#রৌদ্দুর_তোমার_নামে🍂
#কায়ানাত_আফরিন
সূচনা পর্ব
গালে হাত দিয়ে একপাশে নিজের এক্স বয়ফ্রেন্ড কে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে মাইশা।সামনেই নীরবে দাঁড়িয়ে আছে তার ক্রাশবয় আরহাম আয়াত।সম্পর্কে ওর কাজিন।এমনভাবে দাঁড়িয়ে আছে যেন কোনো কিছুই হয়নি। নিজেরই ভার্সিটির ক্যাম্পাসে কেউ তাকে থাপ্পড় দিবে এটা সে কল্পনাতেও ভাবতে পারেনি। তার বন্ধু-বান্ধবীরাও এ দেখে ড্যাবড্যাব চোখে তাকিয়ে আছে।
মাইশা এবার গর্জে ওঠে বলে ,
‘
”সাহস কি করে হয় তোমার মাইশা জামান নূরের গায়ে হাত তুলো তুমি ?”
,
আয়াত নীরব চাহিনী দিয়ে এক বাঁকা হাসি হাসে।তারপর এক হাত পকেটে গুঁজে বলতে থাকে,
”সাহস আছে বলেই থাপ্পড় মারলাম..(চোখ গরম করে) ভার্সিটিতে কি প্রেম করতে আসো?”
”ও হ্যালো ও আমার ex-boyfriend। কিছু কাজ ছিল তাই দেখা করতে এসেছে । তোমার কি ? খালাতো ভাই তুমি সেটার মতো থাকো। লিমিট ক্রস…….”
মাইশাকে আর কোনোকিছু বলতে না দিয়ে আয়াত ওর একহাত চেপে গাড়ির কাছে নিয়ে আসে। এবার ওর ভয় হচ্ছে। মাইশা মনে মনে ভাবছে,
”শান্ত হলেও এর যা ভয়ঙ্কর রাগ ; আমাকে মেরে ফেলতেও তো দুবার ভাববেনা । ”
গাড়িতে মাইশাকে বসিয়েই আয়াত মাইশার সিটবেল্ট লাগাতে ব্যাস্ত হয়ে পড়ে। মাইশা এবার তাকে বাঁকা চোখে দেখতে থাকে।
রাগের জন্য আয়াতের নাকটা কেমন টমেটোর মতো লাল হয়ে আছে।মাইশার এখন মন চাচ্ছে আয়াতের নাকে টুস করে একটা কামড় দিতে । আয়াতের angry face টাতে আবারও ক্রাশ খেলো সে ।
.
”আবার যদি কোনো ছেলের পিছন ঘুরঘুর করতে দেখি না একেবারে ঠ্যং ভেঙ্গে ফেলবো । তারপর ঘুরবে আমার কোলে করে।”
নিমিষেই মাইশার ক্রাশ এবার বাঁশে পরিণত হলো । রাগে-দুঃখে কাদতে মন চাচ্ছে তার । তবুও চোখ পাকিয়ে সে বলতে থাকে ….
”এক্ষেত্রে আমাকে তোমার advice নিতে হবে না । ১৫ বছর আমেরিকাতে ছিলে ভালো ছিলে। আমার লাইফটাতো আমার মতো থাকতো!”
.
আয়াত এবার মাইশার খুব কাছে এসে পড়ে । মাইশা এতে একেবারে গাড়ির দরজার সাথে মিশে বসে। হার্ট ওর অনেক দ্রুত বিট হচ্ছে। কেননা আয়াত বেশ অদ্ভুদভাবেই তাকিয়ে আছে তার দিকে। মাইশা আয়াতের এই চাহিনীর সাথে বেশ অপরিচিত।
.
আয়াত ধীরে ধীরে মাইশার কপালে পড়ে থাকা চুলগুলো হাল্কা ফুঁ দিয়ে সরিয়ে দেয়। মাইশার শরীরে এক অদ্ভূুদ শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। আয়াত মিহি কন্ঠে বলে,
” মন টা চাচ্ছে তোমাকে ঠেঁসে ধরে একটা চুমু খাই । কিন্ত last একটা সুযোগ দিলাম। উল্টাপাল্টা কোনো কথা বললে ডাইরেক্ট কিস । Is it perfect punishment for you?”
.
মাইশার কুচকে থাকা চোখদুটো নিমিষেই গোল গোল চোখে পরিণত হয়।ছেলেটা মানুষের সামনে যতটা ভদ্র সাথে ঠিক ততটাই অসভ্য সে।
,
,
গাড়ি চলছে আপনগতিতে। মুখ ফুলিয়ে বসে আছে মাইশা। বাসায় যেতে এখনো আরও ১৫ মিনিট বাকি। মাইশা আড়চোখে তাকিয়ে দেখে একধ্যানে গাড়ি চালাতে মগ্ন আয়াত। চোখে-মুখে কেমন একটা ক্লান্তির ছাপ । ব্যাস্ত নগরে মানুষের হাক-ডাকের মাঝ দিয়ে আয়াতের চেহারাতেও কেন যেন বাঙালিত্বের ছাপ খুঁজে পাচ্ছে না মাইশা। হয়তো আমেরিকান কালচারকেই আগলে নিয়েছে সে। বাতাসের ঝাপ্টায় বারবার তার চুল কপালে পড়ছে আর বারবার সে তার বামহাত দিয়ে পেছনে ঠেলে দিচ্ছে।
আয়াতের এ দৃশ্যদেখে মাইশা চোখ ফিরিয়ে সিটে হেলান দিয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। অতীতের স্মৃতি না চাইতেও তার মাথায় চারা দিয়ে উঠছে।
.
********** *************
.
রিক্সা থেকে নেমে সবেমাত্র দাড়ালাম আমাদের নতুন বাড়ির সামনে। বাবার ২ বছরের কষ্টের ফসল উত্তরার এ বাড়িটি। মনে আছে আমার একরাশ নবঅনুভূতি। বাড়িটিতে মার সাথে সব গোছগাছের কাজ শেষ করে গেলাম ছাদে। এ বাড়ির ছাদটা এককথায় চমৎকার। ঢাকা শহর এক নতুন আঙ্গিকে দেখা যায় এ বাড়ির ছাদ থেকে।
.
চোখ বুঁজে এক লম্বা নিঃশ্বাস নেই আমি। রাস্তার পাশে বকুল গাছে থাকে বকুলের ঘ্রাণে সারাছাদ মৌ মৌ করছে। দুতলবিশিষ্ট এই বাড়িটা বেশ ভালো লেগেছে আমার । কেমন যেন একটা ছিমছামভাব।
পাশে একটা শব্দ পেতেই চট করে মাথা ঘুরিয়ে নেই আমি। কেন যেন মনে হচ্ছে কেউ আছে এখানে। এ কিকরে সম্ভব? কেননা মা-বাবা নিচে আর ভাই তো …..মনে হচ্ছে চোর আছে।
আমি একটু এগিয়ে চিলেকোঠার ওদিকে যাই। আচমকা কারও সাথে ধাক্কা লাগাতে নিচে পড়ে যাই আমি। ব্যাথা লেগেছে অনেক। আগন্তুকটার ভারের চাপে আমি চ্যাপ্টা হয়ে গেছি। ভয়ে এতক্ষণ চোখ খিঁচে ছিলাম। বেশ কিছুক্ষণ পর আস্তে আস্তে নিজের চোখ খুলি।
.
কপালে ছেলেটির চুল আছড়ে পড়ছে। তার মায়াবী চোখযুগল আমার চোখের দিকে। মুখে এক মুচকি হাসি। আমার চোখ খোলার সাথে সাথেই ছেলেটি বলে ওঠে,
” মাশাল্লাহ্……”
আমি অবাক চোখে তাকিয়ে আছি তার দিকে। শ্যামলা মুখটাতে অদ্ভদ এক মায়া কাজ করছে আমার। কিন্ত কে এই ছেলেটা।
.
” আদ্রাফ”
.
********* **********
.
গাড়িটা বাড়ির সামনে পৌছে গিয়েছে। মাইশা আস্তে করে নিজের চোখ খুলে। এবার ক্ষীপ্ত চোখে তাকায় আয়াতের দিকে। আয়াতের সেদিকে খেয়াল নেই।
” আমাকে থাপ্পড় মারার revenge আমি নিবোই আরহাম আয়াত !”
আয়াত কিঞ্চিত হাসে । তারপর মাইশার দিকে এগোতে এগোতে বলে……
” এখনই নিয়ে নাও babe আমি প্রস্তুত…..”
.
মাইশা মুখ শুকনো করে বের হতে নিলেই আয়াত মাইশার হাত চেপে নিজের কাছে নিয়ে আসে।
” মনে করো না আমার নজর থেকে এক সেকণ্ডের জন্যও ছাড় পাবে তুমি । এটা তো সবেমাত্র শুরু ! তোমার আঁধারময় জীবনে রৌদ্দুর হয়ে আসবো। Be ready for it…..মাইশুপাখি !”
Please upload তন্ময়ের তনু in YouTube of golpopoka.