যৌনকর্মী
#পর্ব_৬_৭_ও_শেষ_পর্ব
লেখিকা_নুসরাত_হক
আমি এখন আল্লাহর কাছে একটাই প্রাথনা করি
কীভাবে আমি আমার মেয়েকে এখান থেকে বের করবো।
কারন তাকে বের করা আমার জীবনের একটা লহ্ম্য।
কারন আমি তাকে এই জীবন দিতে চায় না।
পতিতা বানাতে চায় না।আচ্ছা জীবন কি আমাকে সুযোগ দিবে??
আমার মেয়েটা প্রায় সময় বলে আচ্ছা আমার বাবা কোথায় কিন্তুু আমি উওর দিতে পারি না।
আহমেদ এর আশা আমি ছেড়ে দিয়েছি কারন তারা এমনি।
বসন্তের কোকিল তারা।এ জীবনে হয়তো আহমেদ এর সাথে দেখা হবে।
আমার মেয়ে টা দিন দিন বড় হতে লাগলো।
খদ্দের দের চোখে পড়ে। লুকিয়ে কতখন রাখা যায়।
আমার শরীর টা ইদানীং ভালো যাচ্ছে না।
কেমন যেনো লাগে।
অসুস্থ হয়ে যাচ্ছি।
আমাদের পল্লী তে এমনি হয়। ৩০ এর কাছাকাছি গেলে সবাই অসুস্থ হয়ে মারা যায়।
কারন শরীর আর কতো সইবে।আমার তো জাহান্নামি আমাদের এই দুনিয়াই ও জায়গা নেই আবার ওই দুনিয়াই ও নেই।
আমার মেয়ের বয়স ৮ বছর।
আমার এখন মনে হয় আর বাঁচবো না আমি।
মৃত্যু আমায় ডাকছে এখন।
কিন্তুু মেয়ের চিন্তায় জীবন শেষ।
এখন আর খদ্দের আনতে পারিনা মাসের মধ্যে ১ দিন ও পারিনা৷ অসুস্থ হয়ে যায়।
কারন অল্প বয়সে মোটা আর বড়ো হওয়ার ওষুধ খেয়েছি এখন তার প্রভাব শরীরে পড়ছে।
অনেকে বলছে মেয়েকে এ কাজে নামিয়ে দিতে।
কিন্তুু জীবন থাকতে এটা কখনও করবো না আমি।
আল্লাহকে সবসময় ডাকি।
হঠাৎ এক সনধ্যায় এক লোক আসে। আমি অসুস্থ শুয়ে আছি।
আমাকে আমার মেয়ে বলছে মা কে জেনো আসছে।
আমি বলি কে আসছে।
মা আমি চিনি না।
তখন ভেতরে ডুকে।
আমি পাশ ফিরে দেখি এ আর কেউ না। আহমেদ।
আজ এত বছর পরে।
আমাকে সে জড়িয়ে ধরে আর বলে আমায় মাফ করে দিও সেদিন আমি একটা ঝামেলাই পড়ে যায়।
তারপর বাবা মা আমাকে রাশিয়া পাঠায় দেয়।আজ ৮ বছর পর দেশে এসে তোমার কাছে এসেছি।
আমি তাকে জড়িয়ে ধরলাম৷
আর বললাম আল্লাহ আমার কথা শুনেছে।
আমার মেয়েকে কাছে নিয়ে বললাম এটা আমার আমার মেয়ে। নাম জান্নাত।
তুমি বলেছিলে মেয়ে হলে জান্নাত রাখতে।
আমি রেখেছি।
তখন সে আমার মেয়েকে জড়িয়ে ধরে আর বলে আমার মেয়ে তুমি।
সেদিন রাতে সে আমাদের সাথে থাকে।
টানা ৪ দিন থাকে।সে টাকা দেয় আমি বাজার করে আনি তাকে রেঁধে আমি খাওয়াই।
আর রাতের বেলা তার বুকে শুই। আসলে তার বুকে আলাদা একটা শান্তি আছে।
তাকে বলি আমার মেয়েকে তুমি নিয়ে যাও।
ওকে সুন্দর একটা জীবন দাও।
তখন সে বলে নিয়ে যাবো।
দিন দিন আমার শরীর খুব খারাপ হতে লাগলো।
মেয়ে সবসময় বলে মা তুমি ঠিক হয়ে যাবে।আমার মেয়ে আমাকে রান্না করে খাওয়াই।
৮ বছরের মেয়ে।
জান্নাত কই তুই।
এই তো মা কি হয়ছে?
মা একটু পানি দে আর ফার্মেসী থেকে আমার জন্য কিছু ওষুধ এনে দে।
আর এই টাকা নে।
আচ্ছা মা আমি যাইতেছি৷
মার জন্য ওষুধ আনতে গেলাম।
তখন ফার্মেসীর ছেলেটা আমায় বলে ভালোই তো বড় হয়ছোস।
আমি কিছু না বলে চলে আসি।
আর মাকে ওষুধ টা খেতে দি।
মা ওষুধ খাওয়ার পর আমাকে বলে জান্নাত তোর বাপের সাথে চলে যাইস।
পালাই যাইস এখান থেকে।
পড়ালেখা করে মানুষ হয়ছস।
রাতের বেলা মা আর আমি ঘুমালাম।
সকাল বেলা মাকে ডাকি কিন্তুু মা আর উঠে না।
কারন আমার মা মারা গেছে।
বাপ কে খবর দিতে পারি নাই বাপ সেদিন আসে নাই।
মাকে নানুর কবরের পাশে জানাজা ছাড়া দাফন করলো।
কারন হুজুর রা আমাদের জানা জা পড়ে না।
আমার মায়ের জীবনটা এভাবেই শেষ হলো।
#পর্ব_৭_ও_শেষ_পর্ব
আমি ৮ বছরের একটা মেয়ে। তখন পুরো একা। বাবা আসে নাই ৩ দিন ধরে।
সর্দার তো বলছে কিছু দিন পর থেকে কাজে নেমে যাইস।
আমাকে শরীর বড়ো করার ইনজেকশন দিতে বলছে ফার্মেসীতে গিয়ে।
আমি তখন কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারছিলাম না কি করবো।
বাবা এলো ৭ দিন পর বাবাকে দেখে জড়িয়ে ধরি কান্না করি। আর বলি মা নেই।
বাবা তখন মাটিতে বসে পড়ে। বাবাকে নিয়ে মার কবরে যায় আর বাবা কবর জিয়ারত করে।
বাবা আমাকে জড়িয়ে ধরে অনেক কান্না করে।
আর বলে মা আমি তোর মাকে শেষ বারের মতো দেখতে ও পারলাম না।বাবা আমাকে নিয়ে যেতে চায় তখন সরদারনী যেতে দেয় না।
অনেক জোড়াজুড়ির পর বাবা কে বলে ১ লাখ টাকা দিলে নিয়ে যেতে দিবো।
বাবা ও রাজি হলো আর আমাকে ১ লাখ টাকা দিয়ে নিয়ে আসলো।
বাহিরের জগত সে এক অন্যরকম অনুভুতি।
বাহির টা কত সুন্দর পরিস্কার যা বলে বোজানোর মতো না।
বাবা আমাকে একটা বন্ধুর বাসায় রাখলেন আর বললেন আমাকে কিছু দিন দেখতে।
বাবার বন্ধুর একটা মেয়ে ছিলো আমি তার সাথে খেলাতাম।
বাবার আমাকে নতুন জামা কাপড় কিনে দিয়ে আর আসলো না।
১ মাস পর বাবা আমাকে সাথে করে কোথায় যেন নিয়ে যাচ্ছে।
আমাকে বাবার বন্ধুর বউটা অনেক সুন্দর করে সাজিয়ে দিলো।আর জড়িয়ে ধরে আদর করে দিলো।
তারপর গাড়িতে করে কোথায় যেনো গেলাম।
ওখানে গিয়ে দেখি কতো বড়ো বড়ো পাখির মতো ডানা।
বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম বাবা এটা কি।
তখন বাবা বললও এটা বিমান।
এটা করে আমরা উড়বো।
উড়ে উড়ে আমরা অন্য দেশে যাবো। রাশিয়া যাবো।
আমি অনেক খুশি।তারপর বিমানে চেপে অন্য দেশে এলাম।
শুরু হলো নতুন জীবন।
বাবা আমাকে এখানে একটা স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিলো।
আর হোস্টেলে দিয়ে দিলো।
বাবা আসতো টাকা দিয়ে যেতো।
মাঝে মাঝে আমি বাবার রুমেও যেতাম। বাবা জব করতো তাই আমাকে তেমন সময় দিতো না।
আর প্রবাস জীবন সময় কিভাবে দিবে।
বাবা আমাকে যতটা পারতো আদর করতো।
ধীরে ধীরে অনেকটা সময় কাটলো।
বলে রাখি বাবা ২ বছর পর পর দেশে যেতো। আর ৬ বা ৭ মাস পর আসতো।
যখন বাবা দেশে যেতো আমাকে তেমন কল দিতো না।
আর আমিও দিতাম না বাবা আমাকে মানা করতো কল দিতে।
কিন্তুু বাবা আমায় টাকা দিয়ে যেতো।
জীবন থেকে ১৫ টা বছর কেটে গেলো।
এখন আমি রাশিয়ার একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া লেখা করছি।
বাবার ও এখন বয়স হয়েছে।
বাবা একদিন বললও বাবার আরো একটা পরিবার আছে।
বাবা তাই ২ বছর পর পর দেশে যায়।সেখানে বাবার ৩ টা ছেলে আছে।
বাবা কখনও তাদের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয় নি।
আর কখনও দিবে ও না।
বাবা আমায় খুব ভালো বাসে।
কোনো কিছুর কমতি বা অভাব রাখেনি।
কিন্তুু বাবার পরিবারে কেউ জানে না তার একটা মেয়ে রাশিয়াতে বেড়ে উঠছে।
আমাকে এখন দেখলে কেউ চিনতে পারে না যে আমি বাঙালি।
সবাই রাশিয়ান ই বলে।
কিন্তুু সবচেয়ে বড়ো কথা আমি বাংলা ভাষা বলতেই সবচেয়ে পছন্দ করি।
রাশিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পি.এইচ.ডি শেষ করে সরকারি চাকরি তে যোগ দি।
এর মধ্যে আমি জাতীয়তা পেয়ে গিয়েছি রাশিয়ার নাগরিক হিসাবে।
বাংলাদেশ আর যাওয়া হলো না।
তবে ইচ্ছে আছে বাংলাদেশ এ যাওয়ার।
বাবা এর মধ্যে অসুস্থ হয়ে দেশে একবারে চলে যায়।
আর আমি ও চাকরির সুএে এক দেশ থেকে অন্য দেশে ঘুরে বেড়াচ্ছি।
২০১৩ র দিকে এক ছেলের সাথে পরিচয় হয়।
ছেলেটা বাঙালি ছিলো।
তবে সে রাশিয়াতে সেটেল্ড ছিলো।
তার সাথে একটা পর্যায়ে প্রনয়ের সম্পর্কে যায়।
বিষয় টা বাবাকে শেয়ার করি।
আর তাকে আমি আমার কালো অতীত বলি।
তারপর ২০১৪ তে আমাদের বিয়ে হয়।
বিয়ে টা বাবাই আমাকে দেয়।
২০১৭ তে আমার একটা ছেলে হয়। আমি তখন বাংলাদেশে যায়।প্রায় ২৭ টা বছর পর কিন্তুু মার কবরে আর যাওয়া হয় না। বাংলাদেশ এর চিটাগাং এ আমার শশুর বাড়ি। কিন্তুু আমার শশুর শাশুড়ী রাশিয়াতেই থাকে আমাদের সাথে।
আমি পুরো বাংলাদেশ ঘুরি বরের সাথে।
সত্যি বলতে আমার বর আমায় অনেক ভালো বাসে।
সে আমায় মন দিয়ে বোঝে।
বাবা চিটাগাং এ আসে ৩ দিন থেকে আবার চলে যায়।
বাংলাদেশ আমার খুব ভালো লাগে। ৩ মাস থেকে আমি আবার রাশিয়াতে চলে যায়।
এখন আমি যখন ছুটি পায় দেশে চলে আসি।
২০২০ সালে এখন আমি আবার ২য় বারের মতো গর্ভবতী। সবাই দোয়া করবেন আমার জন্য।
আসলে জীবন আমাকে ২য় বার সুযোগ দিয়েছে।
আর আমি আমার বাবার কাছে কৃতজ্ঞ আমাকে এত সুন্দর ভাবে জীবন সাজিয়ে দেওয়ার জন্য।সত্যি বলতে সব আল্লাহর ইচ্ছে।
কিন্তুু আমি এখনও গর্বের সাথেই বলি আমি পতিতার সন্তান।
পতিতা-দের জীবনি আমি যেভাবে বলছি তার চেয়েও করুন।
দোয়া করবেন তাদের জন্য।