#মেঘের বাড়ি☁
#পর্ব-১০
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
.
.
মনি মেঘের চিৎকার শুনে দৌড়ে এসে মেঘ কে মাটিতে পড়ে থাকতে দেখে শাশুড়ী ননদ আর তার স্বামীকে ডাকতে লাগলো৷ সবুজ দৌড়ে এসে মেঘ কে তুলতে মেঘ বলে,” ভাই আমার বাচ্চাটা…..” বলতে বলতে মেঘ জ্ঞান হারিয়ে ফেলে৷
সরকারি হাসপাতালের বারান্দায় দাড়িয়ে আছে সবুজ, মনি৷ ডাক্তার মেঘকে চেকয়াপ করছে৷ কিছুক্ষণ পর একটা ইনজেকশন পুশ করে দিয়ে স্যালাইন চালিয়ে দেয়৷ মেঘের এখনো জ্ঞান ফিরতে কিছুটা সময় লাগবে৷ ডাক্তার মেঘের পুরো চেকয়াপ করে বেরিয়ে আসে৷ সবুজ মনি দুজনে ডাক্তারকে দেখে বলে,” ডাক্তার ভাবি কেমন আছে? আর বাচ্চাটা ঠিক আছে তো?”
” বাচ্চা এবং মা দুজনে ভালো আছে৷ তবে আঘাতটা পেটে লাগায় বাচ্চাটির ঠিক ততোটা ক্ষতি হয়নি৷ বাকিটা আল্লাহর উপর নির্ভর করছে৷”
” ভাবিকে কি আজ বাড়িতে নিতে পারবো?”
” না আগামীকাল আপনারা পেশেন্ট কে নিয়ে যাবেন আজ পুরোটা দিন পেশেন্ট কে অবজার্ব করবো৷”
” ঠিক আছে ডাক্তার৷”
সবুজ বাড়িতে ফোন করে দিয়ে মেঘের শরীরিক অবস্থার কথা শুনে মেঘের শাশুড়ির মুখের হাসি চলে গেলো৷ ফোন রাখতে মিলা বলে উঠলো,” আম্মা এবারও আমাগো প্লান নষ্ট হয়ে গেলো৷”
” দুইটা প্লান নষ্ট হয়ছে তাতে কি হয়ছে এখন তো আসল কাহিনী শুরু হইবো৷”
“কি করবা?”
” ওই মাইয়া আগে বাড়িতে আসুক তারপর কমুনে৷”
২০.
অন্যদিকে মনি মেঘের মা’কে কল করে সবটা জানিয়ে দেয়৷ বাড়িতে সোহাগ বা আকাশ না থাকায় তিনি আসতে পারেন নি৷তবুও মেয়ের জন্য দোয়া করে যাচ্ছে৷
মেঘের জ্ঞান ফিরে আসার পর মেঘের সাথে দেখা করার অনুমতি পায় সবুজ মনি৷ সবুজ কয়েকটা কথা বলে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়৷ আর মনি মেঘের কাছে থেকে যায়৷
পরের দিন মেঘকে বাড়িতে নিয়ে আসতে জায়েদা এবং তার মেয়েরা খুব আন্তরিকতা দেখাচ্ছে৷ মেঘ কে যেহেতু একদম বেডরেস্ট দিয়েছে ডাক্তার তাই কিছুক্ষণ পর পর মেঘের শাশুড়ি বা তার ননদেরা বার বার মেঘের কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করছে মেঘের কিছু লাগবে কী না৷ মেঘ তার শাশুড়ি এবং ননদকে দেখে বেশ অবাক হয়৷ যারা তাকে পছন্দ করে না তারাই হুট করে এত ভালো কী করে হয়ে যেতে পারে? মেঘের কেন বিশ্বাস হয় না৷ তবুও সংসারে অশান্তি চায় না বিধায় কিছু বললো না৷ সবুজ গতকালই সোহেলকে ফোন করে সবটা জানায়৷ সোহেল ওখানে থেকেই যে মেঘকে নিয়ে খুব চিন্তায় আছে৷ মেঘের সাথে আর কথা হয়নি সোহেলের৷ মেঘ চাইলেও বলতে পারবে না কারণ ঘরে নেটওয়ার্ক পায় না৷
এদিকে মেঘের মা শেফালী বেগম ফোন করে তার ছেলেদের সব জানায়৷ সোহাগ জানা মাত্র ঢাকা থেকে বরিশাল আসার জন্য উদগ্রিব হয়ে ওঠে৷ কাজ যেহেতু সোহাগের শেষ হয়নি তাই শেফালী বেগম সোহাগকে তার কাজ শেষ করে আসতে বলে৷
চারদিন পর মেঘের হঠাৎ করে সেমাই খেতে ইচ্ছে করছে৷ রোজার মাস যেহেতু তাই সকালে আর মনিকে কিছু বললো না৷ বিকেলে রাতের খাবারের রান্না শুরু হওয়ার পূর্বে মনিকে ঘরে ডেকে পাঠায় মেঘ৷ মনি রুমে আসতে বলে,” ভাবি আপনার শরীর ঠিক আছে তো? কিছু লাগবো?”
মেঘ মনির হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে বলে,” তুমি খুব ভালো মনি আপা৷ একমাত্র তুমিই সেই যে কীনা আমার দিকে অনেক খেয়াল রেখেছো৷ সবুজ ভাইয়ের সাথে কথা হয়েছে আগামীকাল নাকী ছোটভাই আসবে আমাকে নিয়ে যেতে ৷ তার আগে আমি তোমার হাতে রান্না করা সেমাই খেতে চাই মনি আপা৷”
মেঘের কথা শুনে মনির খুব ভালো লাগলো৷ সে কখনোই মেঘের ক্ষতি চাইনি৷ মনি হাসি মুখে মেঘকে বলে উঠলো ,” বড় ভাবি আপনি বিশ্রাম নেন আমি আপনার জন্য সেমাই রাইন্ধা নিয়া আসতাছি৷”
মনি রুম থেকে বের হবার আগে দরজার পাশ দিয়া কেউ সরে গেল৷ যেটা মনি বা টের পেলেও বাইরে এসে কাউকে খুজে পেলো না৷
মনি ঝটপট রাতের রান্না সেরে ফেলে সেমাই চিনি দুধ মসলা যোগার করে রাখে৷ চুলোয় দুধ গরম হতে দিয়ে মনি মেঘের জন্য সরবত বানাতে যায়৷ পাঁচ থেকে সাত মিনিট পর ফিরে এসে দেখে তার শাশুড়ী আর দুই ননদ আখি ,মিলা কি সব বলছে আর হাসছে ৷ আর তার শাশুড়ি দুধে চিনি গরম মসলা দিয়ে জ্বাল দিচ্ছে৷
” আম্মা আপনি কেন চুলার কাছে আসছেন৷ আমি আছি তো আপনি যান ঘরে গিয়া বিশ্রাম নেন৷”
” কী কইতাছো ছোড বউ৷ তুমি একাই এত বড় খানদানী বংশের রান্ধন রানবা আর আমি তোমারে সাহায্য করমু না এইডা হইতে পারে না৷ তুমি অহন ঘরে যাও বড় বউয়ের লগে গল্প করো আমি এই দিক টা দেখতাছি৷ আর সাহায্য লাগলে আখি মিলা আছে তো ওরাই মোরে সাহায্য করবো৷”
” কিন্তু আম্মা বড় ভাবি তো আমার হাতে সেমাই খাইতে চাইছে৷”
” তো কি হয়ছে তোমার রান্ধন আর মোর রান্ধন কী আলাদা কও? ”
” না মানে৷”
” তাইলে আর কী যাও ঘরে গিয়া দেহো বউয়ের কী লাগবো না লাগবো৷”
মনি তার শাশুড়ির সাথে না পেরে ভেতরে চলে গেলো৷ মনি যেতেই আখি মিলা আর তাদের মা এক সাথে হেসে উঠলো৷
সন্ধ্যায় ইফতার করার পর মেঘকে সেমাই খেতে দিলে মেঘের তখন আর খেতে ইচ্ছে করছে না বলেই বলে,” মনি সেমাই ফ্রিজে রেখে দেও৷ আমি কাল খাবো আজ আর খেতে ইচ্ছে করছে না৷ ” মেঘের কথা শুনে মনি কিছু বলতে যাবে তার আগেই তাদের শাশুড়ি বলে,” কেন বউ এহন খাইতে কী সমস্যা?”
” আম্মা এখন আমার খেতে ইচ্ছে করছে না৷ জোর করে খেতে গেলে হয়তো বমি হয়ে যাবে তাই বলছি কাল খাবো৷”
মেঘের কথা শুনে তার শাশুড়ির মুখ অন্ধকার হয়ে যায়৷ মেঘ এটা বুঝতে পারছে না এই সামান্য কারণে তার শাশুড়ির মুখে অন্ধকার কেন নেমে আসবে?
২১.
পরের দিন মেঘ সকাল সকাল গোছল করে তৈরি হয়ে নেয় কারণ আজ তাকে ওবাড়ি থেকে নিতে আসবে৷ কিন্তু ভাবনার বিষয় হলো মনি ছাড়া সকাল থেকে আর কেউ তার সাথে কথা বলে নি এবং কি চোখে চোখ পড়লে এরিয়ে গেছে৷ মেঘ তারপরও কিছু না ভেবে সকালে হালকা নাস্তা করে নিয়ে বাড়ি ফোন করে৷
” হ্যালো আম্মা কেমন আছো?”
” সন্তান ভালো নেই শুনলে কোন মা কী ভালো থাকতে পারে মেঘ?”
” আম্মা আমি সুস্থ আছি কিন্তু ছোটভাই কেন এখনো আসলো না?”
” তোর ছোট ভাই ঢাকা থেকে দুপুর একটায় লঞ্চে করে বরিশাল পৌছাবে সেখান থেকে তোকে নিতে যাবে৷ হয়তো পৌছাতে পৌছাতে দুপুর তিনটে বাজবে৷”
মায়ের কথা শুনে মেঘের মন খারাপ হয়ে গেলো৷ এখন বাজে বারোটা তার মানে আর একঘন্টা পর তার ছোটভাই বরিশাল পৌছাবে আর তারপর সেখান থেকে এখানে তার শশুড় বাড়িতে আসবে৷
” ঠিক আছে আম্মা আমি ছোটভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছি৷ ভাই আসলে আমরা রওনা দিবো৷”
” ঠিক আছে মা ৷ এখন বাইরে না থেকে ঘরে গিয়ে একটু ঘুমিয়ে নে৷”
” আচ্ছা আম্মা৷”
মেঘ কল ডিসকানেক্ট করে ঘরে এসে দেখে তার শাশুড়ি ফ্রিজ থেকে সেমাই বের করে রাখছে৷ মেঘকে দেখে বলে,” বউ যাবা যখন তখন খাইয়া লও৷”
” জ্বী আম্মা৷” মেঘ কিছু না ভেবে সেমাইয়ের বাটিটা নিয়ে নিজের রুমে চলে গেলো৷ সেখানে বসে একটু একটু করে সেমাই খেতে লাগলো৷ প্রায় অর্ধেকটা সেমাই পেটে পড়ার পর মেঘের শরীর টা কেমন যেন জ্বলছে৷ গলা থেকে পেট পর্যন্ত আগুনের মত জ্বলছে৷ মেঘের বুঝতে আর বাকি নেই শাশুড়ির এত আদর করে সেমাই খাওয়ানোর কারণ!
মেঘ কোন রকম উঠে উঠানে গিয়ে গলায় আঙ্গুল দিয়ে বমি করার চেষ্টা করতে থাকে৷ বেশ কিছুক্ষণ ধরে বমি করে বেশ ক্লান্ত হয়ে পড়ে মেঘ৷ কিন্তু মেঘ ক্লান্তিটাকে দুর করে হাসপাতালে যাওয়ার জন্য উদ্ধত হয় কারণ এই মুহূর্তে তার বাচ্চাটাকে বাঁচাতে হবে৷
মেঘ মনিকে ঘর নিয়ে এগিয়ে আসতে দেখে মেঘ মনি বলে ডাক দিতে মনি মেঘকে দেখে খর ফেলে ছুটে আসে মেঘের কাছে৷
” বড় ভাবি কী হয়ছে? তোমারে এমন লাগতাছে কেন?”
” আমাকে এখুনি হাসপাতালে নিয়ে চলো৷ বিষ বিষ দিয়েছে আমায়৷”
মনি আতঁকে ওঠে মেঘের কথা শুনে৷ মনি দেরি না করে দ্রুত সবুজকে খুঁজতে যায়৷ কিন্তু কোথাও না পেয়ে চাচাতো দেবরকে দেখতে পেয়ে দ্রুত ওটোরিক্সা ডেকে আনে৷ মনি মেঘকে ধরে ওটোরিক্সায় বসিয়ে নিজে বসতে যাবে তৎক্ষনাৎ পেছন থেকে তার শাশুড়ি জায়েদা হাত টেনে ধরে বলে তোমার কোথাও যাওয়া চলবে না ছোড বউ৷” বলেই হ্যাচকা টান দিয়ে মনিকে টেনে নিয়ে যেতে দেখে মেঘ সাহস নিয়ে তার চাচাতো দেবর কে বলে,” ভাই আপনি গাড়ি চালান৷ দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে চলেন৷”
মেঘের কথা শুনে আর একমুহূর্ত দেরি না করে ওটোচালিয়ে শহরের দিকে রওনা হয়৷
পয়তাল্লিশ মিনিট পর হাসপাতালের সামনে ওটো থামতে মেঘ বলে “ভাই আমাকে একটু ভেতরে নিয়া চলেন৷ ডাক্তার ডাকেন৷”
দেবর আলী সময় নষ্ট না করে ওয়ার্ডবয় কে ডেকে স্কেচারে করে এমার্জেন্সি বিভাগে মেঘকে ভেতরে নিয়ে যায়৷
কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রিটমেন্ট শুরু হয়৷ একঘন্টা ধরে আলী ওটির সামনে দাড়িয়ে ছিলো৷ এক ঘন্টা পর ডাক্তার বের হয়ে বলে…….
.
.
.
#চলবে………..