#সাদা_মেঘের_আকাশ
(১০)
লেখক: হানিফ আহমেদ
তুমি?
হামিদুর রহমান খুব অবাক হয়েই জিজ্ঞেস করেছেন।
সে বলল,
ভিতরে প্রবেশ করার কথা বলবেন না?
হামিদুর রহমান বললেন,
আসুন।
তিনি দরজা বন্ধ করে সোফায় এসে বসলেন। মাথায় তো অনেক কিছুই আসছে। কেন এসেছে ও?
হামিদুর রহমান বললেন,
এতো রাতে আমার বাসায়? আর পালিয়েই বা আছো কেন আপনি সহ আপনার পরিবার?
নিয়াজ খুব মন খারাপ করে বলল,
স্যার আপনাকে সেদিন সব কিছু বলার পরেও আপনার মনে হয়, ওই খু’নগুলোর সাথে আমরা জড়িত?
তিনি চুপ থাকলেন৷ নিয়াজ আবারও বলল,
স্যার আমরা যদি খু’নি হতাম, তাহলে কী আমি আপনার কাছে আসতাম? লুকিয়েই থাকতাম। আমরা তো দেশের আইনের দিকেই তাকিয়ে আছি এখনো। কেন আইন নিজের হাতে তুলে নিতে যাবো। খু’ন গুলো হয়তো ওরাই করছে, নয়তো অন্য কেউ। যাদের উপর আমাদের মতোই অত্যাচার করেছে। আমরা আজ ভালো নেই। এভাবে পালিয়ে থাকতে হবে, আমরা কখনো কল্পনা করিনি। বাস্তব বড্ড কঠিন, যা কল্পনা করি তা পাই না, আর যা কখনো কল্পনাতেও নিয়ে আসিনা তাই হয় আমাদের সাথে।
স্যার বিশ্বাস করুন, খু’ন গুলো আমরা কেউ করিনি। আমরা পালিয়েছি জেল থেকে বাঁচার জন্য। আমাদের যদি আপনারা ধরে ফেলেন, তাহলে জেলে পচতে হবে আমাদের। ওরা চায় আমরা যেন এই পৃথিবীতে থাকি না। কীভাবে আকুতি করে বললে আপনি বিশ্বাস করবেন?
হামিদুর রহমান কিছুই বুঝতে পারছেন না। চার চারটা খু’ন তাহলে কে করেছে? নিয়াজের কথা কী তিনি বিশ্বাস করবেন? কিন্তু তিনি তো নিয়াজ সহ তার পরিবারকেই খুঁজছেন। তাহলে কী করবেন তিনি এখন। নিয়াজকে গ্রেফতার করবেন, নাকি ওকে বিশ্বাস করবেন।
তিনি চুপ থাকলেন, নিয়াজ আবার বলল
স্যার আপনি আমাদের সন্দেহ করে আমাদের খুঁজছেন। ওইদিকে যে আমরা যারা বাবা ডাকতাম যেই মানুষটিকে, সেই মানুষ সহ তার পরিবারকে খু’ন করা হয়েছে। দোষ দেওয়া হয়েছে অসহায় মেয়েটির উপর। কিন্তু জানেন সেই মেয়েটি সেদিন মাত্র বন্দী জীবন থেকে পালিয়ে আসছিল।
স্যার খু’নি এমন কেউ, যে নীরবে তার কাজ করে যাচ্ছে। কিন্তু আপনারা তাদের ধরতে পারছেন না।
হামিদুর রহমান উঠে দাঁড়ালেন। স্ত্রীর রুমে যেয়ে স্ত্রীকে দুই কাপ চা বানাতে বললেন। তিনি বিশ্বাস মনে ধরে রাখতে চাইলেন নিয়াজ বা তার ৬ভাই এই খু’নগুলো করেনি।
এসে নিয়াজের পাশে বসলেন।
নিয়াজ আপনাকে যদি বিশ্বাস করি। তাহলে আপনার ছয় ভাইকেই নির্দোষ ভাবতে হবে আমার।
নিয়াজ মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ বলল।
হামিদুর রহমান এবার বললেন,
আপনি এতোটা জোর দিয়ে কীভাবে বলছেন যে আপনার ভাইগুলোও নির্দোষ?
নিয়াজ হেসে বলল,
স্যার আমার ভাই গুলো আমাকে সন্দেহ করছে, হয়তো আমি এসব করছি। কিন্তু আমি কিছু করিনি। র’ক্ত আমার গরম হয়েছিল ঠিকই। কিন্তু সেদিন আমি আপনার সাথে কথা বলে নিজেকে বুঝাই৷ আমাদের একজন সৎ অফিসার আছেন।
হামিদুর রহমান চুপ থাকলেন, ভাবতে চেষ্টা করলেন। নিয়াজ কি সত্য বলছে। নাকি বাঁচার জন্য নিজেকে ভালো সাজাচ্ছে।
নিয়াজ উনার থেকে কোনো সাড়া না পেয়ে আবারও বলল,
বিশ্বাস করুন আমাকে।
হামিদুর রহমান এর স্ত্রী চা নিয়ে আসলেন। হামিদুর রহমান নিয়াজের হাতে চায়ের কাপ তুলে দেন।
নিয়াজ চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বলল,
কিছু তো বলুন আপনি। আমরা এভাবে আর কতো লুকিয়ে থাকবো?
হামিদুর রহমান বললেন,
আপনাকে না হয় বিশ্বাস করলাম। কিন্তু আপনার ভাইগুলোর সাথে তো আমার কথা হয় নি।
আপনি আমার উপর বিশ্বাস রাখুন। আমার ভাইগুলো কখনো মানুষ মা’রতে পারে না।
হামিদুর রহমান হেসে বললেন,
বিশ্বাস এমন একটি জিনিস যে, নিজের হাতকেও বিশ্বাস করা যায় না। শরীরে মশা বসলে হাত সেই জায়গায় আ’ঘাত করে। বিশ্বাস শব্দটি একটি পাহাড় সমান ভারি।
নিয়াজ চুপ থাকে। কী বলবে সে৷ চায়ের কাপটি হাত থেকে রেখে বলল নিয়াজ,
আমার সাথে এক জায়গায় যাবেন?
কোথায়?
যাওয়ার পরেই বুঝবেন কোথায়।
হামিদুর রহমান চিন্তিত হলেন। তার কী যাওয়া ঠিক হবে? এতে তো তার জীবনের ঝুকি আছে। কতো পুলিশের লোককেই তো এভাবে হ’ত্যা করা হয়েছে। সে কীভাবে যাবে। তাও এতো রাত। তার কী যাওয়া ঠিক হবে?
কোনো কথা না বলে রুমের ভিতর যান তিনি।
দুই মিনিট সময় নিয়ে স্ত্রীকে ছোট্ট করে সব বললেন তিনি। তার কী যাওয়া ঠিক হবে এতো রাতে? এই প্রশ্নটি করলেন কোল থেকে ঘুমন্ত মেয়েকে বিছানায় রাখতে রাখতে।
তিনি বিশ্বাস করেন, সব থেকে ভালো পরামর্শক হলো ঘরের নারী। সেটা স্ত্রী কিংবা মা অথবা বোন, মেয়েও হতে পারে। তাই তিনি পরামর্শ চাইলেন নিজের স্ত্রীর কাছে। উনার স্ত্রী সব শুনে বললেন,
দেখো ছেলেটা তোমার কাছে এসেছে। ওর সব কথা আমি শুনতেছি। মনে তো হচ্ছে ভালো। তুমি যাও। তবে যাওয়ার পূর্বে ওর সাথে দুই মিনিট বসে ভালো মন্দ কথা বলো।
হামিদুর রহমান আর কোনো প্রশ্ন করলেন না। সাহস পেয়েছেন স্ত্রীর সম্মতিতে।
নিয়াজের কাছে এসে এই বিষয়েই টুকটাক কথা বলতে শুরু করলেন। তখন উনার স্ত্রী এসে নিয়াজের নাম জিজ্ঞেস করে, এটা ওটা জিজ্ঞেস করে, তিনি সাধারণ ভাবেই তার সাথে দুই মিনিট কথা বললেন।
হামিদুর রহমান তৈরি হয়ে নিয়াজের সাথে বের হন। যাওয়ার পূর্বে ঘুমন্ত দুই মেয়ের কপালে চুমু এঁকে দেন। আর স্ত্রীকে বললেন, তোমাকে এসে তোমার পাওনা দিবো ইনশা আল্লাহ। উনি শুধু হাসলেন।
নিয়াজ উনাকে নিজের বাড়িতে নিয়ে আসে। উনি বুঝতে পারছেন না কী করতে চাচ্ছে ও।
এই বাড়ি তো আপনাদের?
নিয়াজ হ্যাঁ বলল শুধু।
নিয়াজ তালা খুলে ভিতরে প্রবেশ করে উনাকে নিয়ে।
হামিদুর রহমান খুব অবাক হলেন। কারণ ভিতরে তো আরো মানুষ আছে। এদের তিনি সেদিন দেখেছেন। এরা হলো নিয়াজের পাঁচ ভাইয়ের স্ত্রী।
উনি অবাক হয়ে বললেন,
এরা ভিতরে কীভাবে?
নিয়াজ খুব মন খা’রাপ করে বলল,
আমার ভাবিগুলো আজ কয়টা দিন ধরে এভাবেই ঘরবন্দী। বারবার বলার পরেও ওরা পালাবে না৷ কারণ ওরা নির্দোষ। তাই তারা পালাতে চায়নি কোনো ভাবেই। আমি একপ্রকার বাধ্য হয়েই তাদের ভিতরে রেখে বাহিরে তালা দিয়ে চলে যাই।
দেখুন আমার ভাবি গুলো কতোটা কষ্টে আছে। ওরা এভাবে দেয়াল বন্দী থাকার কথা? ওরা তো জানে আমরা কোনো দোষ করিনি। তবুও আমাদের পালাতে বলছে। কিন্তু ওরা পালায় নি। কতোটা কষ্টে আছি আমরা দেখুন। হয়তো আমিই প্রথম, যাদের কিনা পুলিশ খুঁজে বেড়াচ্ছে আমি তাদের একজন হয়েও একজন পুলিশ অফিসারের কাছে গিয়েছি। সত্যিই আমরা ভালো নেই। ভালো নেই এই আমার ভাবি গুলো। আমার এই ভাবিটি(রবিনের স্ত্রী) দুই মাসের প্রেগন্যান্ট। কতোটা কষ্ট পাচ্ছে বুঝতে পারছেন। ভাইয়া থাকলে কী আজ এরা কষ্ট পায়?
আমরা নির্দোষ। এভাবে লুকিয়ে থাকতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে। আপনি আমাদের প্রতি একটু দয়া করুন। আপনি প্রকৃত দোষী কে ধরে শাস্তি দিন।
হামিদুর রহমান কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন।
আপনি পালিয়ে যান। ওরা মামলা করেছে আপনি সহ আপনার ছয় ভাইয়ের উপর। আপনার ভাবিদের উপর না। তাদেরকে স্বাভাবিক ভাবেই জীবন কাটাতে বলুন। আমি তাদের বাজার থেকে শুরু করে সব কিছু করে দিবো প্রয়োজন হলে। কিন্তু আপনাদের পালিয়েই থাকতে হবে। আপনারা নির্দোষ যদি হন তাহলে ইনশা আল্লাহ স্বাভাবিক জীবনে ফিরবেন। এই বোনগুলোর দায়িত্ব আমি নিবো। সপ্তাহে একদিন আমি ওদের বাজার করে দিবো। আর ওরা যদি কেউ বাজার করতে পারে তাহলে তো ভালোই।
নিয়াজ যেন কিছুটা শান্ত হলো। মিনহা বলল,
আপনি আমাদের স্বাভাবিক ভাবে থাকতে দিলেই হবে। বাকিটা আমরা করতে পারবো।
হামিদুর রহমান আর কিছু বললেন না।
হামিদুর রহমান বাসায় আসেন রাত ১টার পর। নিয়াজ দিয়ে গিয়েছে উনাকে।
কেন জানি মনে হয় উনার, এই পরিবার নির্দোষ। তাইতো সুযোগ দিলেন। হয়তো এই কাজটি অসৎ, তবুও তিনি একটি সুযোগ দিলেন। পালিয়ে থাকুক।
উনার স্ত্রী উনার পাশে এসে বসলেন আর বললেন,
বলছিলাম না ছেলেটা ভালো।
আমারও তাই মনে হচ্ছে।
উনার স্ত্রী ফোন হাতে দিয়ে বললেন,
দেখো।
হামিদুর রহমান তাকিয়ে দেখলেন, উনি যখন নিয়াজের সাথে কথা বলছিলেন, সেই সময়ের ভিডিও।
উনি হাসলেন, একজন পুলিশ অফিসারের স্ত্রী বলে কথা। মুচকি হেসে স্ত্রীর কপালে চুমু এঁকে দিলেন।
আরো দুইটা দিন কেটে যায় কিন্তু খু’নিকে পাওয়া যায়নি আজো। কে খুন করেছে, সেটা পুলিশ এখনও জানতে পারেনি। এই রহস্য কবে সমাধান হবে সেই অপেক্ষায় পুলিশের লোকেরা।
তবে এই চারটি খু’ন এর ঘটনায় পুলিশ ভুলে গিয়েছে খালেদ আহমেদ এর পরিবারের খু’ন এর কথা। চৌধুরী পরিবারের চাপে পুলিশ এইদিকেই মন দেয়।
খু’নি যদি খু’নের পর কোনো প্রমাণ না রাখে, তাহলে তাকে ধরা সত্যিই খুব কঠিন।
জালাল চৌধুরী বাড়ি থেকে বের হয়ে যান। সবাই বাধা দিলেও তিনি বের হন। সাথে একটি চা’কু নিয়েছেন।
আজ কিছু একটা করবেন তিনি। নিজের দুই ভাই আর ভাতিজার খু’নের বদলা নিবেন। কিন্তু কাকে কীভাবে কোথায় মা’রবেন সেটা তিনি জানেন না। উনার গন্তব্য কি সেটাও জানেন না। তবুও বের হন। চৌধুরী পরিবারে কেউ হাত দিয়েছে তিনি হাত না, মাথাটাই কা’টবেন।
এই শপথ নিয়েই তিনি বের হয়েছেন। কারো কোনো কথাই শুনেন নি তিনি।
জালাল চৌধুরী বুঝতেই পারেন নি বদলা নিতে এসে নিজেই শিকার হয়ে যাবেন। উনার হাত দুটো বাঁধা। মুখটাও বাঁধা।
শরীর কাঁপছে উনার। মনে করার চেষ্টা করলেন, কী হয়েছিল কিছুক্ষণ পূর্বে।
পিছন থেকে কেউ তাকে কিছু একটা দিয়ে অজ্ঞান করে। তার পর আর কিছুই মনে নাই। এখন চোখ মেলে নিজেকে বাঁধা অবস্থায় পান। খোলা আকাশের নিচে তাকে বেঁধে রাখা হয়েছে। জায়গা টা তার খুব চেনা। মনে হচ্ছে তার বাড়িরই কাছে এমন কোনো জায়গা। কিন্তু পুরোপুরি ভাবে মনে করতে পারছেন না।
তার সামনে একজন মুখোশ পরা ব্যক্তি দাঁড়ায়। হাতে খুব বড় একটি রা’মদা। উনার মনে হচ্ছে এই চোখজোড়া তিনি চিনেন। কিন্তু মনে করতে পারছেন না কোনো ভাবেই।
নিজেকে ছাড়াবার সর্বোচ্চ চেষ্টা করে যাচ্ছেন জালাল চৌধুরী। কিন্তু পারছেন না কোনো ভাবেই। শরীর থেকে ডান হাত আলাদা করার কারণে উনার মনে হচ্ছে জীবনটা বুঝি এখনই শেষ। কিন্তু খু’নি এখনও আরো তিনটি অঙ্গ কা’টবে।
ডান হাত কা’টার পর যখন ডান পা কা’টতে পায়ের বাঁধন খুলে, তখনি জালাল চৌধুরী খুব জোরে লাত্তি দেন ওই ব্যক্তিকে।
পিছন ফিরে আর তাকান নি। দৌড়াতে তাকেন। যেভাবেই হোক তাকে বাঁচতে হবে। দুই মিনিট দৌড়ানোর পর রাস্তায় থাকা অনেক মানুষ তাকে দেখে তাকে থামিয়ে মুখ থেকে বেঁধে রাখা কাপড় খুলে।
জালাল চৌধুরীকে চিনে ফেলে সবাই। উনাকে ধরাধরি করে দুই মিনিট হেটেই চৌধুরী বাড়িতে ঢুকে ওরা।
জালাল চৌধুরীর এই অবস্থা কেউই আশা করে নি।
শরীরের একটি অঙ্গ তার সাথে নাই।
জালাল চৌধুরীকে তার পরিবার তাড়াতাড়ি হসপিটালে নেওয়ার জন্য গাড়িতে তুলে। জালাল চৌধুরী তার চাচাতো ভাই মাহাব চৌধুরীকে বললেন ওই জায়গার কথা, যেখানে তাকে খু’ন করার জন্য নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
মাহাব চৌধুরী ভাইয়ের কথা শোনে আর দেরি করেন নি। নিজের সাথে তার ছেলে এবং দুই ভাইকে নিয়ে যায়।
কিন্তু সেখানে যেয়ে শুধুই জালাল চৌধুরীর কা’টা হাতটি পায়। কোনো মানুষকেই পায় নি। সেই হাতটি নিয়ে ওরা বাড়িতে চলে আসে। তবে কিছুক্ষণ অপেক্ষা করেছিল। কেউ আসে কি-না। কিন্তু কেউ আসেনি।
ভাইয়া কে করেছে এমন?
চাচাতো ভাই মাশুক চৌধুরীর প্রশ্নে জালাল চৌধুরী নিজের কা’টা হাতের ব্যান্ডেজ এর দিকে তাকিয়ে বললেন,
কোনো মহিলা ছিলো৷ পরনে বোরখা। লাথি যখন মে’রেছিলাম তখন কেমন একটা শব্দ করে উঠে। কণ্ঠ তো মহিলার। কোনো মহিলা আমাকে খু’ন করার চেষ্টা করে।
আমার ভাইগুলো এবং ভাতিজাগুলোকে হয়তো এই মহিলা মে’রেছে। আজ আমি পালাতে না পারলে হয়তো আমাকেও আজ,,,
মাশুক চৌধুরী অবাক হয়ে ভাইয়ের পাশে বসে আছেন। এই খু’ন গুলো কোনো মহিলা করছে। তাহলে কে এই মহিলা?
জালাল চৌধুরীর দিকে তাকিয়ে বললেন তিনি।
ভাইয়া এবার আমরা কোনো মহিলাকেই বাঁচিয়ে রাখবো না। মেতে উঠবো আবারও। যেই মহিলাকেই শত্রু মনে হবে। সেই মহিলাই হবে আমাদের শিকার।
চলবে,,,
#সাদা_মেঘের_আকাশ
(১১)
লেখক: হানিফ আহমেদ
ফোনটি কান থেকে নামিয়ে চুপচাপ বসে আছেন সাজেদা বেগম। ছেলে পক্ষের সাথে এতক্ষণ কথা বললেন তিনি। ওরা জোর দিচ্ছে, নাওশিনকে তাড়াতাড়িই নিজের ঘরের বউ বানিয়ে নিতে চায়। দুইটা বছর তো অপেক্ষা করেছে তারা। এখন নাওশিনের বয়স ১৬ হয়েছে, চুপিচুপি বিয়ের কাজ সেড়ে নিলেই হয়। কেউ জানবে না। বাল্যবিবাহের মামলায় ফাঁসবেও না।
নাওশিনের যখন ১৪ বছর বয়স। তখন প্রথম তাকে কোনো ছেলে পক্ষকে দেখানো হয়। মেয়ের বিয়ে নিয়ে সাজেদা বেগম এবং আনিছুর রহমান একটি বিশেষ ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছিলেন। তাই তো নাওশিনের বয়সের দিকে তারা তাকান নি। তাদের চোখে নাওশিন এর সুন্দরটাই প্রাধান্য পায়।
নাওশিনকে যখন ছেলে পক্ষকে দেখানো হয়েছিল। তখন ছেলের বাবা আরমান শাহার খুব পছন্দ হয়। এমন মিষ্টি মেয়েকে যদি ছেলের বউ করে নিতে পারেন, তাহলে তার পরিবারটা খুব সুন্দর হবে। এমন সুন্দর মেয়েকে তো সব বাবাই চান নিজের ছেলের বউ হিসেবে। সেই দিক দিয়ে আরমান শাহাও চান এই মেয়েই ছেলের বউ হোক। তাই তো আর নাওশিনের বয়সের দিকে তাকাননি।
নাওশিনও যেন বেঁচে যাওয়ার পথ খুঁজে পেয়েছিল।
১৪বছরের নাওশিনের মনে বিয়ে নিয়ে এক নতুন অনুভূতির সৃষ্টি হয়। মনে বিয়ে শব্দ উঠলেই মুহূর্তেই মুখটি লজ্জায় লাল হয়ে যেত তার। মনের মধ্যে স্বপ্ন বুনছিল। বাবুইপাখি যেমন খুব যত্নে বাসা বুনে, তেমনি সেও বিয়ে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে শুরু করে।
একটি বেঁচে যাওয়ার স্বপ্ন। অ’ত্যাচার থেকে বাঁচার স্বপ্ন।
কিন্তু সেই স্বপ্ন মুহূর্তেই ভেঙে গিয়েছিল। যখন সে তার মা এবং মায়ের স্বামীর কথা শুনতে পায়।
চোখগুলো তার ভিজতে শুরু করে। বিয়ে নিয়ে বেঁচে যাওয়ার স্বপ্নটি ভেঙে চুরমার হয়ে যায়। যেই মনে বিয়ে নিয়ে অনুভূতির ভীড় জমেছিল। সেই মনেই বিয়ে নিয়ে ঘৃণা জন্মায়।
৫লক্ষ টাকা কাবিন হবে নাওশিনের বিয়ের। তারপর বিয়ে দুই মাসের মাথায় ডিভোর্স চাইবে নাওশিন।
স্বামী আনিছুর রহমান এর মুখে এমন কথা শুনে সাজেদা বেগম বললেন,
নাওশিন কী আমাদের কথায় রাজি হবে?
কেন হবে না, না হলে তাকে আমরা জোর করব।
সাজেদা বেগম বললেন,
যদি রাজি হয়ে যায়। তাহলে একসাথে কাবিনের ৫লক্ষ টাকা আমরা পেয়ে যাবো।
আনিছুর রহমান হেসে হুম বললেন।
কথাগুলো শুনে নাওশিন সেদিন দেয়ালে পিট ঠেকায়। চোখ থেকে অনবরত পানি পড়তে থাকে তার। তাকে দিয়ে ব্যবসা শুরু করতে চাচ্ছে ওরা। এমং নোং’রা চিন্তা কীভাবে মাথায় নিয়ে আসতে পারলো এরা। মা হয়ে মেয়েকে দিয়ে এমন খা’রাপ কাজ করানোর চিন্তা মাথায় নিয়ে আসতে উনার অন্তর একটাবারের জন্যেও কেঁপে উঠলো না।
নাওশিন আবারও ওদের কথা শোনায় মন দেয়।
নাওশিন যেমন সুন্দর একটা মেয়ে। এই সুন্দর এর জন্যই কতো বড়লোক ঘরের ছেলে পাবো আমরা। প্রতিটা বিয়েই কয়েক মাস যাবে, তারপর নাওশিনকে বলব কিছু একটা নিয়ে এমন ঝগড়া করতে। যেন ডিভোর্স পর্যন্ত যায়।
স্বামীর কথা শুনে সাজেদা বেগম হেসে বললেন,
প্রতিটা কাবিন ৫লক্ষ এর উপর দেওয়ার চেষ্টা করব। তাহলে কতো টাকার মালিক হবো আমরা বুঝতে পারছো তুমি।
নাওশিন এসব শুনে এতোটা ধাক্কা খায় যে, তার আর এসব শোনার মতো শক্তি কানে ছিলো না। তাই নিজের রুমে দৌড়ে যায় সে, বিছানায় শুয়ে শুয়ে শব্দহীন কান্নায় বালিশ ভেজাচ্ছিল।
বিয়ের মাধ্যমে বেঁচে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল। কিন্তু এই বিয়ে যে তাদের ব্যবসা হবে সে কখনো বুঝতে পারেনি।
তারপর যখন সে বিয়েতে রাজি হলো না। আ’ত্মহত্যার ভয় দেখালো, পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করল। তখন থেকেই তার বন্দী জীবন শুরু হয়। কারণ রাগের মাথায় বলে ফেলছিল নাওশিন।
তোমরা আমায় দিয়ে ব্যবসা করবে। আমি বলে দিবো এসব সবাইকে। আমি বিয়ে করবো না কখনো। যে বিয়ে নিয়ে তোমরা এমন ব্যবসার কথা ভাবছো, সেই বিয়ে আমি বেঁচে থাকতে করবো না।
হয়তো এই কথাগুলো যদি ওদের সামনে প্রকাশ না করে নিজের মধ্যে রাখতো। তাহলে হয়তো দুই বছর বন্দী জীবন কাটাতে হতো না তার। ১৪বছরের ছিলো বলেই এতোটা জ্ঞান ছিলো না তার, কোথায় কী বলতে হবে তখন যদি জানতো। তাহলে কষ্ট পেতে হতো না। বিয়ের পর যদি স্বামীকে সব বলার চিন্তা করত তাহলে হয়তো জীবনটা অন্য রকম হতো। কিন্তু তার কপালটাই খা’রাপ। এইজন্যই তো বন্দী থাকতে হয়েছে চার দেয়ালে।
সাজেদা বেগম ফোন রেখে কিছুক্ষণ বসেছিলেন একা। ওরা জোর দিচ্ছে। ছেলের নাকি পড়ালেখা শেষ হয়েছে এবার তারা বিয়ের কথা বলতে চায়।
মিথ্যে বলেছিলেন, যে নাওশিন কিছুদিন সময় চায়। ভালো সেজে ছেলের বাবার সাথে কথা বলেছিলেন সাজেদা। ওরাও অপেক্ষা করবে। সাজেদা বলেন নি কতোদিন অপেক্ষা করতে হবে।
আরমান শাহার ছেলে রুমন শাহার পড়ালেখা শেষ হয়েছে। পরিবারের সবাই মিলে রুমনকে রাজি করিয়েছেন বিয়ের জন্য। এর পূর্বেও সে বিয়ের জন্য প্রস্তুত ছিলো না। সে যখন শুনেছিল তার জন্য ১৪বছরের কোনো নারীকে বউ সাজিয়ে নিয়ে আসবে তার পরিবার। তখনই গর্জে উঠেছিল, এতো কম বয়সের মেয়েকে কেন সে বিয়ে করবে, দুনিয়াতে কী মেয়ের অভাব?
সাজেদা বেগম স্বামীর পাশে বসে বললেন,
ওরা ফোন দিয়েছিল।
কে?
ওই-যে নাওশিনকে দেখে গিয়েছিল, ওরা।
আনিছুর রহমান এবার হাত থেকে পত্রিকা রেখে স্ত্রীর কথায় মন দিলেন।
তুমি কী বললে?
সাজেদা হাত চুলকিয়ে চুলকিয়ে বললেন,
আমি আর কী বলব, বলেছি মেয়ে এখন বিয়ের জন্য রাজি না।
আনিছুর রহমান রেগে যান,
সত্যটা বললে কী হতো?
আরে এর ভিতর যদি নাওশিনকে পুলিশ পেয়ে যায়, তখন বলবো মেয়ে বিয়ের জন্য রাজি।
আনিছুর রহমান রেগেমেগে বললেন,
পুলিশ তোমার মেয়েকে পেয়ে বুঝি তোমার হাতে তুলে দিবে?
তো?
আরে গোবরে ভরা মাথার নারী, পুলিশ তখন নাওশিনকে জেলে ভরবে।
সাজেদা চুপ থাকলেন। সত্যিই তো নাওশিনকে পুলিশ ধরতে পারলে জেলেই নিবে।
তখন না হয় বলব যে, নাওশিন নির্দোষ।
আনিছুর রহমান কিছু বলতে চেয়েও বললেন না। পত্রিকা পড়ায় মন দিলেন। সাজেদা বেগম উনার কোনো উত্তর না পেয়ে রুম ত্যাগ করলেন।
জালাল চৌধুরীর সামনে বসে আছেন পুলিশ অফিসার হামিদুর রহমান। তিনি জালাল চৌধুরীর হাতের দিকে তাকিয়ে আছেন। একটি হাত শরীর থেকে আলাদা করেছে। হায়াত আছে বলেই সে বেঁচে আসতে পেরেছে।
আপনি দেখেছেন খু’নীকে?
পুলিশ অফিসারের প্রশ্নে তিনি বললেন,
হ্যাঁ দেখেছি। কিন্তু চিনতে পারি নি। তবে ওই খু’নি একজন মহিলা।
অফিসার অবাক হয়ে জিজ্ঞেজ করলেন,
মহিলা?
হ্যাঁ মহিলা। পরনে বোরখা ছিলো৷ লাথি মা’রার পর আমি কণ্ঠ শুনেছি। মেয়েলি কণ্ঠ।
হামিদুর রহমান চুপ থাকলেন। তাহলে খু’ন গুলো কোনো মহিলা করে যাচ্ছে? কিন্তু কোনো মহিলার এতো শক্তি কী আছে, একটি পুরুষকে বেঁধে কোথাও নিয়ে যেয়ে তারপর তাকে এতো নিষ্ঠুর ভাবে খু’ন করা।
জালাল চৌধুরী উনাকে চুপ থাকতে দেখে বললেন,
আমি যখন ওই চোখজোড়া দেখেছি। তখন মনে হয়েছে, আমি ওই খু’নীকে চিনি। দেখেছি আমি, ওই চোখ কতো চেনা। কিন্তু কোনো ভাবেই মনে করতে পারিনি, কে হতে পারে।
কণ্ঠ তো শুনেছিলেন?
হ্যাঁ, কিন্তু কণ্ঠ তো লাথি দেওয়ায় কেমন এক শব্দ করছে। কথা বলে নি তো সে।
হামিদুর রহমান চুপচাপ বসে থাকলেন। তাহলে সত্যিই কী নিয়াজ এবং তার পরিবার নির্দোষ। তিনি আবারও ভাবলেন, আচ্ছা এমন না তো, নিয়াজের ভাইদের স্ত্রীদের মধ্যে কেউ?
প্রশ্নটি মাথায় আসতেই উনার শরীর কেঁপে উঠলো। স্বামীদের কষ্ট তাদের সহ্য হচ্ছে না বলে কী তাদের মধ্যে কেউ এসব করে যাচ্ছে।
হামিদুর রহমান হসপিটাল থেকে চলে আসলেন। দুইজন মহিলা কনস্টেবলকে সাথে নিয়ে নিয়াজদের বাসার পাশে একটি ভুসিমাল এর দোকানে ওদের বসিয়ে চলে আসেন। তাদের পরনে তখন পুলিশের পোশাক ছিলো না।
মহিলা কনস্টেবল দুইজন পাশেই একটি ছোট্ট খাবার হোটেলে বসলেন। হোটেল থেকে বাসার গেইট দেখা যায় ভালো ভাবে।
সারা দিন চলে যায় বাসা থেকে কেউ বেরও হয়নি, এবং কেউ ভিতরে প্রবেশও করেনি।
দুজনের থেকে সব শুনে চিন্তায় পড়লেন তিনি। তাহলে কে করছে এসব?
কাকে সন্দেহ করবেন? খালেদ আহমেদ সহ তার পরিবারকে যে মে’রেছে সেও তো মেয়ে৷ তাকে সন্দেহ করবেন? কী যেন নাম, হ্যাঁ নাওশিন আনবার। কিন্তু ওই মেয়ের সাথে চৌধুরী পরিবারের কী সমস্যা।
উনি কাকে সন্দেহ করবেন, এই বিষয়ে চিন্তা করে কিছুই খুঁজে পাচ্ছেন না।
উনার মনে হচ্ছে খু’নি যদি নিজ থেকে না ধরা দেয়, তাহলে হয়তো থাকে ধরা কোনো ভাবেই সম্ভব না। কিন্তু খু’নি কী কখনো নিজ থেকে ধরা দেয়?
মাহাব চৌধুরী যিনি খুব শান্ত মাথার মানুষ। রেগে গেলেও বাঘের মতো গর্জন করেন না। তিনি নীরবে কাজ করার মানুষ। চাচাতো দুই ভাই এবং দুই ভাতিজাকে হারিয়ে মনটা উনার ভালো না। এখন আরেক চাচাতো ভাই জালাল চৌধুরীকেও হারাতে বসেছিলেন। ভাগ্য ভালো বলেই তাকে কিছু করতে পারেনি খু’নি।
এতক্ষণ তিনি চাচাতো ভাই জালাল চৌধুরীর পাশে বসে ছিলেন। উনার মুখ থেকে সব শুনলেন।
কোনো মহিলা এসব খু’ন করে যাচ্ছে। কে করছে এসব, কোন মহিলা। কিছুই তার মাথায় আসলো না।
মাহাব চৌধুরী হসপিটাল থেকে বের হয়ে রাস্তায় গাড়ির জন্য দাঁড়িয়ে আছেন। উনার বড় ছেলে আরাফ চৌধুরীকে ফোন দিয়ে বলেছেন গাড়ি নিয়ে আসতে। এটাও বলেছেন, সাথে যেন আর কাউকে নিয়ে আসে।
রাস্তায় গাড়ির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। বার-বার হাতের ঘড়ির দিকে তাকাচ্ছিলেন।
হঠাৎ কী ভেবে যেন রাস্তার পাশ থেকে একটি রেস্টুরেন্ট এর দিকে হাটা শুরু করলেন।
সন্ধ্যা হয়েছে মাত্র। এক কাপ চা হলে মন্দ হয় না। এইজন্য রেস্টুরেন্টের দিকে হাটা শুরু করলেন। মনে মনে ভাবছেন, শুধু চায়ের জন্য রেস্টুরেন্টে যাবেন? কিন্তু অহংকার যে, চৌধুরী পরিবারের সন্তান, এসব ছাড়া কোথায় বসবে চায়ের জন্য।
নিজের হাত বাঁধা অবস্থায় দেখে ভীষণ অবাক হন মাহাব চৌধুরী।
সামনে তাকিয়ে দেখলেন, মুখোশ পরা একজন মানুষ। কথা বলতে যেয়ে দেখলেন তার মুখ বাঁধা। জোরাজোরি করেও নিজেকে ছাড়াতে ব্যর্থ হন তিনি। গাড়ির শব্দ শুনতে পারছেন। উনার মনে হচ্ছে, উনি শহরের কাছে কোথাও। কিন্তু কীভাবে এখানে আসলেন? তিনি তো হাটছিলেন, কিন্তু এভাবে তিনি।
বুঝতে পারলেন তাকে অজ্ঞান করে এখানে নিয়ে আসা হয়েছে। কোনো একটা মানুষ দেখলো না?
মনে করার চেষ্টা করার পর উনার মনে পরল,
পিছন থেকে কেউ উনার মুখের কাছে কিছু ধরেছিল। তারপর আর কিছু মনে নেই।
সামনে থাকা মানুষটির দিকে তাকিয়ে বুঝার চেষ্টা করছেন, ভাইয়ের বলা সেই খু’নি কী?
উনার মনে হচ্ছে উনিও চোখজোড়া চিনেন। কিন্তু কে এই মানুষ। বুঝতে পারছেন না, মহিলা না পুরুষ। তবে বোরখা পরা৷ তাহলে কী মহিলা?
মাহাব চৌধুরীর চোখে অনেক মহিলার চেহারা ভেসে উঠছে। কিন্তু কোনো ভাবেই এই চোখজোড়া মিকাতে পারছেন না। কে?
খু’নি ঠিক পূর্বের মতোই কাজ শুরু করে। তবে প্রথমে পা দুটো আলাদা করে। সে হয়তো এই ভূল দ্বিতীয় বার করতে চায় না, তাই প্রথমে পা থেকে শুরু করে। একটি শিকার তার থেকে পালিয়ে যায়, দিয়ে যায় তাকে লাথি। তাই আজ আর কোনো ভুল না।
শরীরের চারটি অঙ্গ আলাদা করার পর এবার সে মুখ থেকে মুখোশ খুলে।
মাহাব চৌধুরী মৃ’ত্যুর দরজায় দাঁড়িয়ে এই মুখটি দেখে চোখজোড়া বড় করে করে তাকান, মুহূর্তে বুকটি ক্ষ’তবিক্ষত করা হয়। তবে এবার গলাতেও চালানো হয় চা’কু। কোনো সুযোগ দিতে চাননা সে। মৃ’ত্যু নিশ্চিত হওয়ার পর সে হাসি মুখে বিদায় নেয়।
আরাফ চৌধুরী গাড়ি থেকে নেমে রাস্তায় নিজের বাবাকে না পেয়ে ফোন দেয়। রিং হচ্ছে, কিন্তু ফোন রিসিভ হলো না। গাড়ি থেকে রাফি চৌধুরী নামে, আর বলল,
ভাইয়া তুমি দেখো চাচা কোথায় আমি বাবার কাছ থেকে আসি। রাফি, জালাল চৌধুরীর এক মাত্র ছেলে।
রাফিকে তার বাবা দেখে বললেন,
আবার কেন এসেছিস?
আরাফ ভাইয়ার সাথে এসেছি।
ওহ, কেন?
চাচা ফোন দিয়ে বললেন গাড়ি নিয়ে আসতে৷ ভাইয়া আমাকে সাথে নিয়ে আসলেন। আম্মু কোথায়?
জালাল চৌধুরী বললেন,
তোর আম্মু তো ডক্টরের সাথে কথা বলতে গিয়েছিল, আমাকে আজ রাতেই নিয়ে যাওয়া যায় কি-না সেটা জিজ্ঞেস করতে।
ওহ,
অনেক্ষণ হলো তোর আম্মু তো আসে না।
দাঁড়াও আমি দেখছি।
রাফি দরজার কাছে যেতেই নিজের মাকে দেখতে পায়।
ডক্টর বলেছে কাল সন্ধ্যায় তোমায় নিয়ে যেতে পারবো
জালাল চৌধুরী স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে বললেন,
এতক্ষণ পর আসলে!
আরে ডক্টর রোগী দেখছিল, তাই অপেক্ষা করতে হয়েছে। এর মধ্যে দুইবার এসেছি, বলতে পারো তুমি? চোখ বন্ধ করে শুয়ে থাকলে দেখবে কীভাবে।
জালাল চৌধুরী মুচকি হেসে চুপ থাকলেন।
রাফির ফোনে শব্দ হতেই ফোন ধরে সে। আরাফের কল,
হ্যাঁ ভাইয়া বলো।
তাড়াতাড়ি নিচে আয়।
রাফি আন্দাজ করলো আরাফের কণ্ঠে কান্না মিশ্রিত। তবে প্রশ্ন করল না।
আসছি বলে রেখে দেয়। কারণ হয়তো চাচাকে পেয়েছে, তাই তাড়াহুড়ো করে কথা বলেছে।
তোমরা থাকো, আমি বাড়ি যাচ্ছি।
কে ফোন দিলো?
বাবার প্রশ্নে রাফি বলল,
ভাইয়া, হয়তো চাচাকে পেয়েছেন।
ওরা আর কিছু বলল না।
নিচে এসে আরাফের গাড়ি পেলেও আরাফকে পায়নি সে। ফোন দেওয়ার পর আরাফ বলল, সামনের রাস্তা দিয়ে হেটে আসতে।
সে একটু হাটার পর কিছু মানুষের ভীড় দেখে। সেখানে যায়। তারপর কিছুটা ভিতরে যেয়ে দেখতে পায় আরাফ কান্না করছে। আরাফের সামনে তার বাবা মাহাব চৌধুরীর লা’শ পড়ে আছে। রাফি ভয়ে শুধু চিৎকার দিলো চাচা বলে।
চলবে,,,