মেঘের আড়ালে ২ পর্ব-১২

0
1130

#মেঘের_আড়ালে২(ফিরে আসা)
#পর্ব_১২
#লেখিকা_ফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

সকালে রঙ খেলার শেষে ঘন্টাখানিকের জন্য সবায় ছোটখাটো রেস্ট নিয়ে নিলো। দুপুর থেকেই আবার বাসায় জোর কদমে আয়োজন চলছে।সবাই হাসি মজায় ব্যস্ততায় মও হয়ে আছে। আজ বাসার বড় থেকে ছোট সবায় একদমে কাজে ব্যস্ত হয়ে পরেছে সকাল থেকেই। কেউ জেনো আজ এতো কাজের মাঝে ও কিছুতেই ক্লান্ত হতে চাচ্ছে না।
.

.

.
তিনটার দিকে আবারো গান বাজনা শুরু করা হয়েছে । নূর ইয়াদ দেওয়া সেই আড়ং এর লেমন মধ্যে কালো সুতার চারুকাজের বাঙালি স্টাইলে শাড়ি পরেছে। মাথায় মাঝ বরাবর সিঁথি করে একটা কাচা কাঠগোলাপের ফুল এর টিকলি, চোখে গাড়ো করে কাজল।কানে কাঠ গোলাপ ও বেলী ফুলের ছোট দুল, চুল গুলো কাঁধে নিচে ছড়ানো যাহ্ বাতাসে কিছুক্ষন পর পর দোল খেলছে , দুই হাতে বেলি ফুল আর লাল গোলাপ এর সংমিলিত চুরি পরেছে,চেহারাতে মেকাপের তেমন বিশেষ কোনো ছাপ নেই, শুধু ঠোটে লাল টুকটুক ক্লারে লিপিস্টিক দেওয়া। এই সামান্য হাল্কা সাজে নূরকে দেখতে আজ ভারি মিষ্টি লাগছে ।

ইশারা গাড়ো সবুজ মধ্যে কালো পাথরের কাজ করা ভারিযুক্ত লেহেঙ্গা পরেছে। কানে কাচা বেলী ও গোলাপ সংমিলিত ফুলের দুল , চুল গুলো এক সাইডে এনে এলোমেলো ভাবে বেনী করা। এক হাতে কালো পাথরের ঘড়ি,আর এক হাতে কাচা ফুলের চুড়ি। চেহারাতে হাল্কা মেকাপ এর সাজ। আজ অকে দেখতে কোনো ওরুপ্সী থেকে কম লাগছে না।

হঠাৎ কথা নেই বলা নেই বিন ভুলায় মেহেমান কি তারাফ বাহিরে অঝোড় দ্বারা বৃষ্টি হচ্ছে, তাই আপাতত বাসায় ভিতরেই হোলরুমের সোফা গুলো সব এক সাইডে রেখে, ছোটখাটো ভাবে মেহেদী প্রোগ্রাম এরেঞ্জমেন্ট করা হয়েছে। নূরকে মালিহা ও আয়াত মিলে মেহদী পরিয়ে দিচ্ছে আর ইশারাকে তার দুই ফ্রেন্ড মিলে পরিয়ে দিচ্ছে। নূর ও ইশারা ৩২ বাতি দিয়ে সামনে থাকা সিমিতো আকারের ছোটখাটো বিনোদন দেখছে আর খিলখিল করে চোখ বুঝে হাসছে, এতো বারি বিরক্ত হচ্ছে যারা অদের দুইজনকে মেহেদী পরিয়ে দিচ্ছে,দুই বোনকে চোখ রাঙিয়ে কিছুতেই শাসিয়ে স্থির করতে পারছেনা বেচারিরা । অনিক , ফারদিন, দিপ্ত, তাসফি, বাকী কাজিনরা আর ইশারার কিছু ফ্রেন্ডরা মিলে, তুমি ছুঁয়ে দিলে হাত আমার কি জেনো হয়ে যায় গানে উড়াধুরা ভাবে ডান্স করছে।
.

.

পাক্কা দুই ঘন্টা পর মেহেদী পর্ব সম্পূর্ণ শেষ হতেই আম্মু খালামনি চ্রট করে আমাকে আপিকে উপরে পাঠিয়ে দিলো রুমে রেস্ট নেওয়ার জন্য,সন্ধায় পর আবার হলুদের প্রোগ্রাম আছে তাই। রুমে এসে আমি গাছ ফেন ছেড়ে দিলাম, আর দুই হাত তুলে সামনে দাঁড়িয়ে আছি একঝাক বিরক্তি নিয়ে মেহেদী শুখানোর জন্য। আপি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইফরান ভাইয়ার সাথে ভিডিও কলে তার প্রেম কথোপকথন চলছে । আয়াত, মালিহা খাটে বসে বসে আজকের তুলা ফোটসেকশন গুলো এফবিতে পোস্ট করা শুরু করে দিয়েছে রিতিমত । আমি কিছুহ্মন কপাল কুঁচকে ওদের কারবার কৃতি দেখে বিরক্তি নিয়ে চলে গেলাম ওয়াশরুমে ফ্রেশ হতে আর হাত ধুতে, আমার একটাই সমস্যা আমি মেহেদী দিলে পানি দিয়ে ধুয়ে ফেলি, পুরোটা হাতে নিয়ে গুরে গুরে শুখানোর মতো এতো ধর্য্য শক্তি কোনো কালেই ছিলো না আমার। আজ ও তা হলো অতিক্রম কিছু আলাদা হলো না আমার সাথে।

ফ্রেশ হয়ে বের হতে না হতেই মাথা দেড় কিলোকা বাজ পরলো,,,, সামনে তাকিয়ে দেখি পার্লারের মেয়েরা ইতিমধ্যে এসে হাজির আমার আর আপির জন্য। অলস ভঙিতে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি মাএরো ছয়টা বাজে।

_ মরি যাই মরি যাই(অবাক হয়ে)।।। আপনারা আজকে কেন এসেছেন!!!

_বেকুব এর মতো কথা কেন বলছিস, ।।। উনারা আসবেন নাতো কে আসবেন।। আমাদের সাজাবে বলেই তো এসেছে । ইশারা।।

__বলি এখনই কি আমাদের সাজাঁবেন একটু হিসহুসসস করুন না আফারা আমার সাথে(করুন সুরে)। কালকে সাজালে টাজালে হয় না।বলি কি শুনেন কালতো তো সেই আমাকে সাজাবেনই, তাই আজকে এতো এক্সটা কষ্ট করা লাগবে না আপনাদের ।। কাঁদোকাঁদো হয়ে বলল নূর।।।

_নাহ্ হয়না, কোনো হিসহুস না।।।বিয়ের কণেকে সাজানো কি সেই চারটি খানি মুখের কথা(বিরক্তি হয়ে)।।। এখনই তোকে সাজাবে তারা, বেশী পকপক করলে ডাইরেক্ট আন্টিকে ডাক দিবো বলে দিলাম নূর(কাঠ কাঠ গলায় বিরক্তি সুরে বলে উঠল) ।।।আয়াত।।।

_লো ঠ্যালা,,,, আমি আর বিয়েই করমু না কোনোদিন জিন্দেগীতে বাইচ্ছা থাকলে।
বিয়ে করলে যে এতো প্যারা নিতে হয় কে জানতো।এখন আমাকে দেড় ইঞ্চি আটা সুন্দরী হয়ে বসে থাকতে হবে অই উগন্ডার বদ্দ ফাজিল লোক এর জন্য।।।

” রুমে উপস্থিতি থাকা সবায় নূরের কথা বলা ভঙি রিয়েকশন দেখে হেসে দিলো ”

__বলি বইন, বাই এনি চান্স চারটে বিয়ে করা যে ফরজ, তুই কি ভুলে সেই হাদিস পালন করার চিন্তায় আছিস(ভ্রু নাচিয়ে) । আমার ভাসুর মশায় কি এই কথাটা জানে। তার বউ একবার বিয়ে হয়ে জাওয়ার শর্তে ও আবার পূনরায় বিয়ে করার পরিকল্পনায় আছে। ভুলে ও এই কথা মাথায় আনিস না,এটা আমাদের জন্য না ছেলেদের জন্য বরাদ্দ ।।। রোল পরা হাসি দিয়ে।। ইশারা।
__আপিইইইইইইই।।।

রাত আট টায় দিকে আমার সাজ কমপ্লিট হলো প্রায় ২ ঘন্টার প্রচেষ্টাই। এতো ভারী লেহেঙ্গা, গয়না, হেয়ার স্টাইল নিয়ে আমার নিঃশ্বাস ফেলতেই এখন ভার ভার লাগছে,লড়তে ও পারাচ্ছি ঠিক করে।।

ইশারা আর নূর তামিল স্টাইলে কাচা হলুদ আর সবুজ রঙ মিশিত ভারি শাড়ি পরে বসে আছে, সাথে আট্রিফিশিয়াল ফুলের গহনা পরানো।আজ দুই বোনকে দেখতে বেশ মিষ্টি লাগছে , দুইজনকে পুরো টুইনি টুইনি লাগছে সেইম সাজে, ওদের থেকে চোখ সরানো যেমন দায়।

বাব্বাহ এই লম্বা জামাই এর জন্য আমার মতো বাটুকে কতো বড় হিল ধরিয়ে দিলো । অবশ্য আমি অতোও বাটু না।।। কিন্তু এখন তো হাটঁতে হিমসিম খেতে হচ্ছে । কি আর করার অই বেটা সাইকো ৬ ফুট ২ ইঞ্চির জল্লাদ এর জন্য কষ্ট হলেও হাঁটতে তো হবেই। আজ থেকেই এমন হিল পরে হাটাঁ প্রেক্টিস শুরু কর দেয় নূর,কাল আর কষ্ট হবে না তাহলে।।।
.
.
স্ট্রজে আমাকে আর আপিকে বসিয়ে দিলো আমার গুনোধর ভাইরা আর ফ্রেন্ডারা মিলে। একে একে সব রিলেটিভ এসে এসে লে হামলা ফোটসেকশন করে যাচ্ছে । তার সাথে তো ফোটোগ্রাফার মশায় ফ্রি আছে এই স্টাইলে অই স্টাইলে দাঁড়িয়ে বসিয়ে পিক তুলছে। বলি বেটা কি ক্লান্ত হয়না। আমি তো ইতিমধ্যে তার বসানো দাঁড়ানো স্টাইলে মুভ অন করতে করতে হাপিয়ে যাচ্ছি কখন জানি এতো মুভমেন্ট এর জ্বালায় আমার ঘাড়টা তেড়া হয়ে যায় 🥴🥴। এর মধ্যে আয়াত হাসিখুশি ভাবে স্ট্রজে উঠে আমার সামনে এসে দাঁড়ালো অর এতো অকারনে হাসি দেখে আমার পিত্ত আত্তা রুহু জ্বলে উঠল , যখনই ও আমার সামনে এসে এমন চিরল দাঁতের ক্লোজ আপ এর হাসি দিয়েছে হিহি করে তখনই আমাকে বেশ বড়সড় বাশ দিয়েছে এই ছেমড়ি।

“কি চাই”!! এখনে।।।চোখ ছোট করে বলে উঠলাম।
.

কিছুনা,
.

তাহলে, কোন সুখে এতো পুয়া মাছের মতো হ্যাংলা হয়ে দাতঁ দেখাচ্ছিস ।। তোর দাতঁ যে পুয়া মাছের মতো অতি অতি অতি মাএরায় রিক্ত সুন্দর সবায়কে তা বুঝাচ্ছিস।।।
.

দোস্ত, তুই আমারে এমনে সবার সামনে বলতে পারলি। অসহায় হয়ে।।
.

তুই কানা হইলি কবে আয়াত, এখানে সবায় আসলো কথায় থেকে,,,,🙄
.

নেয়।
.
কি নিবো।
.

ধোরতো।।।

.
আজিব তো।। কি হইছে তোর। এমন করছিস কেন।

.
তোর জামাইকে,
.
কথার মাঝে জামাই আসলো কোথা থেকে।।

আয়ায় বিরক্তি নিয়ে মুখের সামনে ফোন তুলে তাকাতে ইশারা করলো।

” আয়াত এর হাতে ফোনের স্কিনে দিকে তাকিয়ে দেখি ইয়াদ ভিডিও কলে, সাদা কালো, ইউনিফর্মে গাড়ীর সীটে হেলাল দিয়ে আছে,চোখ দুইটো তার অসম্ভব লাল, মুখে তার ক্লান্তির ধকলের ছাপ বুঝা যাচ্ছে তাকে দেখে, কিন্তু মুখে তার সব সময় এর মতো সেই ঘায়েল করার মাতাল করা হাসি দিতে আমাকে ভুলছেন না। এতো ক্লান্তির মাঝেও উনি উনার মাতাল করা হাসি থেকে বিরতিহীন থাকেন না। কিন্তু আজকের দিনে ও উনি ডিউটিতে গেছেন দেখেই রাগে আমার আকাশের মেঘ গুলো রাগে গর্জন করে উঠল,,,, আমি রাগে ফুসস করে অভিমানী সুরে বলে উঠলাম,,,
_এই আপনি আজকের দিনে ও অফিসে গেছেন।আজকে না গেলে কি মহাভারত আপনার অশুদ্ধ হয়ে যেতো বলুন,,,,চুপ কেন।।। রেগে।।।

“উনি আমার বিপরীতে শুধু হাসলেন” আর মাথা নাড়িয়ে ছোট করে উঁহু বলে উঠল

চলবে,,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে