না ভাইয়া। আমরা আপনার আপনজনই।’

উষাদ মাথা নাড়িয়ে হাসল। রুহান ও রুহামা দু’জনে এসে মেহমানদের সাথে কুশল বিনিময় করল। উমামার খুশি যেন আজ আকাশছোঁয়া। তখন রুহানকে দেখে এত খুশি হলো যে, খুশির আতিশয্যে বলেই ফেলল,

-‘ওমা এটা রুহানদের বাড়ি! আমরা নতুন মায়ের খুঁজে এখানে এসেছি ফুপি?’

উর্মি তার গালে চুমু খেয়ে বলেছিল,
-‘হ্যাঁ। এটাই তোমার মায়ের বাড়ি।’

এখন আবার রুহানকে এত প্রাণোচ্ছল মেজাজে ছুটে আসতে দেখে উষাদের কোল ছেড়ে দৌড়ে এলো সে। হাতে হাত রেখে বলল,

-‘জানো, আমি এখানে কেন এসেছি?’

রুহান এখনও সবকিছু জানে না। সে শুধু জানে মেহমান আসবে। কে বা কারা আসবে, কেন আসবে, এসব কিছুই তাকে বলা হয়নি। শুধু বলা হয়েছে, দুষ্টুমি কমিয়ে ভদ্র হয়ে থাকতে। সে সেইভাবে নিজেকে ভদ্র রেখে এদিক-ওদিক ছোটাছুটি করছিল। মামাতো ভাই-বোনদের সাথে খেলছিল। উমামার প্রশ্ন শোনে দু’দিকে মাথা নেড়ে বলল,

-‘না তো।’

-‘আমি বলি কেন?’

-‘বেড়াতে এসেছ সবাই?’

উমামা খিলখিল হাসি দিয়ে মুখ চেপে ধরল। রুহানের কানের কাছে ফিসফিস করে বলল,
-‘আমি এখানে আমার মাকে খুঁজতে এসেছি।’

রুহান চমকে গিয়ে বলল,
-‘তাই? কে তোমার মা?’

ঠোঁট উল্টাল উমামা। কে তার মা হবে সেটাই তো জানে না। এবার সে মন খারাপ করে না’বোধক ভঙ্গিমায় মাথা নেড়ে বলল,

-‘কেউ তো বলেনি, কে আমার মা হবে!’

-‘দাঁড়াও, কাউকে জিজ্ঞেস করে আসি।’

উমামা সায় দিতে পারল না। তার মনটাই খারাপ হয়ে গেল। সে আগ্রহী চোখে ইতিউতি দৃষ্টি দিল। কে তার মা হবে এটা বোঝার জন্য, কিন্তু আফসোস সেরকম কোনোকিছুই তার চঞ্চল চোখের পর্দায় এসে ভীড় জমাল না। সে মুখভার করে উর্মির কোল চেপে বসে রইল। নাশতাপানি কিচ্ছু মুখে দিল না।

উষাদ তখনও শান্ত হতে পারছে না। আতিকা জাহান, রুহামা ও রুহানকে দেখে তার মাথায় একটাই কথা এসেছে, ‘কোনোভাবে আজকের এই আয়োজন মিসেস রুদিতা ও রুহান রিলেটেড কিছু নয়তো! সর্বনাশ।’ বিড়বিড়িয়ে মায়ের দিকে তাকাল সে। প্রথমদিনের আলাপচারিতার খণ্ডাংশ ও রুহানের প্রতি তার অমনোযোগী আচরণ মায়ের সম্মুখে তুলে ধরে বলল,

-‘কাজটা কি ঠিক হলো? কাউকে পুরোটা না জেনে? তুমি কি জানো, মিসেস রুদিতা ঠিক কেমন মানসিকতার মানুষ? উনি আস্তো এক…।’

কথা শেষ করার আগেই হোসনা বেগম ছেলেকে আশ্বস্ত করতে চোখের পলক ফেলে বললেন,
-‘ঘাবড়াস্ না। যা ভয় পাচ্ছিস্ সেরকম কিছুই হবে না। প্রথম দেখা ও প্রথম আলাপ থেকে কাউকে পুরোপুরি জাজ করা উচিত না। আমাদের উমাকে দেখ্, কত খুশি দেখাচ্ছে আজ বাচ্চাটাকে।’

উমামা সবসময় হাসিখুশি থাকে, তবে আজকের খুশিটা যেন তার চোখেমুখে অন্যরকম এক রশ্মি ছড়াচ্ছে। উষাদ অবাক হলো। একদৃষ্টিতে মেয়েকে দেখল। মনে মনে আওড়ে গেল,

-‘কে জানে, এই সুখটার স্থায়ীত্ব ঠিক কতদিন!’

***

রওনক আসলো আরও তিন মুরব্বি তার মামা, ফুপা, খালু ও কাজী সাহেবকে সঙ্গে নিয়ে। কাজী সাহেব দেনমোহরের পরিমাণ জানতে চাইলে উষাদ বলল, দেনমোহর সে সীমিত রাখবে এবং নগদেই কাজ সারবে। বিপাশাকে যখন বিয়ে করে, তখন দেনমোহর ছিল তিন লাখ টাকা। প্রথমে বিপাশা সেই টাকা নেয়নি। কিন্তু যাওয়ার দিন শুধু টাকা নয়, গয়নাগাটি, ব্যাংক-ব্যালেন্স যা ছিল সব নিয়ে পালিয়েছিল। বিভিন্ন ওয়াজ-মাহফিল ও হাদীস-কালাম পড়ে জেনেছে দেনমোহরটা সবসময় সামর্থ্য অনুযায়ী এবং নগদে হওয়া উচিত। এখন তার লাখ লাখ টাকা নেই বিধায়, দেনমোহরের সংখ্যা কমিয়ে দিতে হচ্ছে। এজন্য সে মা ও বোন জামাইকে উদ্দেশ্য করে বলল,

-‘তোমরা একটু জিজ্ঞেস করে নাও, টাকার পরিমাণটা কম হলে কোনো অসুবিধা কি-না। যাওয়ার বেলা আমি চেক লিখে দিয়ে যাব।’

উর্মি এই বিষয়টা নিয়ে রওনক ও আতিকা জাহানের সাথেই আলাপ সারল। তাদের মতামত ও সিদ্ধান্তের উপরেই উষাদ দেনমোহরের জায়গায় পঞ্চাশ হাজার পাঁচশত দশ টাকা দেয়ার মনোভাব পোষণ করল। কাজী সাহেব সেটাই কাগজে-কলমে নগদ মোহরানা হিসেবে কাবিননামায় তুলে নিলেন। এরপর পাত্রীর এ্যাজিন নিতে সব মুরব্বিরা মিলে রুদিতার রুমে প্রবেশ করলেন। উষাদ শুধু দীর্ঘশ্বাস ফেলে আসন্ন ঝড়-তুফানকে মোকাবেলা করার প্রস্তুতি নিল। মনে মনে খুব করে প্রার্থনা করল, এবার যেন সব ঠিকঠাক হয়। এখনও ভয় ও আতঙ্ক থেকে বের হতে পারছে না সে। কেবলই মনে হচ্ছে, মিসেস রুদিতা দ্বিতীয় বিপাশা। যদিও এটা কেবল ধারণা ও মনের ভুল। আর কিছু না। তবুও কেমন অশান্ত মনে নিজেকে সামলে নেয়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে।

প্রতিদিনের মতোই সাদাসিধে একটা জামা পরেছে রুদিতা। তাকে শাড়ি পরে সাজগোজ করার কথা বলা হলেও, সেটা সে করেনি। সাধারণভাবেই নিজেকে উপস্থিত সবার সামনে প্রকাশ করল। এখনও উষাদের সাথে তার দেখা হয়নি, কথা হয়নি। এর আগেই হুলস্থুল এই কাণ্ড শেষ করার মিশনে নেমে পড়েছেন সবাই। সম্মতি যেহেতু আছে তাই কোনোপ্রকার বাধাবিপত্তি না ঘটিয়েই সিগনেচার ও ‘কবুল’-এর কাজটা সেরে ফেলল সে। চোখে কোনোপ্রকার পানি ও মনে কোনোপ্রকার দ্বিধাকে ঠাঁই দিল না। জীবন তাকে যেখানে নিয়ে দাঁড় করাতে চাইছে, সেখান অবধি সে পা ফেলবে। দেখা যাক্, সুখ তার ভাঙা কপালে আপন হয়ে ধরা দেয় কি-না!

ডাইনিং টেবিলে তখন বিয়ের পরবর্তী খানাদানা চলছে। রওনক খুব যত্ন ও দায়িত্বের সাথে মেহমানদের তদারকি করছে। খাওয়ার সময় উমামা বায়না ধরল, সে তার মায়ের সাথে খাবে। বাধ্য হয়ে উর্মি বাচ্চা মেয়েটাকে নিয়ে রুদিতার রুমের দরজায় দাঁড়িয়ে আলতো শব্দে ঠোকা দিল। বড়োসড়ো একটা ওড়না ভালোমতো মাথায় পেঁচিয়ে দরজা খুলতেই উর্মি বলল,

-‘খুবই দুঃখিত ভাবী। অসময়ে তোমাকে বিরক্ত করছি। রাগ করছ না তো?’

সেদিন উর্মির সাথে টুকটাক যা আলাপ হয়েছিল, তাতেই উর্মি তাকে অর্ধেক ভাবী বানিয়ে ফেলেছিল। আজ পুরোটা ভাবী হিসেবে পেয়ে তার খুশি যেন মুখের আওয়াজে চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ছিল। রুদিতা মুচকি হেসে বলল,

-‘না না। একদমই বিরক্ত হইনি আপু। কিছু লাগবে?’

সাথে থাকা উমামাকে দেখিয়ে উর্মি বলল,
-‘বায়না ধরেছে তোমার হাতে খাবে। কষ্ট না হলে…।’

উর্মির হাতে খাবারের প্লেট ছিল। উমামা তার পাশে দাঁড়িয়ে থেকে আগ্রহী চোখে তাকিয়ে রইল রুদিতার দিকে। অনুমতি না পেলে লটকে থাকবে, এটা উমামার স্বভাবে নেই। উষাদ খুব করে মেয়েকে সব ধরনের ভদ্রতা-সভ্যতা শেখাচ্ছে। যার কারণে, বায়না থাকলেও সে বাচ্চামো স্বভাব নিয়ে জেদ ধরে রুদিতার কোলে ঝাঁপিয়ে পড়তে পারছিল না। অবুঝ বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে এবার একটু অবাক হলো রুদিতা। বিস্ময়ভরা কণ্ঠে বলল,

-‘তোমাকে বোধহয় কোথাও দেখেছি! মনে করতে পারছি না। আমি কি তোমাকে চিনি?’

উমামা হেসে ঘাড় নেড়ে বলল,
-‘আমিও আপনাকে দেখেছি।’

-‘কোথায় দেখেছ?’

-‘আমাদের স্কুলে।’

চট করে স্মৃতির পাতায় গতদিনের দৃশ্য ভেসে উঠল রুদিতার। সে যখন রুহানের আইসক্রিমটা ছুঁড়ে ফেলেছিল, এই মেয়েটাই একটা পুরুষের পিছনে লুকিয়ে পড়েছিল ভয়ে। মনে পড়তেই গা জুড়ে ভয়ানক এক শীতল বাতাস বয়ে গেল তার। দুঃশ্চিন্তা, ভয় সবকিছু পিছনে ফেলে নিচু হয়ে দু’হাতে উমামার কাঁধ স্পর্শ করল। গালে চুমু খেয়ে বলল,

-‘সেদিন কি তুমি ভয় পেয়েছিলে?’

-‘হুম।’

-‘কেন?’

-‘যদি আমার আইসক্রিমটাও ফেলে দেন!’

না চাইতেও একটু-আধটু হাসিতে মুখ ভরিয়ে তুলল রুদিতা। বলল,
-‘আইসক্রিম কি খুব বেশি পছন্দ?’

-‘হ্যাঁ।’

-‘সেদিন তুমি যার পিছনে লুকিয়েছিলে, তিনি কে ছিলেন?’

-‘আমার বাবাই। আমি বায়না ধরেছিলাম, আইসক্রিম খাব। তা-ই বাবাই আমাদের দু’জনকে আইসক্রিম কিনে দিয়েছিল। কিন্তু…।’

ঘটনাটা দ্বিতীয়বার আর মনে করতে চাইল না রুদিতা। কথা ঘুরাতে বলল,
-‘আচ্ছা, বাদ দাও ওসব। তোমার ক্ষিধে পায়নি?’

-‘পেয়েছ তো। খুব।’

-‘তাহলে খাচ্ছ না কেন?’

-‘আমি আপনার হাতে খাব। আমাকে মুখে তুলে খাইয়ে দিবেন? প্রমিস্, একদম দুষ্টুমি করব না।’

এইটুকু বাচ্চার এমন আদরমাখা কথায় অবাক হলো রুদিতা। দু’হাতে তাকে জড়িয়ে ধরে আদরে আদরে ভরিয়ে দিল ছোট্ট মুখখানি। পরম মমতায় কোলে তুলে নিয়ে বলল,

-‘ঠিক আছে। একদম গুডগার্ল হয়ে থাকবে। তাহলেই খাইয়ে দিব।’

উমামাকে রুমে নিয়ে বিছানায় বসিয়ে দিল রুদিতা। উর্মিকে বলল,
-‘রুহানকে একটু পাঠাবেন আপু? এখনও খায়নি বোধহয়। দু’জনকে একসাথেই খাওয়াতাম।’

হাসিমুখে প্রস্থান করল উর্মি। রুহানকে ডাকতে গেল। উমামাকে বসিয়ে রেখে হাত ধুয়ে গ্লাসে পানি ঢালল রুদিতা। রুহান আসছে কি-না সেটা দেখতেই দরজার আড়াল থেকে খাবার টেবিলের দিকে নজর দিল। তাতেই তার দৃষ্টি থেমে গেল। অতি প্রিয় ক্লাস্ টিচারের পাশেই বসে আছে রুহান। লোকটা নিজ হাতে রুহানের মুখে খাবার তুলে দিচ্ছে। টুকটুক শব্দে কীসব গল্পও করছে। রুহান খুশিমনে খাচ্ছে। চাঁদের মতো ঝলমলিয়ে হাসছে। অথচ এই ছেলেটা মায়ের হাতে ভাত খেতে চায় না। কাছেই যে আসে না, খাওয়া তো অনেক দূরবর্তী কল্পনা।

***

-‘যাব না আমি কোথাও। মাম্মামের কাছেই থাকব।’

রুহানকে কপি করতে শিখে গেছে উমামা। তাই মা না ডেকে সরাসরি রুহানের ডাকটাও কপি করে বিদায়বেলা উদ্ভট এই বায়না ধরে বসল সে। আজ সে এখানেই থাকবে, তার নতুন মাম্মামের কাছে। কোনোভাবেই রুদিতার কোল থেকে তাকে টেনে আনা যাচ্ছে না। হাত-পা ছুঁড়ে কাঁদছে। উর্মি ধরতে গেলেই চিৎকার দিচ্ছে। লাতি দিচ্ছে। উমামার এমন কাজে শেষবেলা কিছুটা বিরক্তই হলো উর্মি। টেনেটুনেও ভাইঝিকে নিজের কাছে আনতে পারল না। বসার ঘরে এসে উষাদকে বলল,

-‘ভাইয়া, উমা আসছে না। আজ না-কি ও এখানেই থাকবে।’

উষাদের চোখেমুখে খানিকটা বিস্ময় ফুটে উঠল। বলল,
-‘বলিস্ কী?’

-‘তুমি একটু যাও না! অনেক রাত হয়েছে। এখন রওনা না দিলে কত দেরী হবে ভাবো তো।’

-‘আচ্ছা দেখছি।”

বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে উষাদের। সদ্য বিয়ে করা বউয়ের সাথে সামান্যতম চেনা-পরিচয় নেই তার, কীভাবে যে কথাবার্তা এগোবে সেটাই তাকে এতক্ষণ ঘুণপোকার মতো কুটকুট করে কামড়ে তার মস্তিষ্কের মধ্যে হাজারও চিন্তা-দুঃশ্চিন্তা ঢুকিয়ে দিয়েছে। অল্পক্ষণের আলাপ থেকে কতটুকু আর চেনা যায়? তবুও রুহানকে কোলে নিয়ে এগিয়ে গেল ভেতরের রুমের দিকে। সঙ্গে রুহামাও এগোলো। হাতে দু’কাপ কড়া লিকারের চা নিয়ে। বাইরে থেকে নক দেয়ার প্রয়োজন হলো না, রুহামা ভেতরে ঢুকে, পর্দা সরিয়ে উষাদকে রুমে প্রবেশের অনুমতি দিয়ে বলল,

-‘ভাইয়া ভেতরে আসুন।’

সংকোচ নিয়েই রুমের ভেতরে পা রাখল উষাদ। স্ব-শব্দে সালাম ঠুকল। মিনমিন স্বরে সালামের জবাব দিয়ে পর্যাপ্ত স্পেস নিয়ে দূরে সরে গেল রুদিতা। রুহামা তাকে বসার জায়গা করে দিয়ে বোনের কাছে গিয়ে উমামাকে কোলে আনার বাহানায় বলল,

-‘সোনামার কাছে আসো, মা।’

সেই একইভাবে পা নাচাল উমামা। দু’হাতে প্যাঁচিয়ে ধরল রুদিতার গলা। বলল,
-‘যাব না, যাব না, যাব না। কতবার বলেছি, যাব না। আমি মাম্মামের কাছেই থাকব।’

মেয়ের জেদ বুঝতে পেরে উষাদ বলল,
-‘থাকো। আমিও আজ রুহানকে খুব বেশি আদর করব। আমার কাছে ঘুম পাড়াব। উমার বদলে রোজ এখন রুহানকে নিয়েই স্কুলে যাব। তুমি বরং এখানেই থাকো। তোমার আর বাবাইয়ের আদরের দরকার নেই। আমি রুহানকে নিয়ে যাই?’

বাচ্চা মানুষ আর যাই মেনে নিক, নিজের আদরের ভাগে বাড়তি কাউকে ভাগ বসাতে দিবেই না। ফট করে রুদিতার কোল ছেড়ে নেমে পড়ল উমামা। ঝড়েরবেগে তেড়ে গিয়ে উষাদের কোল থেকে রুহানকে টেনে সরানোর জন্য হাত ধরে বলল,

-‘নামো তুমি। আমার বাবাইয়ের কোলে উঠেছ কেন? নামো বলছি।’

রুহান মন খারাপ করে নামতে চাইলে, উষাদ তাকেসহ নিজের মেয়েটাকে একসাথে কোলের কাছে ধরেবেঁধে বলল,
-‘এটা কি ঠিক হচ্ছে উমা?’

উমামা কথার অর্থ বুঝল না, শুধু অভিমানী চেহারা নিয়ে গাল ফুলিয়ে তাকিয়ে রইল। উষাদ তাকে বুঝানোর জন্য বলল,

-‘তুমি যদি রুহানের মাম্মামের কাছে আসতে পারো, তার আদর ভালোবাসায় ভাগ বসাতে পারো, তবে রুহান কেন আমার কাছে আসতে পারবে না?’

-‘তুমি শুধু আমার বাবাই।’

জেদী স্বরে বলল উমামা। উষাদ শোনে হাসল। বলল,
-‘ঠিক আছে। তাহলে তুমিও রুহানের মাম্মামকে মাম্মাম ডাকবে না। উনি শুধু রুহানের একার মাম্মাম। তোমার নোন।’

সঙ্গে সঙ্গে উষাদকে খামচি দিল উমামা। হাতের বাহুতে কামড় দিয়ে দাঁত বসিয়ে দিল। বলল,
-‘না। মানব না তোমার কথা। উনি আমার মাম্মাম।’

উষাদও ঘাড়ত্যাড়া মেজাজে বলল,
-‘তাহলে আমিও রুহানের বাবাই।’

-‘না বলছি তো।’

-‘আমিও তো বুঝাচ্ছি তোমাকে। তুমি বুঝতে চাইছ না।’

উমামা এতবেশি গাল ফুলাল যে, উষাদের কোল থেকে নেমে পড়ল। অভিমানে খানিকটা দূরে সরে বোবাকান্না জুড়ে দিল। উষাদ মেয়ের এই আচরণে মুচকি হেসে বলল,

-‘রাগ-অভিমানের সময় এটা নয় উমা। এটা হচ্ছে, সু-সম্পর্ক স্থাপনের একটা চমৎকার সময়। এসো আমার কাছে।’

উমামা আসল না। রুহামা তাকে কোলে নিয়ে বলল,
-‘রাগ করছ কেন? আমার আপুকে যদি তোমার মাম্মাম ডাকার অধিকার জন্মে থাকে, তাহলে তোমার বাবাইকেও রুহান বাবাই ডাকতে পারে, তারও সে-ই অধিকার জন্মেছে। কেন জানো?’

উমামা দু’দিকে মাথা নেড়ে বুঝাল, সে জানে না। রুহামা তার গালে চুমু খেয়ে আদুরে গলায় বলল,
-‘কারণ, তুমি আর রুহান এখন শুধু বন্ধুই নও, ভাই-বোন ও হও।’

-‘ভাই?’

-‘হ্যাঁ। আজ থেকে রুহান তোমার ভালো বন্ধু হওয়ার পাশাপাশি ভাইও। তুমি তার বোন। যদি তোমরা ভাই-বোন হও, তাহলে তোমাদের মাম্মাম ও বাবাই তো একই হওয়া উচিত, তাই না?’

উমামা ভাবুক নয়নে তাকিয়ে রইল। রুহামা বলল,
-‘যেহেতু আমার আপু এখন আর রুহানের একার মাম্মাম নয়, সে তোমার বাবাইয়ের ওয়াইফ্ হওয়ার পাশাপাশি তোমারও মাম্মাম হয়ে গেছে। সেইম ব্যাপারটা ঘটেছে রুহানের ক্ষেত্রে। রুহানের মাম্মাম তোমার মাম্মাম হওয়ার সাথে সাথে তোমার বাবাইও রুহানের বাবাই হয়ে গেছে।’

-‘ওয়াইফ্ কী?’

রুহামা অসহায় ফেইস নিয়ে উষাদ ও রাহার দিকে তাকাল। দুটো মানুষই আড়ালে মুখ লুকিয়ে হাসছে। বুঝাও এখন ওয়াইফের সংজ্ঞা। বিড়বিড়িয়ে উচ্চারণ করল রুহামা, ‘এই বাচ্চাকাচ্চা না এত বেশি জ্বালায়। যেটা বুঝাচ্ছি বোঝ না, এত কেন প্রশ্ন করবি?’ তবে মুখে বলল,

-‘সেটা তুমি এখন বুঝবে না। বড়ো হও, তখন বুঝাব। এখন সোনামার সাথে আসো, তোমার জন্য একটা গিফট আছে।’

চকচক করে উঠল উমামার চোখ। বলল,
-‘সত্যিই! কী গিফট?’

-‘অনেক সুন্দর একটা গিফট। চাই?’

-‘খুব চাই।’

বুঝিয়ে-সুঝিয়ে রুহান ও উমামাকে সাথে নিয়ে রুম থেকে প্রস্থান করার প্রস্তুতি নিল রুহামা। বোনের কাছে গিয়ে বলল,

-‘চা ঠাণ্ডা হয়ে যাচ্ছে আপু। আমি যাই, ওদেরকে গিফট দেখাই।’

দরজা আটকে চলে গেল রুহামা। অপ্রস্তুত ভঙ্গিমায় দু’জনেই বসে রইল। কারও মুখে কোনো কথা নেই। কারও দৃষ্টি কারও দিকে নেই। দু’জনই সদ্য তৈরী হওয়া পবিত্র সম্পর্ক নিয়ে নিজস্ব ভাবনা সাজিয়ে তাতে ডুব দিয়েছে আনমনে।

***

চলছে…

পূর্ববর্তী নিবন্ধ
পরবর্তী নিবন্ধ
গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ