#মেঘের আড়ালে💞
#পর্ব__১৪
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা_নাভিলা
৩০.
নাম বিহীন এক পাহাড়ি এলাকার পাহাড়ের উঁচুতে দাঁড়িয়ে আছি এইখান থেকে নিচের মানুষগুলোর সাইজ এক একটা পিঁপড়া মতো লাগছে আমার কাছে। চ্রটগ্রাম এসেছি আজ দুইদিন হবে এই দুইদিনে কোথাও বের হওয়া হয়ে উঠেনি। তার অভস্য এক বিশেষ কারন ও আছে বটে, তা হলো আমার অতি ভোলাভালা অনিক ভাইয়া বিয়ে আসর থেকে কন্যকে তুলে এনেছে এই ঘটনায় পুরো থানচি টু নারায়ণগঞ্জ ইতিমধ্যে ভাগ মিরকা ভাগ টাইপ রটে গেছে অলরেডি।।। আমরা এখানে আসার পর ও ভাবির বাসার লোকেরা এসে অনেক ঝামেলা করেছেন। কাল দুপুরে পরে দুই পরিবার একসাথে বসে মিটিং করে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন অনিক ভাইয়া আর ভাবি মানে রুপা যেহেতু তারা পালিয়ে দুই পরিবার এর সম্মান অলরেডি ধুলোতে মিশে দিয়েছে তাই আর বাকি সম্মান না মিশিয়ে এক্সট্রা সমস্যা না বারিয়ে দুই পরিবার মিলে তাদের চার হাতকে এক করে দেওয়া ভালো হবে এতে আশেপাশে কানাকানি ও কম হয়ে যাবে আর সম্মান ও কম নষ্ট হবে।।।।।
.
.
দুপুর দুইটায় শপিং থেকে এসে দুপুরে খাওয়া দাওয়া করে এক ঘুম দিয়ে ছিলাম। ঘুম থেকে উঠে দেখি পুরো বাড়ি ফাকা আম্মু খালামনিরা আশেপাশের কিছু কাছের আত্নীয়-স্বজনদের দাওয়াত করতে বের হয়েছেন।আব্বু আর খালুজান মেন্ডেইল এর কাজ গুলো দেখছে আপাতত আর আমার কাজিনরা ব্যাচেলার পার্টি থিম এর জন্য জিনিসপাতি আর খাবার দাবাড় আনতে বের হয়েছে। পুরো বাসাতে আমি দিপ্ত ভাইয়া আর ফারদিন অনিক ভাইয়ার ছোট ভাই আছি। তাই আমরা ঠিক করলাম বাসায় এভাবে বসে না থেকে আশেপাশে থেকে একটু হেটে আসি এতে মন ও ফুরফুরে হবে।
.
.
ফারদিনঃএইইই অনিক ভাইয়া মেসেজ দিয়েছে বাসায় সবায় এসে পরেছে,এখন চল আমরাও বাসায় যাই । এখন বাসায় না গেলে পরে সন্ধায় পাহাড় দিয়ে হেটে যেতে সমস্যা হবে অনেক, কাল আবার সবায় মিলে একসাথে আসা যাবে এখন চল বইন। আল্লা ওয়াস্তে এই পাহাড়ি সাথে প্রেম স্রেম ভাব পরে এসে করিস।।
.
দিপ্তঃ হ্যা বইন চল, এমনেই আমি এক রক্ত শূন্যতা রোগী এর মধ্যে ফ্রিতে একঝাক রক্তদান আর করতে পারছিনা এইভাবে দাঁড়িয়ে,আর পা দুইটো ও চলতে চাইছেনা আমার।।। করুনা কর ভাইয়ের উপর একটু।।।অসহায় ভাবে।।।।
.
নূরঃ তোমরা কতো খারাপ আল্লা,,, এই নিরহ সিংগার প্রানীদের একটু মিস্টি রক্তদান করে পূন অর্জন করছো তা আর হজম হইলো না তোমাদের এই বদ পেটে,,,,ধরো এই মশাটা আজ জন্ম নিসে, মশা হায়াত মাএরো দুইদিনের জানো তো!!!! দুইদিন বাদে যখন মরে যাবে তখন বলতে তো পারতো ঢাকা থেকে সেই এক দিপ্ত দ্যা বডি বিল্ডা এসেছিলো সে আমাকে পরোম আদরে তার রক্ত শোষণ করতে দিয়েছিলো আহা কই মজা ছিলো ,,,,,,, জীবনটাই তোমাগো বেদনা দ্যা মশা কোম্পানি থেকেও নাম কামাইতে আর পারলানা,,,,,,চলো।মুখ ভেংচি দিয়ে সামনে হাটতে হাটতে।।।।
৩১.
বাসায় এসে দেখি বাগানের মাঝে মেন্ডেইল এর টেবিলে বসানো হয়েছে তার মধ্যে সবায় গোল হয়ে বসে আড্ডাবাজি দিচ্ছে আর টেবিলের মাঝে বরাবর গরম গরম ধোয়া উঠা চা আর সবজির পাকোড়া রাখা আছে অইখান থেকে নিয়ে সবায় খাচ্ছে আর গল্প করছে।। আমি ও আর দাঁড়িয়ে না থেকে জলদি করে গেলাম যদি পাকোড়া শেষ হয়ে যায়। টেবিল সামনে গিয়ে উক্কি ঝুক্কি দিয়ে চার পাচটে পাকোড়া আগেভাগে নিয়ে সুয়েটার এর পকেটে পুরে নিলাম। আর একটা নিয়ে মুখে দিতেই পিছ থেকে আম্মু বলে উঠল,,,
.
আম্মুঃ আস্তে নূর পাকোড়া খুব গরম মুখ পুড়ে যাবে তো।।।
.
.
” আমি আম্মুর বিবরীতে শুধু অহুহু অহু করলাম কারন ইতিমধ্যে আমার ঘটনা ঘটে গেছে আমার মুখ পুরো পুড়ে গেছে।।বহুত কষ্টে মুখের পাকোড়াটা চাবিয়ে শেষ করে পানি খাচ্ছি একেতো অতি গরম ছিলো দ্বিতীয় অনেক ঝাল ছিলো আমার চোখ ঝালে লাল হয়ে আছে আর গরমে কান দিয়ে ট্রেন এর ধুয়া বের হচ্ছে।।। বাগান থেকে বড় বড় ধাপে দোতালা রুমে আসলাম যে রুমটা আমাকে আর অনিক ভাইয়ার দুইটো কাজিনকে এক সাথে থাকতে দেওয়া হয়েছে। রুমে এসে আমি পুরো থ আপি খাটের উপরে ল্যাকেজ রেখে জামা বের করছেন।
.
.
নূরঃ আপি তুমি,,,কখন আসলে আমাকে তো কেউ বললো ও না।।।। তুমি আসছো।। দরজার কাছে দাঁড়িয়ে।।।।
.
.
“নূরের কথায় ইশারার কানে যেতেই হাত থেকে শাড়ি খাটে রেখে নূরের সামনে আসলো।এসেই ধমক এর শুরে বলে উঠল,,,,,
.
.
ইশারাঃ ঔই বদ এর হাড্ডি তোর ফোন কইরে, ফোন দিলে পাইনা কে চান্দে দেশে থাকস।।।। আর আমাকে না জামিয়ে উড়ো চান্ডিকার মতো এখানে উড়ে আসলি কেন।তুই জানিস তোকে কতো শত শত ফোন দিয়েছি আমি ।।। প্রথমে তো আমার একটাও ফোন পিক করিস নাই তার উপর পরে আবার ফোন দিয়ে দেখি ফোন বন্ধ করে রেখেছিস।।।রাগিতো সুরে।।।
.
.
নূরঃ অহহ রিলাক্স আপি এতো চিল্লাও কিল্লাই জিজু শুনলে তো ভেগে টেগে যাবে কানে হাত দিয়ে।।ফোনের সাথে এখানে এসে ইতিমধ্যে আমার সম্পর্ক খুব খারাপ হয়ে গেছে, ফোন ড্রয়ারে ঘুমায় চার্জার আনতে ভুলে গেছি তাই আপাতত বন্ধ হয়ে পরে আছে।।।।আর তার থেকে বড় কথা সবাইতো এইখানে আমাকে ফোন দিবে আর কে তাই ফোন আর চার্জ দেওয়া দরকার মনে করিনি।।।তাই দেইনি।।।।
.
.
ইশারাঃ বাহহহ সেই ভালো,, একজন ফোন ধরবে না বন্ধ করে নাকে তেল দিয়ে রাখবে আর একজন বাসায় এসে জিনিসপত্র ভাংচুর করবে তাকে বাড়িতে ফোনে কোথায় খুঁজে না পেয়ে। আর এইসব ঠ্যালা সামলাতে হবে কা কে আমাকে।।।।।রেগে কথা গুলো বললো।।
.
.
মানে!!!! কি বলতে চাও তুমি।আমি সামান্য ফোন না ধরায় কার তুলকালাম হলো।।।। মোবাইল কোম্পানি বাদে আমারে আবার কেঠাই তার সুখেদুঃখে এতো মনে করল।।।অবাক হয়ে।।। একটু রচনাটা বলবা।।।
.
.
এরপর আমি যা শুনলাম আপির থেকে তা শুনে আমার কান পুরো শুদ্ধ,,,,,,,, উনি কোথায় আপি?? তোমাদের সাথে কি এসেছেন।ভাবুক হয়ে।।।।
.
.
নিচে ভাইয়া, ইরফান অনিক ভাইয়া আর আব্বুর সাথে কথা বলছে,,,, তুইতো বাসায় ছিলিস না তাইতো অনিক ভাইয়াকে দিয়ে ফারদিনকে মেসেজিং করে তোদের তারাতারি আসতে বললাম।।। এভার সামলা কেমনে কি করবি।।।
৩১.
আমি আপুর কথা শুনে কথা বলার ব্যাকরুদ্ধ হারিয়ে ফেললাম ইতিমধ্যে , কি বলবো আপুর বিবরীতে, আপুকে কিছু না বলে বড় সড় এক ঢোক গিলে ব্যালকনিতে আসলাম। নিচে উক্কি ঝুক্কি দিতেই বেশী কষ্ট আর করতে হলো না,,, লাল প্যান্ডেল এর পাশে সাদা শার্ট এক যুবোক দিকে চোখ গিয়ে থোমকে গেলো আমার।শাটের উপরে দুই তিনটে বোতাম খোলা তার মধ্যে সানগ্লাস ঝুলানো , চুলগুলো উল্কোসুল্কো হয়ে আছে এলোমেলো হয়ে কপালে উড়ে পরছে,,মুখটা চুপসে আছে চোখ দুইটো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। এই উল্কোসুল্কো তেও বেটা সাইকো কে নোট ব্যেড।।। এভার চোখ গেলো তার বাম হাতের দিকে হাতে ব্যান্ডেজ করা তাহলে আপিকি সত্যি বললো,,,,ইয়াদ নাকি সেদিন বাসায় আসেনি পরেদিন বিকালে এসেছেন এসেই ছাদে চলে যায় কাউকে কিছু না বলে আর ছাদে গিয়ে ভিতর থেকে দরজা লক করে রাখে, রাত দশটায় ছাদ থেকে এসে যখন বাড়িতে রুমে আমাকে কোথায় ও খুঁজে পাইনি তখন বলে আমার উপর চিল্লানো শুরু করেছে। মামনি ইরার সাথে দেখা করতে হোস্টেল গিয়েছিলো তাই সে বলতে পারিনি আমি কোথায় আছি। সেইদিন রাত দশটায় রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে ইয়াদ গাড়ি নিয়ে আমাদের বাসায় উদ্দেশ্য রওনা দেয় বাসায় এসে দেখে বাহিরে তালা দেওয়া। তালা দেখে উনার রাগ আরো সপ্তম আসমানে চলে যায়। আমাকে নাকি ফোন দিয়েছে আমার ফোন বন্ধ ছিলো রাগে বাসায় এসে রুমের সব জিনিস হাতের সামনে যাই পেয়েছেন তা এক প্রকার নিয়ে ভাংচুর করা স্ট্রাট করে দেয়। আপু ভয়ে আব্বু আম্মুকে অনেক ফোন দেয় কিন্তু কেউই ফোন পিক করে না। করবে কি করে এইখানেতো কম ঝামেলা চলছিলো না তখন,ফোন তুললেও কোন ঝড় রেখে কোন ঝড়কে আগে থামাতেন।।।রাতে যখন মামনি বাসায় ফিরে তখন এই ইয়াদ এর এইসব পাগলামো শুনে রুমে আসে। তখন ইয়াদ মামনির কথা শুনে শান্ত হয়। নূরের বাবা নূরকে নিয়ে চ্রটগ্রাম যাওয়ার আগে তাকে ফোনে দিয়ে জানিয়ে দিয়ে ছিলো।।।
“এতো পাগলামির মানে কি যাকে তিল পরিমান সহ্য করতে পারেনা সেই আমার জন্য এতো পাগলামো করেছে আদৌ ভাবা যায়।।।।হোয়াট এ ইতিহাস নূর।।।। এইটুকু জীবনে কপালে আর কি কি শুনা বাকি রাখছে আল্লামালুম কে জানে।।।
.
“অনিক ভাইয়ার হাতের ট্যাক অনুযায়ী উনি নিচ থেকে উপরে আমার দিকে তাকালেন উনার এই রুক্ষচোখে চোখ পরতেই আমার ভয়ে কলিজা কেপে উঠল আমি রুমে এক প্রকার দৌড় দিলাম।।।।আব্বু বাচাও এই সাইকো বেটা ছোবলা থেকে মনে হয় এই চোখ দিয়েই আমাকে আজ বর্স্য করে ফেলবে,,,
চলবে,,,,,,
[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি ]