#রূপকথা
#লেখিকা-DI YA
#পর্ব-০৫
কথা ঘড়ির দিকে তাকাতেই দেখলো ৯ টা বাজে। তাই সে ওয়াশরুমে চলে গেলো ফ্রেশ হতে। ফ্রেশ হয়ে বের হবার পর সে যে জিনিসগুলো কিনেছিল সবকিছু গুছিয়ে রেখে রুম থেকে বের হয়ে গেলো। আরশির রুমে গিয়ে দেখলো আরশি কার্টুন দেখছে। তাই কথা বলতে লাগলো,
অরু অরু – কথা
হ্যা কি হয়েছে বল – আরশি
আজকে রূপ ভাইয়া অফিসে কেন যায়নি। বাবা আর বড়বাবা তো ঠিকই অফিসে গিয়েছে। তাহলে রূপ ভাইয়া কেনো যায়নি? – কথা
তুই কি পাগল কথা – আরশি
কেন আমি পাগল কেন হবো। কোন খুশিতে আমি পাগল হবো সেটা তো বল – কথা
কোন খুশিতে পাগল হবি। আমি সেটা জানিনা। কিন্তু তুই যে পাগল হয়ে গিয়েছিস এটা আমি সিউর – আরশি
কেন ? – কথা
আজকে ভার্সিটি বন্ধ কেন এটা বল তো দেখি – আরশি
আরে তুই জানিস না আজকে শুক্রবার তাই ভার্সিটি বন্ধ। ও আচ্ছা এক মিনিট আজকে তো শুক্রবার – কথা
জি আজকে শুক্রবার। এতক্ষণে যে আপনি এটা বুঝছেন তাতে আমি ধন্য হয়ে গেলাম – আরশি
তাহলে বাবা আর বড়বাবা কই ? আমি তো সকাল থেকে তাদের বাসায় দেখিনি – কথা
তারা তাদের অফিসের নতুন প্রজেক্টের জন্য কি কাজে যেনো গিয়েছে। আমি ঠিক জানিনা। কিন্তু তারা ঢাকার বাইরে এখন।আসতে নাকি দুইদিন সময় লাগবে – আরশি
ও আচ্ছা বুঝলাম – কথা
ওদের দুইজনের কথোপকথনের মাঝেই রিয়া আরশির ফোনে কল দিল। আরশি কল রিসিভ করে স্পিকারে দিয়ে দিলো।তারপর ওরা আকাশকেও কলে জয়েন করলো,
কালকে সবাই সকাল সকাল আমার বাসায় এসে পরবি কেমন ? – রিয়া
কেন কেন? কালকে আসবো কেন আর কালকে না ক্লাস আছে আমাদের – কথা
ক্লাসের চিন্তা করা লাগবে না তোদের।আমি উনাকে বলে দিয়েছি উনি প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে নিবে। আর কালকের দিনটা গেলেই তো পরশুদিন থেকে মেহেদি অনুষ্ঠান শুরু। তারপর দেখতে দেখতে বিয়ে শেষ হয়ে যাবে। তো কালকে সবাই ব্যাগ গুছিয়ে সকাল সকাল আমার বাসায় চলে আসবি। ঠিক আছে – রিয়া
সব তো ঠিক আছে। কিন্তু রিয়া তুই তো দেখি এখন থেকেই রায়ান ভাইকে উনি উনি করা শুরু করে দিয়েছিস – আকাশ
এই আকাশ তুই কিন্তু আবার শুরু করছিস। দাঁড়া তোর বিয়ের সময়টা আসতে দে আমিও তোর বউয়ের সাথে এমনি করবো। তখন বউয়ের সাথে হলে বুঝবি – রিয়া
কিন্তু রিয়া কথাটা কিন্তু আকাশ মন্দ বলেনি। মানে এতদিন তো প্রেম করতি জান বাবু সোনা মনা পুদিনাপাতা ধনেপাতা ছাড়া কথা বলতি না। এখন আবার উনি উনি শুরু করলি কাহিনী কি হুম – কথা
কাহিনী আর কি তুই বিয়ে কর তখন বুঝবি কাহিনী কি। তখন তুই ও আমার জিজুকে উনি উনিই করবি – আরশি
আরশির কথায় কিন্তু যুক্তি আছে আলু।তুই বিয়ে করে দেখতে পারিস – আকাশ
আমার বিয়ের আশা তোরা ছাড়। আমার বিয়েতে একটাকেও বলবো না।জামাই আছে আমি আছি আর কাকে লাগে বিয়ে করতে। দুজনে কবুল বলে সাইন করে দিয়ে আসবো। ব্যাস বিয়ে শেষ। শুধু বিয়ের আগে বাসায় জানাবো যে বিয়ে করব যাতে পরে জুতা আর আমার গাল দূরত্বে অবস্থান করে – কথা
চাচীকে দিয়ে বিশ্বাস নাই।রেগে গেলে কথার ভর্তা বানিয়ে ফেলবে – আরশি
আচ্ছা কালকে সকালে তাহলে আমি আরু আর আলুকে নিয়ে রিয়ার বাসায় যাবো ঠিক আছে – আকাশ
হুম এটাই ভাল হয় – আরশি
আচ্ছা ঠিক আছে। টাটা বাই বাই গাইজ। কালকে দেখা হবে – কথা
টাটা – আকাশ
বাই – রিয়া
নিচে থেকে রুহি চৌধুরী ডাকায় কথা আর আরশি নিচে চলে গেলো। নীচে গিয়ে জানতে পারলো দুইদিন পর রূপের বেস্ট ফ্রেন্ডের ছোট বোনের বিয়ে। ওদের সবাইকে ইনভাইট করে গেছে। কথা বিয়ের কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখতে লাগলো তারপর আরশি বললো,
আরশি কার্ডটা দেখ – কথা
কেন এই কার্ডে কি আছে? কার্ড দেখে আমি কি করব ?- আরশি
আরে আম্মা তুই আগে কার্ডটা দেখ তারপর কথা বল – কথা
আরশি কার্ডটা হাত নিয়ে দেখলো। তারপর বললো,
ভাইয়া – আরশি
হুম বল – রূপ
তোর বেস্ট ফ্রেন্ডের বোনের নাম রিয়া খান – আরশি
হুম ও তোদের ভার্সিটিতেই পড়ে আর ওর হবু বর ও তোদের ভার্সিটির টিচার – রূপ
আম্মু , বড়আম্মু – কথা
কি হইছে বল – নীলা
তোমাদের মনে আছে আমার আর অরুর বেস্ট ফ্রেন্ড রিয়ার কথা – কথা
হুম। কেন ওর আবার কি হয়েছে ? – রুহি চৌধুরী
ভাইয়ার বেস্ট ফ্রেন্ডের বোনই হচ্ছে রিয়া – আরশি
আচ্ছা এটা তো ভাল খবর। হ্যা মেয়েটা আমাদের বলেই ছিল ওর বিয়ের কথা। আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম – রুহি চৌধুরী
আচ্ছা আম্মু আমি আর কথু কিন্তু কালকে সকালেই রিয়াদের বাসায় যাব।রিয়া অনেক জোর করছে।না গেলে আবার ও মন খারাপ করবে – আরশি
হুম যাবি। মেয়েটা কত আশা নিয়ে বলে তোদের। তোরা বান্ধবি তোরা তো সব কিছু আগে আগে থাকবি আর মেয়েটাকে দেখে করবি। বিয়ের সময় একটা মেয়ের উপর দিয়ে যে কি যায় সেটা শুধু সেই বুঝে – রুহি চৌধুরী
ঠিক বলেছো আপু – নীলা চৌধুরী
পরদিন সকালে,
ঘুম থেকে উঠে ব্রেকফাস্ট শেষ করেই কথা আর অরু ব্যাগ গুছাতে শুরু করলো। তারপর দুজনে সবকিছু ঠিকঠাক করে তৈরি হয়ে নিল রিয়াদের বাসায় যাওয়ার জন্য। আকাশ আসার সাথে সাথে ওরা তিনজন রিয়াদের বাসার উদ্দেশ্য বের হয়ে গেলো।রিয়ার বাসায় পৌঁছাতে পৌঁছাতে ওদের সাড়ে ১১ টা বেজে যায়। খুব দ্রুতই রিয়ার বাসার সকলের সাথে ওরা তিনজন মিশে যায়।রিয়া,কথা আর আরশি এক রুমে থাকবে। আর আকাশ থাকবে রিয়ার ভাই রিয়াজের সাথে। রুমে এসে ব্যাগ খুলতেই কথা ব্যাগের সবচেয়ে উপরে একটি চিরকুট পায়। চিরকুটটি খুলে দেখে সেখানে লেখা রয়েছে,
দূরত্ব টা হয়তো অনেকই তৈরি হয়ে গিয়েছে। কিন্তু সমস্যা নেই। আমি সব ঠিক করে দিব।আর হ্যা আমি আজকে আসতে পারবো না। কালকে আসবো। বিয়ে বাড়িতে গিয়েছিস তো সাবধানে থাকিস। আর হ্যা ছেলেদের থেকে সবসময় দূরে থাকবি। আর বেশি সাজগোজের কোনো দরকার নেই। তুই সিম্পেলই থাকবি।আর কোনো ছেলেকে যদি আমি তোর আগেপিছে ঘুরতে দেখি তো ছেলেটা তো মরবেই সাথে সাথে তোকে ও কিন্তু আমি ছাড় দিবনা। আর এতক্ষণে তো বুঝেই গিয়েছিস আমি তোর রূপ ভাইয়া। ভালো থাকিস। নিজের খেয়াল রাখিস।
কথাটা চিরকুট টা পড়ে ছিড়ে টুকরো টুকরো করে ডাস্টবিনে ফেলে দিলো। এসবের এখন তার কাছে কোনো মানে নেই।রূপ ঠিকই বলেছে দূরত্ব টা এখন অনেকই বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু চাইলেও রূপ এই দূরত্ব দূর করতে পারবেনা।
দেখতে দেখতে রিয়াদের বাড়িতে কথাদের একদিন পার হয়ে গেলো। কথা আকাশ আর আরশির ও রিয়ার কাজিনদের সাথে অনেক ভাব হয়ে গিয়েছে । আজকে রিয়ার মেহেদি অনুষ্ঠান চলছে বাসায়। মেহেদি প্রোগামটা রিয়াদের ড্রইংরুমে করা হয়েছে। আজকে সবার ড্রেস কোড সবুজ রঙ।আরশি আর কথা আজকে একই রকম থ্রিপিস পরেছে আর আকাশ পরেছে সবুজ রঙের টিশার্ট আর সাথে কালো জিন্স। কথা আর রিয়ার একজন কাজিন রিয়ার দুই হাতে মেহেদি দিয়ে দিচ্ছিলো। এমন সময় বাসায় প্রবেশ করে রূপ। রূপ একা নয় সাথে রয়েছে সেই শপিংমলের মেয়েটি।
চলবে ,