শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১৭+১৮

0
147

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৭
বাংলাদেশে এখন রাতের শেষাংশ। ভোরের দিকও বলা যায়। আর্শি মাত্রই ইটালিতে সে যেই অ্যাপার্টমেন্টে থাকে সেখানে পৌঁছালো। এই সময় ফোন না করে সে তার বাবা, ভাই ও শ্রাবণের মেসেঞ্জারে মেসেজ করে জানিয়ে দিলো। তার নিজেরও দীর্ঘ জার্নির কারণে খুব ক্লান্ত লাগছে বিধায় রুমমেটদের সাথে হাই-হ্যালো করে ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়লো।

সকালে একটু দেরি করেই ঘুম ভাঙে আর্শির। ঘুম থেকে উঠেই বেডের কাছে মোনালিসাকে কফির মগ হাতে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসে আর্শি। বলে,

“গুড মর্নিং, লিসা।”
মোনালিসাও হালকা হেসে বলে,
“গুড মর্নিং, আশি! লিসেন, ড্রিংক দিস কফি এন্ড গেট রেডি কুইকলি। ইউ আর অলরেডি লেইট। উই হ্যাভ ক্লাস এট টেন এম। গো ফার্স্ট।”

আর্শি পূর্ব দিকের দেয়ালে ঘড়িটার দিকে চেয়ে কপালে হাত দিয়ে বলে,
“ও ইয়াহ! আই টোটালি ফরগেট! জাস্ট ওয়েট কাপল অফ মিনিটস।”

আর্শি জলদি করে ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ফোনের ইন্টারনেট কানেকশন অন করতেই ফোন কেঁপে ওঠে। ভাইয়ের, বাবার, আরিয়ার আইডি থেকে একবার করে কল। শ্রাবণের আইডি থেকে দুইবার কল। মোনালিসা বলে,

“কুইকলি এটেন্ড দ্যা ফোন কল দেন প্লিজ গেট রেডি ফার্স্ট।”

অতঃপর মোনালিসা রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আর্শি প্রথমে কাকে কল করবে এই নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতায় ভুগলো। কয়েক সেকেন্ড চিন্তা-ভাবনা করে ভাবল প্রথমে বাবাকেই কল করবে। তাছাড়া তার ভাইয়া ও আরিয়া এখন অফিস ও ভার্সিটিতে। ওদের সাথে ভার্সিটি থেকে এসেই কথা বলা যাবে। কিন্তু শ্রাবণকে প্রথমে কল করলে বাবাকে কল করার সময় পাবে না। হাতে সময়ও বেশি নেই। চটজলদি বাবাকে কল করলো। দুই মিনিটের বেশি কথা বলল না। অতঃপর লম্বাশ্বাস নিয়ে শ্রাবণকে কল লাগালো। প্রথমবার রিসিভ হলো না! আর্শি ভাবলো আবার দুই মিনিট পর কল করবে। এখন জলদি তৈরি হয়ে নিক।

এদিকে শ্রাবণ তার বোনের ছেলের জন্য চকলেট আনতে গেছে। তার বোন নিজের স্বামী-সন্তান নিয়ে আজকে সকালেই সিঙ্গাপুর থেকে এসেছে। শ্রাবণের আকদের সময় আসতে চেয়েও পারেনি। চকলেট নিয়ে বাড়ি ফিরে শ্রাবণ ফোনের ইন্টারনেট অন করে দেখলো প্রায় চার মিনিট আগে আর্শি তাকে কল করেছিল। তারপর আর কল করেনি। শ্রাবণ দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলল। ফোনটা রেখে রুম থেকে বেরিয়ে যাওয়া ধরলেই তখনি ফোনটা বেজে ওঠে। শ্রাবণ ফোনটা উঠিয়ে দেখে আর্শি কল করেছে। শ্রাবণ রিসিভ করে। আর্শি সালাম দিয়ে বলে,

“কিছুক্ষণ আগে যে আপনাকে কল করলাম, তখন কই ছিলেন?”

শ্রাবণও সালামের জবাব দিয়ে বলে,
“ইশরাকের জন্য চকলেট কিনতে গিয়েছিলাম।”

“ইশরাক এসেছে? তার মানে স্নিগ্ধা আপুও এসেছে।”

“হ্যাঁ। আজ সকালেই।”

“ওহ। আচ্ছা শুনুন, ভোর রাতে আপনি কল করেছিলেন। আমি তখন ঘুমাচ্ছিলাম। তাই কল রিসিভ করতে পারিনি। এখন ইউনিভার্সিটিতে যাচ্ছি। হাতে বেশিক্ষণ সময় নেই। বাড়ি ফিরে আবার কল করব। আপনি ইশরাক, স্নিগ্ধা আপুদের সাথে এখন সময় কাটান। কতো বছর পর আসলো। টাটা।”

“হুম। টেক কেয়ার।”

অতঃপর কল কে*টে দেয়। আর্শি দ্রুত বেড়িয়ে পড়ে। শ্রাবণ ফুঁস করে নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“আরেকটু কথা বললেও পারতো!”

মন খারাপ করে ফোন রেখে ইশরাকের কাছে চলে যায়।

______

ভার্সিটির এড়িয়ার কাছে পৌঁছে মোনালিসার সাথে হাঁটছে আর্শি। নিরবতা দুজনের মধ্যে। মোনালিসা কম কথা বলে। কিন্তু এবারে মোনালিসাই প্রথমে বলে,

“সো ইউ গট ম্যারিড?”

আর্শি ওর দিকে চেয়ে হালকা হেসে বলে,
“ইয়াহ।”

“হোয়াট এবাউট, নাহিদ?”

“আই উইল টেল ইউ এভরিথিং আফটার দ্যা ক্লাস।”

“আর ইউ হ্যাপি নাউ?”

আর্শি খানিক থামলো। ফের বলল,
“একচুয়ালি, আই ডিডেন্ট ওয়ান্ট টু গেট ম্যারিড ইন সাচ এ শর্ট টাইম। বাট মাই ফ্যামিলি ওয়ান্টেড ইট এন্ড দে রিকুয়েস্টেড মি। সো আই হ্যাড টু। বাট শ্রাবণ ইজ গুড গায়। হি লাভস মি।”

“হোয়াট এবাউট ইউ? ডু ইউ লাভ হিম?”

আর্শি আকাশের দিকে চেয়ে চোখ বন্ধ করে লম্বা শ্বাস নিলো। অতঃপর বলল,
“টু বি অনেস্ট, আই ডোন্ট নো। ইয়াহ আই হ্যাভ সাম ফিলিংস ফর হিম। ইজ ইট লাভ? আই রিয়েলি ডোন্ট নো।”

আর্শির জবাব শুনে মোনালিসা মুচকি হেসে বলে,
“ইউ উইল। জাস্ট গো উইথ ফ্লো।”

বিনিময়ে আর্শিও মৃদু হাসে। অতঃপর দুজনে নিজেদের ক্লাসরুমের দিকে চলে যায়।

________

স্নিগ্ধা তার মায়ের রুমে বসে আছে। ড্রয়িংরুমে শ্রাবণ ও ইশরাক ভিডিও গেম খেলছে। স্নিগ্ধার স্বামী ইরফান ঘুমাচ্ছে। স্নিগ্ধা তার মাকে বলে,

“মা, তুমিও কি ভাইয়ার মতো বোকা হয়ে গেলে? আর্শির সাথে ভাইয়ার বিয়ে দিলে? যেই আর্শি কখনোই ভাইয়ার মন বুঝতে চায়নি! আবার শুনলাম নাহিদ নামে একটা ছেলের সাথে ওর কিছু একটা ছিল। পরে ওই ছেলে ওকে ডি*চ করে আরিয়াকে বিয়ে করতে এসেছিল। তোমরা তার সাথেই ভাইয়ের বিয়ে দিলে? এতগুলো বছরেও আর্শি একবারের জন্যও ভাইয়ার ফিলিংস বুঝতে চায়নি। আই ডোন্ট নো, হোয়াট উইল হ্যাপেন?”

মিসেস সন্ধ্যা বলেন,
“তুই চিন্তা করিস না। ওরা দুজনে এখন স্বামী-স্ত্রী। নিজেদের মধ্যে সবকিছু এমনিতেই ঠিক করে নিবে। তাছাড়া তুই তো তোর ভাইকে চিনিসই। আমরা কি ওকে কম মেয়ের ছবি দেখিয়েছি? ওর পছন্দ আর্শিই। ও যদি আর্শিকে নিয়ে সুখে থাকতে চায় তো থাকুক না।”

“মা, তুমি সকাল থেকে ভাইয়ার মুখখানা একবার দেখেছ? কেমন মুষড়ে পড়েছে। আর্শি কি চাইলেই পারতো না, ইটালি যাওয়াটা আরো কিছুদিন পিছাতে? ও চাইলেই পারতো। কিন্তু ও ইচ্ছে করেই করেনি। ভাইয়া কতো করে চেয়েছিল সেও আর্শির সাথে ইটালিতে যাবে। এমনকি ইরাদকেও ফোন করেছিল যাতে ইরাদের বন্ধুর সাথে কথা বলা যায়। ইরাদের ফ্রেন্ড বলেছিল, সে এক-দেড় সপ্তাহের মধ্যে ট্রাই করবে। সে করতেও পারতো।”

মিসেস সন্ধ্যা হতাশ স্বরে বলেন,
“বাদ দে সেসব। আর্শির দিকটাও দেখ। তোর ভাইয়ের জেদের কারণেই আর্শির পুরো পরিবার আর্শিকে বিয়ের জন্য চাপ দিয়েছে। তাছাড়া আর্শির ভার্সিটিতে এমনিতেই দুই সপ্তাহের মতো ক্লাস মিস হয়ে গেছে। কী-ই বা বলার আছে।”

“তোমরা ভাইয়ার জেদকে প্রায়োরিটি না দিয়ে আমার কথা শুনে যদি অহনার সাথে ভাইয়ার বিয়েটা দিতে তাহলে ভাইয়া কিছুদিন পর এমনিতেই আর্শিকে ভুলে যেত। অহনা কতো সুইট একটা মেয়ে। ও আমার নিজের ননদ না কিন্তু ও অনেক কেয়ারিং।”

“দেখ স্নিগ্ধা, ভাগ্যে যা ছিল তা হয়ে গেছে। এগুলো নিয়ে আর কথা বাড়াস না। এখন দোয়া করি, আর্শি ও শ্রাবণের মধ্যে সম্পর্কটা স্বাভাবিক হয়ে যাক। আর মাত্র একটা বছরই তো। তারপর আর্শি ফিরে আসবে।”

“দেখো কী হয়! ওই মেয়ের উপর আমার ভরসা নেই।”

এই বলে স্নিগ্ধা সেখান থেকে উঠে নিজের রুমের দিকে চলে যায়। স্নিগ্ধা ড্রয়িংরুম ক্রস করার সময় শ্রাবণ একবার আঁড়চোখে তার বোনের দিকে তাকায়। তার বোন যে আর্শিকে নিজের ভাইয়ের বউ হিসেবে পুরোপুরি ভাবে মেনে নিতে পারছে না, সেটা তার অজানা নয়। কোনো এক অজানা কারণেই স্নিগ্ধা আর্শিকে অপছন্দ করা শুরু করে দিলো। যেই স্নিগ্ধা আর্শিকে খুব কেয়ার করতো, সেই স্নিগ্ধা আর্শির নাম শ্রাবণের মুখে শুনতেই পছন্দ করে না। শ্রাবণ এখনও ভেবে পায় না, যে স্নিগ্ধা ও আর্শির মধ্যে আসলে কী হয়েছে?

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৮
সন্ধ্যা নাগাদ অ্যাপার্টমেন্টে ফিরে আর্শিরা। আর্শি মোনালিসাকে জিজ্ঞাসা করে,
“হোয়ার ইজ সোহা? আই ডিডেন্ট স হার।”

“সি ওয়েন্ট অন অ্যা ট্রিপ। টুমোরো উইল বি ব্যাক।”

আর্শি মাথা নেড়ে ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হতে যায়। মোনালিসা এই ফাঁকে কিচেনে চলে যায়। আর্শি ফ্রেশ হয়ে বেরিয়ে আরিয়াকে কল করে। আরিয়ার আবার মেসেজ এসেছিল। আরিয়া ফোন রিসিভ করে ব্যাক ক্যামেরা অন করে কিছুটা এক্সাইটমেন্টে বলে,

“দেখো আপু, আমরা সাজেক যাচ্ছি। আজ রাত বারোটায় বাস।”

আরিয়া নিজেদের লাগেজ গুলো দেখাচ্ছে। পাশ থেকে আশিক আর্শিকে বলে,
“আপু, ও-কে কিছু বলো। দুইটা লাগেজ ও একাই নিচ্ছে ওর জামা কাপড়ের জন্য! ও ওইখানে গিয়ে নাকি কিছুক্ষণ পরপর ড্রেস চেঞ্জ করে ছবি তুলবে! আমরা যাচ্ছি ঘুরতে। আর এটা বর্ষাকাল। আমরা ঘুরব নাকি ও বারবার ড্রেস চেঞ্জ করবে?”

আরিয়া মৃদু ধ*ম*ক দিয়ে বলে,
“বর্ষাকাল বলেই তো এত এত জামাকাপড় নিচ্ছি! আরে বলা তো যায় না, কখন পা পিছলে পড়ে গেলাম! ড্রেস নোংরা হয়ে গেল! তখন তো লাগবে।”

“বুঝেছি। তোমার চক্করে আমার ঘোরা হবে না।”

আর্শি বসে বসে ফোনের অপরপাশে এদের ঝ*গ*ড়া দেখছে। কেউ কারও থেকে কম না। আর্শি এদের থামাতে বলে,
“এই থামো! কী শুরু করছো? একটা জায়গায় তোমরা ঘুরতে যাচ্ছো, তার আগেও এরকম ঝ*গড়াঝাঁ-টি শুরু করছো! আর আরু, জামা-কাপড় কয়েকটা কমা। কয়দিনের ট্যুরে যাচ্ছিস তোরা?”

আশিক জবাব দেয়,
“২ দিন। মানে ওখানে পুরো ২দিন ঘুরবো। পরেরদিন সকালে রওনা হবো।”

এবার আর্শি আরিয়ার দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়। আরিয়া আমতা আমতা করে বলে,
“আসলে, আপু। তুমি তো জানোই আমার সবসময় ব্যাগ বড়ো হয়। এবার কিন্তু প্রতিবারের থেকে কম নিয়েছি। মাত্র ছয় সেট জামা কাপড় নিয়েছি। আর যে লাগেজ দেখছো না, হয়তো ক্যামেরাতে বড়ো দেখাচ্ছে। কিন্তু বড়ো লাগেজ না। এগুলো ছোটো লাগেজ। আসলে হ্যাট, জুতো, কসমেটিকস। আর ছয় সেটের মধ্যে তিনটা তো শাড়িই! শাড়ির সাথেও তো আরও কাপড় লাগে। একটা গাউন, একটা থ্রিপিস ও একটা জিন্সের সাথে শর্ট গাউন। আর রাতে ঘুমানোর জন্য দুটো জামা এক্সট্রা।”

“তুই এখনি দুইটা ড্রেস কমাবি। আজব! ঘুরতে যাবি, একেকটা জায়গায় যেতে যেতেই সময় চলে যাবে। তুই তবে এতো চেঞ্জ করবি কখন? ফ্যামিলি ট্যুরে তোর এক্সট্রা লাগেজ ভাইয়া টানতো। তুই তো একটা টানতেই যেন ম*রে যাস! তাহলে এখন আশিককে দিয়ে টানাবি? ড্রেস কমা। আর তোর লাগেজে জায়গা ফাঁকা করে ওখানেই আশিকের ড্রেস নিয়ে নে। দুটোই তো বেশি।”

আশিকও তাল মেলায়।
“আমি বেশি কিছু নিব না। অল্প জায়গা হলেই হবে।”

আরিয়া আশিককে রাগী লুক দিয়ে দাঁতে দাঁত পিষে বলল,
“ফাইন! একটা শাড়ি কমাচ্ছি। এরইমধ্যে তোমাকে নিজের ড্রেস নিতে হবে।”

“তোরা ফোন রেখে ঝ*গ*ড়া কর। আর বেস্ট অফ লাক। বায়।”

এই বলে আর্শিই ফোন কেটে দেয়। ওদিকে আরিয়া ও আশিক নিজেদের ক্যা*টফাই*ট চালিয়েই যাচ্ছে।

আর্শি এবার শ্রাবণকে কল করলো। সাথে সাথে রিসিভও হলো। আর্শির আগেই একটা বাচ্চা ছেলে কণ্ঠে সালাম ভেসে আসে। আর্শিরও বুঝতে বাকি থাকে না, এটা ইশরাক। আর্শি সালামের জবাব দিয়ে শুধায়,

“ইশরাক, কেমন আছো?”

“আলহামদুলিল্লাহ। তুমি এখন কল রাখো। আমি ক্যান্ডিক্রেশ খেলছি।”

এই বলে ইশরাক ফোন কে*টে দেয়। আর্শি বোকার মতো ফোন চোখের সামনে এনে তাকিয়ে থাকে কিছুক্ষণ। অতঃপর আবার কল করে। এবার ইশরাক ফোন রিসিভ না করেই কে*টে দেয়। আর্শি নিজে নিজেই বলে,

“যাহ্ বাবা! এই পুচকে ইশরাক বারবার আমার কল কেটে দিচ্ছে। ওতো গেম খেলছে। কিন্তু ওর মামাকে কে বুঝাবে?এই লোকের হুট করে এতো গম্ভীর হয়ে যাওয়া আমার মোটেও সুবিধার লাগছে না। এইজন্যই আমি বারবার বলছিলাম, না আমি এখন বিয়ে করবো না। এক বছর পর দেশে ফিরে গিয়ে বিয়ে করব। এই লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ সামলানো অনেক কষ্ট। রাগ করবো আমি, কিন্তু তা না! এই লোক গম্ভীর হয়ে বসে আছে। সে কল করলে কল না উঠালেই হলো! ভাল্লাগে না!”

আর্শি ফোন বেডে ঠেলে দিয়ে রান্নাঘরে চলে গেলো সন্ধ্যার কফি ও রাতের ডিনার তৈরি করতে।

________

শ্রাবণ ড্রয়িংরুমে বসে ইরফান ও ইরাদের সাথে কথা বলছে। ইরাদ একটু আগেই এই বাসায় এসেছে। ইরাদ গাজিপুরের দিকে জব করে ও সেখানে একটা ফ্লাট নিয়ে কয়েকজন ব্যাচেলর থাকে। ইরফান ও ইরাদের বাবা-মা থাকে খুলনাতে। কথায় কথায় ইরাদ বলে,

“শ্রাবণ, তুই চাইলে এক সপ্তাহে তোর ভিসা হয়ে যাবে ইটালির। তুই তো চেয়েছিলি। তারপর হঠাৎই মন বদলে ফেললি।”

শ্রাবণ কৃতিম হেসে বলে,
“না থাক। কানাডার ফ্লাইটের টিকেট কে*টে ফেলেছি। এই এক-দেড় সপ্তাহ পর চলে যাব।”

ইরফান অবাক হয়ে শুধায়,
“কী বলছো? স্নিগ্ধা তো বলল তুমি মাসখানেক থাকবে।”

শ্রাবণ ইতস্তত ভাবে বলল,
“আসলে ভাইয়া, পরবর্তীতে আবার যখন আসব, তখন এই ছুটিটা নিয়ে নেব। এজন্য ছুটিটা আর নষ্ট করছি না।”

ইরাদ বলে,
“ভাইয়া-ভাবি তো পরশু খুলনা যাবে। আমিও যাব। আমাদের সাথে তবে চল। একটু ঘোরাও হবে।”

“এখন আবার খুলনা যাব? দরকার নেই। বাসায় রেস্ট করি।”

মাঝ থেকে স্নিগ্ধা এসে বলে,
“চলো ভাইয়া। ভালো লাগবে। মা-বাবাও যাবে।”

“তোরা যা। আমরা গেলে এখনি কেমন দেখায়। তোরা কতো বছর পর এসেছিস।”

শ্রাবণের বাবা শফিক সাহেব এসে বলেন,
“আমিও তাই বলি। আচ্ছা ইশরাক নানুভাই কই?”

“ও আমার রুমে, বাবা। ফোনে গেমস খেলছে।”

শ্রাবণের জবাব শুনে স্নিগ্ধা বলে,
“ওর হাতে ফোন দিয়েছ! ও গেমস খেলতে বসলে কল আসলেও কেটে দেয়। আর রাতের সাড়ে এগারোটার বেশি বাজে, এখনও নাকি গেম খেলছে! দাঁড়াও, দেখছি ও-কে।”

বলেই স্নিগ্ধা শ্রাবণের রুমের দিকে যাচ্ছে। শ্রাবণের তখন মনে হলো, আর্শি তাকে কল করেছে কী-না? তাই সেও নিজের রুমের দিকে হাঁটা ধরলো।
স্নিগ্ধা গিয়ে ইশরাকের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে শক্ত কণ্ঠে বললো,

“তুমি আজকে সারাদিন গেম খেলেছো। আর কতো গেমস খেলবে? জার্নি করে এসেছ, একটু ঘুমিয়েছ?”

ইশরাক কাকুতি-মিনতি করে বলল,
“আরেকটু, আম্মু। আরেকটু। আমি এই লেভেলটা এখনই আপ করে ফেলব।”

“নো। এখনি ঘুমাতে যাবে। সারাক্ষণ খালি গেমস আর গেমস! চলো!”

“প্লিজ, আম্মু!”

“নো! চলো।”

স্নিগ্ধা ইশরাককে টেনে নিয়ে যাচ্ছে। রুম থেকে বেরোনোর আগে শ্রাবণের ফোনটা শ্রাবণের হাতে ধরিয়ে দিয়ে যায়। শ্রাবণ জলদি করে মেসেঞ্জার চেক করে দেখে আর্শি দুইবার কল করেছিল। একবার রিসিভ হয়েছে, আরেকবার কে*টে দেওয়া হয়েছে। শ্রাবণ জলদি কলব্যাক করে।
আর্শি কফির মগ পাশে রেখে পড়তে বসেছে। আর একটু একটু কফি করে খাচ্ছে। রাতের খাবারের জন্য সবজি কেটে রেখে এসেছে। তখনি ফোন বেজে উঠলে ফোন উঠিয়ে দেখে শ্রাবণ কল করেছে। আর্শি রিসিভ করে সালাম দেয়। শ্রাবণও জ

  • বাব দিয়ে বলে,

    “সরি। ফোনটা ইশরাকের কাছে ছিল। ও গেম খেলার সময় কেউ কল করলে কল কেটে দেয়।”

    “হুম। ও বলল, তুমি এখন কল রাখো। আমি ক্যান্ডিক্রেশ খেলছি।”
    বলেই হাসলো আর্শি। শ্রাবণও মৃদু হেসে বলল,
    “মাত্রই স্নিগ্ধায় এসে ওকে নিয়ে গেল। ও-কে তো ওখানে খুব লিমিটের মধ্যে একটা সময়ে ফোন দেওয়া হয় গেমস খেলতে। তার জন্য এখানে আমার ফোন পেয়ে নিজের পছন্দ মতো তিন-চারটা গেমস নামিয়ে বসেছে।”

    “ওহ আচ্ছা। খেয়েছেন? আপনাদের তো ওখানে এখন ঘড়িতে বারোটার ঘর ছুঁই ছুঁই।”

    “হ্যাঁ। তুমি খেয়েছো?”

    “কফি খাচ্ছি। ভেজিটেবল কে*টে রেখে এসেছি। লিসাও দেখলাম পাউরুটি বানাতে ইস্ট এক্টিভ করতে দিয়েছে।”

    “ওহ আচ্ছা। এখন কী করছো?”

    “পড়ছি একটু।”

    “তাহলে পড়ো। রাখছি!”

    আর্শি দ্রুত বলে ওঠে,
    “এই এই রাখবেন না। আপনার কী হয়েছে? আগে সেটা বলেন। বিয়ের আগের শ্রাবণের সাথে এখনকার শ্রাবণের আমি মিল পাচ্ছি না। আপনি সত্যি করে বলুন তো, আপনি আমার কোন কথায়, কাজে হার্ট হয়েছেন? দেখুন, যদি হার্ট হয়ে থাকেন সেটা বলে দিন। কারণ আমি এতো দূর থেকে আপনার মন পড়তে পারব না। লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপে আন্ডারস্ট্যান্ডিং ভালো থাকতে হয়। কিন্তু আমাদের দুজনের মধ্যে আমি কোনো আন্ডারস্ট্যান্ডিং দেখছি না। আপনার প্রিভিয়াস বিহেভিয়ারের সাথে প্রেসেন্ট বিহেভিয়ারে আমি মিল পাচ্ছি না। আপনি বিয়ের আগে থেকো আমাকে ভালোবাসেন। কিন্তু আমার ক্ষেত্রে তেমনটা না। এখন আপনি যদি হুট করে এভাবে বদলে যান তাহলে আমার জন্য বিষয়টা আরও টাফ হয়ে যাবে। আমি প্রথমেই লং ডিস্টেন্স রিলেশনশিপ মেন্টেন করতে পারবো না বলে মনে হওয়াতে বিয়েটা এখনি করতে চাইছিলাম না। আপনি বুঝতে পারছেন?”

    শ্রাবণ খুব মনোযোগ দিয়ে আর্শির কথাগুলো শুনলো। অতঃপর ভাবতে লাগলো।

    চলবে ইন শা আল্লাহ,

    ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

  • একটি উত্তর ত্যাগ

    আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
    এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে