#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| উনিশ তম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌
সকাল সকাল সন্ধ্যাবতী থানার এসে হাজির হয়। সে ভেবে নিয়েছে যা করবে পূলিশের সহায়তায় করবে। থানায় প্রায় ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করার পর এস আই শামীমের সাক্ষাত পাওয়া যায়। সন্ধ্যা এস আই কে দেখে খানিকটা অবাক হয়ে যায়। সুমির মৃত্যুর দিনে অফিসার শামীমই সকল কাজ সম্পাদন করেছিলেন।
” দুঃখিত স্যার, সেদিন আপনার পরিচয় জানতাম না তেমনভাবে কথা বলিনি।”
শামীম প্রশস্ত হাসে। সন্ধ্যাকে ভালোভাবে লক্ষ্য কলে বলে,
” প্রিয়জন হারা মেয়ের মনে নিশ্চয়ই কোন সুখ থাকবে না। আপনার বেলাও তাই হয়েছে। এখন বলুন এত সকাল সকাল এখানে আসার কারণ কী?”
সন্ধ্যা নড়েচড়ে বসে। ভনিতা ছাড়াই বলে, ” আমার বন্ধু বিপদে। আমার চাচাতো ভাইয়ের কাছে বন্দি আছে। আমি আপনার সাহায্য চাইছি মিস্টার শামীম।”
” আপনার চাচাতো ভাই মানে? মিস্টার নিলয়?”
” জি।”
আপনার ভাই এমন করবে কেন সে এখন কোথায়
সন্ধ্যা এবার একটু রেগে যায় মনে মনে ভাবে কেমন পুলিশ সে যে কিনা একজন অপরাধী কে আটকে রাখতে পারেনি। রাগে সন্ধ্যা বসা থেকে দাঁড়িয়ে যায়। দাঁতে দাঁত চেপে শামীমকে প্রশ্ন করে,
” আপনি আগে আমাকে বলেন, এই থানায় আপনি কতদিন হয়েছে এসেছেন?”
” এক বছর।”
সন্ধ্যা অবাক হয়ে যায়। টেবিলের উপর দয় হাত ভর করে দাঁতে দাঁত চেপে বলে,
” সিনিয়র অফিসার হয়েও এক সপ্তাহ আগের আসামিকে এতো সহজে ছেড়ে দিলেন কীভাবে মিস্টার শামীম?”
“নেশীয় দ্রব্য পান করে এসেছেন নাকি মিস সন্ধ্যা। আমার অনুমতি ব্যতীত এখান থেকে একটা কাগজ নড়াচড়া করার সাহস নেই কারোর। মিস্টার নিলয়কে আমারা গ্রেফতারই করিনি।”
সন্ধ্যা অবাক হয়ে যায়। তার কারণও আছে বৈকি! সন্ধ্যা নিজে অফিসের নিচ থেকে পুলিশকে রিসিভ করে নিয়ে এসেছে।
” আপনি মিথ্যা বলছেন না তো মিস্টার শামীম?”
” কখনোই না।”
সন্ধ্যা দাঁড়ানো থেকে ধপ করে বসে যায়। তার শরীর কাঁপছে। অজানা আতঙ্ক অন্তরে বাসা বেঁধেছে। শামীম হয়তো বিষয়টি বুঝতে পারে। বসা থেকে দাঁড়িয়ে সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,
” আমাদের এখন বের হওয়া উচিত মিস সন্ধ্যা। আপনার মায়ের রিপোর্ট এনে মিস্টার নিলয়ের খোঁজ করতে হবে। আমার ভনে হচ্ছে মিস্টার নিলয় কোন বিপদে পড়েছে।”
সন্ধ্যা সময় নিয়ে নিজেকে শান্ত করে বেরিয়ে পড়ে রিপোর্ট আনতে।
————————
মায়ের রিপোর্ট বুকে জড়িয়ে অনবরত কান্না করে যাচ্ছে সন্ধ্যা। রিপোর্টে স্পষ্টত লিখা আছে, সন্ধ্যার মা সুমিকে শ্বাসরোধ করে হ’ত্যা করা হয়েছে। পথচারীদের এবং আশেপাশে দোকানদারদের জবানবন্দিতে জানা গেছে যে, সুমিকে রাস্তায় ফেলে যাওয়ার সময় আর মা’রা যাওয়ার সময়ের ব্যবধান অনেক। সুমিকে হ’ত্যা করার দুই ঘণ্টা পর তাকে রাস্তায় ফেলে রাখা হয়েছিল। সন্ধ্যা নিজেকে কোনভাবেই শান্ত করতে পারছে না। এদিকে শামীমের মন বলছে সন্ধ্যার পরিবারের উপর বড়ো কোন বিপদ আসতে চলেছে। সে একপাশে গিয়ে ডেপুটি কমিশনারের সাথে কথা বলে অনুমতি চেয়ে নেয় যেন সে অ্যাকশন নিতে পারে।
” মিস সন্ধ্যা, আমার মনে হচ্ছে এখন সময় নষ্ট না করে মিস্টার নিলয়ের খোঁজ করার দরকার। আমি আমার টিমদের বের হতে বলেছি আপনি আমার সাথে চলুন।”
” তার আর দরকার নেই মিস্টার শামীম। আমি জানি নিলয় কোথায় এবং কার ক্ষতি হচ্ছে। আমি আপনাকে একটা নাম্বার দিচ্ছি, আপনার হয়তো উপকার আসতে পারে। সে নাম্বারের মুঠোফোনের মাধ্যমে আপনি হয়তো নেটওয়ার্কের মাধ্যমে বের করতে পারবেন।”
শামীম তাই করে। ফোন করে নিজের টিম টিমকে আসতে বলে। শহর থেকে প্রায় ১৫ কিলোমিটার দূরে একটা ভাঙ্গা বাড়ির সামনে শামীম নিজের গাড়ি থামায়। সন্ধ্যাকে নিজের সাথে করে খুবই কৌশলে বাড়ির পিছনটায় পৌঁছায়। পুরো বাড়ি পুলিশে ঘিরে ফেলেছে। সন্ধ্যার মাথায় হাজারো প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। তারমধ্যে কয়েকটি হল, কেন রাব্বি সন্ধ্যাকে মিথ্যা কথা বলল, কেন রাব্বি ভুয়া পুলিশ নিয়ে এসে নিলয়কে নিয়ে গেল, আর নিয়ে গেলেও সেটা কোন স্থানে? তারপর সন্ধ্যাকে যে আজ রাব্বি লুকিয়ে ফোন করল; সেটা কি আদৌও সত্য নাকি রাব্বি মিথ্যা বলছে!
বাড়ির ভেতর থেকে স্পষ্টত কারোর গোঙানির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। সন্ধ্যার অন্তর কাঁপছে; কেন যেন মনে হচ্ছে নিলয়ের আওয়াজ শুনছে সে। খুব কষ্ট হচ্ছে নিলয়ের, তার আর্তনাদ শুনে সন্ধ্যার অন্তর হু হু করে কাঁদছে। দেয়াল পেরিয়ে শামীম প্রথমে জানালা দিয়ে ঘরে প্রবেশ করে। সন্ধ্যা তখনও বাহিরে দাঁড়িয়ে। ভেতর থেকে ধস্তাধস্তির আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। প্রায় দশ মিনিট পর শামীম জানালার কাছে এসে হাঁপাতে থাকে। গলা ভিজিয়ে বলে,
” সামনের দরজা দিয়ে ভেতরে আসুন মিস সন্ধ্যা। আমার বন্ধু এখন বিপদ মুক্ত।”
সন্ধ্যা বিস্ময় দৃষ্টিতে তাকায়। শামীম শক্ত চোখে তাকিয়ে ইশারায় আসতে বলে।
সন্ধ্যার সামনে তিনচারজন পড়ে গোঙরাচ্ছে। ঘরের দেয়াল ঘেঁষে একজন র’ক্তা’ক্ত লোক হেলান দিয়ে বসে আছে। চেহারা অস্পষ্ট, সারা শরীরে আঘাতের চিন্হ, মুখের উপর শুকনো র’ক্ত চেহারা বুঝার কোন উপায় নেই।
” আমায় চিনতে পারছেন না, মিস ঐরাবতী?”
সন্ধ্যা চমকায়, দুর্বল স্বরে বলা নিলয়ের কথা চিনতে ভুল করেনি। থমথমে স্বরে বলে,
” আপনি এখানে?”
নিলয় উঠে দাঁড়ায়। খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সন্ধ্যার কাছে এসে বলে,
” আমাকে দেখে অবাক হচ্ছেন, মিস ঐরাবতী? আপনি তো এটাই চেয়েছিলেন। আমার পরিণতি দেখতে চেয়েছিলেন। এই যে দেখুন, আমি শেষ। ভালোবাসার ধোঁকায় নিঃশেষ হয়ে গিয়েছি।”
” আপনি ভুল,,,,,
” ভুল ভাবার কোন কারণ নেই। আমি সব জানি।”
নিলয় সন্ধ্যার কথার মাঝেই কেউ একজন সন্ধ্যাকে আঘাত করতে আসলে নিলয় হাত দিয়ে তাকে বাঁধা দেয়। সন্ধ্যা এতে ঘাবড়ে যায়। সে নিলয়ের চোখের দিকে তাকায়। রক্তিম জোড়া চোখদ্বয় সন্ধ্যার ধ্বংসের কারণ মনে হচ্ছে। নিলয় সন্ধ্যার চোখে চোখ রাখে। সন্ধ্যাকে দেখে নিলয়ের বড্ড আফসোস হচ্ছে। সে জোর গলায় বলে,
” তুমি বড্ড বোকা সন্ধ্যাবতী। আপনজনকে আপন না করে পরকে আপন করো। মনে রেখো সন্ধ্যাবতী! আপনজন থেকে আপন আর কেউ হতে পারে না।”
ভয়ে সন্ধ্যার চোখ বেয়ে পানি ঝড়ছে। এদিকে নিলয়কে দেখে সন্ধ্যার পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা রাব্বি ভয়ে কাঁপতে থাকে।হাত থেকে লোহার দণ্ডটা পড়ে যায়। সে এসেছিল সন্ধ্যাকে আঘাত করতে কিন্তু তার আগেই বাঘের কবলে পড়েছে। আজ তার রক্ষা নাই। সন্ধ্যার চোখে ভালো সাজতে তার নাটক শুরু করে দেয়।
” আমাকে মেরো না নিলয়। আমি তোমার বোনকে শুধু ভালোবেসেছি, ভুল কিছু করিনি। তাই বলে তুমি আমাকে মেরে ফেলবে? এই দেখো সন্ধ্যা এখন আমাকে ভুল বুঝবে। তোমার হাত থেকে রক্ষা পেতেই তোমাকে পাল্টা আঘাত করেছি।”
সন্ধ্যা বোকা চোখে পিছনে তাকায়। তার চোখের সামনে যেন সিনেমাটিক ঘটনা ঘটছে। কার কথা বিশ্বাস করবে ভাবতে পারছে না। নিলয় সন্ধ্যার ভাবভঙ্গি দেখে তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বলে,
” তুমি সত্যিই খুব বোকা সন্ধ্যাবতী!”
সন্ধ্যা উত্তরের উপেক্ষা করেই নিলয় রাব্বিকে মারতে মারতে বাহিরে নিয়ে যায়। সন্ধ্যা তখনও মূর্তির ন্যায় দাঁড়িয়ে আছে। নিলয় রাব্বির সাথে কারাপ কিছু করবে ভেবে দৌড়ে বের হয়ে আসে ঘর থেকে। কিন্তু কোন লাভ হলো না। নিলয় কোথাও নেই। সন্ধ্যার পেছন থেকে শামীম ডেকে উঠে,
” সে থামবে না। প্রিয়জনকে হারানোর ভয় তার মনে গ্রাস করেছে। যে ছিনিয়ে নিতে চেয়েছে তাকে শাস্তি পেতেই হবে।”
” আপনি কিছু বলবেন না? আপনি না পুলিশ?”
” আমার চোখে নিলয়ের কোন অপরাধবোধ নেই। আমার আত্মবিশ্বাস, আমার বন্ধু কখনোই আইন হাতে নিবে না।”
সন্ধ্যা চোখেল পানি মুছে নেয়। প্রশ্নবোধক চাহনিতে শামীমের দিকে তাকায়,
” আপনার বন্ধু মানে?”
” পাড়াতো বন্ধু। মাধ্যমিক পড়ার সময়ে দুই এলাকার মধ্যে খেলা নিয়ে যখন মা’রা’মা’রি হতো ঠিক তখনই নিলয় সেখানে উপস্থিত হয়ে সবকিছুর সমাধান করতো। নিলয়ের সাথে সেই সময় থেকেই পরিচয় এবং ভালো বন্ধু। আমি তাকে খুব কাছ থেকেই চিনি।”
সন্ধ্যা কিছু বলবে তার আগেই নিলয় চলে আসে। সন্ধ্যাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে যায় বাহিরে এবং যেতে যেতে বন্ধুকে বলতে ভুলে না,
” সন্ধ্যাকে নিয়ে যাচ্ছি। তোর যদি ইচ্ছে হয় বন্ধুর বিয়ে খেতে তাহলে পেট খালি করে চলে আয়। ঠিকানা আমি তোকে সেন্ড করে দেব।”
শামীম হেসে উত্তর দেয়,
” বন্ধু যাই বলিস, ভাবি কিন্তু ঝাক্কাস একজন মানুষ। তোর সাথে খুব মানিয়েছে। তোর সাথে টক্কর দিয়েছে এই মেয়ে ভাবা যায়! এই মেয়ে তোর জাত শত্রু। আবারো ভেবে নে নিলয়! পরে না আবার বিয়ে করে পস্তাবি। তারপর আমার সামনে কেঁদে কেঁদে বলবি, শামীম ভাই! তোর ভাবিকে আগে এরেস্ট কর। নয়তো আমার জীবন তেনা তেনা হয়ে যাবে।”
কথাগুলো বলে শামীম উচ্চস্বরে হাসতে থাকে। এদিকে নিলয় চোখ গরম করে শামীমের দিকে তাকিয়ে চলে যায় নিজ গন্তব্যে।
নিলয় সন্ধ্যার চোখ বেঁধে গাড়ি স্টার্ট করে। এদিকে সন্ধ্যা চিৎকার-চেঁচামেচি করতে থাকে।
” আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন। দেখুন আপনি কিন্তু মোটেও ভালো করছেন না। আমি আপনাকে বিয়ে করতে চাই না। আপনি আমার শত্রু, আপনার জন্য আমার মা মারা গিয়েছে। কি করেছিলেন আপনি? কেমন চাল চেলেছেন ছিলেন যার জন্য আমার মাকে মরতে হয়েছে।”
নিলয় এক হাতে সন্ধ্যার গাল চেপে ধরে । একটু শক্ত করেই চেপে ধরে যেন সন্ধ্যা ব্যথা পায়। কেননা নিলয় চাইলেও সন্ধাকে শাস্তি দিতে পারছে না। তার জন্য ভেবে নিয়েছে সন্ধ্যার সবচেয়ে বড় শাস্তি হবে নিলয়ের কাছাকাছি থাকার। এজন্যই সে বিয়ের সিদ্ধান্ত নেয়।
” কথায় আছে যার জন্য করি চুরি সেই বলে চোর। তোমার চোখের সামনে চোখের আড়ালে যত কিছু করি না কেন তোমার চোখে সর্বদা আমি অপরাধী হয়ে থাকব। তারচেয়ে বরং তোমার নিকট আসল কথা নাই বলি। মনে রেখো সন্ধ্যা, তোমাকে বিয়ে করব শুধুমাত্র শাস্তি দেওয়ার জন্য। ভালোবাসার জন্য নয়।”
” আমি আপনাকে বিয়ে করব না। ছেড়ে দিন আমাকে। আর রাব্বির সাথে কি করেছেন আমি সেখানে যাব।”
নিলয়ের ধৈর্যের বাঁধ ভেঙে যায়। দুর্বল শরীরে সন্ধ্যার কথাগুলো যেন নিলয়রর অন্তরে গেঁথে গেছে। নিছের ণন এবং মস্তিষ্ককে সচল রাখতে নিলয় সন্ধ্যার গা থেকে ওড়না খুলে মুখ আর হাত বেঁধে দেয় সে। এরপর মনোযোগ দেয় গাড়ি চালানোর দিকে।
বিকাল নাগাদ সন্ধ্যা এবং নিলয় তাদের একটি ফার্ম হাউজে এসে পৌঁছায়। নিলয় গাড়ি থেকে নেমে আগের মতই সন্ধ্যাকে টেনে বাড়ির ভেতরে নিয়ে যায় এবং সেখানে গিয়ে চোখের মুখের এবং হাতের বাঁধন খুলে দেয়।
হাতের বন্ধন খুলে দিতেই সন্ধ্যা নিলয়কে আঘাত করতে আসতে নিলে নিলয় সন্ধ্যার উদ্দেশ্যে বলে,
” পৃথিবীতে তোমার আপন এখন একজনই আছে। সে তোমার বাবা। তুমি কি চাও তোমার বাবার কোন ক্ষতি হোক? এমন চাইলে আমার কাজে বাঁধা দিতে এসো না। নয়তো এর পরিণতি খুব ভয়াবহ হবে। যে নিলয় কে তুমি এতদিন চিনেছো দেখেছো সেই নিলয়কেব চিরতরে হারিয়ে অন্য একটি নিলয়কে দেখতে পাবে। যে নিলয়ের মনে ভালো মানুষী থাকবে না শুধু থাকবে ঘৃণা এবং হিংস্রতা।”
সন্ধ্যা থেমে যায় ধপ করে বসে পড়ে সোফায়। এদিকে নিলয় দুর্বল শরীরে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে এগোয় সদর দরজার দিকে। মিনিট পাঁচেক পর শামীম এবং কাজীকে নিয়ে হাজির হয়। কিছু সময়ের ব্যবধানে ওদের বিয়ে সম্পন্ন হয়ে যায়। সাক্ষী থাকে শামীম এবং কিছু মানুষ। বিয়ে শেষ হওয়ার সাথে সাথে নিলয় আগের মতই সন্ধ্যাকে টেনে নিয়ে যায় একটি ঘরের দিকে ছুড়ে ফেলে দরজা আটকে দেয় সে। এরপর থেকেই সন্ধ্যা সেই রুমে আবদ্ধ।
বর্তমানে
সন্ধ্যা এখন মুক্ত পাখি। জমিনের উপর দৌঁড়াচ্ছে। কিছুক্ষণ পর পর পিছনে ফিরে তাকাচ্ছে যেন কোন বাঘ তাকে তাড়া করেছে এবং তার থেকে নিজের প্রাণ রক্ষা করার জন্য প্রাণপণে দৌঁড়াচ্ছে সন্ধ্যা। আজ সকালে সন্ধ্যা ঘুম থেকে উঠে নিজেকে অন্য একটি ঘরে আবিষ্কার করে। সে সাহস করে ঘর থেকে বের হয়ে দেখে আশেপাশে কেউ নেই এবং দরজা জানালা সবই উন্মুক্ত। সন্ধ্যা সুযোগ পেয়ে যায় পরপরই বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে কিন্তু সন্ধ্যার কাছে এই পথ অনেক অচেনা।
পিচ ঢালা রাস্তার পথে সন্ধ্যা দৌঁড়াচ্ছে। জুতো জোড়া কোথায় খুলে গিয়েছে জানা নেই। পা অসম্ভব রকম জ্বলছে, পায়ের তলায় তরল জাতীয় কিছু অনুভব করছে সে বুঝতে পারে পায়ের তলদেশের রক্ত ক্ষরণ হচ্ছে কিন্তু সন্ধ্যা থামেনা। এ পথ যেন ফুরাবার নয়। সন্ধ্যা হাঁপিয়ে উঠেছে, নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে পানির তৃষ্ণায় গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে আছে। হাঁটুতে ভর করে সন্ধ্যা কিছুক্ষণ জিরিয়ে নেয় ঠিক তখন একটি প্রাইভেট কার সন্ধ্যার সামনে এসে দাঁড়ায়। সন্ধ্যা ভয় পেয়ে যায় সাথে সাথে সন্ধ্যা পিছাতে থাকে। সন্ধ্যা এক সময় পড়ে যেতে নেয় পিছনের দিকে।
সন্ধ্যার সামনে সে লোকটি এসে দাঁড়ায় এরপর সন্ধ্যার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে বলে,
“আমার কাছ থেকে পালাতে চেয়েছিলে সন্ধ্যাবতী?”
“আমাকে ছেড়ে দিন মিস্টার অসভ্য দুর্লয়। আমি বাবার কাছে যাব। আপনার নামে দাদার কাছে অভিযোগ করব।”
নিলয় হাসে। সন্ধ্যার চিবুকে হাত রেখে বলে,
” আমি কার কাছে অভিযোগ করব সন্ধ্যা? আমার কথা কে শুনবে? কাকে আমি মনের কথা বলব আর কার কথাই বা বলব। যাকে আমি ভালোবেসেছি, যার নাম আমার মনে গেঁথে ফেলেছি, যাকে চাইলেও কষ্ট দিতে পারি না কিন্তু সে আমাকে কষ্ট দিতে সর্বদা প্রস্তুত থাকে এবং ধোকা দিয়ে আমাকে নিঃস্ব করে ফেলেছে। তার কথা বলব?”
সন্ধ্যা মুখ ফিরিয়ে নেয়। নিলয়ের কথার প্রত্যুত্তরে কিছুই বলতে পারবে না সে। তার কিছু বলারও নেই। কারণ যা হয়েছে সব সন্ধ্যা করেছে এবং তা নিলয়ের চোখের সামনে সর্বদা ভেসে থাকে।
সন্ধ্যা নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ঠিক তখন নিলয়ের কথা ভেসে আসে সন্ধ্যার কর্ণকুহরে,
“গাড়িতে গিয়ে বসো সন্ধ্যাবতী। আজ তোমাকে সব বলব। আজকে বলব একটি পরিবার নিঃশেষ হওয়ার কাহিনী, আজকে বলব একজন ছোট্ট মেয়ের বোকা হয়ে থাকার যাওয়ার কাহিনী, আজকে বলব একজন প্রেমিকের ক্ষণে ক্ষণে ধোঁকা খাওয়ার কাহিনী।
চলবে……..
#সন্ধ্যালয়ের_প্রণয়
#আফসানা_মিমি
| বিশ তম পর্ব |
❌[কোনোভাবেই কপি করা যাবে না]❌
লাল রং ভালোবাসার রং। অন্তরের রংও লাল। অন্তর থেকেই ভালোবাসা জন্মে, অনুভূতিরা সেখানেই খেলা করে। নিলয়ের মনেও তেমন অনুভূতি জন্মেছিল কোন এক শরৎকালে। নিলয় সেই অনুভূতির নাম দিয়েছিল প্রণয়। তারপর! সেই প্রণয়ের কথা ব্যক্ত করার পূর্বেই হারিয়ে ফেলে তাকে সারাজীবনের জন্যে। কেঁটে যায় মাসের পর বছর। নিলয়ের মনে অনুভূতিরা আরো একবার জেগে উঠে কোন এক সন্ধ্যার লগনে। সে তখন বারবার চেয়েছিল যেন কোন অঘটন না ঘটে। কিন্তু ভাগ্যের লিখন না যায় খণ্ডন। সন্ধ্যাবতীর কাছাকাছি থেকে মনে অনুভূতি জন্মে আর সেখান থেকেই প্রণয়। নিলয় চাইলেও সন্ধ্যাকে কষ্ট দিতে পারছে না। বাসায় এসে নিলয় নিজ ঘরে প্রবেশ করে। সন্ধ্যা কি করবে ভেবে না পেয়ে নিলয়ের পিছু নেয় কিন্তু সে ঘরে প্রবেশ করতে পারে না। নিলয় ঘরে প্রবেশ করেই দরজা আটকে দেয়। শরীর থেকে শার্ট খুলে কিছুক্ষণ ঘরে পায়চারি করে। এরপর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে পিঠের আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। নিলয়ের মনে পড়ে যায় রাব্বির করা প্রতারণার কথা, নিলয়ের ভালোবাসা প্রত্যাহার করে রাব্বিকে বিশ্বাস করা সবকিছু নিলয়ের চোখের সামনে ভেসে উঠে। সে রাগে চিৎকার করে দেয়ালে ঘুষি দিয়ে নিজেকে আঘাত করে বলে,
” ভালোবাসা নামক অপরাধ করার পিছনে তোমার হাতও ছিল সন্ধ্যা। একজনক ছেলেকে একজন মেয়েই উন্মাদ বানাতে পারে। আর আজ! আমি সেই অপরাধ করে ধুকে ধুকে শাস্তি পাচ্ছি।”
নিলয়ের প্রত্যেকটি কথায় সন্ধ্যার অন্তর কাঁপছে। নিলয় তো একটা কথাও ভুল বলেনি। রাব্বির বুদ্ধিতেই সে নিলয়ের দুর্বলতার সুযোগ নিয়েছিল। নিলয়ের মনের অনুভূতি নিয়ে খেলেছিল। সন্ধ্যা দরজায় কড়াঘাত করে নিলয়কে ডাকে। অপরপাশে নীরবতা, সন্ধ্যা কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। নিলয় নিজের ক্ষতি করে ফেলেছে না তো? কিছু সময় পর নিলয় ঘরের দরজা খুলে দেয়। উদোম গায়ে, হাতে ফাস্ট এইড বক্স। সন্ধ্যাকে ধরে ঘরের ভিতর নিয়ে যায়। বিছানায় উপর বসিয়ে পা দুটো ধরে বালিশের উপর রেখে খুব যত্ন সহকারে ক্ষত জায়গা পরিস্কার করিয়ে ব্যান্ডেজ করে দেয়। সন্ধ্যাকে আরাম করে শুইয়ে দিয়ে নিলয় বলতে শুরু করে,
“শরতের আকাশে মেঘেরা খেলা খেলছিল সেদিন। প্রকৃতির সাথে অভিমান করে সময়ে অসময়ে ঝড়ত, আবার কখনো অবিরত ঝড়তেই থাকতো। শরতের বাদলা দিনে আমাদের বাসায় রানা আঙ্কেলের আগমন ঘটে। তিনি ছিলেন বাবার প্রাণের বন্ধু সাথে সরকার কোম্পানির ম্যানেজার। বাদলা দিনে মায়ের হাতের খিচুড়ি আর গরুর কালা ভুনা খেতে আসছিলেন। উনার সাথে নিয়ে এসেছিলেন উনার ছোট ভাই হালিমকে। আমাদের বাড়ির সকলেই হাসিখুশি ছিল। তোমার বাবা তখন ছোট মাকে নিয়ে আমাদের এখানে আসেন এবং সাথে করে নিয়ে আসেন ছোট্ট পরীকে। তোমার বয়স তখন তিন কিংবা চার হবে আর আমার দশ বছর। বড়োদের কথাবার্তা বেশি না বুঝলেও সামান্য বুঝি। সেদিন খাবার টেবিলে সবাই আনন্দ করছিল। সবার মুখে হাসি। ছোট চাচ্চুর হেঁয়ালিপনা সকলের চোখে বাজছিল তাই সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নিচ্ছিল চাচ্চুর বিয়ের ব্যাপারে। আমাদের আনন্দে দুই ভাইও সামিল হয়। এদিকে বাবার পরিশ্রমে আমাদের কোম্পানি অনেক উপরে উঠে আসে। সরকার বাড়ির আনন্দ, উল্লাস চোখে বাঁধার মতো। আমাদের পদার্পণ,আনন্দ একজনের চোখে লাগে। সে প্রতিহিংসায় সরকার বাড়ির কোম্পানি নিজের আয়ত্তে নিতে পরিকল্পনা করে। সে আর কেউ ছিল না আমাদের কোম্পানির ম্যানেজার রানা আঙ্কেলের ছোট ভাই হালিম ছিল। ম্যানেজারের ভাই হওয়ার সুবাদে সে অফিসে আসা যাওয়া করতো। বাবাও তেমন কিছু মনে করতো না কিন্তু তোমার বাবা কয়েকবার কথা শুনিয়েছিল। একবার তো অফিসের দরকারি কাগজপত্র চুরি করার দায়ে পুলিশও ডেকেছিল। ম্যানেজারের অনুরোধে দাদা সেদিন তাকে ক্ষমা করে দেয়। এটাই ছিল আমাদের দাদার ভুল সিদ্ধান্ত। আমার বয়স যখন এগারো তখন বাবা সিদ্ধান্ত নেয় আমাকে বাহিরের দেশে পাঠিয়ে দিবে। বাবা হয়তো আন্দাজ করতে পেরেছিল এখানে থাকলে আমার বিপদ আছে। আমার কাগজপত্র ঠিকঠাক করার ব্যস্ততায় হালিম তোমার বাবাকে ভুল বুঝায় যার মধ্যে একটা বিষয় এমন ছিল যে, ‘ বাবা প্রতারণা করে সরকার বাড়ির সব সম্পত্তি নিজের আর আমার নামে করে ফেলছে।’ যদিও চাচ্চু জানতো বাবা আমার ব্যাপারে ব্যস্ত। হালিম কি বলে যেন চাচ্চুর মাথা নষ্ট করে ফেলেছিল। সকল ঝামেলা শেষ করে বাবা আমাকে বাহিরের দেশে পাঠিয়ে দেন।
দিনটা ছিল সেদিন রবিবার। বাবা জেনে যায় চাচ্চুর কথা। চাচ্চু বাবাকে ভুল বুঝে হালিমের সাথে হাত মিলিয়ে অফিসের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হয়। বাবা ম্যানেজারের মাধ্যমে জানতে পারে হালিম নিজের উদ্দেশ্য হাসিল করে চাচ্চুর ক্ষতি করবে। মেরেও ফেলতে পারে। সেদিন বাবার চোখে ভয় দেখতে পেরেছি সবাই। বাবা হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে গিয়েছিল সেদিন। ফিরে এসেছিল সাদা কাফনে মুড়িয়ে। মাঝ রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে বাবা চাচ্চুকে অনেক বুঝায়। চাচ্চু বুঝতে নারাজ ছিল। এদিকে দুই ভাইয়ের তর্কাতর্কি দেখে হালিম নিজেই প্রাইভেট কার ডারাইভ করে দুই ভাইকে মেরে ফেলতে চায়। দ্রুত গতিতে প্রাইভেট কার চালিয়ে আসতে থাকে। বাবা সেটা দেখে ফেলে। চাচ্চুকে ধাক্কা দিয়ে মাঝ রাস্তায় ফেলে দেয়। সাথে সাথে একটি বড়ো ট্রাক এসে চাচ্চুর পায়ের উপরে চড়ে যায়। আর এদিকে বাবা প্রাইভেট কারের সাথে আঘাত পেয়ে সেখানেই মারা যায়। হালিমের ও ক্ষতি হয়েছিল। হাসপাতালে জীবিত অবস্থায় ভর্তি করার পর পালিয়ে যায়।”
নিলয় এতটুকু বলে থামে। সন্ধ্যার মুখের দিকে তাকায়। সন্ধ্যা অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে। চোখে মুখে অজস্র প্রশ্ন। নিলয় মলিন হেসে আবার বলে,
” তোমার মনে আছে? আমাদের অফিসের গোপন কক্ষ নিয়ে তোমাকে সন্দেহ করেছিলাম?”
সন্ধ্যার মনে পড়ে যায়। মাথা দুলিয়ে হ্যাঁ বোধক ইশারা করে। নিলয় আফসোসের স্বরে বলে,
” সিসি টিভি ক্যামেরার ফোটেজে সেই মেয়ে তুমি ছিলে না। তোমার বেশ ধরে অন্য কেউ ছিল। আর এসব কিছুর পিছনে ছিল তোমার প্রেমিক রাব্বি। রাব্বি হানিফের ছেলে। আমাদের অফিসের দুজন স্টাফকে টাকা খাইয়ে তারা তাদের খেলা শুরু করে। পার্টির সেই দিনে বোমা হামলাও তারা করে এবং সেখানে আমাদের সিনিয়র কর্মকর্তা নিহত হয়। তার লাশও গুম করে ফেলে। কিছুদিন পর জানতে পারি এসব মৃত্যুর খেলা নিছক নাটকমাত্র। আমাকে ভয় দেখিয়ে ক্ষমতাচ্যুত করতে চাইছিল তারা। যখন দেখলো এতকিছু করেও আমাকে দুর্বল করতে পারছে না। তখন তোমাকে ব্যবহার করতে শুরু করল। অবশ্য অনেক বছরের পরিকল্পনায় তোমাকে এরা অনেক আগেই শামিল করেছিল। রাব্বি শুধুমাত্র তোমাকে ব্যবহার করেছে। তোমার বিশ্বাস অর্জন করে আমাকে তোমার বিরুদ্ধে লেলিয়ে দিয়েছে। আমি জানি তোমার এখনো বিশ্বাস করছো না। তাই কিছু প্রমাণ তোমার জন্য নিয়ে এসেছি।”
নিলয় একটা ফোন সন্ধ্যার সামনে তুলে ধরে। যেখানে রাব্বি নিজের কর্মের কথা স্বীকার করছে।
নিলয় আবারো বলা শুরু করে,
” রাব্বির ছদ্মবেশীর কথা আমি যেদিন সকালে জেনেছি। সেদিনই রাব্বি ব্যাংকের লেনদেনের বিষয়ে ঝামেলা পাকায় এবং আমাকে ফাঁসিয়ে দেয়। অবশ্য তুমিও এতে শরিক ছিলে। তুমি নিজ হাতে আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দাও। কিন্তু একবারও ভেবেছো? এরা আদৌও পুলিশ কি না? হাতকড়া পরিয়ে এরা আমাকে নিচে নামিয়েই ক্লোরোফোর্ম স্প্রে করে দেয়। আমার যখন জ্ঞান ফিরে তখন আমার হাত পা বাঁধা অবস্থায় থাকে। রাফসান বেশে রাব্বি ছিল আর হ্যারি বেশে তার পাশে ছিল হালিম। আধুনিক পরিচর্যার মাধ্যমে নিজেকে পরিবর্তন করে ফেলেছিল। আরিফ সরকারকে ব্ল্যাকমেল করার জন্য রাব্বি এবং হালিম মিলে আমাকে বন্দী অবস্থায় একটা ভিডিও বানায়। সেই ভিডিও এখন তোমার হাতে। শামীম সেই বাড়ি থেকে মেমোরি উদ্ধার করে।”
সন্ধ্যার হাত কাঁপছে। মুঠোফোনের স্ক্রিনে রাব্বির বলা কথার স্বর ভেসে আসছে। রাব্বি বলছে,
” সন্ধ্যাকে ব্যবহার করেছি, তোর আদরের নাতিকে অপহরণ করেছি। আমার বাবা তোর ছেলের সাথে যা যা করতে চাইছিল সব করেছি। আমি প্রতিশোধ নিয়েছি আরিফ সরকার। প্রিয় নাতিকে বাঁচাতে হলে সন্ধ্যাকে দিয়ে টাকা পাঠা।”
সন্ধ্যার হাত থেকে ফোন পড়ে যায়। শরীর সমান তালে কাঁপতে থাকে। নিলয়ের দিকে তাকিয়ে কাঁপা স্বরে বলে,
” আমার মা!”
“ছোট মায়ির মৃত্যুর পেছনে তোমার বাবা দায়ী সন্ধ্যা।”
আমাকে নিঃশেষ করার জন্য তোমরা বাবা এবং মেয়ে অন্ধ হয়ে গিয়েছিলে। আপন পর ভুলে গিয়েছিলে। আমি চাচ্চুর সম্পর্কে এত কিছু জানতাম না। আমার এবং তোমার অগোচরে চাচ্চু কি করছে তার ব্যাপারেও কিছুই জানতাম না। তুমি ভাবছো আমাকে নিচে নামানোর জন্য তুমি একা দায়ী কিন্তু তোমার ধারণা ভুল, আমাকে নিচে নামানোর জন্য এবং সরকার বাড়ির মান সম্মান নষ্ট করার পিছনে তোমার বাবাও দায়ী আছে। তোমার মায়ের মাধ্যমে কিছুদিন আগে হামিদের কাছে ডকুমেন্টস পাঠায়। যার মধ্যে আমাদের সরকার বাড়ির, অফিসের সকল কাগজপত্র ছিল। যেই কারণে অতি সহজেই আমাকে ফাঁসাতে পেরেছিলে। সবকিছুই সত্যি ছিল, তোমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী ছিল শুধুমাত্র আমাকে ছদ্মবেশী পুলিশদের হাতে তোলে দেওয়া রাব্বিদের পরিকল্পনা ছিল।
ছোট মা স্বামীর মুখের দিকে তাকিয়ে অন্যায় ঠিকই করে। কিন্তু পরদিন নিজের করা ভুলের মাশুল দিতে ছুটে আসতে নেয় পুলিশ স্টেশনে। আফসোস! ছোট মা কিছুই বলতে পারেনি। তার আগেই রাব্বির দলের লোকেরা ছোট মাকে উঠিয়ে নিয়ে আসে। আমাকে যেখানে আটকে রেখেছিল সেখানে ছোট মাকে আনেনি। কোথায় রেখেছিল জানিও না। যদি ছোট মার ঠিকানা জানতাম তো বিশ্বাস করো সন্ধ্যা! নিজের জীবনের বাজি রেখে হলেও ছোট মাকে বাঁচাতাম। কিন্তু আমি নিরুপায় ছিলাম। দুইদিন আগে রাব্বিকে হুমকি দিয়েছিলাম যে আমি তোমাকে সব বলে দিব। ফলস্বরূপ সে তোমাকে ফোন করে নাটক করে বলে যে তাকে আমি বন্দি করেছি। কিন্তু আসল কথা তো উল্টে।”
দীর্ঘ বক্তব্যের পর নিলয় লম্বা নিশ্বাস ফেলে। সন্ধ্যা তখনো ফুঁপিয়ে কাঁদছে। নিলয় সন্ধ্যার মনের অবস্থা বুঝতে পেরে কাছে আষতে নিলেই সন্ধ্যা চিৎকার করে বলে,
” কাছে আসবেন না নিলয়। আমি খারাপ মেয়ে, আমার কাছে আসলে আপনিও খারাপ হয়ে যাবেপ। আমি আমার মায়ের খু’নি। আমার মা আমার জন্য পৃথিবীতে নেই। আভি নিজেকে কখনোই ক্ষমা করতে পারব না নিলয়। আমি আমি আমি,,,,,
সন্ধ্যা অজ্ঞান হয়ে পড়ে যায়। নিলয় দৌড়ে গিয়ে সন্ধ্যাকে আকড়ে ধরে। কপোলের উপরে আসা চুলগুলো সারিয়ে বলে,
” চলো যাই ভেসে
দিবালয়ের আলয়
ঝিরিঝিরি বাদলের মেঘালয়
তুমি শুধুই আমার সন্ধ্যালয়ের প্রণয়।”
চলবে……..