#মেঘের_আড়ালে২(ফিরে আসা)
#পর্ব_১১
#লেখিকা_ফাতেমা_জোহরা_নাভিলা
সন্ধায় থেকে বাড়ির পরিবেশ বিয়ের বাড়ি গন্ধে চারদিকে মৌঁমৌঁ গমগম আমেজে হট্রগোল বেধে আছে কিছু নিকটজন আত্নীয়-স্বজনের ভিরের মাঝে। বাচ্চাঁরা নিজেদের মতো চারপাশে আনন্দে ছুটা ছুটি করছে। হোলরুমে নিচে উপরে চেয়ারে সোফায় যে যেখানে পেরেছে বসে সবায় একজোট হয়ে হাসাহাসিতে গল্পে মেতে এক হয়ে আছে। আম্মু খালামনিরা আপাতত রান্নাঘরে গরম গরম সবজি পাকোড়া আর চা করছেন,আমি আপি অ্যাসিস্টান্স ডিউটি পেয়েছি আজ তাদের থেকে রান্নাঘর থেকে গরম গরম পাকোড়া প্লেট গুলো হোলরুমে সার্ভিসিং দেওয়ার।
.
.
আমার বেচারা তিন গুনোধর ভাইদের করুন নাজেহাল অব্যস্থা কাজ করতে করতে এক একটার টাইটাই ফিসস, দম ছাড়ার মতো ও ঠিক করে সময় পাচ্ছে না তারা। দুইদিন ধরে ডেকেরশন এই কাজ অই কাজ করেই চলছে কাজের আর শেষ নেই তাদের। কাল হলুদ, মেহেদী প্রোগ্রাম দুইটা একসাথে হবে তাই কাজের চাপ ও বেশী আপাতত তাদের উপর। সন্ধায় থেকে দিপ্ত, অনিক ভাইয়া বাহিরে লাইটিং এর কাজ গুলো দেখছে, ফারদিন স্ট্রজের জন্য ফুল অর্ডার করতে গিয়েছে সেই বিকালে । আব্বু, খালু, ফুপারা বাগানে মেন্ডেইল এর কাজ দেখছেন।এতো কম সময় মধ্যে হাতে সামনে তিন দিন এর জন্য ভালো কোনো কমিটি সেন্টার খুঁজে পাওয়া যায়নি, একটা পেয়েছে খুব কষ্টে তাও একদিনের জন্য। কমিটি সেন্টার বুকিং করতে হলে কমসেকম এক মাস বা পনেরো দিন আগে বুক করতে হয়, সে জায়গায় বিয়ে প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার তিনদিন আগে তো মুখের কথায় তো আর পাওয়া যাবে না। আব্বুর চেনা জানা এক কমিটি সেন্টার মালিক আব্বুর বন্ধু ছিলো তার থেকেই একদিনের জন্য আপাতত মেনেজ করা হয়েছে খুব কষ্টে বিয়ের দিনের জন্য।
.
.
রাত এগারোটায় সবায় নিচে একসাথে ঢালাই বিছানাতে বসে গরম গরম ভাত, আলুর ভর্তা, ডাল দিয়ে রাতের খাবার খাচ্ছি। এতো মানুষ এর জন্য তো কম সময় মধ্যে শত কাজের চাপে আলাদা কিছু করা অাদৌ সম্ভব না। তাই রাতের মেনুতে শর্টকাট খাবার রাখা হয়েছে,তাতেই আমরা মহা খুশি সবায়, আলুর ভর্তা আর ডাল যেখানে থাকে আর লাগেনা কিছু সেখানে। সবার চেহাতে নিমিষেই সারাদিন এর কাজের ধকল ক্লান্তির ছাপ ফুটে উঠেছে। রাতের খাবার খেয়ে যে যেখানে পারছে সেখানেই ছরিয়ে ছিটিয়ে শুয়ে পরছে। সব ছেলেদের জন্য ছাদে বরাদ্দ ঢালাই বিছানা করা হয়েছে।
রুমে এসে দেখি আমার খাট পুরো বুকিং আন্ডাকান্ডা পিচ্ছি বাহিনী দিয়ে।নিচে পাতলা একটা চাদর বিছয়ে তার মধ্যে আপি আর মালিহা শুয়ে আছে । মালিহা আপাতত ঘুমের সমুদ্র তোল দেশে গিয়ে হাবুডুবু খাচ্ছে, আর আপি তার পাশে ফোনে স্কিনে তাকিয়ে মিটমিট করে হেসে প্রেম আলাপে হাবুডুবু খাচ্ছে।আমি বুঝিনা বাপু এরা সারাদিন এতো কথা বলে কেমনে ভাই হাউউউ🙄 আর এতো এতো কথার টাংকি আসে কোথা থেকে😒,, বলি তোমাদের কি কথার ঝুলির টাংকি কি শেষ হয় না আর মুখ কি ব্যাথা ট্যাথা করেনা। এখানে আমার জামাইরে কেউ দেখো, জোড়াজুড়িতে বিয়ে করে উদ্ধার করে ফেলছে আমাকে মহাশয় । সারাদিনে একটা ফোনতো দূরে থাক,,,, একটা ভুলে টুলে বাই এনি চান্স মিসডকল ও দেই না ঠিক করে, বেয়াদ্দপ বজ্জাত ছেমড়া।এই তাহার সাইকো গিরি অতিরিক্ত চাওয়া, উত্তলিয়ে পরা বল্কানো বরাদ্দ প্রেম ছিলো আমার জন্য, যা বল্কিয়ে শেষ। শালা খচ্চোর এই ছিলো এতোদিন জমিয়ে রাখা প্রেম তোর মনে,, বিয়ে করেই টাইটাই ফুসসসসস বজ্জাত হোলা। কতো শক ছিলো আমার এই ছোট মনে,,,,, ভার্সিটি লাইফে গিয়ে সিনিয়র ভাই এর সাথে চুটিয়ে হাতে হাত ধরে একটা প্রেম স্রেম করমু। তার জন্য এতোদিন ধরে ২৯টা প্রোপজাল ও রিজেক্ট করসি সেই চারটি খানি কথা। সরুপ ফলাফল হলোটা কি কচুঁউউউউ, বিয়ের আগে যে একটু জামাইর সাথে চুটিয়ে প্রেম করমু তাও কপালে সৌভাগো আর দেখা মিললো না আমার😭।।।নূররেয়য়য় এই জীবনে তোর কপালে আর প্রেম লিখা নাই। থাক হুদ্দাই কষ্ট করে আর বুক হাড্ডিয়া সেন্টি হইস না, এখন ঘুমায়😪।।।।
.
.
বাসার উঠান আজ রিতিমত নানাভাবে নানা রঙে চারদিকে নতুন সাজে নিজেকে সাজিয়ে উঠেছে। দরজার সামনে সাদা, রানী,হলুদ, রঙ দিয়ে ছোটখাটো আল্পনা করছে আয়াত, মালিহা মিলে।চারপাশে নানা ক্লার এর ছোট বড় নিসান এর ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে।ছোট থেকে বড় সবায় আজ নিজেকে সাদা রঙে সাজিয়েছে তুলেছে, রঙ খেলার আয়োজনের জন্য।মেয়রা, সাদা জামা,সাদা,প্লাজো আর নীল ক্লার এর চুন্ডিবাটিক ওড়নায়,হাতে কিছু রেশমি চুড়ি। ছেলেরা সাদা কাবলি সেট,আর ধুতিতে নিজেদের সাজিয়ে তুলেছে। সব যেমন সাদায় সাদা, সবায়কে আজ অসম্ভব সুন্দর লাগছে।বাগানের ছোট টেবিলে পাচঁ থেকে ছয়টা থালায় নানা ক্লার এর রঙ রাখা আছে আর তার পাশে ট্রেতে কিছু লাসির গ্লাস, পুদিনা জার্য রাখা আছে,সাথে কিছু ফাস্টফুড খাবার রাখা আছে। টেবিল থেকে কিছু দূরে গানের দুইটো বক্স রাখা হয়েছে। এর মধ্যে,,,
.
কড়ো তালিতে সবায় রিতিমত চারদিকে ছুটা ছুটি করা শুরু করে দিয়েছে হাতে নানা ক্লার এর রঙ নিয়ে একে উপর এর পিছে ছুট লাগাছে। রঙ দিচ্ছে চিল্লা,চিল্লি করছে হাসিতে।আমি চুপ করে এক কোণায় দাঁড়িয়ে নিরব দশকের মতো দেখছি তাদের এক একটা ভূত, প্রেত্নিকে আমার আপাতত এতো সেজে ভূত হওয়ার ইচ্ছে নেই তাই । ফাঁকেফাঁকে ফোনে টুক করে সেল্ফি কিল্ক করে নিচ্ছি এদের পরে সেইভাবে বিনোদন দিয়ে পচাতে পারবো ভেবে😁।আমার সামনে রঙ নিয়ে কেউ আসলেই আমি চোখ দিয়ে রাঙিয়ে শাসিয়ে দিচ্ছি দিতে না আমার রঙ এ এলার্জি আছে বলে(ডাহামিসা কথা)। এর মধ্যে ফারদিন চিল্লিয়ে ডিজের উদ্দেশে বলে উঠল,,, আবে ইয়ার গানাতো এক বাজাদো,,,,,
Itna maza kyu aa raha hai
tune hawa mein bhang milaiya
(আয়াত, দিপ্তকে কাধে ধাক্কা দিয়ে মাথা হাত দিয়ে, কমোড় দুলিয়ে স্টেপ করলো গানের এই লাইনের সাথে তালমিলিয়ে)
Dugna nasha kyu ho raha hai
Ankho se mitha tune khiliya
( দিপ্ত,ফারদিন,অনিক,মালিহা,তাসফি স্ট্রজে গিয়ে)
Oh teri mal mal ki kurti gulabi ho gayi
Manchali chaal kaise nawaabi ho gayi
(Tohhhhh)
(তাসফির মালিহার হাত ধরে এক টান দিলো আর দিপ্ত আয়াতের)
“Balam pichkari jo tune mujhe maari
toh siddhi saddhi chori sharabhi ho gayi ( আয়াত এর গালে রঙ দিয়ে দিপ্ত)
ha jeanse pahan ke jo tune maare thumka toh lattoo padosan ki bhabhi ho gayi(মালিহা কে হাতের দ্বারা গুরিয়ে পায়ের সাথে পা মিলিয়ে তাসফির)”
[🎶🎶🎶🎶🎶🎶🎶🎶🎶]
আপি আমার মনে হয় তাসফির কোনো ভাবে অর কাচা না গলা ডাল মালুর উপর গলানোর অতি প্রচেষ্টাই আছে বুঝসো। আমার হারামি বেস্টি আমার বোন এর সাথে লাইন দিচ্ছে। এটাও আমার বিয়ের প্রোগ্রমে এসে শালা, এতো সহজে তো আমি তোর ডাল গলতে দিবো না এইখানে তাসফির বাচ্চা। চোখ ছোট করে ডেবিল স্মাইল দিয়ে সামনের দিকে তাকিয়ে বলে উঠল। নূর।।।
__তো, কি করবে শুনি!!! কানের সামনে ফিসফিস করে বলল।।
“হঠাৎ কানের সামনে পুরুষালী কণ্ঠো সুর পেয়ে নূর কেপে উঠল ” ভয়ে পিছে তাকিয়ে দেখে এক জোড়া চোখ ভ্রু উঁচু করে নাচিয়ে অর দিকে তাকিয়ে আছে মুখে তার আকা-বাকা দাঁতের এক দুষ্টু হাসি
__আপনি!!!বিস্মিত চোখে।।।
” তো কাকে চিন্তা করছিলে!!! শুনো মেয়ে এই ইয়াদবিহীন তোমার জীবনে এতো কাছে আসার কেউর দূর সাহস নেই”বুঝসো,তাই এই কথা দূর স্বপ্নেও ভুলে এনো না মনে। চোখ ছোট করে।
বলেই সবার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে আড়ালে নূর হাত ধরে টেনে পিছনে হাঁটা ধরলো।।।
_ আরে আরে করতেছেন কি মশায় !! এমন কোওয়া নাই বলা নাই, হুটহাট কথা কথায় এতো কিল্লাই টানাটানি করেন আমায়।কপাল কুঁচকে।
_তা একটু পরেই জানতে পারবা। পিছে নূর এর দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে।
“মেন্ডেইল এর পিছে নূরকে এনে এক প্রকার দাঁড় করালো ইয়াদ। নূর কপাল কুঁচকে নাক মুখ ফুলিয়ে ইয়াদ এর দিকে তাকিয়ে আছে বিপরীতে ”
_কথায় কথায় কপাল আর নাক এতো কেন কুঁচকাও ঠিক করো বলছি। কুইক।।। গম্ভীর হয়ে।ইয়াদ।
_করুমা, আরো বেশী করে করবো সন্দেহ দৃষ্টিতে ইয়াদ এর আরো সামনে এসে।
আপনার তাতে কি, কথা কথায় কেন এখন তো উঠতে বসতে খাইতে ঘুমাতে করবো আপনার সমস্যা, দাঁতে দাতঁ চেপে।।।
_ আমার তাতে সমস্যা হবে কেনো।। আমারই তো তাতে উল্টো আরো ভালো,,, সুবিধা হবে অনেক।।৩২ বাতি দিয়ে।।।
_মানে!! আমার কপাল নাক দিয়া কি করবেন আপনি!!
_আমি যখন তখন টুপুস করে তোমার লাল কিউট নাক টাই কামড় দিতে পারবো।।। শয়তানি হাসি দিয়ে উপরের ঠোটঁ দ্বারা নিচের ঠোটঁ চেপে।।।
_ইয়াজ্ঞজ্ঞজ্ঞজ্ঞগ থু কি চিন্তা ভাবনা আপনার ওয়াজ্ঞজ্ঞগ ।।। চোখ বুঝে বলে উঠল 😖 ভাবা,,,,
“আর কিছু বলা আগে ইয়াদ নূর এর টসটস গালে নিজের হাতে থাকা রঙ গুলো সাদা গালে রাঙিয়ে দিলো ”
নূর হ্যা করে ইয়াদের দিকে তাকিয়ে আছে মনের মধ্যে কিছু কিছু কঠিন থেকে কঠিনতম গালি মনে করছে বলার জন্য,,,
Oh kyu no vacancy ki hotto pe gali hai check kar tere dil ka kamora toh khali hai(গানের লাইনের সাথে সুর মিলিয়ে ঠোটঁ কামড়ি এক হাসি দিয়ে বলে ইয়াদ চলে গেলো)
চলবে,,,,,