রাত যখন গভীর ২ পর্ব-৪৭+৪৮+৪৯

0
1566

#রাত_যখন_গভীর
#জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
#(jannatul_mawa_moho)
Season:02
Part :৪৭
************
শাম্মি এখন বসে আছে শাশুড়ির রুমে। অবশ্য, সাথে রিনি,সুমি,জান্নাত ও থাকবে।হাবিবের মা কে সাহায্য করতে। শাম্মি অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। কিন্তু,
হঠাৎ করে,কে জানি রুমে প্রবেশ করে। শাম্মি বলেঃ কে?
রুম জোড়ে নিরবতা রয়েছে। আবার, কিছু একটা শব্দ শুনতে পেল শাম্মি। কিছু টা ভীতি কাজ করছে। তবুও,
শাম্মি আবার বলেঃ কে ওখানে?

এটা বলার সাথে সাথে শাম্মির সামনে হাবিব এসে হাজির হয়ে যাই। শাম্মি তো একদম হা হয়ে গেছে। অবশ্য,
শাম্মি কল্পনা ও করেনি। হাবিব যে এই রুমে আসবে।কিন্তু সত্য তো সত্য। হাবিব যে এসেছে রুমে। হাবিব তাড়াতাড়ি শাম্মির মুখের উপর হাত দিয়ে চেপে ধরে। যাতে কোন শব্দ করতে না পারে।

হাবিব ফিস ফিস করে বলেঃ একদম কথা বলবে না।চুপচাপ থাকো।যা বলছি তা করো।বিছানা তে বসো।হাত দুটি দেখাও!
একি মেহেদী নাই কেনো?
আচ্ছা ওয়েট।
মার আলমিরার ভেতরে সবসময় মেহেদী থাকে।আমি নি।

হাবিব মেহেদী নিয়ে খুব সুন্দর করে শাম্মির হাতে আল্পনা করে দেয়। হাবিব বলেঃ আমি চলে যাচ্ছি।কেউ দেখলে চিল্লাপাল্লা করবে।দেখা হবে বিয়ের আসরে।এই বলে চলে যাচ্ছে, কিন্তু আবার ফিরে এসে শাম্মির কপালে একটা চুমু দেয়। শাম্মি কিছু টা শকট হয়ে,

শাম্মি বলেঃ আ….আচ্ছা।।।

হাবিব চলে গেল। হাবিব যাওয়ার একটু পর,আস্তে আস্তে শাম্মির মেহেদী গুলো ও শুকিয়ে যায়। শাম্মি মেহেদী গুলো খুব যত্ন করে হাতের থেকে তোলে নেই। কিছু সময়, পর রিনি,সুমি,জান্নাত, হাবিবের মা প্রবেশ করে।অবশ্য, তারা কেউ বুঝতে পারে নি হাবিব যে রুমে প্রবেশ করে ছিলো।হাবিব যাওয়ার সময় বেচে যাওয়া মেহেদী আবার আলমারি তে রেখে দেয়।

হাবিবের মা বলেঃ মাশাল্লাহ মেহেদীর রঙ ধরেছে অনেক সুন্দর করে।
মা,লেহেঙ্গা টা পড়ে নাও।আজ আমার ছেলের বউ কে আমি সাজাবো। হুহ।

শাম্মির বিয়ের লেহেঙ্গা তে প্রিন্ট এর কাজ করা।লাল রঙের ছিলো।শাম্মি লেহেঙ্গা পড়ে আসে।
জান্নাত বলেঃ ওয়াও অসাধারণ লাগছে।

হাবিবের মা শাম্মির চুল গুলো বেধে দেয়। মুখে হালকা সাজ।কানে ও কপালে হালকা জুয়েলারি। বেশ মানিয়েছে শাম্মির গায়ে।

সুমি বলেঃ শাম্মি এতক্ষণ ধরে, যে প্লেনের কথা বললাম।তাতে কি সঙ্গ দিবে?
ডিল কি ডান?

শাম্মি বলেঃ ডিল ডান।।।

খুব সুন্দর একটা জায়গা তে শাম্মি ও হাবিবের বিয়ের আসরের আয়োজন করা হয়েছে।মেহমান রা সবাই চলে এসেছে। রানী লোভা, রাজা রশীদ, প্রিন্স ইনতিয়াজ সবাই অপেক্ষা করছে শাম্মি কে বউয়ের সাজে সজ্জিত দেখার জন্য। হাবিব ও এসে পড়েছে। হাবিবের পরনে গোল্ডেন রঙের পঞ্জাবি।

হাবিব বলেঃ জান্নাত, তোরা সবাই এসে গেছিস।শাম্মি কই?

জান্নাত বলেঃ টাকা দে আগে?

হাবিব বলেঃ টাকা কেন?

জান্নাত বলেঃআচ্ছা, তো বউ লাগবে না তাহলে?
হাবিব বলেঃ আমার শাম্মি আমার চাই।

জান্নাত বলেঃ টাকা দে।

হাবিব বলেঃ কত দিতে হবে?

সুমি বলেঃ ৩০০০০ টাকা দে তারপর বউয়ের ঠিকানা পাবি।হি হি।

রিনি বলেঃ আঙ্কেল টাকা দিবেন।
বউ পাবেন।

হাবিব বেচারা নিরীহ প্রাণীন মতো তাকিয়ে আছে। কারণ, মানিব্যাগে এতো টাকা নেই।
হাবিব বলেঃ কিছু কি কমানো যায় না?
বেশি হয়ে গেছে মনে হয়।

সুমি বলেঃ জি না একদম বেশি হয়নি।

হাবিব কোন উপায় না পেয়ে পকেট সম্পূর্ণ খালি করে দেয়। রিনি গুণে দেখে, মোট ১৬০০০ টাকা দিয়েছে।

সুমি বলেঃ একদম হবে না।সম্পূর্ণ টাকা দিতে হবে তারপর বউ দিবে যে।

হাবিব এখন নিরুপায় হয়ে গেছে। মুগ্ধ আসে,প্রিন্স আসে।তারা ও টাকা দেয়। এবার জান্নাত হিসেব করে দেখে ৩০০০০ টাকা পূর্ণ হলো।

জান্নাত বলেঃ সাগরের পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে তোর বউ।যা এবার। গিয়ে নিয়ে আস।
হাবিব তো ঠিকানা পেয়ে দৌড়ে যাই। শাম্মি কে আনতে। সবাই হাবিবের অবস্থা দেখে হাসছে।

শাম্মি দাঁড়িয়ে আছে। হাবিব এসেছে। বেচারা এখনো হাঁপাচ্ছে। হাবিব বলেঃ এটা কি খুব বেশি দরকার ছিলো?
চলো যায়।

শাম্মি বলেঃ আমার এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে ভালো লাগছে। আন্না আমি যাবো না।আপনি চলে যান।

হাবিব বলেঃ এটা কেমন কথা.?
সবাই যে অপেক্ষা করছে। চলো।

শাম্মি বলেঃ আহা।

হাবিব বলেঃ জোর করে নিয়ে যাবো কিন্তু।

শাম্মি বলেঃ আমি ও চিৎকার করে দিবো আরকি।তারপর গণপিটানি খাবেন।

হাবিব বলেঃ আচ্ছা, অনুষ্ঠান শেষ করে। আবার আসবো আমরা দুজন।একসাথে রাতে সাগর টা উপভোগ করবো।এবার যাবে তো?

শাম্মির প্রস্তাব টা ভালো লাগে। তাই,শাম্মি বলেঃ হুম চলেন।

শাম্মি পিছনে হাত রেখেছে হাবিব।দুজন অনুষ্ঠানে প্রবেশ করেছে। সবাই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে।অসাধারণ লাগছে দুজন কে।
দুজন গিয়ে স্টেজের মধ্যে বসে।

রানী লোভা বলেঃ আমার মেয়ে কে তো চিনতেই পারছি না।

সবাই অনেক খুশি। হাবিব ও শাম্মি কে সবাই আশীর্বাদ দিচ্ছে। হঠাৎ করে, শাম্মি একটা তালি দেয়। তালির শব্দ টা খুব বেশী আওয়াজ ছিলো।যারফলে সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সাথে সব লাইট বন্ধ হয়ে যাই। দুটো লাইট পড়ে রিনি ও প্রিন্স এর উপর।

চারপাশে, মৃদু স্বরে গান চলছে। শাম্মি বলেঃভাই আজকে তোমার মনের কথা সবার সামনে বলো।আমি রিনি কে আমার ভাবি বানাতে চাই।এটা আমার বিয়ের উপহার হিসেবে পেতে চাই।

রিনি অবাক হয়ে আছে। কি হচ্ছে?

প্রিন্সের পাশে, রানী লোভা এসেছে। রানী লোভা প্রিন্সের হাতে একটা আঙটি দেয়। প্রিন্স এই আঙটি ভালো ভাবে চিনতে পারে। এটা তাদের পারিবারিক আঙটি।

রানী লোভা বলেঃ রিনি কে আমার পুত্র বধু হিসেবে পেতে চাই।

প্রিন্স হাটু গেরে বসে। সবাই দেখছে।রিনি কে বলেঃ রিনি,সারাজীবন এর জন্য তোমাকে চাই।এক সাথে সূর্য উদয় ও সূর্যাস্ত দেখতে চাই। প্রতিদিন তোমার মুখ দেখে দিন শুরু করতে চাই।
হবে কি আমার সারাজীবনের সঙ্গী?

রিনি সাথে সাথে নিজের হাত বাড়িয়ে দেয়। প্রিন্স রিনির হাতে আঙটি পড়িয়ে দেই। সবাই হাততালি দেয়। রাবেয়া এবং কামাল ও কিছু বলে নি।তারা ও খুশী হয়েছে।

শাম্মি বলেঃ ধন্যবাদ ভাই।
আজ সবাই অনেক খুশি। একদিকে শাম্মি ও হাবিব এর বিয়ে অন্য দিকে রিনির শুভ পরিণতি।

অনুষ্ঠান শেষ হতেই সবাই চলে গেল। হাবিব ও শাম্মি পৌঁছে যায় তাদের গন্তব্য তে।শাম্মি বসে আছে হাবিবের রুমে। রাত গভীর সবাই ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমিয়েছে। তবে জেগে আছে শাম্মি ও হাবিব। শাম্মি গল্প করছে।শাম্মির মনে জমে থাকা কথা বলছে হাবিব কে।আর হাবিব মন দিয়ে শুনছে।
কথার মাঝ খানে,
হাবিব বলেঃ শাম্মি যাবে তো?
রেডি!

শাম্মি বলেঃ কোথায়?

হাবিব বলেঃ সাগরে। তোমাকে কথা দিছিলাম তো।

শাম্মি বলেঃসত্যি।

হাবিব বলেঃ জি বউ।চলেন।

শাম্মি বলেঃ আমি অনেক খুশি।

হাবিব বলেঃ জানি।একটু দাড়াও।আসছি।

দুজন বসে আছে সাগরের পাড়ে। রাতের আকাশে জলজল করছে অনেক তাঁরা।হাবিবের কাঁধে মাথা দিয়ে আছে শাম্মি।

শাম্মি বলেঃ অসম্ভব ভালো লাগছে।

হাবিব বলেঃ আমার ও।

শাম্মি বলেঃ খিদা লাগলো। কি খাবো?

হাবিব বলেঃ তোমার জন্য চকলেট।

শাম্মি বলেঃ ওয়াও।

একটু পর পর,ধমকা হাওয়া এসে ছুয়ে যাচ্ছে তাদের। শাম্মি ঘুমিয়ে পড়লো হাবিবের কাঁধে মাথা রেখে।হাবিব ঘুমন্ত শাম্মি কে নিয়ে বাসায় ফিরে আসে। শাম্মি ঘুমাচ্ছে আর শাম্মি কে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে হাবিব।

এ যেনো এক প্রশান্তির মূহুর্তের মাঝে একটা।
খুব সকালে শাম্মি উঠে গোসল করে বেরিয়ে পড়ে শাশুড়ীর রুমের উদ্দেশ্যে।শাম্মি দেখে, শাশুড়ী রুমে নেই। রান্না ঘরে গিয়ে দেখে, শাশুড়ী রান্না করছে।

শাম্মি বলেঃ মা আমার কাজ কেনো আপনি করছেন?

হাবিবের মা বলেঃ আমার নতুন বউমা কেনো কাজ করবে।এখন তো তোমাদের একলা সময় কাটানোর সেরা সময়।

শাম্মি বলেঃ না মা।তুমি সবার আগে। একলা সময় কাটানোর জন্য সারাজীবন পড়ে আছে। সরেন আমি নাস্তা বানিয়ে দেয়।

শাম্মি শাশুড়ীকে কাজ করতে দেয় নি। শাম্মি সবার জন্য নাস্তা বানিয়ে দেয়। শাম্মির মা,বাবা,প্রিন্স এসেছে শাম্মি কে দেখতে। শাম্মি অনেক খুশি হয়েছে।
কিন্তু হাবিব এখনো ঘুম।
শাম্মির মা হরেক রকম নাস্তা বানিয়ে এনেছে। শাম্মি তাড়াতাড়ি রুমে চলে গেল। হাবিব কে ডাকতে।

শাম্মি বলেঃ ওঠেন।
শুনছেন।মা বাবা আসছে।

হাবিব ঘুম।একদম উঠার নাম নেই।
শাম্মির চুল গুলো এখনো ভেজা।তাই গামছা টা চুলের থেকে ছাড়িয়ে নেই। চুল গুলো খুব জোরে হাবিবের মুখের উপর ফেলে।চুলের মাঝে থাকা পানি হাবিবের মুখের উপর পড়ে। হাবিব হালকা চোখ জোড়া খুলে।

শাম্মির হাতটা ধরে টান দেয়।
শাম্মি বলেঃ আররেেেেেের…..
কি করছেন?

হাবিব বলেঃ বউকে জড়িয়ে ধরে আছি।

শাম্মি বলেঃ বাসায় মা বাবা আসছে।আপনি ছাড়েন।নিচে আসেন।

হাবিব বলেঃ আহা।আমি তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।আমার ঘুম পাচ্ছে।

শাম্মি বলেঃ এখন উঠেন।
তাছাড়া, এতক্ষণ ধরে তো ঘুমাইলেন।

হাবিব বলেঃ কালজে সাগরে ঘুমিয়ে পড়লে মনে আছে।আমার কোলে তুলে আনতে হলো তোমাকে।

শাম্মি বলেঃ অবশ্যই,আনতে হবে। আমার বর বলে কথা।
এবার প্লিজ উঠেন।

হাবিব ফ্রেশ হয়ে সবার সাথে নাস্তা করে। বিকালের দিকে রানী লোভা, রাজা মশাই ফিরে আসে। প্রিন্সের নাকি কি কাজ আছে। তাই রাজ্যে পরে ফিরে যাবে বলেছে।

জান্নাত ও মুগ্ধ আজ সুমির বাসায় বেড়াতে যাবে।সামনে রিনি ও প্রিন্সের বিয়ে হবে। তাই প্লেন করতে হবে।তারা চারজন মিলে প্লেন করবে।হাবিব ও শাম্মি কে বলে নি।কারণ, নতুন কাপল কে বিরক্ত করতে চাই নি তারা।তারা চারজন মিলে অনেক পরিকল্পনা করে। জান্নাত ও মুগ্ধ একটা উপহার দিবে বলে ঠিক করে। তারা রিনি ও প্রিন্স কে সারপ্রাইজ হিসেবে হানিমুনে পাঠাবে কুয়াকাটা সি বিচ এ।অবশ্য ইনতিয়াজ চাইলে মূহুর্তে চলে যেতে পারবে।কিন্তু,

রহমান জিন বলেঃ আমি তাদের জন্য গাড়ির ব্যবস্থা করবো।গাড়ির ভিতর থাকতে পারবে।এমন একটা ভ্যান এর মেনেজ করবো।ট্রাভেল করলে ভ্রমণ এর মজা আসে।সব পরিকল্পনা করা হয়ে গেছে।
চারজন মিলে বেলকনিতে বসে চায়ের কাপে চুমুক বসিয়ে পড়ন্ত বিকেলের দৃশ্য উপভোগ করছে।

শাম্মির বিয়ে থেকে এসে রিনি।ঐশী কে কল দেয় রিনি।রিনি বলে যা হয়েছে সব।ঐশী অনেক খুশি হয়েছে। ঐশী শুভেচ্ছা জানিয়েছে রিনি কে।কামাল ও রাবেয়া অনেক খুশি। অবশেষে তাদের মেয়ের ও ঘর সংসার হবে।পিচ্চি মেয়ে কখন যে এতো বড় হয়ে গেছে তারা বুঝতে পারে নি।

রিনি দুপুরের খাবার শেষ করে একটু ঘুমিয়ে পড়লো। বিয়ে তে অনেক দখল গেছে। অনেক ক্লান্ত শরীর। তাই বিছানা তে শোয়ে পড়তেই ঘুম এসে পড়েছে।

ঘুম ভেঙ্গে গেলো বিকালে।একটা কফি বানিয়েছে রিনি।কফি হাতে ছাদের উদ্দেশ্যে রওনা দেয়।

রিনি দাঁড়িয়ে আছে ছাদে।হাতে আছে কফি।কফি খাচ্ছে তবে সাথে সাথে তাকিয়ে আছে । হাতের আংটি টা দিকে।তবে, মিস করছে প্রিন্স কে।

রিনি আনমনে বলেঃ মিস ও প্রিন্স ইনতিয়াজ মাহমুদ ।
সেই মূহুর্তে , প্রিন্স হাজির।রিনি অনেক খুশি তবে খুশি টা বুঝতে দেয় নি প্রিন্স কে।

ইনতিয়াজ বলেঃ কি খুশী হওনি?

রিনি বলেঃ হুম।

ইনতিয়াজ বলেঃ কি হুম?

রিনি বলেঃ কিছু না।

ইনতিয়াজ বলেঃ প্লিজ কি হলো বলো।না হয় বুঝতে পারবো না।লক্ষ্মীটি বল কি হয়েছে???

রিনি বলেঃ আপনার প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে ছি।সবাই উপস্থিত ছিলো তাই।

ইনতিয়াজ বলেঃ ওমা এ কেমন কথা?
সবাই না থাকলে রাজী হতে না!

রিনি বলেঃহয়তো বা হতাম না।তবে আমার কিছু শর্ত দিতাম সেগুলো মানলে রাজী হতাম।সেই শর্ত দেয়ার সুযোগ তো পাইনি।
আমার কিছু শর্ত আছে।

ইনতিয়াজ বলেঃ আচ্ছা বলো।কি শর্ত?
এখন বলতে পারো।আমি শুনতে চাই।

রিনি বলেঃ শর্ত না মানলে বিয়ে করবো না।আমি বলে রাখলাম কিন্তু।।।

ইনতিয়াজ বলেঃ শুধু শর্ত না তোমার জন্য প্রাণ টা ও হাজীর করে দিবো।বিয়ে তো করতেই হবে।তুমি শুধু আমার। ওকে

রিনি বলেঃ প্রাণ ভমর টা থাক ওইটা লাগবে না।
শর্ত গুলো মানলে হবে।

ইনতিয়াজ বলেঃ কি কি শর্ত বলো।

রিনি বলেঃ আমার শর্ত গুলো হচ্ছে…..

চলবে….

#রাত_যখন_গভীর
#জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
#(jannatul_mawa_moho)
Season:02
Part :৪৮
************
ইনতিয়াজ বলেঃ কি কি শর্ত বলো।

রিনি বলেঃ আমার শর্ত গুলো হচ্ছে।
তবে মন দিয়ে সব শুনবেন।একটা কথা আবার রিপিট করবো না।আমি শুরু করছি?

ইনতিয়াজ বলেঃ হুম শুরু করু।আমি মন,দিল সব দিয়ে শুনছি।

রিনি বলেঃ শর্ত গুলো হলো,,,

১,আমার সাথে মন খুলে কথা বলতে হবে।
হিসাব করে করে কথা বলা যাবে না।

২,আমার প্রয়োজন জেনে ভার্সিটি যাওয়ার সময় কিছু টাকা দিয়ে যেতে হবে।আর বলবেন প্রয়োজন হতে পারে ।এই রকম করবেন, যাতে আমার হাত পাততে না হয়।

৩,আমার সম্পর্কে বাজে কিছু হোক বা যেমন কথা হবে হোক যদি শুনে থাকেন।তাহলে প্রথমে আমার কাছে এসে বলতে হবে এ বিষয়ে।
আমার তখন,এক্সপেক্টেশন হবে,
আপনি আমাকে বলবেন,
আপনার কোন মাথা ব্যথা নেই এ বিষয় নিয়ে।আর বলবেন অতীত তো অতীত ।
আপনি,তখন জোর স্বরে বলবেন,
আমি ই আপনার বর্তমান, আর আমিই আপনার ভবিষ্যত।
আমিই আপনার সব।

৪,হাজারো সুন্দরীর ভিড়ে আমাকে খুঁজে নিতে হবে। আমি যেমন আছি সেইভাবে আমাকে সারাজীবন ভালোবেসে যাবেন।অন্য কোন মেয়ে বা অন্যের বউয়ের দিকে বা জিন কণ্যার দিকে বউয়ের দৃষ্টিতে দেখবেন না।

৫,অন্য কারো প্রশংসা আমার সামনে করবেন না। আমি চাই না আমার বর আমি ছাড়া অন্য কারো প্রশংসা করোক।

৬,আমার সাথে ঝগড়া করা যাবে না।তবে অল্প অভিনয় করে ঝগড়া করবেন।পরক্ষণেই মিষ্টি হাসি দিয়ে সরি বলে অভিমান ভাঙ্গাবেন।

৭,আমার অদ্ভুত সব আবদার পূর্ণ করতে হবে।এবং আমাকে প্রচুর বিশ্বাস করতে হবে।

৮,আমাকে যথেষ্ট সময় দিতে হবে।আমার জন্য সময় বের করতে হবে যত ব্যাস্ত তা হোক না কেনো।আমাকে বিভিন্ন ধরনের জায়গায় ঘুরতে নিতে হবে।

৯,আমাকে অনেক ভালোবাসতে হবে।অনেক বলতে অনেক। প্রচুর প্রচুর ভালোবাসতে হবে।আমার যেনো কখনো ভালোবাসার কমতি না হয়।

১০, আমার কোলবালিশ ছাড়া ঘুম আসে না।আমার কোলবালিশ হতে হবে।আমি আপনাকে কোলবালিশ এর মতন জড়িয়ে ধরে ঘুমাবো।

এসব শর্ত কি মানতে আপনি রাজি মিস্টার জিন রাজ্যের একমাত্র প্রিন্স ইনতিয়াজ মাহমুদ???
রাজি থাকলে আমি ও আপনাকে বিয়ে করতে প্রস্তুত। তবে,সব শর্ত মানতে হবে কিন্তু!!!

ইনতিয়াজ বলেঃ মাত্র ১০ টা শর্ত।তুমি যদি হাজার টা শর্ত দিতে সব মানতাম। তোমার জন্য এ কটা শর্ত আমি কি মানতে পারবো না নাকি?
অবশ্যই আমি সব শর্ত মানবো।

তাছাড়া আমি তোমাকে নিজের চেয়ে ও বেশী বিশ্বাস করি।আমি নিজের চোখ কে ও অবিশ্বাস করতে রাজি। কিন্তু তোমাকে অবিশ্বাস করবো না।

তুমি ছাড়া আমার জীবনে কোন অপশন নেই।তুমি সব।তোমাকে ছাড়া আমার কল্পনা ও স্বপ্নে কেউ কে আনি না।সব খানে তোমার বিচরণ। তোমার রাজত্ব চলে শুধু।

এবং, according to condition,
তোমার তারিফ যতো করবো কম হবে। তোমার সাথে কারো তুলনা হয় না রিনি।তোমার সামনে হোক পিছনে হোক কোন মেয়ের তারিফ করবো না।

তোমার বুকের সাথে লেপ্টে শুয়ে থাকাতো আমার জন্য স্বর্গীয় আনন্দ পাওয়ার মতো। তোমার কোলবালিশ হতে রাজী।

আমার সব কিছু তোমার।তাই,
তোমার জন্য আমার সব সময়।তোমাকে ঘুরতে নিয়ে যাবো।বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের জায়গায় ।এবং একসাথে বসে ফুচকা ও খাবো।অনেক মজা করবো।ট্যুারে নিয়ে যাবো।

এবং, রিনি

তোমাকে কতো টা যে ভালোবাসি তা আমি নিজে ও জানি না।তাছাড়া, আমার তোমার প্রতি ভালোবাসা কখনো কমবে না। বরং দিন দিন বাড়তেই থাকবে।

তোমার সাথে সব কথা বলবো।তুমি আমার অর্ধাঙ্গিনী।আমাদের মধ্যে বন্ধুত্ব পূর্ণ সম্পর্ক থাকবে।সব মন খুলে শেয়ার করবো।একসাথে বসে কান্না করবো।হাসবো।সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে নিবো।

তাছাড়া,
তোমার বিষয়ে যে যায় বলবে বলোক।অনেক এর তো কাজই এটা নিন্দা করা।কিন্তু,
i just Don’t care rini.whatever they’ll said to me.i just know that i Trust you so much.even MORE Than myself.

এমনকি রিনি
তুমি কেমন আমি জানি।তুমি তোমাকে যতটা চিনো না তোমাকে আমি ততটা চিনি।

তুমি আমার সব কিছু। আমার প্রথম এবং শেষ ভালোবাসা।তোমাকে আমি বেপানাহ চাই।
সবসময় এভাবে চাইবো।

ওম।যতটুকু আমার মানিব্যাগ এর বিষয়ে কথা। তাহলে , শুনু আমার মনের রানী।
আমার মানি ব্যাগ তোমার কাছে থাকবে।তোমার হাত পাততে হবে না। তোমার যত ইচ্ছে নিবে টাকা।

তোমার সব শর্ত জুড়ে রয়েছে আমাদের দু’জনার আরও কাছে চলে আসার কিছু মাধ্যম।এতে করে, ভালোবাসা আরও মজবুত হবে।একে অপরকে খুব গভীর ভাবে বুঝতে পারবো।
রিনি, এসব আমি চোখ বন্ধ করে মানতে রাজি।

তবে শুন না।
আমার না কিছু আবদার আছে!!!
আমার আবদার কি মানবে তুমি?

রিনি বলেঃআমার বর আবদার করবে আমি কি না মানতে পারি নাকি?
বলেন আবদার গুলো।

ইনতিয়াজ বলেঃ কি বললে?
বর,
ওহ আল্লাহ। আমার যে কি খুশি লাগছে।
আমার আবদার হচ্ছে,

*বৃষ্টি হলে খিচুড়ি করতে হবে।বৃষ্টি তে দুজন একসাথে ভিজবো।

*এক সাথে রাতের আকাশ দেখবো।তোমার মাথা থাকবে আমার বুকের ওপর।

*মাঝে মাঝে একে অপরকে সারপ্রাইজ দিবো।

*প্রত্যেক দিন সকালে আমাকে পাঁচ মিনিট জড়িয়ে ধরতে হবে।যত কাজ থাকবে থাকুক।

*আমি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় কপালে তোমার ভালোবাসার আলপনা চুমু চাই।

*মাঝে মাঝে শাড়ী পরতে হবে।আমার কাছে তুমি শাড়ী পড়া অবস্থায় অসম্ভব সুন্দরী এবং নেশাবতী কণ্যা লাগো।

*আমি ও তোমার সাথে কাজে সাহায্য করবো।আমার পক্ষে যতটুকুর সম্ভব হয় আরকি ।সে জন্য তুমি মানা করতে পারবে না।

*প্রত্যেক বিকেলে আমাদের রুমের বেলকনির দোলনায় বসবে তুমি।এবং তোমার কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে থাকবো আমি।

*আমাকে গান শুনাতে হবে।

কি মিসেস রিনি মাহমুদ? বেশি হয়ে গেছে নাকি আবদার?
আপনি কি রাজী!!!!

রিনি বলেঃ সত্যি সত্যি বর হয়ে জান তাড়াতাড়ি। আপনার আবদার গুলো আমি মানবো।
আপনার সব আবদার আমি কোন দ্বিধা বোধ ছাড়া মেনে নিলাম।

ইনতিয়াজ বলেঃ তাহলে, বিয়ের কাজ টা তাড়াতাড়ি সেরে ফেলি?

রিনি বলেঃ জি।

হঠাৎ করে, ঝুম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। রিনি ও মাহমুদ ভিজে একাকার হয়ে গেছে। রিনির সৌন্দর্য আরও বেড়ে গেছে বৃষ্টির জলে।ইনতিয়াজ কে বারবার আকৃষ্ট করছে রিনির দিকে। ইনতিয়াজ আস্তে আস্তে আকৃষ্ট হয়ে এগিয়ে আসছে রিনির দিকে। রিনির খুব কাছে চলে গেল ইনতিয়াজ।

রিনির শরীর কাঁপুনি দিচ্ছে ভিজে যাওয়ার কারণে। ইনতিয়াজ তার ঠোঁট জোড়া রিনির ঠোঁটের কাছে নিয়ে গেল। রিনির ঠোঁট জোড়া ও রীতিমতো কাঁপছে।

ইনতিয়াজ সাথে সাথে কি যেনো চিন্তা করে। অতঃপর, মুখ সরিয়ে নেই রিনির কাছ থেকে।

ইনতিয়াজ বলেঃ থাক।আজ না।
বিয়ে টা হয়ে যাক।
আজ আসি।এখন এর টা তোলে রাখলাম।
একবারে বউ ভেসে দেখবো আবার।বউ ভেসে বৃষ্টি বিলাসীর রূপে বিভোর হবো।

রিনি খুশী হয়ে গেছে অনেক।সব কিছু অনেক ভালো লাগছে রিনির।হয়তো ইনতিয়াজ কাছে এসে ও স্পর্শ না করাতে রিনির বিশ্বাস আরও বেড়ে গেছে ইনতিয়াজ এর প্রতি ।সবার বুঝতে হবে, ভোগ করাই সফলতা না।প্রিয়তমার মর্জি টা ও অনেক গুরুত্বপূর্ণ।

এর পরপরই,
ইনতিয়াজ চলে গেল। রিনি নিচে নেমে ফ্রেশ হয়ে গেছে। কয়েক দিন পর, রিনির বিয়ে পাকা কথা চলছে।সব কিছু ঠিক হয়ে গেছে।বিয়ের জন্য সব কিছু প্রস্তুত।

সব মেহমান ডাকা শেষ। ঐশী ও এসে পড়েছে। তবে রিনি ও প্রিন্স এর আগের ঘটনা বলে নি ঐশী কে রিনি।অতীত কে মাটি চাপা দিয়েছে রিনি।ঐশী এটা ও জানে না।তার আশেপাশে মানুষ সেজে জিন এর বসবাস। এমনকি এটা ও জানে না, প্রিয় বান্ধুবীর বিয়ে হচ্ছে একটা জিনের সাথে। তবে যেই সেই জিন না। জিন রাজ্যের প্রিন্স এর সাথে।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসে। এইতো আজ রিনির গায়ে হলুদ কাল কে বিয়ে। এবং আজ সন্ধ্যায় রিনি গায়ে হলুদের ব্যবস্হা করেছে । রিনির অনেক বন্ধু এসেছে।ভার্সিটির শিক্ষকরা ইনতিয়াজ এর অনুষ্ঠানে গেছে।রিনি টাতে ফ্রেন্ডরা।ইনতিয়াজ এর টাতে শিক্ষকরা।
অবশ্য, রিনি ও ইনতিয়াজ এর বিয়ে নিয়ে কোন শিক্ষক বা রিনির ফ্রেন্ডরা বাজে কিছু বলে নি। তারা সবাই এটা জানে যে,বিয়ে টা পারিবারিক ভাবে হচ্ছে।

অন্য দিকে, ইনতিয়াজ এর বিয়ে হওয়াতে পিচ্চি অনেক খুশি। পিচ্চি কে শপিং করে দেয় অনেক। রানী লোভার সাথে বেশ ভাব জমেছে পিচ্চির।পিচ্চি ও সাজুগুজু করেছে।
সাথে শাম্মি ও সাজুগুজু করেছে।
পিচ্চি এবং শাম্মি দুজন রিনির বাড়ি তে এসেছে।সাথে করে নিয়ে আসে রিনির জন্য হলুদ, বিয়ে এবং গায়ে হলুদের ড্রেস নিয়ে ও অন্যান্য জিনিস ।

শাম্মি ও পিচ্চি চলে গেল। তাদের সে খানে ও প্রোগ্রাম আছে। তারা যাওয়ার পর রিনি কে রেডি করতে নিয়ে গেল।

রিনির সাজ সম্পূর্ণ, রিনি আজ হালকা সুনালী এবং জলপাই রঙের লেহেঙ্গা পড়েছে। রিনির শাশুড়ী রানী লোভা অনেক গহনা দিয়েছে।রিনিকে রাবেয়া সব পড়িয়ে দিয়েছে। দুপুরের দিকে জান্নাত দু-হাত ভরে মেহেদী আলপনা করে দেয়। এখন বেশ সুন্দর রঙ ধরেছে। রিনির দুহাত ভরে চুরি পড়েছে। প্রিন্সের এর প্রিন্সেস এর মতো লাগছে দেখতে।

হাবিব বলেঃ বাহ,আজ তো পিচ্চি মামুনি কে চিনতে পারছি না।কখন যে এতো বড় হয়ে গেছে বুঝতে পারিনি।তাই না কামাল?

কামাল নিরবে চোখের জল ফেলছে। কামাল বলেঃ হুহ।পিচ্চি মেয়ে যে অন্য ঘরের বউ হয়ে গেছে।

রাবেয়া বলেঃ কান্না করছো কেনো?
এটা আমাদের জন্য সুখের মূহুর্তের মধ্যে সেরা মূহুর্ত।মেয়ে কে হাসি মুখে বিদায় করতে হবে।

কামাল বলেঃ হুম।

রিনি স্টেজের মধ্যে বসে আছে।
মুগ্ধ বলেঃ রিনি,কে হলুদ ভালো ভাবে লাগিয়ে দাও।কাল যেনো হলদে রানী লাগে।

জান্নাত বলেঃ মামুনি এমনে সুন্দর। হলদে হলে তো ইনতিয়াজ চোখ সরাতে পারবে না।

রিনি লজ্জাতে শেষ হয়ে যাচ্ছে।
মুগ্ধ বলেঃ আরে জান্নাত ডার্লিং মামুনি লজ্জা পাচ্ছে তো।

ঐশী অনেক ক্লান্ত। যে জাঁকানাকা নাচঁ করেছে। এখন সব এনার্জি শেষ। রিনি কে ও ঐশী আজ নাচিয়ে নিয়েছে।বেচারির নাজে হাল অবস্থা করেছে ঐশী।

ঐশী বসে আছে হঠাৎ পাশ কাটিয়ে একজন বলেঃ মিস,আবার সেন্স লেস হয়ে যাবেন দেইখেন!!!!

ঐশী বলেঃ কে কে”!!!

পাশের থেকে নীল রঙের চোখ জোড়া ঐশীর চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। মুখে হাসি ফুটে আছে তার।
বলে উঠেঃ চিনতে পারেন নাকি দেখি?
স্মৃতি শক্তি কেমন।একটু যাচাই করে দেখি।

ঐশী বলেঃ আপনি তো ওই লোকটা।
নাম মনে নেই।
ওফ মনে পড়ছে না কেন।
ওমমমমম মনে পড়ছে। আপনি আলাউদ্দিন তাই না?

আলাউদ্দিন বলেঃ বাহ বেশ মনে রেখেছেন তাহলে।জী আমি সেই আলাউদ্দিন।

ঐশী বলেঃ আপনি এখানে কেনো?

আলাউদ্দিন বলেঃ আমি wedding ceremony planner. পড়াশোনার পাশাপাশি এটা করি।সব কাজ শেষ করে বসে ছিলাম।তখন ই আপনাকে দেখতে পেলাম।

ঐশী বলেঃ তা আমাকে মনে রেখেছেন এতো দিন?

আলাউদ্দিন বলেঃ মনে রাখার মতোই আপনি।ভুলে যায় কেমনে?
তা অনেক ক্লান্ত আপনি।বাট নাচটা অসম্ভব সুন্দর হয়েছে।

ঐশী বলেঃ আমি মনে রাখার মতো আমার তো এমনটা মনে হয় না।
ধন্যবাদ।

আলাউদ্দিন বলেঃ আসি।আমার আরও কাজ আছে। আমার এসিস্ট্যান্ট রা বাকি টা দেখবে।

ঐশী বলেঃ আচ্ছা।
ঐশী অনুভব করল,ছেলেটার চোখ জোড়া কিছু একটা বলতে চাচ্ছে। অন্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছিলো আজ ঐশী কে। অবশ্য, ঐশীর ও ছেলে টাকে মন্দ লাগে না।

রিনি কে সবাই হলুদের ডিব্বা বানাইছে।লাবু ও রেশমী একসাথে স্টেজে গিয়ে অনুষ্ঠান শেষে রিনি কে নিয়ে আসে রুমে। সবাই নাচ করে অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। রিনির অবস্থা আরও খারাপ।

রাবেয়া,লাবু,রেশমি তারা ৩ জন মিলে হলুদ ছাড়িয়েছেন। সাথে রিনিকে ফ্রেশ হতে সাহায্য করে দেয়। রিনি ফ্রেশ হয়ে বিছানার মধ্যে বসে আছে।

রিনি বলেঃ আমি অনেক ক্লান্ত।

রাবেয়া বলেঃ শুয়ে পড়।আমি মাথা তে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। রেশমি ও লাবু তোমরা ও ঘুমিয়ে পড়ো যাও
কাল অনেক ঝামেলা আছে।

তারা চলে গেল। রিনি শুয়ে পড়েছে। রাবেয়া খুব সুন্দর করে বিনি কাটছে রিনির চুলের মধ্যে। কামাল কালকের জন্য আয়োজনে ব্যাস্ত। অন্য দিকে, ইনতিয়াজ এর গায়ে হলুদ অনেক সুন্দর হয়েছে।পিচ্চি অনেক খুশি। ইনতিয়াজ এর পৃথিবীতে যে ঘর আছে সেখানে আয়োজন করা হয়েছে।

বেশ কিছুক্ষণ সময় অবধি ইনতিয়াজ এর অনুষ্ঠান চলছে। অনুষ্ঠান শেষ করে ইনতিয়াজ বেলকনিতে বসে আছে। বেলকনিতে আগমন ঘটে শাম্মির।ইনতিয়াজ এর আদরের বোনের। শাম্মি, ইনতিয়াজ এর পাশে বসে।

ইনতিয়াজ বলেঃ হাবিব কই?
রিনির বাসা থেকে আসে নি?

শাম্মি বলেঃ আসছি,অনেক ক্লান্ত। সবাই নাকি অনেক নাচ করেছে। আমি তো জিনিস দিয়ে চলে আসছি।মা চলে আসতে বলেছে। ওইখানে নাকি সবাই নাচ করে বেহাল দশা হলো।

ইনতিয়াজ বলেঃ হা হা তাই।
তো এখন হাবিব কি করছে?
তোর সাথে নেই যে?

শাম্মি বলে ঃ আরে অনেক ক্লান্ত ঘুমিয়ে পড়লো সে এসে মাত্র। আমার ঘুম আসছে না।তাই তোমার রুমে প্রবেশ করছি।

ইনতিয়াজ বলেঃ আমার ও ঘুম আসছে না।

শাম্মি বলেঃএকটা কথা বলি ভাই?

ইনতিয়াজ বলেঃ হুম

শাম্মি বলেঃ
ভাই, তুমি কি খুশি?
কেমন লাগছে ভালোবাসার মানুষ কে সারাজীবনের সঙ্গী করে পেতে?
অনুভুতি টা কেমন?

ইনতিয়াজ বলেঃএটা এমন এক অনুভুতি যা প্রকাশ করতে ভাষা হারিয়ে ফেলেছি।প্রিয় মানুষ টা কে পাওয়ার মাঝে আলাদা ভালো লাগা কাজ করে। তাছাড়া এ শহরে সবাই তো ভালোবাসার মানুষ কে পাই না।আমি পেয়ে ছি।তাই অনুভূতি বহিঃপ্রকাশের ভাষা নেই।

শাম্মি বলেঃ আমি বুঝতে পারছি ভাই।আমার ও তোমার মতো অবস্থা হয়ে ছিলো।ভালোবাসা যদি আজীবন এমন থাকে তাহলে জীবন টা সুন্দর হয়।

ভাই বোন অনেক্ক্ষণ ধরে গল্প করেছে।বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলাপ জমেছে তাদের। সাথে তো কফি আছেই ।গল্প শেষ করে যে যার মতো ঘুমাতে চলে গেল।

শাম্মি রুমে প্রবেশ করতেই দেখে হাবিব হাত পা ছড়িয়ে ঘুমিয়ে আছে। সারা বিছানা দখল করে নিয়েছে হাবিব।

শাম্মি বলেঃ হাবিব কি ভুলে গেছে। তার যে একটা বউ আছে। তার ও বিছানার উপর জায়গা দরকার। হুহ

শাম্মি আস্তে করে সরানোর ব্যর্থ চেষ্টা করছে। চেষ্টা করতে করতে একটু পর হাবিব নিজ থেকে ঘুমের ঘুরে সরে যায়। ফলে কিছু টা জায়গা হয়ে যাই।
সেখানেই শাম্মি গাঁ এলিয়ে দেয়। সাথে সাথে চোখের মাঝে ঘুমের আনাগোনা শুরু হয়ে যাই। শাম্মি ঘুমিয়ে পড়লো। অন্য দিকে,
ইনতিয়াজ ও নিজের রুমে গভীর ঘুমে মগ্ন।

সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে আছে। এমনকি,

রিনি ও ঘুমাচ্ছে। রাবেয়া ও ঘুমিয়ে পড়লো।মেয়ের দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে, হাত বুলিয়ে দিতে দিতে নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়লো। মা মেয়ে জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে।

কামাল রিনির রুমে প্রবেশ করে। কামাল দেখে, রিনি ও রাবেয়া ঘুমাচ্ছে।
কামাল চেয়ার টেনে বসে। এক পলকে মা মেয়ের দিকে তাকিয়ে আছে।

কামাল বলেঃ ঘুমন্ত অবস্থায় আরও পিচ্চি লাগছে রিনি মা।কিন্তু তোই তো দুনিয়ায় চোখে পিচ্চি নেই।হুহ কাল তোকে বিদায় দিতে হবে।

তখনই, কামাল………

চলবে….

#রাত_যখন_গভীর
#জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
#(jannatul_mawa_moho)
Season:02
Part :৪৯
************
কামাল বলেঃ ঘুমন্ত অবস্থায় আরও পিচ্চি লাগছে রিনি মা।কিন্তু তোই তো দুনিয়ায় চোখে পিচ্চি নেই।হুহ কাল তোকে বিদায় দিতে হবে।

তখনই, কামাল হাউমাউ করে কান্না করে উঠে। নিজের পিচ্চি মেয়ে টা কখন যে বিয়ের যোগ্য হয়ে গেছে কামাল নিজে ও বুঝতে পারে নি।কামাল কান্না করতে করতে রিনির বিছানার পাশে লুটিয়ে পড়লো। অঝোর ধারায় কান্না করছে। খুব কষ্ট হচ্ছে কামালের।

হঠাৎ কামাল তার কাঁধে কারুর স্পর্শ অনুভব করল। কামাল কিছু টা চমকে উঠে।কারণ সবাই তো ঘুমিয়ে পড়লো। কে হতে পারে!!!

কামাল বলেঃ কে?

কামাল পিছনে ফিরে দেখে, রাবেয়া ঘুম থেকে উঠে গেছে। রাবেয়া করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে কামালের দিকে।

রাবেয়া বলেঃ কামাল এটাই নিয়ম।আমার যেমন আমার মা বাবা কে ছেড়ে চলে আসতে হয়েছে। ঠিক তেমনই আমার মেয়ে টার ও আমাদের ছেড়ে যেতে হবে। তুমি এভাবে ভেঙ্গে পড়লে কেমনে হবে?
তুমি তো তোমার মেয়ের শক্তি। কাল যদি ও তোমার চোখে এক ফোটা অশ্রু দেখে তাহলে রিনি নিজেকে সামলাতে পারবে না।সামলা ও নিজেকে।

কামাল বলেঃ রাবেয়া, মনটা যে মানছে না।নিজের পিচ্চি মেয়ে টার জন্য ঘরটা আলোকিত ছিলো। তাকে ছাড়া ঘর টা সম্পূর্ণ ফাঁকা হয়ে যাবে।কেমনে থাকবো আমরা?
কেনো ও বড় হয়ে গেছে?
সেই পিচ্চি পাকনা বুড়ী হয়ে থাকতে পারেনি?
কতো যে পাকনা পাকনা কথা বলতো।

রাবেয়া বলেঃ কামাল,আমরা অভ্যস্ত হয়ে যাবো।মেয়ে মানুষ কে চাইলে ও ঘরে রাখা যায় না।কোন এক সময় ঠিকই তার পাড়ি জমিয়ে নিতে হয় শ্বশুর বাড়ি উদ্দেশ্যে।
সময় তো থেকে থাকে না।
মানুষ তো সময়ের সাথে সাথে শারীরিক ও মানসিক ভাবে বেড়ে উঠে। হুহ এটাই নিয়তি।

কামাল বলেঃ হুহ বুঝতে পারছি সব।নিজেকে সামলে নিবো। তবে সময় লাগবে।
কেমন যেনো অসহায় লাগছে নিজেকে।
মেয়ের বাবা হয়ে, নিজের কলিজার ধন কাউকে দিয়ে দেয়া কতো কষ্টের তা শুধু। আমার মতো মেয়ের বাবা রাই জানে।
সাথে অনুভব ও করতে পারে।

রাবেয়া বলেঃ আমি সবসময় তোমার পাশে আছি।ভেঙে পড়ো না।
আমরা ঠিক এই কষ্টের সময় টা সামলে নিবো।

কামাল বলেঃ ইনশাআল্লাহ।

রাবেয়া বলেঃ ঘুমিয়ে পড়ি।কাল কে যে রেস্ট নেয়ার পুরসত পাবে না।

কামাল বলেঃ আচ্ছা চলো।তবে কিছু একটা বাকী আছে।

কামাল রাবেয়ার হাত ধরে রিনি কপালের কাছাকাছি যায়। দুজন এক পলক তাকিয়ে ছিলো রিনির দিকে।
অতঃপর,
রাবেয়া ও কামাল রিনির কপালে একটা একটা করে চুমু দেয়। রিনির ঘুমন্ত মুখ টা খুব হাসিখুশি লাগছে। রাবেয়া ও কামাল সকাল থেকে অনেক ব্যাস্ত।অনেক মেহমান চলে আসে।

খাবার, মেহমান দের আপ্যায়ন।কতো শত যে ব্যাস্ততা।জান্নাত,সুমি,ঐশী মিলে রিনি কে সাজিয়ে দিচ্ছে। রিনি আজ লাল রঙের শাড়ি পড়েছে। গাঁ ভর্তি জুয়েলারি। খুব সুন্দর একটা সাজ।মাথার চুল গুলো খোপা করে দেয়। বেশ মানিয়েছে।

জান্নাত বলেঃ মাশাল্লাহ রিনি।অসাধারণ লাগছে।

রিনি বলেঃ ধন্যবাদ।

সুমি বলেঃ নাজার না লাগে।

রিনি বলেঃ আচ্ছা, সুমি খালামণি তোমার ননদ তাসনিয়া কোথায়?
সবাই তো এসেছে তোমার শ্বশুর বাড়ির।এবং বাকি দের আত্মীয় স্বজনরা তাদের ঘরের অন্যান্য সদস্য রা।
কিন্তু তোমার ননদী কে তো দেখে নি।

সুমি বলেঃ রিনি,কেউ জানে না।তাসনিয়া কোথায়। সে নাকি কিছু সময় একা থাকতে চাই। তাই কেউ আর খোঁজ করে নি।
তাছাড়া সে জানবে ও না অবশ্য।
তাই আসেনি।

রিনি বলেঃ আচ্ছা এই ব্যাপার তাহলে।

ঐশী বলেঃ দোস্ত সেই লাগছে তোকে।

রিনি একটা মুচকি হাসি দেয়।

অন্য দিকে, প্রিন্স ও পাঞ্জাবি পড়ে নেই। চুল গুলো জ্যাল দিয়ে ঠিক করেছে।ছাঁকছাক দাড়ি, চোখে সানগ্লাস, মাথা তে পাগড়ি বাহ বেশ হেন্ডসাম লাগছে। ইনতিয়াজ ও তার পরিবার গাড়ি নিয়ে রিনি ঘরের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।

ইনতিয়াজ মাহমুদ রিনির ঘরে পৌঁছে গেল। সবাই মাহমুদ কে বরণ করে নেই। রিনি ও ইনতিয়াজ এর বিয়েতে অনেক মেহমান এসেছে। পিচ্চি অনেক খুশি। রিনি স্টেজের মধ্যে বসে আছে। রিনির পাশে ইনতিয়াজ মাহমুদ এসে বসে। জান্নাত, মুগ্ধ মেহমান সামলাতে সাহায্য করছে।হাবিব,শাম্মি, রহমান, সুমি মানুষ জনের খাবার দাবার এর বিষয় দেখছে।

রিনি ও ইনতিয়াজ বসে আছে। ইনতিয়াজ আস্তে করে রিনির কানে কানে

বলেঃ মিস মাহমুদ আজকে কিন্তু ভয়াবহ লাগছে দেখতে!!!

রিনি বলেঃ কিহ?

ইনতিয়াজ বলেঃ ভয়াবহ!!!

রিনি বলেঃ খুব খারাপ লাগছে নাকি?

ইনতিয়াজ বলেঃ আমার বউ কে ভয়াবহ সুন্দর লাগছে। আমি চোখ ই সরাতেই পারছি না।

রিনি বলেঃআমি তো মনে করেছি খুব বাজে লাগছে।

ইনতিয়াজ বলেঃ আমার রিনি আমার জন্য সবসময় সুন্দরী। তুমি সাজানো গোছানো না থাকলে ও তুমি সুন্দর।

রিনি বলেঃহয়েছে হয়েছে আর বলতে হবে না।

বেশ কিছু সময় পার হয়ে গেছে। ইনতিয়াজ হঠাৎ করে, হাটু গেরে বসে। একটা আংটি বের করে। সবাই চারপাশ ঘিরে চিৎকার করে দেয়। সবাই ভিডিও করছে।
হাবিব ও শাম্মি গোলাপের পাপড়ি ছোড়ে দেয়। সুমি ও রহমান গাদা ফুল ছড়িয়ে দিচ্ছে। জান্নাত ও মুগ্ধ একটা সুন্দর গান প্লে করে দেয়।

রিনি দাঁড়িয়ে আছে। রিনি নিজের হাতটা এগিয়ে দেয় ইনতিয়াজ এর দিকে। ইনতিয়াজ খুব যত্ন করে হাতে আংটি পড়িয়ে দেই।এর পরপর ই,ইনতিয়াজ রিনির এক পা ধরে।ইনতিয়াজ এর হাটুর উপর রাখে।ইনতিয়াজ পকেট থেকে একটা নুপুর বের করে। সবাই তো অবাক রিনি যে এতো সারপ্রাইজ পাচ্ছে।

অনেকে বলছে,ইস এমন রোমান্টিক বর যদি আমাদের হতো।ওফ।অনেক খুশি হতাম।ইসসসসসসসস।।।

ইনতিয়াজ, রিনির পায়ে নুপুর পড়িয়ে দেয়। রাবেয়া, কামাল,অর্ক,লাবু, রাহাত,রেশমি সবাই দাঁড়িয়ে আছে। দেখছে, ইনতিয়াজ এর ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ।

লাবু বলেঃ ইনতিয়াজ সত্যি অনেক ভালোবাসে রিনি কে।

রেশমী বলেঃ নিসন্দেহে সত্য কথা এটা।যে ইনতিয়াজ রিনি কে প্রচন্ড ভালোবাসে।

দেখতে দেখতে, রিনির বিদায় এর পালা।কামাল যেনো অনুভূতি হীন রোবট হয়ে গেছে। রিনি, কামাল কে জড়িয়ে ধরেছে।অনেক কান্না করছে। কিন্তু কামাল এক ফোটা অশ্রু ফেলছে না।কারণ, তার চোখের বর্ষণ হলে রিনি কে সামলানো দায় হয়ে যাবে।রাবেয়া শাড়ীর আঁচল দিয়ে নিজের চোখের জল লুকিয়ে রাখছে।

ঐশী জড়িয়ে ধরেছে রিনি কে।ঐশী অনেক কান্না করছে।আজ যেনো কান্না থামছেই না
।তখনই,

ঐশী বলেঃ আচ্ছা রিনি।এটা তো তোর জন্য খুশীর একটা জিনিস।বিয়ে হচ্ছে। সংসার করবি।খুশি থাকবি।
তবে আমাদের কেনো কান্না আসছে?
নিজের চোখ অজান্তেই কান্না করছে।

রিনি বলেঃ আমি ও জানি না।কেনো এমন হচ্ছে। হুহহহহহহ

রিনির কান্না দেখে, মুগ্ধ বলেঃ ইনতিয়াজ তোমার বউ কে কোলে তুলে নাও।না হয় আজ কান্না করতে করতে শেষ হয়ে যাবে।

ইনতিয়াজ রিনিকে কোলে তুলে গাড়ি তে বসিয়ে দেয়। ইনতিয়াজ নিজের ঘরে নিয়ে গেল। বাকী রা জিন রাজ্যে ফিরে গেছে। গাড়ি নিয়ে আসার সময়, ইনতিয়াজ রানী লোভা কে বলেঃ মা তোমরা জিন রাজ্যে ফিরে যাও।আমি একা থাকতে চাই।

রানী লোভা দ্বি মত করে নি।ঘর ফাঁকা, পিচ্চি এবং কাজের লোক রিনির ঘরে থাকতে বলে দিয়ে ছিলো ইনতিয়াজ।

রিনির হাতে হাত ধরে ইনতিয়াজ প্রবেশ করেছে তাদের সুইট ঘরে। কিন্তু একি,
সারা ঘর অন্ধকার।

রিনি বলেঃ আলো নেই কেনো?

ইনতিয়াজ আলো জ্বালিয়ে দেয়।
রিনি দেখে ঘরের মধ্যে কোন সাজসজ্জা নেই।একদম নরমাল।

রিনি বলেঃ এমন কেনো?
ফুল দিয়ে সাজানো হয়নি কেনো?

ইনতিয়াজ কিছু বলে নি। সোজা রুমে প্রবেশ করে। রিনি ও পিছনে পিছনে রুমে চলে গেল। রিনি দেখে রুমের মধ্যে ও ফুলের ছিটেফোঁটা নেই।

ইনতিয়াজ গিয়ে শোয়ে আছে।

রিনি বলেঃ সব কিছু এমন কেনো?
একটা ফুল নেই?
কোন আয়োজন নেই?

ইনতিয়াজ বলেঃ কিসের আয়োজন। কেনো ফুল আনবো?
আমার কি কোন কাজ নেই আর।যত্ত সব।

রিনি বলেঃ এমন করে বলছেন কেনো?

ইনতিয়াজ বলেঃ কি করলাম।যাও শুয়ে পড়ো।আমার ঘুম পাচ্ছে। গুড নাইট।

রিনি বলেঃ কিহ!!!

ইনতিয়াজ বলেঃঘুমা ও।

রিনির মনে কষ্টের মেঘের সৃষ্টি হয়েছে। কি চিন্তা করে ছিলো?
রিনি মনে করছে, ইনতিয়াজ মাহমুদ অনেক সুন্দর করে ঘর সাজাবে।তাদের শোবার ঘর অনেক সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজাবে।রিনি সাথে সুন্দর করে মিষ্টি মিষ্টি কথা বলবে।কিন্তু কি হলো?
কিছুই তো হলো না।
রিনি শোয়ে পড়েছে।রিনি চিন্তা করছে, কি হলো তাদের শর্তের?
সব ভালোবাসা কই গেছে?
হয়েছে টা কি?
রিনির মনে অনেক অনেক চিন্তা কাজ করছে। রিনির মনে হচ্ছে, বিয়ে করার জন্য হয়তো ইনতিয়াজ এমন আচরণ করছে।

রিনি এসব ভাবতে ভাবতে,
রিনির চোখে অল্প অল্প ঘুম জড়িয়ে ধরেছে।
রিনির মনে হচ্ছে, তার শরীর কেউ স্পর্শ করছে। স্পর্শ বললে ভুল হবে।

রিনি কে কোলে তুলে নিচ্ছে। রিনি চোখ জোড়া খুলে দেখে, ইনতিয়াজ রিনিকে কোলে তুলে।
নেই।

রিনি বলেঃ ছাড়ুন।আমি নামবো।

ইনতিয়াজ মাহমুদ বলেঃ একদম চুপ।

রিনি চুপ হয়ে গেছে। রিনি একদম নিস্তেজ হয়ে গেছে ইনতিয়াজ এর কোলে।
ইনতিয়াজ রিনিকে কোলে তুলে নিয়ে ছাদের উপর নিয়ে যাচ্ছে। রিনি নাকের মাঝে একটা সুঘ্রাণ ভেসে আসছে।

রিনি দেখে, ছাদের মাঝে চাঁদ এর আলো পড়ছে। ইনতিয়াজ রিনিকে ছাদের উপর নামিয়ে দেয়। ইনতিয়াজ তালি দেয় সাথে সাথে ছাদের উপর আলো জ্বালে উঠে।

ছাদের উপর, হরেক রকম ফুলের পাপড়ি দিয়ে খুব সুন্দর করে হার্ট বানিয়েছে। রিনি দেখে অবাক। তার ঠিক সামনে, একটা খুব সুন্দর খাট সাজিয়েছে।সেখানে হরেক রকমের ফুল দিয়ে সাজানো।

ইনতিয়াজ বলেঃ তোমাকে একটু খেপাচ্ছিলাম।সরি বউ।বলে মিষ্টি হাসি।

রিনির তো রাগে গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। রিনি বলেঃ আপনাকে আমি দেখেন কি কি করি!!!

ইনতিয়াজ বলেঃ আরে বউয়ের সাথে একটু মজা করছি আরকি।

রিনি বলেঃ করা যায়। তবে এতো মারাত্মক আমি তো মনে করছি, বিয়ে করে ভুল হয়ে গেছে।

ইনতিয়াজ বলেঃ নাহ রিনি।ঠিকই করে ছি।আসো নিচে যায়।

রিনি নিচে গিয়ে দেখে, সারা ঘর ফুল দিয়ে সুসজ্জিত।

ইনতিয়াজ বলেঃ ইচ্ছে করে সাজানো হয়নি।তুমি যখন হালকা ঘুমের মধ্যে পড়েছো।তখন করেছি।

রিনি বলেঃ অনেক সুন্দর লাগছে। সত্যি ওয়াও।

ইনতিয়াজ বলেঃ চলো ছাদে যায়। চলো আজ সারা রাত গল্প করবো।

রিনি,ইনতিয়াজ এর হাত ধরে ছাদের উপর উঠে গেছে। ইনতিয়াজ ফুল দিয়ে বানানো হার্টের মাঝে শোয়ে আছে।

ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি আসো।

রিনি বলেঃ কেনো?

ইনতিয়াজ বলেঃ আমার আবদার ভুলে গেলে নাকি?

রিনি বলেঃ কোনটা?

ইনতিয়াজ বলেঃ ওমা।আমার বুকের ওপর তুমি মাথা রাখবে।

রিনি বলেঃ হি হি মনে আছে।

রিনি ইনতিয়াজ এর বুকের ওপর মাথা রেখেছে। দুজন ফুল দিয়ে বানানো হার্টের মাঝে আছে। বেশ লাগছে দুজন কে। ইনতিয়াজ তাকিয়ে আছে রিনির দিকে।অপলক দৃষ্টিতে।

রিনি বলেঃ এই সময় এখানে থেমে যাক!
এই রাত যেনো আমাদের জন্য শ্রেষ্ঠ রাতের মধ্যে একটা হয়।সারাজীবন যেনো আমাদের ভালোবাসা এমনই থাকে।

ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি,…..

চলবে….

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে