মেঘের আড়ালে ২ পর্ব-১৩ এবং শেষ পর্ব

0
1352

#মেঘের_আড়ালে ২(ফিরে আসা)

#লাস্ট পার্ট

#লেখিকা_ফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

দশ কেজির ওজনের লেহেঙ্গা পরে দাতঁ দ্বারা হাতের নখ কেটে অস্থির হয়ে পুরো ঘরময় জুড়ে পায়চারি করছি।কিছুক্ষন আগে আমাকে ইয়াদ এর কিছু কাজিনরা মিলে ইয়াদের ঘরে রেখে গেছে বাসর ঘর নামক ফুলের মাঝে।তখন থেকেই টেনশনে ভয়ে আমার পিত্ত, আত্তা, রুহু,কলিজা হাত, পা অতি বরফ এর মতো জমে বেহাল হয়ে যাচ্ছে মুহূর্তে । ঘড়িতে সুখনো ঢোক গিলে তাকিয়ে দেখি রাত একটা বিশ বাজছে, যতোই রাত গবির হচ্ছে তোতোই ভয় এসে আরো জোড়ো হচ্ছে মনে। অন্ধকার ডিম লাইটের আলোতে রুমে ভূতুড়ে মতো আওয়াজ করে উঠল আমার ফোনের ম্যাসেঞ্জার এর টোন।।।। আমি ভয়ে বুকে থু থু দিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে, কাপা কাপা হাতে ড্রেসিং টেবিল থেকে হাত বাড়িয়ে ফোন নিলাম।
.

.
ফোনের লক খুলতেই নাম ভেশে উঠল চোখের সামনে “আয়াত হোসেইন নুর্যাহাত” মেজাজ গেলো আমার তিব্বো মান চ্রটে। একহৃাস বিরক্ত নিয়ে মেসেজিং ঢুকেই আয়াত এর মেসেজ সিনন করলাম।

“দোস্ত কি করস,,,ঘুমিয়ে পরেছিস”।।।একটা কথা ছিলো খুব দরকার বলা তোকে।।

_নাহ্ ঘুমাইনি,কি বলবি বল।।

“দোস্ত বেস্টিদের বেস্টি হোক ক্রিভেটি মাইন্ড থেকে” নিউটন একখানা গোপন সুএ সন্ধান জানা ছিলো তোর থেকে 🤔।

_ তুই এতো রাতে আমাকে ব্যাঙ এর নিউটন এর সুএ জানার জন্য মেসেজ দিয়েছিস। জানিস আমি কতো টেনশনে ছিলাম।।।

__জানিতো তাই তো খোজ খবর নেওয়ার জন্য তোকে মেসেজ দিলাম। যতোহোক বেস্টিতমা বলে একটা কথা আছে।আচ্ছা দোস্ত আজকের দিনে তোর থেকে একটা সাইন্স জনার ছিলো।

_কি। আমি বিরক্তি নিয়ে টাইপিং করলাম।

__বাসর রাতে বিলাই মারে কেমনেরে,,, আর মারলে ও কথাটা কি সত্য!!

আয়াত এর এমন মেসেজ দেখে আমার মেজাজ গেলো তিব্বো পরিমান চ্রটে কতোটা বেয়াদ্দপ। আমি রেগে বোম হয়ে কিছু টাইপিং করতে যাবো তখনই পিছে দরজা খুলার আওয়াজ পেলাম। আমি কাপা হাতে এক ঢোক গিলে ফোন নিয়ে গুরে পিছু তাকাতেই ঘরের মৃদু ডিম লাইট আলোতে দেখি ইয়াদ।উনি ধীরো পায়ে আমার দিকে আসতে লাগলেন। সামনে এসেই বিরক্ত নিয়ে কপাল বাজ করে বলে উঠলেন,,,,,

“এই কি তুমি চেঞ্জড কেনো করনি এখনো”

আমি কিছু বলতে নিবো বিপরীতে উনি আমাকে মাঝ পথে ব্রেককষে দিলেন হাত দিয়ে,,,আবার বলে উঠলেন,,, যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।।

আমি ছোট করে এক নিশ্বাস নিয়ে হাতে থাকা ফোনটা পূনরায় ড্রেসিং টেবিলে উপরে রেখে, তার পর আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে গায়ে থাকা সব গহনাগাঁটি এক এক করে খুলে রাখতে লাগলাম। এখন মনে হচ্ছে শরীলটা মধ্যে ফাইনালি একটু জান এসেছে আবার। গহনা সব খুলে হাফ ছেড়ে। আলমারির সামনে হাটাঁ দিলাম, আলমারি সামনে থেকে আমার রাখা লাল লাগেজটা সোফার উপর তুলে, ভিতর থেকে একটা সাদা কালো তাঁতের শাড়ি হাতে নিলাম। ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে। পাক্কা আধা ঘন্টা পর ওয়াশরুম থেকে বের হলাম লং শাওয়ার নিয়ে, রুমে এসে চোখ বুলিয়ে আশেপাশে তাকিয়ে দেখি ইয়াদ রুমে কোথাও নেই, আমি হাতে থাকা তোয়ালে দিয়ে চুল গুলো মুছতে লাগলাম।হঠাৎ পিছু থেকে ইয়াদ বলে উঠল,,,,

“ওজু করেছে”

.
আমি পিছু তার দিকে তাকিয়ে দুই দিকে মাথা দুলালাম। যার অর্থ না।
.
উনি নিচের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে আমার দিকে পূনরায় আবার চেয়ে বলে উঠলেন,,ওজু করে এসে নুর নামাজ পরবো।
.
আমি হাতে থাকা তোয়ালেটা ড্রেসিং টেবিলের সামনে ছোট চেয়ারে রেখে, ওয়াশরুমে চলে গেলাম ওজু করতে। মিনিট পাচঁ পর ওজু করে এসে দেখি ইয়াদ মাথায় টুপি পরে দুইটো জানেমাজ বিছিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি লাগেজ থেকে নামাজের হিজাবটা খুঁজে পরে নিলাম। আর তার সাথে গিয়ে দাঁড়ালাম জানামাজে।
.
নামাজ শেষ হতেই ইয়াদ জানামাজ দুইটো বাজ করে নিজ জায়গায় রেখে দিলেন। আমার ঘুমে চোখ দুইটো ছোট হয়ে আসছে তাকিয়ে থাকতে আর পাচ্ছিনা। গত দুই দিন ধরে ঠিক করে ঘুম হয়নি ব্যাঙ এর বিয়ের প্রোগ্রমের জন্য।
আচ্ছা কি করবো এখন আমি, ঘুমিয়ে পরবো, হ্যাঁ তাই ভালো চুপ চাপ ঘুমিয়ে পরি। খাটের সামনে যেতেই ইয়াদ বলে উঠল।

“কফি খাবে নূর আমার সাথে”

আমি গুরে ইয়াদ এর দিকে তাকালাম, চোখের ঘুম গুলো নিমিষেই ছুটে পালাই পালাই করলো চোখ থেকে। মনে পরে গেলো ইয়াদ এর সেই দিনের দেওয়া মেসেজ এর কথা।

♣️♣️
বারান্দা নিচে ছোট করে একটা তোষক বিছানো তার মাঝ বরাবর একটা পিলো দেওয়া। বিছানার আশেপাশে কিছু মরিচা বাতি দিয়ে ডেকেরশন করা দেখতে খুব সুন্দর লাগছে। কিন্তু সব থেকে অদ্ভুত ব্যাপার হলো পুরো বারান্দা গ্রিলযুক্ত কোণায় কোণায় ক্যাকটাস লাগানো। ভূতরাও যে এখানে আসতে ভয় পাবে, আর আসার আগে এতো কাটা দেখে দুই বার যে মনে মনে ভাববে কোনো সন্দেহ নেই ।।।এই অদ্ভুতদর্শন সাইন্সটা আমার মাথায় ঢুকলো না। বারান্দা থাকে ফুলের রাজ্য আর এখানে কাটার রাজ্যসভা করে রেখেছে কেন।

.
কি দেখছো!!!
.
ফ্রিতে পাগল এর কারবার ক্রতি দেখছি। বিড়বিড় করে।।।
.
কিছু বললে?
.
কই নাতো।কি আর বলবে।।মেকি হাসি দিয়ে।।
.
উনি আমার পাশে এসে ঘা এর সাথে একদম ঘা ঘেঁষে বসলেন, আজ আমি আর কিছু বললাম না তাকে শুধু চুপ করে মাথা নিচু করে বসে আছি। উনার এতো কাছে আসায় মনের হাতুড়ি গুলো জোড়ে জোড়ে ডাক ঢোল বাজাতে শুরু করেছে ইতিমধ্যে উফফফ বাচা যাই না এগুলার জ্বালায় ।

সাথে নিমিষেই মনে পরে গেলো সেই কিছুদিন আগে কথা উনি আমার সামনে এসে সামান্য কথা বললেই আমার কাপাকাপি শুরু হয়ে টাইটাই ফিস হয়ে যেতো ভয়ে। কিন্তু আজ মনের মধ্যে একঝাক ভালো লাগা কাজ করছে হয়তো এটাকেই বলে তিন কবুল বলার পরিনতি । আমি নিঃশব্দে আশেপাশে তাকিয়ে মূহুর্তকে অনুভব করছি। উনি পাশে থাকা ছোট ফ্লাক্স থেকে এক মগে কফি ডেলে আমাকে হাত বারিয়ে দিলেন এক গাল হাসি দিয়ে,, আর এক মগে নিজের জন্য নিলেন কিছু।

আমি ছোট করে মনের সুখে কফি মগে চুমুক দিতেই মুখ আর মুখ রইলনা আমার নিমিষেই ভালা লাগা থেকে সেকেন্ডে টনেডোর গতিতে পরিবর্তন হয়ে করলা জুসে চিরতা রসকস যুক্ত হয়ে গেলো। আমি খাক্ক করে কাশতে কাশতে নাকে মুখে কফি উঠে গেলো ফেলে দিলাম ইয়াদ এর উপর কিছু।ইয়াদ বড় বড় চোখ করে আমার দিকে তাকিয়ে আছে । বুঝার চেষ্টা করছেন আমার দিকে তাকিয়ে আসলে হলোটা কি।।
.
দোক্কা আমি কাশতে কাশতে,,, ফুঁসতে ফুঁসতে রাগে দুক্ষে বলে উঠলাম।।।। কতো বড় বদ্দ লোক আপনি এই ছিলো আপনার মনে। আমার আগেই বুঝা উচিৎ ছিলো। আপনি যে আমার সাথে সব সুদেআসলে প্রতিশোধ নেওয়ার চিন্তায় আছেন।
.
কি বলছো তুমি!!!এসব।। বলি, মাথা কি ঠিক আছে তোমার ।
.
ঠিক ছিলো,, এখন ঠিক নেই।সব আপনার জন্য হইসে। এই কি খাওয়াসেন আমারে। ইয়াজ্ঞজ্ঞজ্ঞজ্ঞ থু থু থু

.
এই কি করছো তুমি! আমার ক্যাকটাস গাছে ফেলছো কেন।রেগে।।।
.
এখানে বউ মরছে তাহার তা চিন্তা নাই। সে পরে আসে তার কাটা নিয়ে।। এতো যেহেতু চিন্তা তাহলে কাটার সাথেই সংসার শুরু করতেন রাগে দাঁতে দাতঁ চেপে,,,,
আব্ববুউউউউউ এই তুমি কার হাতে হাত তুলে দিলা আমার,,, অহ সরি। আব্বুতে দেইনি বরং আপনি জোড় করে তুলে নিয়েছেন ভুলে গেয়েছি।
.
সামাম্য একটা কফি খেয়ে যে কেউ এমন করতে পারে তা আমার জানা ছিলো না🙄।।
.
এটা কফি ছিলো না কফির নামে বিষ ছিলো কোনটা!!! এই কারনেই বলি আপনি যখনই মুখ খুলেন তখনই এমন চিরতাযুক্তা কথা কেন খই ফুটে,টাংকিরে যে চিরতা থাকে তাই।।
.
ইইইউ,,,,,,আর কিছু বলা আগেই
ইয়াদ এর ফোনে ভো ভো করে উঠল,,, ইয়াদ বসা থেকে দাঁড়িয়ে পকেট থেকে ফোন নিয়ে কানে ধরলো ।নূর ভ্রু কুঁচকে ইয়াদ এর দিকে তাকিয়ে মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে এতো রাতে কিঠা বা কল দিলো তাকে🙄।অই পাশ থেকে কি বলছে বুঝা যাচ্ছে না কিন্ত অই পাশের বিপরীতে ইয়াদ যে শুধু আচ্ছা আচ্ছা বলে মুখের বন্য করে ফেলছে তা শুনছি ।।।
.
ইয়াদ কথা শেষ করে পকেটে ফোন রেখে বলে উঠল,, উঠো।।
.
কেনো!!
.
আগে উঠো তারপর বলছি।
.
নূর বিরক্তি নিয়ে অলসতা জাহাজ নিয়ে হেলেদুলে বসা থেকে উঠলো।।
.
চলো।।
.
কোথায়।
.
কথায় কথায় এতো প্রশ্ন কেন করো বলো তো।। ঠাকুমার ঝুড়িতে এতো গল্প থাকেনা যেতোটা তোমার ঝুড়িতে প্রশ্ন থাকে।
.
সহজ সরল হিসাব নিকাস তার একটাই কারন আপনার উপর আমার বিন্দু মাএরো আর বিশ্বাস নাই তাই।
.
কিহহহহ্
.
আজ্ঞে জ্বী।
.
বড্ডো কথা বলো তুমি,,, এখন চলো তো গেলেই সব প্রশ্ন ঝুলি বুঝতে পারবা।

“বলেই ইয়াদ নূর এর হাত শক্ত করে ধরে ছাদে নিয়ে আসলো।।।
.
এই আপনি আমাকে এই মাঝ রাতে ছাদে কেনো নিয়ে এসেছেন , বলি ভূতের ভয় টয় নেই মনে।
.
হুসসসসসসসস,,,বলে নূরকে গুরিয়ে ইয়াদ এর বুকে পিঠ ঠেকিয়ে নুরের কাঁধে ইয়াদ এর থুৎনি রাখলো।।।
.
নূর কাপা কাপা গলায় বলে উঠল,, রোমান্স করবেন ভালো কথা তা ছাদে কেন এখন যদি ভূত মশায় এসে রাগে আমার ঘাড়টা কটমট করে মটকিয়ে দিয়ে যায় তখন।
.
ইয়াদ নূর এর কথা শুনে নিঃশব্দে হেসে দিলো।।। হাতের ইশারা করলো সামনে তাকাতে।।
.
কিহ্
.
আমার দিকে না তাকায়ি সামনে তাকাও তাহলে বুঝবা।।
.
নূর বিরক্তি নিয়ে সামনে তাকাতে থ,,,,,

পুরো আকাশ জুড়ে চার দিকে ফানুস এর সমাহার।নূর হ্যাঁ করে তাকিয়ে আছে আকাশের দিকে।হঠাৎ সামনের চার তালা ভবন থেকে কেই জেনো ওদের এই খানে বড় বড় দুইটি লাইট ছুড়লো, নূরের এখন মনে চাচ্ছে ঠ্যাঠিয়ে কষে দুইটো চড় দিতে তাদের,,,নূর চোখ হাত দিয়ে বিরক্ত নিয়ে পিছে তাকাতে আর এক দফা থ হয়ে গেলো,,,,ছাদের দেওয়ালে বড় বড় অক্ষরে সেই আলোতে ভেসে উঠেছে “ভালোবাসি প্রয়সি অফুরন্ত ভালোবাসি তোমাকে”। নূরে চোখে পানি গুলো চিকচিক করছে।।।

সাদা এই #মেঘের_আড়ালে শুভ্র সেজে তুমি আসবে তুমি আসবে আমার হয়ে নতুন সাজে, নতুন ভোর নিয়ে, সময় যেন থেকে গেছে,চারদিকে স্তদ্ধ এই অপেক্ষার অাদৌ প্রহর কি শেষ নেই,,,,,
“ইয়াদ পিছু থেকে ক্লান্তি সুরে চিল্লিয়ে বলে উঠল ”

হুমায়ূন স্যার এর একটা উক্তি আছে জানেন তো,,সাবাই অপেক্ষা করে কিন্তু সেই ভালোবাসা প্রমান করতে পারে না।
ইয়াদের বিপরীতে নূর বলে উঠল,,

মানে!!

দেখে ছিলাম, লাগবেনা কারো ভালোবাসা।। প্রত্যেক মানুষই প্রেমে পরে, কেউ প্রকাশ করে,,, আবার কেউ অপেক্ষা করে,,

তা তুমি কি করছিলে শুনি।।। প্রশ্ন বিন্দুতে জিজ্ঞাস করলো।।

অপেক্ষা,,,,, এটাও এই সাইকোর জন্য।
.
তাহলে বলোনি কেনো।। অসহায় সুরে।
.
কারন আমি আপনার মতো অতো শত অসভ্য আর বেয়লাজ না। আর আগে আপনি ওতো বহিঃপ্রকাশ করেননি নিজের কথা তাহলে আমি কেন বলবো বলুন । ভ্রু কুঁচকে।।
.
তা আজ কেন বলছেন এই কথা গুলো ।।। চোখ ছোট করে পাকিয়ে।।
.
আজ নেই কোনো বাধা মোদের মাঝে তাই।। ইয়াদ এর কাধেঁ নিজের দুই হাত দিয়ে।

.
ইয়াদ নূরের কমোড় দুইহাত দিয়ে চাপ দিয়ে নিজের আরো কাছে এনে কানের সামনে গিয়ে ফিসফিস করে বললো,,,
.
অসভ্য, বেয়লাজ,, অভদ্র, সাইকো যাই হয়ে থাকি না কেনো সবই তোমার জন্য হয়েছি। কপাল এর সাথে কপাল ঠেকিয়ে 💓💓💓

♣️

৩ বছর পর,,

অপারেশন থিয়েটারের সামনে এদিক সেদিক পায়চারি করছে ইয়াদ। ভেতর থেকে নূরের আর্তনাদ স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে ইয়াদ কিন্তু কিছুতেই ভিতরে যেতে পারছে না। দিপ্ত,ইরফান এবং অনিক শান্তনা দিচ্ছে ইয়াদকে কিন্তু ইয়াদ কিছুতেই শান্ত হচ্ছে না বারবার ভেতরে যাওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। ইশারা নিজের কোলে থাকা এক বছরের ছেলের কান্না থামাচ্ছে আর মাকে শান্তনা দিচ্ছে। আয়াত সাত মাসের ভারি পেট নিয়ে চুপচাপ এক কোণায় দাঁড়িয়ে আছে, দিপ্ত চোখের ইশারা দিয়ে বার বার বলছে বসতে কিন্তু ও কিছুতেই বসতে চাইছেনা।জ্বী হ্যাঁ দিপ্ত আর আয়াত এর বিয়ে হয়েছে দুই বছর হলো আর সাত মাস আগে তারা জানতে পেরেছে তাদের কোল ও আলো করে কেউ একজন আসবে । এই মূহুর্তে সবাই চিন্তিত নূরকে নিয়ে ।

.

.

হঠাৎ থিয়েটার এর ভিতর থেকে নূর চিল্লিয়ে বলে উঠে,,,, ইয়াদ এর বাচ্চা তুই কই শালা খচ্চোর আমি তোরে ছাড়মুনা বলে দিলাম,,, এই বলে জোড়ে চিৎকার করে , কিছুক্ষন পর নূরের সারা টু শব্দ বন্ধ হয়ে যায়। এতে ইয়াদ ভয় পেয়ে গেলো এবং অপারেশন থিয়েটার এর দরজা সামনে পাগলের মতো এইইই নূর নূর বলে চিৎকার করে ধাক্কাতে লাগলো আর কান্না করতে লাগলো, কেউ অকে থামাতে পারছে না। এমন সময় বাহির থেকে থিয়েটারের ভিতর থেকে ভেশে আসা বাচ্চার কান্না শুনতে পেলো ইয়াদ। আসিফ সাহেব আর রফিক সাহেব দুই বন্ধু একে উপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দে চিল্লিয়ে বলে উঠে আলহামদুলিল্লাহ । থিয়েটার এর দরজা খুলে হাসি খুশী মুখে ডাক্তার এসে বললেন,”কংগ্রেস আপনার মেয়ে হয়েছে।”
.

.
ডাক্তারের কথা শুনে সবাই খুশীতে হেসে দিলো শুধু ইয়াদ বাদে। ইয়াদ উত্তেজিত কন্ঠে বলে উঠে,”আমার ওয়াইফ নূর কেমন আছে?” ও ঠিক আছে তো কিছু হইনি তো অর!!!
.

.
ডাক্তার – হুম বেশ ভালো আছে ভয় এর কিছু নেই। আসুন দেখে যান মা ও মেয়েকে আপনার ওয়াইফ আপনাকে ভিতরে ডাকছেন।
.

.
ডাক্তারের কথাটা বলতে দেরি কিন্তু ইয়াদের ঝড়ের গতিতে ভেতরে যেতে দেরি নেই।
.

.
ইয়াদ থিয়েটারে এসে দেখে এক নার্স নূরের পাশে দাঁড়িয়ে বেবি দেখাচ্ছে আর নূর চোখের পানি ঝেড়ে বাবুর হাত ধরে আছে। বাবু হাত মুখে কপালের সামনে এনে ছড়া ছুটি করে কেঁদেই যাচ্ছে,একবার আধো আধো ছোট নতুন হাত মুঠো করছে তো একবার খুলছে । নূর নার্স এর দিকে তাকাতেই নার্স মুচকি হেসে নূরের কোলে তার ছোট্ট রাজকন্যা টাকে নূরের হাতে দিলো। এখনো কেঁদেই যাচ্ছে বাবু হাত পা ছড়িয়ে। ইয়াদ দরজা সামনে দাঁড়িয়ে এইমূহুর্তকে তিপ্তি নিয়ে অনুভব করছে আর দেখছে। সুখের মুহূর্তেগুলো আসলেই এক অন্যরকম ভালো লাগা অনুভুতি হয়। এক পা এক পা করে নূরের দিকে যেতে থাকে ইয়াদ। নূর বাবুর ছোট ডান হাতটা নিজের হাতে নিয়ে ছোট করে চুম্বন করলো। নূর চোখ তুলে সামনে তাকাতেই দেখলো ইয়াদ দাঁড়িয়ে আছে আর তার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। তার চোখগুলো বলে দিচ্ছে নূরকে সে যে কতো কান্না করছে বাহিরে । এতে নূর নিঃশব্দে হাসলো। ইয়াদ চুপচাপ নূরের পাশে বসে বাবুর দিকে শান্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নূর ইশারা করলো বাবুকে নিতে কিন্তু সে ঠোটঁ কামড়িয়ে মাথা দুলিয়ে না করলো। এতে নূরের রাগ হলো।।। ক্ষণিক সময় বাদে বাবুর মাথায় হাত বুলালো ইয়াদ এবং তার কপালে গম্ভীর চুম্বন করে কান্না করে দিলো। তারপর নূরের কপালে কপাল রেখে বলে উঠল,,,,

“থ্যাংক ইউউ নূর আমাকে ইয়ান না দিয়ে ইনঅায়াত দেওয়ার জন্য। আজ জানোনা তুমি আমাকে ঠিক কতোটা খুশি দিয়েছো। তুমি আমাকে একটা রাজকন্যা উপহার দিয়েছো।” যাহ্ অবিকল তোমার মতো হয়েছে দেখতে।

.

.
নূর ইয়াদের চোখের পানি গুলো ক্যানালযুক্ত হাতে মুছে দিলো। ইয়াদের হাতে উপর নিজের হাত রেখে বলে উঠল তার বিপরীতে,,,
.

.
“উহু আমি কিছু করিনি সবটাই আল্লাহর রহমতে হয়েছে। আপনি জানেন কখন আল্লাহ্ প্রথম সন্তান হিসেবে কন্যাসন্তান দেন আমাদের। যখন আল্লাহ তালায় আমাদের উপর খুব খুব খুব করে বেশী খুশীহোন তখন আশিবাদ সরুপ আমাদের কোলে প্রথন সন্তান হিসেবে কন্যা সন্তান দেন। আর কে জানতো মশায় আমার মতো ভোলা ভালা একটা নিরহ বাচ্চা মেয়ের কপালে এমন সাইকো ছেলে লিখা ছিলো। যে কথায় কথায় খালি আমাকে ধমকাই সবই কিস্মাত বুঝলেন তাই তো গুরে ফিরে এসে এক করে দিলেন আমাদের । অতঃপর এই সাইকো ইয়াদ থেকে নূর মিশে আমাদের কোল আলো করে আজ কন্যাসন্তান ইনঅায়াত এসেছে। বুঝলে আমার ইনঅায়াতের বাবাই?”

.

.
ইয়াদ নিমিষেই হেসে দেয় নূরের কথা শুনে। বেচে থাকুক তাদের টকঝাল ভালোবাসা এভাবে চলুক সব সময় এবং ভালো থাকুক তাদের ছোট পরিবার।❤️

#মেঘের_আড়ালে(ফিরে আসা)
সমাপ্ত🖤

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে