#রূপকথা
#লেখিকা-DI YA
#পর্ব-৬
দেখতে দেখতে রিয়াদের বাড়িতে কথাদের একদিন পার হয়ে গেলো। কথা আকাশ আর আরশির ও রিয়ার কাজিনদের সাথে অনেক ভাব হয়ে গিয়েছে । আজকে রিয়ার মেহেদি অনুষ্ঠান চলছে বাসায়। মেহেদি প্রোগামটা রিয়াদের ড্রইংরুমে করা হয়েছে। আজকে সবার 🥰ড্রেস কোড সবুজ রঙ।আরশি আর কথা আজকে একই রকম থ্রিপিস পরেছে আর আকাশ পরেছে সবুজ রঙের টিশার্ট আর সাথে কালো জিন্স। কথা আর রিয়ার একজন কাজিন রিয়ার দুই হাতে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছিলো। এমন সময় বাসায় প্রবেশ করে রূপ। রূপ একা নয় সাথে রয়েছে সেদিনের সেই মেয়েটি। সাথে রয়েছে আরো একটি ছেলে।সে হচ্ছে রিয়াজ ভাইয়া।এ বাসায় আসার পর রিয়াজ ভাইকে আমি শুধু প্রথম দিনই দেখেছিলাম। তারপর আর দেখিনি। রিয়া ওদের দেখেই রিয়াজ ভাইকে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। আর মেয়েটাকে জিজ্ঞেস করলো,
কেমন আছো প্রমি আপু আর ভাইয়া আপনি কেমন আছেন ? – রিয়া
হুম ভাল। তুমি কেমন আছো? – রূপ
ভাল – রিয়া
হুম ভাল কিউটিপাই।তোমাকে আজকে খুব কিউট লাগছে – প্রমি
থ্যাংক্স আপি।তোমাকে ও খুব সুন্দর লাগছে – রিয়া
আরশি রূপ ভাইয়াকে দেখে তার দিকে এগিয়ে গিয়ে বলতে লাগলো,,
কেমন আছো ভাইয়া? – আরশি
ভাল। তুই কেমন আছিস? আর কথা কই ? – রূপ
এই আরু – রিয়া
কি ? – আরশি
রূপ ভাইয়া তোকে আর কথাকে কিভাবে চিনে? – রিয়া
আরে আমার বড়ভাই আমাকে চিনবে না তো কাকে চিনবে হুম ? – আরশি
আরশি তোর বোন লাগে রূপ – রিয়াজ
হুম আরশি আর রিয়া যে ফ্রেন্ড এটা আমিও জানতাম না।আমি জেনেছি ২ দিন আগে – রূপ
সবাই একে অপরের সাথে কথা বলায় মেতে উঠেছে। তখনি রূপ ভাইয়া আমার দিকে এগিয়ে আসলো।তারপর বলতে শুরু করলো,
কথা – রূপ
জি ভাইয়া বলো – কথা
কেমন আছিস? – রূপ
ভাল।- কথা
আমাকে জিজ্ঞেস করবি না আমি কেমন আছি ? – রূপ
আপনার খারাপ থাকার কোনো কারণ তো আমি দেখছি না।তাই আর জিজ্ঞেস করে কি হবে বলেন – কথা
আমাদের কথার মাঝেই ওই প্রমি নামের মেয়েটা আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো। এসে বলতে শুরু করলো,
হাই কথা কেমন আছো তুমি? – প্রমি
জি আমি ভাল আপু। আপনি কেমন আছেন? – কথা
জি আমিও ভাল। তেমার সাথে তো আমার পরিচয় হয়নি। তো আমি আমার পরিচয় দিয়ে দেই কেমন ? আমি হচ্ছি প্রমি খান।রিয়াজ আর আমি কাজিন সাথে বেস্ট ফ্রেন্ড ও।তোমার রূপ ভাইয়া ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড হয়। আমরা তিনজনে প্রায় সমবয়সীই। আর দেশের বাইরেও আমরা তিনজন একসাথেই থাকতাম – প্রমি
ও আচ্ছা আপু – কথা
আমাদের কথা বলার মাঝে সেখানে আসে আকাশ।আর আকাশ এসে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলে,
আলু – আকাশ
হুম বল – কথা
তুই কিন্তু এখনো মেহেদি দিসনি। এখন চল আমি নিজে তোকে মেহেদী দিয়ে দিব – আকাশ
আচ্ছা চল – কথা
আমি আর আকাশ গিয়ে পাশাপাশি সোফায় বসলাম আকাশ আমার হাতে খুব সুন্দর করে মেহেদী দিয়ে দিল। মেহেদি দেওয়ার শেষে আরশি বললো,
বা আকাশ তুই তো খুব সুন্দর করে মেহেদী দিতে পারিস।এ কথা তো আমি আগে জানতাম না। আগে জানলে মেহেদী দেওয়ার জন্য সবসময় তোর কাছেই আসতাম – আরশি
হুম আসছে মামা বাড়ির আবদার।তুমি আসলা আর আমি মেহেদী দিয়ে দিলাম। আমি শুধু আলুকে মেহেদী দিয়ে দিব বুঝলি – আকাশ
লাগবেনা আমাকে দিয়ে দেওয়া হুহ।তুই তোর আলু পটল বেগুনকেই মেহেদী দিয়ে দে – আরশি
আরশির কথা শুনে কথা হেসে দিলাম। তারপর বললো
থাম তোরা । আর আমি একটু রুমে যাচ্ছি।তারাতাড়িই চলে আসবো – কথা
রুমে যাবার জন্য সিড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময়।হঠাৎই আমার মেহেদী দেওয়া হাতটি জেনো কার পাঞ্জাবির উপর পরলো। মাথা তুলে তাকাতেই দেখি রূপ ভাইয়ার পাঞ্জাবিতেই আমার মেহেদি লেগেছে। এটা দেখে তিনি বললো,
কথা, একটু দেখে শুনে চল।দেখ আমার পুরো পাঞ্জাবি টা নষ্ট হয়েে গেলো – রূপ
আমি কিছু বলবো তার আগেই প্রমি নামের মেয়েটা বলে উঠলো,
কথা একটু সাবধানে চলাফেরা করো। দেখো তোমার জন্য রূপের এত সুন্দর আর দামি পাঞ্জাবি টা নষ্ট হয়ে গেলো। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে এই পাঞ্জাবি টা রূপের জন্য আমি পছন্দ করেছিলাম – প্রমি
থাম প্রমি। অনেক বলে ফেলেছিস।আমার পাঞ্জাবি নষ্ট হয়েছে তাই না। তোর ড্রেস তো আর নষ্ট হয়নি। তো যা বলার আমিই বলি। তুই চুপ থাকলে আমি খুশি হবো। – রূপ
প্রমির কথা শুনে কেন জানি আমার অনেক কান্না পাচ্ছিল। তাই আমি রূপ ভাইয়াকে উদ্দেশ্য করে,
সরি ভাইয়া – বলে উপরে রুমে চলে আসি। রুমে এসে ওয়াশরুমে গিয়ে সাথে সাথে মেহেদী ক্লিন করে ফেলি।কিন্তু যা রঙ হওয়ার তা এতক্ষণে হয়ে গিয়েছে। আমি কান্না করতে করতে শাওয়ারের নিচে বসে পরি,
প্রমি আপুর পছন্দ করা পাঞ্জাবি পরেছে রূপ ভাইয়া।হুম পরবেই তো ভালোবাসার মানুষ পছন্দ করে দিয়েছে সে তো পরবেই। কিন্তু কেন জানি আমার অনেক কষ্ট হচ্ছিল। বুকের ভিতর কিছু হারিয়ে ফেলার ভয় হচ্ছিল। কিন্তু যা হারানোর আমি তো তা সেই পাঁচ বছর আগেই হারিয়ে ফেলেছি। ভেবে নিজে একা একাই হাসতে লাগলো কথা।।
তারপর শাওয়ার অফ করে ড্রেস চেঞ্জ করে রুমের বাইরে আসলো কথা। কান্না করার ফলে তার প্রচুর মাথা ব্যাথা করছিল। তাই একটা মেডিসিন খেয়ে শুয়ে পরলো। কথা শুয়ে পরার কিছুক্ষণ পরই রূপ ঘরে প্রবেশ করলো। এতক্ষণ বাইরে থেকে সে সবই লক্ষ করছিল।তাই কথা ঘুমিয়ে যাওয়ার পর পরই রুমে ঢুকে। যেহেতু সবাই নিচে অনুষ্ঠানে রয়েছে। তো কারোর এইদিকে আসার কথা নয়। রূপ গিয়ে কথার হাতটা দেখলো। তার মেহেদি দেওয়া হাতে নিজের নামের প্রথম অক্ষর লিখে দিল।এই কারণে সে আসার সময় মেহেদী নিয়ে এসেছিল। তারপর মেহেদি শুকানোর পর সে ওটা ক্লিন করে দিয়ে চলে গেলো।
পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট করে সবাই যে যার কাজে লেগে পরলো। সন্ধ্যা সময় হলুদের প্রোগ্রাম। কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠান করা হবে।তাই বাসায় একপ্রকার ঝামেলা নেই বললেই চলে। বাসার ছাদে সবাই যে যার ডান্স প্র্যাকটিস করছে। আমি ছাদে বসে সবাইকে দেখছিলাম। তখনই আমার নজর গেলো আমার হাতের মেহেদীর দিকে। সেখানে ছোট করে একপাশে R লেখা। লেখাটি এমন ভাবে লিখেছে যে কেউ গভীর ভাবে খেয়াল না করলে বুঝবেনা। এই কাজটি যে রূপ বাইয়ার করা এটা আমি বুঝতে পারলাম। কিন্তু এটা কেন করলো সে? প্রশ্ন টা তাকে তো করতেই হবে। কিন্তু ভাইয়া কই ?
ভাইয়াকে খুঁজতে খুঁজতে নিচে চলে আসলাম। কিন্তু পাচ্ছিলাম না। পরে বাসার বাইরে বাগানের সাইটে আসতেই দেখলাম রূপ ভাইয়া প্রমি আপুকে। না কথা আর দেখতে পারলো না।চোখ বন্ধ করে চলে আসলো সেখান থেকে।চোখের দেখা সে কিছুতেই মেনে নিতে পারছে না। না এভাবে আর চলতে পারে না। কথা তো জানে রূপ ভাইয়া তার না।তাহলে কেন বার বার তার উপর দূর্বল হয়ে পরছে। না আর না। সামলে নিবে সে নিজেকে।শক্ত হতে হবে তাকে।
বিকেল ৪ টার দিকে সবাই রেডি হওয়া শুরু করেছে। এখন সন্ধ্যা ৭ টা বাজে । বেশিরভাগ মানুষ চলে গিয়েছে। বাসায় আছি এখন আমরা ৪ জন। আমি রূপ ভাইয়া রিয়াজ ভাইয়া আর রিয়া। পার্লারের মেয়েরা রিয়াকে শাড়ি পরিয়ে দিচ্ছে আমি বসে বসে সেটা দেখি। এমন সময় দরজার বাইরে থেকে রিয়াজ ভাইয়া বলে উঠলো,
তোদের কি হয়েছে। – রিয়াজ ভাইয়া
ভাইয়া তোমরা দুজন গাড়িতে গিয়ে বসো আমরা আসছি – কথা
আচ্ছা জলদি আয় – বলে ভাইয়া চলে গেলো।
তারপর আমিও রিয়াকে ধরে নিচে নিয়ে গেলাম। গাড়িতে উঠে বসতেই গাড়ি চলতে শুরু করলো। আধা ঘন্টার মত সময় লাগলো কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছাতে। সবাই গাড়ি থেকে নেমে পরলাম।তারপর ভিতরে চলে গেলাম।রিয়াকে স্টেজে বসিয়ে দিয়ে আমি নামতে যাব তখনি হঠাৎ শাড়িতে বেজে আমি পরে যেতে নেই কিন্তু একজন আমাকে আগলে নেয়।তাকিয়ে দেখি
চলবে ,