মেঘের আড়ালে ২ পর্ব-১০

0
1230

#মেঘের_আড়ালে২(ফিরে আসা)
#পর্ব_১০
#লেখিকা_ফাতেমা_জোহরা_নাভিলা

খালামনির ডাকে সকালে হেলেদুলে ঘুম থেকে উঠলাম আমি আর আপি, খালামনি আমাদের তাড়া দিয়ে শটকাটে পরিবেশের ১০২ নং সংকেত বলে নিচে চলে গেলেন। কি বলে গেলেন কিছুই বুঝলাম না সব যেমন মাথার উপর দিয়ে উড়ু উড়ু যাই বলে চলে গেলো শুধু ঘুমো ঘুমো চোখে খালামনির জাওয়ার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলাম। অলস ভঙিতে হামি দিতে দিতে বালিশ এর নিচ থেকে ফোন নিয়ে চোখ আমার বড় বড় হয়ে গেলো ইতিমধ্যে কপাল এর উপরে উঠে। এগারো টা দশ বাজে তার মানে আম্মু রেগে বোম হয়ে আছেন আমার উপর আরো। অউফফফফফফ নূর তুই আর এই জিন্দেগীতে সুনামিকে দাওয়াত দেওয়া আর বাদ দিবি না কপালে। আল্লাহ্ এক লাফে খাট থেকে উঠে চ্রট করে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ফ্রেশ হতে।
.

.
তোয়ালে দিয়ে চুল মুচতে মুচতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে দেখি আয়াত খাট এর উপরে বসে আছে মুখে তার রাগি ভাব।তার পাশে আপি বসে আছে ফোনে সম্ভব তো ইফরান ভাইয়ার সাথে মেসেজিং এ কথা বলছে টুংটাং আওয়াজ কানে ভেশে আসছে। আমি দীর্ঘ নিশ্বাস নিয়ে তোয়ালেটা টেবিলের উপর রেখেতে পিছ থেকে আয়াত বলে উঠল তার গর্জন গলায়,,,, 📢

“পাক্কা বিশ মিনিট ধরে আয়াত অর বেস্টি মার্কা দুক্ষু দুক্ষি ভরা কষ্টের ভাষণ বলে হাপিয়ে উঠেছে ”

দেখ আমার উপর অকারনে রাগ নিয়ে থাকিবি না,,, আমার মন মানসিক এখন ঠিক নাই যে আমি এখন তোর দুক্ষু ওয়ালা লাইন শুনে মুড ভাঙাবো। তাই অযথা রাগ দেখিয়ে কাজ হবে না আমার উপর। নূর।
.
আমি আপুর থেকে সব শুনেছি, তাই রাগ করছি না তোর উপর কিন্তু আমাকে একটিবার তো জানাতে পারতি। জল যে রিতিমত এতো দূর গড়ে গেছে।আয়াত।
.
তা, কখন জানাতাম তোকে ঘটানা অতি ৪২০ গতিতে রটে গেছে আমার সাথে, আমি নিজেই একটা ধোঁয়াশার ঘোড়ে ছিলাম। চুল আছড়াতে আছড়াতে বলল নূর।
.
সকালে তো এটলিস্ট জানাতে পারতি। নাও ইউ আর ম্যারিড এটাও আর কাউর না আমারই এক্স ক্রাশ এর বউ।।হতাশ হওয়ার ভঙিতে।।। আয়াত।
.
সকাল তো হলো এখন সখিনার মা,,, জাস্ট চিল এতো প্যারা নেও কেন গো, আর ক্রাশ এক্স হওয়া সাস্থ জন্য অতি ভালো লাভবান খবর,,বুঝসো নাহলে নতুন গুলার আগমন রটবে কি করে এই ছোট জীবনে বলো।চোখ টিপ দিয়ে বলল।।।

“দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে হাসিমুখে বলে উঠল দিপ্ত,,,,,
.
কেমন আছো। হাসিমুখে।।। রুমে আসতে আসতে।।দিপ্ত।
.
আলহামদুলিল্লাহ, আপনি কেমন আছেন ভাইয়া। বিরক্তি সুরে।।
.
দিপ্ত বেকা চোখে তাকিয়ে বলে উঠল,, থাপ্পড় খাইসো তুমি।আমি তোমার কোন জন্মের ভাই লাগি বেয়াদব।বলছি না ভাই বলতে না বেকুব।।
.
এই জন্ম হাতের কাছে থাকতে আবার কোন জন্মের হবেন, আপনি নূর এর ভাই হলে আমার ও তো ভাই হোন নাকি।আয়াত।
.
দুনিয়াতে সব যদি ভাই আর বোন হয়তে থাকে দিন দিন তাহলে ছাইয়াটা কে হবে শুনি।। দাতেঁ দাতঁ চেপে।। দিপ্ত।
.
কিহহহহ!!! বুঝলাম না কিছু বললেন ভাইয়া।আয়াত।
.
জাস্ট সাট আপ।।। রেগে।।। আর একটি বার তোমার মুখ থেকে ভাই ডাক শুনলেই জিভ কেটে হাতে তুলে দিবো ইডিয়েট।।।। তার পর এসে কানের সামনে বেশী করে ভাইয়া বলো।।।নিচে ইয়াদ আর ইফরান এসে বসে আছে পাচঁ মিনিটে নিচে আয় তোরা কুইক (আয়াত এর দিকে তিক্ষো নজরে তাকিয়ে) ,,,,,, বলে গটগট করে চলে গেলো।।।

.
দোস্ত দেখছিস কি সাংঘাতিক তোর ভাই আমারে খাড়ার উপরে খাড়া কেমনে হুমকি দিয়া গেলো।। এটা ও কি বলা অপরাধে,,,, ভাই বলার অপরাধে জিভ কাটবে আমার খাটাশ।।। তোরে ভাই আর কমুনা খাটাশ,,, কমু ছেঁকা খাওয়া কুত্তা,,, কতো বড় সাহস আমার জিভ কাটবি এই আয়াত এর।।।।বজ্জাত ছেমড়া।।। তোর জীবনে ও ভালা হইবো না কইয়া দিলাম।।।হারামি।।
.

.
♣️
গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি চুপচাপ। পড়ন্ত দুপুরে কড়া রোদের আড়ালে নরম আলো ছড়াচ্ছিলো,রাস্তায় মানুষজন গিজগিজ করছে।আকাশ ভরা মেঘদের দল ছড়াছড়ি করছে হয়তো কিছু সময় এর মধ্যে বৃষ্টি হয়ে নামার অপেক্ষা তারা আছে।

“হঠাৎ ওড়নায় টান পড়াতে ভাবনায় ছেদ ঘটলো,,, চোখ বড় বড় করে বাহির থেকে চোখ ফিরিয়ে নিজের দিকে তাকিয়ে আমি রিতিমত থ্ এইইইইই কিইইইই। আমার গায়ে ওড়নার এক কোনা অংশ ও অবশিষ্ট আর নেই। ওড়না গেলো কই মাএরো তো টান পরলো ,,,, পাশে বসা ইয়াদ এর দিকে তাকিয়ে দেখি,,, বাবা তোমার দরবারে এই কোন পাগল এর আমাদানি হলো নতুন করে বাপু।।।। আশেপাশে জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিজিয়ে চোখ বুলিয়ে দেখি সবায় সবার কাজে ব্যস্ত কেউ আমাদের দিকে তাকাচ্ছে না আপাতত, যাক বাবা বাচাঁ গেলো কেউ দেখেনি তাহলে। আমার পুরো ওড়নায় ইয়াদ এর এক হাতে পেচাঁনো আর এক হাত দিয়ে ওড়ানার কোনায় গিট্ট এর দোকান এর পাহাড় সমান তাল করছে একটা উপরে একটা দিয়ে। হাবভাব এমন তার খুব গম্ভীর ভাবে ঠোঁট কামরিয়ে কোনো বিশেষ কাজ মনোযোগ দিয়ে রেখেছেন চোখ দুইটো একটু এইদিক সেইদিক হলে বড় সড় লোস হয়ে যাবে ইতিমধ্যে উনার 🙄।
.
বলি,,, আমার ওড়নায় আপনার কাছে গেলো কি করে,,,, দাতেঁ দাতঁ চেপে ফিসফিস করে বললো উঠলাম ।।। নূর।।
.
কিভাবে আসবে আবার,,,উড়ে এসে ঝুড়ে টপকিয়ে এসেছে কোনো সমস্যা।।। তোমার।। গিট্ট দিতে দিতে বলল।।
.
জানেন দুইদিন আগে না আব্বুর সাথে আই চেনালে একটা খবরে দেখেছিলাম পাবনা থেকে ৪০২ নং কক্ষ থেকে এক পাগল ইঞ্জেকশন জারি দেওয়া প্রেসেন্ট পালিয়েছে ওটা কি বাই এনি চান্স আপনি ছিলেন আমার তো সন্দেহ্ হচ্ছে রিতিমত এখন ,,,
.
ইয়াদ গিট্ট দেওয়া বাদ দিয়ে নূরের দিকে বিস্ময় ভাবে তাকিয়ে আছে। বলে কি এই মেয়ে।।।
.
আমাকে কি আপনার বিয়াইন লাগি যে ফালতু লজিক দিচ্ছেন। নিজেকে অতি চালাক হিরো আলমের বড় ভাই আর আমাকে বোকা ভাবেন তাই না।চুপ চাপ আমার ওড়না দিন কি হাল করছেন। আমার ওওওয়য় কি কিউট টুসটুসি প্রিয় ওড়নাটার,,,, আপনার লে হামলা কি বেহাল ফালুদা হয়ে গেছে বেচারির । আল্লাহ্,,,আপনি একটা অতি লেভেল এর ডোট ডোট আজাইরা পাবলিক,, এতো গিট্ট আমি খুলতে খুলতে রিতিমত ফ্রিতে এখন ৮০ বছর এর বুড়ি হয়ে যাবো দূর,,,।।।। নাক মুখ ফুলিয়ে ফুসফুস করে বলে উঠল।।
.
ইয়াদ ঘাড় ঘুরিয়ে চোরা চোখে নূরের দিকে ঝুকে তাকালো চোখ মুখে তার বিস্ময় ভাব। নাক মুখ কুঁচকে গম্ভীর গলায় বললো,,, হোয়াট ডু মিন বাই ডোট ডোট???বোকা টোকা দিচ্ছো না তো এর মাঝে বাই এনি চান্স আমাকে।।। এতো বিয়াইন সাহেবা হওয়ার শোক তোমার!!!এতো সুন্দর একটা সম্পর্ক অফশেন থাকতে,,, সমস্যা নাই বলিও দুইটাই।আমিতো এখন পুরা দমে তোমারই ।।।আর আমার কি খেয়েদেয়ে কোন কাজ নেই নাকি?? আজব!! চুপচাপ বসে থাকো!! কোথায় উড়ে এসে কোলে ঝুড়ে পরলো তোমার বরিং ওড়নাটা, কই আমাকে একটা থ্যাংক’স জানাবা তার জন্য দেখাচ্ছো গরম চোখ,,, তোমার ওড়নাকে আমি অতি বরিং নেসসস থেকে নিজের ঘুমন্ত প্রতিভা দ্বারা এক নতুন রুপ দিয়ে দিলাম,,, হুহ আজ কাল কাউর আর সেঁচ্চে ভালো করতে নেই।।। বুঝা হয়ে গেলো আমার আজ তোমাকে দেখে।

.
এই আপনার ভালো করার নমুনা লাইক সিরিয়াসলি।।।।। চোখে চোখ রেখে দাতেঁ দাতঁ চেপে রাগিতো সুরে বলে উঠল নূর।।
.
ইয়াদ চোখে সানগ্লাস দিয়ে ডোন্ট কেয়ার একটা ভাব নিয়ে সামনে তাকালো,, ঠোঁটের কোণে ফুটে উঠলো তার হাসি!!! যাকে বলে মধুরতম হাসি। নূরের সাথে নরমাল ভাবে আগের মতো করে কথা বলতে পেরে খুব ভালো লাগছে তার এখন।

.

.
” নূর আর কিছু বললো না। ওড়নাটা গিট্ট গুলো খুলে পূনরায় গলায় ভালো মতো পেঁচিয়ে আবার ও আগের মতো চুপচাপ বাহিরে দিকে তাকিয়ে আছে”। পেছনের সীটে দিপ্ত,অনিক,ফারদিন বসেছে,নিজেদের মাঝে গুনগুন করে কথা বলছে,মাঝ বরাবর সীটে আমি ইয়াদ আর আয়াত বসেছি,আয়াত ফোনে শিল্পি নাটক দেখছে তাই আপাতত আমাদের দিকে তার কোনো মাথা ব্যাথা নেই।সামনে ড্রাভিং সীটে জিজু আর পাশে সীটে আপি বসেছেন।

♣️
পাক্কা দেড় ঘন্টা জার্নি করে ঢাকা যমুনা ফিউচার শপিংমলে এসে পৌঁছালাম।শপিংমলটা বেশ বড় আর সুউচ্চ, আমি এর আগে একবার এসে ছিলাম আব্বুর সাথে । আর আজ দ্বিতীয়বারের মতো এলাম ইয়াদ এর সাথে নিজের বিয়ের শপিং করতে।

” তিন ঘন্টা যাবত দেখে চলছি নিজের জন্য কিন্তু কিছু পছন্দ হচ্ছে না আমার ঠিক করে। আপুর শপিং প্রায় শেষ এর দিকে “।আয়াত ও নিজের মতো শপিং করছে এক দমে আজ ।আমি ওদের দিকে এক নজর তাকিয়ে দোকান থেকে বের হয়ে গেলাম।পাশে দোকান গুলোতে বাহির থেকে চোখ বুলিয়ে দেখছি। হঠাৎ একটা দোকানে গ্লাসে বেদ করে লেমন ক্লারের একটা শাড়িতে আমার চোখ গিয়ে আটকে পরলো, শাড়িটা অসম্ভব সুন্দর । আমি দোকানে গিয়ে শাড়িতে হাত বুলিয়ে দেখছি। লেমন এর মধ্যে কালো সুতোর চারুকাজ।

“ভালো লেগেছে”!!!
.
ভীষণ!!! শাড়ির দিকে তাকিয়ে বললাম।।
.
এক্সকিউস মি এটা প্যাক করে দিন।
.
“আমি পিছে তাকিয়ে দেখি ইয়াদ দাঁড়িয়ে আছে আমার ঘা এর সাথে একদম লেগে এক হাত ও দূরত্ব নেই আমাদের মাঝে ”
.
আপনি!!
.
তো কাকে আসা করছিলে নিজের এতো কাছে।।।
.
আপনি এতো লুচু বাঘ হলেন কবে থেকে বলুন তো!! আগে তো এমন ছিলেন না, এতো কাছে ও আসতেন না কথা কথা। আজ এতো অদ্ভুত আচারন করছেন কেনো।
.
কারন আজকের কথা সব থেকে আলাদা তাই।
.
কি এমন কথা আলাদা।। আমি জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি।।
.
কারন আজ আপনি আমার বউ তাই আপনার প্রতি আমার অধিকার বোধটাও আজ অনেক বেশী কাজ করছে,অন্য দিনের তুলনামূলক থেকে।। নাক টেনে।।। বুঝছেন মেডাম ফুল পরি।।
.
স্যার,, শাড়ির বিলটা আর এই যে শাড়িটা।। শাড়ির প্যাক হাতে দিতে দিতে বলে উঠলেন। দোকানদার।।।
.
ইয়াদ হাসি খুশি ভাবে শাড়ির প্যাকেট টা আর নিজের ক্রেডিট কার্ডটা নিলেন।
.
আমি বিল এর দিকে এক নজর তাকিয়ে পাগল হওয়ার উপক্রম।।।।। এই কে কোথায় আছিস আমাকে কেউ একটু ধরতো এসে আমি পরে যাচ্ছি। এতো চোরের উপর বাটপারি,আড়ং এর বাচ্চা ।।। এই শাড়ি হাইস্ট গেলে সবেচ্চো পাচঁ হাজারই হবে কিন্তু আমাকে ভুল ধারনা প্রমান করে দিলো আড়ং এর বাচ্চা। এই কারনে আমি আড়ং থেকে স্বপ্নেও ভুলে টুলেও ফ্রিতে ও এসে কিছু নিতে চাই না,,, বিল আসছে ৫২ হাজার টাকা ভাবা যায় । আজ মনে হয় ইয়াদ বেটা পুরো দমে ফকির হয়ে গেলো উপ্সসসসসদস। হলে হলো তাতে আমার টাকলা বাবার কি😒,,,
চলবে,,,

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে