#মেঘের আড়ালে 💞
#পর্ব__১০
#লেখিকাঃফাতেমা জোহরা নাভিলা
২১.
ব্যালকনি দাঁড়িয়ে আছে নূর চোখ দুইটো তার বাহিরে কুয়াশা চাদরে মুড়ানো আকাশের বেদ সূযের এক চিলতে আলোর দিকে। প্রতিটি রাত এর পর এক নতুন দিন আসে আমাদের বাচাঁর জন্য এক নতুন সূচনা নিয়ে।।। আকাশ থেকে চোখ নামিয়ে ব্যালকনি থেকে রুমে আসলো নূর কাল সারা রাত সে নিঘুমে কাটিয়েছে চোখ মুখে তার এক ক্লান্তি ছাপ।।। রুমে এসেই চোখ গেলো ইয়াদ দিকে।।।।।
.
.
ইয়াদ বেডে এখনো কম্বল মুড়ি দিয়ে বাচ্চাদের মতো শুয়ে আছে। আমি ধীরো পায়ে উনার পাশে এসে বসলাম।এতো দিনে উনার এতো কাছে এসে এভাবে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখা হয়ে উঠেনি। ফর্সা হাসি মাখা উজ্জ্বল চেহারা চোখের নিচে কালো দাগ পরে গেছে চেহারাতে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠেছ , খোঁচা খোঁচা দাড়ি গুলো বেশ বড় হয়েছে ।।।। কতোটা রাত যে নিঘুমে কাটিয়েছে বুঝাই যাচ্ছে চোখের নিচের কালি গুলো দেখে।।। মাথা হাত বুলিয়ে,,,, কপালে পরোম আদরে গম্ভির উষ দিয়ে ইয়াদ হাত নিজের হাতের বাজে নিয়ে। ।।। আমি আপনার বাজে বউ না ইয়াদ,,,,, তাইতো আপনার রাগের আড়ালে এতো পাহাড়ের মতো জমিয়ে রাখা কষ্ট গুলো বুঝতে পারিনি।।।।(ফুঁপিয়ে কান্না করে)। টাক টেনে টেনে,,,,,,, আমি কথা দিচ্ছি ইয়াদ আপনাকে আমি আর এভাবে কষ্ট পেতে দিবো না।।।আমি আপনার জীবনে #মেঘের আড়ালে হয়ে সব আধার কাটিয়ে দিবো।।।।যেখানে না থাকবে হারানোর ভয় আর না থাকবে কোনো সংশয়।।। শুধু থাকবে অফুরান্ত ভালোবাসা।।।আমি জানি না আমি আপনাকে আদৌ কতো টুকু বুঝে উঠতে পেরেছি,,,, কিন্তু এইটুকু বলতে পারি যতটুকু বুঝলে একজনকে নিসার্থ ভাবে ভালোবাসা যায়। আমি জানি না আমার এই নতুন সুপ্ত অনুভুতিগুলো কে,,,কি আদৌ ভালোবাসার নাম দেওয়া যায় কিনা। কিন্তু আমি এটা বুঝে গেছি এই রাগি রাক্ষস বদ মেজাজি ইয়াদ সাইকোহীন নূর এর জীবন ব্যাথ।।।। আজ থেকে নতুন করে নতুন আফতারে আমাদের পথ চলা শুরু হবে সবকিছু নতুন ভাবে কি রেডিতো।। ম্রিস্টার সাইকো জামাই।।।।।।।।
.
.
“চোখের উপরে কিছুক্ষণ পর পর বার বার পানি ছিটা আসাতে বিরক্তি নিয়ে চোখ খুলে ইয়াদ,,,,,,,,, ঘুমো ঘুমো জড়ানো চোখ জোড়া খুলে সেয় থ অবাক হয়ে যায় কিছুটা।।।।।।।। আচ্ছা বেশিহ্মন ঘুমানোর কারনে কি আদৌ ভুল দেখছে না তো,,, না এমন তো হওয়ার কথা না,,,,,,,চোখ ডলে আবার তাকায় এভার ও সেই একি দেখছে।।এভার সে শুয়া থেকে উঠে বসে আশেপাশে তাকিয়ে চোখ বুলিয়ে বুঝার চেষ্টা করছে সে আসলেই কথায়।।।।নাহ সে তো তার রুমেই আছে তাহলে।।। খাট থেকে ধীরে পায়ে ব্যালকনি সামনে এসে দাঁড়ায় কপাল কুঁচকে ,,,,,, তার সামনে ঠিক এক রমণী কালো শাড়িতে উল্টো দিকে মুখ দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে হাতে তার তোয়ালে যা দিয়ে আপাততো চুলগুল ঝাড়তে ব্যস্ত সে,,,,,, আর তার সাথে তালমিলিয়ে তার হাতের চুড়ি থেকে এক মিষ্টি টুংটাং ছন্ধ বাজছে,,,, সূয আলোতে সোনালি রঙ এর চুড়ি গুলো টুংটাং সাথে সং সেজে নৃত্য করছে চিকচিক করে হাত উঠা নামানোর সময় ,,,,,,,চোখ ফিরিয়ে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সবে মাএরো সাতটা বিশ বাজে।।।এটা কি কোনো ঘোর লাগানো সপ্ন,,,,,,,,, সপ্ন হলেও ভালো,,,,, কেন জানি এই দৃশটা দেখতে অতো মন্দ ও লাগছেনা মুখে এক হাসি দিয়ে,,,সাথে মন কাড়া এই টুংটাং ছন্ধ শব্দ শুনতে ভালোই লাগছে।।।।বারান্দা থাই এর সাথে হেলাল দিয়ে দাঁড়িয়ে দুই হাত বুকে বাজ করে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে ইয়াদ সেই রমণীর দিকে।।।এভার সে রমণী হাতের তোয়ালে ঝেড়ে টানটান নিখুঁত ভাবে বারান্দায় গ্রিলে শুকিয়ে দিলো।।। ইয়াদ তার কার্যকালাপ গুলো দেখছে,,,,কোমরে শাড়ি গুঁজানো ছিলো তা টেনে ঠিক করতে করতে এভার সে গুরে তাকালো।।।।।।।।।।।। ইয়াদ এর মুখ থেকে অফুরান্ত সুরে কপাল বাজ করে বের হলো ননননূরর।।।।।।। এটা আসলেই সপ্ন ছিলো??? নূর শাড়ি বা কেন পরবে এতো সকালে!!!!! অতো শাড়ি পরে না।। চোখ বন্ধ করে।।শ্বাস নিয়ে।।।। ভাবছে সে।।।।
.
.
ছি আমি আপনাকে কতোটা ভালো মনে করেছিলাম আপনি কতোটা খারাপ।।।।।একটা নিরহ অবলা মেয়েকে আপনি এভাবে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছিলেন এতক্ষণ ধরে।।।।। হায় হায় হায় এই মুখ আমি কাকে দেখাবো এখন। (মুখে হাত দিয়ে)
.
মানে!!!!!কি বলতে চাও তুমি?? (চোখ খুলে) বড় বড় করে তাকিয়ে বেকুব এর মতো করে।।।
.
আপনি আমার দিকে এভাবে ক্যাবলাকন্তর এর মতো পুয়া মাছের মুখ করে ইইইইয়য়য়া বড় হ্যা করে তাকিয়ে ছিলেন কেনো????সামনে এসে।।।। বলুন বলুন ভ্রু নাচিয়ে।।।।
.
তুমি এতো সকালে আজ শাড়ি কেন পরেছো??? আর এমন সং সেজে বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছো কেন??? ধমক দিয়ে।।।
.
প্রশ্ন বদলে উল্টো প্রশ্ন করা আরে বাহ হোয়াট এ টেকনিক ইয়াং ম্যান কাধে চাপোট দিয়ে।।।।।। শাড়ি পরেছি তো কি হয়েছে মহাভারত তো আর অশুদ্ধ হয়ে যাইনি আমার শাড়ি পরাতে।।।। আমার এই টুকু একটা ছোট মন (হাত দিয়ে দেখিয়ে) সেখানে শাড়ি পরতে চাইতেই পারে আর সং সাজা কই দেখলেন সিদ্দীকি সাহেব (ভ্রু-কুঁচকে) । দেখছেন আমার কপালটা কতো বড় দেড় ইঞ্চি এক ফুটো একে তো সাইকো জামাই কপালে এসে জুটলো ২য় সেকেন্ডনাল মাল পাইলাম শেষমেস আফসোস এর সুরে বিড়বিড় করে।।।। তার উপর কথায় কথায় বেটা আমার উপর হুদাই খালি চিল্লায় নিজেতো একটা বয়ড়া মনে করে আমিও বয়ড়া।।।।।। তার উপর এখন আবার দিন কানা রাত কানা রোগ এসে আমাদানি হইলো।।।।।।।।।। হায়রে দীর্ঘ শ্বাস নিয়ে।। হোয়াট এ টেনে টুনে কপাল!!! কি হবে এখন আমার।।।
.
সার্ট আপ।।।।।। ধমক এর শুরে।।।।।
.
অয়য়য়য়য় আপনি এতো কিউট কেন।।।আগে তো খেয়ালই করিনি থাক এখন তো দেখলাম।। ৩২ বাতি দিয়ে।।। অলে আমার কিউটিরে টুনুমুনু জামাইরে রাগলে তোমায় আরো লাগে হেব্বিরে।। গাল টেনে।।।
.
ইয়াদ কিছু বলতে যাবে,,,, নূর এর এমন কথা শুনে বড় সড় সর্ক খেলো।।।।।বড় সড় হ্যা করে তুমি ঠিক আছো কপালে হাত দিয়ে।।ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো তোমাকে কোনো সমস্যা হয়েছে তোমার,,, বলো আমাকে নূর,কোথায় ব্যাথা পেয়েছো।।।(চিন্তিতো হয়ে)।
.
সমস্যা হলে তো নিয়ে যেতেই হবে চিন্তিতো হওয়ার ভঙিতে।।।সেইতো ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবেন কিন্তু( লজ্জা পাওয়ার ভঙিতে।।।) এখন না পরে,,,,
.
মানে!!!! পরে নিয়ে যাবো কেনো??? এখনই নিয়ে যাব চল।।। এতো সকালে,,,,,
.
এইইই আপনি এতো রসকষহীনা কেন বলুন তো।। মনে একটু ও কি রসিক্তা অবশিষ্ট আর নাই।। সব কি অই চিরতায় শেষ করে দিসে আল্লা। এখন তো দেখছি নিজেকেই ধান ক্ষেত করে নিজেকেই কষ্ট করে আবার পাকা ধানে গিয়ে আমাকেই মই দিতে হবে।।। জীবনটাই দেখছি বেদনা সেখানে রেডিমেড কিছু আর পাইলাম না।।।।। কপালে হাত দিয়ে গোমরা মুখ করে।।।সরুন তো এমন খাম্বার মতো না দাঁড়িয়ে থেকে।।। কতো কাজ আছে আমার আপনার মতো আকাশ কুসুম ভাবার মতো টাইম নাই।।বলে ধাক্কা দিয়ে হন হন করে নিচে চলে গেলো।।।।।
.
নূর জাওয়ার দিকে ইয়াদ কিছুক্ষণ অপলক ভাবে তাকিয়ে আছে কি হলো এসব,,, ও কি এসব আবাল তাবল বললো সবই অর মাথার উপর দিয়ে গেলো মনে হচ্ছে।।। দীর্ঘ শ্বাস ফেলে রুমে পা দিতেই ধপাস খেয়ে পরে গেলো।।।।।।।। এই মাইয়া জিন্দিগিতে আর ভালো হইলো না,,, চুল ঝাড়তে এসে বারান্দাকেই চুলের পানি দিয়ে ঝেড়ে গেছে।।।ফাজিল মাইয়া।।।।কমোড়ে হাত দিয়ে।।।
২২.
ড্রায়রিং রুমে সবায় বসে এক সাথে নাস্তা করছে কিন্তু ইয়াদ তাকিয়ে আছে নূর এর দিকে কমোড় ব্যাথায় ঠিক করে হাটতে ও পারচ্ছেনা আর বসতে তো আরো কষ্ট হচ্ছে,,,,কিছুক্ষণ পর পর ব্যাথায় রাগি লুকে তাকাচ্ছে । কিন্তু নূরের তো সেদিকে খেয়াল করার সময় নেই বললেই চলে।।।সেই পাকা গিন্নীদের মতো কমোড়ে আচল গুঁজে সবায়কে খাবার দিচ্ছে চুলগুলো আলোমেলো হয়ে আছে বিরক্তি নিয়ে কিছুক্ষণ পর পর কানের পিঠে গুঁজছে আর হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে কপালের ঘামের বিন্দু গুলো মুচছে।।। আচ্ছা শাড়ি পরলে কি সব মেয়েদের এমন
maturely এসে পরে,, তখন কি সবায়কে এমন বড় বড় লাগে হঠাৎ করেই।।।ইয়াদ আড়চোখে নূরকে কিছুক্ষণ পর পর দেখছে আর ভাবছে কথা গুলো ।।।
.
কিরে দাদুভাই খাচ্ছিস না কেন???বসে আছিস যে!!
.
আমার হয়ে গেছে দাদিমা।।।।আর খাবো না।।নূরের দিকে আড়চোখে তাকিয়ে চেয়ার থেকে উঠতে উঠতে। কেউ যদি ভেবেই থাকে ঘরের কাজ দেখিয়ে পাকা গিন্নী সেজে আজ কোচিং এ যাবেনা আর আমি কিছু বলবো না তাহলে তার এটা নিহাত ভুল ধারনা।।।গম্ভীর হয়ে।।।।
.
.
আমি জানি আপনি যে আমার পরোম সৌভাগ্য করে পাওয়া আল্লাহ থেকে অনলি ওয়ান পিস ইবলিশ মার্কা জামাই তাই এসব আসাও মনে আর দেখা দেয় না আমার।। যাইহোক,,, ম্রিস্টার সাইকো আপনি এক মিনিট বসেন আমি দশ মিনিটের মধ্যে রেডি হয়ে আসছি।।মামনি আজ তুমি আমি আর আপি মিলে রাতে রান্না করবো ঠিক আছে।।।গালে চুমো দিয়ে।।।। আগে থেকেই বলে রাখলাম তখন কিন্তু কোনো ভাবে না করতে পারবে না আমাকে।।।
.
আচ্ছা ঠিক আছে।।।। পাগলি মেয়ে একটা।।।মুচকি হেসে।।।।।।
.
.
.
গাড়িতে বসে নূর মুঠো ফোনে ক্যান্ডি ক্রাস খেলছে আর ইয়াদ ড্রাইভ করছে আর আড়চোখে নূরের মতিগতি বুঝার চেষ্টা করছে আজ এতো শান্ত।।।।
.
আচ্ছা আমাকে দেখতে কি আজ সুন্দর লাগছে???ফোনের দিকে তাকিয়ে।
.
মানে!!!
.
উফফফফ,,,,, এতো মানে টানে করেন কেন কথায় কথায়? কপাল কুঁচকে।।। কথা কি বুঝেন না? না কথায় বেজাল আছে কোনটা? এতো নিরামিষ হলে আমি টেম্পুটা চালামু কেমনে মশায়।।।।
.
এখানে টেম্পু আসলো কোথা থেকে।।।। যে তুমি চালাবে??আর গাড়ি থাকতে তুমি টেম্পু চালাবা কেন??
.
হায়রে,,,,,বুঝলে বুঝ পাতা না বুঝলে কচুঁ পাতা বিড়বিড় করে।।
.
কিছু বললে!
.
নাহ,,,,,
চলবে,,,
[ভুলগুলো ক্ষমার চোখে দেখবেন আসা করি।]