Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"শত্রু শত্রু খেলাশত্রু শত্রু খেলা পর্ব-১১+১২

শত্রু শত্রু খেলা পর্ব-১১+১২

#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_১১
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)

প্রভাতী লগ্নেই ঘুম ভেঙেছে প্রীতির। শুভ্র মেঘের মাঝে গোল তালার মত সূর্যটাকে দেখতে অপরূপ লাগছে তার কাছে। সূর্যোদয় শুধু গ্রামেই সুন্দর তা নয় শহরেও দেখতে মন্দ নয়।

গ্রামের মেয়ে হওয়ার সুবাধে ভোর সকালে ঘুম থেকে উঠে পড়ার অভ্যাস আছে তার। প্রিয়াকে হাজার বলেও উঠাতে পারেনি সে। তাই সাত তলার ছাদে একাকী ঘুরে বেড়াচ্ছে সে।
ছাদের এককর্ণারে ফুলের বাগানে ঘেরা। গোলাফ থেকে শুরু করে বেলী, রজনীগন্ধা, টগর, গাঁদাসহ নানা রঙের ফুল ফুটে আছে।
বাগানটা যেই করেছে তার অভিরুচি নিঃসন্দেহে দারুণ। প্রকৃতির অপার সৌন্দর্যের এক টুকরো স্বর্গরাজ্যে ছাদের এই কর্ণার।

প্রীতি আনমনে গুনগুন করে গান গেয়ে উঠে। তার বেখেয়ালী উদাসী মন গোলাপ ফুল ও কয়েকটা বেলী আর গাঁদা ছিঁড়ে নেয়। বাসায়ও ফিরে আসে সেগুলো হাতে নিয়ে।

প্রীতি প্রিয়ার কানের কাছে গোলাপ ও বেলী গুজে দেয়। বেলীফুলের মিষ্টি গন্ধে প্রিয়ার ঘুম ভেঙে যায়। কিন্তু নিদ্রাঘোরে তখনও বুঝতে পারে না ফুলের গন্ধ কোত্থেকে আসছে। নিভু নিভু চোখে জিজ্ঞেস করে,

ফুল কোথায় পেয়েছিস প্রীতি?

ছাদে গিয়েছিলাম। সেখান থেকে নিয়ে এসেছি।

বিস্ফোরিত চোখে তাকায় প্রীতির দিকে। বুক ধড়ফড়িয়ে বিছানায় উঠে বসে সে। মুখ নিঃসৃত এক বাক্যেই বের হয় তার,

সর্বনাশ! কি করলি তুই এটা?

প্রীতি হতভম্বের মত বসে আছে। প্রিয়ার সব কথা তার মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। কয়েকটা ফুল ছিঁড়লে কি এমন সর্বনাশ হয়ে যাবে সে এটাই বুঝতে পারছে না। বাগানে তো ফুলের অভাব নেই। সেখানে তো পুরো ফুলের রাজ্যে পড়ে আছে। দুই একটা ফুল ছিঁড়লে কি এমন হয়ে যাবে।

প্রিয়া মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে। দুইটা ফুল ছিঁড়ার কারণে ঐ সৌরবিদ্যুৎ আম্মুর কাছে নালিশ করছিলো। আর আম্মু আমাকে দু’কান ধরাই দরজার সামনে দাঁড় করাই রাখছিলো পুরো আধাঘন্টা। তাও নাজমা আন্টির কারণে সেদিন ছাড়া পাইছিলাম। নয়তো কতক্ষণ থাকতাম তাও জানি না। ভাইরে! ঐ সৌরবিদ্যুৎ বাগানরে নিজের বাচ্ছাদের মত ট্রিট করে। কেউ ফুল ছিঁড়া তো দূরে থাক কেউ তাকাতেও পারে না। আমি সেদিনের পর থেকে কানে ধরছি। ভুল করে ভুলেও তার বাগানের দিকে তাকাবো না। কিন্তু আজকে যদি দেখে তুই ফুল ছিঁড়েছিস কি হবে আল্লাহ্ই জানে!

প্রীতি মুখ টিপে হেসে উঠল। আরে সৌরভ ভাই জানবে কি করে? তখন তো কেউ ছিলো না আর না কেউ আমাকে দেখেছে। চিন্তা করিস না কিছু হবে না।

প্রিয়া প্রীতির কথা শুনে ব্যাঙ্গাত্মক হাসি দিলো। আরে বইন তুই সি সি ক্যামেরা চোখে দেখস নাই। ঐ ব*জ্জাত সি সি ক্যামেরা বসায় রাখছে। ব্যাটা বাথরুমেও সি সি ক্যামেরা বসায় চোর ধরার জন্য। ওর জন্য শান্তিমত চুরিও করা যায় না।

প্রিয়ার কথা শুনে প্রীতি খিলখিল করে হেসে উঠল।

কিন্তু প্রিয়ার মুখে হাসি দেখা গেলো না। সে তো ভয়ে সিটিয়ে আছে। আজকে কি হবে কে জানে?

_________________

মরনিং ওয়ার্ক শেষে তার রোজকারের রুটিন বাগানে পানি দেওয়া, গাছের পরিচর্যা করা। তাই প্রতিদিনের মত সৌরভ আজও নিজ কাজে মগ্ন। তার হাতে কাঁচি সে গাছের আগাছা পরিষ্কার করছিল। আচমকা কারো গলার আওয়াজ পেয়ে চকিতে মুখ ঘুরায়।

ভীতি তটস্থ হয়ে তার পিছনে কাচুমাচু করছে প্রিয়া।

সৌরভ অবাক হলেও পাত্তা দিলো না। প্রিয়াকে আড়চোখে দেখে সে পুনরায় তার কাজে মনোনিবেশ করলো।

প্রিয়া অস্থিরতায় ডুবে আছে। কিভাবে কথা শুরু করবে? তবুও মনে সাহস সঞ্চার করে কাঁপা কাঁপা গলায় বলল,

‘সৌরভ ভাইয়া’

প্রিয়ার এহেন সম্বোধন শুনে সৌরভ বিস্ফোরিত নয়নে তার দিকে তাকালো। ভূত দেখার মত চমকালো সে। যে মেয়ে তাকে হাজারটা নিকনেমে ডেকে বেড়ায় সেই মেয়ে তাকে ভাইয়া ডাকছে। ব্যাপারটা ভীষণ সিরিয়াস! কোনো গোল তো সে পাকিয়েছে তাই এখন এসেছে তার সমাধান করতে। সে একবার প্রিয়াকে ভালো করে পরখ করলো। তারপর প্রিয়ার দিকে পূর্ণদৃষ্টি দিয়ে বললো,

কিছু বলবে?

প্রিয়া মাথা নাড়ালো। তারপর ভূতের মত সৌরভের একদম কাছে গিয়ে দাঁড়ালো। এক দমে বললো,

ভাইয়া আমার খালাত বোন প্রীতি সে বুঝতে পারিনি। ভুল করে আপনার বাগান থেকে ফুল ছিঁড়ে ফেলেছে। প্লিজ আজকের জন্য ওকে মাফ করে দিন।

সৌরভ দুই হাত বগলদাবা করে দাঁড়িয়েছে। সেও মনোযোগ দিয়ে প্রিয়ার কথা শুনছে। কিন্তু ফুল ছিঁড়ার কথা শুনে কিছুটা ক্রুদ্ধ হলো। নিরেট গলায় বলল,

তুমি তখন কোথায় ছিলে?

আমি,,, তখন ঘুমাচ্ছিলাম।

কয়টা ফুল ছিঁড়েছে?

প্রিয়া দ্রুত তার হাতের মুষ্টি থেকে ফুলগুলো তার সামনে মেলে ধরলো। সৌরভ সবগুলো গুনে নিলো। একটা গোলাপ, তিনটে বেলী আর দুইটা গাঁদা।

ঠিক আছে মাফ করবো এক শর্তে।

কি,,শর্ত?

কাল থেকে পাঁচদিন তুমি আমার বাগানে পানি দিবে গাছের পরিচর্যা করবে। তাহলে মাফ পাবে। নয়তো মারিয়া আন্টিকে বলবো।

কিন্তু ফুল তো আমি ছিঁড়িনি। প্রীতি ভুল করে ছিঁড়ে ফেলেছে। আমি তো জানতাম না।

তারজন্যও দোষ তোমার, তুমি প্রীতিকে নিষেধ করোনি কেনো?

কিন্তু আমি তো ঘুমাচ্ছিলাম। নিষেধ করবো কিভাবে?

ঐটাই তোমার দোষ। তুমি ঘুমাচ্ছিলে কেনো তার সাথে আসলে তো আর সে ফুল ছিঁড়তো না।

মানে ঘুরে ফিরে সব আমার দোষ।

এখন বাসায় যাও, ঠান্ডা পানি খেয়ে মাথা ঠান্ডা করো। কালকে থেকে বাগানে কাজ করার জন্য প্রস্তুতি নাও।

প্রিয়া মুখ কালো করে দাঁড়িয়ে আছে। ব্যাটা ব*জ্জাত সুযোগ পেলে তোর বাগান একদিন আমি উড়িয়ে দেবো।

আমাকে গা*লি দেওয়া শেষ হলে বাসায় যাও।

প্রিয়া ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ত্বরিতগতি পায়ের কদম বাড়ায়।

সৌরভ নিশব্দে হাসে। আজকের সকালটা অনেক সুন্দর ছিলো তোমার আগমনে।

_______________

কোচিং-এ বসে ঝিমুচ্ছে সৌরভ। রাতে ঠিকঠাক ঘুমেই আসেনি তার। স্টুডেন্টরাও তাকে আড়চোখে দেখছে। দু’একজন অবশ্য তার মজা উড়াচ্ছে। কেউ কেউ টিপ্পনী মারছে সৌরভ ভাইয়ের আবার কি হলো আজকে?

সৌরভ রক্তিম চোখে স্টুডেন্টদের দিকে তাকিয়ে আছে। এই ছেলেগুলো আজকাল অনেক বাদর হয়ে গেছে। পড়াশোনার মধ্যে ফাঁক-ফোকর খুঁজে বেশি। অথচ তাদের সময় কতো প্রতিযোগিতা হতো কে বেশি ভালো করবে? নিভু নিভু চোখে সে জিজ্ঞেস করলো,

কি সমস্যা তোদের, এত হি হি করছিস কি জন্য?

স্টুডেন্টরা তার কথা শুনে হো হো করে হেসে উঠল। তাদের মধ্যে রফিক দাঁত কেলিয়ে বললো,

সৌরভ ভাই বাসায় কি ঘুমান না। বিয়ে তো করেন নাই বউ জ্বালাবে যে। রফিকের কথা শুনে বাকিরাও খিলখিল করে হেসে উঠে।

সৌরভ মুখ কুঁচকে বললো বউ না জ্বালালেও কোনো এক বেয়া*দব মহিলা আমাকে জ্বালিয়ে মেরেছে। তার সাথে কথা বলেনি দেখে শেষে অজস্র অচেনা নাম্বার থেকে কল দিয়ে সারারাত আমার মাথার চন্ডী চপকেছে। এখনো ফোন বন্ধ করে রেখেছি এদের ভয়ে।

রফিক বললো ভাই নাম্বারটা দেন। আমরাও দেখি কে এই মহীয়সী নারী?

সৌরভ বন্ধ মোবাইল অন করে নাম্বার বললো। রফিক খুব সন্তর্পণে নাম্বার তুলে ডায়াল করলো। কিন্তু ফোন করার মূহুর্তেই পাশে বসে থাকা লুবনার মোবাইল কর্কশ শব্দে কেঁপে উঠলো। সৌরভসহ বাকি স্টুডেন্টরাও লুবনার দিকে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

লুবনার ভয়ার্ত অক্ষিযুগল। ধরা পড়ে যাওয়ায় সে আতংকিত হয়ে ভয়ংকর এক মিথ্যা কথা চালিয়ে দিলো।

‘সৌরব ভাইয়া’ আমি ইচ্ছে করে আপনাকে কল করিনি। প্রিয়া আমাকে বলেছে আপনাকে কল দিতে।

লুবনার কথা শুনে সৌরভের চোয়াল শক্ত হয়ে গেল। ইচ্ছে করছে এই মেয়েকে গুড়িয়ে দিতে। কিন্তু তার স্টুডেন্ট বলে পার পেয়ে গেছে। প্রিয়াকে তো সে ছাড়বে না। আগে এই মেয়ের ব্যবস্থা করবে তারপর প্রিয়াকে নিয়ে ভাব্বে?

তুমি কি বাচ্চা মেয়ে? প্রিয়া তোমাকে বলেছে সেই জন্যই তুমি আমাকে বিরক্ত করবে?সারারাত বিভিন্ন নাম্বার থেকে কল দিয়ে আজে বাজে কথা বলবে? কোথায় পেয়েছো এত নাম্বার?

সৌরভের ধমকে লুবনা কেঁদে দিলো। ঝর ঝর করে দু’চোখের পানি ছেড়ে দিয়েছে। অশ্রুসিক্ত আঁখি আর অস্পষ্ট কন্ঠস্বর।

বিশ্বাস করুন ভাইয়া’ আমি শুধু একবার কল দিয়েছি। এরপর আর কোনো কল দেয়নি।

তাহলে কারা দিয়েছে?

ভাইয়া আমি জানি না এরা কারা। সত্যিই আমি জানি না। বিশ্বাস করুন ভাইয়া।

সৌরভ আনমনে কিছু একটা ভাবলো। তারপর বললো ঠিক আছে যাও। তবে নেক্সটাইম এমন ভুল যেনো আর না হয়।

লুবনা হ্যাঁ বলে আলতো করে মাথা নাড়ালো। এই ছেলেকে সে ভালোবেসে ছিলো। এই তো ভয়ংকর এক দানব। প্রিয়ার সাথেই যেনো বিয়ে হয়ে যাই। ঐ মিথ্যাটা যেনো সত্যি হয়ে যাই। তারপর প্রিয়া যখন কেলাবে তখন সেও মজা লুটবে।

সৌরভ মনে মনে রাগে ফুঁসছে। কখন তার কোচিং শেষ হবে আর কখন এই প্রিয়াকে মজা দেখাবে।

চলবে,,,,,,,,,,,,,

#শত্রু_শত্রু_খেলা
#পর্ব_১২
#মেঘা_সুবাশ্রী (লেখিকা)

লুবনা বিমর্ষচিত্তে বসে আছে প্রিয়ার সামনে। প্রিয়া জিজ্ঞেস করায় বলে সৌরভ তাকে পাত্তাই দেয়নি। ফোন করেছে দেখে তাকে খুব বকেছে। আবার কোচিং-এ সবার সামনে তাকে খুব অপমান করেছে। সবাইকে বলেছে আমি না’কি একটা বেয়া*দব মেয়ে। আমার কোনো ক্লাস নাই। আমি না হয় ভুল করেছি তাই উনাকে কল দিয়েছি কিন্তু তিনি কি করেছেন পুরো কোচিং-এর স্টুডেন্টদের সামনে আমাকে অপদস্ত করে গেছেন।

এভাবে একটা মেয়েকে কেউ অপমান করে? আমার অপরাধ আমি তাকে পছন্দ করি। এটাই তো! ভালোবাসা কি অপরাধ, বলনা? লুবনা অশ্রুসজল আঁখিতে নিজের ব্যথিত হৃদয়ের অনুরক্তিগুলো ব্যক্ত করে প্রিয়ার কাছে।

প্রিয়ার চোয়াল শক্ত হয়ে গেলো লুবনার কথা শুনে। আসলে ঐ ছেলে একটা হাড়-বজ্জাত। কিভাবে মেয়েদের সাথে কথা বলতে হয় তাও জানে না। লুবনাকে আশস্ত করলো।

ভাবিস না তো তার কথা। ঐ ব*জ্জাতকে ভুলে যা তুই। তবে চিন্তা করিস না ঐ বজ্জাতকে একটা উচিত শিক্ষা আমি দিবোই।

__________

বসন্তকালের আকাশে শুভ্র সাদা মেঘ ঘুরে বেড়াবে তা না’ উল্টো ঘন কালো আঁধারে ঢেকে রেখেছে। প্রিয়ার মেজাজ এমনিই আজকে চটে আছে। সে কখন থেকে দাঁড়িয়ে আছে কলেজ গ্রেইটে। দুপুরবেলায় রিকশা পাওয়া সবচেয়ে দুষ্কর। এরা যেতেই চাই না। দু’একজন গেলেও ভাড়া চায় চারগুন।

এরমধ্যে আকাশ ঘন কালো মেঘে ঢেকে আছে। আচমকা যেকোনো সময় বৃষ্টি নামতে পারে। ছাতা নিয়ে আসেনি সে। রিকশার জন্য অপেক্ষা করতে না পেরে হাঁটা ধরেছে। কিন্তু বিধিবাম দৈবাৎ ঝুম বৃষ্টি নেমেছে ধরণীতে। প্রিয়া দিগবিদিক শূন্য কোথায় যাবে। সামনে শপিং মলের একটা দোকানে ঢুকে পড়লো। দুপুর হওয়ায় শপিংমল অনেকটাই জনশূন্য। যা কয়েকজন ছিল বৃষ্টি দেখে তারাও দ্রুত বেরিয়ে গেছে। শপিংমলে দোকানদার ছাড়া তেমন ক্রেতা নজরে পড়লো না তার। কিন্তু তার উপায়ও নেই এখান থেকে বেরিয়ে যাওয়ার। গায়ের এ্যাপ্রোনে খানিকটা বৃষ্টির ছিটে পড়েছে। মাথার হিজাবও কিছুটা ভিজে গেছে তার। মুখের মাস্ক ঠিক করে নিলো সে। তার থেকে ঈষৎ দূরত্বে কিছু দোকানদার তার দিকে কেমন লোলুপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

প্রিয়া ভীষণ অস্বস্তিতে পড়ে গেলো। বেরিয়ে যাবার জন্য উদ্বত হতেই বৃষ্টির বেগ আরও বেড়ে গেছে। সে শপিংমলের বাইরে দাঁড়ানোতে বৃষ্টির ঝাপটা এসে তাকে ভিজিয়ে দিচ্ছে। চোখ বন্ধ করে আল্লাহকে ডাকছিলো। কোথায় যাবে এখন?

ভিতর থেকে দোকানদার একজন প্রিয়াকে ডাকলো ভিতরে প্রবেশ করার জন্য। কিন্তু প্রিয়ার ন্যূনতমও তাদের বিশ্বাস হলো না। সে ঠাঁই দাঁড়িয়ে আছে সেখানে।

কিছুক্ষণ পর আরেকজন মধ্যবয়সী দোকানদার তার সামনে এসে বলল আসো ভিতরে আসো। নয়তো একদম ভিজে যাবে।

প্রিয়া চরম অস্বস্তিতে পড়লো। তার বাবার বয়সী এই লোক। সে যাবে কি যাবে না চিন্তা করছে। কিন্তু তার মন সায় দিচ্ছে না। লোকটি প্রিয়াকে আবার অনুরোধ করলো ভিতরে প্রবেশ করতে। সে অনেক ভেবে চিন্তে পায়ের কদম বাড়াচ্ছিলো। আচমকা কারো গম্ভীর মুখের কন্ঠস্বর শুনে সে অস্থিরতার মাঝেও খুশি হয়ে গেলো।

সৌরভ প্রিয়াকে দেখে অদ্ভুতভাবে তাকালো। এই মেয়ে বৃষ্টিতে ভিজে এখানে আটকে গেছে। সে বাইকে করে বাড়ি ফিরছিলো কিন্তু আচমকা চোখ পড়েছে বিপদগ্রস্ত প্রিয়াকে দেখে। সে নিজেও বৃষ্টিতে ভিজে গেছে। তাও প্রিয়াকে শপিংমলের সামনে একা দেখে দ্রুত এগিয়ে এসেছে। বাইক থামিয়ে ত্বরিত সে প্রিয়ার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।

মধ্যবয়সী লোকটি সৌরভকে বললো,

তুমি মেয়েটিকে চিনো?

সৌরভ বিচলিত হলো কি বলবে এখন। অতর্কিত বলে ফেললো সে আমার ওয়াইফ। তারপর প্রিয়ার একটা হাত শক্ত করে ধরে তার কানের কাছে ফিসফিস করে বললো কোনো সিনক্রিয়েট করবে না যা বলছি চুপচাপ শুনে যাবে।

লোকটি হেসে উঠল। ভালোই হয়েছে তুমি এসেছো। মেয়েটাকে এবার তুমিই প্রটেকশন দাও।

প্রিয়া ভূত দেখার মত চমকে উঠলো। সৌরভ তাকে বউ হিসেবে পরিচয় কেনো দিয়েছে। সে তার প্রশ্নের উত্তরও জানতে পারছেনা। সৌরভ তাকে আগেই নিষেধ করে দিয়েছে।

দুইজনে চুপচাপ পাশাপাশি গা ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। প্রিয়া অনেকটাই সৌরভের বাহুবন্ধনে আবদ্ধ। প্রিয়া খানিকটা গলা খাকারি দিলো। সৌরভকে আরও একটু দূরত্বে দাঁড়াতে বললো। কিন্তু সৌরভ নড়লো না।

বেশ অনেকটা সময় এভাবে অতিবাহিত হওয়ার পর বৃষ্টি থেমে গেছে। সৌরভ তখনো প্রিয়ার হাত ধরে রেখেছে।

প্রিয়া হাত ছাড়ার জন্য উষ্কখুস করছিল। সৌরভ হাত ছাড়লেও তার পাশে দাঁড়িয়ে থাকল। প্রিয়াকে বললো বাইকে বসতে। প্রিয়া না করে দিলো সে উঠবে না। সৌরভ না উঠার কারণ জানতে চাইলো। প্রিয়া চোয়াল শক্ত করে আছে। সৌরভের দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি রেখে বলল,

আপনি যখন তখন আমার হাত কেনো ধরেন? যার তার সামনে কখনো উডবি, কখনো প্রেমিকা আবার কখনো বউ। এসব কোন ধরনের ব্যবহার। কেনো বলেন তো?

সৌরভ দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। এই মেয়েকে সে কীভাবে বুঝাবে তার কত বড় উপকার করেছে সে। যদি তখন ওয়াইফ না বলতো তাহলে তাদের লোলুপ দৃষ্টি তার দিকে আটকে থাকত। তার উপর ওর সাথে আমাকেই জড়িয়ে বাজে ইঙ্গিত করতো শেষে। তাই এত কিছু না ভেবেই সোজা বউ বলে দিয়েছে। যাতে কেউ সন্দেহ না করে আর তার দিকে বাজে দৃষ্টিতে না তাকায়। সৌরভ শান্ত গলায় বললো,

বাইকে অন্তত উঠো, যেতে যেতে বলছি তোমাকে। দেরি করলে তোমার সমস্যা বাড়বে। ভিজে কাপড়ে আছো ঠান্ডা লেগে তোমার জ্বর, সর্দি হতে পারে।

কিন্তু প্রিয়া নাছোড়বান্দা সে যাবে না। সৌরভকে রেখেই সে দ্রুত কদম বাড়ায় সামনের দিকে। সৌরভ ভেবে পায় না এই মেয়ে এত ছেদি কিভাবে হলো? সেও দু’কদম পা দ্রুত বাড়িয়ে প্রিয়াকে খপ করে ধরে নিলো। দাঁত কিড়মিড়িয়ে কিছু বলতে যাবে দোকানের মধ্যবয়সী লোকটা তাদের সামনে এসে দাঁড়ালেন। মুখ টিপে হেসে বললেন,

‘বউয়ের সাথে মান-অভিমান চলে বুঝি। হয়, হয় এমন হয়। আমার বউ তো বয়স হয়েছে, তাও এখনো বাচ্চামি করে আমার সাথে।

লোকটা হাসি মুখে কথাগুলো বলে সামনের দিকে চলে গেলেন।

সৌরভও লোকটার সাথে তাল মিলালো,

জ্বি, বড্ড অবুঝ বাচ্চা বউ তো, তাই!

প্রিয়ার রাগ এবার আকাশ ছুঁয়েছে। হাত মুষ্টি করে রেখেছে সে। ক্রোধান্বিত হয়ে বললো,

আমাকে সত্যিই করে একটা কথা বলুন তো, আপনি চাইলে আমাকে বোন হিসেবেও পরিচয় দিতে পারতেন। কিন্তু আপনি তা করেননি, কেনো বলেন তো?

সৌরভ হুট করেই রেগে গেলো প্রিয়ার কথা শুনে,

তোমার ইস্টুপিট চিন্তা ভাবনা গুলো একপাশে রাখো তো। তুমি কোনদিক থেকে শোভার মত হতে পারো। আমার বোন হাজারে একটা আর তুমি আমার বোন হওয়া ডিজার্ভই করো না। আসলে আসো নয়তো থাকো এখানে। আমি গেলাম।

সৌরভ আর দাঁড়ায় না। মূহুর্তে বাইক নিয়ে চলে যায়।

প্রিয়া রাগে গজগজ করে। কোন কুলক্ষণে এই ব*জ্জাতের সাথে তার দেখা হয়েছিলো মাবূদই জানে।

অবশেষে রিকশা পেয়ে সেও বাড়ি ফিরে আসে।
______________________

বাড়ি ফিরেই সে খুব জটকা খেলো। বাড়িতে নতুন অতিথি এসেছে। কিন্তু সে তাদেরকে চিনে না। তবে পাশে বসা নিচতলার শায়লা আন্টিকে দেখে চমকালো। এই আন্টি কিন্তু সবার বাসায় আসে না। যার বাড়িতে মেয়ে আছে শুধু তার বাড়িতে তিনি পদার্পণ করেন। তার কাজ হচ্ছে বিয়ের ঘটকালি করা। এক কথায় বলতে গেলে তিনি বিয়ের ঘটক।

কিন্তু তাদের বাসায় শায়লা আন্টির কি কাজ প্রিয়ার বোধগম্য হলো না। সে অতি সন্তপর্ণে তাদের পাশ কাটিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।কিন্তু শায়লা আন্টি তাকে পিছু ডাক দিলেন,

আরে প্রিয়া যে এদিকে আসো। তোমাকে খুঁজচ্ছিলাম। কলেজ থেকে মাত্রই এলো বুঝি।

প্রিয়ার রাগের মাঝেও হাসি পেলো। শায়লা আন্টি কি দিনকানা? চোখে দেখে না তার কাঁধে ব্যাগ, গায়ে এ্যাপ্রোন পরা। তাও জিজ্ঞেস করছে কলেজ থেকে এসেছো? কিন্তু মুখে কিছুই বলতে হলো না। তার আগে মারিয়াই বললো,

প্রিয়া তুই রুমে যা। ফ্রেশ হয়ে নেয়। খাবার দিলে আমি তোকে ডাকবো।

প্রিয়া মায়ের উপরে আর কথা বাড়ায় না। নিজের রুমে ফিরে আসে। রুমে ঢুকেও তার মন খচখচ করছে। তাই ভাইকে ডাক দিল জিজ্ঞেস করার জন্য। প্রত্যুষ বোনের ডাক শুনে দৌড়ে আসে। কিন্তু শায়লা আন্টির কথা জিজ্ঞেস করার পর চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকে সে। বলতে পারে না শায়লা আন্টি কেনো এসেছে? প্রিয়া রেগে গেলো ভাইয়ের উপর।

আকাইম্মার ঢেঁকি যা বাইর হ’ আমার রুম থেকে।

প্রত্যুষ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যাই বোনের আচরণে। তাই চুপচাপ প্রস্থান করে ঠিকই কিন্তু মনে মনে গালি পাড়ে।

“খবিসনি ম্যাইয়া”
________________

প্রিয়া টেবিলের এককোণে চুপচাপ বসে থাকলেও ভয়ে গুটিয়ে আছে সে। সৌরবিদ্যুত তাকে আজ জ্যান্ত চি*বিয়ে খাবে। মনে মনে আল্লাহ্কে জপছে।

সৌরভ ম্যাথের খাতা উল্টালো। মাত্রই পাঁচটা ম্যাথ প্রিয়া করেছে। বাকি সাতটা পড়ে আছে খাতার এককোণে। সৌরভ এমনিতেই আজ প্রিয়ার উপর ক্ষেপে আছে। তার উপর মেয়েটার খামখেয়ালী পড়াশোনা। খাতায় চোখ বুলিয়ে সে প্রিয়ার দিকে তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে তাকালো।

তোমার বয়স কত?

প্রিয়া যারপরনাই অবাক। এই লোক তার বয়স দিয়ে কি করবে? চুপ করে পরিস্থিতি বুঝার চেষ্টা করছে সে।

সৌরভ দমক দিলো একটা। কথা কানে যায় না। প্রিয়া আমতা আমতা করে বললো,

১৭বছর।

১৮ হতে কতো দিন লাগবে আর?

১ মাস ১৮দিন।

ভালোই তো। মাস দেড়েক পরেই বাংলাদেশের নাগরিক হয়ে যাবে। শুনলাম আজকে তোমার জন্য বিয়ের প্রস্তাবও আসছে। তোমার বয়স ১৮ হলেই বিয়ে দিয়ে দিবে। তারপর বিয়ে করে বাচ্ছা-কাচ্ছার মা’ হয়ে যাবে। সেজন্যই বুঝি পড়াশোনাই এত খামখেয়ালী?

প্রিয়া অবিশ্বাস্য নজরে তাকালো সৌরভের দিকে। শুকনো ঢোক গিলে বললো,

মানে!,, বিয়ে?,, কবে?

চলবে,,,,,,,,

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ