শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১৯+২০

0
77

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৯
কিছুক্ষণ চুপ করে থাকার পর শ্রাবণ বলে,
“সরি!”
আর্শির মন কৌতুহলী হয় ভীষণ। হঠাৎ শ্রাবণ তাকে সরি কেন বলছে? সে শুধায়,
“হঠাৎ সরি বলছেন কেন?”

“আমি ভাবছিলাম, তুমি আমাকে পছন্দ করো না বলে…”

কথার মাঝে শ্রাবণকে থামিয়ে দিয়ে আর্শি চটপট বলে ওঠে,
“কী ভাবছিলেন? এটাই যে, আমি যেভাবেই হোক আপনার থেকে দূরে থাকতে চাই?”

শ্রাবণ চুপ করে আছে। কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে আর্শি জবাব না পেয়ে বলে,
“আপনি আমাকে আগে যেভাবে ভালোবাসতেন, এখনও তেমন ভাবেই ভালোবেসে যান। আমি কথা দিচ্ছি, আমি অন্তত অন্যকারও প্রতি আসক্ত হবো না। আই নিড অ্যা লয়াল ম্যান, হু লাভস মি মোর দেন আই লাভ হিম।”

শ্রাবণের হৃদপ্রাঙনে উত্তাল ঢেউ বইলো। মনের মধ্যে থাকা অশান্তি গুলো যেন কর্পূরের ন্যায় উড়ে যেতে লাগলো। বাকরুদ্ধ অবস্থা তার। আর্শির কথার বিপরীতে যে মুখ ফুটে কিছু বলবে, সেই শক্তিটাও পাচ্ছে না। আর্শি অধীর হয়ে অপেক্ষা করছে শ্রাবণের জবাবের। তার মনে খুঁতখুঁত করছে। আর্শি মনে মনে বলে,

“প্লিজ শ্রাবণ, কিছু তো বলুন। ভালোবাসা পাওয়ার থেকেও আমার বেশি ভয় ধো*কার! আমি চি*টেড হতে চাই না। আমাদের মাঝে দূরত্ব থাকাটাই যে বেশি ভয়ের। আমার পার্সপেক্টিভ আপনি বুঝলে আমাকে এই ভয়ে ভয়ে থাকতে হতো না।”

ফোনের দুই পাশে দুইজনই নিরব। শ্রাবণ বেডরুম থেকে উঠে হাঁটতে হাঁটতে বারান্দায় গিয়ে বসলো। বারান্দায় বসে প্রাকৃতিক শীতল হাওয়ায় ঘন ঘন শ্বাস নিয়ে বলল,

“তুমি শুধু আমার হয়ে থেকো। আমি তোমায় যেকোনো পরিস্থিতিতে আগলে রাখব।”

শ্রাবণের কণ্ঠে হয়তো মা*দকতা ছিল, নয়তো আর্শি লজ্জা পেয়ে ফোন কান থেকে নামিয়ে রাখতো না। অপরদিকে শ্রাবণও প্রত্যুত্তরের অপেক্ষা করছে। সে “হ্যালো! হ্যালো!” করতেই আর্শি ফোন কানে নিয়ে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে বলে,

“ভালোবাসতে আমার সময় লাগবে। আবার এমনও হতে পারে, পরমুহূর্তেই ভালোবেসে ফেললাম!”

“আমি আরও ধৈর্যশীল হবো।”

হাসলো আর্শি। অতঃপর বলল,
“আমাদের মাঝে এই যে বর্গমাইল বর্গমাইল দূরত্ব! রূপকথার ভাষায় বলা যায়, সাত সমুদ্র তেরো নদীর দূরত্ব! এটাও তো বুঝতে হবে। গানে-কবিতায় বলে, ‘দূরত্ব নাকি ভালোবাসা বাড়ায়।’ যেমন বাড়ায় তেমনি শেষও করে। একটু সহ্য করে নিয়েন। আমার স্বভাব আপনার জানা। সব জেনেই তো ভালোবেসেছেন।”

“হুম। তুমি এক বছর স্টাডিতে মনোযোগ দাও। আমার তোমাকে দেখতে ইচ্ছে হলে চলে যাব তোমার কাছে।”

দুজনের মুখে লেগে আছে মানসিক প্রশান্তি। একজনের অপেক্ষার, আরেকজনের ভরসার। অপেক্ষা ও ভরসা, দুইই তো ভালোবাসার পূর্ণরূপ।

________

“আশিক! তুমি বাসের পেছনের দিকে সিট নিয়েছ কেন?”

আরিয়া একটু জোড়েই বলাতে আশিক থতমত খেয়ে যায়। ঢোক গিলে বলে,
“সামনের বা মাঝের দিকে পাইনি। কিছু হবে না। আমাদের সিটের পর আরও দুটো সারি আছে তো।”

আরিয়া তেড়ে এসে বলে,
“আমার ভমিটিংয়ের প্রবলেম আছে। এটা আবার এসি বাস। যদি….”

আরিয়ার বলা প্রথম কথাটাতেই আশিক আঁতকে ওঠে! সে বিস্ময় নিয়ে বলে,
“কী বলছো! তোমার বমি হবে? প্লিজ প্লিজ! বমি করো না। দেখো বমির গন্ধ আমার সহ্য হয় না।”

“সিট নেওয়ার সময় এটা মা*থায় আসেনি?”

“আমি কি জানতাম নাকি! তুমিও তো বলোনি।”

“আমার সবসময় বমি হয় না। আমার মাঝেমাঝে হয়। ঝাঁকিতে হয়। জার্নিতে আমি আপুর কাঁধে সারাক্ষণ ঘুমিয়ে থাকি।”

আশিক তাড়াহুড়ো করে বলে,
“আমার কাছে বমির ঔষুধ আছে। দেই? খেয়ে নাও। আর আমার কাঁধে ঘুমিয়ে থেকো। ঘুমের ঔষুধও আছে। ওটা খাবে? তাহলে ঝাঁকি টেরও পাবে না। তুমি আমার কোলেই ঘুমিয়ে থেকো।”

আরিয়া চোখ-মুখ কুঁচকে আশিকের বাহুতে মে*রে বলে,
“এতো ভয় পাচ্ছো কেন? এতো ভীতু হলে চলবে? তোমার বউ একটু বমি করবে, তুমি সামলাতে পারবে না?”

“সত্যি বলতে, না! আমার এসবে পূর্ব অভিজ্ঞতা নেই। মেডিসিন দুটো খেয়ে নাও। স্লিপিং পিলটা মাইল্ড। কিছু হবে না। তোমারও কষ্ট কম হবে।”

আলো আঁধারিকে আশিকের অসহায় মুখশ্রী দেখে আরিয়া হেসে ফেলল। ওদিকে ড্রাইভারের হেলপার বলছে এখনি বাস ছাড়বে। আরিয়া আশিককে মেডিসিন দিতে বলল। অতঃপর খেয়ে নিয়ে আশিকের হাত জড়িয়ে কাঁধে মাথা রেখে ঘুমানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে।

_______

পরদিন ঘুম থেকে উঠে নাস্তার টেবিলে শ্রাবণ ইরাদকে বলে,
“তোর ফ্রেন্ডকে বল যেন ইটালির ভিসার ব্যাবস্থা করে দেয়। জলদি।”

ইরাদের জবাবের আগেই স্নিগ্ধা বলে ওঠে,
“তুমি না বললে যাবে না।”

“এখন বলছি যাব।”

স্নিগ্ধা আবার কিছু বলতে নিলে ইরফান টেবিলের নিচ দিয়ে স্নিগ্ধার বাম হাত ধরে কিছু না বলতে ইশারা করে। স্নিগ্ধা চোখ বন্ধ করে নিঃশ্বাস ছেড়ে রুটি ছিঁড়ে মুখে পু*ড়ে নেয়। ইরাদ বলে,

“ওকে। আমি কথা বলে দেখছি।”

“হুম।”

তারপর শ্রাবণ আর কিছু না বলে খেতে শুরু করে। শফিক সাহেব খাওয়ার শেষের দিকে শ্রাবণকে জিজ্ঞেসা করেন,
“তুমি কি কানাডাতে সেটেল হওয়ার চিন্তা করছো?”

“হ্যাঁ বাবা। ওখানের জবটা ভালো। সিকিউর। আমি চাই সেটেল হয়ে গেলে তোমাদেরও নিয়ে যাব। স্নিগ্ধাও তো সিংগাপুরেই থাকে। তোমরা দেশে একা একা কী করবে!”

মিসেস সন্ধ্যা বলেন,
“কিন্তু দেশেই তো শান্তি।”

“আচ্ছা, মা। টপিক বাদ দাও। আমি ইরাদকে নিয়ে বেরোবো। ইরাদ, এমন ইঁ*দুরের মতো খুঁটে খুঁটে না খেয়ে জলদি খা!”

শ্রাবণের কথা শুনে ইরাদ ক্ষেপে গেলেও ইশরাক ফিক করে হেসে ফেলে বলে,
“চাচু, তোমার দাঁত কি ইঁদুরের মতো?”

ইরফান হাসি কন্ট্রোল করে রেখেছে। স্নিগ্ধা বাদে সবাই ইরাদকে নিয়ে হাসলেও স্নিগ্ধা গম্ভীর হয়ে খাওয়া শেষ করে উঠে পড়ে। ইরফান তা দেখে নিজেও উঠে যায়।

নিজের রুমে গিয়ে স্নিগ্ধা থম মে*রে বসে আছে। ইরফান দরজা লাগিয়ে স্নিগ্ধার পাশে বসে জিজ্ঞেসা করে,
“তুমি এরকম করছো কেন? দেখো, তোমার ভাইয়া নিজের পছন্দে বিয়ে করেছে। এখন এটা নিয়ে ঝামেলা করো না। যা হওয়ার তাই তো হয়েছে। বিয়েটা তো হয়ে গেছে। তাইনা?”

স্নিগ্ধা অসন্তোষ নিয়ে বলে,
“আমার ভাই না হয় ওই মেয়ের জন্য দিওয়ানা! কিন্তু আমার বাবা-মাও ও-কে বোঝালো না। আর্শিকে আমি খুব ভালো করে চিনি। খুব ক্লোজ ছিল আমার। ও সব সময় আমার কাছে ভাইয়াকে নিয়ে নিন্দা করতো। একদিন তো আমাকে বলে ফেলেছিল, আমার ভাই নাকি ছ্যাঁ*চড়ার মতো করে! সাত বছর আগের কথা। সেই দিন থেকে আমি ওর সাথে কথা বলি না। কারও ফিলিংসকে সে ছ্যাঁচ*ড়ামো বলতে পারে না।”

ইরফান স্নিগ্ধাকে শান্ত করতে বলে,
“তুমিও কি বাচ্চাদের মতো জেদ ধরে বসে আছো! সাত বছর আগে, আর্শির বয়সই বা কত ছিল! কলেজে পড়তো এমন। তখন তো মানুষ কতো কথাই বলে।”

“তাই বলে আমার কাছে আমার ভাইয়েরই নিন্দা করবে! তাও এভাবে! ওর তো এটা বোঝা উচিত ছিল, আমার ভাইয়ের নামে নিন্দা ও আমার কাছেই বিশ্রি ভাবে করছে।”

“স্নিগ্ধা, শান্ত হও। তুমিও কিন্তু এটা অস্বীকার করতে পারো না যে তোমার ভাই আর্শির জন্য সেসময় আদিবদের বাড়িতেই সারাক্ষণ পড়ে থাকতো। আর্শির এসব ভালো লাগতো না। মুখের উপর কতোবার বলেছিলও মেয়েটা। তারপরও তোমার ভাই, সেখানেই পড়ে থাকতো। ইরাদ আমাকে এসে বলতো।”

“তুমি ওই আর্শির হয়ে ওকালতি করবে না। এতোই যখন ওর আমার ভাইয়াকে অপছন্দ তাহলে এখন বিয়েটা করলো কেন? না করতো বিয়েটা। আমার ভাইয়ের জন্য মেয়ের লাইন লেগে যেত।”

“বাদ দাও না। ওরা ওদের মত ওদের সম্পর্কটাকে গুছিয়ে নিক। তুমি আর্শির প্রতি রাগ করে থেকো না। তোমার ভাইয়া এই বিষয়টাকে ভালোভাবে দেখে না। তোমার এটাও বোঝা উচিত।”

“আমি মেয়েকে কিভাবে দেখবো না দেখবো সেটা সম্পূর্ণ আমার ব্যাপার। ভাইয়ার এতে ভালো লাগলো কী লাগলো না সেটা আমার দেখার বিষয় না। সে তো আর বিয়ের সময় আমার অপিনিয়ন নেয়নি। সে নিজের ইচ্ছায় বিয়ে করেছে।”

ইরফান মাথায় হাত দিয়ে বলে,
“ঠিক আছে! তুমি তোমার অপিনিয়ন, তোমার পার্সপেক্টিভ সব নিয়ে থাকো। কোন সমস্যা নেই। শুধু তোমার ভাইয়ের সামনে গিয়ে এসব কথাবার্তা বলো না। তুমি নিজের লাইফে হ্যাপি আছো কী-না সেটা নিয়ে ভাবো। তোমার ভাইয়েরটা তোমার ভাই বুঝে নেবে।”

এই বলে ইরফান উঠে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। স্নিগ্ধা বেজার হয়ে বসে থাকে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_২০
সাজেক পৌঁছাতে পৌঁছাতে প্রায় দুপুর গড়িয়ে গেছে আরিয়া ও আশিকের। দুপুরের খাবার খেয়ে আরিয়া ক্লান্তিতে হোটেল রুমের বিছানায় গা এলানো মাত্রই আশিক আয়নার সামনে হাত দিয়ে নিজের চুল ঠিক করতে করতে চটজলদি বলে,

“জলদি রেডি হও। আমরা এখনই বেরোবো।”

আরিয়া অবাক হয়ে উঠে বসে বলে,
“এখুনি? এখুনি কেন? তুমি বাহিরে তাকিয়ে দেখো, কী কড়া রোদ! আমি তো এখন বেরোবো না।”

আশিক বিস্মিত স্বরে প্রশ্ন ছুঁড়ে,
“মানে কী? আমরা কি এখানে হোটেল রুমে ঘুমাতে এসেছি? আমরা এসেছি ঘুরতে। শুকরিয়া করো যে রোদ উঠেছে, বৃষ্টি পড়ছে না। জলদি রেডি হও। হারি আপ!”

“আমি একটু ঘুমাব। প্লিজ।”

আরিয়া কিউট ফেস করে গাল ফুলিয়ে বললেও আশিক ওর কাছে গিয়ে ওর গাল টেনে দিয়ে বলল,

“না। তুমি তো বাসে ঘুমাতে ঘুমাতে এসেছ। এখন ঘুমাবে না।”

“স্লি*পিংপি*লের এফেক্ট কমেনি। আমার টায়ার্ড লাগছে।”

আশিক বাধ্য হয়ে কোন উপায়ান্তর না দেখে আরিয়াকে টেনে তুলল। অতঃপর নিজেই ব্যাগ খুলে একটা সাদা ও টিয়ার মিশেলে একটা গাউন(গোঁড়ালির উপর পর্যন্ত) বের করে দিলো সাথে হিজাব ও জিন্স বের করে বলে,

“ফটাফট রেডি হয়ে আসো। আমরা আজকে আশেপাশে ঘুরব। ছবি-টবি তুলব। তারপর আগামীকাল কংলাক পাহাড়, নীলগিরি যাব। তাই এই দুই দিনের জন্য তোমার ঘুমকে ছুটি করে দাও। যাও যাও!”

আরিয়াকে একপ্রকার ঠেলেই ওয়াশরুমে চেঞ্জ করতে পাঠিয়ে দিল আশিক। অতঃপর নিজে হাঁফ ছেড়ে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো।

_______

আর্শি মনোযোগ দিয়ে ক্লাস করছে। পেছন থেকে সোহা আর্শির চুল ধরে টান দেয়। যার দরুণ আর্শি পিছনে ফিরে সোহার হাতে কলম দিয়ে বা*ড়ি দিতেই সেটা ক্লাস টিচারের নজরে আসে। অতঃপর ক্লাস টিচার দুজনকেই ক্লাস থেকে বের হয়ে যেতে বলে। আর্শি সরি বলে থাকতে চেয়েছিল কিন্তু সোহা ও-কে একপ্রকার টেনেই নিয়ে যায়। বাহিরে এসে আর্শি সোহাকে দুই ঘা লাগিয়ে বলে,

“ক্লাসে এটা কী করলি?”

“আরে চিল! ইয়ার! আমি চাচ্ছিলাম তোর সাথে গল্প করব। দেখ, তোর সাথে গল্প করার জন্য সকালবেলা ট্যুর থেকে ফিরে আমি ভার্সিটিতে এসেছি ক্লাস করতে! ডু ইউ ইমাজিন? এই সোহা! তাও এতো পাংচুয়াল!”

আর্শি মুখ বেঁকিয়ে প্রত্যুত্তর করে,
“হজম করতে কিছুটা কষ্ট হয়েছে। কিন্তু আমি ভেবেছিলাম তুই ট্যুর থেকে এসে একটু সিরিয়াস হবি।”

“উফ আর্শি! আমি আর সিরিয়াস! ইটালিতে মাস্টার্স করতে এসেছি কি শুধু পড়তে নাকি! একটু ঘোরাফেরা করব! ট্যুর দিব! বাই দ্যা ওয়ে, তুই লিসার মুখটা দেখেছিস? আমি যখন তোকে নিয়ে বের হয়ে আসছিলাম তখন ওর মুখটা জাস্ট দেখার মতো ছিল। মনে হচ্ছিল, চোখ দিয়েই আমাকে গি*লে খা*বে!”

“ইম্পরট্যান্ট ক্লাস ছিল, সোহা! আমি কতগুলো দিন ক্লাস মিস করেছি তুই জানিস? এই লিসাই আমাকে নোটগুলো দিয়েছে। তোর থেকে তো নোটের আশা করাই বেকার! তুই নিজেই পরীক্ষার আগে দিয়ে লিসার হাতে পায়ে ধরে নোটগুলো নিস। তারপর পড়িস।”

সোহা আর্শির গোমড়া মুখখানা নিজের দিকে ঘুরিয়ে আদুরে স্বরে বলল,
“এখন প্লিজ এই মুখ গোমরা করে থাকিস না। আজকে তোকে অনেক কথা বলার আছে। তারপর আবার শুনলাম তোর বিয়েও হয়ে গেছে। তাহলে তো তোরও অনেক কথা জমে আছে। তাই না? এখানে তুই বাঙালি, আমিও বাঙালি। আমরা দুজনে দুজনের সাথে মনের কথা খুলে বলতে পারব। কিন্তু লিসার সাথে কথা বলতে গেলে যতোই হোক মন খুলে বলা যায় না। যদিও লিসা মনোযোগী শ্রোতা। চল না, ক্যাম্পাসের ওইদিকটায় (আঙুল দিয়ে দেখিয়ে) বসি।”

সোহার কিউট পাপি ফেস ও অকাট্য যুক্তি শুনে আর্শি হেসে ফেলল। অতঃপর মৌন সম্মতি দিয়ে সেদিকে আগাতে লাগলো।

_______

সকাল থেকে শ্রাবণের খুব ইচ্ছে হচ্ছে ফুচকা খাওয়ার! তাও বোম্বাই ম*রিচ দিয়ে! হঠাৎ নিজের এই অদ্ভুত ইচ্ছেতে নিজেই অবাক হয়ে পারছে না। এই ইচ্ছে হওয়ার আরেকটা কারণ হচ্ছে, আর্শি সকালে ক্লাসে যাওয়ার আগে তার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলতে বলতে ফেসবুকে একটা বোম্বাই ম*রিচের ফুচকার ছবি দেখে সেটা তাকে সেন্ড করেছে। আর বলেছিল,

“এখন এই ভীণদেশে আমি এসব কই পাব? এসব আমার সামনেই কেন পড়ে?”

শ্রাবণ জবাবে বলেছিল,
“কোথাও যদি না পাও, তাহলে বানিয়ে খাও।”

“আমি যদি এত টেস্টি করে বানাতেই পারতাম, তাহলে তো কথাই ছিল না। এখানে সর্বোচ্চ রেডিমেট ফুচকার চিপস পাওয়া যায়। ওটা দিয়েও না হয় কাজ চালানো যায়। কিন্তু ফুচকার টকটা! ওটাই তো আসল। ওটাই তো আমার হয় না।”

“তো এখন কী করবে?”

“কী আর করব! এক বছর অপেক্ষা করব। তারপর দেশে ফিরে টিএসসির মোড় সহ আমার ভার্সিটির ওখানে জমিয়ে বোম্বাই ফুচকা খাব। এই আপনি ঝাল খেতে পারেন তো? যদিও জানি আপনি ঝাল খান, কিন্তু ওই ঝালের সাথে বোম্বাই মরিচের ঝালের মধ্যে পার্থক্য আছে তো। ”

শ্রাবণ তৎক্ষণাৎ ভ্রুঁ কুঁচকে নিয়েছিল। আর বলেছিল,
“শোনো, আমি বরিশালের ছেলে। আমাদের মুখে এই সামান্য ঝাল কিছুই না! এক দুইটা মরিচ তো এমনিতেই…”

আর্শি দ্রুত শ্রাবণকে থামিয়ে বলেছিল,
“বুঝেছি! আর বলতে হবে না। আপনাদের মুখে প্রথম খাবার ম*রিচই দেয়! মানুষ যে বরিশালের নাম বলে কী বোঝাতে চায়! যেন ঝালখো*রের ঝালখো*র! আমার এক বান্ধবী ছিল। জানেন ও বলতো যে, ‘আমি বরিশালের মেয়ে অনেক ঝাল খেতে পারি!’ কিন্তু আমাদের সাথে ফুচকা খাওয়ার সময় কেঁদেকেটে একাকার! আর আপনি তো মনে হয় পাঁচ বছরেও একবার বরিশালের মুখ দেখেন না!”

“তুমি কিন্তু আমাকে চ্যালেঞ্জ করছো।”

“হ্যাঁ করছি। এখন থেকে বসে বসে ঝাল খাওয়ার প্র্যাকটিস করতে থাকেন। আমি ফোন রাখছি। আমার ক্লাস আছে। বায়!”

খট করে আর্শি কল কেটে দেয়। শ্রাবণ বেচারা তখন থেকেই মনে মনে জিদ চেপে বসেছে সে ঝাল খেয়ে আর্শিকে দেখিয়ে দিবে। সেই থেকে এখন বিকেল প্রায়। ভাবছে বোন ও বোনজামাই নিয়ে ঘুরতে বেরিয়ে আজ ঝাল ফুচকা খাবে।

____

সোহা নিজের ট্যুরের বিশদ বিবরণ শুরু করলো। আর্শি গালে হাত দিয়ে শুনছে। ট্যুরে সোহার এক ছেলের সাথে ভাব হয়েছে। সেই ছেলে রোমে থাকে। কিন্তু ইটালিয়ান না। ছেলে পর্তুগিজের। নাম এল্যান রিক। সোহাকে অনেক হেল্প করেছে, গল্প করেছে। সোহা ভেবেই নিয়েছে, এবার তার সিঙ্গেল জীবনের ইতি ঘটতে চলেছে। স্কুল-কলেজ, ভার্সিটি, সবজায়গাতে প্রেম হয়নি কারণ তার যেমন ছেলে পছন্দ ওমন কেউ তাকে প্রপোজই করেনি! তারাই প্রপোজ করতো, যাদেরকে সোহা চোখ বন্ধ করে রিজেক্ট করতে পারে। সোহা এক্সাইটমেন্টে বলছে,

“এবার বল না, আমি রিকের সাথে কীভাবে কথা শুরু করব? ওর সাথে ইন্স্ট্রা, ফেসবুকে এড তো হয়েছি কিন্তু ওই ছেলে তো আজ এখনও মেসেজ করলো না।”

আর্শি বলল,
“করবে নাহয় পরে। একটা ট্যুর থেকে ফিরেছে। টায়ার্ড মেবি। রেস্ট নিচ্ছে।”

কিন্তু সোহার উৎকণ্ঠা কমলো না। বরং আরেক ধাপ এগিয়ে বলল,
“আমিও তো ট্যুর থেকে ফিরেছি। আমি তো ক্লাস করতে এসেছি। নাকি ট্যুর শেষ তাই আমার কথা ভুলে গেছে? কে জানে, হয়তো গার্লফ্রেন্ড আছে। আমিতো এটা জিজ্ঞাসাই করিনি।”

আর্শি ভাবলেশহীন জবাব দেয়,
“থাকতেও পারে! হু নোওজ?”

“এভাবে বলিস না। আমি প্রথমবার নিজের মন মতো ছেলের চোখে আমার প্রতি ইন্টারেস্ট দেখেছি।”

“তাহলে ধৈর্য রাখ। সে পড়াশোনা করে?”

“হ্যাঁ। বলল জাস্ট মাস্টার্সের রিসার্চের একটু কাজ বাকি। সাথে পার্টটাইম জবও করে। সাইকোলজিতে পড়ে।”

“ওয়াও! হলে তুই ১০০% সিওর থাক, ওই ছেলে তোর চোখ-মুখের ভাষা সব বুঝেই গেছে। যদি এখন সে তোর প্রতি ইন্টারেস্টেড থাকে তাহলে নিজেই যোগাযোগ করবে। আবার তোকে টেস্ট করতে পারে যোগাযোগ নাও করতে পারে। এসব তাদের রিসার্চের অংশও হতে পারে।”

“এখন আমি কী করব?”

“চুপচাপ বসে থাক। ক্লাস টাইম শেষের পথে। লিসার হাতে কে*লানি খেতে তৈরি থাক। মোনারও বোধহয় এরপর পরপর ক্লাস নেই। একসাথে লাঞ্চ করা যাবে।”

সোহা মুখ ভাড় করে বসে রইল। আর্শি এতক্ষণ ভাঁজ করে রাখা পা দুটো মেলে দিলো। রোদের তীব্রতা এখন প্রখর। ইটালির সাথে বাংলাদেশের ঋতুর কিছুটা মিল রয়েছে। জুন থেকে আগষ্ট ইটালিকে গ্রীষ্মকাল। সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর শরৎকাল। ডিসেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি শীত কাল। মার্চ থেকে মে বসন্ত কাল। ওদের আনুষ্ঠানিক বর্ষা কাল নেই তবে মিলান ও ভেনিসে প্রায় সারা বছর বৃষ্টির দেখা মিলে। কিন্তু অন্যান্য শহরগুলোতে শীতকালে বৃষ্টি বেশি হয়। আর্শি আছে মিলানে। এখন আগষ্ট মাসের শুরু। এই আগষ্টের ১২ তারিখ তার জন্মদিন। হাতে আছে আর ৬দিন। মিলানে এই মাসে এখন অবধি সে বৃষ্টির দেখা পেলো না। যদিও তার পছন্দ না।
এদিকে সোহা নিজের মাইন্ড চেঞ্জ করতে উশখুশ করছে। সে আর্শিকে নিরলস বসে থাকতে দেখে খপ করে আর্শির কোল থেকে ফোনটা নিয়ে নিলো। আর্শি চমকে তাকিয়ে শুধালো,

“কী হলো? ফোন নিলি কেন?”

“তোর হাজবেন্ডকে কল করব।”

আর্শি আরও অবাক হয়ে প্রশ্ন ছুঁড়তে ছুঁড়তে সোহার হাত থেকে ফোন ছিনিয়ে নিলো।
“কেন? উনাকে কেন কল করবি? তুই কি এখন শ্রাবণকে কল করে তোর এই নিউ ক্রা*শের কথা বলবি?”

সোহা চোখে-মুখে বিরক্তি ফুটিয়ে বলল,
“উফ! না রে। আমি আমার মাইন্ড চেঞ্জ করতে ভাবলাম, জিজুকে কল করি, গল্প করি। আর তুই এখানে কী না আবার একই টপিকে নিয়ে আসছিস!”

“দরকার নেই।”

“চুপ! জিজুর সাথে আলাপ করাবি না? এতো ইনসিকিউর কেন তুই? আমি তোর জামাইয়ের দিকে নজর দিবো না। আমার নজর এতোও খারাপ না।”

সোহার কথা শুনে আর্শি

বিড়বিড় করে বলে,
“নজর দিলেও লাভ হবে না। এই ছেলে কেমন জানি! নিজেও ঠিক ভাবে বুঝি না!”

“কিছু বললি?”

“না।”

“ফোনটা দে না। একটু গল্প করব। লিসা, মোনাও সাথে যোগ দিবে।”

“ফোনে এমনিই চার্জ কম। তাই নিজেও বের করছি না। নে ধর। বেশি বকবক করবি না। তোর তো বকবকানি শেষ হয় না!”

“ওকে ওকে।”

বলেই দাঁত বের করে হাসলো সোহা। অতঃপর আর্শি নিজেই শ্রাবণকে কল লাগালো।

চলবে ইন শা আল্লাহ,
ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে