Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতেশ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২১+২২

শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-২১+২২

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২১
শ্রাবণ বাহিরে বের হবে বলে রেডি হচ্ছিলো। তখন কল আসাতে ফোনটা বিছানা থেকে উঠিয়ে আর্শির নাম্বার দেখে খানিক অবাকের সাথে মৃদু হাসেও। রিসিভ করে প্রথমেই বলে,

“কী ব্যাপার? আজকে এই সময় কল করলে? তুমি এখন ভার্সিটিতে না?”

সোহা মুখ চেপে হাসে খানিক। ফোন লাউডস্পিকারে দেওয়ার দরুণ আর্শি প্রত্যুত্তরে কিছু বলতে মুখ খুলবে, তার আগেই সোহা আর্শির মুখ চেপে ধরে প্রথমে সালাম দিয়ে বলে,

“ভাইয়া, আমি আর্শির ফ্রেন্ড সোহা। ফোনটা আর্শির ফোন থেকে আসলেও ফোনটা আমি করেছি। আর্শি করেনি।”

শ্রাবণ অপ্রস্তুত হয়ে সালামের জবাব দিয়ে বলে,
“একচুয়ালি আমি…”

কথা সম্পূর্ণ করার আগেই সোহা মাঝে বলে ওঠে,
“আপনি বুঝতে পারেননি। তাই তো? আসলে আমিই আর্শিকে জোর করেছি, যে এখন কল করি। আমাদের এখন লাঞ্চ ব্রেক তো। মানে একচুয়ালি লাঞ্চ ব্রেক না। এমনিই ক্লাস ব্রেক। আমরা একটু পর লাঞ্চ করব আরকি!”

শ্রাবণ খানিক হাসার চেষ্টা করে বলে,
“ওহ আচ্ছা।”

সোহা মোটেও দমবার পাত্রী নয়! সে ফের বলে ওঠে,
“আপনি লাঞ্চ করেছেন না, ভাইয়া?”

“জি।”

“আপনার সাথে একটু গল্প করতে ফোন করলাম। আপনি কি বিজি?”

শ্রাবণ সৌজন্যে বলে,
“না না, আপু। এমনিই একটু…”

আবার শ্রাবণকে তার পুরো কথা শেষ করতে দেয় না সোহা! পুনরায় বলে,
“আপনার ও আর্শির বিয়ের সম্পর্কে আগে থেকে জানতাম না। হুট করে আর্শি বলে যে ওর বিয়ে হয়ে গেছে। মানে টোটালি একটা সারপ্রাইজিং ব্যাপার। আপনার সাথে পরিচয়ও নেই। শ্যালিকা হিসেবে দুলাভাইয়ের সাথে একটু টুকটাক পরিচয় থাকতে হয়। তাই না?”

“হ্যাঁ হ্যাঁ!”

“তো ভাইয়া আপনি বিয়ের পরপরই বউকে এতো দূরে একা পাঠিয়ে দিলেন! একসাথে টাইম স্পেন্ড করারও তো একটা ব্যাপার আছে।”

সোহার কথায় এবার আর্শি ভীষণ বিরক্ত হয়ে বলে ওঠে,
“শ্রাবণ, আমি আপনাকে বাসায় পৌঁছে কল করব। একচুয়ালি আমার ফোনের ব্যাটারি প্রায় ডেড! টুকটাক কিছু খেয়ে লাইব্রেরীতে গিয়ে একটু চার্জ দিবো ফোনটা।”

শ্রাবণ স্বস্তির শ্বাস নিয়ে বলে,
“ওকে। আমিও একটু বেরোচ্ছি।”

“ওকে। সাবধানে যাবেন। টাটা।”

শ্রাবণও ‘বায়’ জানায়। আর্শি কল ডিসকানেক্ট করে সোহার গ*লা চে*পে ধরে বলে,
“এই তুই এতো বকবক কীভাবে করিস রে? কী সব বলছিলি? আজব!”

সোহা নিজের কাঁধের কাছের চুলগুলো পিছনে ঠেলে ডোন্টকেয়ার মুডে বলে,
“কী এমন বললাম? একটু আলাপ করছিলাম, যা তোর পছন্দ হলো না। আর ইউ জে*লাস, বেবি!”

আর্শি মুখ কুঁচকে নেয়। আর বলে,
“জেলাস! তাও তোর এসব ননসেন্স কথাবার্তায়! শ্রাবণ লিটারেলি বিরক্ত হচ্ছিলো।”

সোহা খানিক অভিমানের ভাণ ধরে।
“মোটেও না। ভাইয়া কী সুন্দর করে আমার প্রত্যেকটা কথার জবাব দিচ্ছিল।”

“তোর মা*থা। সে জাস্ট ভদ্রতা দেখাচ্ছিল।”

“হুহ্”

“উঠ এবার। লিসা ও মোনা চলে এসেছে।”
বলতে বলতে আর্শি উঠে দাঁড়ায়। সাথে সোহাও। এরপর ওরা ক্যান্টিনের দিকে হাঁটতে থাকে।

________

শ্রাবণ তার বোন, বোনজামাই ও ভাগ্নেকে নিয়ে এসেছে একটা পার্কে। এসেই ফুচকা অর্ডার করে। স্নিগ্ধা অবাক হয়ে শুধায়,
“ভাইয়া, তুমি ফুচকা খাবে?”

“হ্যাঁ।”

“তুমি ফুচকা খাও? কখনো তো খেতে দেখলাম না!”

শ্রাবণ আমতা আমতা করে উত্তরে বলে,
“কখনো খাইনি তো কি হয়েছে? এখন খাব! ফুচকা খাওয়া তো আর নিষিদ্ধ কিছু না! এটা খুব টেস্টি একটা খাবার।”

“আমি জানি এটা খুব টেস্টি একটা খাবার। কিন্তু তোমাকে কখনোই খেতে দেখিনি। তোমার মনে আছে, স্কুলে যে তুমি আমাকে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফুচকা খেতে দেখেছিলে তখন তুমি কলেজ থেকে ফিরছিলে। আমাকে ফুচকা খেতে দেখে তোমার সেই কী রাগ! বলেছিলে, ‘এই পচা পানিতে চুবিয়ে মানুষের পায়ের ময়লা দিয়ে বানানো ফুচকা খাচ্ছিস? তোর পেট খারাপ হবে না তো? কার পেট খারাপ হবে?’ আর আজ সেই তুমি! নিজে ফুচকা খাচ্ছ!”

শ্রাবণ থতমত খেয়ে আশেপাশে তাকায়। অতঃপর ফুচকাওয়ালার দিকে নজর যেতেই দেখে ছেলেটা তার দিকে কেমন কেমন করে দেখছে! শ্রাবণ অপ্রস্তুত হয়ে বলে,

“একসময় পছন্দ ছিল না। এখন পছন্দ হয়েছে। মানুষের পছন্দ বদলাতেই পারে। তাই না?”

স্নিগ্ধা মাছি তাড়ানোর মতো করে বলে,
“তোমার পছন্দ আবার বদলায়! হাহ্! বলো, আজ সূর্য হয়তো বিপরীত দিকে উঠেছে! তাই তোমার আজ ফুচকা খেতে মন চেয়েছে। সমস্যা নেই। খাও।”

শ্রাবণ আর তার বোনের সাথে কথা বাড়ালো না। ফুচকাওয়ালা ছেলেটাকে বলল,
“শোনো, বোম্বাই দিয়ে বানাবে। ঝাল ঝাল যেন হয়। খুব মজা করে বানাবে কিন্তু।”

স্নিগ্ধার চোখ যেন এবার কপালে ওঠার জো*গার! সে তার স্বামীকে ধরে বলে,
“এই শোনো, আমাকে একটা চি*মটি কা*টো তো! আমার না বিশ্বাস হচ্ছে না। কী হচ্ছে আশেপাশে! ভাইয়ার কী হলো?”

ইরফান সত্যি সত্যি চি*মটি কে*টে বসলো। তার বউ এই প্রথমবার তাকে চি*মটি কা*টতে বলেছে! তাও স্বেচ্ছায়! এই সুযোগ সে কিভাবে মিস করতে পারে! চি*মটিটা বোধহয় বেশ জোরেই ছিল! স্নিগ্ধা মৃদু চিৎকার করে ইরফানের বাহুতে দুটো কি*ল বসাতে বসাতে বলে,

“এত জোরে চি*মটি কা*টতে বলেছি তোমাকে? আস্তে কা*টা যেত না?”

ইরফান নিজের বাহুতে হাত বুলাতে বুলাতে মিনমিন করে বলে,
“সরি! বুঝতে পারিনি।”

বাবা-মায়ের এই কান্ড দেখে ইশরাক মুখ চেপে হাসছে। এদিকে শ্রাবণ ফুচকার অপেক্ষায়। আজ সে আর্শিকে দেখিয়ে দেবে, সেও ঝাল ঝাল বোম্বাই ম*রিচ দিয়ে ফুচকা খেতে পারে। এদিকে ফুচকাওয়ালা ছেলেটার স্নিগ্ধার কথাগুলো ইগোতে খুব লেগেছিল। তাই সে ভেবে নিয়েছে, শ্রাবণের ফুচকাতে সে ভর্তি করে মরিচ দেবে! বেচারা শ্রাবণ তো আর ফুচকাওয়ালার মনের খবর রাখে না!

তিন প্লেট ফুচকা চলে আসার পর শ্রাবণ, স্নিগ্ধা ও ইরফান নিজেদের প্লেট নিয়ে নেয়। ইশরাক এদিকে চকলেট খাচ্ছে। স্নিগ্ধা তো ফুচকা দেখেই প্রথমে একটা টপ করে মুখে পু*ড়ে নিলো। ইরফানও আস্তে আস্তে খাচ্ছে। কিন্তু শ্রাবণ একটা ফুচকা হাতে নিয়ে ফুচকার চেহারাটা ভালো করে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে! আর নিজের বোন ও বোন জামাইয়ের প্লেটের দিকেও তাকাচ্ছে। তার প্লেটের ফুচকাগুলো একটু ভিন্ন ভিন্ন লাগছে। মনে হচ্ছে, কাঁচা-পাকা মরিচের পরিমাণটা খানিক বেশি!
ভাইকে এভাবে তাকাতে দেখে স্নিগ্ধা ইশারায় খেতে বলে। শ্রাবণ ঢোক গিলে স্নিগ্ধা কীভাবে খাচ্ছে তা দেখে সেটা অনুসরণ করে একটা মুখে দেয়। সাথে সাথে তার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড়ো বড়ো হয়ে যায়! ফুচকাওয়ালা ছেলেটা এইটা দেখে নিজের গলার গামছাটা একটু ঝাড়া দিয়ে আবার গলায় পড়ে নেয়। শ্রাবণ একবার ভাবছে, মুখ থেকে ফেলে দিবে নাকি খেয়ে নিবে। তার জিহ্বা জ্ব*লে যাচ্ছে! স্নিগ্ধা বিষয়টা লক্ষ্য করে মুখেরটা গি*লে বলে,

“কী ভাইয়া? এমন দম ধরে বসে আছো কেন? মুখেরটা গি*লো।”

শ্রাবণ অসহায় দৃষ্টিতে জোরপূর্বক হেসে কোনোমতে গি*লে নেয়। অতঃপর মুখ চেপে ধরে নিঃশ্বাস বন্ধ করে রেখেছে। চোখের কার্নিশ বেয়ে জলও গড়াতে শুরু করেছে। স্নিগ্ধা মিটিমিটি হেসে তার ভাইয়ের প্লেট থেকে একটা ফুচকা উঠিয়ে সুন্দর করে টক পানিতে ডুবিয়ে বলে,

“একটা খেয়েই এই অবস্থা তোমার? আমার প্লেটের দিকে তাকিয়ে দেখো, আর মাত্র দুইটা বাকি আছে। তুমি একটা খেয়েই কেঁদে ভাসাচ্ছো। নাও নাও, আরেকটা জলদি জলদি মুখে পু*ড়ে নাও! রেশ থাকতে থাকতে খেয়ে ফেললে ঝালটা কম লাগে।”

এই বলে স্নিগ্ধা তার ভাইয়ের মুখে থেকে হাতটা সরিয়ে আরেকটা ফুচকা মুখের ভেতরে ঠু*সে দিলো। এবারেরটা শ্রাবণ আর গিলতে পারল না! সে মুখ থেকে ফেলে দিয়ে এক হাত মাথায় দিয়ে ফুচকাওয়ালার মাঝারি সাইজের পানির কলসিটা নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেতে লাগলো। স্নিগ্ধা তো হেসেই পড়ে যাচ্ছে। ইরফান প্লেট রেখে এগিয়ে গিয়ে শ্রাবণের পিঠে আলতো মালিশ করছে। ইশরাকও তার মামার অবস্থায় একটা চকলেট এগিয়ে দিলো। শ্রাবণও সেটা লুফে নিলো।

ফুচকাওয়ালা ছেলেটা বলে,
“মামা আফনেই তো কইলেন, বেশি বেশি কইরা বোম্বাই ম*রিচ ঝাল দিতে। আমি তো তাই দিছি। আফনে কইবেন না, যে আপনি জাল খাইতে পারেন না। কইলেই তো আমি আঢনেরে ম*রিচ দিতাম না।”

শ্রাবণ হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,
“তুমি আমার প্লেটে এত মরিচ দিয়েছো? ওরা তো ঠিকই খেতে পারছে।”

“আফনেই না কইলেন! নাইলে আমার কি এতো শখ! নিজের বিজনেসের লস করমু! মরি*চের দাম জানেন আফনে!”

ইরফান বলে,
“হয়েছে হয়েছে। তোমার কত টাকা হলো?”

“তিনটা প্লেটের ১৫০ টাকা।”

ইরফান নিজের মানিব্যাগ খুলে টাকা দিতে নিলে শ্রাবণ বাধা দেয়। বলে,
“আমি তোমাদের ফুচকা খাওয়াতে এনেছি। সো বিলটা আমি দিবো।”

অতঃপর শ্রাবণ ফুচকাওয়ালার বিল মিটিয়ে চলে যেতে নিলে স্নিগ্ধা বলে,
“দাঁড়াও ভাইয়া, ফুচকাগুলো খেয়ে নেই। তোমরা খেতে না পারো, আমি তো খেতে পারবো। আমি তো ঝাল খেতে পারি।”

বলেই স্নিগ্ধা প্রথমে ইরফানের প্লেটের বাকি ফুচকা গুলো খেয়ে নেয়, তারপর শ্রাবণের প্লেটের একটা মুখে নিয়ে বলে,
“এটা একটু বেশি ঝাল তবে মজাও।”

স্নিগ্ধার খাওয়া দেখে শ্রাবণ মাথায় হাত দিয়ে টুলে বসে পড়ে। ভাবতে থাকে, আর্শির সাথে যদি ফুচকা খেতে যায়, আর এরকম ঝালের ফুচকা যদি খেতে দেয়। সে তো খেতে পারবে না। তখন আর্শি তার মজা উড়াবে! ভেবে ভেবেই মনে মনে ভীষণ দুঃখ পেলো শ্রাবণ! স্নিগ্ধার খাওয়া শেষ হলে ওরা চারজন পার্কে হাঁটতে থাকে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২২
হোটেল থেকে বেরিয়ে কিছুটা হাঁটতেই আরিয়ার মন ভালো হয়ে গেলো। হোটেলে ঢোকার সময় আশিকের সাথে তর্ক করতে করতে ঢুকেছিল। বেচারা আশিক তর্কে হার মেনে নিয়েছিল যদিও। দুজনে এখন হালকা ভেজা সবুজ ঘাস সম্বলিত রাস্তা দিয়ে হাঁটছে। একটা দোকানে বসে চা খেয়েছে কিছুক্ষণ আগেই। এখন একটু উঁচু জায়গা থেকে সূর্যাস্ত দেখার অভিলাষে যাচ্ছে। তাদের রিসোর্টটাও সুন্দর। রাতে সেখানে বসে দুজনে তারা দেখবে। পড়ন্ত বিকেল। দুজনে একে অপরের হাত ধরে নিরবে হাঁটছে। কোলাহোলও বেশ কম। আরিয়া নিরবতা ছিন্ন করে বলে,

“আশিক, আমাদের বিয়ে হলো দুই সপ্তাহ হলো। তাই না?”

“আকদের দুই সপ্তাহ।”

“ওই একই। এই দুই সপ্তাহে আমি তোমার সাথে বেশিরভাগ সময় ঝগড়াই করেছি। তাই না?”

আশিক নিরবে হাসে। আরিয়া হালকা ঝুঁকে আশিককে হাসতে দেখে নিজেও হাসে। অতঃপর বলে,
“বিয়ের আগে আমাকে দেখে তোমার মনে হতো, আমি এত ঝ*গড়ুটে?”

আশিক জবাবে বলে,
“মোটেও না। তুমি সবসময় শান্ত থাকতে।”

আরিয়ার পালটা প্রশ্ন,
“তাহলে এখন কি তোমার মনে হচ্ছে না, যে মেয়ের প্রেমে পড়েছিলে, এই মেয়েটা সেই মেয়েটা না!”

“না। আমি এন্জয় করি এসব। খালুজান আমাকে একটা কথা বলেছিল, ‘মেয়ে জাতি ইচ্ছে করে পুরুষকে রাগায় যাতে তাদের ধৈর্য দেখতে পারে। কারণ পুরুষের রাগ ভয়ানক। আবার ভালোবাসাও। রাগটা নারীকে না দেখানোই শ্রেয়।’ তাও অনেক অনেক সময় পারিপার্শ্বিক কারণে রাগটা দেখিয়ে ফেলি।”

আরিয়া লাজুক ও নিরব হাসলো। অতঃপর আশিকের হাত ছেড়ে বাহু জড়িয়ে সামনের দিকে চেয়ে প্রশস্ত হেসে নির্বিকারে হাঁটতে লাগলো। যেন আশিক কিছু বললেও তার কিছু যায় আসে না। আশিকও চো*রা হাসে। আজ সূর্যাস্তটা বুঝি আরও রাঙাবে!

________

পরদিন রাতে আর্শি শ্রাবণের সাথে কথা বলছে। তখন শ্রাবণ বলে,
“তোমার কাছে কোনো নীল শাড়ি আছে?”

“না। কেন?”

শ্রাবণ অবাক হয়ে শুধায়,
“সত্যি নেই? মেয়েরা তো নীল শাড়ির প্রতি দিওয়ানা থাকে। ওরা নিজেদের আকাশের রঙে সাঁজাতে চায়।”

আর্শি গালে হাত দিয়ে বলে,
“আমি তো শাড়িই পড়ি না। আমার নিজস্ব শাড়ি বলতে এখন দুটো। একটা হালকা টিয়া রঙের। আরেকটা আকদেরটা। শাড়ি সামলানো সো টাফ।”

শ্রাবণ মৃদু ধ*মকে বলল,
“কীসের টাফ! কোনো টাফ না। তুমি শাড়ি পড়বে।”

আর্শিও মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“পড়ব না। আমার ভাল্লাগে না। আরুর বিয়ের দিন মায়ের অনেক বলার পর পড়েছি। এখন আপনি এসব বলবেন না তো!”

“আমি তোমাকে শাড়িতে দেখতে চাই। তাই চিন্তা করছি…”

আর্শি শ্রাবণকে কথাে মাঝপথেই থামিয়ে বলে,
“আপনার চিন্তা আপনি আপনার কাছেই রাখেন! আমি শাড়ি পড়ছি না। বায়!”

বলে কল কেটে দিলো। পাশে সোহা গালে হাত দিয়ে বসা। সোহা বলল,
“এমন করিস কেন? তোর শাড়ি পড়া যে কয়েকটা ছবি দেখেছি, তোকে কিন্তু শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগে।”

“লাগুক। আমার ঝামেলা লাগে। আর তুই এই লোককে চিনিস না। আমার তো ভয় হচ্ছে, এ না আমার জন্য খালি শাড়িই আনে! অনেক জেদি সে।”

সোহা উঠে দাঁড়ায়। রুম থেকে বেরোতে বেরোতে বলে,
“তোর কি জেদ কম নাকি! কথায় আছে না, যেমনটার সাথে তেমনটা মিলে!”

“কী বললি তুই?”
আর্শি ক্ষেপে গেলো। তেড়ে যেতেই সোহা নিজের রুমে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দিয়েছে। আর্শি মুখ গোমড়া করে কিছুক্ষণ বসে থেকে বই নিয়ে বসে।

________

দুইদিন পর আরিয়া ও আশিক ঢাকায় ফিরে এসেছে। ওরা একদিন আরও বেশি থেকেছে। সাজেক দুই রাত থেকে পরদিন নীলগিরিতে গিয়েছিল। ভেবেছিল সাজেকে একরাত থাকবে কিন্তু আরিয়ার কারণে বেশি থাকতে হলো। এসেই দেখে নাহিদ সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বসা! নাহিদের পাশে একটা মেয়ে লাল শাড়ি পড়ে বসা। অপরপাশের সোফায় মিসেস নেহা ও হাসান আহমেদ গম্ভীর মুখে বসে আছেন। কাজের মেয়েটি আরিয়া ও আশিকের জন্য দরজা খুলে দিয়ে বলে,

“ছোটো ভাই, ভাবি, বড়ো ভাইয়ে তো বিয়া কইরা লইয়া আইছে। ওইযে দেহেন পাতলা শাড়ি পইড়া বইসা আছে মাইয়াটা, বারবার ঘোমটা ঠিক করার নামে কী যে করতাছে! চাচায় তো বহুত রাইগ্গা আছে।”

আশিক বলে,
“খালামণিও মানছে না?”

কাজের মেয়েটি জবাব দেয়,
“আফনে কোনোদিন চাচিআম্মারে দেখছেন, বড়ো ভাইয়ের বিরুদ্ধে কিছু কইছে? আইজও কিছু কয় না। চাচাজানরে মানানোর চেষ্টা করতাছে।”

আরিয়া বলে,
“আচ্ছা ঠিক আছে। তুমি এখন যাও।”

কাজের মেয়েটি চলে যেতেই আরিয়া আশিককে বলে,
“তুমি ড্রয়িং রুমে উনাদের কাছে গিয়ে বসো না হয়। আমি ব্যাগ পত্র নিয়ে রুমে যাচ্ছি। আর শোনো, ছেলের বউ মানবে কি মানবে না। এটা উনাদের ব্যাপার। তুমি কিছু বলতে যেও না।”

“হুম। ভাইয়া এমনিতেই আমার উপর ক্ষ্যাপা।”

আরিয়া ব্যাগ নিয়ে রুমে চলে গেলো। আশিক ড্রয়িংরুমে যেতেই মিসেস নেহা উঠে এসে ধিমি স্বরে বলেন,
“তোর খালুকে একটু রাজি করা না, বাপ। তোর খালু মানবে না বলে দম ধরে বসে আছে। তোর ভাইও জেদ ধরে বসে আছে। আমি কী করব?”

“ভাইয়ার বিয়ে তো তোমরা একসময় না একসময় দিতেই। আর তোমরা এও জানো ভাইয়ার পছন্দ করা মেয়ের সাথেই বিয়ে দিতে হতো। তাহলে এখন মানছে না কেন?”

“মেয়েটা তোর খালুর সিলেটের অফিসের।”

“এজন্যই মানছে না? দাঁড়াও কথা বলি। তুমি খালুকে একটু উনার রুমে আসতে বলো।”

“আচ্ছা।”

ওদিকে নাহিদ আশিককে দেখে ভেতরে ভেতরে ফুঁসছে। আশিককে এখন তার সহ্য হয় না। কিন্তু তারই বাবা-মা আশিককে মাথায় তুলে রাখে।
মিস্টার হাসান স্ত্রীর কথা শুনে নিজের রুমে যান। সেখানে আশিক জিজ্ঞাসা করে,

“খালু, ভাইয়া যখন বিয়েটা করেই ফেলেছে তাহলে….”

“থাম তুই। জানিস তুই মেয়েটার ব্যাপারে কিছু? আমার অফিসে রিসেপশনে বসে মেয়েটা। সেটা আসলে সমস্যার কথা না। তোর কী মনে হয়, অফিসের কানাঘুষা আমি কিছু জানি না? মেয়েটার সম্পর্কে ভালো কোনো কথা আমার কাছে আসেনি। আমি মেয়েটাকে কয়েকবার সাবধান করেছিলাম। অফিস কাজের জায়গা এখানে এসে রং-তামাশা করার না। আর তোর ভাই সেই মেয়েকেই বিয়ে করে এনেছে।”

“কিন্তু খালু, এখন তো কিছু করার নেই। বিয়েটা তো হয়ে গেছে। আর ভাইয়ার জেদ তো তুমি জানোই। এখন যদি তুমি কিছু না মানো তাহলে হিতে বিপরীত হবে।”

“কিন্তু এই মেয়েকে ঘরে তুললে অশান্তি আরও বাড়বে।”

“কিন্তু ঘরে যদি না তোলো, ভাইয়া তো এই মেয়েকে নিয়েই অন্য কোথাও থাকবে। এখন যদি এই মেয়েটার ভাইয়াকে কোন ক্ষতি করার ইচ্ছা থাকে, তাহলে সে বাহিরে থাকলে আরও বেশি করতে পারবে। ঘরে থাকলে কিছু তো ভয়ে থাকবে।”

“তুই আর তোর খালা, দুজনেই নরম মনের। তোর ভাইয়ের কোনো ক্ষতি এই মেয়ে করবে না। তোর ভাই এই মেয়েকে বিয়ে করে এনেছে আমাদের উপর শো*ধ তুলতে।”

“কী আর শো*ধ তুলবে? আমাকে ও আরিয়াকে বাড়ি ছাড়া করবে তো? ভাইয়া যদি বলে তাহলে আমি আজকেই আরিয়াকে নিয়ে এখান থেকে চলে যাব।”

“খবরদার! তোর মাকে তোর খালা কথা দিয়েছে, তোকে কখনো নিজের ছেলের থেকে নিচু নজরে দেখবে না।”

মিস্টার হাসান কষ্ট থেকেই কথাটা বললেন। আশিক মলিন হেসে তার খালুর কাঁধে হাত রেখে বলে,
“মেনে নাও। যার ভাগ্যে যা আছে তাই হবে। ভাইয়া এমনিতেই তোমাদের উপর রাগ। এখন যদি তোমরা মেনে না নেও, তাহলে সেই রাগের আগু*নে আরো ঘি পড়বে।”

মিস্টার হাসান দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে হতাশ কণ্ঠে বলেন,
“এই ছেলেই আমার নাম ডুবাবে!”

অতঃপর রুম থেকে বেরিয়ে ড্রয়িংরুমের দিকে যান। আশিকও পিছু যায়। তিনি ড্রয়িংরুমে গিয়ে বলেন,
“তোমাদের মেনে নিলাম কিন্তু আমার কিছু শর্ত আছে। মুশফিকা(নাহিদের বউ) আর অফিসে যাবে না। যদি মানতে পারো তবেই মুশফিকা এই বাড়িতে থাকবে। নয়তো না।”

নাহিদের জবাব দেওয়ার আগে, মুশফিকাই জবাব দেয়,
“আমি রাজি, বাবা। আপনি যে আমাকে পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নিয়েছেন এটাই তো অনেক।”

মুশফিকার কণ্ঠে এত নম্রতার ছাঁপও মিস্টার হাসানের মন গলাতে পারেনি। তিনি বলেন,
“নাহিদ, তুমি তোমার বউকে নিয়ে তোমার ঘরে যাও। অনেক রাত হয়েছে।”

নাহিদ কিছু না বলে মুশফিকার হাত ধরে নিজের রুমের দিকে চলে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ