Monday, October 6, 2025







বাড়ি"ধারাবাহিক গল্প"রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-১৬+১৭

রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-১৬+১৭

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:১৬
.
দুপুরের তপ্ত রোদ পেরিয়ে বিকেলের আভাস জানাচ্ছে বাইরের মিষ্টি হাওয়া। নিজেদের বাড়ির সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আয়াতের জন্য অপেক্ষা করছে মাইশা। এত সুন্দর আবহাওয়াতেও মুখে তার বিরক্তির ছাপ। হবেই না কেন;আজ সকালে হুট করে তার পরিবার মাইশাদের নানুবাড়ি চাঁদপুর যাচ্ছে বলে জানালো। মাইশার আম্মু-আব্বু , খালামণি-খালুজান , আরিয়াপু আর নুহাশ ভাইয়া এক গাড়িতে করে হুট করে চলে গেলো আর মাইশাকে জানালোও না।
.
এমনিতেও গতকাল আয়াতের সাথে সারারাত ঘুরে ঘুমোতে পারেনি আবার যখন দুপুরে ঘুম থেকে উঠলো তখন দেখলো তারা অলরেডি যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়ে ফেলেছে। আর মাইশাকে বলে ওই লুুচুবাঘ আয়াত আসবে তাকে নিতে।
.
এখন দুপুর গড়িয়ে বিকেল হলো কিন্তু আয়াতের আসার কোনো নামগন্ধ নেই। মাইশা এবার বিড়বিড় করে বলে উঠে….
.
” লুচুবাঘটা এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছে। কইসে কে তোরে রাত জাইগা ঘুরতে? এখন কেমনটা লাগে?”
.
”Miss me মাইশুপাখি?”
.
পেছন থেকে কারও ফিসফিসানি কন্ঠ শুনতেই দূরে সরে যায় সে। আয়াত ঠোঁটযুগলে হাসির রেখা টেনে দাড়িয়ে আছে। গায়ে অফ হোয়াইট টিশার্ট তার উপরে জিন্স জ্যাকেট আর চোখে কালো সানগ্লাসের জন্য আয়াতকে দেখতে মারাত্নক লাগছে।
মাইশা ঠোঁটটি হালকা নাড়িয়ে বলে উঠে,
.
” এতক্ষণে আসার সময় হলো তোমার?”
.
” কি করবো মাইশুপাখি বলো…..গতকাল রাতে এক ঘুমকাতুরে সুন্দরী পাখিকে নিয়ে ঘুরছিলাম। তাকে বাসায় কোলে করে নিয়ে যেতেই আমার হাতের ১৩ তা বেজে গেলো। এখনও অনেক ব্যাথা করছে !”
,
কপাল কুচকে তাকায় আয়াতের দিকে। ব্যাটায় আসলেই অনেক খারাপ……….চরম মাত্রায় খারাপ।
.
” তুমি কিন্ত indirectly আমাকে বলছো তাই না?”
.
” না তো? আমি তো এক সুন্দরী পাখিকে বলছিলাম….যে অনেক ঘুমকাতুরে….তুমি কি ঘুমকাতুরে?”
.
আয়াত এ কথাটা বলার সময় মাইশার মুখের কাছে নিজের মাথাটা হাল্কা নামিয়ে দেয়। ঠোঁটে দুষ্টু হাসি। মাইশা একটু আনইজি হয়ে যায়। কেননা আয়াতের কথাগুলো মাঝে মাঝে তার ঘোরের মতো কাজ করে।
.
” না….মানে…..এত কথার তো প্রয়োজন মনে করছি না। চলো তাড়াতাড়ি। নাহলে দেরি হয়ে যাবে।…আ..আয়াত?”
,
আয়াত আলতো হাসে। তারপর একটা লম্বা শ্বাস নিয়ে বলে ,
” চলো তবে? ”
.
.
আজ ১৪ই জানুয়ারি। পুরান ঢাকায় আজ জমজমাট করে হচ্ছে সাকরাইন উৎসব। পুরান ঢাকায় মাইশা তেমন আসে না। শুধু নানুবাড়িতে চাঁদপুর যাওয়ার সময় যখন লঞ্চ দিয়ে যায় তখনই এর অব্যক্ত সৌন্দর্যের সম্মুখীন হয় সে।
গাড়ি দিয়ে এই জমজমাট পুরোনো ঢাকার উৎসব উপভোগ করছে সে। সদরঘাটের কাছে আসতেই গাড়ি থেকে নেমে চাদঁপুরের লঞ্চের কাছে যায়। আয়াত আর মাইশা লঞ্চে কেবিনের সামনে যেতেই কয়েকজন হঠাৎ করে পেছন থেকে ” মাইশু” বলে এক বড়সড় চিৎকার দেয়।
,
পেছনে ফিরতেই মুচকি হাসে মাইশা। ইনায়া,সামাদ,পৃথা,আনান সবগুলো দাঁত কেলিয়ে হাসি দিচ্ছে।
.
” দোস্তোওওও…..তুই ডাকবি আর আমরা আসবো না তা-কি হয়? দেখ…তোর দস্যুদল এসে পড়েছে !”(পৃথা বলে ওঠে)
.
” এবার তো চাঁদপুরে জমপেশ ঘুরবো আর খাবো….আমার এই প্রথম চাঁদপুর ট্রিপ ঘুরাবি কিন্তু!”(সামাদ)
.
” অবশ্যই ঘুরাবো সামাদ ! তুমি হলে আমাদের গ্রুপের handsome boy, তোমার জন্য মেয়েও দেখে রাখবো নে কেমন?”(মাইশা)
.
” আমি ছেলে অনেক ভালো তাই মেয়েদের বিষয়ে কোনো কম্প্রমাইজ করি না….”(গর্বের সুরে বলে ওঠে সামাদ)
,
আয়াত চুপচাপ শুধু ওদের দেখে যাচ্ছে।ওরাও যে আসবে আয়াত তা জানতো না। বোঝাই যাচ্ছে ওদের ফ্রেন্ড সার্কেলে সবচেয়ে mature হলো সামাদ আর মাইশা….বাকিরা immature ঠিক তা-না…কিন্ত তারা জগৎটাকে রঙিন চশমার মতো ভাবে। পৃথা আয়াতকে দেখে যেন বড়সড় একটা ধাক্কা খায়।
আয়াত সানগ্লাস খুলে টিশার্টে ঝুলিয়ে রেখেছে বলে আয়াতের চোখগুলো বেশ নজরকাড়া লাগছে। পৃথা মুখে হাসি ফুটিয়ে বলে ওঠে….
.
” আরে ভাইয়া…আপনিও কি যাচ্ছেন আমাদের সাথে?”
,
” তা নয় কি? মাইশার মতো আমারও নানুবাড়ি ওটা। তাছাড়া একটা কথা আছে; ” সুন্দরী মেয়েদের কখনো একা ছাড়তে নেই…আর যেখানে তোমাদের মতো সুন্দরী আছে সেখানে তো একেবারেই না..”( চোখ টিপ দেয় আয়াত)
.
পৃথার খুশি আর দেখে কে ! একে তো আয়াত তার ক্রাশ আবার আয়াত তার সাথে হাসিমুখে কথা বলছে এটা ভেবেই খুশিতে আটখানা হয়ে যায় সে।
.
” পৃথা শান্ত হও ! এত খুশি হয়ে লাভ নেই….ভাইয়া নিজেকে দেখায় একরকম আর হয়ে যায় অন্যরকম….so please vacation mood এ থাকো।(সামাদ)
.
”okay…okay ! chill দোস্তো….”
.
.
সনধ্যা গড়িয়ে রাত নেমেছে। অদূরেই আকাশে চলছে আতশবাজির খেলা। মাইশা আর তার বন্ধু-বান্ধব সবাই মিলে এ দৃশ্য উপভোগ করছে। সামাদ এসব কিছু ক্যামেরায় বন্দী করতে ব্যস্ত।লঞ্চ ইতিমধ্যেই ছেড়েছে। এখন এসব কিছু ছেড়ে এগোতে হবে তাদের চাঁদপুরের দিকে।
.
🍂🍂🍂🍂🍂
অতীত
.
কোচিং শেষ করে আদ্রাফের জন্য অপেক্ষা করছি আমি। এমনিতেও higher math এর ক্লাস করে মাথায় অঙ্কগুলো disco dance করছে। আবার আদ্রাফেরও আসতে লেট হচ্ছে।
বেশ কিছুক্ষণ পরে আদ্রাফ আসে। হাপাচ্ছে সে। বুঝাই যাচ্ছে তাড়াতাড়ি আসার চেষ্টা করেছিলো সে। পরনে শার্টটা ঘামে একটু ভিজে আছে। কানে হাত দিয়ে ফেসটা innocent করে আমাকে বলে
”Sorry ! ”
তার এহেন কান্ডে আমি হেসে দেই। আদ্রাফও মুচকি হাসে। তারপর আমাকে বলে” চলো তাহলে।”
.
সরু রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি পাশাপাশি আমরা। ক্ষণে ক্ষণে মিহি বাতাসের আনাগোনা। রাস্তায় মানুষজনও অনেক কম। আদ্রাফ নীরবে আমার হাত আগলে এগিয়ে যাচ্ছে।
.
ছেলেটা আসলেই অনেক অদ্ভুদ। অন্য চার-পাঁচজন হলে আমার একার সুযোগ নিতো। প্রেমের সম্পর্ক দাবি করে নানারকম অশালীন কাজ করতো। কিন্ত আজ দু’মাস ধরে আমাদের এ সম্পর্কে আদ্রাফ এমন কাজকর্মের ধারেও যায় নি। খুনসুটিময় কথা পর্যন্তই যা ছিলো। হয়তো ওকে আমি একারনেই এতো বেশি ভালোবাসি।
.
” মাইশা ! ”
.
” বলো……..”
.
” তোমার মা-বাবা কি আমাদের ভালোবাসা মেনে নিবে?”
আমি একটু চমকে যাই। তবে কি আদ্রাফ আমাকে হারানোর ভয় পাচ্ছে।
.
” তোমাকে আমি হারাতে চাই না…শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত উজাড় করে তোমায় ভালোবাসতে চাই। আমাদের ভালোবাসাটি টোনাটুনির সংসারে রূপ নেবে?”
.
আমি আশ্বাস দিয়ে বলি…
” আল্লাহ ভরসা….দুশ্চিন্তার কারন নেই। এমন না তুমি বেকার থাকবে। আগে পড়াশুনা শেষ করো। আর আমি এখনও স্কুলে পড়ি। এত তাড়াতাড়ি সবকিছু হবে না।”
আলতো হাসে সে। আদ্রাফের এই হাসিটা আমার মনে তোলপাড় শুরু করে দেয়। তার প্রতিটা কাজেই যেন আমি ডুবে যাই। আদ্রাফ খুব চুপচাপ ছেলে । নীরবে ওর ভালোবাসার প্রকাশ করতেই যেন বেশি ভালোবাসে সে।
আমাদের গল্পটা অন্য চার-পাঁচটা গল্পের মতো না। অতি সাধারনের ভীড়েও অসাধারনত্ব আছে আমাদের ভালোবাসায় যা অনেকটা স্নিগ্ধ ; অনেকটা প্রানবন্ত।
.
🍂🍂🍂🍂
.
বর্তমান
.
শহরের আলোর খেলা ক্রমশ কমে আসছে। লঞ্চের পেছনের দিকে দাঁড়িয়ে এসব কিছু উপভোগ করছে মাইশা। ঠোঁটে তার মিষ্টি হাসি।
.
” এভাবে একা বসে আছো কেন?”
,
পেছনে ঘুরে মাইশা দেখে আয়াত দাড়িঁয়ে আছে। মাইশা কিছু বলে না আয়াতকে…..
” কিছু জিজ্ঞেস করছি , মাইশা?”
,
মাইশা এবারও নীরব। বেশ কিছুক্ষণ পর মাইশা বুঝতে পারছে আয়াত এখনও যায়নি। তার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছে; তার 6th সেন্স তাই বলছে। একটু অস্বস্তিতে পড়ে পিছনে ফিরে সে।
” এভাবে তাকিয়ে আছো কেন?”
,
” মন টা চাচ্ছে ঠেসে তোমায় একটা চুমু খাই।”
.
মাইশা চোখ বড় বড় করে ফেলে।আবারও অসভ্যের পেত্নী ভর করেছে আয়াতের শরীরে।
.
”মানে..?”
.
” এতক্ষণ কথা বললে না কেন ?”(ভ্রু কুচকে)
.
”না…মানে কথা বলতে ইচ্ছে করছিলো না।”
.
মাইশাকে নিজের কাছে নিয়ে আসে আয়াত। ঘটনক্রমে মাইশার ছোট চুলগুলো মুখে এসে পড়েছে। মাইশার চুলগুলো আস্তে করে কানে গুঁজে দেয় আয়াত। মাতাল করা চাহিনী দিয়ে বলতে থাকে…
.
” আমার সামনে তোমার ইচ্ছাগুলো প্যাকেটে মুড়ে থাকবে…..I hate you’r ignorance…..জানিনা কেন?”
মাইশা তাকিয়ে আছে আয়াতের দিকে। আয়াতের চোখে সে নিজের জন্য একরাশ মায়া দেখতে পারছে। কিন্ত এটা কি আদৌ তার অধিকার?
.
.
#চলবে

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
পর্ব:১৭[আদ্রাফের আংশিক রহস্য উন্মোচন]
.
পা মচকানোর কারনে এখন আয়াতের কোলে করে নানুবাড়ির দিকে এগোচ্ছে মাইশা। আশেপাশের মানুষজন এমনভাবে তাদের দিকে তাকিয়ে আছে যেন কোনো বলিউডের রোম্যান্টিক মুভির সিন চলছে এখানে। অবশ্য অন্য কেউ হলে মাইশা তো হাসিতে গড়াগড়ি করতো কিন্ত এখন ব্যাপারটা তার নিজের সাথে হচ্ছে বিধায় বেশ লজ্জা লাগছে তার। পেছন পেছন সামাদ, পৃথা , ইনায়া , আনানও কোনোরকম হাসি চেপে এগিয়ে যাচ্ছে।
.
লঞ্চ থেকে নেমে কয়েক পথ পাড়ি দিতেই পা পিছলে পড়ে যায় সে। আর তারা যেখানে আছে সেখানে যাতায়াত ব্যাবস্থা খুব একটা ভালো না। কপাল খুললে ঘন্টায় একটা-দুইটা অটোরিকশা পাওয়া যেতে পারে। তাই এই বেচারী মাইশাকে আয়াতই কোলে তুলে এগিয়ে যেতে লাগলো।
.
” খুব তো বলছিলে…..মরলেও আমার কোলে তুমি উঠবে না। কই গেলো সেই কথাগুলো?”
.
আয়াতের কথা শুনে ওরা চারজন আর হাসি আটকিয়ে রাখতে পারে না। হো হো করে হেসে উঠে চারজন। মাইশা একনজর ওই বদমাশ চারজনের দিকে চোখ রাঙিয়ে আয়াতকে বলে উঠে…..
.
” আসলেই চরম মাত্রার অসভ্য তুমি। আমার অসহায়ত্বের সুযোগে সাহায্য করে আবার আমাকেই কথা শুনাচ্ছো।উঠবো না আমি তোমার কোলে। নামআও আমাকে।”
,
আয়াত ওকে ছেড়ে দিতে গেলেই চিৎকার দেয় মাইশা। চোখ দুটো খিচে আয়াতের গলা জড়িয়ে বুকের সাথে মিশে থাকে। এবার বাকি সবার সাথে আয়াতও হেসে উঠে। মাইশার এখন নিজেকে হাসির পাত্র থেকে কম কিছু মনে হচ্ছেনা। মুখ ফুলিয়ে মিশে থাকে আয়াতের বুকে।
.
গ্রামের মেঠোপথ পাড়ি দিয়ে আরও গহীনে ঢুকছে তারা। আয়াতের জীবনের বড় একটা সময় আ্যমেরিকায় থাকায় এই সৌন্দর্যের গভীরত্বটা কখনো নিবইড়ভাবে উপভোগ করতে পারেনি সে। কিন্ত আজ সে উপভোগ করছে সাথে আছে এমন একজন যে তার মনের একজন অস্তিত্ব। হয়তো সে তাকে এতটা গভীরভাবে আগলে নিতে পারেনি কিন্ত তাকে ছাড়া সে যে অসম্পূর্ণ থাকবে এতটুকু অনুভব করতে পেরেছে।
.
অবশেষে এসে পড়লো তারা তাদের গন্তব্যস্থলে। গাছপালায় ঘেরা ছোট্ট একটি পুরোনো ধাঁচের বাড়ি। বাড়ির ভিতরে প্রবেশ করতেই তারা সবাই দেখে বড় রুমটাতে….মাইশার আব্বু-আম্মু , খালামণি-খালু, আরিয়াপু , নুহাশ ভাইয়া আর নানুজান।
.
.****
” আহারে….আমার সোনামাণিকটা কত বড় হইয়া গেসে…ক’দিন পরতো তোর বিয়া দিতে হইবো…”
.
মাইশা আর তার বন্ধুবান্ধবরা এককোণে আয়াতের যত্নাদি চুপচাপ দেখছে। তার পা মচকানোর কারনে সে ঠিকমতো চলাফেরাও করতে পারছে না। সে শুধু মনে মনেই হাসফাস করছে।
.
” আমি এতটাই পর হয়ে গেলাম ওদের কাছে যে আমার পা মচকানোর পরেও ওই খাটাশ আয়াতটার কাছে সবাই পড়ে আছে।”(মাইশা)
.
”সবাই কই তোর নানুজানই তো আয়াত ভাইকে আলালের ঘরে দুলাল বানিয়ে রাখছে….”(আনান)
.
” ইসসস…আয়াত ভাইকে কত্ত কিউট রাখছে….!”(পৃথা)
ওরা সবাই পৃথার দিকে চোখ রাঙিয়ে তাকাতেই সে চুপসে যায়।হঠাৎ আরিয়াপু ওদের দিকে তাকিয়ে বলে ওঠে,
” আরে তোমরা যাও ফ্রেস হয়ে আসো…অনেক journey করে আসছো একটু রেস্ট নাও।”
,
” জ্বী আপু ঠিক বলেছো….ওই সামাদ আমাকে একটু রুমে দিয়ে আয়। এই পা নিয়ে চলাফেরা এখন আমার জন্য impossible…”(মাইশা)
আয়াত সামাদকে সময় না দিয়েই কোলে তুলে নেয় মাইশাকে। আয়াতের হঠাৎ করে এভাবে কোলে নেওয়াতে হকচকিয়ে যায় মাইশা। বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকে ওর দিকে।
,
রুমে ওকে রেখে ফিরে আসতেই মাইশা আয়াতকে বলে….
” আয়াত আমি জানি না তোমার মনে এখন আমাকে নিয়ে কি চলছে। আমি জানি না এটা আদৌ কি তোমার ঘৃণা নাকি শুধু কেয়ার…..so I request you এমন কিছু করো না যার জন্য তোমায় আর আমায় পস্তাতে হয়?”
.
পেছনে ঘুরে আয়াত।মাইশার অনেক কাছে গিয়ে কানে মিহি গলায় বলতে থাকে…
” আমারটা আমি বুঝে নেবো। I don’t want your advice….তবে একটা কথা বলি…it’s true that তোমার আমার সম্পর্ক অনেকটাই অন্যরকম। হয়তো আমার জন্য ! কেননা হাজারেও আমার মতো কাউকে খুজেঁ পাবে না তুমি। I’m too much mysterious….”
একথা বলেই চলে যায় আয়াত। মাইশা বরাবরের মতোই নিশ্চুপ হয়ে আছে।
.
.
দুপুর গড়িয়ে এখন বিকেল। গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন সে। পা ব্যাথার জন্য একটা ব্যাথার ঔষধ খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে সে।এদিকে সবাই উঠোনে আড্ডা দিচ্ছে আর মাইশা অনুপস্থিত। বিষয়টা একটু হলেও ভাবাচ্ছে আয়াতকে।তাই সেচুপচাপ সেখান থেকে কেটে পড়ে ওর রুমে যায়।
.
মাইশা কম্বল মুড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। আয়াত ফিরে আসতে নিলেই তার চোখ যায় খাটের কোণে এক নীল ডায়েরীটার উপর। অনেক কৌতূহল জাগছে আয়াতের মনে। কিন্ত পরে ভাবে…না থাক ! কারও personal জিনিস ধরা উচিত না।
কিন্ত কৌতুহল না দমিয়ে আয়াত সেই ডায়েরীটা তুলে নেয়। ডায়েরীটা খুলতেই প্রথমে ভেসে আসে হালকা সবুজ রঙের শার্ট পরিহিত এক ছেলের হাস্যোজ্জ্বল ছবি। আয়াত অবাক চোখে তাকিয়ে আছে ছেলেটার দিকে। মনে জাগছে তার হাজারো প্রশ্ন….” কে ছেলেটা?”,” মাইশার কাছে ওর ছবি কেন?”
ছবিটার কোণে লেখা আছে ” আদ্রাফ”। আয়াতের মনে হচ্ছে এই নামটা যেন কোথায় শুনেছে। তখনই তার মনে পড়লো সে রাতে মাইশা অজ্ঞান হওয়ার আগে আদ্রাফের নাম উচ্চারন করেছিলো।
,
আয়াত ডায়েরীর পাতা উল্টোয়। সেখানে সব লেখা আছে তার স্কুলজীবনের প্রথম অনুভূতি , আদ্রাফের সাথে তার পরিচয় , আদ্রাফের জন্য ওর অনুভূতি , তাদের ভালোবাসার পথচলা সব। আয়াত এক এক করে সব পড়তে থাকে:
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
আজ স্কুল ফাঁকি দিয়ে যাবো আদ্রাফের সাথে ঘুরতে। আদ্রাফকে মিথ্যে বলেছি যে আজ হাফ টাইম ক্লাস হবে। নাহলে তো আমায় নিয়েই যেত না। যাই হোক বেশ কিছুক্ষণ পর আদ্রাফ আসতেই ওর বাইকে উঠে ছুটি চলি আমাদের অজানা গন্তব্যে।
আমার পরনে স্কুল ড্রেস। দুপাশে দুটো বেণী ,আর আদ্রাফ নীল রঙের একটা শার্ট পড়েছে। আমাদের দুজনকে কোনো দিক থেকেই প্রেমিক-প্রেমিকা লাগছে না। কিন্ত কথা আছে না…” মনের বিষয়টাই বড় বিষয় ”
তার উপর ভিত্তি করেই আমাদের অব্যক্ত প্রেম চলছে।
.
বাইকটা শহরের বড় বড় দালান ছাড়িয়ে দূরে যেতে থাকলো। আদ্রাফের পিঠে মাথাটা হেলান দিয়ে আমি সে দৃশ্য উপভোগ করছি। সময়টা শরৎকাল। একটি সরু পাকা রাস্তা দিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি আমারা। আশেপাশে সবুজ ঘাস আর কাশফুলের বাহার। ক্ষণে ক্ষণেই বিল দেখতে পাচ্ছি আমি।
.
” আদ্রাফ কোথায় নিয়ে আসলে আমায়?”
,
” কেন…..পছন্দ হয়নি?”(মুচকি হেসে)
.
” উহু……..অনেক বেশি পছন্দ হয়েছে।”
আদ্রাফ মুচকি হাসে। বাইক একপাশে রেখে একটু দূরে গিয়ে নরম ঘাসের গালিচায় শুয়ে নীল আকাশের সৌন্দর্য উপভোগ করতে থাকি। চোখে মুখে মাঝে মাঝে কাশফুল এসে পড়ছে। আদ্রাফ তা আবার হালকা ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দেয়।
,
” আদ্রাফ?”
,
”হুম….”
.
”একটা গান শুনাবে?”
আদ্রাফ আমার দিকে তাকায়। তার কালো চোখ জানান দিচ্ছে সম্মতি। চোখ বন্ধ করে সে গেয়ে উঠে,
” মন আকাশে বৃষ্টি আসে রৌদ্র মেঘের জুটি❤
আজ নতুন আলোয় আঁধার কালো খুনসুটি
ঝড়ের বেশে এলো কেশে কাজল সে চোখদুটি
দিলো কঠিন কথার ভীষন্নতার ছুটি
গোপন করে আপন তোরে; বুকের পাঁজরে রাখি🍂
ঘুমের বড়ি দিয়ে আড়ি হৃদয় বাড়িতে থাকি
.
চলনা সুজন করি কূজন সুখপাখি হয়ে ডাকি🍂
দেখুক লোকে কেমন তোকে ; প্রেমে জরিয়ে রাখি
চলনা সুজন পালাই দুজন; ওদেরকে দিয়ে ফাঁকি
কোনো সমান্তরাল পথের বাঁকে; বাসা বাধিয়ে রাখি…❤❤”
(আমার প্রিয় নায়ক সিয়ামের ”বখাটে” মুভির পছন্দের একটি গান। এখন থেকে এই গানটা শুনলে আদ্রাফের জন্য আমার মন কাদবে🥺)
.
আদ্রাফের গানের প্রতিটা ছন্দে তলিয়ে যাচ্ছি আমি। তার প্রতিটা শব্দই আমাকে উদ্দেশ্য করে গাওয়া। একটা মানুষ কিভাবে কাউকে এতটা ভালোবাসতে পারে? আকাশের মেঘের সাথে তাল কেটে সময়ও অতিবাহিত হচ্ছে। কাশফুলের ভীড়ে নিজেকে হারিয়ে কতক্ষণ যে সময় পার করলাম তা আমার অজানা। আদ্রাফকে আমি পেছন থেকে জরিয়ে ধরে বলতে থাকি….
” অনেক ধন্যবাদ আদ্রাফ এত সুনদর একটি সময় আমায় উপহার দেওয়ার জন্য।”
,
আদ্রাফ মুচকি হেসে আমার দিকে ঘুরে। তারপর গভীরভাবে আমার কপালে ঠোঁট বুলায়। কপালে ভালোবাসার পরশে অজানা এক শুদ্ধতা বিরাজ করে যাতে কোনো অশ্লীলতা নেই। আদ্রাফ মিহি কন্ঠে বলে ওঠে…
” ভালোবাসি।”
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
এর পরের পৃষ্ঠা খালি। আয়াত বাস্তবে ফিরে। এতক্ষন একটা ভালোবাসা নামক বেড়াজালের আবদ্ধ ছিলো সে। মাইশাকে যে কেউ এত ভালোবাসতো এই ডায়েরী না পড়লে জানতেই পারতো না সে। তবে এটাই আদ্রাফ…..কিন্ত এখন সে কোথায়?
,
খপ করে আয়াতের কাছে থেকে কেউ ডায়েরী ছিনিয়ে নেয়। মাইশা রক্তচক্ষু নিয়ে তাকিয়ে আছে ওর দিকে।
.
” এতটা লাজলজ্জাহীন কীভাবে হতে পারো তুমি? আমার Personal জিনিসে তোমার দখলের কারন আমার অজানা। সমস্যাটা কি?”
,
কথাগুলো মাইশা বেশ উচ্চস্বরে বলছে । নাক তার টুকটুকে লাল হয়ে আছে। আয়াত সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে মাইশাকে কড়া গলায় প্রশ্ন করে….
” আদ্রাফ কোথায়?”
.
চুপ হয়ে যায় মাইশা। আবারও অতীতের মুখোমুখি হতে চাচ্ছে না সে।
.
” আদ্রাফ কোথায়? Tell me dam!”(উচ্চস্বরে)
.
কেঁদে দেয় মাইশা। আদ্রাফের ভয়ঙ্কর পরিণতির কথা ভাবতেই হাহাকার করে ওঠে তার মন।
”আদ্রাফ আর নেই !”
.
.
#চলবে

গল্প পোকা
গল্প পোকাhttps://golpopoka.com
গল্পপোকা ডট কম -এ আপনাকে স্বাগতম......
RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

- Advertisment -

Most Popular

Recent Comments

Md masrur Hasan mahi على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
আমিনুল ইসলাম على প্রয়োজন পর্ব: ৩০ ( অন্তিম)
সাজিবুল ইসলাম على ধর্ষিতাবউ২ ৯ তথা শেষ পর্ব
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
শাহিদুল ইসলাম على জীবন সঙ্গী ১ম পার্ট
Nita Sarkar على স্বপ্নীল ৬৮
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على রহস্য শেষ_পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على অলক্ষ্যে তুমি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব
Nazmun Nahar Akhi على Psycho_is_back? part_7
Nazmun Nahar Akhi على Dangerous_Villian_Lover part 2
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على জানালার ওপারে পর্ব-১৭ এবং শেষ পর্ব
শিয়াসা ইসলাম হুরিজিহান على লীলা বোর্ডিং ১২১৫ পর্ব-১১ এবং শেষ পর্ব
মিজানুর রহমান রাহুল على সেই তুমি পর্ব-০১
@feelings على প্রহেলিকা
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Anamika Basu على সে পর্ব-১২
Nusrat jahan على coffee & vanilla Part-10
Pallabi Roy على স্বপ্নীল ৬৮
M.D Mahabub على The_Villain_Lover Part_2
Labani sarkar على Dangerous_Villain_Lover part 23
MD Akas Apc على বিবেক
Tanisha Ahmed على Devil love part-18 
Aius Barmon shorob على নারীর দেহকে নয়
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Chandan roy على স্বপ্নীল ৬৮
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Priya Banerjee على devil love married life last part
Riya Biswas على তুমি রবে ৬০
Riya Biswas على তুমি রবে ৫২
Mohammad Adib على তুমি রবে ৬০
Avni Ayesha على তুমি রবে ২৮
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
সুমিত على তুমি রবে ২৮
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
TANJIBA ZENIFAR على তুমি রবে ৫০
Samiah Begum على তুমি রবে ৫১
biddut das rocky على নর নারী
গল্প পোকা على নষ্ট গলি শেষ পর্ব
Md Jobayer Hossain Shohag على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على দুই অলসের সংসার
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤৪২.
A.J.S Rakib على মন ফড়িং ❤৪২.
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
গল্প পোকা على গল্পঃ ভয়
Samiya noor على গল্পঃ ভয়
Sadikul على গল্পঃ ভয়
Samia Islam على গল্পঃ ভয়
শূন্য মায়া على মন ফড়িং ❤ ৪০.
Sutapa biswas على মন ফড়িং ❤৩৯.
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৮.
sutapa biswas على মন ফড়িং ❤ ৩৭
Foysal Mahmud على My_Mafia_Boss_Husband Part: 16
Siyam على বিবেক
Sudipto Guchhait على My_Mafia_Boss পর্ব-৯
saptami karmakar على devil love married life last part
saptami karmakar على devil love married life last part
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ৩০.
মায়া على মন ফড়িং ২৬.
Shreyashi Dutta على  বিয়ে part 1
Sandipan Biswas على  বিয়ে part 1
Paramita Bhattacharyya على অনুরাগ শেষ পর্ব
জামিয়া পারভীন তানি على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
মায়া على মন ফড়িং  ২২
সুরিয়া মিম على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على মন ফড়িং ২১
গল্প পোকা على নষ্ট গলি পর্ব-৩০
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على Love At 1st Sight Season 3 Part – 69
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
Sahin ssb على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ২১
মায়া على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ২০.
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
গল্প পোকা على খেলাঘর /পর্ব-৪২
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৮. 
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৭.
Jannatul Ferdous على খেলাঘর পর্ব-৩৫
গল্প পোকা على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ফাল্গুনের_ফুল last_part_8
মায়া على মন ফড়িং ❤ ১৬. 
গল্প পোকা على ছাত্রী যখন বউ পাঠঃ ১
গল্প পোকা على বাজির প্রেম পাঠঃ ১
Foujia Khanom Parsha على মা… ?
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৮
HM Ashraful Islam على অবুঝ_বউ পার্ট: ৫
Ibna Al Wadud Shovon على স্বার্থ