মেঘের আড়ালে পর্ব-১৬ ( শেষাংশ প্রথমংশ)

0
2811

#মেঘের আড়ালে💞
#পর্ব__১৬(শেষাংশ প্রথমংশ)
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা
৩৬.

গানের মাঝে হঠাৎ ছাদের কেঁচি গেট জোড়ে সোড়ে ধাক্কা আওয়াজে সবায় গান, নাচ বন্ধ করে চোখ বড় সড় গোল করে তাকিয়ে আছে দরজার পাশে হেলেদুলে নূর এর দিকে।কমোড়ে মাঝ বরাবর হলুদ ক্লারের হুডি গিট্ট দেওয়া, লাল ক্লার এর টি-শার্ট এর উপরে কালো উরনা গলায় ঝুলানো, পায়ে কালো প্লাজোটা এক পাশে উঁচু আর পাশে নিচু করা, দুইপায়ে ভিন্ন দুইটো জুতো।চুলগুলো সামনে উল্কোসুল্কো এলোমেলো হয়ে আছে।।।


“দিপ্ত নূরের হেলেদুলে অব্যস্থা দেখে ছাদের মাঝ বরাবর টেবিল থেকে উঠে চ্রট করে নূরের কাছে আসলো,,,নূর দিপ্তর দিকে তার আঙুল ট্যাগ করে খিলখিল করে হাসছে।।।।

.

দিপ্তঃ এই কি নূর,,,, তুই এইখানে কি করছিস!!! আর এভাবে দুলছিস কেনো?? (চিন্তিতো সুরে) ঠিক আছিস বোন ঝাকিয়ে।।।।এভাবে হাসছিস কেন বাতাস টাতাস লাগলো না তো আবার কপালে হাত বুলিয়ে ।।।।

.
উঁহু নূর একা না ব্রো আমিও আছি, অট্রো হাসি হেসে।।।পিছ থেকে উক্কি দিয়ে বলল ইশারা।।।

.

নূর ইশারার দিকে তাকিয়ে মুখে আঙুল দিয়ে দিপ্ত ভাইয়ার বুকে পিঠে ঠেকিয়ে ইশারাকে হুসসসস ।।।।এতো হাসে না আপি লোকে পাগল বলবে তোয়য়য়য়য়য়।।।।

.
দিপ্ত দুই বোনের কারবার দেখে পাগল হওয়ার উপক্রম এক হাত দিয়ে নিচের মাথা চুল গুলো টানছে আর এক হাত দিয়ে নূরের হুডির টুপি টেনে নূরকে সামলাচ্ছে।।।।

.
দিপ্তঃ ইশারা তুই,,, তোরা দুইটা এতো রাতে এখানে কি করছিস!!! (রাগিত সুরে)আর দুলছিস কোন সুখে ??? ইডিয়েট (দুইটো কে দুই কাধে নিয়ে) ঔই ইফরান ভাই দেখো তোমার অতি আদরের বউ আর শালি গায়ে বাতাস টাতাস বাধিয়ে হ্যাংলার মতো করতেছে ।আর তুমি বসে বসে মনের সুখে বিয়ার খাইতাসো মিয়া।।।। চিল্লিয়ে।।।

.

দিপ্তর কথা ইফরান এর কানে যেতে দেরি হলো কিন্ত মুখ ফুস্কে বিয়ার বের হয়ে নাকে মুখে উঠে কাশ শুরু হতে আর দেরি হলো না।।।। ইফরান নিজেকে সামলিয়ে দিপ্তর কাধে ইশারা আর নূরের দিকে তাকালো দুইজন হেলেদুলে অদ্ভুত ভাবে খিটখিট করে হাসছে আর দিপ্ত দুইটাকে কোন রকম ধরে আছে কিন্তু ব্যালেন্স রাখতে হিমসিম খাচ্ছে ।ইফরান হন্তদস্ত হয়ে ইশারার কাছে ছুটে আসলো,,,,,

.
ইফরানঃ এই কি ইশু,,তোমার কি হয়েছে!! তুমি এমন করছো কেনো???আর ভাবিকা তুমি এইখানে কি করছো।।। ইশারাকে কাছে টেনে।।

.

ইশারাঃ উঁহু,,, একদম কথা বলতে আসবা না ইরফান দূরে যাও ,,,, (ইরফান এর মুখে আঙুল ট্যাগ করে)।তুমি অনেক খারাপ কান্না করে। আমাকে আর একটুও ভালোবাসো না আগের মতো। ভালোবাসলে কি আর এইই কাজ গুলা করতে পারতা আমার সাথে।।।।।ন্যাকা কান্না করে।।।।

.
এই মূহুতে ইশারার মুখে এমন কথা শুনে, ইফরান এর দিকে এক প্রকার সন্দেহ দৃষ্টিতে চোখ ছোট করে তাকিয়ে আছে দিপ্ত, অনিক,ফারদিন ।।।।

.
কি হইছে শালাবাবু তোমরা এভাবে আমার দিকে তাকিয়ে আছো কেন অসহায় ভাবে।(ইফরান)
.
কি হয়েছে দোলা, এটা তো আপনি বলবেন!! আমার বোন এর সাথে এমন কি করছেন আপনি!!।।।(অনিক)
.
ইফরানঃএই ইশু,,, এমন করছো কেন!আমি কি করেছি জান।।। আর তোমার এমন কেন মনে হলো যে আমি তোমায়কে একটু ও ভালোবাসিনা।।।(গালে আঙুলের বাজে মুখ ধরে)অসহায় ভাবে কথা গুলো বলল।।।

.
ইশারাঃ তো কি বলবো। (চোখ ছোট করে নাক ফুলিয়ে)তুমি যদি আমাকে ভালোবাসতা তাহলে টেবিলের দিকে ট্যাগ করে অই টেস্টি জুসটা আমাকে রেখে একা খেতে পারতা এইভাবে।।।।। উহু একদমই না।।।।।। পারতা বলো!!

৩৭.
“ইশারা হাতের ট্যাগ অনুসরণ করে দৃষ্টি রেখে যা বুঝার বুঝে গেলো সবায়, ইতিমধ্যে বুঝতে আর কিছু বাকী রইলনা ইশারা আর নূর যে কোনো ভাবে ভুলে বিয়ার খেয়ে ঘটনা যা রটার রটে ফেলেছে।

.

.
“দিপ্ত মাথায় হাত দিয়ে রাগে দুঃখে চেপে।।।। এই ইফরান ভাই আপনি ইশারাকে ধরে নিয়ে নামুন তো আমি নূরকে নিয়ে নামছি।।।

.

.
“উহু আমি জামুনা আমি নাচমু।।।। এই ফারদিন অওঅঅঅঅ মুরসি ওওও গান ছার আইইইই আজ নাচমু।(ঠোট উল্টিয়ে বলল)নূর।
.
দিপ্তঃ আচ্ছা,, বইন নাচিস কিন্তু এখন না পরে।।।। ক্লান্তি সুরে।।।

.
নূরঃ কোনো পরে টরে না, এখুনি।। কপাল কুঁচকে।। আইচ্ছা শামসু ভাই (দিপ্তর দিকে হেলে)আমার জামাই কই আশেপাশে চোখ বুলিয়ে এইইইই ম্রিস্টার বজ্জজাত উগন্ডার প্রেসিডেন্ট গোম্রা প্রটাসসসসস ম্রিস্টার ইন্ডিয়া কই।।। দেখছিনা যে!!!

.
অনিকঃ হোয়াট এ গুড কোয়শেন বইন।।।তোর জামাই নিচে।।। তো এখন চল নিচে যাই।

.
নূরঃ তোমরা কেন যাইবা আমি জামু আমার জামাইর কাছে।।। এইই জিজু তোমার ভাই কোথায়।।।।

.
ইফরানঃ নিচে গেস্ট রুমে।।

.
নূরঃ এটা তো আমিও জানি, নতুন কি আছে বল।।।উহহ,কোন রুমে।।।এটা বলো।।ইফরান এর কাছে এসে কমোড়ে হাত দিয়ে।।।বিরক্তি সুরে।।।
.
শেষের রুমে।।। পিছ থেকে ফারদিন বলল।।

.
আচ্ছা শুন আমি আসতেসি,,,একদমই গান বন্ধ করবিনা তোরা।।। আমি এসে নাচমু।।। খিলখিল করে হেসে।।।।

৩৮.
ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে ইয়াদ। আজ নিজেকে বড্ডো শূন্য শূন্য আর বোকা মনে হচ্ছে ।।। আকাশের দিকে তাকিয়ে উপরের ঠোট দিয়ে নিচের ঠোট চেপে তাচ্ছিল্যের সুরে হাসচ্ছে অদ্ভুত ভাবে। চোখ দুইটো তার ছলছল আয়নার মতো চিকচিক করছে আর বিড়বিড় করে বলছে। জীবনটাই আসলে রং বিহীন এই রঙ বিহীনের দুনিয়াতে কোন তুমিবিহীন নেই। আছে আধারে মাঝে সব ধোঁয়াশা, ভালোবাসা বলে আদৌ কিছু নেই আছে শুধু একঝাক ধোকা।

“হঠাৎ পিছু থেকে কে জানি এসে বুকে দুই হাত গুঁজে শক্ত করে আকরে পিঠে সাথে বুক মিশিয়ে জড়িয়ে ধরে আছে।।। তার গরম ভারি নিশ্বাস গুলো পিঠে আছড়ে পরছে।।।তার এভাবে হুটহাট স্পষ্ট করাতে হার্টবিট গুলো জোড়ে ঢোল বাজানো শুরু করেছে ইতিমধ্যে নিজের সাথে তালমিলিয়ে পিছে থাকার ব্যক্তির ও ঢোল বাজছে। ইয়াদ এর বড্ডো অস্থির লাগছে এখন ও রেগে হাত ছাড়তে নিতেই,,,,,,

.
উঁহু,,,, একদমই নড়বেন না,, এভাবে থাকুন কিছুক্ষন ।।।

.
“নূরের আওয়াজ শুনে ইয়াদের আর বুঝতে বাকী রইলনা না এটা যে নূর”। ও অই ভাবেই দাঁড়িয়ে আছে নূরের হাতের উপর নিজের হাত রেখে এতোক্ষনে যে শূন্যতা কাজ করছিলো এখন নিমিষেই ভালো লাগা কাজ করছে।।।

.
কি ভেবে ছিলেন মশায় ?? অন্য কেউ এভাবে আকরে ধরেছে আপনাকে, আপনার জল্পনাতে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি আহহহহহহা।।।ইসসসস শখ কতো আপনার(মুখ ভেংচি কেটে)।।। শুনেন,,,,,এইইই নূর বিহীন ছারা আপনাকে এই জীবনে এভাবে আকরে ধরার কেউর দূর সাহস নেই। ইয়াদ এর পিঠ থেকে সরে হাত দিয়ে গুরিয়ে (মলিন হেসে)

জীবন রঙ বিহীন নয় ইয়াদ,,,, (কিছুক্ষন থেমে ব্যালকনির রেলিং ধরে আকাশের দিকে তাকিয়ে)।।এই রংধনু রঙিন দুনিয়ার মাঝে আপনি নিজেকে রঙ বিহীন করে গুটিয়ে রেখেছেন। তাই আপনার কাছে নিজেকে বড্ডো রংবিহীন লাগছে।তুমিবিহীন আপনার মাঝেই বসবাস আছে (ইয়াদ চোখের দিকে ছলছল ভাবে তাকিয়ে)যে আপনাকে তার সব দিয়ে আকরে ধরে বাচতে চাই একটিবার কিন্তু আপনি তাকে দূরে ঠেলে নিজেকে তাকে এই তুমিহীনা অসুখে বেধে রেখেছেন। ধোঁয়াশা আধারে মাঝে আপনার জন্য #মেঘের_আড়ালে থেকে কেউ এক চিলতে রোদ নিয়ে আপেক্ষা করছে আপনার সাথে নতুন ভাবে নতুন করে বাচঁবে বলে।।। এই তুমিতে মিলে আমি হবে বলে (ইয়াদ এর বুকের পাশে আঙুল ট্যাগ কিরে)যে আমিতে মিশে থাকবে একঝাক শুধু নির্সাথ্য অফুরান্ত অবিরাম ভালোবাসা।
.

.”চুপ চাপ বসে তুমি #মেঘের_আড়ালে”

“দূতেরা তোমায় নিয়ে গান লিখে যাবে”

“তোমার পথ চেয়ে সারাটা জীবন”

“আমার দিন রাত আজ হয়েছি পাগল”

“এই মন”

” কিছু বোঝেনা ”

“জীবন তোমাকে ছাড়া”

“ঝড়িয়ে দাও”

“অসীম অগচরে”

“ঝড়িয়ে দাও”

বৃষ্টি সুর ধরে”

“ঝড়িয়ে দাও”
“তোমার শীতল প্রেমে🎶🎶🎶🎶

“মেঘে উড়ে উড়ে”

“আসো বৃষ্টি সুরে”

“ভেজা শালিক এর কলরবে ”

“যেটুকু সময়

পাবো তোমায় কাছে”

আপন করে নেব ভুলে”

“এই মন কিছু বোঝেনা”

জীবন তোমাকে ছাড়া

“ছাদের এই গানটা এতোক্ষনে চলছিলে গানটা শেষ হওয়ার সাথে সাথেই নূর ইয়াদের পায়ের উপরে নিজের পায়ের ভর দিয়ে ঠোট দখল করে নিলো,,,,,,ইয়াদ নূরের পিঠে দুইহাত দিয়ে শক্ত করে আকরে নূরের সাথে চোখ বুঝে তালমিলাচ্ছে” সাথে চোখের পানি গুলো গাল বেয়ে ঝরছে।।

“বিশ সেকেন্ড পর নূর ইয়াদকে ছেড়ে কপালের সাথে কপাল ঠেকিয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে জোড়ে জোড়ে শ্বাস নিচ্ছে”।।।ভালোবাসি ইয়াদ খুব বেশী ভালোবাসি এই আপনিহীনা থাকাটা আমার জন্য খুব বড্ডো প্যারা ধায়ক আপনি কি আমার চোখে নিজের জন্য ভালোবাসা আদৌ দেখতে পাননা, না বুঝে ও বুঝেন না কোনটা।।।ইয়াদ এর দিকে কপাল কুঁচকে রাগি ভাবে তাকিয়ে।।। শাস্তি দিচ্ছেন আমাকে আপনাকে ভালোবাসার অপরাধে, এক বার শুধু ইয়ানকে আসতে দিন,,,,

“ইয়ানকে”(কপাল থেকে চুল সরিয়ে)

.
কে আবার আপনার আমার ছেলে যে ইয়াদ নূর থেকে মিশে আমাদের জীবন আলৌকিত করে এক “ইয়ান “হবে । একবার শুধু আসতে দিন আমার ছেলেকে তার পর মা ছেলে মিলে আপনাকে শাস্তি দিব দিন রাত চব্বিশ ঘন্টা হুহ তখন নো ছাড়াছাড়ি ।।।।(ঠোট ফুলিয়ে) বলেই ইয়াদ এর উপরে ঠেলেদুলে বুকে পরলো।।।

.
ইয়াদ নূর এর হেলেদুলে এভাবে পরায় প্রথমে ভয় পেলেও পরে গায়ে স্মেইলে বুঝতে পারলো নূর যে ড্রিংক করেছে। তাই সেই এমন করছে।।।। নূরকে এভাবে বুকে সাথে মিশে নিয়েই ইয়াদ আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে সেই #মেঘের_আড়ালে চাঁদের দিকে,,,,,
চলবে…..

[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি।]

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে