#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
#পর্ব:৩
“তোমাকে দরকার , মাইশা !”
মাইশা একরাশ আগ্রহ নিয়ে পেছনে ঘোরে । সে যা ভেবেছিলো ঠিক তাই । আয়াত দাঁড়িয়ে আছে । পরনে ধূসর রঙের ট্রাউজার , হলুদ টি-শার্ট। গোধূলির আলোতে আয়াতের খয়েরী চোখগুলো বেশ নজরকাড়া রাখছে মাইশার কাছে । আয়াতের চোখগুলোতে তাকিয়ে থাকলে যেন সারাদিন তাকিয়ে থাকতে মন চায়। মুখে কেমন যেন গাম্ভীর্যতা ফুটে উঠেছে যা সচরাচর আয়াতের থাকে না । এই গাম্ভীর্যতাকে একসময় হৃদয়ে ধারণ করে নিয়েছিলো মাইশা । যা এখন অতীতের এক বদ্ধ স্মৃতি।
মাইশা এবার আয়াতের কাছে গিয়ে দাঁড়ায় । তারপর চোখ ছোট ছোট করে বলে …..
” আমাকে দরকার মানে….তুমি কি বোঝাতে চাচ্ছো?”
.
আয়াত স্মিথ হাসে । তারপর তাচ্ছিল্যের স্বরে বলে;
” তোমার কি মনে হয় , তোমাকে দরকার বলতে তোমাকে ভালোবাসি বুঝিয়েছি ? আমার চয়েজ এত খারাপ না যে তোমাকে আমি চুজ করবো । বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে চাই বলতে এখন আমার তোমাকে দরকার । খালামণি ডাকছে তোমাকে আর বলছে যে না আসলে চুল ধরে টেনে নিয়ে আসতে ….”
মাইশার মাথা গরম করার জন্য এতটুকু কথাই যথেষ্ট । কিন্ত এখন চিল্লানোর মনমানসিকতা তার মধ্যে নেই । যথাসম্ভব নিজেকে শান্ত করে আয়াতকে বলে ,
” আমি এখন একটু একা টাইম স্পেন্ড করতে চাচ্ছি আয়াত প্লিজ আমাকে distrub করো না আর আম্মুকেও বলো পরে আসবো। ”
.
এ কথা বলে মাইশা পিছে ঘুরে আবার রেলিংয়ের উপর বসে কোলাহলপূর্ণ ঢাকা দেখতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে । পেছনে অনেকক্ষণ শব্দ না পাওয়ার ফলে মাইশা ভাবে যে আয়াত হয়তো চলে গেছে । ওর কাছে ব্যাপারটি অনেক আজবও লাগে আবার শান্তিও লাগে যে এখন আয়াত আর তাকে বিরক্ত করবে না ।
বেশ কিছুক্ষণ পর আচমকা নিজেকে শূণ্যে অনুভব করতেই চিংকার দিয়ে উঠে। আর আয়াতকে দেখেই তার চোখ ছানাবড়া ।
” ছাড়ো আয়াত…আজব তো এভাবে আমাকে কোলে তুললে কেন । ”
.
আয়াত কোনো সাড়াশব্দ না করে মাইশাকে কোলে করে লিফ্টে ঢুকে । আয়াতের বুকে এলোপাথারি কিল-ঘুষি মারতে আয়াত কড়া গলায় বলে ওঠে….
” আর যদি একটা কথা বলো দ্যান আমি কিস করে তোমার মুখ বন্ধ করতে দুই মিনিটও ভাববো না । আফটার অল লিফটে কেউ নাই জাস্ট ইউ অ্যান্ড মি হোয়াট অ্যা রোম্যান্টিক ওয়েদার !”
.
মাইশা শুধু পারছে না আয়াতকে ঠাডিয়ে দুইটা চড় মারতে । এমনেও এই ছেলে যা একটা কথা বললে সত্যি সত্যি না আবার কিস করে বসে ,
”তোর রোম্যান্টিকের গুষ্টি কিলাই।লুইচ্চা কোথাকার !তোর কিস তুই খা !”
আফসোস এই কথাগুলো মাইশা আর মুখে আনতে পারলো না ।
.
ফ্ল্যাটের সামনে আসতেই মাইশাকে কোল থেকে নামিয়ে দেয় আয়াত । শুরু হয়ে যাবে এই ছেলের ভদ্র হওয়ার ড্রামা । মাইশা দাঁতে দাঁত চেপে বলে ,
” আমারে কোলে তুললা কেন ?”.
.
আয়াত ভ্রু কুচকে বলে ….
” খালামণি তোমাকে চুল টেনে নিয়ে আসতে বলছে । আর আমি তোমায় কোলে করে নিয়ে আসলাম । আমাকে তো তোমার thank you বলা উচিত। আর তুমি?……shame on you!”
বলেই আয়াত ভিতরে চলে যায়। মাইশা এখন হ্যাবলার মতো তাকিয়ে আছে । কিসের সাথে আয়াত কিসের লজিক দিলো কিছুই বুঝলো না সে।
..
..
ড্রয়িংরুমে বসে খালামণি ,খালু ,আরিয়াপু , মাইশার আব্বু-আম্মু কথা বলছে । আজ তারা চলে যাবে । আয়াত ডাইনিংরুমে বসে ল্যাপটপে কিছু কাজ করছে। আর মাইশা ড্রইংরুমের এক কোণায় চুপচাপ বসে আছে। এই ড্রইংরুমে সবার সাথে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন ওর । এই ২৪ বছরের লাইফে এত অপমান অপদস্ত কখনোই হয়নি যতটা আয়াতের কাছে হয়েছে। প্রথমে ভার্সিটির সবার সামনে থাপ্পড় , তারপর একের পর এক ওর ক্যারেক্টার নিয়ে কথা বলা , এতকিছুর পর কোনো মানুষের স্বাভাবিক থাকাটাই হবে বড় অস্বাভাবিক ; মাইশাও তার ব্যাতিক্রম কিছু না।
.
” কি ব্যাপার মাইশা , এত চুপচাপ বসে আছো যে ?”(খালু)
.
” এভাবেই , তেমন কিছু না…..”
.
” এবার মাইশার বিয়ে দিয়ে দেন ! ২মাসের মাথায় অনার্স কমপ্লিট করবে…তেমন তো সমস্যা হবে না । ওর জন্য আমার কাছে অনেক ভালো ভালো পাত্র আছে।”
মাইশা গোল গোল চোখ করে তার খালামণির দিকে তাকায় । খালামণির মুখে খুশির ঝলক। হঠাৎ আয়াত বলে উঠে,
” ওর বিয়ে নিয়ে এতো ভাবতে হবে না আম্মু , যেই রাগ ;পাত্র তো ওকে দেখতে এসে লুঙ্গি মাথায় তুলে নিয়ে পালাবে !”
.
মাইশা এবার আয়াতের দিকে তাকায়। ও মুখের এক্সপ্রেশন মাইশা কিছুই বুঝতে পারছে না। তবে ওর খালামণির মুখে বিরক্তির ছাপ ফুটে উঠেছে আয়াতের তিক্ত কথায়। তবে কিছু একটা ভেবে খালামণি হাসি দিয়ে বলে,
.
” সমস্যা নেই ব্যাটা ; তোর সাথে বিয়ে করিয়ে দেবো নে পাত্র পালিয়ে গেলে , জানো সুমি (মাইশার মা ) আয়াত যখন ছোটবেলায় মাইশার ছবি দেখতো না তখন আয়াত বলতো বড়ো হলে ও এই পাখিকে বিয়ে করবে । আবার অ্যামেরিকায় যখন ও কিন্ডারগার্ডেনে পড়তো তখন ও সব ফ্রেন্ডদের ছবি দেখিয়ে বলতো এটা নাকি ওর বউ”
.
খালামণির কথা শুনে বাকি সবাই হেসে দিলেও বিভ্রান্তিতে পড়েছে মাইশা আর আয়াত। আয়াতও ভাবেনি যে ওর মা একথা বলে দিবে । মাইশা তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বিড়বিড়িয়ে বলে,
” আয়াত তো আমাকে দেখতেই পারেনা….আবার বিয়ে….”
.
🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂🍂
.
রাত মোটামুটি হয়েছে। কিন্ত এখনো ঘুম আসছেনা আমার। গ্রিলের বারান্দা ঘেষেঁ চাদর পেচিয়ে নিচে বসে আছি আমি। কাল আমি আমার নতুন স্কুলে যাবো দশম শ্রেণীর ছাত্রী হিসেবে। তাই হয়তো উত্তজনার বশে ঘুম আসছে না।
রাস্তায় সোডিয়াম লাইটের আলোর খেলায় বেশ আনন্দেই আছি আমি । হঠাৎ আমার কানে একটি মধুর কণ্ঠ বেজে এলো। খুবই মিহি কণ্ঠ। গিটারের তালে তা যেনো আরও মধুর লাগছে আমার কাছে। কিন্ত এত রাতে গান গাচ্ছে কে? শব্দর উৎস খুঁজে পাই আমার বারান্দার ঠিক দক্ষিণ পাশের বারান্দার দিকে .,
.
”রাতের সব তারা আছে দিনের গভীরে
বুকের মাঝে মন যেখানে
রাখবো তোকে সেখানে…..
তুই কি আমার হবি রে !
মন বাড়িয়ে আছি দাঁড়িয়ে
তোর হৃদয়ে গেছি হারিয়ে
তুই জীবন-মরণ সবি রে
তুই কি আমার হবি রে !”
.
আমি একধ্যানে ছেলেটির দিকে তাকিয়ে আছি। সোডিয়াম লাইটের আলোয় তার কালো চোখে দেখতে পাচ্ছি কিছু অনুভূতির খেলা। তার সিল্কি চুলগুলো কপালে খেলা করছে বাতাসের ঝাপ্টায়। তার গিটারের প্রতিটা সুর আমার হৃদয়ে টান দিচ্ছে। গিটারের তালের সাথে কোনো ছেলেকে যে এতটা সুন্দর লাগতে পারে আদ্রাফকে না দেখলে আমি জানতেই পারতাম না । কিশোর জীবনে এই প্রথম কোনো ছেলের জন্য মনে কিছু অনুভব করলাম।
হঠাৎ দেখলাম আদ্রাফ গিটার রেখে আশেপাশে তাকিয়ে কাউকে খুজতে লাগলো। আমার দিকে তাকাতেই থমকে যাই আমি। আদ্রাফ আমাকে অবাক করে দিয়ে বলে ,
” এখনও ঘুমাওনি তুমি?”
.
.
#চলবে