#মেঘের_আড়ালে💞
#পর্ব__১২
#লেখিকাঃফাতেমা_জোহরা নাভিলা
২৪.
চারপাশে আযানের মিষ্টি শব্দে কানে আসতেই নূর এর ঘুম ভেঙে যায়। ঘুমো ঘুমো চোখে তাকিয়ে নিজেকে ইয়াদের বাহুডোরে উম্মাদ বুকে আষ্টেপৃষ্ঠে খুব কাছে আবিষ্কার করে। কালকের কথা মনে আসতেই মুখে এক লজ্জার আভা মিশিত সুপ্ত প্রাপ্তির এক জয় করা হাসি। আজকের দিনের শুরুটা সব থেকে আলাদা এক অন্যরকম প্রশান্তি মনে মধ্যে ভালো লাগার দোল বয়ছে।। ইয়াদ এর বুক থেকে মাথা তুলে কানের কাছে মুখ নিয়ে কিছুটা মৃদু আওয়াজে শুভ সকাল ইয়ান ইনঅায়াত এর আব্বু প্রতিটা সকাল তোমার আমার শুরুটা হোক এক সুপ্ত অনুভুতি সাথে।।। মুচকি হাসি দিয়ে কপালে এক গম্ভীর ভালোবাসার স্পষ্ট একে দিয়ে।।।।
.
.
চট করে ধীরে সুস্থে উঠে ইয়াদের গায়ে ভালো করে কম্বল দিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলাম ওযু করতে।নামাজ পরলে ও সব সময় ফজর নামাজটা কায়জা হয়ে যায়। আজ যেহেতু উঠতে পেরেছি তাই নামাজটা কিছুতেই আর কায়জা করতে চাইছিনা।। ফজর নামাজ শেষে সাথে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করে নিলাম আমাদের আগামী দিনগুলো যাতে এভাবে হাসিখুশি ভাবে শুরু হয়।।।। নামাজ শেষে জানামাজ বাজ করে জায়গায় রেখে ব্যালকনিতে আসলাম।আজ মনটা খুব ফুরফুরে আমার আশেপাশে কুয়াশা চাদর দিয়ে ঢাকা ব্যস্ততা রাস্তায় কয়েকজনকে দেখা যাচ্ছে কুয়াশা বেদ করে নিজ নিজ কাজের গন্তব্য ছুটে যেতে।। আবার কয়েক জন জোড়া শালিক দম্পতিকে ও দেখা জাচ্ছে হাতে হাত ধরে মুখে এক গাল হাসি নিয়ে জগিং যেতে।।। তাদের দেখে মনে এক ইচ্ছে এসে জাগলো কোন এক দিন ব্যালকনি থেকে ইয়াদ এর দিকে তাকিয়ে।।। আপনি আর আমি কুয়াশা বেদ করে হাতে আঙুলের বাজে হাত আকঁরে ধরে পাশাপাশি হাটবো সেইদিন থাকবে না কোনো বাধা নিজেরদের মাঝে ইনশাল্লাহ সেইদিনটা খুব তাড়াতাড়ি আসবে আমাদের জীবনে ইয়াদ আমি অপেহ্মা প্রহরে রইলাম ।।।
.
.
.
“গরম গরম কফির ধোয়া ইয়াদ এর ঘুম ভাঙল ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখে নূর দাঁড়িয়ে আছে হাতে তার গরম গরম ধোয়া উঠা কফি “। চুলগুলো আধ খোঁপা মুখে তার আঁকাবাঁকা দাতে এক মিষ্টি কড়া হাসি। শাড়ির আচলটা কমোড়ে গুঁজানো পাকা গিন্নীদের মতো কপালে আর নাকে ঘেমে আছে আর সামনের কিছু চুল ঘামে লেপে আছে।দেখতে পুরো বউ বউ লাগছে।।।। হঠাৎ নূরের এই রুপ দুই দিনের ব্যবধানে এতো পরিবর্তনে ইয়াদ টাস্কি চাহনিতে তাকিয়ে আছে।।।।
.
“গুড ম্রনিং জামাই মশায়,,,, উঠুন আপনার জন্য আপনার প্রান প্রিয় চিরতা রসকস নিয়ে আমি হাজির হয়েছি।।।। আমি জানি আমি দেখতে খুবই সুন্দর তাই এভাবে ক্যাবলাকান্তর মতো হ্যা করে তাকিয়ে আর নজর দিতে হবেনা। আপনারই বউ আমি পাশের বাসার ভাবি না যে এভাবে দিনদাহারে চোখ দিয়ে আস্ত গিলে খাচ্ছেন।।। ফ্রেশ হয়ে এসে রিলেক্স ভাবে ধীরো সুস্থে দেখুন মশায় চোখ টিপ দিয়ে ।।। পালিয়ে যাব না আমি এখন উঠুন।।।।। এই বলে নূর ইয়াদকে টেনে উঠিয়ে হাতে কফি দিয়ে এক গাল হাসি দিয়ে চলে গেলো।।।
.
.
“ইয়াদ নূর এর দিকে তাকিয়ে কফিয়ে চুমুক দিতেই মুখ থেকে ফুসস করে ফেলে দিলো”। এটা কি??
.
পিছে দিকে গুরে অমাহ আপনি জানেন না এটা কি?? শুনুন এখন থেকে রোজ আপনার চিরতা রসে সাথে দুই চামচ করে চিনি থাকবে।।।যদি এই সামান্য চিনিতে আমার জীবনে একটু চিনি এনে দিতে সক্ষম হয়।।। অসহায় ভাবে।।। আর আপনি কতো বড় খচ্চোর মুখ না ধুরে ভাসি মুখেই কফি খান ইয়ায়ায়াজ্ঞজ্ঞ।।।।।।।ইয়াদ আপনি এমন করলে দুইদিন পর আমাদের বাচ্চাকাচ্চা তার বাবা থেকে কি শিক্ষা টা পাবে।।। মুখ কুঁচকিয়ে রাগ দেখিয়ে হনহন করে চলে গেলো।।।
.
“ইয়াদ নূর এর কথায় শুনে আর এক ধফা বড় সড় টাস্কি খেয়ে কাশ উঠে গেছে এভার তার হজম করতে খুব কষ্ট হচ্ছে।।।
.
.
২৫
কোচিং এর বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে নূর ইয়াদ এর জন্য। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি তিনটা বিশ বেজে গেছে।।।ইয়াদের নাম্বার ও আমার কাছে নেই যে একটা ফোন দিয়ে জিজ্ঞাস করবো কোথা উনি।।।অভস্য আমি একা নয় তাসফির ও আছে আয়াত ও ছিলো কিছুক্ষন আগে চলে গেছে। তাসফি আমাকে এভাবে একা রেখে যেতে চাইনি তাই আমার সাথে দাঁড়িয়ে আছে আমার ভাই আর অর গাল্ড ফ্রেন্ড এর প্যারাময় কাহিনি বলছে,,,, আমি ভালো মেয়ের মতো অর কেচকেচ শুনছি আর সাথে ফ্রিতে দুইটা একটা ঘুষা থাপ্পড় দিচ্ছি পিঠে।। ও ভালো ভাই এর মতো আমার হাতে মাইর খাচ্ছে আর কথা বলে চলছে।।।এর মধ্যে কোথা থেকে আইলা লাইলা সুনামি গতিতে একটা গাড়ি এসে আমাকে ধাক্কা দিয়ে চলে গেলো আমি ছিটকে পরার আগেই তাসফি আমাকে হাত ধরে টান দিয়েছে যার জন্য ব্যাথা পাইনি। আর একটুর জন্য পরকাল যেতে যেতে বেচেঁ গেছি বড় বড় করে শ্বাস নিচ্ছি কি থেকে কি হয়ে গেলো। তাসফি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করার চেষ্টা করছে। এমনেই আমার জানপাখি যাই যাই এর মধ্যে হঠাৎ হাতে হেচকা টান অনুভব করলাম তাকিয়ে দেখি ইয়াদ খুব রুক্ষচোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে চেরাতে রাগের ছাপ স্পষ্ট ।।।এতো রেগে আছেন কেনো।। । উনার কোবলা বোম ফুটাসসস চেহারা দেখে আমার জান পাখি উড়ে যায় যায় অবস্তা।।।।
.
ই ইইয়য়য়াদ।।।।কাপা কাপা সুরে।।আঅাপনি ঠ ঠিক আ,,,,,
.
উঠো।।।ধমক এর সুরে।।।চিল্লিয়ে।।
“যাক বাবা এতো রাগার কি হলো।।।আমি তো সামান্য হালচালই জিজ্ঞাস করসি,,,তাসফি দিকে তাকিয়ে দেখি ও কিছুটা ভয়ে ইয়াদ এর দিকে তাকিয়ে আছে। আল্লা আমার ফ্রেন্ড এর সামনে আমার ইজ্জত এর মুয়া বানাইয়া ফেললো বজ্জাতটা।।।তাসফির দিকে তাকিয়ে মেকি হাসি দিয়ে দোস্ত আসি তোর সাথে পরে ইয়াদ এর দিকে তাকিয়ে বাচলে দেখা হবে। ইনশাল্লাহ।।।।।। একদমেই বলেই গাড়িতে ঝট করে উঠে পরলাম আমি ।এখন বাচলে আমার বাবার নাম এতো জলদি অকালে আক্কা পেতে চাই না।।।আল্লা বাচাও।।
.
.
গাড়িতে ইয়াদ এর সাথে কোনো কথা হয়নি মুখ খুললেই দশ নাম্বার বিপদ সংকেত এসে হাজির হবে তাই আমি খাল কেটে কুমির না এনে চুপ করে বাহিরের দিকে মুখ ফিরিয়ে বসে আছি।।
.
বাসার সামনে গাড়ি এসে থামতেই আমি চট করে নামতে নিতেই।।।
.
কাল থেকে তোমার আর কোচিং যাওয়া লাগবে না।এই পাঁচ দিনে যা সীট দিবে আমি নিয়ে আসবো।।।অফিস থেকে আসার সময়। সামনের দিকে তাকিয়ে ইয়াদ বলে উঠল।।।
.
আমি উনার কথায় অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।।।।অবাক কাটিয়ে।।কিন্তু কেন হঠাৎ যাবো না!!!জানতে,,,
.
আমি বলেছি তাই।।।চিল্লিয়ে।।।আর কিছু জানতে চাও।।।রাগে কপালে রগ গুলো ফুলে উঠেছে।।।।
.
আমি আর কথা বা বারিয়ে ঢোক গিলে গাড়ি থেকে নেমে গেলাম।।।। রুমে যাওয়ার সাহস নেই এখন তাই বাসায় এসেই স্ট্রেডি রুমে গিয়ে চুপসে বসে আছি রাহাত ভাইয়ার জন্য।
.
২৬.
রাত এগারো টায় উনি সোফায় বসে বসে ল্যাপটপে কাজ করছে। উনার হাবভাব এমন আমার সাথে উনার বিকালে কিছুই হইনি।। আমি খাটে বসে বসে পড়ছিলাম আর আড়চোখে উনাকে দেখছিলাম কি শান্ত ভাবে কাজ করছে, কেউ দেখে বলতেই পারবেনা এই শান্তর ছেলে মধ্যে যে এক অশান্ত পাজি বড্ড এর হাড্ডি বসবাস আছে।।।
আমি খাট থেকে উঠে বুক সেল্ফে বই গুলো আর সীটগুলো গুছিয়ে রাখছি আপাতত পড়তে আর ভালো লাগছে না মাইন্ডে একটু রিফ্রেশমেন্ট দরকার। মন খারাপের নৃত্যদিনের সঈী হলো আমার ব্যালকনি তাই দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে ব্যালকনি আসলাম এসে গ্রিল ধরে আকাশের দিকে তাকতেই দেখি আজ আকাশে চাঁদ উঠেছে সাথে তারা সমাহার মনটা নিমিষেই ভালো হয়ে গেলো।কিছুক্ষন আকাশের দিকে তাকিয়ে মনে একটা ইচ্ছে আসলো,,, তা ভাবতেই ঠোট কামড়িয়ে হেসে রুমে আসলাম।।।
.
ইয়াদ এর সামনে এসে দাঁড়িয়ে আছি আর হাত কচলাচ্ছি বাংলা সিনেমার নাইকাদের মতো করে।কিন্তু এতে ইয়াদ বেটা মতিগতি ভ্রুহ্মেপ বিশেষ কিছু হল বলে মনে হয়না সেই তার আগের মতো কাজেই ব্যস্ত। তাই গাল ফুলিয়ে ধপাস করে তার ঘা এর সাথে ঘা ঘেষে বসলাম এভার উনি আমার দিকে তাকালেন।ব্যাপারটা হয়তো উনি সহজে নিতে পারেননি।।। তাতে আমার জামাইর কি।।।আমি ৩২ বাতি বের করে।।।
“অগো শুনুন না ইয়াদ।।।সুর টেনে।।।
.
উনি আমার মতো সুর টেনে ফাইল এর দিকে তাকিয়ে বলে উঠল।।। ওগো বলুন না নূর।।।।
.
আজ একটা আবদার করবো আপনার কাছে রাখবেন কি!!! মুখে একটু ইনোসেন্ট ভাব এনে।।।
” নূরের এমন কথা ইয়াদ হাত থেকে ফাইল রেখে নূর এর দিকে তাকিয়ে আছে”, আজ প্রথম বার তিন মাস এর মধ্যে নূর ইয়াদ থেকে কিছু আবদার করছে।।
ইয়াদ প্রশ্ন বিন্দুতে তাকিয়ে আছে নূর এর দিকে।।
.
ভয় নেই মশায় আপনার কিডনি চাইবো না।আমার সাথে বিনা কোনো সংকোচে ছাদে কিছু সময় এর জন্য জোৎস্না বিলাস করবেন।
।
।
ছাদে রেলিং ধরে দাঁড়িয়ে আছে ইয়াদ আর নূর। ইয়াদ আকাশ এর দিকে একমনে তাকিয়ে আছে।আর নূর জোৎস্না বিলাস করতে এসে ফ্রিতে বরাফ বিলাস করছে আর থরথর করে কাপছে।।।
.
আপনি এতো পাষাণ কেন বলুন তো!!
.
নূর এর এমন কাপা কাপা কথায় ইয়াদ আকাশ থেকে চোখ ফিরিয়ে নূরের দিকে তাকালো ঠ্যান্ডায় নূর এর ঠোট কাঁপছে কথাও বলতে পারছেনা।।।। তুমি এমন কাপছো কেন শাল নিয়ে আসো নাই কেন।।।নিজেকে কি ডিপিকা মনে করো যে পাতলা শাড়ি পরে নাচতে নাচতে এই শীতে মধ্যে ছাদে চলে আসছো।ফাজিল।।।ধমক এর শুরে।।।
.
ডিপিকা নিজেকে মনে করতে যাবো কেন দুঃখে ।।আর মনে করলেও কি আপনি কি আর রানবির সিং হয়ে যাবেন যে বউ শীতের অনবরত কাঁপছে আপনি গায়ের জেকেট খুলে আমাকে দিবেন সেই আমিষ কপাল কি আমার আছে আদৌ।।সরুন তো।।
.
কি করছো কি তুমি নূর জেকেট এর চেইন কেন খুলছো।সরো আমি খুলে দিচ্ছি।।।
.
হুসসসস এতো বেশি বুঝতে আপনারে কে বলসে দেখুন আমি কি করি রাগিত সুরে।।।জেকেট এর চেইন খুলে ইয়াদ এর দিকে কপাল কুঁচকে তাকিয়ে ইয়াদের বুকে সাথে নূরের পিঠ ঠেকিয়ে উল্টো হয়ে জেকেট আকরে দাঁড়িয়ে আছে।।।মুখে তার এক চিলতে রাজ্যজয় হাসি।।।
.
ইয়াদ নূর এর দিকে তাকিয়ে আছে কেন জানি নূর এর কাজে একটু ও বিরক্তি লাগছে না হঠাৎ মনে এক ভালোলাগা শান্তি কাজ করছে।।।
.
এভাবে আমার দিকে না তাকিয়ে চাঁদকে দেখুন মশায়।।।।।এক গাল হাসি দিয়ে।।।।
চলবে,,,,,
[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি। ]