#রূপকথা
#লেখিকা-DI YA
#পর্ব-০৮
আমি রুমে গিয়ে আরশিকে বললাম রূপ ভাইয়া ওকে ডাকছে।আরশি চলে গেলো ভাইয়ার খোঁজে। আরশি ছাদে গিয়ে রূপ ভাইয়াকে খুঁজে পেলো। তারপর বললো,
তুমি আমাকে খুঁজছিলে ভাইয়া – আরশি
হুম। একটা কথা জানার ছিল – রূপ
কি কথা ভাইয়া – আরশি
তুই সব জানতি আরশি? – রূপ
মানে কি সব জানবো ভাইয়া – আরশি
আমার আর কথার ব্যাপারে তাই না – রূপ
হুম আমরা সবাই তো জানি এই কথাটা।শুধু মাত্র কথাই জানেনা যে তোমাদের বিয়ে সেই ছোটবেলা থেকেই ঠিক – আরশি
কালকে কথা আমাকে কি বলেছে জানিস – রূপ
কি ? – আরশি
আমার নাকি প্রেমিকা আছে। তার সাথে নাকি ও কলে কথা ও বলেছে। – তারপর একে একে রূপ সবকিছু আরশিকে বলতে লাগলো।
আমার কি মনে হচ্ছে জানো ভাইয়া – আরশি
কি মনে হচ্ছে তোর ? রূপ
কেউ তো আছে। যে আমাদের অগোচরেই এসব কিছু করছে। সে চাচ্ছে তোমার আর কথার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি করতে।তোমাদেরকে আলাদা করে দিতে। আমি পুরোপুরি সিউর না কিন্তু আমার মন বলছে এরকমই কিছু একটা হয়েছে – আরশি
হুম এটা আমিও ভেবেছি। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে যে সবার পিছনে থেকে এসব গেম খেলছে সে আমাদের খুব পরিচিত কেউ।আর সে আমাকে আর কথাকে হয়তো খুব ভাল করে চেনে – রূপ
কেন তোমার এসব কেন মনে হলো ? – আরশি
আমার কাছে প্রায় দুই তিনমাস পর পর কিছু ছবি পাঠানো হতো। ছবিগুলো বাংলাদেশে থেকে পাঠানো হতো।আর এই কাজে প্রতিবারই ভিন্ন ভিন্ন সিম কার্ড ব্যবহার করা হতো – রূপ
কিসের ছবি আর কেমন ছবি ভাইয়া ? – আরশি
দাড়া তোকে দেখাচ্ছি। – রূপ
তারপর রূপ নিজের ফোন থেকে কিছু ছবি বের করে আরশিকে দেখালো৷ ছবিগুলো দেখে আরশি ও চমকে গেলো। রূপের উদ্দেশ্য সে বলে উঠলো,
এসব ছবি তোমাকে কে পাঠালো ? – আরশি
এটা জানলেই তো সমস্যার সমাধান হবে। এখন কিভাবে জানবো সেটাই বুঝতে পারছি না ? – রূপ
খুব বেশি সময় লাগবেনা তাকে ধরতে।সে আমাদের সাথে যেভাবে গেম খেলছে আমরাও ঠিক একই ভাবে তার সাথে গেম খেলব।খেলার শুরুটা তো সে করেছে সমাপ্তিটা নাহয় আমরাই করব – আরশি
কি বলতে চাচ্ছিস তুই ? – রূপ
তুমি যা ভাবছো সেটাই। এখন সময় খুব কম। যা করার তারাতাড়ি কর। – আরশি
আচ্ছা আমি আজকেই তার সাথে কথা বলবো – রূপ
আর হ্যা এখন আর কাউকে কিছু জানিয়ে লাভ নেই।আর তুমি কথার থেকে দূরে থাকো। সে যেভাবে যা চাইছে আমরা ঠিক সেটাই করব। – আরশি
কিন্তু আমি হয়তো এখনি বুঝতে পারছি কে এমন করছে – রূপ
তুমি ভুল বুঝছো। ওটা সম্ভব না। কারণ সে এরকম করবেনা।এখন তুমি তার সাথে কথা বলো। সেই আমাদের বলতে পারবে সবকিছু – আরশি
আচ্ছা ঠিক আছে কেউ আবার শুনে ফেলবে। এখন যা নিচে যা – রূপ
আচ্ছা ঠিক আছে – আরশি
আরশি চলে যাবার পর রূপ ছাদে থেকে নিচে আসতে যাবে তখনি দেখে দ তাকে দেখে কেউ একজন আড়াল হয়ে গেলো। রূপের মুখে হাসি ফুটে উঠলো। সে একা একাই বলতে লাগলো,
এখন শুরু হবে খেলা। দেখি কার জয় হয় এই খেলায়। – রূপ বলে নিচে চলে গেলো।
কাজি মাত্রই বিয়ে পড়ানো শেষ করলো।চারিদিকে খুশির আমেজ রয়েছে। রিয়া আর রায়ান ভাইয়াকে একসাথে খুব ভাল মানিয়েছে।যেনো মেইড ফর ইচ আদার।দেখতে দেখতে বিদায়ের সময় চলে আসলো। এতক্ষণ যে পরিবেশটা হাসি আনন্দে ভরপুর ছিল। এখন তার কিছুই নেই।সবকিছু নীরব হয়ে গেছে। শুধু শোনা যাচ্ছে কান্নার শব্দ। মেয়েদের জীবনটাই হয়তো এমন। এতদিন যে বাসায় ছিল। যে বাসায় সে ছোট থেকে বড় হয়েছে।আজকে তাকে সেই বাসা ছেড়ে চলে যেতে হচ্ছে। আজকে থেকে সে অন্য একটি বাড়ির পুত্রবধূ।সম্পূর্ণ নতুন পরিবেশ। নতুন মানুষ। সবকিছুর সাথে মানিয়ে নিতে নিতে আবার সবকিছু বদলে যাবে।এটাই হয়তো জীবন।প্রত্যেকটি অধ্যায় ভিন্ন ভিন্ন। একসময় রিয়া আমাদের কাছে আসলো। একসাথে একসাথে আমাকে আকাশকে আর আরশিকে জড়িয়ে ধরলো। আমরা তিনজন ও ওকে জড়িয়ে ধরলাম।হঠাৎই আমার চোখ থেকে ও পানি পরতে শুরু করলো।বিয়ের সময়টা যতটা আনন্দের বিদায়ের সময়টা তার থেকে অনেক বেশি কষ্টের সময়। তারপর রিয়াজ ভাইয়া আর আকাশ গিয়ে রিয়াকে গাড়িতে উঠিয়ে দিলো।ওদের গাড়ি চলতে শুরু করলো। বিয়ে শেষ। সময় মনে হয় একপলকেই কেটে গেলো। কখন কি হলো বুঝতে পারলাম না। এত তারাতাড়ি কেন সময় চলে যায়। আজকে আমি আর আরশি বাসায় ফিরে যাবো তাই আন্টির সাথে দেখা করে আমরাও বাসার উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলাম।বাবা মা বড়বাবা আর বড়আম্মু এক গাড়িতে। আমি আরশি আর রূপ ভাইয়া এক গাড়িতে। যেহেতু রাত হয়ে গেছে সেকারণে রাস্তায় খুব একটা জ্যাম নেই।রাস্তা একপ্রকার ফাঁকাই বলা চলে। আমাদের আসতে আসতে রাত ১ টা বেজে যায়। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আমি শুয়ে পরি।অনেক ক্লান্ত তার মধ্যে কালকে আবার বউভাতের অনুষ্ঠান ও আছে। এসব ভাবতে ভাবতে কখন আমি ঘুমিয়ে গিয়েছিলাম জানিনা।হঠাৎ গভীর রাতে হাতে কারোর স্পর্শ পেতেই ঘুম ভেঙে গেলো। আমি বলে উঠলাম,
এত রাতে আমার রুমে কেন এসেছো ভাইয়া ? – কথা
তুই জেগে আছিস ? – রূপ
জি এখন আমার প্রশ্নের উত্তর দাও – কথা
তুই বাচ্চা নস কথা। আর এখন তো সবই জানিস তাই না – রূপ
আমার হাতের মেহেদীতে নিজের নামের প্রথম অক্ষর আপনিই লিখে ছিলেন তাই না ? – কথা
হুম – রূপ
প্রতিদিন আমি ঘুমানোর পর আপনি আমার রুমে আসেন তাই না ? – কথা
হুম – রূপ
আপনাকে কিছু কথা বলি। মন দিয়ে শুনবেন আমার কথা গুলো – কথা
কি বলবা বলো – রূপ
তারপর কথা রূপকে কিছু কথা বললো। সে সব কথা শুনে রূপ উঠে কথার রুমে থেকে চলে গেলো। আর কথা ও আর অন্য কোনো ব্যাপারে কিছু না ভেবে শুয়ে পরলো। সে জানেনা রূপকে ওই কথাগুলো বলা তার ঠিক ছিল কি না। কিন্তু এর শেষ টা কথা ও দেখতে চায়। এসব আকাশপাতাল চিন্তা ভাবনা করতে করতে কথা আবারো ঘুমিয়ে গেলো।
পরদিন সকালে থেকে সবদিনের মতই আবার সবকিছু স্বাভাবিক নিয়মে চলতে লাগলো।সকালে উঠে আমরা ব্রেকফাস্ট করে রেডি হতে লাগলাম।আমি রূপ ভাইয়া আর আরশি এখন যাব। বাকিরা একটু পরে যাবে। আজকে আমি আর আরশি মেচিং গাউন পরবো।আজকে দুজনে ঠিক একভাবে সেজেছি। তৈরি হয়ে আমার বের হয়ে গেলাম বাসা থেকে। রিয়াদের বাসায় গিয়ে দেখি রিয়াজ ভাইরা মোটামুটি যারা প্রথমে যাবে তারা সবাই তৈরি হয়ে আছে।আমাদের পর পরই আকাশ আসলো। তারপর সবাই রায়ান ভাইয়াদের বাসার উদ্দেশ্য যেতে লাগলাম। রায়ান ভাইয়ার বাবা আর ভাইয়েরা আমাদের জন্য গেটের কাছে দাড়িয়ে ছিল।আমরা ভিতরে ঢুকতেই রিয়া দৌড়ে এসে প্রথমে রিয়াজ ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে তারপর আমাদের দিকে এগিয়ে আসে। রিয়াকে কান্না করতে দেখে আকাশ বলে,
রিয়ু সেই কালকে থেকে কান্না শুরু করেছিস। তোর জন্য তো এখন রায়ান ভাইয়ার টিস্যুর ফ্যাক্টরি দেওয়া লাগবে – আকাশ
ওকে জ্বালাচ্ছিস কেনো আকাশ ? – আরশি
না তোরা চিন্তা কর ওর চোখের পানির বন্যায় সবকিছু ভেসে যাচ্ছে তখন কি একটা অবস্থা হবে ভাব – আকাশ
আকাশের লথায় সবাই হেসে দেয়। এমন সময় রূপের ফোনে একজনের কল আসে। কল রিসিভ করে সে বলতে লাগলো,
কি জানতে পারলি ? – রূপ
-অপাশের ব্যক্তি
ওহহ গ্রেট আমরা তাহলে অর্ধেক সমাধান পেয়ে গিয়েছি সমস্যার – রূপ
-অপাশের ব্যক্তি
আচ্ছা তুই তাহলে দেখ। আর ওকে সাবধানে রাখিস। শুধুমাত্র ও জানে কে আছে সবকিছুর পিছনে – রূপ
চলবে ,