শ্রাবণ রাতের বৃষ্টিতে পর্ব-১৫+১৬

0
519

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৫
আর্শি বিয়েতে রাজি হয়েছে এই খবরটা শ্রাবণদের বাড়িতে অতিসত্বর পৌঁছে দেওয়া হয়েছে। শ্রাবণের বাবা-মা জানিয়ে দিয়েছে উনারা আগামীকাল এসেই আকদ করাবে। কারণ পরশুদিন আরিয়া চলে যাবে। তারপর দিন আর্শির ফ্লাইট। শ্রাবণের মা শ্রাবণকে কথাটা বলে যাওয়ার পর থেকে শ্রাবণ শ*কড হয়ে কিছুক্ষণ বসে থেকে ফোন হাতে নেয় আর্শিকে কল করবে বলে। অতঃপর ব্যালকনির দরজা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে সিদ্ধান্ত বদল করে। এখন ফোন করবে না। ফোন রেখে ব্যালকনিতে গিয়ে বসে সে।

এদিকে আর্শি, আরিয়া, আশিক ও আদিব মিলে লুডো খেলছে। একেকজনের গুটি কে*টে দিতে দিতে কেউই সামনে এগুতো পারছে না। মিসেস আশালতা এদের জন্য চা বানিয়ে নিয়ে এসেছেন। চা এনে বলেন,

“রাতের দশটা বাজে! আর এদের এখন চা খাওয়ার জোর উঠেছে! নে ধর।”

চারজনেই দাঁত বের করে হেসে একত্রে বলে,
“থ্যাংকিউ সো মাচ!”

“না ঘুমিয়ে চা-ই খা। তারপর রাতভর পেঁ*চার মতো চেয়ে থাকিস।”

ওরা চারজন হেসেই উড়িয়ে দিলো। মিসেস আশালতা বিড়বিড় করতে করতে চলে গেলেন। এদের এই খেলা চলল রাত ১১টা পর্যন্ত। অতঃপর যে যার রুমে চলে গেলো। আর্শিও নামাজ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লো।

রাত আড়াইটা, ফোনের রিংটোনে ঘুমে হালকা হয়ে যায় আর্শির। আধখোলা চোখে একটু তাকিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরে আবার ঘুমানোর প্রয়াস করতেই অপরপাশ থেকে গিটারের শব্দ। আর্শি ঘুম ঘুম কণ্ঠে বলে,

“আপনার কি রাতে ঘুম আসে না?”

শ্রাবণ নিরবে হেসে শুধায়,
“কেন?”

“কেন আবার কী? ঘুম আসলে বুঝি এই রাতের বেলা আপনি গিটার বাজাতেন? আবার সেই গিটার শোনানোর জন্য আমার ঘুম ভাঙাতেন?”

শ্রাবণ ফের হাসে। তারপর অবাক হওয়ার ভান করে বলে,
“তুমি ঘুমাচ্ছিলে বুঝি?”

কথাটা শুনে আর্শি ফট করে চোখ মেলে তাকায়। এতোক্ষণ চোখ বন্ধ করেই শুনছিল ও কথা বলছিল। কিন্তু শ্রাবণের কাছ থেকে এমন অদ্ভুত একটা প্রশ্ন শুনে তার ঘুম যেন উড়েই গেছে। আ*গুনঝড়া স্বরে বলে,

“এই আপনার কী মনে হয়? এই রাত-বিরেতে আমি পেঁ*চার মতো জেগে আছি? এমন অদ্ভুত মার্কা কথা আপনি কোত্থেকে পান? বলেন তো? নিজে তো ঘুমান না আমার ঘুমটাও নষ্ট করেন। বিয়ের পরও কি এরকম করবেন নাকি?আগে আগে বলে দেন। আমি আব্বু-আম্মুকে বলে বিয়ে ক্যানসেল করে দিচ্ছি।”

শেষোক্ত কথাটা শ্রাবণের মনে লাগে। সে কোনো প্রত্যুত্তর না করে ফোন কে*টে দেয়। আর্শি অপেক্ষা করছিল জবাবের। কিন্তু অপরপাশ থেকে ফোন কে*টে দিতেই সে কিছুটা অবাক হয়। আবার কিছুটা খারাপও লাগে তার। নিজে নিজেই বলে,

“এই লোক রাগ করলো নাকি? আমি এমন কী বললাম যে রাগ করলো? তার তো বোঝা উচিত, এই রাত-বিরাতে কাউকে ফোন করে গিটার শোনানোর কোনো মানে হয়? আমরা তো আর প্রেম করছি না। ধ্যাত! ভাল্লাগে না। কালকে দেখা যাবে কী হয়? এখন পর্যন্ত সে আমার হাজবেন্ড হয়নি। আর না আমার বয়ফ্রেন্ড! সো রাগ করলে করুক! আই ডোন্ট কেয়ার। হাজবেন্ড হলে তারপর ভেবে দেখব।”

অতঃপর সে ঘুমিয়ে পড়ে। এদিকে শ্রাবণ নিস্তব্ধতার মাঝে বসে আছে। এক দৃষ্টিকে অন্ধকার অম্বরপানে চেয়ে আছে। আকাশে থেকে থেকে বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে হয়তো বা শেষ রাতের দিকেই বৃষ্টি নামবে। ভেবেছিল বিয়ের আগের দিন রাত হিসাবে আর্শি হয়তো এক্সাইটমেন্টে ঘুমাতে পারবে না। তাই রাতভর ফোনের দুইপাশে দুজনে জেগে থাকবে। তারপর আর্শির কণ্ঠস্বর শুনে মনে হয়েছিল যে ঘুমাচ্ছিলই। দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে শ্রাবণ নিরব বসে রয়।

________

সকালে ঘুম থেকে উঠে আর্শিকে মেহেদী পড়াতে বারান্দায় মাদুড় পেতে বসেছে আরিয়া। শেষ রাতের দিকে বৃষ্টি হয়েছিল বিধায় পরিবেশ এখন ঠাণ্ডা। রোদও ঠিক ভাবে উঠেনি। বারান্দার টবে কামিনী ফুলের গাছটাতে বিন্দু বিন্দু জল জমে আছে। গাছের নিচে তিন চারটা ফুলও পড়ে আছে। সুঘ্রাণও আসছে কিছুটা। আরিয়া খোশ মেজাজে মেহেদী পড়াচ্ছে। এদিকে আর্শি অনবরত কথা বলেই চলেছে! গতকাল রাতে কী হয়েছে, শ্রাবণ কী ভাবতে পারে, এসবই বলছে। আরিয়া বারবার তাতে মনোযোগ হারাচ্ছে। সে কপাল কুঁচকে মৃদু ধ*মকে উঠে বলে,
“থামো না, আপু! এতই যখন চিন্তা হচ্ছে, তাহলে যখন কলটা কে*টে দিয়েছিল তখন কেন কল ব্যাক করোনি? এখন এসব বলে কী হবে? শ্রাবণ ভাইয়া যখন আসবে তখন সরি-টরি বলে দিও। এখন আমার মনোযোগ নষ্ট করবা না। এখন যদি হাতের মেহেদি খারাপ হয়, পরে নিজেই ঘ্যানঘ্যান করবা।”

“তোর মেহেদী দেওয়ার কাজ দে। আমি কি তোকে বলেছিলাম, আমার হাতে মেহেদী দিয়ে দে? তুই তো নিজেই দিতে এসেছিস।”

“চুপ করে থাকো তো। নাস্তা না খেয়ে তোমাকে মেহেদী দিতে বসেছি। রাতেই দিয়ে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার….”

আরিয়াকে কথার মাঝে থামিয়ে আর্শি বলে,
“এখন তোর মনোযোগ নষ্ট হচ্ছে না? চুপচাপ কাজ কর। আমিও কথা বলব না। তুইও কথা বলবি না।”

আরিয়া মুখ ভে*ঙচি দিয়ে মেহেদী পড়াতে থাকে।

_________

দুপুর একটার দিকে শ্রাবণ ও শ্রাবণের পরিবার এসেছে। সাথে শ্রাবণের মামা-চাচাও এসেছেন। আর্শিকে আরিয়া তৈরি করে ফেলেছে। শ্রাবণের পছন্দ করা শাড়িটাতে আর্শিকে দারুণ লাগছে। হালকা মেকআপ তবে ডার্ক আইশেডো ও ডার্ক মেরুন লিপস্টিকে হালকা সাজকেও গর্জিয়াস করে দিয়েছে। আর্শি নিজেকে ভালো করে আয়নায় দেখে নিয়ে আরিয়াকে শুধায়,

“সব ঠিক আছে না? আমার না ভয় করছে!”

আরিয়া তার বোনের কাঁধে থুতনি ঠেকিয়ে মুচকি হেসে বলে,
“তোমাকে হুরপরি লাগছে, আপু। আর ভয় পাচ্ছো কেন? রিল্যাক্স। ওখানে গিয়ে তোমাকে কিছু করতে হবে না। কাজী সাহেব যখন তোমাকে কবুল বলতে বলবে তখন এক নিঃশ্বাসে তিনবার কবুল বলে দিবে। তারপর ঝামেলা শেষ। সো ইজি।”

আর্শি আয়নাতে আরিয়ার উদ্দেশ্যে বিরক্তির দৃষ্টি নিক্ষেপ করে। আরিয়া তাতে দাঁত বের করে হেসে তাড়া দিয়ে বলে,
“চলো চলো। আম্মু একটু আগে বলে গেছে, তোমাকে নিয়ে আসতে। এখন আরশিতে এই আর্শিকে(আর্শির থুতনিতে হাত দিয়ে) দেখে আর মন খারাপ করো না। এই আরশি রূপকথার মায়া আরশি না যে তোমার প্রশ্নের জবাব দিবে। একটু হাসো। স্মাইল প্লিজ?”

আর্শি হাসলে আরিয়াকে তাকে নিয়ে বসার ঘরের দিকে যায়।

________
নাম-ঠিকানা বলে কাজি সাহেব আর্শিকে কবুল বলতে বলে। আর্শি মাথা নিচু করে তিন বার লম্বাশ্বাস নেয়। এটুকু সময়েই শ্রাবণ অস্থির হয়ে গেছে। অতঃপর যখন আর্শির কন্ঠস্বরে ‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল’ শব্দ দুটো শুনে তখন যেন তার হৃৎপিণ্ডটা নিজের স্বাভাবিক গতির থেকে রিদম বাড়িয়ে দিয়েছে। আদিব শ্রাবণের পাশে দাঁড়িয়ে। সে শ্রাবণের ঘাড়ে হাত রাখে। শ্রাবণও ঘাড় ঘুরিয়ে আদিবের দিকে তাকালে আদিব ও-কে ইশারায় শান্ত হতে বলে।
পরপর তিনবার কবুল বলে আর্শি চোখ বন্ধ করে ফেলে। এবার শ্রাবণের পালা। কাজি সাহেব শ্রাবণকে কবুল বলতে বললে শ্রাবণও নিরব! আদিব পাশ থেকে আলতো ধা*ক্কা দিলে শ্রাবণ দ্রুত তিনবার ‘আলহামদুলিল্লাহ কবুল’ বলে দেয়। আরিয়া ও আশিক আর্শির পাশে দাঁড়ানো। ওরা দুজন মুখ টিপে হাসছে। অতঃপর উপস্থিত সকলে দোয়া করে। মিস্টার রিয়াজউদ্দীন আরিয়াকে মিষ্টি আনতে বলেন।

মিষ্টি মুখ শেষে এবার খাওয়া-দাওয়ার পালা। আর্শিকে আরিয়া রুমে রেখে এসে শ্রাবণের কাছে গিয়ে বলে,

“ভাইয়া, আপু আপনাকে ডাকছে।”

আশিক পাশ থেকে বোকার প্রশ্ন করে বসে,
“কখন ডাকলো? আমি তো দরজার কাছেই ছিলাম।”

আরিয়া আশিকের দিকে চেয়ে একটা রাগী লুক দেয়। অতঃপর দাঁতে দাঁত পিষে বলে,
“আমার কানে কানে বলেছে। সেটা তুমি কীভাবে শুনবে? শোনার কথা কি তোমার?”

আশিক ভ্যাবলাকান্তের মতো হেসে মাথা নাড়ায়। শ্রাবণ আশিকের কাঁধে দুইবার আলতো চা*পড়ে দিয়ে আর্শির রুমের দিকে যায়। শ্রাবণ যেতেই আরিয়া আশিককে টেনে নিজের রুমে নিয়ে যায়। তারপর দরজা লাগিয়ে কণ্ঠস্বর নিচু করে শা*সানোর সুরে বলে,

“এই! তুমি ব*ল*দের মতো কথা বলো কেন? তোমাকে সকালে বলছিলাম না, যে আপুর সাথে রাতে ভাইয়ার কিছুটা মনমালিন্য হইছে। আমার আপু তো জীবনেও নিজ থেকে কথা শুরু করবে না। তাই আমি একটু হেল্প করছিলাম। সেখানে তুমি….!”

“সরি। আমি বুঝিনি। তুমি তো আমাকে সামান্য হিনটস দিলে পারতে। তাহলে আমি চুপ করে থাকতাম।”

“হয়েছে। বাদ দাও। ওদের ঝামেলা মিটে যাক। কারণ পরশুদিন আপু চলে যাবে। লং ডিস্টেন্স। সামান্য মনমালিন্য মিটে যাওয়াই ভালো।”

আশিক হ্যাঁ বোধক মাথা নাড়ায়।

_______

শ্রাবণ আর্শির রুমে গিয়ে নক করে। আর্শি দরজার দিকে চেয়ে শ্রাবণকে দেখে বলে,
“আসুন।”

শ্রাবণ রুমের ভেতরে যায়। শ্রাবণ চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে। আর্শি ফের তাকিয়ে শ্রাবণকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বলে,
“বসুন!”

শ্রাবণ ধন্যবাদ জানিয়ে বসে। এরপর আবার নিরবতা! আর্শিও কিছুক্ষণ মাথা নিচু করেই ছিল। কিন্তু এই নিরবতা তাকে আরও অস্বস্তিকর পরিবেশে ফেলছে বিধায় নিজেই নিরবতা ভাঙে। বলে,
“কালকে রাতের ঘটনার জন্য, সরি! আমি আসলে ওভাবে বলতে চাইনি। আপনি কিছু মনে করবেন না। আসলে এতো রাতের বেলা ঘুম ভেঙে গেলে মেজাজ তো সামান্য খিট*খি*টে হবেই। তাই না?”

শ্রাবণও এবার মুখ খুলে। হালকা হেসে বলে,
“ইটস ওকে। আমারও বোঝা উচিত ছিল। আসলে আমি ভেবেছিলাম, আমি যেহেতু ঘুমাতে পারছি না। তুমিও হয়তো…! যাকগে সেসব বাদ দাও। আমি কিছু মনে করিনি। তুমিও মন খারাপ করে বসে থেকো না।”

অতঃপর দুজনে দুজনের দিকে চেয়ে হাসি বিনিময় করে।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

#copyrightalert❌🚫
#শ্রাবণ_রাতের_বৃষ্টিতে
#নুরুন্নাহার_তিথী
#পর্ব_১৬
সেদিনের মতো শ্রাবণ ও শ্রাবণের পরিবার চলে যায়। শ্রাবণকে থাকতে বলা হয়েছিল কিন্তু আর্শির দিক থেকে কোনো পজেটিভ সাইন না পেয়ে শ্রাবণ নিজেই থাকতে চায়নি। এদিকে আর্শি সন্ধ্যা থেকে ঘুমিয়ে এখন রাত এগারোটা বাজে ঘুম থেকে উঠে অলস বসে আছে। মিসেস আশালতা খাবার খাইয়ে দিয়ে যান। এখন নামাজ পড়ে এসে ফোন নিয়ে বসেছে। কিছুক্ষণ গেমস খেলে, মিমস দেখে এখন তার বিরক্ত লাগা শুরু হয়েছে। ভাবলো শ্রাবণকে ফোন করবে কী-না! যদি কিছু ভেবে বসে? দোটানায় ভুগছে খুব।
“আমাকে যখন রাত দুইটা-তিনটায় কল করে, তখন সে তো ভাবে না। তো এখন মাত্র বারোটা বাজে। আমি কেন এতো ভাবছি?”

এসব ভেবেই সে শ্রাবণের নাম্বার ডায়াল করে। দুইবার রিং হওয়ার পর শ্রাবণ রিসিভ করে। আর্শি প্রথমে সুন্দর করে সালাম দেয়। শ্রাবণও সালামের জবাব দেয়। আর্শি শুধায়,

“বিজি আপনি?”

“না। এমনি ল্যাপটপ নিয়ে বসে ছিলাম।”

“ওহ। ঘুমাবেন কখন?”

“ঘুমাব। তুমি এই সময়ে না ঘুমিয়ে ফোন করলে যে?”

“আমি সন্ধ্যা থেকে ঘুমিয়ে উঠেছি। একটু পর আবার ঘুমাব।”

“তাহলে ঘুমিয়ে পড়ো।”

আর্শি কিছুক্ষণ নিরব থাকে। শ্রাবণের কথাতে আগের মতো ভাইব পাচ্ছে না সে। কেমন যেন বিষণ্ণ কণ্ঠস্বর। আর্শি সন্দিহান স্বরে প্রশ্ন করে,

“আপনার মন খারাপ?”

শ্রাবণ খানিক নড়ে বসে বিপরীতে নিজেও শুধায়,
“মন খারাপ হবে কেন?”

“সে তো আপনি জানেন। আমি কীভাবে বলব? আমি তো জাস্ট এটা ওটা সন্দেহই করতে পারি। সঠিক জবাব তো আপনি জানেন।”

শ্রাবণ নিঃশব্দে ঘন নিঃশ্বাস ছেড়ে বলে,
“কিছুই হয়নি। ঘুমিয়ে পড়ো।”

আর্শি বলে,
“আপনি এখনো গতকাল রাতের কথা ধরে বসে আছেন? সরি তো বললাম।”

শ্রাবণ চোখ বুজে বিছানার হেডবোর্ডে মাথা এলিয়ে বলে,
“তুমি অযথা ভাবছো। আমি ওই কারণে কিছু মনে করে নেই।”

“তাহলে?”

“আসলে আমি পরশুদিন তোমার সাথে ইটালি যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু…”

শ্রাবণকে কথা শেষ করতে না দিয়ে আর্শি প্রশ্ন করে বসে,
“কেন? আপনি ইটালিতে জব নিচ্ছেন?”

“আরে না। এমনিতেই তোমার সাথে যেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু ভিসা এতো জলদি হচ্ছে না। আমার ফ্রেন্ডের ফ্রেন্ড জানালো কম করে দুই সপ্তাহ লাগবে। আরও বেশিও লাগতে পারে। বলা যায় না।”

“ওহ। সমস্যা নেই। আপনি আমাকে নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমার ওখানে কোন অসুবিধা হবে না। এক বছর তো ছিলাম। কোনো অসুবিধা হয়নি। তাছাড়া আমি তো একা থাকি না। আমার সাথে আরো পাঁচ-ছয় জন মেয়ে থাকে। এখন আপনি গেলে আমার রুমমেটকে অন্য রুমে শিফট করতে হবে। অথবা আমাকেই আপনাকে নিয়ে কিছুদিনের জন্য অন্য কোথাও থাকতে হবে।”

শ্রাবণ ছোটো করে বলল,
“হুম। ঘুমাও। পড়ে কথা হবে।”

এই বলে শ্রাবণই কল কে*টে দেয়। আর্শি হতাশ নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজে নিজেই বলে,
“আমি কিছু বললেই দেখি ওনার খারাপ লেগে যায়। এখন আবার কী এমন বললাম যে ফোন কে*টে দিলো?”

কিছুক্ষণ আকাশ-পাতাল চিন্তা করে আবারও নিজে নিজেই বলতে থাকে,
“উনি কি ভাবছেন আমি উনাকে যেতে মানা করছি? কিন্তু আমি তো উনাকে মানা করিনি। আমি তো উনার চিন্তা কমানোর জন্য বললাম। তাছাড়া সত্যিই তো বলেছি! উনি সেখানে গেলে তো আমার ফ্রেন্ডকে বা আমাকেই উনাকে নিয়ে শিফট হতে হবে। সত্য কথা বললেও মানুষ মাইন্ড করে বসে! ধ্যাত! ভাল্লাগে না।”

এই বলে আর্শি ফোন হাত থেকে রেখে কাঁথা টেনে চোখ খিঁচে ঘুমানোর চেষ্টা করছে।

ওইদিকে শ্রাবণ ভাবছে,
“আর্শি চাচ্ছে না, আমি ওর সাথে যাই। ওতো সময় চেয়েছিল। ওর ইচ্ছের বিরুদ্ধে প্রেশারাইজড করে আকদের জন্য রাজি করিয়েছে সবাই। আমি তবে ইটালি যাওয়ার প্ল্যান ক্যান্সেল করে দিব?”

নিজের ভাবনা-চিন্তার উপর শ্রাবণ লাগাম টানতে পারছে না। যতোই মনোযোগ হটানোর চেষ্টা করে, ততোই এই চিন্তা তাকে ঝেঁকে ধরছে। অতঃপর মস্তিষ্ককে রেস্ট দিতে লো ডো*জের স্লি*পিং পি*ল খেয়ে নেয়।

________

আজ আর্শির ফ্লাইট। ঢাকা আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে প্রথমে কাতার। তারপর ইটালির ফ্লাইট। সকাল ১০টার ফ্লাইটে ঢাকা থেকে কাতার যাবে আর্শি। খুব সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পরে আর্শি ও তার মা-বাবা, ভাই। আরিয়া ও আশিক ওদের বাড়ি থেকে আসবে। শ্রাবণ ও শ্রাবণের পরিবারও আসবে। মিসেস আশালতা আড়ালে কাঁদছেন। আর্শি গাড়িতে মায়ের পাশেই বসে মায়ের কাঁধে মাথা ঠেকিয়ে রেখেছেন। আদিব ড্রাইভারের সাথে বসা। নয়টার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছে যাবে ওরা।

এয়ারপোর্টে পৌঁছে ফ্লাইটের সময়ের অপেক্ষা করছে। ইতোমধ্যে আরিয়া ও আশিক এসে পৌঁছেছে। মিসেস আশালতাকে মাঝে রেখে দুই মেয়ে দুই পাশে বসা। মিসেস আশালতা নিজের আবেগ সামলাতে পারছেন না। এখন তার কাছে দুই মেয়ের একজনও থাকবে না। ছেলেও সারাদিন অফিসে থাকবে। উনার মনের অবস্থা খুবই নাজুক।

সাড়ে নয়টার দিকে শ্রাবণরাও এসে পৌঁছেছে। মিসেস সন্ধ্যা, মিসেস আশালতার পাশে বসে স্বান্ত্বনা দিচ্ছেন। আর্শি ও শ্রাবণ একটু দূরে গিয়ে বসেছে। দুজনেই চুপ। নিরবতা ভেঙে শ্রাবণ বলে,
“তুমি সাবধানে থেকো। আমি জানি এক বছর তুমি সেখানে একাই ছিলে। কিন্তু এজ অ্যা হাজবেন্ড আমারও চিন্তা হয়।”

আর্শি প্রত্যুত্তরে বলে,
“আপনি কি আবার আমার কথায় রাগ করেছেন? দেখুন, আমি আপনাকে যেতে মানা করিনি। আপনাকে জাস্ট টেনশন করতে নিষেধ করেছি। প্লিজ আমার কথাকে অন্যভাবে নিবেন না।”

“অন্যভাবে নেইনি। আমি বুঝতে পারছি। আমাকেও কানাডা ফিরতে হবে। দুই মাসের ছুটিতে এসেছি।”

“কবে ফিরছেন?”

“ভাবছি। জলদি ফিরে যাব। যাতে পরবর্তীতে বেশি ছুটি পাই। এখন যেহেতু ইটালির ভিসা পেতে টাইম লাগবে।”

“ওহ আচ্ছা। আপনিও নিজের খেয়াল রাখবেন। আপনি কানাডাতে আমি ইতালিতে। ছয় ঘণ্টার ডিফরেন্স। তাই কমিউনিকেশনে কিছুটা ঝামেলা হবে। একটা কমন টাইম বের করতে হবে দুজনের।”

“হুম। বের করে নিবো।”

দুজনে আবারও নিরবতার আশ্রয় নিলো। শ্রাবষ কফি আনার বাহানায় উঠে যায়। এই সুযোগে আরিয়া ও আশিক এসে আর্শির পাশে বসে। আশিক প্রথমে শুধায়,
“আপু, শ্রাবণ ভাইয়ের সাথে তোমার আর কোনো প্রবলেম নেই তো? দেখো, দুজনের মধ্যে লং ডিসটেন্স শুরু হবে। তাই কোনো প্রবলেম থাকলো শর্টআউট করে নাও।”

আরিয়াও একই সুর বলে। আর্শি হতাশ হয়ে বলে,
“আই নো, লং ডিস্টেন্স মেন্টেন করা অনেক টাফ। এজন্যই আমি বলেছিলাম এক বছর পর আকদ, বিয়ে হোক। কিন্তু কেউ শুনলোই না! তাছাড়া আমি যাই বলি, তাতেই এখন উনার খারাপ লেগে যায়। দুইদিনেই উনার মধ্যে হিউজ চেঞ্জ। ডোন্ট নো, হোয়াট উইল হ্যাপেন!”

আরিয়া ও আশিক একে অপরের দিকে অসহায় দৃষ্টি বিনিময় করে। কিছুক্ষণ পর আর্শিকে যেতে হবে। মিসেস আশালতা তখন বড়ো মেয়েকে জড়িয়ে কাঁদছেন। পাশ থেকে আরিয়া ও মিসেস সন্ধ্যা উনাকে আগলে রেখেছেন। আর্শিও ইমোশোনাল হয়ে পড়েছে। তাও জোড় করে মাকে ছাড়িয়ে লাগেজ নিয়ে ইমিগ্রেশন পার করে চলে যায়।

চলবে ইন শা আল্লাহ,

ভুল ত্রুটি ক্ষমা করবেন। কপি নিষিদ্ধ। রিচেক করা হয়নি।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে