#রাত_যখন_গভীর
#জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
#(jannatul_mawa_moho)
Season:02
Part :৩৮
************
বেশ কিছুক্ষণ পর,রিনির ঘুম ভেঙ্গে গেলো। রিনি আশেপাশে তাকিয়ে দেখে, মাহমুদ আছে কিনা। রিনি লক্ষ্য করে, আশেপাশে কেউ নেই। রিনি বিছানা থেকে উঠে পড়ে। আস্তে আস্তে এগিয়ে যাচ্ছে, সেই অন্ধকার অংশে। যেখানে মাহমুদ চাদর দিয়ে রেখেছে ছবি গুলো।
রিনি এখন দাঁড়িয়ে আছে চাদরের সামনে। আজ রিনি দেখবেই কি আছে এই চাদরের আড়ালে।মাহমুদ স্যার কি লুকিয়ে রাখতে চাইছে?
রিনি আস্তে করে বড়ো চাদরটা সরিয়ে দেয়। রিনি সব ছোট চাদর সরিয়ে দেয় তাড়াতাড়ি। অন্ধকারের জন্য কিছু দেখতে পাচ্ছে না রিনি।রিনি রুমের মধ্যে একটা টর্চ খুজতে লাগলো। তখনই একটা মোমবাতি পেয়ে যায় ।সাথে একটা দেশলাই ও। রিনি তাড়াতাড়ি আলোর ব্যবস্হা করে।
আলো জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ছবির সামনে। রিনি ছবিটা তে দেখে রিনি নিজে দাঁড়িয়ে আছে হাবিবের কাঁদে হাত দিয়ে। রিনির পরনে কালো টপস।চুল গুলো খোলা। চোখে একটা সাদা চশমা,মুখে একটা মিষ্টি হাসি।
হাবিবের পরনে লাল রঙের শার্ট।চোখে রিনির মতো চশমা। রিনির এই ছবি টার কথা একদম ভালো ভাবে মনে আছে।
১ বছর আগে, রিনির বাবা মা একটা পিকনিক এর আয়োজন করে। সেদিন হাবিব ও বিদেশ থেকে একটা কাজ শেষ করে ফিরে।রিনির থেকে জিজ্ঞেস করে ছিলোঃ মামুনি তোমার জন্য কি আনবো।
রিনি বলেছিলোঃ আঙ্কেল একটা টপস একটা চশমা।আর কিছু চকলেট।
তারপর, হাবিব রিনির জন্য যা রিনি বলেছিল সব আনে।হাবিব বলেঃ রিনি মা যাও পরে আসো।আমরা সেলফি তুলবো।তোমার মতো চশমা আমিও নিয়েছি।
রিনি অনেক খুশি হয়ে ছিলো সেদিন। সেবারে সবাই অনেক খুশি ছিলো।
রিনি বলেঃ এই ছবি মাহমুদ স্যারের রুমে এইভাবে গোপন করে রাখা কেনো?
কই পাইলেন তিনি?
রিনির মাথা কাজ করছে না।রিনির এবার মনে পড়েছে ওইদিন রিনি যে মেয়ে টা কে।মানে বাচ্চা মেয়ের ছবি দেখেছিলো সেটা তারই।
রিনি নিজেই নিজেকে চিনতে পারে নি সেদিন ।
রিনি আরেকটু সামনে গেলো।এবং ওইদিন এর ছবিটা পেয়ে গেল ।রিনি ভালো ভাবে দেখছে। হ্যাঁ এটা রিনিই।এটা তার ছবি।তবে এই এসব ছবি এখানে কেনো?
রিনি আরও সামনে আসে। দেখতে পেল রিনি ঘুমন্ত মুখ এর ছবি।আরও সামনে দেখতে পেল রিনির ভেজা চুলে মিষ্টি হাসি মুখে এমন একটা ছবি।রিনি কিছু বুঝতে পারছে না।রিনির মাথা টা রীতিমতো ঝিমঝিম করছে।
রিনির সব প্রশ্নের উত্তর পাবে মাহমুদ এর কাছ থেকে। রিনি হন্য হয়ে খুজতে লাগলো মাহমুদ কে।কিন্তু সারা ঘর খুঁজে ও পাচ্ছে না। রিনির মাথা ব্যথা শুরু হয়ে গেছে। রিনি হঠাৎ করে বেলকনির দিকে এগিয়ে গেছে।কেন জানি রিনির মনে হলো বেলকনিতে পাওয়া যেতে পারে। ঠিক তাই হলো, রিনি দেখতে পেল, মাহমুদ এর চোখে চশমা নেই।মাহমুদ দোলনাতে আপন মনে ঘুমাচ্ছে। মাহমুদ কে দেখে মনে হচ্ছে, রাজ্যের ঘুম তার চোখে ভর করেছে।
মাহমুদ এর মুখটা বড্ড নিষ্পাপ লাগছে রিনির কাছে ।মাহমুদ এর মুখে রাজ্যের মায়া লুকিয়ে আছে রিনির মনে হচ্ছে। রিনির বুকটা দুপদুপ করছে। কারণ, মাহমুদ কে চশমা ছাড়া একদম অবিকল প্রিন্স এর মতো লাগছে। রিনি একটা জিনিস মনে করছে,মাহমুদ স্যার কখনো চশমা ছাড়া থাকেনি।
কিন্তু কেনো?তাই তো,
মাহমুদ কে রিনি কখনো চশমা ছাড়া দেখে নি।
রিনির মনে হচ্ছে, মাহমুদ তার চশমার আড়ালে প্রিন্স(ইনতিয়াজ) কে লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করেছে ।তাই হয়তো চশমা ছাড়া থাকতো না।যদি চশমার সাথে সাথে তার রহস্য খুলে যেতো সে ভয়ে। রিনি কিছু বুঝতে পারছে না।
রিনি বলেঃতাহলে মাহমুদ কি মাহমুদ?
নাকি প্রিন্স?
নাকি এসব আমার মনের ভুল?
যদি সব আমার মনের ভুল হয়,তাহলে আমার ছবি এখানে কি করছে? তাও আবার,
মাহমুদ এর শোয়ার ঘরের মধ্যে?
রিনি আর কিছু চিন্তা করতে পারছে না। রিনি তাড়াতাড়ি এক গ্লাস পানি নিয়ে আসে। পানি গুলো সব মাহমুদ এর মুখে ফেলে দেয়। মাহমুদ ধরপর করে উঠে পড়ে। মাহমুদ তাড়াতাড়ি চশমা টা খুঁজে নেই।সময় নষ্ট না করে চোখে পড়ে পেলে।অতঃপর,
মাহমুদ বলেঃ রিনি,এসব কি অসভ্যতা?
ভুলে যাচ্ছো আমি তোমার স্যার?
একটু প্রশ্রয় কি দিলাম মাথাতে উঠে গেলে?
আজব।
রিনি বলেঃ আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর আমি দিতে পারবো না।আপনি আমার প্রশ্নের উত্তর দেন।কে আপনি?
কি উদ্দেশ্য আপনার?
মাহমুদ বলেঃ মাথা ঠিক আছে?
নাকি মেয়াদ উত্তীর্ণ কিছু খেয়ে ফেলছো?
আমি কে জানো না?
রিনি বলেঃ আপনি যদি মাহমুদ স্যার হয়ে থাকেন তাহলে আমার এতো গুলো ছবি আপনার শোয়ার ঘরের মধ্যে কি করছে?
আপনি তো বলছেন আপনি আমার স্যার।আপনি যদি আমার স্যার হয়ে থাকেন।তাহলে তো আমার ছবি আমার স্যার এর শোয়ার ঘরের মধ্যে তো দূরের কথা তার ঘরের আনাছে কানাছে জায়গা তে ও আমার ছবি রাখবে না।যদি ছবি রাখে তাহলে আমার পারমিশন চেয়ে তারপর রাখবে।সো মিস্টার বলেন কে আপনি?
মাহমুদ এর মুখে রাগ এর আবাস ফুটে উঠেছে। মাহমুদ রিনির মুখের চোয়াল শক্ত করে ধরে।রিনি ব্যথা পাচ্ছে তাই রিনি পিছনে যাচ্ছে। দূর্ভাগা রিনি,পিছনে যেতে যেতে তার পিট দেয়ালের সাথে লেগে যাই।
মাহমুদ হুংকার দিয়ে বলেঃ তোমাকে না বলছি।ওই দিকে না যায় তে।কোন সাহসে আমার জিনিস ধরলে?
বারবার মানা করছি।বলছিলাম না ওই দিন আমার জিনিস ধরলে তুমি আমার অন্য রুপ দেখবে,কেনো অমান্য করেছো?
রিনির বড্ড ভয় করছে।এই মাহমুদ কে রিনি চিনে না।বড্ড ভয়ংকর রুপ এই মাহমুদ স্যার এর।রিনির বাক শক্তি যেনো হারিয়ে যাচ্ছে।
রিনি অনেক চেষ্টা করছে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে কিন্তু বারবার চেষ্টা বিফল হচ্ছে।
রিনি এবার চিৎকার দিয়ে বলে উঠেঃ কি হয়ছে দেখছি?
দেখে ভালো ই করছি।
আমার অনুমতি ছাড়া আমার ছবি রাখার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে কে হন আপনি আমার?
কে আপনি?
কি উদ্দেশ্য হাসিল করতে আসছেন?
এই বলে রিনি মাহমুদ কে একটা ধাক্কা দেয়। মাহমুদ কিছু টা দূরে গিয়ে পড়ে। কারণ হঠাৎ এমন ধাক্কা দিবে রিনি সেটা মাহমুদ বুঝতে পারে নি। মাহমুদ লক্ষ্য করে,
রিনির মুখে রাগ,অভিমান, কান্না সব মিলে একটা মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা যাচ্ছে।
মাহমুদ বলেঃ তোমাকে কেন বলবো?
আমি তোমাকে জবাব দিতে বাধ্য না।আমার জিনিস কেনো ধরলে সেটা বলো?
রিনি বলে উঠেঃ চুপ একদম চুপ।।
রিনি এটা বলে সামনে মাহমুদ এর দিকে এগিয়ে আসতেই, পা টা পিছলে ফ্লোরে পড়ে যায় রিনি। সাথে সাথে হাতে থাকা কাচেঁর গ্লাস টা ভেঙ্গে গেলো। যার ফলে রিনি হাতের থেকে ও প্রচুর রক্ত ঝরে পড়ছে।
মাহমুদ বলেঃ রিনি,সামলে।
রিনি কি হয়েছে দেখি?
রিনি বলেঃ আর এক পা ও এগিয়ে আসবেন না।কেনো কেয়ার করবেন।
আমি বাচি মরি তা দিয়ে আপনার কি?
চোখের সামনে থেকে সরে যান।
মাহমুদ বলেঃ রিনি,এমন করে নিজেকে কষ্ট দিচ্ছো।এদিকে আসো।আমি রক্ত টা বন্ধ করে দি।
রিনি বলেঃ একদম দরকার নেই। যদি সত্যি আমার চিন্তা করেন।তাহলে আমার প্রশ্নের উত্তর দিন।তাহলে আমি আমার হাত আপনাকে ধরতে দিবো রক্ত বন্ধ করার জন্য। অন্যথায়,না বললে।
থাক রক্ত যা আছে সব বের হয়ে যাক।
আস্তে আস্তে আপনার সামনে আমার দেহ নিস্তেজ হয়ে যাবে
শালার জীবন টা তেজপাতা হয়ে গেছে অনেক আগেই।
এখন না হয় দেহ থেকে রক্ত বের হয়ে প্রাণ যাবে।
মাহমুদ কিছু টা আঁতকে উঠল। রিনি স্পষ্ট দেখতে পেল, মাহমুদ এর চোখে এখন রাগ নেই।এখন রিনি দেখতে পাচ্ছে,মাহমুদ যেনো ভয় পাচ্ছে। আর সেটা হলো,
কিছু একটা হারিয়ে ফেলার ভয় মাহমুদ পাচ্ছে ।
মাহমুদ বলেঃ আমি সব বলবো।প্লিজ আগে রক্ত বন্ধ করি,।।।।
রিনি বলেঃ সত্যি?
মাহমুদ বলেঃ আল্লাহর কসম করে বলছি সব বলবো।আল্লাহ এর নামে কসম টা কসম। আর যে গুলো কসম কাটে সবাই সেগুলো মিথ্যা কসম।বিলিভ মি।
রিনি বলেঃ আচ্ছা, আসেন এদিকে।
মাহমুদ এগিয়ে আসে,রিনি কাছে।মাহমুদ রিনির হাতটা ধরে। হাতের মধ্যে বেশ কিছু কাচের টুকরো ফুটে গেছে।
মাহমুদ আস্তে আস্তে সব তোলছে।রিনি ব্যথার জন্য চিৎকার দিচ্ছে। চাকর গুলো ও পিচ্চি ঘুম তাই কেউ শুনতে পাচ্ছে না রিনির চিৎকার।
রিনির হাত থেকে প্রচুর রক্ত ঝরে পড়ছে। রিনির হাতের থেকে প্রায় সব কাঁচের টুকরো নিয়ে ফেলেছে মাহমুদ।
মাহমুদ, রিনির হাতটা শক্ত করে ধরে। নিজের শরীর এর শার্ট টা এক হাতে আস্তে আস্তে খোলে ফেলে।সেই শার্ট দিয়ে, রিনির হাতের রক্ত গুলো মুছে দেয়। আর হাতের মধ্যে শার্টটা শক্ত করে চেপে ধরে। রিনি আহ ব্যথা বলে উঠে।
মাহমুদ, তাড়াতাড়ি করে রিনির জন্য পানি নিয়ে আসে। বেশি করে পানি খাইয়ে দেয়।রিনির রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেছে।
মাহমুদ রিনিকে কোলে করে নিয়ে আসে।মাহমুদ রিনিকে নিজের রুমে বিছানা তে বসিয়ে দেয়। মাহমুদ এর রুম সাউনফ্রোপ।মাহমুদ দরজাটা আটকে দেয়। যাতে কেউ প্রবেশ করতে না পারে।
মাহমুদ ফাস্ট এইডস বাক্স টা নিয়ে নে ড্রয়ারের থেকে। মাহমুদ চুপচাপ রিনির হাতের মধ্যে ড্রেসিং করে দেয়। তারপর মলম দিয়ে দিলো।অবশেষে হাতে বেন্ডেজ করে দিলো।
রিনি বলেঃ দরজা আটকানোর কারণ কি?
মাহমুদ বলেঃ সমস্যা আছে?
নাকি ভয় পাচ্ছো?
রিনি বলেঃ একটা ও না জাস্ট জিজ্ঞেস করলাম। কেউ তো রিজন ছাড়া কিচ্ছু করে না।সো বলেন সব।
মাহমুদ বলেঃ রিনি তার আগে আমি কিছু দেখাবো।তারপর সব বলবো?
দেখবে!
রিনি বলেঃ আজ সব জানবো।যা দেখাবেন দেখান।
মাহমুদ রিনি কে বলেঃ আসো এদিকে।
রিনি হাটতে ও পারছে না।রক্ত বেশি বেরিয়ে যাওয়ার ফলে । তাই দুর্বল হয়ে গেছে। মাহমুদ রিনি কে কোলে তুলে নেই।
মাহমুদ এগিয়ে আসে। সেই অন্ধকার অংশে। তারপর………
💮
জান্নাত চুপচাপ বসে আছে।জান্নাত এর নিরবতা মেরে ফেলছে মুগ্ধ কে।
মুগ্ধ হাল ছাড়বে না।জান্নাত কে নিজের করে তারপর দম ছাড়বেই।
কামাল বলেঃ চলো সবাই। একটু ঘুমিয়ে নি।কালকে তো বেক করতে হবে।
রাবেয়া বলেঃ কালকে না আমরা পরশু ফিরে যাবো।বেশ লাগছে। তাছাড়া, জান্নাত এর engagement তো শুক্রবার এ।সো সমস্যা হবে না।
সুমি বলেঃ ভাবি,ঠিক বলছেন।তাছাড়া, কেবলা কান্তো bcs বাবুর সাথেই তো হবে।সো দরকার নেই কাল যাওয়ার। তাছাড়া,
কাল গিয়ে দেখা যাবে,জান্নাত এর সাথে কেবলাকান্তো টা দেখা করতে চলে আসবে।জান্নাত ও মা বাবার মন রাখতে দেখা করে নিবে।
রহমান( শয়তান জিন প্রিন্স) বলেঃ আরে আরে।কামাল ভাই কাল যাবো না।অনেক দিন পর প্রকৃতির রূপে বিভোর থাকতে ভালো লাগছে।
মুগ্ধ চুপ হয়ে আছে। কি করবে সে?
কি এমন করবে সে,যে জান্নাত শুধু তারই হবে।
জান্নাত কিছু বলছে না।চুপ হয়ে বসে আছে।একটু পর, সবাই ঘুমাতে চলে গেল।
মাঝ রাতে জান্নাত এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। জান্নাত, একটা শব্দ শুনতে পেল। জান্নাত এর মনে হচ্ছে কেউ যেনো কান্না করছে। কিন্তু কে?
জান্নাত তাঁবু থেকে খুব সতর্কতার সাথে হেঁটে বেরিয়ে পড়ে। জান্নাত দেখতে পেল,মুগ্ধ জায়নামাজ বিছিয়ে মোনাজাত ধরেছে।
মুগ্ধ বলেঃ ইয়া আল্লাহ, এই দুনিয়ার মধ্যে তোমার জন্য অসম্ভব কিছু না।আমার একটা ফরিয়াদ তুমি শুন।আমি জান্নাত কে ছাড়া আমার অস্তিত্ব কল্পনা করতে পারি না।না জানি কি আছে তার মাঝে?
কেনো এতো পাগল হয়ে গেছি?
হে আল্লাহ, প্লিজ এমন কিছু চমৎকার করে দেন।কোণ ও ফায়াকোণ বলে সব ঠিক করে দেন।
কান্না করে এসব বলতে বলতে মুগ্ধ জায়নামাজে লুটিয়ে পড়ছে। জান্নাত আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারে নি।তাড়াতাড়ি তাঁবু তে ফিরে আসে। জান্নাত এর বাবা মা তাদের পরিচিত bcs ক্যাডারের সাথে বিয়ে টিক করেছে।জান্নাত তার মা-বাবা কে হতাশ করতে চাইনি।তাদের বাধ্য মেয়ের মতো রাজি হয়ে গেছে বিয়েতে। তাছাড়া, মুগ্ধের মিথ্যা বলাতে অনেক কষ্ট পেয়েছিল জান্নাত।
জান্নাত জানে কিছু করার নেই।এখন যদি কিছু করতে পারে,তা পারবে একমাত্র রব্বুল আলামীন। জান্নাত এর চোখে অশ্রু টলটল করছে। জান্নাত কান্না করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো।
সকালে, সূর্যের কিরণ এসে পড়েছে জান্নাত এর মুখে। জান্নাত এর ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সবাই আস্তে আস্তে উঠে পড়ে।
রহমান বলেঃ আজ একটু জঙ্গলে ঘোরে দেখতে চাই।আজ সবাই জোড়ায় জোড়ায় যাবে।
আমি,সুমি।
কামাল ও রাবেয়া।
জান্নাত তোমার বর তো নেই।তাছাড়া মুগ্ধ ভাই ও একা।সো তোমরা দুজন যাও।
সবাই জোড়ায় জোড়ায় বেরিয়ে পড়ে। জান্নাত ও মুগ্ধ হাঁটছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।
হঠাৎ, জান্নাত দেখতে পেল, একটা
……
চলবে…..
#রাত_যখন_গভীর
#জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
#(jannatul_mawa_moho)
Season:02
Part :৩৯
************
মাহমুদ রিনি কে কোলে তুলে নেই।মাহমুদ এগিয়ে আসে। সেই অন্ধকার অংশে। তারপর,
মাহমুদ রুমের সব
ছবি গুলো সরিয়ে দেয়। ছবিগুলো সরিয়ে দিতেই,
রিনি দেখতে পেল,একটা অদ্ভুত ধরনের দরজা।
রিনি একদম অবাক হয়ে গেছে, কারণ কল্পনা ও করে নি যে,ছবির পিছনে যে একটা দরজা ও থাকতে পারে।
রিনি বলেঃ এটা কি স্যার?
তাছাড়া রুমে ভিতর তো দরজা আছে। তাহলে এটা কিসের দরজা?
এখানে,
দরজা কেন?
মাহমুদ বলেঃ কোন প্রশ্ন না।চুপচাপ থাকো।
মাহমুদ দরজা তে মাহমুদ এর হাত স্পর্শ করতেই দরজা টা খুলে যায়। রিনি দেখে একটা রুম এটা।তবে অন্ধকার।তাই কিছু দেখা যাচ্ছে না।
তাছাড়া, রিনির অন্ধকার দেখলেই ভয় করে। তাই মাহমুদ কে শক্ত করে আঁকড়ে ধরেছে। মাহমুদ সামান্য হেটে সুইচ অন করে। রিনি দেখে এটা একটা অনেক বড় রুম।অনেক সুন্দর করে গোছানো। রিনি লক্ষ্য করে সারা রুম জোরে তারই ছবি।
রিনি বলেঃ আমাকে নামিয়ে দেন কোল থেকে !
মাহমুদ বিনা বাক্যে রিনি কে কোল থেকে নামিয়ে দেয়। রিনি প্রত্যেকটা ছবি ভালো ভাবে দেখছে।রিনি একটা ছবির সামনে এসে থমকে দাঁড়ালো। রিনি প্রথম যখন কক্সবাজার গিয়েছিল। তখন,তার হাবিব আঙ্কেল এর পিঠের সাথে পিঠ লাগিয়ে দিয়ে রাস্তা তে বসে একটা ছবি তুলে ছিলো।তবে সেগুলো ৩ বছর আগের কথা। সেই ছবি ও এখানে।
তাছাড়া,এই রুমে রিনির অজস্র ছবি রয়েছে।
রিনি মাহমুদ এর সামনে এসে দাঁড়ায়। মাহমুদ চুপচাপ হয়ে আছে। রিনি মিটমিট করে তাকিয়ে আছে মাহমুদ এর দিকে।
রিনি বলেঃ কে আপনি?
কেনো এতো আয়োজন? কেনো এতো মায়া মমতা মিশিয়ে ছবি গুলো যত্ন করে রেখেছেন?
মাহমুদ চুপ হয়ে আছে। মাহমুদ যেনো কিছু বলার ভাষা খোঁজে পাচ্ছে না।
নিরবতা ভেঙ্গে মাহমুদ বলেঃরিনি তোমাকে একটা কবিতা বলি শুনো।
” তুমি আসবে বলে,
পথের পানে দাঁড়িয়ে থাকা।
তোমায় দেখবো বলে,
চোখের মাঝে স্বপ্ন আঁকা,
দেখো দূর আকাশে সূর্যটা ও,
আবির মাখা।
তুমি আসবে তো একা একা!!!
(লেখিকাঃ উর্মি)
তোমার পথ চেয়ে আছি এখনো রিনি।জানি না আমার জন্য যে স্বপ্নটা ভুনা আছে তা পূরণ হবে কি না।আমি তোমাকে ভালোবাসতাম,ভালোবাসি, ভালোবেসে যাবো।
মাহমুদ কথা বলতে বলতে চশমা টা খুলে ফেলে।মাহমুদ আলতো করে, রিনির কাঁধের উপর নিজের হাত দুটো রাখে।
মাহমুদ বলেঃ রিনি একটা কথা কি জানো?
কাছে টেনে অবহেলা করার চেয়ে সরাসরি বলে দেওয়া ভালো এই গল্পের শেষ এখানেই।কিন্তু তুমি স্পষ্ট বলে দিয়েছিলে এই গল্পের সেদিন ই শেষ হয়েছে । তব ও আমার বেহায়া মন মানতে চাইনি।বেহায়া মনটা বলে, তুমিও নাকি আমাকে মনে প্রাণে চাও।
জানি না।এই কথা তুমি আমাকে বলবে নাকি?
তাছাড়া,
রিনি আমি নিজে ও জানি না।কেনো আমি এতো তুমি পাগল!
কেনো পারি না তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে চিন্তা করতে? উত্তর আছে কোন রিনি?
বলো রিনি!
রিনি বলেঃ আ আ আপনি কে!
আমি যাকে অনুমান করছি সে নয়তো!!!!
এরপর,মাহমুদ বলেঃ রিনি,আমি আর কেউ না।আমি জিন রাজ্যের প্রিন্স। তুমি আমার প্রতি বিন্দু পরিমাণ আগ্রহ দেখাও নি।তাই আমার নামটা ও জানো না?
কিন্তু আমি তোমার ব্যাপারে সব জানি।তোমার সব কিছু যত্ন করে রেখেছি।
তখনই,
রিনি বলেঃ আ আ আপনি ইনতিয়াজ!!!!
মাহমুদ বলেঃ রিনি,আমি শুধু ইনতিয়াজ না।আমার সম্পূর্ণ নাম হচ্ছে ইনতিয়াজ মাহমুদ। এখানে সবাই জানে আমার নাম মাহমুদ। সেদিন তোমার বলা কথা গুলো বড্ড কষ্ট দিয়েছে। তোমাকে ইচ্ছে করে ভার্সিটিতে, কষ্ট দিতে চাইতাম। কিন্তু পারতাম!রিনি আমাকে কি এখনো ভালোবাসো না!
আমি কি বিন্দু পরিমাণ ও জায়গা করতে পারিনি তোমার মনে?
রিনি বলেঃ তাহলে কেনো আপনি নিজেকে লুকিয়ে রেখেছিলেন আমার থেকে?
আপনি মিথ্যা বলছেন, আপনি আরেক জন কে ভালোবাসেন।আপনি আমাকে ভালোবাসেন না।
আপনি যে অন্য জনকে মন দিয়েছেন,
আমি তা নিজ চোখে দেখছি।
তাছাড়া, এখন বুঝতে পারছি,
সেদিন আপনি আমাকে খোদাহ হাফেজ না বলে আল্লাহ হাফেজ কেন বলেছেন।আমার মন ঠিক বলছিলো আপনি আমার জীবনে আবার ফিরবেন।
তাছাড়া,
আপনি আমাকে ভক্ষন করেছেন মিস্টার ইনতিয়াজ মাহমুদ!
সব কি ভুলে গেছেন?আমি সব কিছু মনে রেখেছি।
ইনতিয়াজ (জিন রাজ্যের প্রিন্স এবং মাহমুদ স্যার) বলেঃরিনি,সেই ঘটনার জন্য আমিও শাস্তি পাইছি।তার উপর রহমান ও তোমাকে কম কষ্ট দেয় নি।সব কিছুর জন্য আমি অনেক লজ্জিত। তাছাড়া,
যা হওয়ার হয়ে গেছে।
আর আমি তোমাকে ছাড়া অন্য কাউকে কল্পনা ও করি না রিনি।আমার মন প্রাণ জোরে শুধু তোমার আনাগোনা।
রিনি বলেঃ তাহলে,কার সাথে এতো হেসে হেসে কথা বলতেন?
কার ফুচকা খাওয়া মন দিয়ে দেখতেন?
আমার সাথে কেনো এমন রোড আচরণ করতেন?
ইনতিয়াজ বলেঃ আসলে, ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমি তাকে আমার মনের মাঝে থাকা প্রিয়তমার কথা বলেছি।সে আমার মনের রানীর বিষয়ে সব জানে।
আমি তাকে ভালোবাসতে পারবো না এটা জানার পর সে অনেক আপসেট হয়ে যাই।
তাই সে রিকোয়েস্ট করে ছিলো, আমি যেনো তার খুব ভালো বন্ধু থাকি।
so we Are good friend. Nothing else rini.
আর রিনি কেনো এমন আচরণ করতাম এর উত্তর নিজেই জেনে যাবে তুমি ।
রিনি বলেঃআচ্ছা যাক।আমার মনে যে সন্দেহ ছিলো সেটা দূর হলো।আমি বাসায় ফিরে যাবো।পিচ্চি ও উঠে যাবে। ঐশী ও চিন্তা করবে।মা বাবা ও বেক করবে।
ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি,আমি তোমাকে হারাতে চাইনা রিনি।তাই তো ভার্সিটিতে কেউ তোমাকে চোখ তুলে তাকালে অদৃশ্য হয়ে তাকে শায়েস্তা করতাম। ইসমাইল হোসেন নয়ন স্যার কে ও তাই আমার একদম সহ্য হতো না।
শুধু তোমার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতো।
হুহ!!!!
আমি কি চাই জানো রিনি?
আমি চাই রিনি নামক সত্তা টা,
শুধু আমারই থাক।শুধু রিনিকে আমি দেখবো মন ভরে ।
রিনি, বলো ভালোবাসি? আমার ভালোবাসা অভাবে মরুভূমি হয়ে যাওয়া মন কে একটু প্রশান্তি দাও???
রিনি বলেঃ আমার বিশ্বাস নাই ভালোবাসাতে।আমি চাই না এসব ভাবতে। ভালোবাসা বলে কিছু হয় না।আমি ভালোবাসি না।
ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি,এখনো ভালোবাসা আছে। বিশ্বাস করার মতো এমন ব্যাক্তিত্ব আছে। জাস্ট সাহস করে আমার বাড়িয়ে দেয়া হাতটা ধর।তোমার হাতটা বাড়াও।
আর রিনি,আমার হাতটা ধরে স্পর্শ করো।তোমার মন তোমাকে জানিয়ে দিবে যে হ্যাঁ এই হাতটার উপরে বিশ্বাস করা যায়। ভরসা করা যায়। যতই ঝড় আসুক না কেনো,এই ইনতিয়াজ কখনও তোমাকে ছেড়ে যাবে না।
রিনি একদম চুপ হয়ে আছে।কিছু বলছে না।
ইনতিয়াজ আবার বলেঃ রিনি, আমি আমার মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করেছি।আমার এই মন কে যা বলি সে সেটা শুনে না।
অনেক বলেছি, রিনি কে ভালোবাসা বন্ধ করতে কিন্তু মন যে মানে নি।শুধু ভেতরে ভেতরে তোমার জন্য কান্না করে।
তবে মন কে শাসন করবো।
আর বলবো, এই মনকে পাথর হয়ে যেতে।পাথর হয়ে গেলে আমার,
মনের কান্না গুলো যাতে পাথর খেয়ে পেলে।
রিনি বলেঃ আমি বাসায় যাবো।দেরি হয়ে যাচ্ছে। আমি এখন সুস্থ আছি।
ইনতিয়াজ বলেঃতাহলে কেনো জানতে চাইছিলে সব?
এখন সব জেনে কেনো পালিয়ে যাচ্ছো?
রিনি,তুমি আমার চোখে চোখ রেখে বলো?
তুমি আমাকে ভালোবাসো কি না!
রিনি কোন উপায় না পেয়ে, তেলাপোকা বলে চিৎকার দেয়। ইনতিয়াজ এর মনযোগ সরতেই রিনি দৌড়ে রুমের থেকে বেরিয়ে পড়ে।ইনতিয়াজ ও রিনির পিছু নিলো।
রিনি যত দ্রুত গতিতে পারে দৌড়ে চলছে। ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি আজ তোমার উত্তর না জেনে তোমাকে আমি ছেড়ে দিচ্ছি না।
ইনতিয়াজ,রিনির চোখের পলক ফেলার আগেই রিনির সামনে হাজির হয়ে যাই। ইনতিয়াজ, রিনি কে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে রিনি কে জড়িয়ে ধরে।
ইনতিয়াজ রিনির কানে কানে বলেঃ রিনি, একদম নড়াচড়া করবে না।তোমার পিছনে তেলাপোকা আসছে।
রিনি একথা শুনে একদম ভিতু হয়ে যাই। রিনি শক্ত করে ইনতিয়াজ কে জড়িয়ে ধরে। ইনতিয়াজ একটা শয়তানি হাসি দেয়। যা রিনির চোখে পড়ে নি।
ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি দেখি ছাড়ো আমাকে। যাও এখন পালিয়ে যাও।দেখি কত দূর যেতে পারো???
রিনি মনে বলছেঃ একি ব্যাপার টা কি?
কি হলো এভাবে সুর পাল্টিয়ে ফেলছে কেন?
কি হলো?
রিনি,ইনতিয়াজ কে ছেড়ে দেয়। রিনি দেখে…..
💮
সবাই জোড়ায় জোড়ায় বেরিয়ে পড়ে। জান্নাত ও মুগ্ধ হাঁটছে।কারো মুখে কোন কথা নেই।
হঠাৎ, জান্নাত দেখতে পেল, একটা খুব সুন্দর ফুলের গাছ।
জান্নাত সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।
মুগ্ধ বলেঃ দাড়াও আমি আনছি গাছ থেকে ফুল। তোমার যেতে হবে না।
মুগ্ধ অনেক গুলো ফুল নিয়ে আসে। ফুল গুলো জান্নাত এর দিকে এগিয়ে দিয়ে হাটু গেরে বসে আছে। অতপর,
মুগ্ধ বলেঃ আচ্ছা, জান্নাত জানো কি!!!
নাটাই বিহীন ঘুড়িটা আজ উড়ছে আনমনে। চিরকুটে লিখা গল্প টি,দেখো বেওয়ারিশ বিজ্ঞাপনে পড়ে আছে। কেনো পারছো না আমাকে আপন করতে?
কোন দিক দিয়ে আমি তোমার অযোগ্য বলো?
সত্যি জান্নাত , তোমার মাঝে কি যেনো আছে , না হয় আমি এতো তুমি পাগল কেনো?
জান্নাত ফুল গুলো নিয়ে নেই। জান্নাত , তার হাতটা এগিয়ে দেয়। জান্নাত বলেঃ উঠে পড়েন।আপনার কোন প্রশ্নের উত্তর আমি জানি না।
চলেন এগিয়ে যায়।তা না হয় জঙ্গলে ঘুরতে পারবো না।
জান্নাত ও মুগ্ধ চুপচাপ হয়ে গেছে। হঠাৎ জান্নাত কিছু একটার সাথে পা টা পিছলা খেয়ে পড়ে যায় মাটিতে। এটা দেখে, মুগ্ধ হেসে দেয়।
আসলে,যখন আমাদের সামনে কেউ পিছিলা খেয়ে পড়ে যায় তখন কেনো জানি আমরা দুঃখ প্রকাশ করার বদলে হেসে দেয়।
এই লজিক টা মুগ্ধের ক্ষেত্রে ও ব্যাতিক্রম হয়নি।জান্নাত এর গাঁ জ্বলে যাচ্ছে। মুগ্ধের এমন হাসি দেখে।
জান্নাত নরম স্বরে বলেঃ আপনার হাতটা এগিয়ে দেন?
আমি উঠতে পারছি না.?
পছন্ড ব্যথা পেয়েছি।
মুগ্ধ বলেঃ জান্নাত, I’m sorry.আসলে আমার ও ভাবে হাসাটা ঠিক হয়নি।আচ্ছা ওয়েট আমি হাত এগিয়ে দিচ্ছি।
জান্নাত মনে মনে বলেঃ চান্নু হাত টা বাড়িয়ে দাও।মজা বুঝতে পারবা।জান্নাত এর উপর হাসা।এখন বুঝবা।
মুগ্ধ হাত এগিয়ে দেয়। জান্নাত উঠতে চেষ্টা করে। তারপর,জান্নাত আবার চেষ্টা করতেই, মুগ্ধের হাত ধরে টান দেয় সামনের দিকে । মুগ্ধ ও টাল সামলাতে না পেরে পিছলা খেয়ে পড়ে যায় মাটিতে । জান্নাত হা হা করে অট্টহাসি দিয়ে উঠে।
মুগ্ধ একদম বেকুব হয়ে গেল। মুগ্ধ কল্পনা ও করেনি।জান্নাত এমন কিছু করে বসবে।জান্নাত এখনও হেসে চলেছে।
মুগ্ধের হঠাৎ করে নজর পড়ে…….
চলবে…..
#রাত_যখন_গভীর
#জান্নাতুল_মাওয়া_মহুয়া
#(jannatul_mawa_moho)
Season:02
Part :৪০
************
রিনি,ইনতিয়াজ কে ছেড়ে দেয়। রিনি দেখে তারা দুজন সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আছে। রিনি তো একদম অবাক।
রিনি বলেঃ এখানে কেনো?
আনলেন?
ইনতিয়াজ বলেঃ আমার উত্তর!
চোখে চোখ রেখে উত্তর দিতে হবে।
রিনির চোখে অশ্রু টলটল করছে। ইনতিয়াজ কিছু টা হতভম্ব হয়ে যাই। রিনির চোখে হঠাৎ কেনো অশ্রু সেটা বুঝতে অসুবিধা হচ্ছে ইনতিয়াজ এর।
রিনি, হঠাৎ করে, ইনতিয়াজ এর শার্ট এর কলার টা শক্ত করে ধরে টান দেয়। ইনতিয়াজ একদম রিনির খুব কাছে এসে পড়েছে রিনির টান দেয়ার কারণে।
ইনতিয়াজ বলেঃ কি হয়েছে?
কাজল তো লেপ্টে গেছে?
তোমার চোখ অশ্রু কেন?
আমাকে টান দিলে কেন?
কিছু তো বলো রিনি।।।।
রিনি বলেঃ
নারীর লেপ্টে থাকা কাজলে যদি
ভালোবাসার উষ্ণতা খুঁজে না পাও।
তবে পুরুষ তুমি যায় হও
প্রেমিক হওয়ার যোগ্য নও।
ইনতিয়াজ কিছু টা অবাক হয়ে গেছে। কারণ রিনি ইনডিরেক্টলি বলেছে, রিনি ভালোবাসে।তবে কিছু টা পেচিয়ে বলেছে কথা টা।
রিনি বলেঃ আমার চোখে চোখ জোড়া স্থির করে তাকিয়ে দেখেন,
খোঁজে দেখেন, আপনার উত্তর পাবেন।
ইনতিয়াজ এমন বাহানা করছে যেনো স্পষ্ট কিছু বুঝতে পারে নি।
ইনতিয়াজ বলেঃ আমি বুঝতে পারছি না।স্পষ্ট করে বলো।
রিনি, তখনই আবার ইনতিয়াজ কে টান দিয়ে একদম নিজের ঠোঁটের সাথে ইনতিয়াজ এর ঠোঁট জোড়া ডুবিয়ে দেয়। ইনতিয়াজ যা হচ্ছে তা বিশ্বাস করতে পারছে না। আসলে ইনতিয়াজ কল্পনা ও করে নি।এমন কিছু যে হবে।
রিনি বেশ কিছুক্ষণ পর ইনতিয়াজ কে ছেড়ে দেয়। রিনি এক মনে তাকিয়ে আছে ইনতিয়াজ এর দিকে। তারপর,
রিনি বলেঃ ভালোবাসি। অনেক ভালোবাসি। তাইতো আপনি যে আমার প্রিন্স তা কিছু টা অনুভব করতে পারছিলাম প্রথম সেদিন দেখা তে।
আপনার কিছু আচরণের জন্য কিছু টা কনফিউশান কাজ করছিলো।
তবে,কেনো জানি না।
ওই মেয়ের সাথে আপনাকে দেখলে আমার অনেক রাগ হতো।
আপনি জানেন আপনাকে আমি কতটা মিস করছি?
ইনতিয়াজ মাহমুদ জিন রাজ্যের প্রিন্স,
i love YOU so much . I would love to tell you that you’re my most price possession but I don’t want to own you. I want to belong to you.
ইনতিয়াজ বলেঃ আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ অবশেষে আমি পেরেছি।
রিনি জানো, জিলাসি খারাপ না তবে একটা কথা আছে, Jealousy in love might be a medicine but anything in excess will be an overdose.
তাই জেলাসির দিকটা একটো বুঝে শুনে বিবেচনা করবে।
তাছাড়া, রিনি আমি জানতাম তুমি আমাকে ভালোবাসো। সেদিন যখন তুমি আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছিলে,তখন তুমি যদি তোমার মন থেকে জিজ্ঞেস করতে, তাহলে উত্তর পেয়ে যেতে।
রিনি তোমার মাঝে কি জানি আছে,
সবাই কেনো জানি তোমার প্রতি আকর্ষিত হয়ে যাই সে ছেলে হোক বা মেয়ে। আমি এটা ভার্সিটি তে লক্ষ্য করছি।Rini,You are so lovable that you make everyone fall for you within the first few minutes of knowing you.
রিনি বলেঃ তা তো আমি জানি না।আমি কেনো জানি সহজে সবার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলতে পারি।আর সেদিন আপনাকে ফিরিয়ে দেয়ার পর থেকে বড্ড মিস করছি।
দুজনের উপর দিয়ে কম ঝড় ঝাপটা যায় নি।আমি আর আপনাকে হারাতে চাইনা।
ইনতিয়াজ বলেঃ রিনি আমি ও চাইনা তোমাকে হারাতে। আমি না একটা জিনিস বুঝতে পারছি না।
রিনি ভালোবাসা তা বাসায় বলো নি কেন?
পালাচ্ছি লে কেন?সেখানে বললে তো এখানে আনতে হতো না।
রিনি বলেঃ আমার লজ্জা লাগছিলো।তাই পালিয়ে যাচ্ছিলাম।তাছাড়া আমি অন্য কিছু চিন্তা করছিলাম।
ইনতিয়াজ বলেঃ কি চিন্তা করছিলা?
রিনি বলেঃ হাসবেন না কিন্তু???
ইনতিয়াজ বলেঃ একদম হাসবো না।
রিনি বলেঃ আমি মনে করেছি, আপনি আমাকে আটকাতে চেষ্টা করবেন। তারপর আটকে ফেলার পর, দেয়াল এর সাথে আমাকে আটকে ধরবেন,
তারপর, আমার চোয়ালে হাত দিয়ে মুখটা উপরে তোলে বলবেন,রিনি বলো আমাকে ভালোবাসো কি না।
কিন্তু হলো টা কি।।।।
তাছাড়া,আপনি আমার প্লেন টা ব্যর্থ করলেন তাই কান্না আসছে।এবং আমার মনের কথা বুঝতে চেষ্টা করছেন না।তাই একদম মনের মাঝে সুনামি চলে এসেছিলো যার ফলে চোখ দিয়ে কান্না।
ইনতিয়াজ বলেঃ পাগলি।আমি চাইছিলাম তুমি কোন দ্বিধা ছাড়া তোমার অনুভূতি প্রকাশ করো।তোমাকে তো আর আমি জোর করতে পারি না।তবে,রিনি তুমি কি জানো তোমার লেপ্টে থাকা কাজল চোখে বেশ মানিয়েছে।
রিনি বলেঃ হয়েছে হয়েছে বেঙাতে হবে না। তাছাড়া একটা জিনিস ভালো হয়েছে!
ইনতিয়াজ বলেঃ সেটা কি?
রিনি বলেঃ আমাকে প্রথম কোথায় দেখছেন?
মনে আছে?
ইনতিয়াজ বলেঃ বাহ রে মনে থাকবে না নাকি?
সমুদ্রের তীরে, ঝাউগাছ এর বাগানে প্রথম মায়াবতী কে দেখেছি।
রিনি বলেঃ জি জি।প্রথম দেখা সাগরে আর আমার মনের কথা ও বলেছি সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে।
আর!!!!
ইনতিয়াজ বলেঃ আর!!!
রিনি লজ্জা তে লাল হয়ে যাচ্ছে। আর কিছু বলতেই পারছে না।
ইনতিয়াজ বলেঃ আর আমার মায়াবতী নিজ থেকে সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে আমাকে চুম্বন করেছে। তাইতো?
রিনি বলেঃ একদম মুখে কিছু আটকায় না।
ইনতিয়াজ বলেঃ চল একটু হাঁটি। একটু পর চলে যাবো।তোমাকে বাসায় দিয়ে আসতে হবে। তবে…
রিনি বলেঃ চলো হাটি।
তবে কি?
ইনতিয়াজ বলেঃ তবে আমি চাই তোমাকে খুব শীঘ্রই আমার ঘরে মিস রিনি মাহমুদ করে আনবো।।।
রিনি বলেঃ তাই বুঝি?
ইনতিয়াজ বলেঃ জি ঠিক তাই।
রিনি বলেঃ সমুদ্রের তীরে আপনার সাথে হাতে হাত ধরে হাটতে অনেক ভালো লাগছে।
ইনতিয়াজ বলেঃ একটা অনুরোধ করবো?
রিনি বলেঃ কি?
ইনতিয়াজ বলেঃ একটা কি গান শুনতে পারবো?
তুমি রুপে যেমন রূপবতী। গানের গলা ও তেমন অসাধারণ।
রিনি বলেঃ অনুরোধ করতে হয় নাকি?
এমনে বললে ও গাইতাম।তাছাড়া, আমার ভালোবাসার জন্য কি আমি এতটুকু করতে পারবো না নাকি।
ইনতিয়াজ বলেঃ মনে করছি,গাইতে চাইবে না তাই।ধন্যবাদ প্রিয়।
রিনি গান শুরু করে,
Tere saamne aa jaane se
Yeh dil mera dhadka hai
Yeh galti nahi hai teri
Kusoor nazar ka hai
Tere saamne aa jaane se
Yeh dil mera dhadka hai
Yeh galti nahi hai teri
Kusoor nazar ka hai
Jis baat ka tujhko darr hai
Woh karke dikha doonga…
Aise na mujhe tum dekho
Seene se laga loonga
Tumko main chura loonga tumse
Dil mein chhupa loonga
Aise na mujhe tum dekho
Seene se laga loonga
Tumko main chura loonga tumse
Dil mein chhupa loonga
Tumse pehle, tumsa koi
Humne nahi dekha
Tumse pehle, tumsa koi
Humne nahi dekha
Tumhe dekhte hi
Mar jaayenge
Yeh nahi tha socha
Baahon mein teri, meri
Ye raat thehar jaaye
Tujhme hi kahin pe meri
Subah bhi guzar jaaye
Baahon mein teri, meri
Ye raat thehar jaaye
Tujhme hi kahin pe meri
Subah bhi guzar jaaye
Jis baat ka tujhko darr hai
Woh kar ke dikha dunga…
Aise na mujhe tum dekho
Seene se laga lunga
Tumko main chura lunga tumse
Dil mein chhupa lunga
Aise na mujhe tum dekho
Seene se laga lunga
Tumko main chura lunga tumse
Dil mein chhupa lunga
Dil mein jaage jazbaaton ko
Humne nahi roka
Dil mein jaage jazbaaton ko
Humne nahi roka
Teri ore badhe kadmon ko bhi
Humne nahi toka
Tere saath bechaini ko bhi
Aaram sa milta hai
Doob ke tujhme hi toh
Dil yeh sambhalta hai
Tere saath bechaini ko bhi
Aaram sa milta hai
Doob ke tujhme hi toh
Dil yeh sambhalta hai
Jis baat ka tujhko dar hai
Wo kar ke dikha doonga
Aise na mujhe tum dekho
Seene se laga lunga
Tumko main chura lunga tumse
Dil mein chhupa lunga
Aise na mujhe tum dekho
Seene se laga lunga
Tumko main chura lunga tumse
Dil mein chhupa lunga
Dil mein chhupa lunga..
Dil mein chhupa lunga…💮
ইনতিয়াজ বলেঃ মাঝে মাঝে কিন্তু গান শোনার আবদার করবো?😒
রিনি বলেঃ আচ্ছা।
ইনতিয়াজ বলেঃ ধন্যবাদ রিনি।সত্যি আজকের দিন টা এখন থেকে সারাজীবন এর জন্য আমার কাছে স্পেশাল হয়ে থাকবে।রিনি তোমার যখন যা মন চাই আমাকে বলবে।তোমার কষ্ট হলে আমার বুকে মাথা রেখে কান্না করবে।
রিনি বলেঃ অবশ্যই আপনি আমার ভালোবাসা আপনাকে না বললে কা কে বলবো?
ইনতিয়াজ আবার বলেঃ রিনি,যতদিন আমাদের বিয়ে হয়নি। তার মাঝে যে ক’দিন থাকবে। তুমি যদি কোন কারণে কষ্ট পাও তখন একটা কাজ করবে।
রিনি বলেঃ সেটা কি?
ইনতিয়াজ বলেঃ
“কষ্ট হলে গভীর রাতে,
মাথা রেখো চাদেঁর কোলে।
তার চেয়ে বেশি কষ্ট হলে,
চোখ রেখো তারার চোখে।
কষ্ট রেখো না বুকের মাঝে,
পাঠিয়ে দিয়ো আমার কাছে।”
(কবিতা লেখকঃ উর্মি)
রিনি বলেঃ জি মিস্টার।
তো কখন চলে যাবো সমুদ্র থেকে?
অনেক্ক্ষণ ধরে তো সমুদ্রের তীরে হাঁটছি।
হঠাৎ, ইনতিয়াজ রিনির মুখের উপর হাত দেয়। রিনি কিছু টা ইতস্তত হয়ে যাই। পরে বুঝতে পারে। তার মুখে , কিছু চুল এসে পড়েছে। সেগুলো সরিয়ে দিচ্ছে।
ইনতিয়াজ বলেঃ সমুদ্রের নীল রঙের মাঝে, আকাশের নীল রঙের মাঝে।
নীল রঙের কাপড়ে আমার মায়াবতী কে কিন্তু বেশ লাগছে। এতক্ষণ বলিনি কারণ, তোমাকে মন ভরে দেখার লোভ টা সামলাতে পারছিলাম না।
রিনি কিছু টা লজ্জা পেল। রিনি ইনতিয়াজ কে জড়িয়ে ধরে শক্ত করে। আর কানে কানে বলেঃ এবার চলেন ফিরে যায়। বাসায় ও যেতে হবে।
ইনতিয়াজ ও রিনিকে শক্ত করে আঁকড়ে ধরে।চোখের পলকে ইনতিয়াজ এর ঘরে চলে আসে।
রিনি বলেঃ আমি পিচ্চির সাথে দেখা করে আসি।
আপনি গাড়ি বের করেন।
ইনতিয়াজ গাড়ি বের করতে চলে গেল।
রিনি পিচ্চির সাথে দেখা করে। তারপর বিদায় জানিয়ে গাড়ি তে উঠে পড়ে। ইনতিয়াজ গাড়ি চালাচ্ছে। তখনই, রিনি আস্তে করে, ইনতিয়াজ এর গালে একটা ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিলো।
ইনতিয়াজ আঁড়চোখে রিনির দিকে তাকালো।
তখনই,ইনতিয়াজ এক হাতে গাড়ি চালাচ্ছে। অন্য হাতে রিনির এক হাত শক্ত করে ধরেছে।
রিনির বাসার সামনে গাড়ি থামিয়ে ইনতিয়াজ। তখনই, ইনতিয়াজ……
💮
💮
মুগ্ধ একদম বেকুব হয়ে গেল। মুগ্ধ কল্পনা ও করেনি।জান্নাত এমন কিছু করে বসবে।জান্নাত এখনও হেসে চলেছে।
মুগ্ধের হঠাৎ করে নজর পড়ে জান্নাত এর হাসির দিকে। বেশ সুন্দর করে হাসে জান্নাত। গালের এক পাশে হালকা টুল পড়ে যায় জান্নাত এর।
দুজন উঠে পড়ে। জান্নাত বলেঃ চলেন আর কিছুক্ষণ ঘোরে নি।তারপর না হয় ফিরে যাবো?
কি বলেন?
মুগ্ধ বলেঃ তোমার ইচ্ছে।
জান্নাত এর ইচ্ছে হচ্ছে প্রকৃতির রূপে হারিয়ে যেতে। জান্নাত চোখ বন্ধ করে, লম্বা করে নিশ্বাস নিচ্ছে। আর কি যেনো অনুভব করার চেষ্টা করছে।
মুগ্ধ বলেঃ জান্নাত প্রকৃতির সুগন্ধি নেয়ার চেষ্টা করছো তাই না?
জান্নাত বলেঃ হুম।
দুজন অনেক টা সময় ধরে জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করেছে।অন্ধকার নেমে আসছে তাই তাঁবু তে ফিরে আসে। কামাল, রাবেয়া,সুমি ও রহমান ও ফিরে এসেছে।সবাই যার যার মতো করে মজা করেছে জঙ্গলের ভিতর।
জান্নাত অনেক খুশি। কারণ, এই ঘোরাঘুরি কারণে সুমি ও রহমান এর মাঝে যে দ্বিধা বোধ ছিলো তা কেটে গেছে। দুজনের মনের ভাব প্রকাশ করতে পেরেছে।
জান্নাত মনে মনে বলেঃ আমার বেস্টি সুখে আছে।এটার চেয়ে ভালো কিছু হতেই পারে না।
না জানি আমার সাথে কি হয়?
কামাল বলেঃ সো কালকে আমরা সবাই বেক যাচ্ছি!
অকে!
সবাই বলেঃ হুমমমমমমমম।
রহমান বলেঃ তবে,সব মেয়ে দের জন্য একটা সারপ্রাইজ আছে আমার পক্ষ থেকে। সবাই কাল সকালে ঘুম থেকে উঠার পরেই দেখতে পাবে।
রাবেয়া বলেঃ ওমা তাই।এখন আসো রাতের খাবার শেষ করি সবাই।
সবাই রাতের খাবার শেষ করে ঘুমিয়ে পড়লো। তবে সবার চোখ ফাঁকি দিয়ে। মুগ্ধ বেরিয়ে আসে। বসে আছে খোলা আকাশের নিচে।
মুগ্ধ বসে বসে আকাশের চাঁদ ও তাঁরা দেখছে।
মুগ্ধ এর মন খারাপ। কারণ, কাল থেকে জান্নাত বাসায় ফিরে যাবে।
তারপর, শুক্রবারে সে অন্য কারোর হয়ে যাবে।
মুগ্ধ আপন মনে বলে উঠেঃ আচ্ছা, কোন কি চমৎকার হতে পারে না!
আমার আল্লাহ পাক এর উপর পূর্ণ আস্থা আছে। উনি অবশ্যই আমাকে সাহায্য করবেন।
মুগ্ধের ভালো লাগছে, রাতের দৃশ্য দেখতে।সাথে তো ঝর্ণার জলের শব্দ আছেই।
একটু পর, মুগ্ধ কারোর পদধ্বনির শব্দ শুনতে পেল।
মুগ্ধ পিছনে ফিরে দেখে……
চলবে…..