#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:২৪
.
ঢাকায় এসেছে চাঁদপুর থেকে সবাই আজ ৪ দিন হলো। আয়াত অফিসে জয়েন হয়েছে তাই সারাদিন কাজের মধ্যেই দিন যাচ্ছে। আবার মাইশার এবার অনার্সের লাস্ট সেমিস্টারের পরীক্ষা চলছে।মাইশার পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরপরই দুজনের বিয়ের অনুষ্ঠান করা হবে। ততদিন ওরা দুজনই আলাদা থাকবে।
.
এখন রাত ১২:০০টা বাজে। সব পড়া রিভাইস করে মাইশা প্রস্তুতি নিচ্ছে ঘুমানোর।হঠাৎ টেবিলের মধ্যে ভোঁ ভোঁ করে কেমন যেন একটি শব্দ উৎপন্ন হলো।মাইশা দেখে তার ফোন বাজছে। ভাইব্রেট করার কারনে এমন শব্দ উৎপন্ন হচ্ছিলো।মাইশা দেখে আননোন নম্বর থেকে একটা কল।একটু অবাক হয় সে।
ভাবতে থাকে ফোন তুলবে না-কি তুলবে না।এর মধ্যে ফোনে পরপর তিনবার মিসকল উঠলো।এবার কল তুলে সে।
,
কল তোলার সাথে সাথে মোবাইলের ওপাশ থেকে একটা উচ্চস্বর ভেসে আসে তার কানে…..
.
”বার বার কল করছি রিসিভ করছো না কেন?”
.
চোখ বড় বড় করে ফেলে মাইশা। এটাতো আয়াতের গলা। একটু বললে ভুল হবে অনেকটাই রেগে আছে সে।আমতা আমতা করে বলে…
.
”আ-আ-আয়াত মা-মানে তুমি? স-সরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি।”
.
”সিরিয়াসলি মাইশা? আজ ৬ মাস হয়ে এলো আমি বাংলাদেশে এন্ড ইভেন নাও আমি তোমার হাজবেন্ট ! তুমি এখনো আমার নাম্বার সেভ করোনি?”
.
মাইশা চুপ হয়ে থাকে। এখন কোনো কিছু বললে আয়াত আবার রেগে যাবে।
.
”নিচে আসো রাইট নাও….!”
.
”এত রাতে আমি আসবো না। কাল আমার এক্সাম আছে।”
.
” তোমায় কিডন্যাপ করে নিচ্ছি না…..লিসেন মাইশা,আমি আজ সারাদিন ল্যাবে কাজ করেছি। বলতে গেলে অনেক টায়ার্ড……প্লিজ তুমি নিচে আসো।”
.
আয়াতের প্রতিউত্তর শুনে মাইশা আর কথা বাড়ায় না। একটি সোয়েটার গায়ে পড়ে নিচে চলে যায় সে।
.
কলোনির আশেপাশে মানুষজন কম।ফ্ল্যাটের ওয়্যাচম্যান চেয়ারে পড়ে পড়ে ঘুমোচ্ছে।মাইশা একটা সিম্পল স্যান্ডেল পড়ে পা টিপে টিপে যাচ্ছে গেটের বাইরে।বুকের ধুকধুকানিটা ক্রমশ তার বেড়েই চলছে। আগে আদ্রাফের সাথেও কখোনো এভাবে দেখা করেনি সে। তবে তখনকার অনুভূতি আর এ অনুভূতি অনেক ভিন্ন। তখন মনে একটা ভয় থাকতো তবে এখন সেই ভয়টা আর নেই।
.
রাস্তার ছিমছিমে লাইটের আলোতে গাড়িতে বসে থাকা ক্লান্ত আয়াতকে আবছাভাবে দেখতে পারছে মাইশা।গাঢ় নীল রঙের শার্ট পড়েছে সে।মুখে ক্লান্তির ছাপ থাকলেও মুখে রয়েছে এক চিলতে হাসি।চুলগুলোও এলোমেলো।শার্টের উপরের দুটি বোতাম খুলে রেখেছে যাতে কম খারাপ লাগছে না তাকে।
.
মাইশা এসবকিছু পর্যবেক্ষণ করতে করতে এগিয়ে যায় আয়াতের দিকে।মাইশা চোখযুগল ছোট ছোট করে বলে….
.
” এত রাতে কাজ শেষ করে কষ্ট করে এখানে আসলে কেন? এখন রেস্ট নেওয়া উচিত না তোমার?”
.
আয়াত কিছু না বলে ইশারায় গাড়িতে বসতে বলে তাকে।মাইশা একটু সংকোচবোধ করলেও পরে গাড়িতে বসে পড়ে।আয়াত আর কিছু না বলে টুপ করে মাইশার গালে চুমু খেয়ে মাইশার কাধে মাথা রেখে চোখ বুজে থাকে।মাইশা আয়াতের এহেন কাজে একটু অবাক হয় সে।তার হাতটা আপনাআপনি গালে নিয়ে যায় সে।
.
”আমি কিস করেছি তোমায়…..এত রিয়্যাক্ট করার কি হলো?”
মাইশার কাধে মাথা রেখে চোখ বুজে আয়াত বলে ওঠে।
.
আয়াতের ক্লান্তিমাখা গলা শুনে মাইশা কিছু না বলে চোখটা ঘুরিয়ে আয়াতের দিকে তাকায়।আয়াত আবারও ঘুমুঘুমু কন্ঠে বলে ওঠে…..
.
”মাইশুপাখি….জানো আজ কাজ করার সময় তোমার কথা খুব মনে পড়েছে। তোমার সাথে কতদিন ধরে দেখা করতে পারছি না তাই আজ দেখা না করে পারলাম না। আগে তো সিঙ্গেল ছিলাম তাই কষ্ট হতো না কিন্ত এখন তো আর আগের মতো আমি নাই…..(মাইশার বাহু জরিয়ে),,,,,বউ থাকতেও একা ঘুমাতে হয় ; এর থেকে কষ্টের আর কি আছে?”
.
মাইশা কিছু না বলে মুচকি হাসে। আয়াতের কাজকর্ম দেখে তার যেমন হাসি পাচ্ছে তেমনি অজানা এক ভালোলাগা কাজ করছে।তবুও মুখটাতে একটু রাগী ভাব নিয়ে বলার চেষ্টা করে…..
.
”একটু আগে কেন করলে ওটা’?”
.
আয়াত মাথাটা উঠিয়ে মাইশার গালে আবার চুমু খায়।তারপর মাইশার কোলে মাথা রেখে বলতে থাকে……
.
”একবার না একশবার করবো ! আমার বউকে আমি কিস করেছি তোমার কি? আর আমার বউয়ের যেই গাল না…পুরাই পাকা টমেটো ! মন টা তো চায় টুস করে কামড় দিয়ে খেয়ে ফেলি।”(মুখে দুষ্টু হাসি রেখে)
.
আয়াতের লাগামহীন কথা শুনে লজ্জায় মিহিয়ে যায় মাইশা।আয়াত তা দেখে মুখে বাকা হাসি রেখে বলে….
.
”মাইশা ! তুমি কি always আমায় পাগল বানানোর ধান্দায় থাকো?”
.
”মানে….?”
.
আয়াত নেশাক্ত চোখে তাকায় মাইশার দিকে।মাইশা আয়াতের এরকম দৃষ্টি দেখে বড়সড় একটা ঢোক গিলে।আয়াত আবার চোখ বন্ধ করে বলে….
.
”উহ্……মাইশা তোমার অগোছালো চুল , কথায় কথায় ঠোঁট কামড়ানো , চোখ ছোট ছোট করা…ট্রাস্ট মি… পাগল করে দেয় আমায় । মন চায় বড়সড় কোনো একটা ভুল করে ফেলি।”
.
মাইশাও যেনো আয়াতের কথার গোলকধাধায় পড়ে গিয়েছে। একরাশ অন্যরকম মাদকতা আছে আয়াতের কন্ঠে।আয়াত আবার বলে উঠে……
.
”আগামীকাল না আরিয়াপুর জন্মদিন ! আসছো তো?”
.
”হুম।”
.
আয়াত মাইশার কোল থেকে উঠে বাইরে বেরিয়ে আসে।মাইশাও গাড়ি থেকে নেমে ঘরে যাওয়ার জন্য রওনা দেয়।
.
”মাইশু?”
.
মাইশা পেছনে ঘুরতেই আয়াত তাকে জাপ্টে নিজের আবদ্ধে নিয়ে নেয়।মাইশার মনে আলোড়ন সৃষ্টি করছে আয়াতের এমন করাতে।হ্যাঁ , ভালোবাসতে শুরু করেছে সে আয়াতকে। আয়াত সবসময় মাইশাকে বিরক্ত করতে চাইলেও অজান্তেই মাইশার মনে তার জন্য অনুভূতি তৈরি করেছে যা অনুভব করতে পারছে মাইশা।
মাইশাও আলতো হাতে আয়াতের পিঠে নিজের হাত নিয়ে যায়।
.
”অনেক রাত হয়েছে আয়াত। কাল সকালে তোমার আবার অফিস যেতে হবে। বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো।”
.
মাইশার চুলে মুখ ডুবিয়ে আয়াত মিহি কন্ঠে বলে ওঠে…
.
”হুম….আজ ছেড়ে যাচ্ছি।তবে যখন সুযোগ পাবো না তবে কিন্তু আর ছাড়বো না। Love you মাইশুপাখি !”
.
.
#চলবে
#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন (মাইশা)
পর্ব:২৫
পারিবারিক কোনো অনুষ্ঠানে মানুষের ভীড়ে যখন কেউ কোনো মেয়ের কোমড় আকড়ে ধরে ঘুরতে থাকে তখন কোন মেয়েরই না অসস্তি লাগে?মাইশাও তার ব্যতিক্রম কোনো কিছু নয়। আরিয়াপুর জন্মদিনের জন্য খালামণিদের বাসায় আসছে পর থেকেই আয়াতও তার সাথে চুম্বকের মতো ঘুরছে।
.
এ দৃশ্য দেখে সবাই মিটমিট করে হাসলেও কেউ কিছুই বলে না।মাইশা এবার বিনয়ী কন্ঠে আয়াতকে বলে,
” আয়াত….সবার সামনে এভাবে আমার কোমড় ধরে ঘুরছো কেন?সবাই কি ভাবছে বলো তো?”
.
মাইশার দিকে না তাকিয়েই আয়াত মিহি কন্ঠে বলে….
.
” ভাবছে যে made for each other❤️”
.
কিঞ্চিত নিজের ভ্রুযুগল কুচকে ফেলে মাইশা। এই ছেলেটা সবসময় নিজের মনমর্জিতে চলে যা মাইশার মোটেও পছন্দ না।তবুও আয়াতকে মানামোর জন্য সে innocent face করে বলে….
.
“তোমার made for each other তোমার কাছেই রাখো।ভাবছিলাম…exam শেষ করে আরিয়াপুর জন্মদিনে সেই মজা করবো কিন্ত তা কি আর করতে পারবো?আমারও তো করতে ইচ্ছে করে তাই না আয়াত…..🥺”
.
আয়াত সন্দিহান চোখে তাকায় মাইশার দিকে।কিছু একটা ভেবে নাকা হাসি দিয়ে মাইশার কানে ফিসফিসিয়ে বলে…..
.
“আপতত এখন তোমার এই cute puppy face এ আমি গলছি না মাইশুপাখি।আমার সাথে থাকবে মানে আমার সাথেই থাকবে।একটু উল্টোপাল্টা হলে তার reaction তোমার ঠোঁটে পড়বে।এখন তুমি যদি চাও….😁”
.
মাইশা বড়সড় একটা ঢোক গিলে। এ তো হাসিমুখে সাক্ষাৎ warning দিয়ে দিলো।
.
.
আরিয়াপুর জন্মদিনের জন্য ডার্ক চকলেট কেক নিয়ে এসেছে নুহাশ ভাইয়া।সেই কেক কাটার পর এখন বাগানে বসে বারবিকিউ করার আয়োজন চলছে।এতক্ষণ বাহিরের অতিথিরা থাকলেও এখন পরিবারের মানুষরাই এই বারবিকিউ পার্টি করছে।আয়াতের কিছু বন্ধুবান্ধব আর ওর চাচ্চুর পরিবারও আছে এখানে।তবে আয়াতের চাচাতো ভাই অনিককে মাইশার কেন যেন ভালো ঠেকাচ্ছে না।বিষয় টা ওর খালামণি একাধিকবার বলেছেও যে ও অনেকটা বখাটে টাইপের ; শুরু পরিবারের মানিষ বলেই তাকে আসতে বলা হয়েছিল।
.
আর আয়াত বোধহয় তার জন্য ই মাইশাকে একা ছাড়ছে না।মাইশাকে সে ভরসা করে কিন্ত ওই অনিককে মোটেই ভরসা করে না।
.
এদিকে বারবিকিউ করার জন্য আয়াত আর ওর বন্ধুরা সব আয়োজন করছে।মাইশা আর আরিয়াপু আর আয়াতের দুজন মেয়ে বন্ধু বসেছে একসাথে।
.
“মাইশা এভাবে চুপ করে বসে আছিস কেন?” (আরিয়াপু)
.
“এভাবেই আপু…..”(মাইশা)
.
“আরে সত্যি কথা টাই বলো না মাইশা মে আয়াত তোমায় কি বলেছিল? আমি কিন্তু সব শুনেছি।”
বলেই আয়াতের এক বান্ধবী দুষ্টু হাসি হাসলো।
লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে মাইশার। আয়াতের ওই ভয়ংকর কথাগুলোর কথা ভাবতেই অদ্ভুত অনুভূতি জেগে উঠেছে তার মনে।
.
“থাক্ ! আর লজ্জা পেয়ে কোনো লাভ নেই।যতদিন এই আয়াতের পাল্লায় তুমি আছো ততদিন ওর লাগামহীন কথার মুখে পড়তে হবে…. বুঝতে পেরেছো?”
.
.
খাওয়া দাওয়া সেরে সবাই এখন ক্লান্ত। কেউ মোবাইল চালাচ্ছে তো কেউ নীরবে এককোণে বসে আছে।মাইশা এখন একটু রান্নাঘরে গিয়েছে পানি খেতে। হঠাৎ করে কেউ পেছন থেকে বলে উঠলো
“এই শীতে পানি খাওয়া ধরেছে তোমার?…..যদিও স্বাভাবিক! তুমি যা গরম জিনিস ! তোমায় দেখে আমারই তো তেষ্টা পেয়েছে।”
.
এমন বিশ্রী ধরনের কথা শুনে অবাক হয়ে পেছনে ঘুরে মাইশা।দেখে অনিক তার দুই হাত ভাঁজ করে দেয়ালে দাঁড়িয়ে মাইশা কে পর্যবেক্ষন করতে মগ্ন। একটা মানুষ যে কতটা জঘন্য হতে পারে তা সেই মানুষ টার চোখ দেখেই বোঝা যায়। তবুও ভদ্রতার খাতিরে কিছুই বলতে চাচ্ছে না মাইশা।
.
” এ কেমন কথা অনিক ভাই?”
.
“কেমন কথা আবার…..যা সত্যি তাই বললাম।আমি আবার কথা চেপে রাখতে পারিনা।”
.
“তাই নাকি অনিক ? আগে তো তা জানতাম না!”
.
আয়াতের কন্ঠ শুনে সেদিকে তাকায় দুজনে। আয়াত স্বাভাবিক ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে। শুধু মুখে রয়েছে এক চিলতে ক্রুদ্ধ হাসি। আয়াত আস্তে করে অনিকের কাছে এগিয়ে ওর শার্টের কলার ঠিক করতে থাকে। তারপর বলে ওঠে;
.
” দেখ ভাই অনিক…..অর্ডারকৃত জিনিসে নজর দিতে হয় না। আর জিনিসটা যদি ডেলিভারি হয়ে যায় তবে তো কোনো প্রশ্নই উঠে না।এখন চুপচাপ ভদ্র ছেলের মত এখান থেকে কেটে পড়। আর না হলে আমি যে কি করতে পারি তা ভালোমতোই তুই জানিস।”
.
বড়সড় একটা ঢোক গিলে মাইশা। আয়াত এর কথার ধরন এই বোঝা যাচ্ছে ঠিক কতটা রেগে আছে সে।অনিক আয়াতের কাছ থেকে কলারটা ছাড়িয়ে আস্তে করে চলে যায়।অনিক যাওয়ার পর সাথে সাথেই মাইশার এক হাত চেপে রান্নাঘরের থেকে বাগানের এক খালি পাশে নিয়ে মাইশা কে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে।
.
রাগে আয়াতের চোখগুলো টগবগ করছে। আর নাকটাও অস্বাভাবিক ভাবে লাল হয়ে আছে।মাইশা রং হাত দুটো আরও জোরে চেপে বলে ওঠে;
.
“একা ওদিকে গিয়েছো কেন?আমি কি মরে গিয়েছিলাম?”
মাইশা আয়াতের একম করাতে একটু ভয় পাচ্ছে।
.
“আমি বুঝতে পারলাম না যে আমার কথাটা শুনলে তোমার কি এত প্রবলেম হয়?কি …..ওই rascalঅনিকের কথা শুনে এখন ভাল্লাগছে?”
.
মাইশা এখন কি প্রতিক্রিয়া দেখাবে তা তার অজানা। কেননা সে তার ভুলটা একটু হলেও বুঝতে পেরেছে।
.
“কেউ তখন তোমায় নিয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে না আমি মাথা ঠিক রাখতে পারিনা মাইশা। তবু ও তুমি তো আবার আমার কথা শুনবে না।ওই অনিক আমার জিনিসটা ছুঁতে চেয়েছিলো তাই না?ওর ব্যবস্থা করার আগে আমি তোমার ব্যবস্থা করছি।”
.
আয়াত একথা বলে মাইশার কাঁপা কাঁপা ঠোঁট জোড়ার দিকে এগিয়ে যেতেই চোখ খিচে বন্ধ করে নেয় মাইশা।
.
.
চলবে!