#শূণ্যতায় পূর্ণতা
#নুরুন্নাহার তিথি
#পর্ব-৮(ধা’মাকা)
ইভান, ইভানের বোন ও বোন জামাই সব মিটমাট করে বিয়ে পড়ানোর ওখানে গিয়ে দেখে, ছেলের কবুল বলার পালা শেষে এখন কাজী মেয়েকে কবুল বলতে বলছে। নিহা একটু সময় নিচ্ছে। ইভানরা অদ্রির মুখের দিকে তাকিয়ে আছে বিধায় অদ্রিকে এখন স্যাড স্যাড ভাইভ দিতে হচ্ছে সবার উদ্দেশ্যে! মলিন চোখে তাকানো লাগছে। মুখে নিকাব দেওয়াতে মুখ তো দেখা যাচ্ছে না কিন্তু চোখে বারবার টিস্যু দিয়ে পরিষ্কার করছে। অদ্রি এখন নিজের উপরই বিরক্ত কেনো গ্লিসারিন দিলো না? গ্লিসারিন দিলে এতোক্ষনে চোখ টকটকে লাল হয়ে যেতো আর চোখের পানির তো কথায় নাই! অদ্রি কোনোভাবেই চায় না কেউ তার ভাবলেশহীনতাকে সন্দেহ করুক। অদ্রি খেয়াল করে তার ভাসুর, ননাশের ও ননাশ জামাইয়ের দৃষ্টি তার দিকে। অদ্রি চোখের ভিতর ইচ্ছে করে টিস্যু কোনা করে আড়ালে ঢোকায় যার ফলে চোখ লাল হতে শুরু করে আর পানি পরতে শুরু করে।
নিহা কবুল বলার পর অদ্রি ইচ্ছে করে সেখান থেকে দৌড়ে চলে যায়। যাওয়ার আগে রিহাকে চি”ম”টি দিয়ে যায়। অদ্রিকে চলে যেতে দেখে বিভানের বোন ইরা অদ্রির পেছোনে যেতে নিলে রিহা জাবিরকে ইশারাতে জাবিরকে বলে যেনো রিয়ানকে পাঠায়।
রিয়ান তখন খুশিতে উৎফুল্ল প্রায়। সেহরা বাঁধা থাকাতে কেউ দেখতে পারছে না। আচমকা জাবিরের চি”ম”টিতে রিয়ান বাস্তবে ফিরে তারপর জাবিরের ইশারা দেখে সে ইরার আগে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যায়।
_________
–উফ! এখন একটু শান্তি লাগতেছে। কখন থেকে চোখ শুধু শুধু মুচছিলাম। এখন চোখ জ্বালা করছে।
রিয়ান দরজা টোকা দেয়। অদ্রি কিছু না বলে দরজা খুলে। রিয়ান অদ্রির সামনে বসে বলে,
–দোস্ত। আমাকে কি সত্যি আজ এখান থেকে চলে যেতে হবে? না মানে! আমার বাসর?
অদ্রি বাঁকা চোখে তাকায়। রিয়ান তা দেখে মেকি হেসে বলে,
–হে হে! না মানে আজ বিয়ে হলো তো বাসরটা হলে ভালো হতো না? কতো ইম্পরট্যান্ট একটা দিন বল?
অদ্রি এবার বসা থেকে উঠে রিয়ানের কা’ন টেনে ধরে বলে,
–এতোক্ষন তো ভয়ে শেষ হচ্ছিলি। এখন বীরপুরুষ হলি কিভাবে? তোর ধারনা আছে একটু পর কি হতে চলেছে? তোকে এর আগেই বিভান বেশে এখান থেকে বিদায় নিতে হবে। কয়েকমিনিটের মধ্যেই নিউজ ব্লা*স্ট হতে চলেছে। হেডলাইন! ” ২৩ বছর বয়সি সুন্দরী শিমুর জন্য শত ছেলে পা”গল সেখানে শিমু স্বেচ্ছায় বিয়ে করলো পঞ্চাশোর্ধ বিপত্নীক মিস্টার রুহুল আমিনকে!”
রিয়ান হুট করে হাসতে হাসতে বসে ফ্লোরে বসে পরে। অদ্রি বোকার মতো তাকিয়ে আছে। অদ্রি রিয়ানের পিঠে একটা ঘু’সি মেরে বলে,
–তুই কি কোনো সময় আমার কথা সিরিয়াসলি নিবি না? আমার সিরিয়াস কথার মাঝে তোকে কেন হাসতে হবে!
রিয়ান হাসতে হাসতে বলে,
–তোর হেডলাইনটা একটু চেঞ্জ করলে জোস হবে দোস্ত। এরকম ভাবে, “নিজের থেকে দ্বিগুন বয়সি বিপত্নীক পুরুষকে স্বেচ্ছায় বিয়ে করলো ২৩ বছরের যু’বতী শিমু!” এটা জোস। তবে ওদের বয়সের গ্যাপ হয়তো ২০ বছর। তাইনা?
অদ্রি জবাব না দিয়ে রুহুল আমিনকে মেসেজ করে। কিছুক্ষন পর রুহুল আমিন রেজেস্ট্রি পেপার ও সেইদিনের ক্যাফেতে সাইন করা এগ্রিমেন্ট পেপারের ছবি অদ্রিকে দেয়। অদ্রি রিয়ানকে জলদি করে কালো লং কোর্ট ও কালো টুপি দেয় পড়ে নিতে। সিঁড়ির কাছাকাছি এসে অদ্রি ও রিয়ান অপেক্ষা করছে রিমুর রিয়াকশনের।
-_-_-_-_-_-
রিমু মনমরা হয়ে চিন্তিত হয়ে বসে আছে। এবারো পারলো না তার বোনকে বিভানের বউ বানাতে। আর অদ্রিও কিভাবে যেনো তাদের পাতা ফাঁদ থেকে বেরিয়ে গেলো। কিন্তু এখন সবচেয়ে চিন্তার বিষয়, শিমু কই? শিমু হুট করে কই গায়েব হয়ে গেলো?
রিমু চিন্তিত হয়ে বসে আছে তখন রিমুর ছেলে এসে বলে,
–আম্মু নতুন আন্টির নাকি খারাপ লাগছে। একটা রুম ঠিক করে দেও।
রিমু ছেলেকে ধ”মকে বলে,
–তোর চাচিকে বল তার স”তীনের সেবা করতে। আমাকে বলবি না।
ইভান রিমুর কথা শুনে বিরক্ত হয়ে বলে,
–রিমু এবার তো থামো। মেয়েটাকে আর কতো কষ্ট দিবে? এমনিতে তার কেমন লাগছে তা ভাবতেও পারছিনা আর তুমি এসব নিয়ে বসে আছো। আমার মনে হয় কি জানো, তোমাকেও সেম পরিস্থিতির স্বিকার করিয়ে বুঝিয়ে দিতে কেমন লাগে।
রিমু দাঁত কটমট করতে করতে বলে,
–আমার কি কোনো খুঁ’ত আছে? তোমার সাহস হয় কিভাবে এসব বলার?
ইভান রিমুর ব্যাবহারে এবারো হতাশ।
–যেমন ভাবে তোমার সাহস হয়!
ইভান তার ছেলে রিহাবকে নিয়ে সেখান থেকে চলে যায়। রিমু বিড়বিড় করে বলে,
–যতোসব আদিখ্যেতা! ভাইয়ের বউয়ের জন্য দরদ উতলে উতলে পরছে।
রিমুর বিড়বিড় করার সময় রিমুর হোয়াটসএপের মেসেজ টোন বেজে উঠে। রিমু মেসেজ ওপেন করে দেখে দুইটা পেপারের ছবি। ছবিটা জুম করে দেখে রেজিস্ট্রি পেপার। রিমু ভাবে,
“এই রুহুল বেটা বিয়ে করছে ভালো কথা, আমাকে ছবি পাঠানোর কি দরকার! অদ্রিকে তো করতে পারেনি আর।”
তাও কৌতুহল বশত কনের নাম পড়ে রিমু বিস্ময়ে স্তব্ধ হয়ে গেছে। রুহুল আমিনের সাথে শিমুর বিয়ে হয়েছে! সে তার নিজের চোখকেই বিশ্বাস করতে পারছে না। রিমু আবারো কাগজটা পড়ে। দ্বিতীয় কাগজটাও পড়ে। দ্বিতীয় কাগজটাতে মূল শর্ত হলো,
“আমি গুলশান নিবাসি মৃত মোহাম্মদ আমির আমিন ও রাশেদা পারভিনের জৈষ্ঠ পুত্র মোহাম্মদ রুহুল আমিন। আমার সকল বিষয়ে সম্মতিতে জনাব মোহাম্মদ নিয়াজ পাটওয়ারি ও মিসেস রানি আক্তারের দুই কন্যা রিমু আক্তার ও শিমু আক্তার নিয়োজিত থাকবে। তথাপি মিসেস রিমু আক্তার মিস্টার ইভান আহমেদের স্ত্রী ও আমার বড় শ্যালিকা। ”
রিমু নিষ্পলক ভাবে চেয়ে আছে মোবাইলের স্ক্রিনে। এতোটাও হতভম্ব ও বোকা সে কখনো হয়নি।
জাবির ও রিহা স্টেজে নিহার কাছে বসে আছে। নিহা রিহাকে বলে,
–রিহা আপু। মনে হচ্ছে রিমু ভাবী ঝ’টকা খেয়েছে।
রিহাও সেইদিকে অবলোকন করে বলে,
–তাইতো মনে হচ্ছে।
নিহা বলে,
–এবার তাহলে কেউ গিয়ে তার স্তব্ধতা ভঙ্গ করিয়ে বাস্তবে ফেরাও। একটু ধা’মাকা হোক। আমার জামাইটা এই সুযোগে বাহিরে বের হয়ে যাক। উফ বাবা! এতোক্ষনে টেনশনে ভ’য়ে ছিলাম।
রিহা নিহার হাতে চা’টা মেরে দুজনেই হেসে উঠে। রিহা জাবিরকে পাঠায় রিমুকে ডাক দিতে। জাবির রিমুর থেকে এক হাত দূরে দাঁড়িয়ে রিমুকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–ভাবী। অদ্রিতো এখানে নেই। যদি আপনি একটু বলে দিতেন নিহাকে কোন রুমে নিয়ে যাবো।
ধ্যান ভাঙে রিমুর। জাবিরের কথার তোয়াক্কা না করে চিৎকার করে উঠে,
–নাআআয়য়য়া!😕
জাবির থতমত খেয়ে দূরে চলে যায়। আশেপাশের সবাই রিমুর দিকে তাকিয়ে আছে। রিমু আবারো চিৎকার করে উঠে,
–এটা কিছুতেই সম্ভব না। আমি বিশ্বাস করিনা। আমার বোন…!
ইভান রিহাবকে নিয়ে কিছুটা দূরেই ইরা ও ইরার স্বামীর সাথে দাঁড়িয়ে ছিল। রিমুর চিৎকারে ওরা চারজন দৌড়ে রিমুর কাছে যায়। অদ্রি যখন দেখলো সবাই রিমুর দিকে ঘিরে ধরেছে ঠিক তখনি রিয়ানকে ঠেলে সিঁড়ি দিয়ে নামিয়ে সেন্টার ত্যাগ করে। তারপর রিসোর্টের গেট পর্যন্ত রিয়ানের মুখ ঢেকেই নিয়ে যায়। উবার ঠিক করা ছিল সেটাতে রিয়ানকে বসিয়ে অদ্রি স্বস্থির নিঃশ্বাস ছাড়ে।
চলবে ইনশাআল্লাহ,