রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-২৯+৩০+৩১

0
2710

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:২৯
.
চোখটা পিটপিট করে খুলতেই প্রথমে চোখ যায় সিলিয়ে আস্তে করে চলমান ফ্যানটার দিকে। মাথাটা তার এখনো ঝিম ধরে আছে।কাঁপাকাপা হাতে নিজের হাতটি নাড়াতে চাইলেই নাড়াতে পারেনা আয়াত।পাশে তাকিয়ে দেখে তার হাতে স্যালাইন এর সরু পাইপটি লাগানো।আয়াত মনে করার চেষ্টা করছে সে এখানে এলো কি করে।পরক্ষণেই হাইওয়েতে সেই দুর্ঘটনার কথাটি মনে পড়ে যায়।
.
আয়াত বুঝতে পেরেছে এখন কোনো হসপিটালে আছে সে।হঠাৎই তার চোখ যায় পাশে ঘুমন্ত অবস্থায় থাকা আরিয়াপুর দিকে।সে সোফায় হেলান দিয়ে ঘুমিয়ে আছে।বোঝাই যাচ্ছে অনেক ক্লান্ত সে।আয়াত মিহি কন্ঠে ডাক দেয়…..
.
”আরিয়াপু?”
.
পাতলা ঘুম দেওয়ার কারনে আয়াতের মিহি কন্ঠ শুনেই ঘুম কেটে যায় আরিয়ার।তারপর সোফা থেকে উঠে আয়াতের কাছে গিয়ে বলতে থাকে….
.
”আয়াত?…তুই ঠিকাছিস…?”
.
আয়াতকে ধরিয়ে আস্তে করে উঠিয়ে বসায় সে।আরিয়া উদ্বিগ্ন গলায় বলতে থাকে…
.
”নুহাশ……আম্মু….খালামণি-আঙ্কেল,,,, তাড়াতাড়ি আসো ,আয়াতের জ্ঞান ফিরেছে।”
,
একথা শুনেই আস্তে আস্তে সবাই ভিতরে আসতে থাকে।আয়াতের চোখ তখনও মাইশাকে একপলক দেখার জন্য আকুল হয়ে আছে।তখনই আয়াত খেয়াল করে আয়াতের আব্বু মাইশাকে আস্তে করে নিয়ে আসছে।গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে আসছে মাইশা।আয়াতের আম্মু ছেলেকে ধরে ব্যাকুল কন্ঠে বলে ওঠে…..
.
”বাবা….তুই ঠিকাছিস?এখন কেমন লাগছে তোর?”
.
”আরে…..আম্মু , কি হবে আমার?দেখোনা আমি ঠিকাছি।”
.
”থাপড়াইয়া তোর দাঁত ফালায় দিবো ব্যাটা….তোর জন্য সবাই কত চিন্তা করতেসে আর তুই এখনো মশকরা করছিস?”(নুহাশ)
.
মলিন হাসে আয়াত। আয়াত জানে আল্লাহর করুনাতেই এখন সে ঠিক আছে।নইলে যেভাবে এক্সিডেন্ট হয়েছিলো ; বাঁচার চান্স খুবই কম ছিল।আয়াত আবার মাইশার দিকে তাকায় মাইশা নীরব দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে।পারলে তো সে এখনই আয়াতের বুকে ঝাঁপিয়ে হুহু করে কেদে দিবে কিন্ত কোনো এক কারনে সে এগোতে পারছে না।
.
ডাক্তার আসলেই সবাই আয়াতকে ছেড়ে ডাক্তারের দিকে দৃষ্টি দেয়।ডাক্তার কিছুক্ষণ তার কন্ডিশন দেখে আর চেকাপের ভিত্তিতে বলে ওঠে……
.
”He is absolutely fine now, মাথায় আর বুকের কাছে সামান্য একটু ইন্জুরি হয়েছে ইনশাল্লাহ দু’তিনদিনের মধ্যেই ব্যাথাটি সেরে যাবে।তবে উনার এখন সম্পূর্ন বেড রেস্টের প্রয়োজন। তার সুস্থতার ওপর ডিপেন্ড করে তা একদিনও হতে পারে আবার এক সপ্তাহও হতে পারে।আজ উনাকে রিলিজ করে নিন।টেক কেয়ার অফ ইউরসেল্ফ ইয়াং ম্যান (আয়াতকে উদ্দেশ্য করে)
.
.ডাক্তার চলে যাওয়ার পরেই সবাই ব্যাতিব্যাস্ত হয়ে পড়ে আয়াতকে রিলিজ করানোর জন্য।তাই কেবিনে এখন শুধু বসে আছে মাইশা আর আয়াত।যেই না সবাই কেবিন থেকে চলে গেল অমনি মাইশা দরজাটা লাগিয়ে আয়াতের কাছে এসে ঝাঁপিয়ে পড়ে আয়াতের বুকে।বাচ্চাদের মতো হু হু করে কাঁদতে থাকে সে।
.
এদিকে আয়াতের তো নাজেহাল অবস্থা।এমনিতেও বুকে অনেক ব্যাথার কারনে ব্যান্ডেজ করা অংশটি অনুভব করতে পারছে সে।আবার মাইশার এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়াতে ব্যাথার জন্য মুখ থেকে ”উহ” করে একটা প্রতিধ্ধনি বের হয়।
.
মাইশা তবুও নড়াচড়া করে না।আয়াতের বুকে লেপ্টে থাকে।আয়াতের ব্যাথা করলেও বুকের খালি জায়গাটাতে মাইশাকে অনুভব করতেই ব্যাথাটাকে নিমিষেই আনন্দে পরিণত করে ফেলে সে।মুখে এখনো রয়েছে একরাশ বিস্ময়।
.
” এভাবে কাঁদছো কেন….মাইশা? আমি তো আর মরে যাইনি…”
.
”মরার তাহলে খুব ইচ্ছা ছিল না?আমি বারবার বলেছি আয়াত হাইস্পীডে গাড়ি চালিয়ো না।কিন্ত আমার একটা কথাও তুমি শুনো?আমি তোমায় ভালোবাসিনা বলে আমায় শাস্তি দিতে চাচ্ছো তাই না?এজন্যই আদ্রাফের মতো তুমিও আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছিলে….”
.
”আমি……”
,
”খবরদার…..আর একটা কথাও না।অনেক রাগ না আমার উপর?এক কাজ করো মেরে ফেলো আমায় । তবুও আদ্রাফের মতো হারিয়ে যেয়ো না প্লিজ….আয়াত আমি তাহলে আর বাঁচতে পারবো না।”
.
একথা বলে আয়াতের সারামুখে নিজের ঠোঁটের স্পর্শে ভরিয়ে দিতে থাকে সে।আয়াত এখনো বিস্ময়ে বসে আছে।মেয়েটিকে এতটা পাগলামি করতে কখনোই দেখেনি সে।মাইশার এই ম্যাচুরিটির ভীড়েও কখনো যে বাচ্চাদের মতো পাগলামি লুকিয়ে ছিলো আয়াত তা কখনোই জানতো না।
.
.
ব্যাস্ত সড়ক দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়িটি।সামনের সিটে নুহাশ ড্রাইভ করছে আর পাশে বসে আছে মাইশা।পেছনেই বসে আছে আয়াত আর আরিয়াপু।আয়াত আরিয়াপুর কানে ফিসফিসিয়ে বলে…
.
”আপু…মাইশা কি এমনই ছিলো চুপচাপ ছিলো?”
,
আরিয়া বড় বড় চোখ করে তাকায় আয়াতের দিকে।যেনো বড় কোনো ভুল কথা বলে ফেলেছে সে।আয়াতের কানে ফিসফিসিয়ে বলে….
.
”আগে আমি জানতাম শুধু তুই পাগল…কিন্ত তোর সঙ্গে যে তোর বউকেও পাগল বানিয়ে ফেলবি তাকি জানতাম?মাইশা যখন থেকে জানছে যে তোর এক্সিডেন্ট হইসে হসপিটাল পুরা মাথায় তুলে ফেলসিলো।তুই বিশ্বাস করবি কিনা জানিনা….পুরাই হাইপার হয়ে গিয়েছিলো সে।পরে আব্বু না পেরে ওকে কষে দুইটা থাপ্পড় মারে।”
.
”শ্বশুড় হয়ে নিজের ছেলের বউকে মারলো?”
.
”ছেলের বউ হয়ার আগে মাইশা খালামণির মেয়ে।আর তাছাড়া মাইশাকে কেউ থামাতে পারছিলো না।আব্বু থাপ্পড় দেয়ার পরপরই একেবারে শান্ত হয়ে এককোণায় বসে থাকে ও।পুরাই অবস্থা খারাপ ছিলো।পরে আব্বুই ওর কাছে গিয়ে আগলে নেয় ওকে।”
.
আয়াত এই সবকিছু নীরবে শুনতে থাকে।কারন সে জানে মাইশার এরকম করার কারন।আদ্রাফের মতো ওকেও হারানোর ভয় জেঁকে বসেছিলো মাইশার মনে।তবে এখন সেও কি তার অব্যাক্ত অনুভূতি আয়াতের সামনে প্রকাশ করতে চলছে?
.
.
*****
”খালামণি আজ থেকে আমি আয়াতের সাথেই থাকবো।”
.
একথা শুনে খাবার ছেড়ে সবাই নজর দেয় মাইশার দিকে। আর আয়াত তো কাশতে কাশতে খাবার মাথায় তুলে ফেলেছে।
.
”কিন্ত বাবা….তোমাদের তো হঠাৎ করে বিয়ে হয়েছিলো।আমরা বলছিলাম কি বড় করে অনুষ্ঠানটি….”
.
”না খালামণি….বিয়ে তো বিয়েই।একজন মানুষকে কয়বার বিয়ে করতে বলো তুমি?আমার পরীক্ষাও শেষ তাছাড়া অনুষ্ঠান হলে হবে কিন্ত এখন আমি আয়াতকে কিছুতেই একা ছাড়বো না।প্লিজ খালামণি।”
.
দুষ্টু হাসি হাসে আয়াত। এ যেন বিনা মেঘে বজ্রপাত হয়ে গেলো।মাইশাকে চোখ টিপ মারতেই মাইশা চোখ ঘুরিয়ে নেয়।বিড়বিড় করে বলে ওঠে….
.
”লুচুবাঘ কোথাকার।মরে গেলেও এর লুচ্চামি কমবো না।”
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন
পর্ব:৩০
.
জানালার পর্দার ফাঁক দিয়ে আছড়ে পড়ছে সকালের মিষ্টি রৌদ্দুর।রৌদ্দুরের অগোছালো রশ্মিটা চোখে পড়তেই চোখ কুচকে ফেলে মাইশা।আড়মুড়িয়ে অন্যদিকে কাঁত হয়ে শোয়ার চেষ্টা করে সে।কিন্ত আফসোস ! আয়াত এতো জোড়ে তাকে জরিয়ে ধরে আছে যে ঠিকমতো নড়াচড়াও করতে পারছে না সে।কেউই বলবে না যে এই ছেলে অসুস্থ, শরীরের জোর যেন এখনো মাইশার থেকে বহুগুনে বেশি।
.
মাইশা এবার আয়াতের কাছ থেকে আস্তে করে ছাড়িয়ে নিতে চায় নিজেকে।কিন্ত আয়াত যেন আরও নিবিড়ভাবে মিশে যায় তার সাথে।মাইশা চোখ তুলে তাকায় আয়াতের ঘুমন্ত চেহারার দিকে।তার ফর্সা মুখে বড় বড় চোখের পাপড়িগুলো যেন তার কাছে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ লাগছে।তার ভাবতেই এখন অবাক লাগে যেই ছেলেটাকে তার সবচেয়ে অসহ্য লাগতো….যে সারাদিন তাকে অতিষ্ঠ করে তুলতো সেই এখন তার স্বামী ; যার ভালোবাসায় কোনো খুঁত নেই।
.
মাইশা আয়াতের কপালে আলতো করে নিজের ঠোঁট বুলিয়ে নেয়।আয়াতের কাছ থেকে সরে আসতেই আয়াত তার একহাত নিয়ে আরও কাছে নিয়ে আসে মাইশাকে।চোখটা বন্ধ থাকলেও মুখে এক মুচকি হাসি।
.
”আমার মতো মাসুম বাচ্চাকে একা পেয়ে তুমি আমার সুযোগ নিতে চাচ্ছো। This is not fair মাইশুপাখি !”
.
ভ্রু কুচকে ফেলে মাইশা।আয়াত যে জাগনা ছিল তার এটা ধারনাই ছিলো না।কিছুটা বিব্রতকর পরিস্থিতে পড়ে গিয়েছে যে।কেননা সে জানে….আয়াতের কাছে ধরা পড়ে গিয়েছে এখন ; আয়াত এবার যেই কথাগুলো বলবে সেগুলো ভাবতেই নুইয়ে যাচ্ছে সে।
.
”তুমি? আর মাসুম বাচ্চা? আমি তোমার সুযোগ নিচ্ছি…তো কিভাবে?”
.
চোখটা খুলে মাইশার দিকে তাকায়।মাইশার ভ্রু কুচকানো আর বিব্রতকর চেহারা দেখে শয়তানি হাসি দিয়ে বলে ওঠে….
.
”এইযে আমার কপালে কিস করে…..কিস করসো তো করসোই শুধু কপালে করলে কেন?ঠোঁটেও করতে…..”
,
এবার তড়িঘড়ি করে আয়াতের ওপর থেকে উঠে পড়ে সে।এই ছেলে চরম মাত্রার অসভ্য।এখন এখানে আর কিছুক্ষণ থাকলে মাইশাকে পাগল বানিয়ে ছাড়বে সে।মাইশা ওয়াশরুমে যেতেই আয়াত বলে ওঠে……
.
”মাইশা?”
,
মাইশা পেছনে ঘুরে আয়াতের দিকে তাকায়।খাটে হেলান দিয়ে মিষ্টি কন্ঠে বলে ওঠে….
”আজকে হলুদ রঙের ড্রেস পড়বে।তোমায় এই রঙে দেখতে অনেক ভালোলাগে…..”
.
আয়াতের এই ছোট ছোট মিষ্টি আবদারের মুখে কখনোই পড়েনি সে। এটাই হয়তো কবুল বলার ক্ষমতা।প্রিয় মানুষের মুখে ছোট ছোট ভালোলাগার কথা শুনে অজান্তেই ভালোলাগে সবার মনে।মাইশাও তার ব্যাতিক্রম কোনো কিছু না।মাইশা হয়তো এখনো আয়াতকে মুখ ফুটে বলেনি। কিন্ত সে যে আয়াতকে নিজের মনে জায়াগা দিয়েছে এটা আয়াত আর মাইশা দুজনেই জানে।আর এটাই মাইশার ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।
.
.
আয়াতের ধমক খেয়ে দুপুরের দিকে ড্রইংরুমে মুখ ফুলিয়ে বসে আছে মাইশা।আয়াত একপাশে পায়ের ওপর পা তুলে আপেল খাচ্ছে।ডানহাতের জয়েন্টে হাল্কা ব্যাথা থাকার কারনে আয়াত এখনো হাতটা ঠিকমতো নাড়াতে পারেনা।এদিকে মাইশা রান্নাঘরে খালামণির সাথে রান্না করতে গিয়েছিলো বলে আয়াতের কড়া ধমক খেয়ে এখন চুপচাপ বসে আছে।আয়াত সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ না করে টিভি ছেড়ে ”Chennai Express” মুভি দেখছে।
.
ওই তামিল ছেলেগুলোর হাতের ওই ভয়াবহ রূপের তলোয়ারগুলো দেখে মাইশারও মনে চাচ্ছে শাহরুখ খানের রিপ্লেসমেন্টে এই আরহাম আয়াতকে রাখতে।কিন্ত কিছুক্ষণ পরে নিজের মাথায় গাটি মেরে বলে এসব কি আবোল-তাবোল ভাবছে সে….।
.
”আমায় মার্ডার করার কথা ভাবা বন্ধ করে আমার সেবার কথা ভাবো।কি মনে করো রান্নাঘরে যাইতে দেইনাই দেখে কোনো কাজ করতে দিবো না?এখন লক্ষী মেয়ের মতো আমার রুমটা গুছিয়ে আসো।You no what অগোছালো রুম আমি মোটেও পছন্দ করি না।”
,
মাইশা অসহায় চোখে আয়াতের দিকে তাকায়।আয়াত ওর দিকে না তাকিয়ে দীপিকার শাহরুখ খানকে লাথ্থি মারার সিন দেখে হাসতে হাসতে বলে ওঠে…..
.
”তোমায় অসহায় ফেস এখন আমার কিছুই করতে পারবে না।জলদি যাও মাইশু,…..আরও কাজ করতে হবে।”
.
একরাশ বিরক্তি নিয়ে মাইশা উঠে সোফা থেকে রুমে যেতে যেতে বলে ওঠে….
.
”শাহরুখ খানের লাথ্থি খাওয়ার সিন দেখে হাসি উড়াচ্ছিস ব্যাটা? মনটাতো চাচ্ছে তোরেও উষ্টা মাইরা ফালায় দেই।”
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:৩১
.
আয়াতের চড়ের ভয়ে টানা এক ঘন্টা ঘর পরিষ্কার করে নিজেকে এখন বেঁদের মেয়ে জোছনা মনে হচ্ছে মাইশার।আয়াত যতই পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকুক না কেন ; কোনো কিছুই সে গুছিয়ে রাখে না।আর এই সুযোগে মাইশাকে দিয়ে সব কাজ করিয়ে নিলো বলে মাইশার মন চাচ্ছে আয়াতকে উষ্টা মেরে উগান্ডায় পাঠিয়ে দিতে। কিন্ত মন যা বলে সবসময় তা করা যায় না।তাই ক্লান্তির কারনে এক লাফে বিছানায় শুয়ে পড়লো সে।
.
.
হাল্কা হাল্কা ঘুম ভর করতেই মাইশা তার ঠান্ডা শরীরে উষ্ণ কোনো কিছু অনুভব করতে পারতেই।কিন্ত চোখ খুলতে তার মোটেও মন চাচ্ছে না।যখন দেখলো সে তার দম বন্ধ হয়ে যাবার মতো অবস্থা বিরক্তি নিয়ে চোখ খোলে সে।কিন্ত চোখ খোলতেই যখন সে আয়াতকে দেখে তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়।
.
আয়াত কোলবালিশের মতো তাকে জরিয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবিয়ে আছে।মাইশা আস্তে করে সরে আস্তে নিলেই আয়াত ধমকের স্বরে বলে ওঠে…..
.
”সবসময় পালাই পালাই না করলে ভালোলাগে না তোমার।কই একটু বউকে আদর করবো কিন্ত যেই দারোগা বউ আমার কপালে জুটেছে জীবনেও আদর করতে পারবো না?”
.
”হুহ…যখন কাজ করাইসো তখন মনে ছিলো না?”
.
”কেন?কাজ না করালে আদর করতে দিতে?”(ভ্রু নাচিয়ে)
.
অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে মাইশা।হুটহাট আয়াতের এমন কাজকর্মে আর কথাবার্তায় কি প্রতিক্রিয়া করা উচিত মাইশার তা অজানা।আয়াত তা দেখে লম্বা একটা শ্বাস নেয়।মাইশার কোমড় জরিয়ে গলায় মুখ ডুবিয়ে বলে…..
.
”ভালোবাসো আমায়?”
.
মাইশা মিহি কন্ঠে বলে, ”হুম।”
.
”তো? এত অপ্রস্তুত হয়ে পড়ো কেন? আমি কখনোই তোমায় বলবো না আমায় জোর করে মেনে নাও….”
.
”এমন কিছুই না আয়াত।”
.
বিনিময়ে মুচকি হাসে আয়াত। আয়াতের মুচকি হাসিটা বরাবরই মাইশার প্রিয়। আয়াত যখন হাসে ডান গালে সুন্দর একটি ভাঁজ পড়ে যা আয়াতের ছোট ছোট চাপ দাঁড়ির ভীড়ে আরও মারাত্নক লাগে।পড়ন্ত দুপুরে আয়াতের এই হাসিটা দেখে ক্লান্তির বিন্দুমাত্র রেশ এখন দেখা যাচ্ছে না মাইশার মনে।আয়াত হঠাৎ দুষ্টু হেসে বলে ওঠে…..
.
”আল্লাহর কসম মাইশা…আমি যদি বড় কোনো ভুল করে ফেলি না তার দায়ী শুধুমাত্র তুমি হবে।”
.
আয়াতের কথা শুনে বোকার মতো ভাবতে থাকে ওর কথার মানেগুলো।আয়াত তারপর কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে….
.
”পেটের কাছে কামিজটা ঠিক করো।”
.
সাথে সাথে আয়াতকে সরিয়ে নিজের জামা ঠিক করে নেয়।আয়াত বামহাতে ভর দিয়ে মাইশাকে দেখে যাচ্ছে।মাইশা রাগী চোখে তাকাতেই আয়াত উঠে আলমারি থেকে একটা রেড চেক শার্ট আর গ্রে জিন্স বের করে।
.
”শার্ট-প্যান্ট বের করলে কেন?”
.
”বাইরে যাবো তাই……”
.
”আয়াত , এখন না। তুমি এখনো ঠিক হওনি।হঠাৎ বাইরে যাচ্ছো কেন?”
.
”যেতেই হবে। ইমপর্টেন্ট কাজ আছে।তাছাড়া সমস্যা হবে না।নুহাশ ভাইয়ার সাথেই যাচ্ছি। ক্যাফেতে ওয়েট করবে আমার জন্য।”
.
মাইশা পরে আর কিছু বলে না। তারকাছে এখনো সবকিছু ঝাপসা ঝাপসা লাগছে।আয়াতের কাজকর্ম বরাবরই তার মাথার উপর দিয়ে যায়।তাই এ ব্যাপারে বৃথা মাথা ঘামলো না সে।
,
,
সন্ধ্যের দিকে আরিয়াপুর সাথে বসে মাইশা গল্প করতে ব্যাস্ত।খালামণি রান্নাঘর থেকে চা বানিয়ে সবেমাত্র এদিকে এসেছে।খালামণিদের সাথে ড্রইংরুমের পাশের ছোট বাগানটি থেকে ঠান্ডা হাওয়া এসে পরিবেশটা মোহময় করে তুলেছে।সাথে রয়েছে গরম গরম দুধ চা।রাত এখনো সম্পূর্ণ নামেনি দেখে আকাশের লালচে আভাটা এখনো জানালা দিয়ে দেখা যাচ্ছে।হঠাৎ মাইশার মোবাইলে একটা কল আসে।মাইশা দেখে আয়াতের কল। আগের দুইবারের মতো এবার আয়াতের নাম্বার সেভ করতে ভুলেনি সে।ফোন রিসিভ করতেই ভেসে আসে আয়াতের একরোখা কন্ঠ….
.
” মাইশা ! একটু রেডি হয়ে বাহিরে আসো তো।আমি তোমার জন্য বাইরে ওয়েট করছি…..জলদি।”
.
”আচ্ছা…..কিন্ত………..”
.
কল কেটে দেয় আয়াত। মাইশা বুঝতে পারছে না এই সন্ধ্যার সময় এমন কি কাজের জন্য রেডি হয়ে বাইরে যেতে বলছে আয়াত?
.
.
সন্ধ্যে নেমে রাত হয়েছে।গাড়িটি আয়াতের বাসার সীমান্ত থেকে অনেক দূরে।গাড়ি ড্রাইভ করছে নুহাশ।আয়াতের ডান হাতে এখনো ব্যাথা আছে বলে সে গাড়ি ড্রাইভ করতে পারে না।মাইশা রাস্তাটা চিনতে পারছে । উত্তরার রাস্তা এটি। সেই চিরচেনা জায়গার কথা স্মরণ হতেই বুকটা ধক করে ওঠে মাইশার।তার চোখের সামনে আদ্রাফের প্রতিটা স্মৃতির কথা ভেসে উঠছে।
কাঁপাকাঁপা গলায় মাইশা নুহাশের কাধে হাত দিয়ে বলে ওঠে…..
.
”ভা-ভাইয়া____আ-আমরা ওদিকে যাচ্ছি কেন? তুমি জানো না ওখানে আমি যেতে চাই না ?”
.
”relax মাইশা…..কেন যাচ্ছি আস্তে আস্তে সবই জানতে পারবে।”(আয়াত বলে)
আদ্রাফের কথা ভাবতেই চোখযুগল চিকচিক করে ওঠে তার।তাই আস্তে করে আয়াতের কাঁধে নিজের মাথা এলিয়ে দেয়।আয়াত তা দেখে দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে।মাইশাকে এতটা দুর্বল কখনোই দেখতে চায় না তাই সাহস করেই তার অতীতের সম্মুখীন তাকে নিয়ে যাচ্ছে আয়াত।
.
মাইশাদের উত্তরার সেই বাড়িটির সামনেই গাড়ি থামায় নুহাশ।সবাই গাড়ি থেকে নেমে আসে।আজ প্রায় ৪ বছর পরে মাইশা এই বাড়ির সামনে দাঁড়ালো মাইশা।দোতলায় আদ্রাফের বারান্দার সাথে কাছাকাছি থাকা নিজের ঘরের বারান্দার দিকে তাকিয়ে থাকে সে। আগে তো কত রাত আদ্রাফের গান শুনে নির্ঘুমে রাত কাটিয়েছে তা অগণিত।কিন্ত এখন এসব কিছু শুধু অতীতের তুচ্ছ স্মৃতি।
.
”এখানে এসেছি কেন আমরা?”
.
”চলো আমার সাথে।”
.
আদ্রাফরা আগে যে ফ্ল্যাটটিতে থাকতো এর সামনে আসতে খনিকটা অবাক হয় মাইশা। মনে চলছে তার অবাধ প্রশ্নের খেলা।দরজায় কলিংবেল বাজাতেই যে দরজা খুলে তাকে দেখে বিস্ময়ের আরও এক ধাপ উপরে উঠে যায় সে।মিহির আপু দাঁড়িয়ে আছে।
আগের চেয়ে শুকিয়ে গেছে সে। উজ্জলতাটাও অনেকাংশে কমে গিয়েছে। মিহির বলে ওঠে…….
.
”কেমন আছো মাইশা?”
.
.
#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে