রূপের তরী পর্ব-০৭

0
1887

#পর্ব_৭
গল্পঃ #রূপের_তরী??
writer: #Ashura_Akter_Anu
……..
পেছন থেকে কেউ তরীর হাত টান দেয়।এতে পড়ে যেতে নিলে কেউ ওকে ধরে ফেলে। যে ব্যাক্তিটি ওকে ধরেছে তার দিকে তরী একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রয়েছে।কারন সে রূপ। তরীর চোখের সামনে বা হাত দিয়ে তুড়ি বাজায়,এতে তরী কিছুটা লজ্জা পায় ওভাবে তাকিয়ে থাকার জন্য।
কিছুটা রেগে রূপকে প্রশ্ন করে,

–এভাবে কেন টান দিলেন?আমার হাতে খুব লেগেছে, ইশশ।

–আপনাকে এখানে কারা নিয়ে এল?(কিছুটা গম্ভীর কন্ঠে)

–সে কি কথা। এটাতো আমার ক্লাসরুম।কয়েকটা মেয়ে আমায় এখানে দিয়ে গেল। কিন্তু আপনি এখনও যাননি?

–আমি যাবো কি না যাবো আপনাকে ভাবতে হবে না।অ্যান্ড বাই দ্যা ওয়ে আপনার ক্লাসরুম নিচতলার শেষের রুমটা। এটা নয়।

–কি?

–হ্যাঁ।ওই মেয়েগুলো হয়তো আপনার সাথে মজা করেছে।

–হতেও পারে।

রূপ ও তরী রুমটার সামনে দাড়িয়ে কথা বলছিল। একটু পরই রুম থেকে চার পাচজন ছেলে বেরিয়ে যায়। ছেলেগুলোকে দেখে মনে হয় খুব একটা সুবিধের নয়। ওদের রুম থেকে চলে যাওয়া দেখে তরী চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে। তরীর এখন বুঝ আসলো কেন মেয়েগুলো ওকে এখানে রেখে গেছিল। রূপের দিকে তাকিয়ে ছলছল চোখে বলে,

–সরি….

–কেন?আমি চলে গেলে ভালো হতো তাইনা?(কিছুটা হাসির ছাপ মুখে নিয়ে)

–দয়া করে ওভাবে বলবেন না। আমার ভুল হয়ে গেছে। মাফ করে দিন প্লিজ(হিজাবের ওপর দিয়েই কান ধরে)

–এভাবে বললে করবো না। আমার একটা শর্ত আছে।

–কি শর্ত?

–আমার বন্ধু হতে হবে..।

–ওহহ এই শর্ত। আমি তো রাজি (দাত বের করে হেসে দিয়ে)

তরীই আগে হাত বাড়িয়ে দেয় রূপের দিকে। রূপ আস্তে করে তরীর কোমল হাতটি ধরে। একসাথে ক্লাসের সামনে এসে দাড়ায়। তরী রূপের দিকে হাসিমুখে তাকিয়ে বিদায় দিয়ে ক্লাসরুমে ঢুকে পরে।তরী রুমে ঢুকে গেলে রূপও চলে আসে সেখান থেকে।এটা ভেবে সে খুবই খুশি,আর যাই হোক ফ্রেন্ডশিপ তো হলো।

এখন নিজের কাছেই খারাপ লাগছে তরীর। কত কথা আজ সকালে ওনাকে শুনালো সে।মনে মনে বলছে, যদি আজ উনি চলে যেতেন তাহলে আমি আর নিজের মাঝে ফিরতে পারতাম না।।।

ক্লাসরুমে ঢোকার পর সে দেখে, তখনকার মেয়েগুলো সামনের সিটগুলো ছেড়ে পেছনে গিয়ে বসে আছে। রাগে ক্ষোভে ওদের সামনে গিয়ে বলতে থাকে,

–আপনারা তো খুব বজ্জাত দেখছি। একটু সাহায্য কি চাইলাম উল্টে আপনারা আমায় বিপদে ফেলতে চাইলেন?

ক্লাসে থাকা সবাই তরীর দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। এবং তরী যে মেয়েগুলোকে উদ্দেশ্য করে কথাগুলি বলল তারা তরীকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। যখন মেয়েগুলোর কেউই আর কথা বলল না তরী পেছনে ফিরে চলে আসতে নেয়। সামনে আর যেতে পারেনা ও। একদল ছেলেরা দাড়িয়ে আছে তরীর দিকে রক্তচক্ষু নিয়ে।
ওদের মাঝে একটা ছেলে বলে ওঠে,

–তোমার সাহস তো কম না মেয়ে।আমাদের ক্লাসরুমে এসে আমাদের ফ্রেন্ডকে কথা শোনানো হচ্ছে?

কথাগুলো শুনে তরীর রাগ হয়ে যায়।সাথে সাথে জবাব দেয় সে,

–ওহহ, সাহায্য চাইলে আমাকে ভুলভাল জায়গা দেখাবে আর আমি মনে হয় তার সেবা করবো?যা করেছি বেশ করেছি। পরের বার আমার সাথে এমন কোন মজা করলে আবারও বলবো। হুহ। আসছে কোন নাটের গুরু।

ছেলেগুলোকে দেখে মনে হচ্ছে, পারলে তরীকে চিবিয়ে খায়। কিন্তু কিছু করার আগেই রুমে স্যার ঢুকে পড়ে।তরী তারাতাড়ি সামনে একটা সিটে বসে পড়ে।
মনোযোগ দিয়ে পুরোটা ক্লাস করার পর ক্লাসরুম ছেড়ে চলে আসতে নেয় তরী। তখনি ওই মেয়েগুলো তরীকে চেপে ধরে। ওদের মাঝে একটা মেয়ে বলে ওঠে,

–খুব তো বড় বড় কথা বলছিলি।তোর সাহস কি করে হয় আমাদের মুখের ওপর কথা বলার। জানিস আমি কে?আমার বাবা এই কলেজের ফাউন্ডার। তোর কি হাল করতে পারি তা তোর জানা নেই। এখন চল, চুপচাপ ক্ষমা চা।

তরী কিছু একটা ভেবে মেয়েটিকে সরি বলে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। রূপ ওদের ড্রাইভারকে বলেছিল ও নাও আসতে পারে তরীকে নিতে তাই আগে থেকেই তরীর জন্য গাড়ী এসে রয়েছে।তরী সকাল সকালই বাড়ি ফিরে।
….
সন্ধ্যায় বাড়ি ফেরার পর বাড়ির ভেতর পুরোটা ফুল দিয়ে সাজানো দেখে রূপ। দেখা যায় রিশাদ সাহেব এসব কিছুর দিকনির্দেশনা দিচ্ছেন । বাবার কাছে গিয়ে রূপ হাসি মুখে জিজ্ঞেস করে,

–এসব কি হচ্ছে বাবা?কোন পার্টি বা অন্য কোন ফাংশন?আমি তো জানিনা?

–হুম।আসলে ভাবলাম তরীর আর তোর বিয়েটা তো হলো তাও আবার তুই ছিলি না। আর তোদের বিয়েটা পড়ানোও বাকি ছিল। তাই আরকি আজ ভাবলাম বাকি কাজটা সেরে ফেলি।

–কিন্তু বাবা তুমি তো চেয়েছিলে বিষয়টা পরে করতে, তাহলে হঠাৎ আজ?

–পরে কি হবে না হবে তার তো কোন কিছুই বুঝতে পারিনা তাইনা?তাই ভাবছি জলদি জলদি সব সেরে ফেলাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে।

–হুম ঠিক। কিন্তু তরী জানে?

–আরে ওই..

–কি? (ভ্রু কুচকে রিশাদ সাহেবের দিকে তাকিয়ে)

–আরে ও তো জানেনা। তবে তুই বল।সেটাই বেটার হবে।

–ওকে।

এই বলে সিঁড়ি বেয়ে নিজের রুমে চলে যায় রূপ। দরজায় নক করার পর ভেতর থেকে আওয়াজ আসে,
–জ্বি আসুন

রুমে ঢুকে রূপ তরীকে বিছানায় বসে বই পড়া অবস্থায় পায়।
–আজ কি ফুচকা আনেন নি?

–সরি সরি (জিহ্বার মাথায় কামড় দিয়ে)।একদম ভুলে গেছি। তবে হ্যা কাল শিওর নিয়ে আসবো। ও হ্যা, নতুনকলেজ কেমন লাগলো?আর কলেজ থেকে কখন এসেছেন?

–হুম অনেক ভালো লাগলো। আর বাড়ি ফিরেছি সে তো অনেক আগেই।

–হুম বুঝলাম। আজ বাড়িতে কি হচ্ছে তা কি জানেন?

–কই না তো?(জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে রূপের দিকে চেয়ে)কিছুই তো জানিনা।
রূপ এদিক ওদিক চোখ উল্টিয়ে সরাসরি বলে তরীকে,

–আজ আমার আর আপনার বিয়ে।
তরী অবাক হয়ে বলে,

–বিয়ে?

–হ্যা। আমাদের বিয়ে পড়ানো হবে আজকে।

–ওহহ।

এটুকু বলে আবারও চুপচাপ নিজের বই পড়ায় মন দিল তরী। রূপ তরীর এমন রিয়্যকশনে অবাক। কারন ও ভেবেছিল তরী হয়তো আরও কিছু বলবে। কিন্তু নাহ আর একটা কথাও না বলে স্বাভাবিকভাবে বই পড়ে যাচ্ছে সে। রূপ অতশত না ভেবে ফ্রেশ হতে চলে গেল সে।
..
রাত আটটার দিকে বিয়ে পড়ানোর জন্য কাজী এসে চৌধুরী ম্যানশনে পৌঁছালো।

হালকা কিছু লোকজনজনের সমাগম হলো বাড়িতে।

সাদা শার্টের ওপর কালো কোট ও কালো প্যান্টে রূপকে দারুন লাগছে। নিজেকে পার্ফেক্ট লাগছে কিনা তা আয়নায় দেখছে রূপ। এর মাঝে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে এলো তরী। লাল এবং কালোর মিশ্রনে একটা শাড়ী ও মাথায় কালো রংয়ের হিজাবে। বেরিয়ে এসেই রূপের দিকে হা করে তাকিয়ে বলছে সে,

–আপনিও কালো পড়েছেন?বাহ।

–ওহহ,,হোয়াট অ্যা কো-ইনসিডেন্স।

–হুম আমিও তো তাই ভাবছি।

–আচ্ছা ভাবাভাবির পর্ব শেষ করুন। চলুন নিচে চলুন। নইলে বাবা আপনাকে কিছু না বললেও আমায় আস্ত রাখবেনা।

–ঠিকআছে চলুন।

বিয়ের বাকি কাজ ভালোভাবেই শেষ হয়ে যায়। এরপর খাওয়াদাওয়া হালকা গল্পগুজব করে সবাই চলে যান।
নিজের রুমে এসে জামাকাপড় চেইন্জ করে ক্লান্ত শরীর নিয়ে শুয়ে পড়ে রূপ। আজ অনেকটাই ক্লান্ত সে। রূপকে দেখে তরী বলে,

–এই যে,আপনি তো আমার জায়গা নিয়েই শুয়ে পড়লেন।

ঘুম ঘুম কন্ঠে আস্তে রূপ বলে,

–আজ আর সেকশন আলাদা না করি। আমার খুব ঘুম পাচ্ছে। আপনি প্লিজ আজকের মতো অ্যাডজাস্ট করুন।কাল থেকে না হয় বর্ডার দিয়েই শুবো।

তরী আর কিছু না বলে চেইন্জ করে নেয়। এরপর বিছানার সামনে সোফায় গিয়ে নিজের ক্লাসের একটা বই খুলে বসে পড়ে।কিছুসময়ের মাঝেই রূপ গভীর ঘুমে বিভোর হয়ে যায়।

বইয়ের পাতার ওপর থেকে চোখ তুলে রূপের দিকে তাকায় তরী। একটা মুচকি হেসে বইটা বন্ধ করে ধীর পায়ে রূপের মাথার কাছে গিয়ে বসে সে। ভালোকরে পর্যবেক্ষণ করার পর সে দেখলো আসলেই রূপ গভীর ঘুমে। এবার সে তার ডান হাতটা রূপের মাথার চুলে ডুবিয়ে দেয়। আস্তে আস্তে হাত বুলোতে থাকে রূপের মাথায়। আর মনে মনে হাজারও কথা বলতে থাকে সে,

—আপনি আমাকে যে বোকা বলেন,আপনি তো নিজেই বোকা। কিচ্ছু বোঝেন না। অবশ্য বোঝার মত আমি তেমন কিছুই করিও নি। আপনি যে কেমন তা আমি প্রথম দিনই বুঝে গেছি। কিন্তু আমি কেমন তা আপনি হয়তো এখনও বোঝেন নি। আমার অতটাও যোগ্যতা নেই যে আমি আপনার ওপর নিজের রাগ ক্ষোভ উজার করবো। আমি নিতান্তই একটা ছোট পরিবারের মেয়ে। আপনার মত ছেলের সাথে বিয়ে হবে তা আমি কখনো স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারিনি। জানেন,আপনি যতটা সুন্দর দেখতে, তার থেকে হাজারও গুন সুন্দর আপনার মন মানসিকতা ও আপনি। আপনাকে যতটা দেখি ততটাই অবাক হই।আচ্ছা আপনার ঠোঁটে সবসময় ওই হৃদয় কাড়ানো হাসি কিভাবে থাকে বলবেন আমায়?আপনার হাসিটা যে দেখার জন্য আমি লুকিয়ে লুকিয়ে আপনার দিকে চেয়ে থাকি । জানেন কাল রাতে একটু রাগ হয়েছিল আপনার ওপর। আপনি যে আমায় জড়িয়ে ধরেছিলেন তা আমি টের পেয়েছিলাম। তবে আমার রাগ এই কারনে হয়েছিল যে, সারারাত আমার জন্য আপনি অত কষ্ট কেন করলেন?আমায় একটিবার ডাকতেও তো পারতেন?তাই তো আপনার সাথে সকালে অমনটা করেছিলা। সেটার জন্য আপনার কাছে ক্ষমা চাইছি। দয়া করে মাফ করে দেবেন। আজ অবশ্য বিয়ে পড়ানোর বিষয়টা আমিই বাবাকে বলেছিলাম।ভাবলাম বিয়ে তো বিয়েই, বাকি কেন থাকবে?আর হ্যা, ইচ্ছে করেই শাড়িটা আপনার সাথে ম্যাচিং করে পড়েছিলাম। আপনাকে আমি হয়ত এসব কিছু মুখ ফুটে কখনো বলতে পারবো না। তবে আপনি যেদিন আপনার মনের কথাগুলো আমায় বলবেন, সেদিন এমনিই বুঝে যাবেন সবকিছু।
আমার তো এটাই মনে হয়, আপনি আমার জীবনে পাওয়া সেই উপহার যা সারাজীবন ধরে আমার ঠোঁটে হাসি ফোটাতে পারবে।

আপনি বলেন না,আমার রুপের জন্য আপনি আমায় ডাকেন রুপের তরী। কিন্তু আমিতো নিজেকে আপনার তরী বলে ভাবি। #রূপের_তরী??।
.
.
#চলবে___

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে