লাভ টর্চার❤ Part-11 | বাংলা ভালোবাসার গল্প

3
5131

#লাভ_টর্চার❤
#Part-11
#Nusrat_Jahan_Abida
.
.
শুভ্র ভাইয়ার রুমে ঘুরে বেড়াচ্ছি। বিয়ে হতেই জোর করে বাপের বাড়ি থেকে শুশুর বাড়ি নিয়ে এসেছে। এতোদিন ছিলো যখন আর একদিন থাকলে কি হতো! ঘরটাও সাজায় নি, যদিও অনেক পরিপাটি কিন্তু বাসর ঘরের লক্ষণ বলতে কিছু নেই! ব্যটা আস্ত একটা বোরিংয়ের ডিব্বা। এখন তো মনে হচ্ছে একটা আনরোমান্টিক বিলাইকে ভালবেসেছি। পুরো জীবন তেজপাতা করে দিলো।
.
.
মনে মনে বকে চলছি এমন সময় শুভ্র ভাইয়ার এন্টি। দরজায় টোকা দিয়ে ভিতরে ঢুকলো। বিলাই তাহলে আদব কায়দা শিখেছে! টোকা দিয়ে ভিতরে ঢুকতেই কাছে গেলাম। শুভ্র ভাইয়া কিছুটা দূরে গিয়ে বলল,
– এসব করা লাগবে না। আমার পছন্দ না।
.
.
ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– কি পছন্দ না!
.
.
শুভ্র ভাইয়া ইতস্তত হয়ে বলল,
– ঐ যে পা ধরে সালাম করা।
.
.
শুভ্র ভাইয়ার কথা শুনে আকাশ থেকে পড়লাম। যেখানে বিয়েই করতে চাই নি, সেখানে এসব করবো! আর এভাবেও আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সাথে মাথা নিচু করা আমার পছন্দ না। ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– আমি এসব করতে যাবো কেন!
.
.
শুভ্র ভাইয়া এবার কাঁচুমাচু করে বলল,
– না মানে বাঙ্গালী মেয়েরা করে তো! তাই বললাম আর কি!
.
.
আমি ভাব নিয়ে বললাম,
– সবাই করে দেখে আমারও করতে হবে নাকি! আর এভাবেও আমি সবার চেয়ে আলাদা, সো এসব আমার দ্বারা আশা করেন না।
.
.
শুভ্র ভাইয়া কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল,
– বুঝলাম। এখন পড়তে বসো।
.
.
পড়তে বসার কথা শুনে মাথা পড়ে যাবার অবস্থা। অবাক হয়ে বললাম,
– বাসর রাতে কেউ পড়ে নাকি!
.
.
কথাটা শুনে শুভ্র ভাইয়ার চেহেরার রূপ পাল্টে গেলো। আমার দিকে তাকিয়ে দুষ্ট হাসি দিয়ে এগোতে লাগলো। তাকে কাছে আসতে দেখে আমি পিছনে দিকে যেতে লাগলাম। এক কদম, দু কদম করে শেষে পিঠ দেওয়ালে গিয়ে ঠেকলো। পিছনে আর যাওয়ার জায়গা নেই দেখে ঢোক গিললাম। শুভ্র ভাইয়া আমার থেমে যাওয়া দেখে একদম আমার কাছে এসে থামলো। মাঝের দূরত্ব অনেক কমে গেছে। শুভ্র ভাইয়ার নিঃশ্বাসের শব্দ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছি। মন আমার ধুপ ধুপ করছে। দম ভারী হয়ে এসেছে। ঘন ঘন নিঃশ্বাস নিচ্ছি। শুভ্র ভাইয়া আরো আমার কাছে চলে আসলো। হৃদস্পন্দন ক্রমশ বেড়ে চলছে। মনে হচ্ছে, জানপাখি এখনই দেহ থেকে উড়াল দিবে। তাকে কাছে আসতে দেখে আবেশে চোখ বন্ধ করে নিলাম। শুভ্র ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ এনে বলল,
– তাহলে কি করে বাসর রাতে!
.
.
শুভ্র ভাইয়ার কথায় বুকের মধ্যে তোলপাড় শুরু হয়ে গিয়েছে। আরো কিছুক্ষণ এভাবে থাকলে চল্লিশ দিন পর আমার চল্লিশা হবে বলে মনে হচ্ছে। কাঁপা কাঁপা ঠোঁটে বললাম,
– বাস…র রা….তে…..
.
.
শুভ্র ভাইয়া নিজের ঠোঁট আমার কানে ছোঁয়াতেই যা বলছিলাম তাও ভুলে খেয়ে ফেললাম। শরীর একদম ফিজ হয়ে গিয়েছে। শুভ্র ভাইয়া ঘোর লাগা কন্ঠে বলল,
– বাসর রাতে?
.
“এখনই জয়েন করুন আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে।
আর নিজের লেখা গল্প- কবিতা -পোস্ট করে অথবা অন্যের লেখা পড়ে গঠনমূলক সমালোচনা করে প্রতি সাপ্তাহে জিতে নিন বই সামগ্রী উপহার।
আমাদের গল্প পোকা ডট কম ফেসবুক গ্রুপে জয়েন করার জন্য এখানে ক্লিক করুন

না, আরোহী! এতো জলদি নিজেকে সমর্পণ করবি না। কথাটা মাথায় আসতেই শুভ্র ভাইয়াকে হালকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দিয়ে অন্য পাশে চলে আসলাম। জোরে জোরে নিঃশ্বাস নিয়েই চলছি। মনে হচ্ছে, কতক্ষণ পর যেন খোলা বাতাসে এসেছি। শ্বাস নিয়ে স্বাভাবিক হয়ে শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকাতেই দেখলাম তিনি মিটমিট করে হেসে চলছে। নিজের শাড়িটাকে হাত দিয়ে একটু ঠিক করে নিলাম। আমার এই কান্ড দেখে শুভ্র ভাইয়ার হাসির মাত্রা যেন আরো বেড়ে গেলো। আজব! এখানে হাসার কি আছে! তিনি কি বুঝতে পারছে না যে তার হাসি আমাকে অস্বস্তিতে ফেলছে! নিশ্চয়ই এই শুভ্র বিলাই জেনেশুনে এসব করছে। রাগে মাথা একদম ফেটে যাচ্ছে। শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বললাম,
– বাসর রাতে মানুষ ঘুমায়, আর আমিও ঘুমাতেই যাচ্ছি।
.
.
কথাটা বলে বিছানার দিকে পা বাড়ালাম। বিছানায় যেতেই শুভ্র ভাইয়া আমার হাত ধরে ফেললো। আমি ঘুরে তাকাতেই শুভ্র ভাইয়া বললো,
– তোকে এখানে ঘুরাতে কে বলছে!
.
.
আমি জিজ্ঞেসু দৃষ্টিতে তাকাতেই বললো,
– বিয়ে করেছি বলে মনে করিস না যে তোকে বউ মেনে নিয়েছি। তুই বেশি উড়ছিলি তাই পায়ে শিকল পড়িয়ে দিলাম। দ্যাটস ইট।
.
.
শুভ্র ভাইয়ার কথায় মাথায় আগুন ধরে যাচ্ছে। মন তো চাচ্ছে সেই আগুনে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করি। রাগী কন্ঠে বললাম,
– আপনার কি মনে হয়, আমি আপনাকে জামাই মানি! মোটেও না। আর আমি বিছানায় শুতে যাচ্ছি তার মানে এই না যে আমি আপনার সাথে ঘুমাবো। আমি মেহমান তাই বিছানায় ঘুমাবো, আর আপনি সোফায়!
.
.
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
– তুই মেহমান!
.
.
জোরপূর্বক হাসি দিয়ে বললাম,
– না, মেহমান হবো কেন! আমি তো আপনার বউ হই! তাই না? আজব পাব্লিক! নিজে বলে বউ না, এখন আবার জিজ্ঞেস করে, তুই মেহমান!
.
.
শুভ্র ভাইয়া আমার কথাকে পাত্তা না দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। আসছে আমাকে অপমান করতে! উনিও ভুলে গেছেন, আমি আরোহী! আমাকে কিছু বললে তার দ্বিগুণ শুনতে হবে! আর আমাদের সম্পর্কটাই তো #লাভ_টর্চারের। সো, টর্চারেড তো হবেই! হি হি হি!
.
.
মনে মনে এসব ভাবছি এমন সময় শুভ্র ভাইয়া আবার আসলো। হাতে একগাদা বই! বইগুলো বিছানায় রেখে বললো,
– বিয়ে হয়েছে মানে এই না যে পড়া থেকে বেঁচে যাবি, উল্টো আগে যা পড়তি তার ডাবল পড়বি। তোর বই সাথে এনেছি যাতে বাহনা না করিস! এখন পড়া শুরু কর!
.
.
#লাভ_টর্চার শুধু আমিই না, উনিও করছে। কেউ কারো থেকে কম না। আর তাই হয়তো আমরা এক হয়েছি। কিন্তু কথা হচ্ছে, জিত যারই হোক না কেন, আসল জিত ভালবাসারই হবে!
.
.
আল্লাহ! আমি তো ইমোশনাল হয়ে সেন্টি সেন্টি কথা বলছি। না, আরোহী। তোর হারলে চলবে না! তোর জিত আনতেই হবে! এই শুভ্র বিলাইয়ের কাছে তুই কিছুতেই হারবি না!
.
.
মনে মনে জিতের জন্য নিজেকে তৈরি করলেও জিতবো কিভাবে তাই ভেবে পাচ্ছি না। শুভ্র ভাইয়া এখানে বই নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। না পড়ে যাবোই বা কোথায়! মনে মনে এসব ভাবছি তখন শুভ্র ভাইয়া বলল,
– পড়া শুরু কর!
.
.
আমি শুভ্র ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে বললাম,
– আমি জানি, আপনি কেন পড়াতে চাচ্ছেন!
.
.
শুভ্র ভাইয়া ভ্রু কুঁচকে বলল,
– কেন!
.
.
আমি মুখে হাসি এঁকে বললাম,
– যেন লোকে না বলে যে, শুভ্রর বোন ডাব্বা পেয়েছে!
.
.
শুভ্র ভাইয়ার চেহারা দেখার মতো! কি বলবেন ভেবে পাচ্ছেন না! আর এমন হওয়াটাই স্বাভাবিক! বউ নিজেকে তার বোন হিসেবে পরিচয় দিলে তারই বা কি করার থাকে! তবে যাই হোক! খেলা কিন্তু এখনো আমার হাতেই আছে! কথা ভেবেই মনে মনে হেসে চলছি।
.
.
শুভ্র ভাইয়া কিছু না বলে ওয়াসরুমে চলে গেল। বসে বসে ফোন নিয়ে টিপে চলছি এমন সময় শুভ্র ভাইয়া ওয়াসরুম থেকে বের হয়ে একনজর আমার দিকে তাকালেন। বিছানা থেকে একটা বালিশ হাতে নিয়ে বলল,
– আমি ঘুমাতে যাচ্ছি, সকালে যেন দেখি সব পড়া কমপ্লিট! এতদিন অনেক ফাঁকি দিয়েছিস আর না!
.
.
কথাটা বলেই শুভ্র ভাইয়া সোফায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। আমি এখন কি করবো তাই ভেবে পাচ্ছি না। কেনো জানি মনে অজানা ব্যথা অনুভব করছি। সবকিছু কেমন যেন অগোছালো হয়ে পড়েছে। এভাবে আমাদের বিয়েটা না হলেও পারতো!
.
.
Continue………………..

3 মন্তব্য

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে