রৌদ্দুর তোমার নামে পর্ব-০২

0
4380

#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন(মাইশা)
#পর্ব:২
”আমাকে পাগল বানানোর ধান্দায় আছো নাকি, মাইশা?”
মাইশা চোখ তুলে দরজার দিকে তাকায় । তাকিয়েই ওর চোখ ছানাবড়া । আয়াত দরজার সামনে ঠোঁট কামড়ে দাঁড়িয়ে আছে । মাইশা এবার নিজের দিকে তাকায় । গায়ে কোনো ওড়না নেই। তৎক্ষণাৎ মাইশা মোবাইল রেখে উঠে সোফা থেকে ওড়নাটা নিয়ে গায়ে নেয় । তারপর চিল্লিয়ে বলতে থাকে ,
” আজব পাবলিক তো তুমি? এভাবে কোনো মেয়ের রুমে হুট করে কেউ ঢুকে পড়ে । আর ১ মিনিট……..রাত বাজে ১০ টা। তুমি এখন এখানে কি করছো?” (ভ্রু কুচকে)
.
” Excuse me babe….এটা আমার খালামণির বাড়ি । আমার যখন মন চায় তখন আসবো । আর তোমার amazon জঙ্গলের মতো রুমে আমার আসার একটুও ইচ্ছা ছিল না । খালামণিই পাঠিয়েছে তোমায় ডাকতে। কিন্ত ভাবতে পারিনি এখানে কোনো জংলিবিড়াল পেয়ে যাবো। রিডিকিউলাস,….”
.
মাইশা ছোট ছোট চোখ করে বলতে থাকে,
” আমার রুম কোন অ্যাঙগেল থেকে তোমার amazon forest মনে হচ্ছে?”
.
আয়াত মাইশার ওড়নার দিকে চোখ দিয়ে ইশারা করে বলে….
”তা পরে বলি আগে ওড়নাটাতো ঠিক করে পড়ো। ”
মাইশা এবার খুবই অসস্তিতে পড়েছে। আয়াতের এরকম লাগামহীন কথা শুনে মন চাচ্ছে এই লুইচ্চা পোলার মাথা ফাটায়ে দিতে । এই আমেরিকান বান্দরগুলা সব এমনই থাকে।
”By the way , বয়ফ্রেণ্ডের সাথে কি একটু আগে ভিডিও কলে কথা বলছিলে ? ভার্চুয়ালি দেখিয়ে লাভ নাই । রুম ডেট করলেই তো হইসে….!”
.
আয়াতের এ কথাটা বলতেই দেরি মাইশার আয়াতের কলার ধরতে এক সেকেণ্ডও টাইম লাগলো না। রাগে তার চোখ-মুখ লাল হয়ে গিয়েছে ।
.
” প্রবলেমটা কি তোমার? এত নিম্ন মনমানসিকতা নিয়ে চলো কিভাবে । মানছি আমার বিএফ আছে কিন্ত তোমাদের আমেরিকানদের মতো এত সস্তা না যে কিছু হলেই নিজের শরীর বিলিয়ে দেবো । আর আমি আমার boyfriend এর সাথে যা-ই করি না কেন তোমার কি? Do you love me?”
.
আয়াত হাসে । যেনো খুব মজার কথা বলেছে মাইশা । মাইশার কোমড় চেপে নিজের সাথে মিশিয়ে ফেলে আয়াত । এতে মাইশা আয়াতের কলার আস্তে আস্তে ছেড়ে দেয়ার চেষ্টা করে।
.
” সেটা তোমার না জানলেও চলবে। আমি জানি তুমি আর তোমার বয়ফ্রণ্ডসমাহার(ব্যাঙ্গ করে) ;সবার কাছে এগুলো জাস্ট টাইম পাস ছাড়া কিছুই না । তবে তোমার টাইম পাসের সময় ওভার; পাখি। ভেবো না তোমার প্রতি আমার কোনো interest আছে । এখন নিচে চলো।”

বলেই মাইশার কোমড় ছেড়ে দিতেই মাইশা সরে যায় আয়াতের কাছ থেকে। আয়াত একগালে হাসে।
”এখন নিচে চলবে নাকি আমার কোলে করে নিচে নামতে চাইছো?এতো ড্রামা না দেখিয়ে সরাসরি বললেই তো পারো?”
মাইশা ঠোঁট কামড়ে নিজের রাগ কন্ট্রোল করতে ব্যস্ত। এতটুকু বুঝতে বাকি নেই যে এই ছেলে যেকোনো টাইম জলসা সিরিয়ালের মতো কাহিনী শুরু করে দিতে পারে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মাইশা নিচে গেলো। লিভিংরুমে খালামণি , খালুজান আর আয়াতের বড় আপু আরিয়া আছে । খালামণি মাইশাকে দেখেই খুশিতে গদগদ করে ওঠে ।
” আরে মাইশা তো দেখি অনেক ব্যস্ত মানুষ হয়ে গেছে । ৩মাস ধরে খালামণি আসল আমেরিকা থেকে আর মেয়েটি দেখতেই গেলো না ; তাই খালামণিই আসলো মেয়েকে দেখতে । ”
,
”ভালো আছো খালামণি?”
,
”আলহামদুলিল্লাহ,মা অনেক ভালো আছি…..”
.
”খালুজান কেমন আছেন?”
.
” হ্যাঁ মামণি আমিও অনেক ভালো আছি। পড়াশোনা কেমন চলছে?”
,
”বয়ফ্রেণ্ডকে টাইম দিয়েই কূল পায় না আবার পড়াশুনা ! ”
আয়াত এ কথাটা বিড়বিড় করে বললেও মাইশা ঠিকই একথাটা শুনেছে । রক্তচক্ষু নিয়ে আয়াতের দিয়ে তাকায় সে। পারছে না আয়াতকে শুধু চোখ দিয়ে গিলে ফেলতে । আয়াত তা দেখে এক চোখ টিপ মারে মাইশাকে। মাইশা ভেবে কূল পায় না ওকে বিরক্ত করে এই ছেলেটা কি আনন্দ পায়।


ভার্সিটির দিকে মাইশা হেঁটে যাচ্ছে। আর মনে মনে বারবার আয়াতকে গালাগাল করছে । আজকে ভার্সিটিতে আসার সময়ও আম্মু আয়াতকে ওর সাথে পাঠিয়েছে। আয়াত গাড়ি পার্কিং এ ব্যস্ত হয়ে পড়লে মাইশা যেন বেজির মতো গাড়ি ছেড়ে ভার্সিটির দিকে ছুটে গেলো।
এগিয়ে দেখে অরি , আনান ,পৃথা, সামাদ আর ইনায়া । মাইশার দিকে ড্যাবড্যাব চোখ করে তাকিয়ে আছে ৫ জন। মাইশা ওদের কাছে গিয়ে বলে,
” আমি কি কোনো এলিয়েন এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন ?”
.
”দোস্ত তুই বাইচ্চা আছোস…..”(অবাক চোখ করে আনাফ)
.
” কেন আমার চল্লিশা খাওয়ার প্ল্যান করছিলি তুই?”
.
”না আসলে গতকাল ছেলেটা যেভাবে তোকে থাপ্পড় মারলো……কে ছিলো রে…..আমি তো তোরে থাপ্পড় দেওয়ার টাইমই ক্রাশ খাইছি ছেলেটার উপর…..(পৃথা দাঁত কেলিয়ে)
.
মাইশা এখন শুধু পারছে না মাটিতে বসে গলা ফাটিয়ে কাঁদতে। কপালে কেমন দস্যু দোস্তগুলা জুটলো যেগুলা ওর কষ্ট না দেখে ক্রাশ নিয়া পড়ে আছে ; তাও আবার এমন টাইমে যখন ওকে থাপ্পড় মারলো ।
মাইশা ভ্রু কুচকে বলে,
”লাইক সিরিয়াসলি ! ওই অসভ্য আয়াতটা ভার্সিটির টপার স্টুডেন্ট মাইশাকে থাপ্পড় মারলো আর তুই ক্রাশ নিয়া বসে আছিস । আমার খালামণি পোড়া কপাল নিয়ে এই অধমটারে পয়দা করছিলো আর এই অধমটা এবার আমার পোড়া কপাল বানাতে চলে এসেছে। ”
.
” তাই মাইশা ? ”
,
মাইশা পিছে ঘুরে । আয়াত দাড়াঁনো । মাইশা এখন ভাবছে যে ভুল সময়ে ভুল কথা বলে ফেললো। কেননা আয়াতের চোখে-মুখে স্পষ্ট রাগ ফুটে উঠেছে । আর রাগলেও ছেলেটাকে যেন মাত্রতরিক্ত সুন্দর লাগে।
.
” কি জানি বলছিলে? তোমার খালামণি পোড়া কপাল নিয়ে……something like that…..আর কি কি জানি বললা বাট আমি ভুলে গেলাম । ইসসসস্”
.
মাইশা বুঝে গেছে সব শুনেছে আয়াত। মাইশা মেকি হাসি দিয়ে বলার চেস্টা করে ….
”তেমন কিছু না আয়াত । আমাদের ক্লাস শুরু হয়ে যাবে। আমারা তাহলে যাই…..”
একথাটা বলেই মাইশা চলে কেটে পড়তে নিলেই আয়াত ওর বাহু ধরে কাছে গিয়ে দাঁড়ায় । মাইশা এহেন কাণ্ডে একটু অবাক হয়েছে ।
” একা বাসায় যেওনা কেমন ? তোমার গুণধর বয়ফ্রেণ্ডকে আজকে বলো তোমাকে ছেড়ে অন্য কোথাও মন দিতে । আমিই কিন্ত নিতে আসবো । ”
আয়াত আর এক মিনিটও দেরি না করে চলে যায় ।
,
”OMG , পোলা তো না যেন আগুনের গোলা । আজকে তার angry face দেখে আবারও ক্রাশ খেলাম রে। ”(পৃথা)
.
”তুই ক্রাশই খাইতে থাক । এদিকে তো মাইশার বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে । ”(সামাদ)
মাইশা বিরক্তি চোখে সামদের দিকে তাকায় । যদিও ওর মন পড়ে আছে আয়াতের দিকে । ছেলেটার কাজকর্ম অনেক অদ্ভুদ। আয়াত নামের এই character কে বুঝে উঠতে পারছে না সে !
.
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
.
ড্যাবড্যাব চোখ করে তাকিয়ে আছি আমার ঠিক উপরে থাকা ছেলেটার দিকে। কে এই ছেলেটা ?
” আদ্রাফ ?”
সাথে সাথেই ছেলেটা আমার উপর থেকে উঠে যায় । হঠাৎ এই সিচুয়েশনটা আমার খুব অকওয়ার্ড মনে হচ্ছে। আদ্রাফ নামের ছেলেটারও ঠিক এমন মনে হচ্ছে । আমি শব্দের উৎস খুজতে গিয়ে দেখি পাশের ছাদে একটি অপরূপ সুন্দরী মেয়ে দাঁড়ানো। আমাদের এ বাড়িটার সব দিক থেকে ফাঁকা শুধুমাত্র দক্ষিণ দিক দিয়ে অন্য একটি বাড়ির সাথে প্রায় লাগালাগি অবস্থায় রয়েছে।
সে ছাদেই মেয়েটি দাড়িয়ে আছে। হলুদ কামিজ পড়া অবস্থায় মেয়েকে কোনো হলদে পাখি থেকে কম লাগছে না । মেয়েটি আবারও বলে ওঠে ,
” আদ্রাফ ওকে সব বল । নাহলে তো তোকে চোর মনে করে উড়াধুরা পিটানি লাগানো শুরু করবে ।”
.
আমি এবার অবাক চোখে আদ্রাফের দিকে তাকাই । আসলেই তো ! আমাদের বাসায় ছাদে একজন অপরিচিত ছেলে আছে আর আমি কোনো রিয়েক্ট করছি না কেন ?
আমি কিছু বলতে যাবো তখনই ছেলেটা বলে ওঠে ……
” প্লিজ মিস কোনো চিল্লানি দিয়ো না । আমি সব বলছি । আসলে ১ বছর আগে যখন আমি আর আপু যখন পাশের বাসাটাতে উঠি তখন দেখি এ বাড়িতে কাজ চলছে । আর আমার প্রতিদিন বিকেলের রুটিন ছিলো এ ছাদে বসে একটু একা টাইম স্পেণ্ড করা। আজও নিয়মমাফিকভাবেই এখানে এসেছি । কিন্ত আমি জানতাম না যে আজ এখানে আপনার থাকা শুরু করবেন । আজকেই হয়তো আমার এখানে শেষ আসা…..”
.
আমি হ্যাবলাকান্তের মতো ছেলেটার দিকে তাকিয়ে আছি । তার কথাগুলো আমার বুঝে উঠতে পাক্কা ২ মিনিট লাগলো ।
”ইটস ওকে । এটা এক্সিডেণ্ট ছাড়া কিছুই না”
আমি এবার আবার ওই সুন্দরি আপুটির দিকে তাকাই । এটাই হয়তো আদ্রাফের বোন । আপুটাও ইশারায় আমাকে সরি বললো। আমি বিনিময়ে একটা মুচকি হাসি দেই ।
এবার আমি ছেলেটার দিকে তাকাই । আদ্রাফ ততক্ষণে এ ছাদ পেরিয়ে চলে গেছে । আমার দিকে একটাবারও তাকায় নি। আমি বুঝতে পারছি না আমার মনে এ কেমন অনুভূতির খেলা চলছে….?
.
🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁🍁
মাইশা বিকেলে ছাদে একদৃষ্টে পশ্চিমদিকে তাকিয়ে আছে । মনে যে তার কি চলছে তা ওর নিজেরই অজানা । শীতের আমেজে বেইলী রোডের কোলাহলপূর্ণ এলাকাটি বড্ড ভালো লাগে ওর। তবে ও এখন আয়াত নামক mysterious মানুষটিকে নিয়ে ভাবতে চাচ্ছে । আয়াতের character দেখে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না সে।
,
” রাগাও তুমি , কাদাও তুমি , অতীতের স্মৃতি আমার সামনে তুলে ধরো তুমি….কি চাও তুমি আরহাম আয়াত?”
.
”তোমাকে”
.
.#চলবে

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে