যৌনকর্মী পর্ব_২_৩_৪_৫

0
4012

যৌনকর্মী
#পর্ব_২_৩_৪_৫
লেখিকা_নুসরাত_হক

আমাকে ডাক্তার দেখানো হলো। প্রায় ৫ দিন এর মতো আমার রক্ত যেতে লাগলো।
এর পরে লোকটা আবার এলো।এবার ও মা আমাকে তার হাতে ছেড়ে দিলো।
আমি চিৎকার চেচামেচি কেউ যেনো শুনতেছিলো না।কারন এই পল্লীতে এগুলো কোনো ব্যাপার।
১০ বছরে পড়লাম।
সবাই বলতে লাগলো সাটিফিকেট লাগবে। এত অল্প বয়সে এই কাজে নামানো যাবে না। আমার মা ২ টা পয়সা কামানোর জন্য আমাকে এই পথে নামিয়ে দিলো।
কিন্তুু তখন আমি অনেক ছোট এবং শারীরিক ভাবে ও অনেক ছোট।
মা আমাকে ফার্মেসী থেকে কিছু ট্যাবলেট আর ৩ টা ইনজেকশন মারালো।
আমি যেনো ভুলে ফেঁপে উঠলাম। কেউ বলবেই না যে আমার বয়স ১০ বছর।
আসলে দৌলতদিয়া পতিতা পল্লী তে কিছু ফার্মেসী আছে যেখানে মেয়েদের শারীরিক গঠন বাড়ানোর জন্য বিভিন্ন ওষুধ বিক্রি করে।
যা শরীরের জন্য অনেক খারাপ এটা হার্ট লিভার কিডনিতে পানি জমে যায়। এমনকি অকেজো ও হয়ে যায়।
দৌলতদিয়া পতিতা পল্লীর অর্ধেক পতিতা বয়সের আগে এই সব ওষুধ এর দ্বারা শারীরিক গঠন বৃদ্ধির জন্য। কিন্তুু যখন বয়স ৩০ পার হয় তখন তাদের শরীরে নানা রকম রোগ ব্যাধি বাসা বাঁধে।
আর তারা বড়ো জোর ৪০ বছর পযন্ত বাঁচে ।
আমার মা টাকা খাইয়ে ১৮ বছর করে একটা সার্টিফিকেট বানালো।
কারন মাঝে মাঝে পুলিশ রেড দেয়।
এরপর আমি পুরো পতিতা হয়ে গেলাম।
আমার মা আমাকে লাল টিপ দিয়ে ঠোঁট লাল করিয়ে খদ্দের খোঁজার জন্য বের করে দিতো।
কম বয়স ছিলো খদ্দের রা ও আমার উওর আগ্রহ করতো।
আমার প্রতিদিন ইনকাম হতো ৮০০ থেকে ৯০০ শত টাকা।
খদ্দেররা আসলে অনেক সময় খুব বেশি খুশি করতে পারলে বকশিস দিতো।
আবার খুব গালাগালি ও করতো।
কত রকমের বয়সের সে খদ্দের আসতো হিসাব নেই একদম ১২ বছর থেকে শুরু করে ৮০ বছরের খদ্দের পযন্ত।
এই নিষিদ্ধ পল্লীতে ভালো ডাক্তার নেই ভরসা হিসাবে কতগুলে ফার্মেসী
তারা ও আমাদের কাছে ওষুধ বেচতো অনেক চওড়া দামে মনে হতো আমরা যেনো টাকার গাছ।

#পর্ব_৩

এই নিষিদ্ধ পল্লীতে কোনো মান সম্মান ছিলো না। এই খানে ছোটো বড়ো সবাই সবাইকে এক ভাষা করতো এখানে কেউ কাউকে সালাম দিতে আমি শুনি নি৷ আযান পুজা এগুলোত কখনও দেখিনী ও। আর এখানে অনেকেই আছে যারা দোয়া দুরুদ ও জানতো না। আমাদের জন্য কোনো পবিএ দিন ছিলো না। কোনে উতসব ও না।
আমাদের মান সম্মান তো একদমই নেই এমন ও হয়েছে যে। আমার মা যার সাথে শুয়েছে। সে ও আমার সাথে শুয়েছে।
কয়দিন পর পর প্রশাসনের লোক আসতো তাদের চাঁদা দিতে হতো না হলে সবাইকে বেঁধো রোক মারতো৷
এলাকার এমপি চেয়ারম্যান সবাইকে টাকা দিতে হতো।
না হলে তো এ পল্লী চলবে না।
সবাই আমাদের ঘৃনা করে। অথচ তারাই আমাদের শরীর বেচা টাকা নেই।
সময় এভাবেই গড়াই। সে তো আর অপেক্ষা করে না।
আমার বয়স এখন ১৬। টগবগে যুবতি আমি।
যে কোনো পুরুষেরই চোখে পড়ি।
ইদানিং টিভিতে থাকি নিরাপদ যৌন মিলন এর কথা।
না হলে বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হতে পারি। যেমন Hlv, গনোরিয়া, সহও জটিল রোগে।
আসলে আমাদের এই পল্লীর সবাই এরকম রোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যায়।
কিন্তুু আমরা কি করবো বলুন খদ্দেররা তো কনডম ব্যবহার করতেই চায় না।
তারা আসে ও না।
আর না আসলে আমরা চলবো কিভাবে বলুন।
তাদের কনডম এর কথা বললে তারা গালাগালি করে।
তারা চলে যেতে চায়।
তাই আমরা জন্ম নিরোধক পিল খেতে হয়।
কিন্তুু কিছু খদ্দের খুব ভালো মানুষ। তারা আসলে ৪ থেকে ৫ হাজার টাকাও দেয় খুশি হয়ে।

#পর্ব_৪

যেদিন টাকা বেশি পায় সেদিন অনেক খুশি হয়।ইদানীং আপনারা তো জানেন মায়ের শরীর ভালো না। এখন আর আগের মতো কাজ করতে পারে না।
জরায়ুতে সমস্যা হয়েছে।
এখানের ফার্মেসীর ওষুধ গুলো ও আর কাজ করে না।
রাতে ব্যাথার জন্য ঘুমাতে পারে না।
পুরো সংসারের খরচ আমার মাথার উপর চলে আসে।
ইদানীং একটা ছেলের সাথে আমার খুব ভাব হয়।
সে আমার চেয়ে বয়সে বড়ো।তার বয়স ২৩। ধনীর দুলাল। কিন্তুু পড়ালেখা করে।
যেদিন ১ম এখানে আসে তার সাথে আমার পরিচয় হয়।
তার সাথে সময় কাটানো হয়। তখন সে আমাকে ২ হাজার টাকা দেয়। আর বলে এখন থেকে তোমার কাছেই আসবো।
যখন কোনো খদ্দের আসে তখন আমার মা কুটির এর বাহিরে চলে যায়।আসলে ২ টা কুটির ভাড়া করার সামথ্য আমার নাই।
যখন কেউ রাতে থাকতে চায় কোনো খদ্দের তখন আমার মায়ের অনেক কস্ট হয়ে যায়।বাহিরে কোথাও বা কারো ঘরে রাতে থাকে।
অনেক সময় অন্যর ঘরে ও রাতে খদ্দের থাকে।
এমনিতেই মা অসুস্থ।
ছেলেটাকে আমার খুব ভালো লাগে।
নাম তার আহমেদ।
সে সবসময় আমাকে বলে এমন কড়া কালারের লিপি স্টিক দিবে না।
এমন বাজে ভাবে সাজবে না।
আমি ও তার কথা শুনে চলার চেষ্টা করি।
আমার মায়ের অসুস্থতা দেখে সে বাহিরে চিকিৎসার জন্য নিতে চায়।কিন্তুু সর্দার রা তো আর বাহিরে নিয়ে যেতে দিবে না।
সে বাহির থেকে আমাদের ওষুধ এনে দেয়। সেটা অনেক ভালো খেলে আমার মায়ের ব্যাথা অনেক কমে যায়।
সময় গড়িয়ে যায়। এখন আমার বয়স ২০।
এ পাঁচ বছরে আহমেদ নিয়মিত আসা যাওয়া করে।
সে চাইতো না আমি অন্য খদ্দের এর কাছে যায়।
সে প্রায় সময় রাতে থাকে।
হঠাৎ সে একমাসের মতো আসে না। মন অনেক খারাপ আমার তার সাথে যোগাযোগর কোনো মাধ্যম নেই।
এর মধ্যে একদিন সকালে আমার মা মারা যায়।
আমার মা চিকিৎসার অভাবে মারা যায়। কারন আমার মাকে হাসপাতালে নিতে পারিনী।
আমার মায়ের কবর দিতে দিবে না।
দাফন ও না। এলাকার চেয়ারম্যান এরা বলছে। কোনো হুজুর জানাজা পড়বে না।
কারন আমরা পতিতা। পতিতাদের জানাজা হয় না।
আচ্ছা আমরা প্রকাশ্য পতিতাবৃত্তি করি কিন্তুু অনেক শিক্ষিতো মানুষ লুকিয়ে যে করে।
বড় বড় নায়িকারা তাদের শরীর দেখায়। এটাতে কি কিছু হয়না।
অথচ আমাদের টাকা চেয়ারম্যান এমপিরা খেয়ে মানুষ হয়তেছে এটা কি গুনাহ নাহ।
অনেক হুজুর এর কাছে গেলাম কেউ জানাজা পড়বে না। দাফন ও করবেনা।
শেষে আমাদের পল্লীর একটা খালি জায়গায় মাকে আমরা কোনো রকম গোসল করিয়ে জানাজা ছাড়া মাটিতে কবর। দি।
আমরা পল্লীর মানুষরা বড়ো অসহায় এটা কেউ বুজে না।
আমরা শরীর বেচে খায় আমরা জানি কিন্তুু এ পল্লীতে যারা থাকি তারা বাহিরের জগত সমপকে জানে না।
আমাদের বের হতে দেয় না।
আমি জানি না এই দায় কার।

#পর্ব_৫

আহমেদ ও আসছে না । মা ও মারা গেলো আমি একাকিত্ব আমায় ঘিরে ধরেছে। কাজে ও মন বসাতে পারছিনা।
মা মারা যাওয়ার ১ মাস কেটে গেলো। কোনো খদ্দের এর সাথে সময় কাটাই নি। দোয়া কালাম ও জানি না যে মায়ের জন্য একটু দোয়া করবো।
কি হতভাগ্য কপাল আমার।
কিন্তুু এভাবে বসে বসে খেলেও তো জীবন যাবে না। জমা টাকা ফুরিয়ে আসছে।
খদ্দের তো ধরতেই হবে।
দেখি কাল সকাল থেকে পারি কিনা।
মন মেজাজ ভালো নেই।
আর আহমেদ এর বিরহে আমার মনটা পুড়েছে।
সকালে এক খদ্দের এলো।
দামাদামি হলো।
খদ্দের যাওয়ার সময় মাএ ২০০ টাকা দিলো অথচো কথা ছিলো ৫০০ দিবে।
প্রতিবাদ করাই আমাকে মা* খা* বলে গালাগালি দিলো।
আমি নাকি তাকে ভালো মতো আরাম দিতে পারিনি তাই সে ২০০ টাকা দিলো।
সকাল সকাল মেজাজ টা খারাপ হয়ে গেলে।
বললাম শালা দুর হ। শুয়োর ঘরে বউ রেখে মা* সাথে শুতে আসোস কেনো।
তোকে ডেকে আনছি নাকি রে।
শালা হারামি।

মেজাজ টাই আমার খারাপ হয়ে গেলো। বিকালের দিকে দরজা বন্ধ করে একটু ঘুমাইতেছিলাম।
দেখলাম দরজায় আওয়াজ হয়তেছে।
দরজা খুললাম। ওমা দেখতেছি আহমেদ।
সে ভিতরে ডুকলো।
আর আমি তাকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলাম।
বললাম এত দিন কোথায় ছিলা। আজকে ৩ টা মাস কেটে গেলো আসো নি তুমি কি আমায় ভুলে গেছো৷
মা আর নেই।
সে দাঁড়ানো থেকে বসে পড়লো।
আর বললও মাফ করো এত দিন অনেক ঝামেলাই ছিলাম।
তাই আসতে পারি নী।
তাকে সব খুলে বললাম।
সে সব শুনে কান্না করে দিলো আর বললও আমি তো আছি।
সে আমার মায়ের কবর জিয়ারত করলও।
আর আমাকে কিছু দোয়া দুরুদ শেখালো।
সে বললও আমি সবসময় আছি তোমার পাশে।
তার থেকে সে রোজ আসতো।
আসার সময় আমার জন্য অনেক রকম খাবার আনতো যা আমি জীবনে আমি চোখেও দেখিনী আর খাই ও নি।
যেমন বার্গার স্যান্ডউইচ এগুলো নাকি নাম।
আমি নাম শুনে হাসতাম।
সে মাঝে মাঝে রাতে ও থাকতো।
তখন আমার খুব ভালো লাগতো।
তাকে রেঁধে খাওয়াতাম।
তাকে সবসময় বললতাম আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও।
তারপর সে বলতো নিয়ে যাবো।
সারা পল্লীতে আহমেদ কে আমার নাগর বলতো৷
আর আমাকে সবাই বলতও ওরা বসন্তের কোকিল আসবে যাবে।
ওদের ভালোবাসতে নেই।
আমি ওদের কথায় কান দিতাম না৷
এভাবে ১ টা বছর কাটলো।
আহমেদ আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলতো। আমাকে অনেক দোয়া ও শিখিয়ে ছিলো। নামাজ ও৷
১ বছর বাদে আমি হঠাৎ অনুভব করলাম আমি গর্ভবতী।
আর হ্যা বলে রাখি।
এই ১ বছর আহমেদ ছাড়া আমি কোনো পুরুষ এর সাথে থাকিনাই।
যা লাগতো সব আহমেদ দিতো।
আহমেদ কিন্তুু আমাকে এখান থেকে বাহিরে নিতে চেয়েছিলো।
কিন্তুু পল্লীর সর্দার আর মানুষ রা দেয়নি।
আমি গর্ভবতী হওয়াতে আহমেদ কে বললাম।
আহমেদ অনেক খুশি।
সে আমার অনেক যত্ন নিতো।আসলে, ৩ দিন বা ৪ দিন ও থেকে যেতো।
অনেক খাবার আনতো এমনি বাহির থেকে ওষুধ ও আনতো।
এভাবে আমার ৭ মাস কাটে।
একদিন এসে আমাকে বললও একটু ঝামেলাই আছি ১ সপ্তাহের মতো আসবো।
আমি বললাম ঠিক আছে৷
এর মধ্যে আমি কিছু টাকা ও জমিয়েছি।
১ সপ্তাহ কাটলো আহমেদ আসলো না।
অনেকে বুজালো আসবে কিন্তুু দিন যায় মাস যায় সে আসে না।
আমার ৯ মাস শেষের দিকে।
আমি তাকে খুব মিস করছিলাম আর সন্তানের কথা ভাবছিলাম।
অনেকে তো রীতিমতো বকাবকি করলো কেন বাচ্চা নিলাম সে আর আসবে না।
আমি মনে মনে রবের কাছে একটা ছেলে চাইতাম।
কারন ছেলে হলে এ জীবন সে পাবে না। পতিতা হবে না৷
কিন্তুু মেয়ে হলে জীবনটা আমার মতোই হবে।
একরাতে আমার খুব ব্যাথা উঠলো আমি নরমালে মেয়ের মা হলাম।
মেয়ে হওয়াতে আমি একটু দুঃখ পেলাম কারন জীবনটা আমার মতো হোক সেটা আমি চায় না কারন আমি মা।
আহমেদ ততদিনেও আসলো না।
আমি আর আমার মেয়ে জমানো টাকা ভেঙে খেতে লাগলাম। কারন মেয়ে বুকের দুধ খায়।
জমানো টাকা ও ফুরিয়ে আসতে লাগলো।
অবশেষে খদ্দের জায়গা দিতে হলো।
আমার মেয়ের বয়স ১ বছর হয়ে যায় আহমেদ আসে না কিন্তুু আমি তার অপেক্ষাই থাকি।
আর মেয়ের ভবিষ্যৎ নিয়ে চিন্তায় থাকি।
দেখতে দেখতে কয়েক বছর কেটে গেলো।
আমার মেয়ের বয়স এখন ৫।
কিন্তুু আহমেদ আজোও এলো না।
যখন খদ্দের আসে আমি আমার মেয়েকে লুকিয়ে রাখি৷

চলবে…

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে