মেঘের বাড়ি পর্ব-১১

0
468

#মেঘের বাড়ি☁
#পর্ব-১১
#লেখনীতে_ফারহানা_আক্তার_ছবি
.
.
কিছুক্ষণের মধ্যে ট্রিটমেন্ট শুরু হয়৷ একঘন্টা ধরে আলী ওটির সামনে দাড়িয়ে ছিলো৷ এক ঘন্টা পর ডাক্তার বের হয়ে বলে,” রোগী এখন বিপদ মুক্ত তবে বাচ্চা ঠিকবে কিনা বলা যাচ্ছে না৷ তবে আমরা চেষ্টা করছি বাচ্চাটার যেন কিছু না হয়৷”

” ডাক্তার ভাবি কে কেবিনে দেওয়া হবে কখন?”

” কিছুক্ষণ পর দেওয়া হবে৷ আপনি রিসেপশনে গিয়ে ফরম ফিলয়াপ করে আসুন৷”

আলী নিজে থেকে ফরম পূরণ করে কিছু টাকা জমা দিয়ে দেয়৷ তারপর সবুজকে ফোন করে সবটা জানায়৷ সবুজ সব শুনে দেরি না করে মেঘের ভাই সোহাগ কে সবটা জানায়৷ সোহাগ বরিশাল পৌছানো মাত্র হাসপাতালে চলে যায় দেরঘন্টার ভেতর৷

মেঘকে আলাদা কেবিনে শিফট করার পর সোহাগ আর আলী দেখা করতে যায়৷ তবে মেঘের জ্ঞান না ফেরায় মেঘকে দেখে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়৷ সোহাগ তার বাকি ভাইদের ফোন করে মেঘের বিষয়টা জানাতে তারা বরিশালের উদ্দেশ্য রওনা দেয়৷ আর এদিকে মেঘের মা আর ছোট বোন সব শুনে হাসপাতালে হাজির হয়৷ কান্নায় ভেঙে পড়ে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে৷ সোহাগ রাগ কন্ট্রোল করতে না পেরে দেয়ালে ঘুশি মারতে থাকে৷ আলী এসে সোহাগকে আটকিয়ে বলে,” ভাই মাথা গরম কইরেন না৷ আপনারা যদি এই সময় মাথা গরম করেন তাহলে পরিস্থিতি হাতের বাইরে চলে যাইবো৷”

” আমার বোনটার কী অবস্থা করেছে দেখেছেন তো? বাচ্চাটাকেও ছাড় দেয় নি৷”

” ভাই আমিও ওই বংশের পোলা৷ আমি তো তাদের চিনি ৷ নিজেদের স্বার্থের জন্য সব কিছু করতে পারে৷ তবে আপনাদের উচিত হয়নি ভাবিকে আবার ওই খানে পাঠানোর৷”

” আমার বোনটা একবার সুস্থ হোক তারপর ওদের আমি এমন অবস্থা করবো যে …”

আলী মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে বললো,” ভাইজান ওই সব পরে কইরেন আগে থানায় গিয়া ওগো নামে কেস করেন৷ ওদের বিশ্বাস নাই যহন তহন যা কিছু করতে পারে৷”

সোহাগ আলীর কথা শুনে রাজি হয়৷ আলীর যাওয়ার পূর্বে তার খরচাকৃত সকল টাকা পরিশোধ করে দেয় সোহাগ৷ অবশ্য আলী টাকাটা নিতে চাই নি তবুও মেঘ জোর করে টাকা টা পকেটে গুজে দেয়৷

২২.

” আম্মা এহন কী হইবো? ভাবি তো বমি কইরা পেট খালি কইরা ফেলছে৷ মনে হয় তো বাঁচবো৷”

” হোন মিলা ওই মাইয়া বাঁচলেও পেটের টা বাঁচবো না দেখিস৷ যে বিষ দিছি তারপরও যদি বাঁচে তহন দেখা যাইবো৷”

“আম্মা ভাবির পরিবার যদি কেস করে?” আখির কথা শুনে জায়েদা বলে,” হ তোরা ঠিক বলছিস ওরা যদি কেস করে তহন তো আর এক বিপদ৷ যা তোরা ভালো জামা কাপড় পইড়া আয় ৷ এহনি আমরা থানায় জামু৷”

” আমরা থানায় যামু ক্যান আম্মা?”

” গেলেই দেখবি তাড়াতাড়ি কর৷ আমি বোরকা পইড়া আসি৷”

পনেরো মিনিটের মধ্যে জায়েদা আর তার দুই মেয়ে জামাই সহ থানা চলে যায়৷

এদিকে মেঘের সন্ধ্যে নাগাত জ্ঞান ফিরে ৷ জ্ঞান ফিরে মা বোন ভাইকে দেখে স্বস্থির শ্বাস ফেলে বলে, আম্মা আমার বাবু ঠিক আছে তো? ওর কোন ক্ষতি হয়নি তো?”

শেফালী বেগম কাঁদতে কাঁদতে বলেন,” বাচ্চাটা এখনো বেঁচে আছে মা৷ তুই সুস্থ হলে বাচ্চাটা ঠিক থাকবে৷”

সোহাগ মেঘের মাথায় হাত রেখে বলে,” বোন শুরু থেকে আমাকে খুলে বল৷ বিষ তোকে কে দিয়েছিলো?”

মেঘ নির্ধিদ্বায় বলে উঠলো,” শাশুড়ী আর তার মেয়েরা ছোটভাই৷”

সোহাগ তার বন্ধুদের ফোন করে সবটা জানায়৷ তারা সবাই হাসপাতালে ছুটে আসে৷ সোহাগ ওদের নিয়ে থানায় যায় কেস করতে কিন্তু সেখানে গিয়ে অফিসার থেকে জানতে পারে৷ কিছুক্ষণ আগে জায়েদা বেগম এবং তার মেয়ে জামাই সহ এসে মেঘের নামের চুরির কেস ফাইল করে গেছে৷

সোহাগ সবটা শুনে বেশ অবাক হয়৷ রাগে তার শরীর যেন থর থর করে কাঁপছে৷

” অফিসার আমরা এসেছি ওদের পুরো পরিবারের নামে নারী নি*র্যা*ত*নের কেস ফাইল করতে৷”

” কিন্তু আপনার বোনের নামে তো অলরেডি কেস করে গেছেন তার শাশুড়ি৷”

” ওনারা মিথ্যা কেস করেছে তার প্রমান আপনি তদন্ত করলে পেয়ে যাবেন৷”

“ঠিক আছে আমাকে কিছু সময় দিন আমি তদন্ত করে দেখছি কে সত্যি বলছে আর কে মিথ্যে৷”

সোহাগের বাকি বন্ধুগণ তাদের এবং তার বাবার পরিচয় দিতে অফিসার বেশ নড়েচড়ে বসে বলে,” আপনারা চিন্তা করবেন না৷ আমি বিষয় টা দেখছি৷”

সোহাগের বন্ধু সোহাগ কে শান্ত করতে বলে,” দোস্ত টেনশন করিস না৷ আমরা তো আছি৷ তোর বোন মানে আমাদের বোন৷ ওর উপর কোন অন্যায় হতে দিবো না৷ এখন চল বোন কে দেখে আসি৷”

সোহাগ কে নিয়ে থানা থেকে বের হয়ে হাসপাতালে চলে যায়৷

রাতে সোহাগ, নুর আর তাদের মা মেঘের কাছে থেকে যায়৷ অন্যদিকে মেজভাই সেজভাই সকালে বরিশাল এসে পৌছাবে জেনে সোহাগ স্বস্থি পায়৷ মেঘকে ঘুমের ইনজেকশন দেওয়া হয়েছে বিধায় মেঘ ঘুমিয়ে পড়ে৷

দুপুর বারোটায় দুই ভাই এসে হাজির হয় হসপিটালে৷ তাদের স্ত্রীদের বাড়িতে রেখে এসে হাসপাতালে এসে উপস্থিত হয় ৷

” সোহাগ মেঘ কোথায় কেমন আছেন মেঘ?”

“এখন আপাদত বিপদ মুক্ত ভাইজান৷”

” ঠিক আছে ৷ সোহাগা সোহেল কে জানিয়েছিস?”

” না ভাই৷”

” এখুনি ফোন করো৷ আমি কথা বলতে চাই সোহেলের সাথে৷”

সোহাগ দুবার সোহেলের নাম্বারে ডায়াল করেও লাভ হয় না৷ সোহেল কে পায় না৷

অন্যদিকে জায়েদা এবং তা মেয়েরা আশে পাশে পাড়া প্রতিবেশিদের কাছে মেঘ কে ছোট করার জন্য নানা রকম মিথ্যা বানোয়াট কথা ছড়াতে থাকে৷ পুলিশ তদন্ত করতে নিজেই সিভিলে হাজির হয়৷ প্রথমে হাসপাতাল এবং ডাক্তারের সাথে কথা বলে তারপর মেঘের শশুড়বাড়ির আশে পাশে খোজ নিয়ে নানা রকম তথ্য পেয়ে তিনি থানায় চলে যায়৷ এবং জায়েদার জামাইকে ফোন করে থানায় যেতে বলে৷ জায়েদা তার জামাইয়ের কাছে দশ হাজার টাকা দিয়ে বলে,” জামাই পুলিশ না মানলেও টাকা টা তাকে চা নাস্তা করার কথা বলে দিবে৷”

“ঠিক আছে আম্মা৷”

জামাই থানায় গিয়ে অফিসারের সাথে ভাব করার নানা রকম চেষ্টা করেও লাভ হচ্ছে না দেখে বললো,” টাকা টা নিচ্ছেন না কেন?”

” আপনি জানেন আপনার ফেক কেস করার জন্য কী শাস্তি হতে পারে?” অফিসারের কথা শুনে আখির স্বামী আজগর খানিকটা নড়ে চড়ে বসে বলে,” স্যার কোন ভাবে কেস টা আমাদের পক্ষে নেওয়া যায় না?”

” যায় তবে আপনাদের বাঁচার একটা পথ বলছি৷”

” বাঁচার পথ মানে?”

” আপনারা জানেন কার সঙ্গে পাঙ্গা নিচ্ছেন? আমার উপর মহল থেকে চাপ আসছে৷ আপনারা নয় কেস তুলে নেন নাহলে ফেক কেস করার জন্য এরেস্ট হন৷”

অফিসারের কথা শুনে আজগর বেশ ঘাবড়ে গেলো৷ শাশুড়ির সাথে পরামর্শ না করেই কেস তুলে নিলো৷ আজগর থানা থেকে চলে যেতে সোহাগ সহ তার বন্ধুরা থানায় প্রবেশ করে৷ তাদের দেখে অফিসার বলে,” বসুন আপনারা আপনাদের সাথে আমার কথা ছিলো৷”

” অবশ্যই বলুন অফিসার৷” বসতে বসতে বললো সোহাগ৷

” জায়েদা বেগম এর জামাই কিছুক্ষণ আগে কেস টা তুলে নিয়েছে এখন আপনারা চাইলে কেস করতে পারেন৷ আমি কথা দিচ্ছি এদের কে আইনের সর্বোচ্চ শাস্তি পায় সেটা আমি দেখবো৷” সোহাগ অফিসারের আচরনে বেশ খুশি হয়৷ সোহাগ শিশু ও নারী নি*র্যা*ত*ন এবং এটেম্ট টু মা*র্ডা*র কেস করে৷ শুধু মাত্র সবুজ আর মনিকে বাদ দিয়ে৷ কারণ সকালে মেঘ সকলের কথা বলেছে শুধু মাত্র দেবর আর জা কে বাদ দিয়ে৷ মেঘের কথার উপর ভিত্তি করে ওদের দু’জন কে বাদ দিয়েছে৷

” ঠিক আছে৷ এখন আপনারা যেতে পারেন আর আমরা যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ওদের আটক করার ব্যবস্থা করছি৷”

সোহাগের এক বন্ধু অফিসার কে কিছু টাকা দিতে চাইলে তিনি বারণ করে বলে,” এটা আমার ডিউটি আমি এখানে আপনার থেকে কোন টাকা নিতে পারবো না৷ ”

” কিন্তু আমরা তো আপনার কাজে খুশি হয়ে দিচ্ছি তাহলে সমস্যা কোথায়?”

” আমি আমার ডিউটি পালন করছি৷ আর আপনাদের সাহায্য করা আমার কর্তব্য৷ ”

সোহাগ বা তার বন্ধুরা আর কিছু বললো না৷ তারা থানা থেকে বেরিয়ে গেলো৷

২৩.
মেঘ সোহেলকে কল করে কিছু বলার আগেই জায়েদা তার ছেলে কে কল করে মেঘের নামে জা তা বলে৷ মেঘ নাকী বাড়ির গহনা টাকা চুরি করে বাপের বাড়ি নিয়ে গেছে৷ তারা এই সব বলতে মেঘ এবং তার ভাইয়েরা তাদের সাথে খারাপ ব্যবহার করে৷ গা*লি*গা*লা*জ করে৷ সোহেলের তার মায়ের কথা গুলো কেন যেন বিশ্বাস হলো না৷ সোহেল কল কেটে তার ভাই সবুজ কে কল করে৷ তখনও সবুজের পাশে তার মা ছিলো তাই সবুজ কল রিসিভ করতে না চাইলেও মায়ের হুম*কিতে কল রিসিভ করতে হয়৷ জায়েদা পাশে দাড়িয়ে সবুজ কে শাশিয়ে বললো,” আমার কথার বাইরে যদি কোন কথা বলিস সবুজ তাইলে তোর বাপরে কইয়া সম্পত্তি দিয়া তোরে বাইর কইরা দিমু৷ ”

সবুজ তার মায়ের হুমকি ভয় পায় না তবে তার কথার বাইরে গেলে হয়তো তার স্ত্রী মনিকে এর শাস্তি পেতে হতে পারে যেমন টা গতকাল দিয়েছে৷ মেঘের সাথে যেতে চাওয়ায় গতকাল মনিকে জায়েদা বি*শ্রি ভাষায় গা*লি*গা*লা*জ করে গায়ে হাত তোলে যার ফলশ্রুতিতে মনি রেগে বাচ্চাদের নিয়ে বাপের বাড়ি চলে যায়৷

সবুজকে কথা বলতে না দেখে সোহেল কল কেটে দিয়ে মেঘের ভাই সোহাগ কে কল করে৷ সোহাগের কাছে সোহেলের নাম্বার না থাকায় প্রথমে চিনতে না পারলেও কল রিসিভ করার পর চিনতে পারে৷ সোহাগ রেগে কিছু বলতে যাবে তার পূর্বে মেঘ বলে ,” ছোট ভাই তুমি কিছু বলো না৷ আমাকে বলতে দেও৷ ফোন টা আমার কাছে দেও৷”

সোহাগ ফোনটা মেঘের হাতে দিয়ে কেবিন থেকে বেরিয়ে যায়৷

” হ্যালো সোহাগ ভাই৷ আমি সোহেল বলছি৷”

” সোহেল আমি মেঘ৷”

” মেঘ তুমি কোথায় আছো? আর আম্মা তোমার নামে এই সব কী বলছে? তুমি নাকী গহনা টাকা চুরি করে নিয়ে গেছো?”

মেঘ সোহেলের কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পড়লো৷

” কী বলছেন আমি চুরি করেছি?”

” তাই তো বললো আম্মা৷” মেঘ এবার বেশ রেগে বললো,” আমি সহ আমার সন্তান যে এখনো বেঁচে আছি আল্লাহর কাছে অশেষ শুকরিয়া জানাই৷”

” মানে কী বলতে চাইছো তুমি?”

মেঘ একে একে সব বলতে লাগলো৷ পুকুরে পড়ে যাওয়া৷ চৌকাটে পিচলে পড়া সর্ব শেষে সেমাই এর সাথে বিষ মিশিয়ে খাওয়ানোর কথা৷ সবটা শুনে সোহেল স্তম্ভিত হয়ে গেলো৷ তার বিশ্বাস হচ্ছে না তার মা বোন এমন কিছু করতে পারে৷

” মেঘ তোমার ভুল হচ্ছে আমার মা বোন এমন করতেই পারে না৷”

” সোহেল আমি পুকুরে পড়া আর চৌকাটে পড়ে যাওয়াটা এক্সিডেন্ট ধরে নিলাম কিন্তু বিষ খাওয়ানোর বিষয় টা? সবাই একি সেমাই খেলো কিছু হলো না শুধু আমারই হলো কেমন করে সোহেল?”

সোহেলের মুখে কোন জবাব নেই কি বলবে বুঝতে পারছে না৷ তখনি মেঘ বলে,” আমি যখন হাসপাতালে মৃত্যুর সাথে লড়ছি তখন তোমার আম্মা আমার নামে থানায় গিয়ে মিথ্যা চুরির মামলা করে৷”

” কি বলছো মেঘ?”

” জ্বী, অফিসার তদন্ত করে আসল সত্যি টা জানতে পেরে আপনার বোন জামাই আজগর কে ডেকে পাঠানো হয়৷ তিনি আজ কেসটা তুলে নেন কিন্তু সোহেল আমি আপনার পরিবার কাউকে ছাড়বো না৷ এর শেষ আমি দেখে নিবো৷ আপনার আম্মা বোন আর জামাইদের তৈরি থাকতে বলবেন৷”

” কী করবে মেঘ?”

” যখন করবো তখন তো জানতেই পারবেন৷” বলে কল কেটে দিলো মেঘ৷ মেঘের কথা শেষ হতে তার মা শেফালী বেগম এসে বলে,…..
.
.
.
#চলবে………..

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে