Sunday, October 5, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-৩২+৩৩+৩৪

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩২
.
রাতের আধাঁরে তাদের ছাদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাইশা। উত্তর দিকের আকাশটা একটু মেঘলায় পরিপূর্ণ।ফুরফুরে বাতাসে তার গায়ে ঠান্ডা অনুভূতিতে ছেয়ে যাচ্ছে।মিহির হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।জীবনটা কত অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ ধারনাই রাখতে পারে না। একসময় মিহির আপু মাইশার খুব কাছের মানুষ ছিলো আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই সম্পর্ক যেন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
.
”আমি অনেক স্বার্থপর তাই না আপু?”
.
মিহির সে কথা শুনে নিজের কোমল চোখে তীক্ষ্নতা নিয়ে আসে।আজ চার বছর পর মাইশাকে দেখছে সে। আগের তুলনায় হাতে পায়ে যেমন বড় হয়েছে; বুদ্ধিমত্তায় ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
ভাবতেই অবাক লাগে যেই মেয়েটা স্কুল থেকে দুবেণী করে লাফিয়ে লাফিয়ে তার কাছে পড়তে আসতো…..যেই মেয়েটার মনে-প্রাণে শুধুমাত্র তার ছোট আদরের ভাই আদ্রাফের বিচরণ ছিলো আজ সেই মেয়েটা কত বড় হয় গিয়েছে। আদ্রাফের মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো আজ সেই মেয়েটা কত সুন্দর পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিখেছে।
.
”না………তুমি স্বার্থপর না। তুমি কখনোই স্বার্থপর হতে পারো না?”
.
”কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমায় ঘৃণা করবে। চার বছর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি।আবার এটাও ভাবছো যে সময়ের তালে আদ্রাফকে ভুলে আয়াতকে………”
,
থেমে যায় মাইশা। কি বলবে সে। মিহির আপুর সাথে চোখ মেলানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।মিহির বলে ওঠে,
.
”তুমি যা ভাবছো সবই তোমার ভুল ধারনা। হ্যাঁ , অভিমান হয়েছিলো তোমার ওপর। অনেক অভিমান। যখন থেকে তোমাদের এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে তুমি কি বলতে পারবে একটাবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলে?
শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি আজও কিশোরগঞ্জ যাইনি। আমি জানি তুমি একদিন আসবে।আর দেখলে? তুমি এসেছো….যদিও তা ৪ বছর পর।”
.
নীরব হয়ে যায় মাইশা। আর কোনো উত্তর নেই তার কাছে। মিহির আপু যা বলেছে সবই সত্যি। মিহির আবার বলে ওঠে.,
.
”তুমি এটাও ভাবছো যে আয়াতকে মেনে নিয়েছো বলে আমি তোমার উপর রাগ করেছি? তুমি আসলেই বোকা রয়ে গেলে। (কিছুক্ষণ থেমে)
সময় কারও জন্যই থেমে থাকে না মাইশা।তুমি তা ভালো করেই জানো। তবে আমাও এটা ভালো করে জানি যে আয়াতকে মানতে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।কারনটাও আমি জানি। আদ্রাফ।
তোমার ধারনা আয়াতকে মেনে নিলে তুমি আদ্রাফকে ঠকাবে।যতই হোক আদ্রাফই তোমার প্রথম ভালোবাসা।আমি যা বলছি সব ঠিক না?”
.
”হ্যাঁ”
.
”শোনো মাইশা…….আল্লাহ তায়ালা ওপর থেকেই জুটি ঠিক করে রাখে। আদ্রাফ তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই সে তোমার হয়নি।তবে আয়াতই তোমার পরিণতি। হয়তো আদ্রাফকে তুমি ভুলতে পারবে না কিন্ত ও তোমার অতীত। অতীতের জন্য বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে তুমি নষ্ট করবে?”
.
”না।”
.
মিহির আপুর প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে। আয়াত তার অনেক কেয়ার করে।তার খুশির কথা চিন্তা করে ; সবচেয়ে বড় কথা , তার মনে মাইশার জন্য ভালোবাসা আছে।হয়তো তা আগে মুখে প্রকাশ করতো না কিন্ত প্রতিটা কাজকর্মে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো আয়াত।
.
মিহির আপু মাইশাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আকাশপানে তাকিয়ে থাকে।তারপর কোমল কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”যতই আমি আদ্রাফের বোন হই, তবুও একজন বন্ধু হিসেবে তোমায় একটি কথা বলতে চাই। আয়াত তোমায় অনেক ভালোবাসে মাইশা।আমি আদ্রাফের ভালোবাসা কখনোই ওর সাথে তুলনা করবো না। সেদিন যখন আমাদের বাসায় এসে ও তোমার কথা বলছিলো তখন আমি ওর চোখে তোমার জন্য অন্য অনুভূতি দেখতে পেয়েছি যেটা আমি আদ্রাফের চোখে দেখতাম।
যদিও দুজন অনেকটা ভিন্ন । তবুও ওদের একটাই মিল আছে ; ভালোবাসার এক অন্য অনুভূতি।”
.
অবাক নয়নে মাইশা তাকিয়ে থাকে মিহির আপুর দিকে।মিহির আপু আসলেই অন্য ধরনের।তার চিন্তা-ভাবনা , মন-মস্তিষ্ক সবকিছুই ভিন্ন ধরনের।
.
”তোমার কি মনে হয় মাইশা? আদ্রাফকে যেভাবে ভালোবেসেছিলে আয়াতকে ওভাবে তুমি তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না?”
.
পা থামিয়ে দেয় আয়াত। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছিলো বলে মাইশাকে ডাকার জন্য ছাদে গিয়েছিলো সে। কিন্ত মিহির আপুর প্রশ্ন শুনে কৌতুহল জাগে ওর মনে। সেও জানতে চায় এর উত্তর। ছাদে থাকা মিহিরের মতো চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে সেও অপেক্ষা করতে থাকে মাইশার উত্তর শোনার।
.
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মাইশা।
.
”আয়াত…..আয়াত…..আয়াত। অজান্তেই আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আদ্রাফ আর আয়াত, দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।আদ্রাফ যেমন নীরবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পছন্দ করতো আয়াত তেমন না।
আদ্রাফ আমার কিশোর জীবনের ভালোবাসা ছিলো যে নিজের সবকিছু উজাড় করেও নীরবে তার অনুভূতির প্রকাশ করেছে আর আয়াত যে হয়তো আমায় অনেক বকে…..তবুও ওর প্রতিটা ক্ষণেই আমার জন্য চিন্তা করেছে।আমায় পাগলের মতো ভলোবেসেছে।আদ্রাফকে আমি যেমন হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলাম না………সত্যি কথা আপু , আয়াতকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। ওকে আমার চাই আপু।খুব করে চাই।”
.
অজান্তেই নিজের ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে দেয় আয়াত।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে ওর মনে।ও ভাবছে এবার হয়তো মাইশার নিচে নামার সময় হয়েছে।তাই আস্তে করে নিচে চলে যায় সে।
.
মাইশার কথা শুনে মিহিরও এক প্রশান্তির হাসি হাসে।মিহির কখনো বিশ্বাস করতো না যে ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরে আসে।তবে এখন মানে। মনে প্রাণে মানে।আদ্রাফ আর মাইশার ভালোবাসাটা অনেক সুন্দর ছিলো। টবুও ওদের গল্পের কোনো পরিণতি হয়নি। তারপর ওর জীবনে আয়াত আসে।আয়াত ওর খালাতো ভাই থাকা সত্বেও আদ্রাফের সাথে দেখা হওয়ার বহুবছর পরে আয়াতের সাথে দেখা হয়েছ মাইশার।
এটাই আসলে আল্লাহর অবিশ্বাস্য খেলা।মাইশার জীবনে আদ্রাফ চলে যাওয়ার পর ওর জীবনে যে অন্ধকার হয়েছে তাতে রৌদ্দুর হয়ে এসেছে আয়াত।মাইশা আর আয়াতের ভালোবাসারও কি একটি সুন্দর পরিণতি হবে?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৩
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে জনমানবহীন রাস্তার লুকায়িত সৌন্দর্য উপভোগ করছে একজোড়া কপোত-কপোতী।দুজনের কাছে সময়টি যেন থমকে আছে। তারা চাচ্ছে যে আজীবন যেন এই সময়টি থমকে থাকুক।মাইশা আড়চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত আনমনে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। মাইশার আয়াতের হাতের ওপর আলতো করে নিজের হাত রাখে। আয়াত তবুও মাইশার দিকে তাকায় না।
.
” ধন্যবাদ আয়াত।”
.
”কেনো?”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই সে বলে ওঠে।মাইশা আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে……
.
”মিহির আপুর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
.
একথা বলে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত তার বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। চোখে রয়েছে অন্যরকম এক মাদকতা।
.
”উহু…….শুধু ধন্যবাদ দিলে তো হবে না। আমার তো (কানে ফিসফিসিয়) অন্য কিছু চাই।”
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা।এবার আয়াতের চোখে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।আয়াত টুপ করে মাইশার গালে একটি চুমু দিয়ে দেয়।মাইশা এবার আয়াতের বুকে লুকিয়ে পড়ে।আয়াত দুষ্টুমির ছলে বলতে থাকে…
.
” ওমা…….ভার্সিটির টপার মাইশা দেখি তার হ্যান্ডসাম বরের চুমু খেয়ে লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে।”
.
আয়াতের বুকে জোরে দুইটা কিল দিতেই সে আহ করে ওঠে।তারপর আবার মাইশাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলতে থাকে…..
.
”থাক্ মাইশুপাখি। এভাবে এই অবলা ছেলেটাকে আর ব্যাথা দিতে লাগবেনা।একটু আদরও তো করতে পারো ”
.
.
❤❤❤❤❤
সময়ের ব্যাবধানে আয়াত এখন সুস্থ। আবারো অফিসে যাওয়া-আসা শুরু করেছে সে। প্রায় ১ সপ্তাহ বাসায় ছিলো বলে এখন প্রচুর কাজের চাপ অফিসে।মাইশাও এখন মোটামুটি অবসর সময় কাটাচ্ছে।পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন রেজাল্ট পাবলিশের সময় ঘনিয়ে এসেছে।কিন্ত এই অবসর সময়ে আয়াতের ব্যাস্ততার জন্য ঠিকমতো সময় দিতে পারে না মাইশাকে।
.
সকালে মাইশার ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যায়। আবার রাতে তাড়াতাড়ি আসলেও অনেক রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করে।মাইশা তাই আয়াতকে বিরক্ত করে না। আয়াতের কাজের চাপটা সে অনুভব করতে পারছে তাই ওর মনোযোগ নষ্ট করতে চায় না সে।
.
এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।বাসায় সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ড্রইংরুমে বসে একসাথে টিভি দেখছে।কিন্ত মাইশার সেদিকে খেয়াল নেই। ঠান্ডার কারনে মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তার। আরিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলে,
.
”মাইশু…….কোনো সমস্যা হচ্ছে তোর?”
.
”আসলে ,,,,,,,আপু ; মাথাটা অনেকক্ষণ ধরেই ব্যাথা করছে। আমি ঘুমাতে যাই কেমন?”
.
মাইশার কথা শুনে খালামণি বলে ওঠে,
”বলে কি মেয়েটা। তোর মাথা ব্যাথা করছে আমাদের তুই বলবি না? এই আরিয়া…..আমার রুমের ড্রেসিং টেবিলে একপাতা ব্যাথার ট্যাবলেট আছে।ওর জন্য ট্যাবলেটটা নিয়ে আয় তো!”
.
মাইশা ইতস্তত করে বলে ওঠে,
”খালামণি থাক লাগবে না। আমি নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। একটু পরেই খালু আর আয়াত এসে পড়বে। খাবারগুলো আমিই গরম করতে চেয়েছিলাম কিন্ত এখন মনেহয় আরিয়াপুকেই করতে হবে।”
.
”আরে আমি করবো নে।তুই ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন?”
.
.
খালামণির রুমের ড্রেসিংটেবিল খুলতেই মাইশা ভিন্ন ভিন্ন একজোড়া ঔষধের পাতা দেখতে পায়।সে বুঝতে পারছে না কোনটা ব্যাথার জন্য ঔষধ।পরে কিছু একটা ভেবে এখান থেকেই একটা খেয়ে রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
.
আজকে আয়াত আর ওর আব্বুর অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।মাইশাকে আশেপাশে না দেখে আরিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
”কি রে আপু ; মাইশা কই?”
.
”মাইশার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিলো তাই ও অনেকক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।”
.
”বলো কি আপু? খাওয়া-দাওয়া করেনি?”
.
”না…..খালি পেটেই ঔষধ খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে।”
.
আয়াত তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া করেই রুমে যায়।গিয়ে দেখে মাইশা গুটিশুটি মেরে আয়াতের জায়গাটিতে ঘুমিয়ে আছে।চুলগুলো মুখের উপর পড়ে থাকাতে তার চেহারা সুন্দর করে দেখা যাচ্ছে না।আয়াত তার কাছে গিয়ে বসে আলতো করে তার মুখে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়।মাইশার মায়াবী ঘুমন্ত মুখ দেখতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলে সে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো মাইশাকে সময় দিতে না পারলেও এতে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেনি সে।আয়াত পরম আবেশে মাইশার কপালে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে। ঘুমের মধ্যে এতে খনিকটা নড়ে ওঠে মাইশা। তারপর ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,

”উহু……..আম্মু আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো।”
.
মাইশার একথা শুনেই একটু জোরে হেসে দেয় আয়াত। এতদিন তারা একসাথে থাকছে তবুও এখনো সে আগের পরিবেশে ডুবে আছে।মাইশার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে সে চলে যায় পোশাক পাল্টাতে।একটি হাফ হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে সে মাইশার পাশে শুয়ে পড়ে ওকে জরিয়ে ধরে। মাইশা এখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।আয়াতের এখন নেশা ধরে যাচ্ছে এভাবে মাইশার দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে।পরে কিছু একটা ভেবে আলতো করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁটযুগল স্পর্শ করে ওকে বুকে জরিয়ে নেয়।
নরম কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
”তোমাকে আমি খুব করে চাই মাইশা। তোমায় দেখে সকালটা শুরু হলে দিনটা সুন্দর লাগে আমার কাছে ; তোমায় বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমালে ঘুমটা প্রশান্তির হয় আমার। আমার এসব কাজ তোমার কাছে পাগলামি লাগতে পারে কিন্ত সত্যি কথা, আমার কাছে এটাই ভালোবাসা….”
.
মাইশা ঘুমের ঘোরে আয়াতের বুকে মিশে যেতেই আয়াত আর কিছু বলে না। নীরবে সেও চলে যায় ঘুমের রাজ্যে।
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩২
.
রাতের আধাঁরে তাদের ছাদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাইশা। উত্তর দিকের আকাশটা একটু মেঘলায় পরিপূর্ণ।ফুরফুরে বাতাসে তার গায়ে ঠান্ডা অনুভূতিতে ছেয়ে যাচ্ছে।মিহির হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।জীবনটা কত অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ ধারনাই রাখতে পারে না। একসময় মিহির আপু মাইশার খুব কাছের মানুষ ছিলো আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই সম্পর্ক যেন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
.
”আমি অনেক স্বার্থপর তাই না আপু?”
.
মিহির সে কথা শুনে নিজের কোমল চোখে তীক্ষ্নতা নিয়ে আসে।আজ চার বছর পর মাইশাকে দেখছে সে। আগের তুলনায় হাতে পায়ে যেমন বড় হয়েছে; বুদ্ধিমত্তায় ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
ভাবতেই অবাক লাগে যেই মেয়েটা স্কুল থেকে দুবেণী করে লাফিয়ে লাফিয়ে তার কাছে পড়তে আসতো…..যেই মেয়েটার মনে-প্রাণে শুধুমাত্র তার ছোট আদরের ভাই আদ্রাফের বিচরণ ছিলো আজ সেই মেয়েটা কত বড় হয় গিয়েছে। আদ্রাফের মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো আজ সেই মেয়েটা কত সুন্দর পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিখেছে।
.
”না………তুমি স্বার্থপর না। তুমি কখনোই স্বার্থপর হতে পারো না?”
.
”কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমায় ঘৃণা করবে। চার বছর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি।আবার এটাও ভাবছো যে সময়ের তালে আদ্রাফকে ভুলে আয়াতকে………”
,
থেমে যায় মাইশা। কি বলবে সে। মিহির আপুর সাথে চোখ মেলানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।মিহির বলে ওঠে,
.
”তুমি যা ভাবছো সবই তোমার ভুল ধারনা। হ্যাঁ , অভিমান হয়েছিলো তোমার ওপর। অনেক অভিমান। যখন থেকে তোমাদের এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে তুমি কি বলতে পারবে একটাবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলে?
শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি আজও কিশোরগঞ্জ যাইনি। আমি জানি তুমি একদিন আসবে।আর দেখলে? তুমি এসেছো….যদিও তা ৪ বছর পর।”
.
নীরব হয়ে যায় মাইশা। আর কোনো উত্তর নেই তার কাছে। মিহির আপু যা বলেছে সবই সত্যি। মিহির আবার বলে ওঠে.,
.
”তুমি এটাও ভাবছো যে আয়াতকে মেনে নিয়েছো বলে আমি তোমার উপর রাগ করেছি? তুমি আসলেই বোকা রয়ে গেলে। (কিছুক্ষণ থেমে)
সময় কারও জন্যই থেমে থাকে না মাইশা।তুমি তা ভালো করেই জানো। তবে আমাও এটা ভালো করে জানি যে আয়াতকে মানতে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।কারনটাও আমি জানি। আদ্রাফ।
তোমার ধারনা আয়াতকে মেনে নিলে তুমি আদ্রাফকে ঠকাবে।যতই হোক আদ্রাফই তোমার প্রথম ভালোবাসা।আমি যা বলছি সব ঠিক না?”
.
”হ্যাঁ”
.
”শোনো মাইশা…….আল্লাহ তায়ালা ওপর থেকেই জুটি ঠিক করে রাখে। আদ্রাফ তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই সে তোমার হয়নি।তবে আয়াতই তোমার পরিণতি। হয়তো আদ্রাফকে তুমি ভুলতে পারবে না কিন্ত ও তোমার অতীত। অতীতের জন্য বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে তুমি নষ্ট করবে?”
.
”না।”
.
মিহির আপুর প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে। আয়াত তার অনেক কেয়ার করে।তার খুশির কথা চিন্তা করে ; সবচেয়ে বড় কথা , তার মনে মাইশার জন্য ভালোবাসা আছে।হয়তো তা আগে মুখে প্রকাশ করতো না কিন্ত প্রতিটা কাজকর্মে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো আয়াত।
.
মিহির আপু মাইশাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আকাশপানে তাকিয়ে থাকে।তারপর কোমল কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”যতই আমি আদ্রাফের বোন হই, তবুও একজন বন্ধু হিসেবে তোমায় একটি কথা বলতে চাই। আয়াত তোমায় অনেক ভালোবাসে মাইশা।আমি আদ্রাফের ভালোবাসা কখনোই ওর সাথে তুলনা করবো না। সেদিন যখন আমাদের বাসায় এসে ও তোমার কথা বলছিলো তখন আমি ওর চোখে তোমার জন্য অন্য অনুভূতি দেখতে পেয়েছি যেটা আমি আদ্রাফের চোখে দেখতাম।
যদিও দুজন অনেকটা ভিন্ন । তবুও ওদের একটাই মিল আছে ; ভালোবাসার এক অন্য অনুভূতি।”
.
অবাক নয়নে মাইশা তাকিয়ে থাকে মিহির আপুর দিকে।মিহির আপু আসলেই অন্য ধরনের।তার চিন্তা-ভাবনা , মন-মস্তিষ্ক সবকিছুই ভিন্ন ধরনের।
.
”তোমার কি মনে হয় মাইশা? আদ্রাফকে যেভাবে ভালোবেসেছিলে আয়াতকে ওভাবে তুমি তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না?”
.
পা থামিয়ে দেয় আয়াত। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছিলো বলে মাইশাকে ডাকার জন্য ছাদে গিয়েছিলো সে। কিন্ত মিহির আপুর প্রশ্ন শুনে কৌতুহল জাগে ওর মনে। সেও জানতে চায় এর উত্তর। ছাদে থাকা মিহিরের মতো চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে সেও অপেক্ষা করতে থাকে মাইশার উত্তর শোনার।
.
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মাইশা।
.
”আয়াত…..আয়াত…..আয়াত। অজান্তেই আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আদ্রাফ আর আয়াত, দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।আদ্রাফ যেমন নীরবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পছন্দ করতো আয়াত তেমন না।
আদ্রাফ আমার কিশোর জীবনের ভালোবাসা ছিলো যে নিজের সবকিছু উজাড় করেও নীরবে তার অনুভূতির প্রকাশ করেছে আর আয়াত যে হয়তো আমায় অনেক বকে…..তবুও ওর প্রতিটা ক্ষণেই আমার জন্য চিন্তা করেছে।আমায় পাগলের মতো ভলোবেসেছে।আদ্রাফকে আমি যেমন হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলাম না………সত্যি কথা আপু , আয়াতকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। ওকে আমার চাই আপু।খুব করে চাই।”
.
অজান্তেই নিজের ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে দেয় আয়াত।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে ওর মনে।ও ভাবছে এবার হয়তো মাইশার নিচে নামার সময় হয়েছে।তাই আস্তে করে নিচে চলে যায় সে।
.
মাইশার কথা শুনে মিহিরও এক প্রশান্তির হাসি হাসে।মিহির কখনো বিশ্বাস করতো না যে ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরে আসে।তবে এখন মানে। মনে প্রাণে মানে।আদ্রাফ আর মাইশার ভালোবাসাটা অনেক সুন্দর ছিলো। টবুও ওদের গল্পের কোনো পরিণতি হয়নি। তারপর ওর জীবনে আয়াত আসে।আয়াত ওর খালাতো ভাই থাকা সত্বেও আদ্রাফের সাথে দেখা হওয়ার বহুবছর পরে আয়াতের সাথে দেখা হয়েছ মাইশার।
এটাই আসলে আল্লাহর অবিশ্বাস্য খেলা।মাইশার জীবনে আদ্রাফ চলে যাওয়ার পর ওর জীবনে যে অন্ধকার হয়েছে তাতে রৌদ্দুর হয়ে এসেছে আয়াত।মাইশা আর আয়াতের ভালোবাসারও কি একটি সুন্দর পরিণতি হবে?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৩
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে জনমানবহীন রাস্তার লুকায়িত সৌন্দর্য উপভোগ করছে একজোড়া কপোত-কপোতী।দুজনের কাছে সময়টি যেন থমকে আছে। তারা চাচ্ছে যে আজীবন যেন এই সময়টি থমকে থাকুক।মাইশা আড়চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত আনমনে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। মাইশার আয়াতের হাতের ওপর আলতো করে নিজের হাত রাখে। আয়াত তবুও মাইশার দিকে তাকায় না।
.
” ধন্যবাদ আয়াত।”
.
”কেনো?”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই সে বলে ওঠে।মাইশা আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে……
.
”মিহির আপুর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
.
একথা বলে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত তার বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। চোখে রয়েছে অন্যরকম এক মাদকতা।
.
”উহু…….শুধু ধন্যবাদ দিলে তো হবে না। আমার তো (কানে ফিসফিসিয়) অন্য কিছু চাই।”
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা।এবার আয়াতের চোখে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।আয়াত টুপ করে মাইশার গালে একটি চুমু দিয়ে দেয়।মাইশা এবার আয়াতের বুকে লুকিয়ে পড়ে।আয়াত দুষ্টুমির ছলে বলতে থাকে…
.
” ওমা…….ভার্সিটির টপার মাইশা দেখি তার হ্যান্ডসাম বরের চুমু খেয়ে লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে।”
.
আয়াতের বুকে জোরে দুইটা কিল দিতেই সে আহ করে ওঠে।তারপর আবার মাইশাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলতে থাকে…..
.
”থাক্ মাইশুপাখি। এভাবে এই অবলা ছেলেটাকে আর ব্যাথা দিতে লাগবেনা।একটু আদরও তো করতে পারো ”
.
.
❤❤❤❤❤
সময়ের ব্যাবধানে আয়াত এখন সুস্থ। আবারো অফিসে যাওয়া-আসা শুরু করেছে সে। প্রায় ১ সপ্তাহ বাসায় ছিলো বলে এখন প্রচুর কাজের চাপ অফিসে।মাইশাও এখন মোটামুটি অবসর সময় কাটাচ্ছে।পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন রেজাল্ট পাবলিশের সময় ঘনিয়ে এসেছে।কিন্ত এই অবসর সময়ে আয়াতের ব্যাস্ততার জন্য ঠিকমতো সময় দিতে পারে না মাইশাকে।
.
সকালে মাইশার ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যায়। আবার রাতে তাড়াতাড়ি আসলেও অনেক রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করে।মাইশা তাই আয়াতকে বিরক্ত করে না। আয়াতের কাজের চাপটা সে অনুভব করতে পারছে তাই ওর মনোযোগ নষ্ট করতে চায় না সে।
.
এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।বাসায় সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ড্রইংরুমে বসে একসাথে টিভি দেখছে।কিন্ত মাইশার সেদিকে খেয়াল নেই। ঠান্ডার কারনে মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তার। আরিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলে,
.
”মাইশু…….কোনো সমস্যা হচ্ছে তোর?”
.
”আসলে ,,,,,,,আপু ; মাথাটা অনেকক্ষণ ধরেই ব্যাথা করছে। আমি ঘুমাতে যাই কেমন?”
.
মাইশার কথা শুনে খালামণি বলে ওঠে,
”বলে কি মেয়েটা। তোর মাথা ব্যাথা করছে আমাদের তুই বলবি না? এই আরিয়া…..আমার রুমের ড্রেসিং টেবিলে একপাতা ব্যাথার ট্যাবলেট আছে।ওর জন্য ট্যাবলেটটা নিয়ে আয় তো!”
.
মাইশা ইতস্তত করে বলে ওঠে,
”খালামণি থাক লাগবে না। আমি নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। একটু পরেই খালু আর আয়াত এসে পড়বে। খাবারগুলো আমিই গরম করতে চেয়েছিলাম কিন্ত এখন মনেহয় আরিয়াপুকেই করতে হবে।”
.
”আরে আমি করবো নে।তুই ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন?”
.
.
খালামণির রুমের ড্রেসিংটেবিল খুলতেই মাইশা ভিন্ন ভিন্ন একজোড়া ঔষধের পাতা দেখতে পায়।সে বুঝতে পারছে না কোনটা ব্যাথার জন্য ঔষধ।পরে কিছু একটা ভেবে এখান থেকেই একটা খেয়ে রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
.
আজকে আয়াত আর ওর আব্বুর অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।মাইশাকে আশেপাশে না দেখে আরিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
”কি রে আপু ; মাইশা কই?”
.
”মাইশার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিলো তাই ও অনেকক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।”
.
”বলো কি আপু? খাওয়া-দাওয়া করেনি?”
.
”না…..খালি পেটেই ঔষধ খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে।”
.
আয়াত তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া করেই রুমে যায়।গিয়ে দেখে মাইশা গুটিশুটি মেরে আয়াতের জায়গাটিতে ঘুমিয়ে আছে।চুলগুলো মুখের উপর পড়ে থাকাতে তার চেহারা সুন্দর করে দেখা যাচ্ছে না।আয়াত তার কাছে গিয়ে বসে আলতো করে তার মুখে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়।মাইশার মায়াবী ঘুমন্ত মুখ দেখতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলে সে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো মাইশাকে সময় দিতে না পারলেও এতে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেনি সে।আয়াত পরম আবেশে মাইশার কপালে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে। ঘুমের মধ্যে এতে খনিকটা নড়ে ওঠে মাইশা। তারপর ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,

”উহু……..আম্মু আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো।”
.
মাইশার একথা শুনেই একটু জোরে হেসে দেয় আয়াত। এতদিন তারা একসাথে থাকছে তবুও এখনো সে আগের পরিবেশে ডুবে আছে।মাইশার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে সে চলে যায় পোশাক পাল্টাতে।একটি হাফ হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে সে মাইশার পাশে শুয়ে পড়ে ওকে জরিয়ে ধরে। মাইশা এখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।আয়াতের এখন নেশা ধরে যাচ্ছে এভাবে মাইশার দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে।পরে কিছু একটা ভেবে আলতো করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁটযুগল স্পর্শ করে ওকে বুকে জরিয়ে নেয়।
নরম কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
”তোমাকে আমি খুব করে চাই মাইশা। তোমায় দেখে সকালটা শুরু হলে দিনটা সুন্দর লাগে আমার কাছে ; তোমায় বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমালে ঘুমটা প্রশান্তির হয় আমার। আমার এসব কাজ তোমার কাছে পাগলামি লাগতে পারে কিন্ত সত্যি কথা, আমার কাছে এটাই ভালোবাসা….”
.
মাইশা ঘুমের ঘোরে আয়াতের বুকে মিশে যেতেই আয়াত আর কিছু বলে না। নীরবে সেও চলে যায় ঘুমের রাজ্যে।
.
.
#চলবে
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩২
.
রাতের আধাঁরে তাদের ছাদের দিকে অশ্রুসিক্ত চোখে তাকিয়ে আছে মাইশা। উত্তর দিকের আকাশটা একটু মেঘলায় পরিপূর্ণ।ফুরফুরে বাতাসে তার গায়ে ঠান্ডা অনুভূতিতে ছেয়ে যাচ্ছে।মিহির হাত ভাঁজ করে তাকিয়ে আছে মাইশার দিকে।জীবনটা কত অদ্ভুদ তাই না?কখন কার সাথে কি হয়ে যায় কেউ ধারনাই রাখতে পারে না। একসময় মিহির আপু মাইশার খুব কাছের মানুষ ছিলো আর আজ সময়ের ব্যাবধানে সেই সম্পর্ক যেন ছিন্ন হয়ে গিয়েছে।
.
”আমি অনেক স্বার্থপর তাই না আপু?”
.
মিহির সে কথা শুনে নিজের কোমল চোখে তীক্ষ্নতা নিয়ে আসে।আজ চার বছর পর মাইশাকে দেখছে সে। আগের তুলনায় হাতে পায়ে যেমন বড় হয়েছে; বুদ্ধিমত্তায় ও এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন।
ভাবতেই অবাক লাগে যেই মেয়েটা স্কুল থেকে দুবেণী করে লাফিয়ে লাফিয়ে তার কাছে পড়তে আসতো…..যেই মেয়েটার মনে-প্রাণে শুধুমাত্র তার ছোট আদরের ভাই আদ্রাফের বিচরণ ছিলো আজ সেই মেয়েটা কত বড় হয় গিয়েছে। আদ্রাফের মৃত্যুর পর যেই মেয়েটা মানসিকভাবে ভেঙ্গে গিয়েছিলো আজ সেই মেয়েটা কত সুন্দর পরিস্থিতি মানিয়ে নিতে শিখেছে।
.
”না………তুমি স্বার্থপর না। তুমি কখনোই স্বার্থপর হতে পারো না?”
.
”কেন? আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমায় ঘৃণা করবে। চার বছর তোমার সাথে যোগাযোগ রাখিনি আমি।আবার এটাও ভাবছো যে সময়ের তালে আদ্রাফকে ভুলে আয়াতকে………”
,
থেমে যায় মাইশা। কি বলবে সে। মিহির আপুর সাথে চোখ মেলানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।মিহির বলে ওঠে,
.
”তুমি যা ভাবছো সবই তোমার ভুল ধারনা। হ্যাঁ , অভিমান হয়েছিলো তোমার ওপর। অনেক অভিমান। যখন থেকে তোমাদের এই বাসা ছেড়ে চলে গিয়েছে তুমি কি বলতে পারবে একটাবারও আমার সাথে যোগাযোগ করেছিলে?
শুধুমাত্র তোমার জন্য আমি আজও কিশোরগঞ্জ যাইনি। আমি জানি তুমি একদিন আসবে।আর দেখলে? তুমি এসেছো….যদিও তা ৪ বছর পর।”
.
নীরব হয়ে যায় মাইশা। আর কোনো উত্তর নেই তার কাছে। মিহির আপু যা বলেছে সবই সত্যি। মিহির আবার বলে ওঠে.,
.
”তুমি এটাও ভাবছো যে আয়াতকে মেনে নিয়েছো বলে আমি তোমার উপর রাগ করেছি? তুমি আসলেই বোকা রয়ে গেলে। (কিছুক্ষণ থেমে)
সময় কারও জন্যই থেমে থাকে না মাইশা।তুমি তা ভালো করেই জানো। তবে আমাও এটা ভালো করে জানি যে আয়াতকে মানতে তোমার অনেক কষ্ট হয়েছে।কারনটাও আমি জানি। আদ্রাফ।
তোমার ধারনা আয়াতকে মেনে নিলে তুমি আদ্রাফকে ঠকাবে।যতই হোক আদ্রাফই তোমার প্রথম ভালোবাসা।আমি যা বলছি সব ঠিক না?”
.
”হ্যাঁ”
.
”শোনো মাইশা…….আল্লাহ তায়ালা ওপর থেকেই জুটি ঠিক করে রাখে। আদ্রাফ তোমার ভাগ্যে ছিলো না।তাই সে তোমার হয়নি।তবে আয়াতই তোমার পরিণতি। হয়তো আদ্রাফকে তুমি ভুলতে পারবে না কিন্ত ও তোমার অতীত। অতীতের জন্য বর্তমান আর ভবিষ্যৎকে তুমি নষ্ট করবে?”
.
”না।”
.
মিহির আপুর প্রতিটা কথা মনোযোগ দিয়ে শুনছে সে। আয়াত তার অনেক কেয়ার করে।তার খুশির কথা চিন্তা করে ; সবচেয়ে বড় কথা , তার মনে মাইশার জন্য ভালোবাসা আছে।হয়তো তা আগে মুখে প্রকাশ করতো না কিন্ত প্রতিটা কাজকর্মে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তুলেছিলো আয়াত।
.
মিহির আপু মাইশাকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে আকাশপানে তাকিয়ে থাকে।তারপর কোমল কন্ঠে বলে ওঠে……
.
”যতই আমি আদ্রাফের বোন হই, তবুও একজন বন্ধু হিসেবে তোমায় একটি কথা বলতে চাই। আয়াত তোমায় অনেক ভালোবাসে মাইশা।আমি আদ্রাফের ভালোবাসা কখনোই ওর সাথে তুলনা করবো না। সেদিন যখন আমাদের বাসায় এসে ও তোমার কথা বলছিলো তখন আমি ওর চোখে তোমার জন্য অন্য অনুভূতি দেখতে পেয়েছি যেটা আমি আদ্রাফের চোখে দেখতাম।
যদিও দুজন অনেকটা ভিন্ন । তবুও ওদের একটাই মিল আছে ; ভালোবাসার এক অন্য অনুভূতি।”
.
অবাক নয়নে মাইশা তাকিয়ে থাকে মিহির আপুর দিকে।মিহির আপু আসলেই অন্য ধরনের।তার চিন্তা-ভাবনা , মন-মস্তিষ্ক সবকিছুই ভিন্ন ধরনের।
.
”তোমার কি মনে হয় মাইশা? আদ্রাফকে যেভাবে ভালোবেসেছিলে আয়াতকে ওভাবে তুমি তোমার মনে জায়গা দিতে পারবে না?”
.
পা থামিয়ে দেয় আয়াত। অনেকক্ষণ হয়ে গিয়েছিলো বলে মাইশাকে ডাকার জন্য ছাদে গিয়েছিলো সে। কিন্ত মিহির আপুর প্রশ্ন শুনে কৌতুহল জাগে ওর মনে। সেও জানতে চায় এর উত্তর। ছাদে থাকা মিহিরের মতো চিলেকোঠায় দাঁড়িয়ে সেও অপেক্ষা করতে থাকে মাইশার উত্তর শোনার।
.
একটা লম্বা নিঃশ্বাস ফেলে মাইশা।
.
”আয়াত…..আয়াত…..আয়াত। অজান্তেই আমার জীবনের একজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষ। আদ্রাফ আর আয়াত, দুজনেই সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের।আদ্রাফ যেমন নীরবে নিজের ভালোবাসা প্রকাশ করতে পছন্দ করতো আয়াত তেমন না।
আদ্রাফ আমার কিশোর জীবনের ভালোবাসা ছিলো যে নিজের সবকিছু উজাড় করেও নীরবে তার অনুভূতির প্রকাশ করেছে আর আয়াত যে হয়তো আমায় অনেক বকে…..তবুও ওর প্রতিটা ক্ষণেই আমার জন্য চিন্তা করেছে।আমায় পাগলের মতো ভলোবেসেছে।আদ্রাফকে আমি যেমন হারিয়ে ভেঙ্গে পড়েছিলাম না………সত্যি কথা আপু , আয়াতকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। ওকে আমার চাই আপু।খুব করে চাই।”
.
অজান্তেই নিজের ঠোঁটে হাসির রেখা টেনে দেয় আয়াত।এক অন্যরকম ভালোলাগা কাজ করছে ওর মনে।ও ভাবছে এবার হয়তো মাইশার নিচে নামার সময় হয়েছে।তাই আস্তে করে নিচে চলে যায় সে।
.
মাইশার কথা শুনে মিহিরও এক প্রশান্তির হাসি হাসে।মিহির কখনো বিশ্বাস করতো না যে ভালোবাসা একবার হারিয়ে গেলে তা ফিরে আসে।তবে এখন মানে। মনে প্রাণে মানে।আদ্রাফ আর মাইশার ভালোবাসাটা অনেক সুন্দর ছিলো। টবুও ওদের গল্পের কোনো পরিণতি হয়নি। তারপর ওর জীবনে আয়াত আসে।আয়াত ওর খালাতো ভাই থাকা সত্বেও আদ্রাফের সাথে দেখা হওয়ার বহুবছর পরে আয়াতের সাথে দেখা হয়েছ মাইশার।
এটাই আসলে আল্লাহর অবিশ্বাস্য খেলা।মাইশার জীবনে আদ্রাফ চলে যাওয়ার পর ওর জীবনে যে অন্ধকার হয়েছে তাতে রৌদ্দুর হয়ে এসেছে আয়াত।মাইশা আর আয়াতের ভালোবাসারও কি একটি সুন্দর পরিণতি হবে?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৩
.
বারান্দায় দাঁড়িয়ে জনমানবহীন রাস্তার লুকায়িত সৌন্দর্য উপভোগ করছে একজোড়া কপোত-কপোতী।দুজনের কাছে সময়টি যেন থমকে আছে। তারা চাচ্ছে যে আজীবন যেন এই সময়টি থমকে থাকুক।মাইশা আড়চোখে আয়াতের দিকে তাকায়। আয়াত আনমনে তাকিয়ে আছে রাস্তার দিকে। মাইশার আয়াতের হাতের ওপর আলতো করে নিজের হাত রাখে। আয়াত তবুও মাইশার দিকে তাকায় না।
.
” ধন্যবাদ আয়াত।”
.
”কেনো?”
মাইশার দিকে না তাকিয়েই সে বলে ওঠে।মাইশা আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে……
.
”মিহির আপুর কাছে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
.
একথা বলে আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতে নিলেই আয়াত তার বাহু ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে। চোখে রয়েছে অন্যরকম এক মাদকতা।
.
”উহু…….শুধু ধন্যবাদ দিলে তো হবে না। আমার তো (কানে ফিসফিসিয়) অন্য কিছু চাই।”
.
নিশ্চুপ হয়ে যায় মাইশা।এবার আয়াতের চোখে তাকানোর মতো ক্ষমতা নেই তার।আয়াত টুপ করে মাইশার গালে একটি চুমু দিয়ে দেয়।মাইশা এবার আয়াতের বুকে লুকিয়ে পড়ে।আয়াত দুষ্টুমির ছলে বলতে থাকে…
.
” ওমা…….ভার্সিটির টপার মাইশা দেখি তার হ্যান্ডসাম বরের চুমু খেয়ে লজ্জায় নুইয়ে পড়েছে।”
.
আয়াতের বুকে জোরে দুইটা কিল দিতেই সে আহ করে ওঠে।তারপর আবার মাইশাকে বুকে জরিয়ে নিয়ে বলতে থাকে…..
.
”থাক্ মাইশুপাখি। এভাবে এই অবলা ছেলেটাকে আর ব্যাথা দিতে লাগবেনা।একটু আদরও তো করতে পারো ”
.
.
❤❤❤❤❤
সময়ের ব্যাবধানে আয়াত এখন সুস্থ। আবারো অফিসে যাওয়া-আসা শুরু করেছে সে। প্রায় ১ সপ্তাহ বাসায় ছিলো বলে এখন প্রচুর কাজের চাপ অফিসে।মাইশাও এখন মোটামুটি অবসর সময় কাটাচ্ছে।পরীক্ষা শেষ হয়ে এখন রেজাল্ট পাবলিশের সময় ঘনিয়ে এসেছে।কিন্ত এই অবসর সময়ে আয়াতের ব্যাস্ততার জন্য ঠিকমতো সময় দিতে পারে না মাইশাকে।
.
সকালে মাইশার ঘুম থেকে ওঠার আগেই চলে যায়। আবার রাতে তাড়াতাড়ি আসলেও অনেক রাত পর্যন্ত অফিসের কাজ করে।মাইশা তাই আয়াতকে বিরক্ত করে না। আয়াতের কাজের চাপটা সে অনুভব করতে পারছে তাই ওর মনোযোগ নষ্ট করতে চায় না সে।
.
এখন প্রায় সাড়ে নয়টা বাজে।বাসায় সবাই খাওয়া-দাওয়া করে ড্রইংরুমে বসে একসাথে টিভি দেখছে।কিন্ত মাইশার সেদিকে খেয়াল নেই। ঠান্ডার কারনে মাথাটা প্রচুর ব্যাথা করছে তার। আরিয়া বিষয়টা খেয়াল করে বলে,
.
”মাইশু…….কোনো সমস্যা হচ্ছে তোর?”
.
”আসলে ,,,,,,,আপু ; মাথাটা অনেকক্ষণ ধরেই ব্যাথা করছে। আমি ঘুমাতে যাই কেমন?”
.
মাইশার কথা শুনে খালামণি বলে ওঠে,
”বলে কি মেয়েটা। তোর মাথা ব্যাথা করছে আমাদের তুই বলবি না? এই আরিয়া…..আমার রুমের ড্রেসিং টেবিলে একপাতা ব্যাথার ট্যাবলেট আছে।ওর জন্য ট্যাবলেটটা নিয়ে আয় তো!”
.
মাইশা ইতস্তত করে বলে ওঠে,
”খালামণি থাক লাগবে না। আমি নিয়ে খেয়ে নিচ্ছি। একটু পরেই খালু আর আয়াত এসে পড়বে। খাবারগুলো আমিই গরম করতে চেয়েছিলাম কিন্ত এখন মনেহয় আরিয়াপুকেই করতে হবে।”
.
”আরে আমি করবো নে।তুই ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড় কেমন?”
.
.
খালামণির রুমের ড্রেসিংটেবিল খুলতেই মাইশা ভিন্ন ভিন্ন একজোড়া ঔষধের পাতা দেখতে পায়।সে বুঝতে পারছে না কোনটা ব্যাথার জন্য ঔষধ।পরে কিছু একটা ভেবে এখান থেকেই একটা খেয়ে রুমে চলে যায় ঘুমাতে।
.
আজকে আয়াত আর ওর আব্বুর অফিস থেকে আসতে একটু দেরি হয়ে যায়।মাইশাকে আশেপাশে না দেখে আরিয়াকে জিজ্ঞেস করে,
”কি রে আপু ; মাইশা কই?”
.
”মাইশার মাথাটা একটু ব্যাথা করছিলো তাই ও অনেকক্ষণ আগেই রুমে চলে গেছে।”
.
”বলো কি আপু? খাওয়া-দাওয়া করেনি?”
.
”না…..খালি পেটেই ঔষধ খেয়ে রুমে চলে গিয়েছে।”
.
আয়াত তাই তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া করেই রুমে যায়।গিয়ে দেখে মাইশা গুটিশুটি মেরে আয়াতের জায়গাটিতে ঘুমিয়ে আছে।চুলগুলো মুখের উপর পড়ে থাকাতে তার চেহারা সুন্দর করে দেখা যাচ্ছে না।আয়াত তার কাছে গিয়ে বসে আলতো করে তার মুখে থাকা চুলগুলো কানের পিঠে গুজে দেয়।মাইশার মায়াবী ঘুমন্ত মুখ দেখতেই মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে তুলে সে। বিগত কয়েকদিন ধরেই ব্যস্ততার জন্য ঠিকমতো মাইশাকে সময় দিতে না পারলেও এতে বিন্দুমাত্র অভিযোগ করেনি সে।আয়াত পরম আবেশে মাইশার কপালে গভীরভাবে নিজের ঠোঁট স্পর্শ করে। ঘুমের মধ্যে এতে খনিকটা নড়ে ওঠে মাইশা। তারপর ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে,

”উহু……..আম্মু আমি আরও কিছুক্ষণ ঘুমাবো।”
.
মাইশার একথা শুনেই একটু জোরে হেসে দেয় আয়াত। এতদিন তারা একসাথে থাকছে তবুও এখনো সে আগের পরিবেশে ডুবে আছে।মাইশার গায়ে কম্বল জড়িয়ে দিয়ে সে চলে যায় পোশাক পাল্টাতে।একটি হাফ হাতা টি শার্ট আর ট্রাউজার পরে সে মাইশার পাশে শুয়ে পড়ে ওকে জরিয়ে ধরে। মাইশা এখন বেঘোরে ঘুমুচ্ছে।আয়াতের এখন নেশা ধরে যাচ্ছে এভাবে মাইশার দিকে তাকিয়ে থাকার কারনে।পরে কিছু একটা ভেবে আলতো করে ওর ঠোঁটে নিজের ঠোঁটযুগল স্পর্শ করে ওকে বুকে জরিয়ে নেয়।
নরম কন্ঠে বলে ওঠে……..
.
”তোমাকে আমি খুব করে চাই মাইশা। তোমায় দেখে সকালটা শুরু হলে দিনটা সুন্দর লাগে আমার কাছে ; তোমায় বুকে জরিয়ে নিয়ে ঘুমালে ঘুমটা প্রশান্তির হয় আমার। আমার এসব কাজ তোমার কাছে পাগলামি লাগতে পারে কিন্ত সত্যি কথা, আমার কাছে এটাই ভালোবাসা….”
.
মাইশা ঘুমের ঘোরে আয়াতের বুকে মিশে যেতেই আয়াত আর কিছু বলে না। নীরবে সেও চলে যায় ঘুমের রাজ্যে।
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩৪
নুহাশ ভাইয়ার বিয়ে উপলক্ষে আজ প্রায় ৪ মাস পরে নিজের বাসায় পা রেখেছে মাইশা।খালামণি, আরিয়াপু , খালুজান, আয়াত সবাই এসেছে।পুরো বাড়িতেই খুশির আমেজে ভরপুর। আগামীকাল গায়ে হলুদ হবে তাই আজই সবাই এখানে এসেছে।মাইশার আম্মু বাড়ির একাজ ওকাজ করতে ব্যাস্ত।মাইশার আব্বুর সাহায্য করার জন্য আনান আর সামাদও এসেছে।মাইশা ওর আব্বুর কাছে গিয়ে তাকে জরিয়ে ধরে বলে ওঠে,
.
”কেমন আছো আব্বু?”
.
মাইশার আব্বুর চোখে জল থাকলেও মুখে এক তৃপ্তির হাসি। তার কাছে এখনো মনে হচ্ছে এইতো কিছুদিন আগেই মাইশার ছোট ছোট হাতগুলো আকড়ে বিকেলে অসীম পথে ঘুরে বেড়িয়েছিলো দুজনে। আর আজ সেই মেয়েই কত বড় হয়ে গিয়েছে।মাইশার মাথায় নিজের হাত বুলিয়ে বলে,
.
”ভালো আছি মামণি? তুমি ভালো আছো তো?”
.
”মাইশাকে নিজের মেয়ের মতো রেখেছি রহমান।চিন্তা করো না ও অনেক ভালো আছে।”(খালু)
.
”দেখেছো…..বাবার কাছে গিয়ে সব ভুলে গেছে মেয়েটা।আমিও তো আছি”
অভিমানি গলায় বলে ওঠে মাইশার আম্মু।একথা শুনে মাইশা মুখে হাসি ফুটিয়ে তাকেও জরিয়ে ধরে।
সবার সাথে দেখাসাক্ষাৎ শেষ করে নিজের ঘরে আসে মাইশা। এই ঘরে নাকি প্রতিদিনই ওর আব্বু আসে একথা ভেবেই মনে এক অজানা প্রশান্তি ছেয়ে যায় তার। একপাশে সুন্দর করে বুকশেল্ফে নানা ধরনের বই সাজানো আছে; পাশেই রয়েছে পরিত্যাক্ত পড়ার টেবিল।মাইশা আসবে বলে হয়তো কলাপাতা রঙের একটি বিছানার চাদর বিছিয়ে দিয়েছে আম্মু।এসব কিছু পর্যবেক্ষণ করতে করতে হঠাৎ পেছন থেকে একটি সুর ভেসে আসে ,
.
”বাড়িতে মা-বাবা-ভাইকে পেয়ে মনে হয় জামাইকে ভুলে গিয়েছো…..তাই না?”
.
আয়াত দরজায় দাঁড়িয়ে ভ্রু নাচিয়ে একথা বলে ওঠে। মাইশার দিকে চোখের দৃষ্টি তার প্রখর।মাইশা কিছুক্ষণ বোকার মতো তাকিয়ে থাকে আয়াতের দিকে। এই বাসায় এসেছে সর্বোজোড় আধঘন্টা হয়েছে আর আয়াত তাকে এই কথা বলে দিলো।ব্যাগ থেকে আলমারিতে কাপড় রাখতে রাখতে সে বলে ওঠে,
.
”আয়াত , সত্যি তুমি মনে হয় পাগল হয়ে গেছো।তোমাকে ভুলে যাবো কেন? দেখো….তোমার কথা অলয়েজ আমার মাথার উপর দিয়ে যায় তাই কথার অর্থ আমি জানিও না আর জানার চেষ্টা করবো না।”
.
আয়াত মাইশার কথা শুনে কোনো react করে না।ওর দিকে তাকিয়ে চুইংগাম চাবাতে চাবাতে বলে……
.
”তোমার ইঁদুরে মাথায় তা ঢুকবেও না। বাই দ্য ওয়ে ইন্জয় ইউরসেল্ফ এলোন। আই উইল কাম ব্যাক সুন।”
.
আয়াতের কথাগুলো বুঝতে তার পুরো দুই মিনিট লাগলো।এই ছেলেটা আসলেই তার এক্সপেক্টেশনের বাইরে। যখনই সে ভাবে আয়াত এখন এমন করবে তখনই আয়াত তার পরিকল্পনাকে আগুনের সাথে ধুলিস্যাৎ করে অন্য কিছু করে বসে যা মাইশার ধারনার বাইরে।
.
************
.
কনেপক্ষের কিছু লোকজন আজ বাজার করে নিয়ে এসেছে মাইশাদের বাসায়।মাইশা ভিন্নগ্রহের প্রাণীর মতো সোফায় বসে ইনায়া আর পৃথার সাথে এমন দৃশ্য উপভোগ করছে। বিয়ে বাড়িতে যে এত নিয়মকানুন থাকে তা মাইশার মোটামুটি ধারনাতে ছিলো কিন্ত অজানা কারনে এসব কিছু অনেক অদহভুদ লাগছে ওর কাছে। যদিও নুহাশদের পক্ষ থেকে বাজার আনার ক্ষেত্রে একটু দ্বিমত করেছিলো কিন্ত কনেপক্ষদের এমন নিয়ম থাকার কারনে তারা বিনিময়ে কিছু বলেনি।
আয়াতও নুহাশের সাথে দাঁড়িয়ে মেহমানদের সাথে কথা বলছে ; কখনো আবার একাজ-ওকাজ করতে ব্যাস্ত। মাইশা হঠাৎ খেয়াল করে একটি মেয়ে আয়াতের কাছে এসে কথা বলছে।মেয়েটির কথায় কখনো কখনো আয়াত হেসে উঠছে তো কখনো আয়াতের কথায় মেয়েটি হেসে পাড়লে আয়াতের গায়ের ওপর পড়ে যাচ্ছে।ইনায়া এবার মাইশার কানে কানে বলে……
.
”মাইশু দেখছিস ……ওই শাকচুন্নিটা মনে হয় আয়াত ভাইকে পটানোর চেষ্টা করছে।”
.
মাইশা ইনায়ার কথার ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বলে,
.
”মেয়ে মানেই কোনো সুন্দর ছেলে পেলে তাকে পটাবে? এখন আমার জামাই সুন্দর হলে আমি কি করবো? অন্য মেয়েদের মতো গলা ফাটিয়ে বলবো যে ; এজন্যই সুন্দর ছেলে আমি বিয়ে করতে চাই না ; কি বলবো?”
.
মাইশার এ কথা শুনে ইনায়া আর পৃথা দুজনেই চোখ বড় বড় করে ফেলে।মাইশার কপালে গলায় হাত বুলাতে বুলাতে বলে,
”এই তুই ঠিকাছিস? এমন আজব আজব কথা বলছিস কেন?”
.
”কেন কি হয়েছে?”(মাইশা)
.
”আরে গাধাআআআ ! তোর জামাইকে ওই মেয়েটা পটাতে চাইছে আর তুই দিব্যি বসে আছিস? ছেলেমানুষ এত ভালো হয় না।এদেরকে যতই সুযোগ দিবি ততই এরা ছাড় পেয়ে যায়।”
.
ইনায়ার এ কথাটা মনে ধরে মাইশার।আয়াতকে সে অবিশ্বাস করছে এমন না ; শুধু ওই মেয়েটার জন্য insecure feel হচ্ছে। এতক্ষণ কিভাবে আরামসে বসে চিপস খাচ্ছিলো সে?
.
কিছু একটা ভেবে আয়াতের কাছে যায় সে। তারপর ন্যাকা সুরে বলে ওঠে….
.
”আয়াত বেবি ! কখন থেকে তোমার জন্য ওয়েট করছি আর তুমি এখানে কথা বলছো?”
.
মাইশার এরকম কথা শুনে রীতিমতো বিস্ময়ের ধাপে পৌছে যায় আয়াত।মাইশার কপালে-গলায় হাত বুলিয়ে বলে…
.
”আর ইউ ওকে মাইশা?নেশা-টেশা করেছো নাকি?”
.
আয়াতের হাত ধরে বলে ওঠে,
”একটুও না বেবি ! (মেয়েটির দিকে তাকিয়ে মাইশা বলে) তুমি কে আপু?”
.
”আমি কনের বোন।তুমি বোধহয় জিজুর বোন তাই না?”
.
”হুম। আর এটা আমার লাভলি হাজবেন্ট।”
.
মাইশার একথা শুনে মেয়েটি একটু অবাকচোখে আয়াতের দিকে তাকায়।বোধহয় তার ক্রাশকে একমুহূর্তেই শুকনো বাঁশ বানিয়ে ফেলেছে মাইশা।একটু মলিন কন্ঠে বলে ওঠে…
.
”ওহ্, তাকে দেখে মনে হচ্ছিলো না।”
.
”বলো কি আপু? আমাদের তো লাভ ম্যারেজ।”
.
আয়াত যেন ধাপে ধাপে অবাকের নতুন সিড়িতে পা রাখছে।মাইশার এবার আয়াতের হাত টেনে তাকে ড্রইংরুমের এককোণে নিয়ে আসে।তারপর আয়াতের সবুজ পাঞ্জাবীর কলার চেপে কড়া গলায় বলে ওঠে….
.
”বিয়ে হয়ে গিয়েছে ক’দিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে আর এখনো অন্য মেয়েদের সাথে লুতুপুতু না করলে ভাল্লাগেনা ?”
.
”কার ক’দিন পর বাচ্চাকাচ্চা হবে আমিতো এখনো কিছুই করিনি?”
.
.
#চলবে

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ