#পর্ব_৬
গল্পঃ #রুপের_তরী??
writer: #Ashura_Akter_Anu
……..
অজ্ঞান অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছে তরী। তরীর মাথার কাছে বসে আছেন রিশাদ সাহেব। এবং রুমে দু জন সার্ভেন্টও রয়েছে।
তরীকে অজ্ঞান অবস্থায় দেখে রূপের জান যায় যায় ভাব। হাতে থাকা জিনিসপত্র টেবিলে রেখে দৌড়ে গিয়ে তরীর পাশে বসে। মেয়েটার মুখটা মলিন হয়ে আছে। রিশাদ সাহেবের দিকে চিন্তিত চেহারায় তাকিয়ে বলে,
–কিভাবে হলো এমন বাবা?
–আমিও জানিনা বাবা। চিত্রা(সেদিনের সেই মধ্যবয়সী মহিলা)তরীর রুমে খাবার দিতে এসে দেখে দরজা ভেতর থেকে লক।যখন অনেকবার ডাকার পরও তরী দরজা খুললো না চিত্রা আমাদেরকে ডেকে আনে। এরপর দরজা ভেঙ্গে দেখি ও ব্যালকনির দরজার সামনে অজ্ঞান হয়ে পড়ে আছে। তারপরই তো তোকে ফোন করলাম।
–কিন্তু এমন কিভাবে হলো?(কান্নামাখা কন্ঠে)
–আমি তো কিছুই বুঝতে পারছিনা। এমনিতেও রাত। তারওপর ওর এমন অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে গেছিলাম রে।
–আচ্ছা তোমরা না হয় এখন যাও। আমিবওকে দেখে নেব।(শান্তভাবে)
–সেটাই বেটার হবে।আমি তাহলে উঠি।
রিশাদ সাহেব ও সার্ভেন্টরা চলে যায়। দরজা বন্ধ করে দিয়ে রূপ এসে তরীর মাথার কাছে বসে। মুখটা কেমন শুকনো লাগছে ওর। হয়তো দূপুরে খায়নি। মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে লাগলেই তরী আস্তে আস্তে জেগে ওঠে। এবং উঠেই কান্নাকাটি শুরু করে দেয়। তরীর কান্নাকাটি দেখে রূপ কিছুটা ঘাবড়ে যায়।
এভাবে কান্নাকাটি করার কারন জানতে চাইলে তরী আরও জোড়ে কান্না করতে থাকে।।এক পর্যায়ে রূপ ওকে জোড়ে একটা ধমক দেয়। তরী অত জোড়ে ধমক খেয়ে চুপ হয়ে যায়।কিন্তু তখনও আস্তে আস্তে কাঁদতে থাকে। এবার রূপ ওর কাছে এমন হওয়ার কারন জানতে চাইলে তরী বলতে থাকে,
–সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে ছাদ থেকে বেডশীট টা নিয়ে রুমে এলাম। এরপর ব্যালকনিতে গিয়ে যেই লাইট দিলাম দেখি ব্যালকনিতে রাখা চেয়ারে শাড়ি পড়া একটা কংকাল বসে আছে। আর তার মুখে লাল আলো জ্বলছে (কেঁদে কেঁদে)।আমি খুবই ভয় পেয়েছিলাম। তারপর আমি দৌড়ে ওখান থেকে চলে আসার সময় হোচট খেয়ে পড়ে যাই।
তরী যে একটু বোকা তা রূপ জানতো। তবে সে যে এতটা ভীতু তা সে জেনে হা হা করে হাসতে শুরু করে দেয়। ওর হাসি দেখে তরী আবারও কাঁদতে শুরু করে৷ আর ফুপিয়ে ফুপিয়ে বলে,
–আপনি খুব খারাপ। আমি ভুত দেখে ভয় পেয়ে কাঁদছি আর আপনি হাসছেন?
রূপের হাসির মাত্রা আরও বেড়ে যায়। হাসতে হাসতে তরীকে বলে,
–ওহহ, ভালো কথা। তাহলে চলুন, আমি আপনাকে ভুতের সাথে পরিচয় করিয়ে দেই।
–কিহহহহ?(চোখ বড় করে)
–হুম চলুন(তরীর হাত ধরে)
–না না। আপনি পাগল নাকি?আমি এমনিতেও অনেকটা ভয় পেয়েছি। তারওপর আর ওখানে আমি যাবনা।আমি আর ব্যালকনিতে যাবনা (কান্না করে)
–আহা,আমি বলছি তো। ওই ভুতের সাথে আমার ফ্রেন্ডশিপ আছে। আপনাকে কিচ্ছু করবে না।
–ভুতেদের সাথে ফ্রেন্ডশিপও করা যায়?আগে জানতাম না তো।
–এখন তো জানলেন?আর ভুতের পরনে একটা শাড়ি ছিল তাইনা?
–(অবাক ভাবে) হ্যাঁ।আপনি কিভাবে…
–ওই শাড়িটা আমিই ওকে গিফ্ট করেছি।
–আপনার মাথা ঠিক আছে?কি আবলতাবল বলছেন?
–আবল তাবল?তাহলে চলুন।সব বুঝতে পারবেন।
তরী যেতে না চাইলেও রূপ ওকে জোড় করে টেনে ব্যালকনিতে নিয়ে যায়। এখনও কংকালটাকে ওখানে বসে থাকতে দেখে কান্না শুরু করে দেয় তরী।
–মিট মাই ফ্রেন্ড কংকাল রানী। এবং কংকাল রানী এটা আমার ওয়াইফ রুপের তরী। সো এখন বলুন কেমন লাগলো আমার ফ্রেন্ডকে?
তরী একবার রূপের দিকে আর একবার কংকালটির দিকে তাকিয়ে কপালে ভাজের রেখা ফেলে বলে,
–তারমানে এটা,..
–জ্বি হ্যা রুপের তরী। এটা কোন ভুত নয়। এটা একটা সাধারন কংকাল। তবে আমার কাছে অসাধারন। এই কংকালটি দিয়েই মেডিকেল কোর্স শেষ করেছি আমি। অতটা স্পেশাল কিছুও নেই। এটা একটা মেয়ে কংকাল। তাই এভাবে শাড়ি পরিয়ে রেখে দিয়েছি। আসলে ব্যালকনিতে একা বসে থাকতে ভালোলাগতো না। তাই এই কংকালটি সাজিয়ে রাখা।
–আচ্ছা আপনার মাথায় কি বুদ্ধিশুদ্ধি নেই?এভাবে একটা কংকাল রেখেছেন। তারওপর এমনভবে সাজিয়েছেন। যে কেউ দেখলে ভয় পেয়ে যাবে। আমিও অনেকটা ভয় পেয়েছিলাম। (চেচিয়ে কথাগুলো বলে তরী)
–ওকে ওকে আজ থেকে সরিয়ে দিচ্ছি৷ আর এটা এখানে রাখবো না। এবার হ্যাপি?
তরী রাগে মুখ ফুলিয়ে কিছু না বলেই রুমে চলে যায়।
এরপর রিশাদ সাহেব, রূপ ও তরী একসাথে ডিনার শেষ করে। তরী খাওয়াদাওয়া শেষে রুমে চলে আসে। রূপ জানে যে তরী রাগ করে আছে। বিছানার মাঝখানে একগাদা বালিশ দিয়ে নিজের জায়গায় শুয়ে পড়ে তরী। একটুপর রূপ রুমে আসলে দেখে একদম বাচ্চাদের মত গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছে তরী। দরজাটা লাগিয়ে রূপও নিজের জায়গায় গিয়ো শুয়ে পড়ে।
মাঝরাতের দিকে দাত কড়মড় করার আওয়াজে রূপের ঘুম ভেঙ্গে যায়। এমনিতেও ওর ঘুম অনেক হালকা।
ল্যাম্পের সুইচটা দিয়ে পাশে তাকায় রূপ। দেখে তরী ঠান্ডায় কাপছে। ওর মাথায় হাত দেখে গা গরমে পুরে যাচ্ছে।
রূপ মনে মনে চিন্তা করল,
–পাগলী তাহলে আসলেই অনেক ভয় পেয়েছে। নইলে এত জ্বর আসতো না।
এরপর রূপ উঠে গিয়ে একটা বাটিতে পানি ও নিজের রুমাল নিয়ে আসে। এবং সেগুলো দিয়ে তরীর কপালে জলপট্টি দিতে থাকে। এভাবে সারারাত তরীর মাথার কাছে বসে সব কিছুই করে, জ্বর কমানোর জন্য যা যা করতে হয়।যখন তরীর জ্বর কমে গেলে, একপর্যায়ে তরীর পাশেই ঘুমিয়ে পড়ে রূপ।
সকালবেলা তরী ঘুম থেকে উঠে দেখে রূপ ওকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। রূপকে ওভাবে দেখে তরীতা দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়। রূপ ওকে খারাপ কিছু?
তরী তাড়াতাড়ি করে বিছানা ছেড়ে উঠে একটা চিৎকার দেয়। তরীর চিতকার শুনে রূপের ঘুম ভেঙ্গে যায়। ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে তরীকে জিজ্ঞেস করে,
–আপনি ঠিক আছেন?
–ঠিক আছেন মানে? আপনি আমায়..
–কি আপনাকে?
–আপনাকে তো আমি ভালো মানুষ ভেবেছিলাম। কিন্তু আপনি যে এমন তা জানতাম না। ছি!
–আমি কি করেছি বলবেন তো?(চিন্তিত স্বরে)
–আপনি আমাকে ওভাবে…ছি আমার তো বলতেও লজ্জা লাগছে।
–দেখুন,আপনি হয়ত ভুল কিছু নিয়ে কথা বলছেন।
–আমি নিজের চোখে দেখেছি আর আমিই ভুল বলব?
রূপ বুঝতে পারছেনা কেন তরী এমন করছে। তবে এটা নিয়ে ও শিওর কোন খারাপ কিচ্ছু সে করেনি তরীর সাথে৷। হয়ত তরীর পাশে ঘুমিয়ে যেতে পারে। কারন রাত জাগা হয়েছে কাল।
–দেখুন আপনি আমার থেকে দশ হাত দূরে দূরে থাকবেন।
এসব নিয়ে কোন ঝামেলা না করাই ভালো বলে মনে হয় রূপের। তাই হাসিমুখে জবাব দেয়।
–ঠিক আছে। এখন ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিন।আপনার কলেজে আজ প্রথম দিন।
কথাটি বলে বিছানা ছেড়ে উঠে যায় রূপ। রূপের এমন জবাবের প্রত্যুত্তরে কি বলা উচিত তরীর তা সে জানেনা। তবে ওর কাছে মনে হয় মানুষটা খুবই অদ্ভুত । এখন যেহেতু তরী ওকে বলে দিয়েছে দূরে দূরে থাকতে সেহেতু আর কোন চিন্তা নেই। এখন কলেজ যাওয়ার প্রস্তুতি নিতে হবে ওকে।
ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা শেষে রুমে আসে তরী। একটা বেবি পিংক কালারের লং থ্রি পিচ এবং সাদা হিজাব মাথায় আটকে কাধে ব্যাগ ঝুলিয়ে বাইরে আসে তরী। গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে থাকা রূপ কালো জিন্স,হালকা গোলাপি শার্ট পড়েছে। চোখে সানগ্লাস ও হাওয়ায় উড়তে থাকা সিল্কি চুলগুলো, সব মিলিয়ে আজ রূপকে অসাধারন লাগছে দেখতে।
তরী রূপের দিকে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে চোখ ঘুরিয়ে নেয়। তরীকে দেখে রুপ একটা মুচকি হাসে । গাড়ির সামনের সিটের দরজাটা খুলে দেয় তরীর জন্য। তরী সেদিকে না গিয়ে পেছনের সিটের দরজা খুলতে থাকে৷। কিন্তু দরজাটা খুলতে অক্ষম হয় সে। তাই উপায় না পেয়ে রূপের পাশের সিটেই বসতে হয় ওকে। মুখ ফুলিয়ে বসে আছে তরী। রূপ সেদিকে একবার খেয়াল করে গাড়ি স্টার্ট করে দেয়।
গাড়িতে কেউ কারও সাথে কথা বলে না।
রূপ এমন একজন যে শুধু তার প্রিয়জনদের সাথেই দু একটা কথা বেশি বলে। নইলে প্রয়োজন ছাড়া সে খুব একটা কথা বলে না। এমনিতে সে খুবই নরম মনের মানুষ। ছেলে হলেও খুবই ইমোশনাল সে। তবে হাসিটা কখনোই যেন ওর চেহারা ছেড়ে যায়না। সবসময় হাসির ছাপ ওর মুখে লেগেই থাকে। হাসিটা ছাড়া যেন ও অসম্পূর্ণ।
কিছুক্ষন পর ওরা কলেজের গেইটের সামনে এসে পৌঁছে । গাড়িটা পার্ক করে দুজনেই নেমে পড়ে গাড়ি থেকে।
কলেজের ভেতরে ঢুকতে গেলে তরীর সাথে সাথে রূপও যায়। এটা দেখে তরী বলে,
–কি ব্যাপার? আপনি কেন আসছেন?
–কেন আবার.আপনার ক্লাসরুম ও বাকিসবকিছু বুঝিয়ে দিই।চলুন
–আমি গ্রামের মেয়ে তবে পড়ালেখা তো জানি তাইনা?আমি নিজেই দেখে ও চিনে নিতে পারবো।
–কিন্তু আপনি..
–কোন কিন্তু না। আপনি যান।
রূপের মুখটা শুকিয়ে যায়। এবং বলে,
–ঠিক আছে।
এটা বলার পর রূপ সেখান থেকে চলে আসে। তরী একটা লম্বা নিশ্বাস ফেলে সামনের দিকে হাটা দেয়।
….
কলেজটা এতটা বড় ও গোলকধাঁধার মত যে তরী কিছুতেই কিছু বুঝে উঠতে পারছেনা। রূপকে যেতে বলে এখন ও নিজেই বিপদে পড়েছে বলে মনে হচ্ছে। কয়েকজন মেয়েকে দাড়িয়ে থাকতে দেখে সেখানে যায় তরী।
–আসসালামু আলাইকুম আপুরা। আমাকে একটা হেল্প করবেন প্লিজ?আমি কলেজে আজ নতুন। আমার ক্লাসরুমটা খুজে পাচ্ছিনা। একটু দেখিয়ে দেবেন আমায়?
মেয়েগুলো তরীর দিকে তাকিয়ে একবার পরস্পরের দিকে তাকায়। এবং সবাই মিলে হাসিমুখে বলে,
–হ্যা হ্যা। অবশ্যই। চলো চলো।
বলে তরীকে নিয়ে যায় ক্লাসরুমের দিকে।দোতলার একেবারে শেষের রুমটায় গিয়ে পৌছে ওরা। তরীকে ভেতরে ঢুকতে বলে ওরা চলে যায় সেখান থেকে। তরী ওদের কথামতো ক্লাসের ভেতরে ঢুকে পড়ে। কিন্তু,,,,,,
.
.
.
#চলবে___